সুখের অ-সুখ পর্ব-২৫ এবং শেষ পর্ব

0
872

#সুখের_অ-সুখ
#মম_সাহা

অন্তিম পর্ব (২৫)

ধীশক্তি’র এমন কথায় ইউসুফ হতবাক। সে যেনো কিছু বলার ভাষা পাচ্ছে না।

সুখ ইউসুফের দিকে আড়চোখে তাকালো। সুখের গলা শুখিয়ে এলো। সত্য কী আর লুকিয়ে রাখা যায়! কখনোই যায় না। সুখ তবুও ছোট্ট কণ্ঠে বললো,
-‘না মেঘ সাহেব কিছু জানেন না। উনার সাথে বিয়েটা হয়েছে অন্য কারণবশত। আমি আর কখনোই তাই সবটা জানাই নি। যে মানুষটা মারা গেছে তা’কে নিয়ে আলোচনা আর নাহয় না’ই করলাম।’

ইউসুফ এবার সুখের দিকে তাকালো। আশ্চর্য বনে গেলো যেনো। ভরাট কণ্ঠে বললো,
-‘ভাবী! তবে বিহঙ্গই কী মসৃন!’

সুখ মাথা নিচু করে হ্যাঁ জানালো। ইউসুফের হঠাৎ শরীর কাঁপিয়ে ঘাম ছুটলো। স্যার জানলে কী হবে! সব শেষ হয়ে যাবে, সব শেষ।

সুখ ইউসুফের হতভম্ব ভাবটা বুঝতে পেরে নতজানু হয়ে বলে,
-‘আপনাকে সব পরে বলবো ইউসুফ ভাই। মি.ধীশক্তি, আপনার আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আমি আশা রাখবো আপনি এই সত্যি টা মেঘের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবেন। মেঘ সাহেব সবটা সহ্য করতে পারবে না। প্লিজ।’

ধীশক্তি নামের সুপুরুষটি চুপ রয়। মাথা ঝাকিয়ে বলে,
-‘আচ্ছা, কখনোই বলবো না। ভালো থাকবেন। আজ তাহলে আসি?’

সুখ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানাতেই ধীশক্তি বেরিয়ে গেলো। সুখ ছোট্ট চেয়ারটাতে গিয়ে বসলো। এতক্ষণ মিনা সবটা নিরবে পর্যবেক্ষণ করলো। সুখ ইশারা করতেই এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে এগিয়ে দিলো ইউসুফের দিকে।

এই পানিটার ভীষণ অভাববোধ করছিলো ইউসুফ। কাঙ্খিত জিনিসটা পেতেই দ্রুত পান করে নিলো।

সুখ মিনা’কে ইশারা করে সামনের সোফায় বসতে বললো। মিনা বসতেই ইউসুফ ভয়ার্ত স্বরে বললো,
-‘ভাবী, আপনি বিরাট বড় কিছু লুকাচ্ছেন না তো!’

সুখ না চাইতেও তাচ্ছিল্য হাসে। যে হাসি দ্বিগুণ করে অবাক করে ইউসুফ’কে। নিজের চোখের কোণে অশ্রু’র কণাটা মুছে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুখ বললো,
-‘হ্যাঁ ভাইয়া। বিরাট বড় কিছু লুকিয়েছি। শুনবেন!’

ইউসুফ মাথা নাড়াতেই সুখ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-‘আমিও সেদিন অবাক হয়েছিলাম যেদিন দেখেছিলাম মসৃন আর কেউ না মেঘ সাহেবের ভাই বিহঙ্গ। কিছুক্ষণের জন্য আমি মেঘ সাহেবকেও অবিশ্বাস করে ছিলাম। কারণ তার মায়ের প্রতিশোধ নিতে গিয়েই তার ভাই সবটা কাজ করেছিলো৷ কিন্তু পরক্ষণেই আমার সব ভাবনা ভুল হয়ে গেলো তার আচরণে। উনার মায়ের আচরণেও রীতিমতো আমি বিমোহিত। সবটা বিহঙ্গ সবার অগোচরে করেছে তা’ই ভেবে নিয়েছিলাম। কিন্তু, ‘

সুখ থামে কিন্তু ইউসুফের উত্তেজনা ততক্ষণে আকাশ ছুঁয়েছে। দ্রত গতিতে বলে,
-‘কিন্তু কী ভাবি!’

-‘সেদিন মিনা আমাকে আমার ঘর দেখিয়ে দিয়ে একটা সাবধান বাণী দেয়। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম মেয়েটা বোধহয় পাগল। কিন্তু রাতের খাবার খেতে গিয়ে মিনার গালে চড়ের দাগ থেকে সন্দেহ গাঢ়ো হয়। তারপর আরও সন্দেহ নতুন করে উৎপাদন হয়। মেঘ সাহেবদের বাড়ির পিছে একটা কুঠির ঘর আছে না? জানেন সেটাতে কী রাখা হয়!’

ইউসুফ ভ্রু কুঁচকে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো,
-‘সেখানে তো আমার জানামতে কিছুই রাখা হয় না। খালি থাকে।’

ইউসুফের কথা শুনে সুখ বাঁকা হেসে বললো,
-‘আপনাদের চোখে অনেক বছর যাবত ধূলা ছুঁড়ে মেরেছে ওরা। একদিন বৃষ্টি ভেজা রাতে আমি আধাঁর ভেদ করে দেখলাম কে জেনো কুঠির রুম থেকে বের হচ্ছে কিন্তু মেঘ সাহেব বললেন এটা নাকি অনেক বছর যাবত তালা দেওয়া। তারপর গভীর রাতে গাড়ির শব্দ শুনতে পেলাম। হাজারো সন্দেহ বাসা বাঁধলো। মনে হলো খুঁটি গেঢ়ে বসতে হবে সব সমাধানের জন্য। এরপর শুনলাম মিনা নাকি এসব শুনতে পেতো। তাই সবাই ওকে পাগল ডাকে। মিনা’কে ঐ ঘরের সামনে যেতে না করেছে। এতে রহস্য দ্বিগুণ হলো। এই রহস্যের মাঝে আমার চোখের ধরা পড়লো আরও নোংরা ঘটনা।’

ইউসুফ আৎকে উঠে বললো,
-‘কী ঘটনা ভাবী?’

-‘মেঘের মায়ের সাথে তারা খালু মানে শরিফুল ইসলামের পরকীয়া।’

ইউসুফ এবার ছিটকে দাঁড়ালো। উচ্চস্বরে বললো,
-‘এসব কী বলছেন ভাবী! কখনোই এমনটা হতে পারে না।’

এবার মিনা নামের মেয়েটা মুখ খুললো,
-‘আপনারা তো সেখানে থাকতেন না দাদাবাবু। সে বাড়ি ছিলো নোংরামিতে ভরা। আমি জানতাম এ কাহিনী গুলা। ছোট মাও জানতো কিন্তু তবুও চুপ থাকতো। বেচারি যে সংসার পাগল ছিলো।’

সুখ মিনার কথাকে সাঁই জানিয়ে বললো,
-‘হ্যাঁ সত্যিই। এছাড়া আরো একটা কথা আপনারা জানেন না। মেঘ রেহানা বেগমের ছেলে না।’

ইউসুফের যেনো বিষ্ময় হবার দিন আজ। রীতিমতো একটার পর একটা বিস্ফোরিত ঘটনা বের হয়ে আসছে। সেই বিস্ময় ভাবটা চেপে না রাখতে পেরেই অবাক মাখানো কণ্ঠে বললো,
-‘কী বলছেন ভাবী। তাহলে কার ছেলে স্যার!’

-‘রেহানা বেগমের যার সাথে বিয়ে হয়েছিল তার বড় ভাইয়ার। আর ঐ বাড়িটা মেঘেরই বাবার বাড়ি। কিন্তু এক গাড়ি দুর্ঘটনায় সবাই মারা যায়। মেঘের বাবা মা ও। মেঘের নামে সব সম্পত্তি ছিলো বিধায় মেঘ’কে এত যতনে বড় করে রেহানা বেগম। কিন্তু সবটাই মেঘের গোপনে। নিজের বোন, বোন জামাইকে সেই বাড়িতে তুলে নোংরা খেলায় মেতে উঠে সে। শুধু পরকীয়া না, তারা নারী পাচারের সাথে খুব ভালো ভাবে জড়িয়ে ছিলো। আর সেই কুঠির ঘরেই রাতে রাতে মেয়ে এনে লুকিয়ে রাখতো তারপর পাচার করে দিতো আবার মধ্য রাতেই। এর সাথে যুক্ত ছিলো বিহঙ্গও। একদিন রাতে গাড়ির শব্দে ঘুম ভাঙতেই দ্রুতই বারান্দায় যাই। সেখানে গিয়ে দেখি রেহানা বেগম আর শরিফুল ইসলাম একটা গাড়িতে কয়েকটা মেয়েকে জোড় করে তুলে দিচ্ছেন। আমার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেলো। শুধু এখানেই থামে নি তারা। মিনা সব গড়গড় করে বলে দিচ্ছিলো দেখে মিনাকেও পাচার করার প্ল্যান করে তারা।’

ইউসুফ মিনার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। সব জেনো তার মাথার উপর দিয়ে গেলো। মিনা এবার উপর নীচ মাথা নাড়িয়ে বললো,
-‘হ ভাইজান। যদি ভাবী আমার পালাইতে সাহায্য না করতো তাহলে আমারেও আপনারা আর দেখতেন না। অন্যান্য কাজের মেয়ে গুলো যেভাবে উধাও হয়ে গিয়েছিল সেভাবে আমিও উধাও হতাম। সবার কাছ থেকে মুছে যেতো আশা আক্তার মিনা নামের মেয়েটার অস্তিত্ব।’

-‘তুমি তো অন্য সব কাজের মেয়ের মতনই পালিয়ে ছিলে। গত বছর যে দুই কাজের মেয়ে পালিয়েছে স্বর্ণ গয়না নিয়ে ঠিক তেমন ভাবেই।’

ইউসুফের কথায় সুখ ডানে বামে মাথা নেড়ে হতাশার শ্বাস ফেলে। বেশ আফসোস মাখানো কণ্ঠে বলে,
-‘ঐ দুই মেয়েও পালায় নি। ওদের গ্রাম থেকে কাজ দিবে বলে নিয়ে এসে ঐ বাড়িতে ক’দিন রেখে ছিলো। তারপর পাচার করে দেয়। এইটা আমি জানতে পারি রেহানা বেগমের কাছ থেকে। সে অবশ্য আমায় বলে নি, মিনা’কেও এমন উধাও করার প্ল্যান করেছিলো শরীফুল আর বিহঙ্গের সাথে তখনই আমি শুনেছিলাম। বিহঙ্গের বাবা নর্দমার কীট, সে আমাকেও তার লালসার দৃষ্টি থেকে বাদ দেন নি।’

ইউসুফ উঠে গেলো, টেবিলের উপর থেকে পানি নিয়ে আরেক গ্লাস পানি খেলো। এত এত রহস্য সবার অগোচরে কীভাবে ছিলো! এত অপরাধ কীভাবে করতে পারে একটা মানুষ!

ইউসুফ নিজের রুমালটা বের করে ঘাম মুছে নেয়। আবার নিজের আসনে এসে বসে পড়ে। আনমনে’ই বলে,
-‘আইনের কাছ থেকে এত অপরাধ কীভাবে লুকিয়ে ছিলো?’

-‘টাকা থাকলে সব সম্ভব। টাকার জন্য মাঝে মাঝে রক্ষকও ভক্ষক হয়ে যায়। এবার তবে আসল কাহিনী’তে আসা যাক। আমার দাদী নিজে পড়ে গিয়ে মারা যায় নি। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে, জানেন!’

এই কথাটির জন্য ইউসুফ প্রস্তুত ছিলো না বোধহয়। তাই উচ্চস্বরে চেচিয়ে বললো – “কীহ্!”

সুখ ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। দাদী’র কথা মনে পড়লেই তার কলিজাটা ছিঁড়ে যায়। কাঁদতে কাঁদতেই সে বলে,
-‘হ্যাঁ ঠিক শুনেছেন। বিহঙ্গ আর রেহানা বেগম প্ল্যান করছিলো এবার নাকি মেঘ’কে মেরে ফেলবে তারা। সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে হবে। যা আমার দাদী ভুলবশত শুনে ফেলে। দাদী আমাকে বলতে আসতে চেয়েছিলো সেটা কিন্তু রেহানা বেগম ততক্ষণে দাদী’কে দেখে ফেলেছিলো। তাই সিঁড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় মানুষটা’কে। ভেবেছিলো দাদী মারা গেছে কিন্তু ততক্ষণেও দাদী’র প্রাণ ছিলো। আমি ছুটে আসতেই বৃদ্ধা মহিলাটা অস্পষ্ট স্বরে নিজের নাতনিকে সাবধান বাণী দিয়ে যায়। কিন্তু আমি কাউকে জানায় নি সেটা। দাদী’র মৃত শরীর ধরেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, একটা কেও বাঁচতে দিবো না।’

ইউসুফ আবারও ভয়ার্ত কণ্ঠে বললো,
-‘এখন আপনি অন্তত এটা বইলেন না যে আগুনটা আপনি লাগিয়েছেন!’

সুখ বাঁকা হাসে, সে হাসির সাথে যোগ দেয় মিনাও। ঝপপট কণ্ঠে মিনা বলে,
-‘নাহ্,আগুন ভাবী না, আমি লাগিয়েছি।’

ইউসুফের চোখ যেনো কোটের থেকে বেড়িয়ে আসবে। আজ কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠলো! পর পর এত গুলো ধামাকা?

সুখ মাথা নাড়িয়ে বললো,
-‘হ্যাঁ, আগুন মিনা লাগিয়েছে কিন্তু প্ল্যান আমার ছিলো। ঐ বাড়িতে যা পাপ ছিলো তা আমার একার পক্ষে সম্ভব ছিলো না মুছবার। তাই সব পাপের উৎস শেষ করে দিলাম। ওরা আমার মেঘ সাহেব’কে মারার প্ল্যান করেছিলো,আমার দাদী’কে মেরেছিলো। কত মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। ছোট মা’কে ঠকিয়েছে। এমন’কি বিহঙ্গ’কে আমার বিয়ের আসর অব্দি নিয়ে গেছিলো সে মহিলা। কিন্তু স্বীকার করে নি। এটা বিহঙ্গের কাছ থেকে জেনেছিলাম। তারপর সবার মন জুগিয়ে চললাম। মিনা’কেও হাজির করলাম আমার প্ল্যানে। অতঃপর সেদিন রেহানা বেগম, শরিফুল ইসলাম এবং বিহঙ্গের চা’তে কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেই। মেঘ সাহেব আর ছোট মা’কে নিয়ে ঘুরার নাম করে বের হয়ে যাই। আমরা বের হওয়ার পরই মিনা আগুনটা লাগায়। সবাই গভীর ঘুমে ছিলো বিধায় বাঁচতে পারে নি। এভাবেই পৃথিবী থেকে বিদেয় করলাম কত গুলো পাপ। তবে, অপরাধ আমারও কম না।’

দীর্ঘ রহস্যের জট খোলার পর ইউসুফ নির্বাক, নিস্তব্ধ হয়ে যায়। কোনটা ভুল কোনটা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। সুখ ছোট্ট শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায়। অপরাধী কন্ঠে বলে,
-‘ভাইয়া, আমিও অপরাধী। মিনা’র এখানে দোষ নেই। তাই আমি সবটা পুলিশের কাছে স্বীকার করবো। আপনি পুলিশ’কে ডাকেন।’

ইউসুফ তড়িৎ বেগে দাঁড়িয়ে যায়। স্যার জানতে পারলে বোধহয় মরে’ই যাবে। কী করবে সে এখন!

-‘এই ঘটনা কিন্তু ছোট মা’ও জানে। ভাবী যেদিন হের বাপের বাড়ি যায় ছোট মা সব আমার পেট থেকে বের করে। কিন্তু ছোটমা বলেছে সে কাউকে এটা বলবে না। নরক থাকার চেয়ে নাকি না থাকা উত্তম। কিন্তু যতই হোক বিহঙ্গ তার ছেলে ছিলো তাই তার সুখ ভাবী’কে নিয়ে একটু খারাপ লাগা কাজ করেছে। সেটা যেনো বড় আকাড় ধারণ না করে তাই চলে গেছে সে।’

মিনা’র এহেন কথায় ইউসুফ ভ্রু কুঁচকায়। একটা মানুষ কথাটা নোংরামির স্বীকার হলে নিজের বোন, স্বামী, সন্তানের হত্যাকারী’র কাজকে সমর্থন করেছে! কিন্তু অপরাধ তো অপরাধ’ই হয়। পরপর তিনটা মানুষের খুন করা তো অপরাধ’ই। কিন্তু কিছু অপরাধ না করলে যে সমাজটা নোংরামি’তে ভরে যাবে।

হঠাৎ সুখের চোখমুখ আধাঁর করে মাথা ঘুরে উঠলো, লুটিয়ে পড়লো ফ্লোরে। আৎকে উঠলো ইউসুফ। জ্ঞান হারিয়েছে মেয়েটা।

——-

ভীষণ মাথা ব্যাথা নিয়েও চোখ খুলে তাকায় সুখ। তার সামনে ইউসুফ আর মিনার ঝাপসা মুখটা ভেসে আসে৷ সে দীর গতিতে উঠে বসে।

সুখ’কে উঠতে দেখেই ইউসুফ ছোট একটা হাসি উপহার দেয়। শীতল কণ্ঠে বলে,
-‘ভাবী, যা হয়েছে মনে করবেন সেটা আপনার অতীত। তা মাটি চাপা দিয়ে ফেলেন। আপনাদের কোল জুড়ে নতুন অতিথি আসবে। তাকে নিয়ে শুরু করেন আপনার নতুন অধ্যায়। যে অধ্যায় এর নাম হবে সুখের সুখ। অ-সুখের কারণ গুলো আপনার আশেপাশে আর থাকবে না। সবটা আড়ালে থাকবে। কিছু সত্যি আড়ালে রাখা ভালো।’

সুখের মস্তিষ্ক অব্দি কথা গুলো যেতেই তড়িৎ গতিতে লাফিয়ে উঠে সে। নতুন অতিথি কথাটা কানে ভাসতেই আপনা-আপনি হাত চলে যায় পেটের কাছে। মেঘ ডাক্তার’কে এগিয়ে দিয়ে ততক্ষণে রুমে এসে পৌঁছায়। মেঘের মুখের হাসিটা যেনো সুখের সব অপরাধ, বিষাদ মুছে দেয়। এই হাসি মুখটা দেখার জন্য হলেও সবটা লুকিয়ে থাকবে। সবটা।

মেঘ’কে রুমে আসতে দেখে ইউসুফ মিষ্টি আনার নাম করে বেরিয়ে গেলো। মিনাও কাজ আছে বলে চলে গেলো।

রুম থেকে বের হতেই ইউসুফের মোবাইলটা শব্দ করে বেজে উঠলো। স্ক্রিনে ভেসে উঠা নাম্বারটা দেখে কিছুক্ষণ থমকে গেলো যেনো। কত গুলো দিন পর কল করলো মানুষটা। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা তুলে নিয়েই অস্ফুটে স্বরে বললো,
-‘হৈমন্তিকা!’

-‘হ্যাঁ ক্যাবলাকান্ত আমি হিমা৷ ভুলে টুলে গেছেন না কি! আমি শহর ছাড়তে ছাড়তেই আপনি কিনা আমার মায়া ছেড়ে দিয়েছেন? ভেরি ব্যাড।’

-‘আপনার মায়া কী ছাড়া যায়? আপনার মায়া আমার শরীরের ছায়ার মতন। যা ছাড়বে না কভু।’

-‘বাহ্ ভালো বলেন তো। আপনার কথাতে আমি প্রসন্ন হয়েছি। এবার আপনাকে গুড নিউজ দিতে চাচ্ছি।’

ইউসুফের মনের কোণে বিষাদ জমে হঠাৎ করেই। ব্যাথিত স্বরে বলে,
-‘বিয়ে ঠিক হলো বুঝি?’

অপরপাশে হিমা’র রিনরিনে হাসি’র ঝংকার ভেসে এলো। হাসতে হাসতেই বললো,
-‘বিয়ে ঠিক হয় নি তবে জামাই ঠিক করেছি।’

ইউসুফ ছোট্ট করে বললো,
-‘ওহ্।’

-‘আরে মশাই নাম জানবেন না?’

-‘হ্যাঁ বলুন।’

-‘ক্যাবলাকান্ত।’

ইউসুফ যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে নি। বিষ্মিত স্বরে বলে,
-‘কী?’

অপরপাশে আবার হাসির শব্দ ভেসে এলো। মিষ্টি স্বরে বললো,
-‘বুঝলেন তো ক্যাবলাকান্ত, আমি অনেক ভেবে দেখলাম আপনার মতন আমি আর এক পিসও পাবো না। যা পেয়েছি তা যদি সামলে না নেই তাহলে কীভাবে হবে? কেউ একজন আমার চোখ খুলে দিয়েছে। এখন আমি আমার মনের দরজা খুলে দিলাম। প্রবেশ করবেন তো?’

ইউসুফ চরম উত্তেজনায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। তবুও উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললো,
-‘এখনই জুতা খুলে আসছি।’

হিমা আবারও ঝংকার তুলে হেসে দিলো। ইউসুফ কৃতজ্ঞতা’র দৃষ্টিতে সুখের পানে তাকায়। সুখ তখন ইউসুফের দিকে তাকিয়ে ছিলো। ইউসুফের চোখে চোখে পরতেই একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিলো। ইউসুফও কৃতজ্ঞতায় চোখের কার্ণিশের জলটা মুছে নিয়ে হাসি দিলো।

ইউসুফ চলে যেতেই মেঘ নিজের উষ্ণ বাহুতে জড়িয়ে নিলো সুখ’কে। অতি উল্লাসিত কণ্ঠে বললো,
-‘আপনি আমার জীবনে পূর্ণতা দিয়েছেন অপরিচিতা। আমি সারাজীবনের মতন ঋণী আপনার কাছে। আমার জীবনটা পরিপূর্ণ করার জন্য আপনাকে বিশাল বড় করে ভালোবাসা।’

সুখ মেঘের এহেন কথায় হেসে দেয়। গোপনে ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলে,
“সুখের অ-সুখ শেষ হলো তবে,
সুখ না পেলে, সুখ ছিনিয়ে নিতে হবে।”

#সমাপ্ত