সুখের ঠিকানা পর্ব-২৪+২৫

0
191

#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব২৪

লিয়া নাস্তা হাতে ড্রয়িংরুমে আসলো।টি টেবিলে হাতের ট্রে টা রাখে।জারিফ লিয়াকে কিছু বলবে বলে উসখুস করছিলো।জারিফ হঠাৎ ক্ষীণ আওয়াজে বললো,,

“লিয়া।”

লিয়া জারিফের দিকে চাইলো।জারিফের মুখায়বে সিরিয়াস ভাবটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।লিয়াকে উদ্দেশ্য করে জারিফ একটু মৃদুস্বরে ফের বললো,,

“আই হেভ সিরিয়াস টক উইথ ইউ।লিয়া এটা অবশ্যই তোমার জানা জরুরী।আজকে এইসময় মূলত এইজন্যই আসা। কথাগুলো তোমাকে আর্জেন্ট বলা প্রয়োজন।”

লিয়া জারিফের দিকে কপাল কুঁচকে তাকালো। দৃষ্টি সরু করে চেয়ে অবাক হয়ে বললো,,”ওকে বলুন।”

জারিফ একটু নড়েচড়ে বসলো। আশেপাশে চাইলো। ইতস্তত কন্ঠে বললো,,”আসলে এখানে নয়।একটু নিরিবিলি স্পেস প্রয়োজন।”

লিয়ার বিস্ময়বোধ বাড়লো বই কমলো না।তবে লিয়া ভাবে জারিফ হয়তো সিরিয়াস কিছুই বলবে। অহেতুক কিছুর জন্য এভাবে অন্তত বলতো না।লিয়া জারিফের ইতস্তত বোধটা আন্দাজ করতে পেরে বললো,,”ঠিক আছে। নাস্তা করুন।তারপর ছাদে যাওয়া যাবে।”

জারিফ হালকা কিছু নাস্তা করলো।লিয়া কাজের মেয়েটাকে ডেকে বললো,,”এগুলো এখান থেকে নিয়ে যাও।আর আমরা একটু ছাঁদ থেকে ঘুরে আসছি। আম্মু জিগ্গেস করলে বলো ছাদে আছি,কেমন?”

কাজের মেয়েটা দুদিকে মাথা নাড়ালো আর বললো,,”আইচ্ছা আপামনি।”

পড়ন্ত বিকেল। ঝলমল করছে আকাশ।নীল আকাশের বুকে পেঁজা পেঁজা তুলোর ন্যায় সাদা মেঘ উড়াউড়ি করছে।হালকা বাতাস বইছে।ছাদের রেলিং ঘেঁষে লিয়া আর জারিফ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে।নাতাশা একটু দূরে পাকা করা বসার জায়গায় বসে ফোনে এন্জেলা গেইম খেলছে।জারিফ হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বললো,,
“তুমি নাতাশার মিস সুমিকে তো চেনো?”

লিয়া তড়িৎ ঘাড় নাড়িয়ে বললো,,”সুমি আপু। ফিজিক্স প্রাইভেট টিচারের মেয়ে সুমি আপুর কথা বলছেন।রাইট?”

জারিফ ছোট করে বললো,,”হ্যা।”

“চিনিতো। স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে গিয়েই অনেকবার কথা হয়েছিলো সুমি আপুর সাথে।”

একনাগাড়ে এতটুকু বলে কিছু মনে হতেই লিয়ার নিটোল কপালে ভাঁজের সৃষ্টি হয়।লিয়া ভাবে,বললো সিরিয়াস কিছু বলবে। এরমধ্যে আবার হুট করে সুমি আপুর কথা বলছে কেনো? অদ্ভুত!জারিফ দুইহাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে মাথাটা কিঞ্চিৎ নুইয়ে দাঁড়ালো। অপরাধীর স্বরে বললো,,”লিয়া তোমার নিশ্চয় এবছরের পহেলা ফাগুনের কথা মনে আছে।নাতাশাকে কেন্দ্র করে তোমার সাথে আমার একটা ভুলবোঝাবুঝি হয়েছিলো।তোমার নিশ্চয় মনে আছে।”

লিয়া তড়িৎ জারিফের মুখপানে চাইলো।লিয়া ভ্রু যুগল কুঁচকে ফেলে।জারিফের মুখে আজ ভুলবোঝাবুঝি শুনে লিয়ার বিস্ময় প্রকাশ পায়।আর এতদিন পর আজ হঠাৎ এসবই বা কেনো বলছে তা লিয়ার বোধগম্য হলো না।জারিফ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।লিয়ার মুখপানে সুগভীর শান্ত নজরে তাকিয়ে কন্ঠে অপরাধ বোধ নিয়ে ঠোঁট আওড়ায়,,

“আ’ম সরি।সেদিন আমি রং ছিলাম।আর সত্যিটা না জেনেই তোমাকে অনেক কিছু বলে ফেলেছিলাম।জানি এখন হয়তো আমার সরি-টা গ্রান্ড হবে না। তারপরেও বলবো,আ’ম রিয়েলি সরি। এবং আমি অনুতপ্ত ।”

লিয়া বিস্ময়কর চাহনিতে চেয়ে প্রশ্ন করে উঠলো,,
“আমি বুঝতে পারছি না।একটু ক্লিয়ার করে বলবেন প্লিজ।আর এতদিন পর এমন কি হলো যে,আপনি আপনার ভুলটা বুঝতে পারলেন।”

জারিফ বললো,,”সুমির আজকে বিয়ে জানো কি?”

লিয়া ঠোঁট উল্টে বললো,,”নাহ্।আর আমার জানার কথাও নয়।কারন সেই পহেলা ফাল্গুন থেকে আমি আর ফিজিক্স প্রাইভেট পড়তে ঐ স্যারের কাছে যাইনি। বলতে পারেন আপনার জন্যই যাইনি।সেদিন প্রচন্ড রাগ ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিলো আমার।আমি মনেমনে পণ করেছিলাম আপনার সাথে যেনো আর কখনো দেখা না হয়। সেইজন্য রা’গ করে ঐ প্রাইভেটে যাওয়া বাদ দিয়েছিলাম।”

একটু থেমে লিয়া হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফের মৃদু কন্ঠে বললো,,”তবুও সেই আপনার সাথে আমার ফের দেখা হলো।আর সেটা হলো বড় বোনের পাত্র হিসেবে।আপনাকে সেদিন দাদুবাড়িতে আপুর পাত্র হিসেবে দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম।”

এতটুকু বলে লিয়া থেমে যায়।মলিন হেসে বললো,,
“যাকগে সেসব বাদ দেন। বাই দ্যা ওয়ে।সুমির বিয়ে তাতে আপনার প্রবলেম টা কোথায়? বুঝলাম না।বাই এনি চান্স আপনি কি সুমিকে লাইক টাইক করেন।তাই সুমি আপুর বিয়েতে আপনার কষ্ট হচ্ছে।আর কষ্টের কথা শেয়ার করার মানুষ খুঁজে পাননি। অবশেষে আমার কাছে আসছেন শেয়ার করতে।এই আপনার সিরিয়াস কথা।”

লিয়া কপালে একহাত রেখে শেষের কথাটা বললো।জারিফ কটমট চোখে লিয়ার দিকে তাকালো।জারিফের মুখে স্পষ্ট রাগি ভাব ফুটে আছে।লিয়া জারিফের রাগি দৃষ্টি দেখেই ভড়কে যায়।শুকনো ঢোক গিলতে থাকে।জোর করে হাসার চেষ্টা করে।জারিফ দাঁতে দাঁত পিষে বললো,,

“তুমি না জেনেশুনে ফা’ল’তু এতো বকবক কেনো করো বলোতো?আর কোনো কথা ফিনিশিং করতে না দিয়ে একনাগাড়ে গড়গড় করে বলতেই থাকো।”

লিয়া বোকাবোকা চোখে তাকিয়ে একহাতে মাথা চুলকে নিয়ে ঠোঁট আওড়ায়,,”সরি।”

জারিফ লম্বা শ্বাস টেনে নিলো।ফের বলতে লাগলো,,
“গত শুক্রবার হঠাৎ করে সুমি আমাকে কল করে দেখা করার কথা বলে।একটা রেস্টুরেন্ট দেখা করার কথা বলে।আমি ফোনে বলতে বললেও সুমি আপত্তি করে বলে, সামনা-সামনি বলা নাকি জরুরী।তো আমি সুমির সাথে দেখা করতে যাই। সুমি সরাসরি বলে উঠে,অনেকদিন আগে থেকেই ও নাকি আমাকে পছন্দ করে। নাতাশাকে নিয়ে আসা -যাওয়া এভাবে আমাকে দেখতে দেখতে নাকি ও আমার উপর দূর্বলতা ফিল করে।এরকম আরো হেনতেন কথা বললো।এতে আমি অবাক হইনি।কারন একজনের ভালো লাগতেই পারে।সেটা একান্তই তার ব্যাপার।তবে মোদ্দাকথা হলো সুমি শেষে যা বললো তা শুনে আমি হতভম্ব হই।সুমির লাস্ট কথা ছিলো,, পহেলা ফাগুনে নাতাশার মাধ্যমে আপনাকে লাভ লেটার দিয়েছিলাম আজও তার উত্তর পাইনি।আর মেয়ে তো মুখফুটে বলতেও পারিনি। লজ্জা জড়তা কাজ করে। কিন্তু শেষমেষ না বলে থাকতে পারলাম না।আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।সামনের শুক্রবার বিয়ে।তবে আমি এই বিয়ে করতে চাইনা। সেদিন চিঠির উত্তর দেননি তবে রিয়াক্টও তো করেননি।আমি আপনার চুপচাপ থাকাকে এতদিন মনঃসম্মতি বলে কল্পনা করতাম।তবে আজ আর কল্পনা নয়। সরাসরি আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই।আপনি পাশে থাকলে এই বিয়ে উপেক্ষা করে আমি আপনার হাতে হাত রাখতে চাই।”

লিয়া বড়বড় চোখ করে জারিফের দিকে তাকিয়ে আছে।সেদিনের দোষকারী সুমি এতে লিয়ার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ হচ্ছে না।লিয়ার তো জানতে ইচ্ছে করছে।জারিফ সুমিকে জবাবে কি বলেছে?লিয়ার পেটের মধ্যে এই একটা প্রশ্ন গুড়গুড় করছে।তবে বলার সাহস পাচ্ছে না। আবার যদি ধমক লাগিয়ে দেয়।কথার মাঝে কথা বলায়।তাই অনেক কষ্টে লিয়া নিশ্চুপ রয়।জারিফ বলতে থাকে,,

“আমি আবার সুমিকে জিগ্গেস করি ১৪ই ফেব্রুয়ারীতে নাতাশার কাছে লাভ লেটার আপনি দিয়ে ওকে আমার কাছে দিতে বলেছিলেন।সুমি হ্যা বলে।”

একটু থেমে জারিফ চোখ বন্ধ করে ছোট করে শ্বাস টেনে নেয়। অপরাধ বোধ নিয়ে ঠোঁট আওড়িয়ে ফের বললো,,”সরি লিয়া দোষটা সুমির ছিলো আর আমি তোমার কথা বিশ্বাস না করে তোমাকে অনেক কিছুই বলেছিলাম।”

পহেলা ফাল্গুন সেদিন যা ঘটেছিল,,
রোজকার মতো জারিফ নাতাশাকে মিসের বাসা থেকে আনতে যায়।জারিফ গেইটের সামনে গাড়ি রেখে ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তার ওপাশে চলে যায়।এমন সময় লিয়া আর রুপন্তীকে প্রাইভেট পড়তে আসতে দেখে।লিয়ার হাতে টকটকে একটা লাল গোলাপ।যেটা আসার সময় রুপন্তী দিয়ে বলেছিলো, ভালোবাসা দিবসে সব বফ গফকে আর গফ বফকে ফুল দেয়।আমার তো কোনো বফ নেই।আর আমার বাগানে ফুটে থাকা টকটকে লাল গোলাপ টা দেখে ভাবলাম আমার বেস্টুকে দেওয়া যাবে।তাই তুলে আনলাম তোর জন্য। রুপন্তী এই বলে লিয়াকে ফুলটা দেয়।লিয়া ফুলের ঘ্রাণ নিতে নিতে পথ দিয়ে আসছিলো।জারিফ ফোনে কথা বলছিলো স্পষ্ট এটা দেখতে পায়।এদিকে নাতাশা মিসের সাথে গেইটে আসে।সুমি নাতাশার হাতে একটা সুন্দর ডিজাইন করা লাভ লেটার দেয়।আর বলে,ঐযে তোমার মামা ফোনে কথা বলছে।এটা গিয়ে তোমার মামাকে দিবে কেমন।নাতাশা ঘাড় নাড়িয়ে ঠিক আছে বলে।সুমি নাতাশাকে বায় জানিয়ে বাসার ভিতরে চলে যায়। সাহস করে প্রেমপত্র দিলেও ভিতরে ভিতরে সুমির লজ্জা লাগছিলো।তাই দ্রুত ভিতরে চলে যায়।লিয়া আর রুপন্তী গেইটের কাছাকাছি আসতেই নাতাশাকে দেখতে পায়। নাতাশার সাথে লিয়া কথাবলে।নাতাশা লিয়াকে মিষ্টি আন্টি বলে ডাকে আর অনেক পছন্দ করে।লিয়া হাতে থাকা ফুলটা নাতাশাকে দিয়ে বলে,কিউটি পাই এটা তোমার কেমন।নাতাশা হাসিমুখে নেয়।তারপর নাতাশা রাস্তা পার হয়ে জারিফের কাছে যাবে বলে ঠিক করে।নাতাশা এক ছুটে দৌড় দেয়।এমন সময় একটা কার আসতে থাকে।লিয়া নাতাশাকে দেখেই জোরে নাতাশা বলে চিৎকার দেয়।জারিফ চিৎকার শুনে ঘাড় ঘুরাতেই যা দেখলো তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। জারিফ ছুটে আসতে থাকে।কারের চালক নিজে রিস্ক নিয়ে কার ব্রেক করে।নাতাশা ভয় পেয়ে রাস্তায় হাঁটু গেড়ে পড়ে যায়।জারিফ দৌড়ে এসে নাতাশাকে বুকে জড়িয়ে নেয়।জারিফের সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে থাকে।লিয়াও এগিয়ে আসে।এদিকে নাতাশার তেমন কোনো ক্ষতি হয়না পড়ে যাওয়ার ফলে হাঁটু একটু ছিলে যায়।আর কারের চালক কে দেখে জারিফ অবাক হয়। ডক্টর আলিফ ছিলেন গাড়িতে।সেই থেকে আলিফের প্রতি জারিফের রেসপেক্ট আকাশসম হয়।একে তো আগে থেকেই ট্রিটমেন্টের সূত্রে আলিফ চেনাজানা আছে।আবার নিজে রিস্ক নিয়ে নাতাশাকে বাঁচায়।এতে আলিফের প্রতি জারিফের কৃতজ্ঞতাবোধ সর্বোচ্চ হয়।আলিফের কপালে হালকা আঘাত লাগে।আলিফের জায়গায় অন্যকেউ হলে হয়তো এতটা মানবতা দেখাতো না।আর ঘটতো বড় একটা দূর্ঘটনা।অকালে ঝরে যেতো একটা নিষ্পাপ প্রাণ।এই পর্যন্ত সব কিছু ঠিকই ছিলো।জারিফ নাতাশাকে যখনই জিগ্গেস করলো তখনই বিপত্তি ঘটলো।জারিফ নাতাশাকে এভাবে ছুটে আসার কারন শুধাতেই নাতাশা হাতের দিকে দেখিয়ে বললো,, তোমাকে এটা দিতে আসছিলাম।জারিফের নজর টকটকে গোলাপের দিকে যায়। অতঃপর কার্ডের দিকে।কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখে একটা লাভ লেটার।জারিফ লিয়ার দিকে একনজর চাইলো অতঃপর নাতাশাকে প্রশ্ন করলো,এই ফুল তোমাকে কে দিয়েছে?নাতাশা লিয়ার কথা বললো। জারিফ ভাবে ফুল সমেত লাভলেটার লিয়া দিয়েছে।মূহুর্তেই জারিফের কপালের রগগুলো ফুলে যায়।জারিফ নাতাশাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে আসে। অতঃপর লিয়াকে ডেকে বলে,তোমার কোনো শিক্ষাদীক্ষা নেই। এইটুকু বাচ্চা মেয়ের কাছে কেউ এসব পাঠায়।লিয়া অবাক হয়ে বলে আমি এসব দেইনি।জারিফ পাল্টা বলে স্পষ্ট ফুলটা তোমার হাতে দেখেছিলাম।লিয়া বারবার বলতে থাকে ফুলটা দিলেও কার্ডটা দেইনি। দুর্ভাগ্য বশত কার্ডে নাম লেখা ছিলো না। এমনি সুন্দর করে মিষ্টি মিষ্টি প্রেমের প্রোপোজাল ছিলো।আরেকটু হলে নাতাশা এতক্ষণ হসপিটালে থাকতো।আর নয়তো বেচেই থাকতো না। এটা ভাবতেই জারিফের লিয়াকে দোষী মনে হচ্ছিলো।জারিফ লিয়ার কথা বিশ্বাস না করে কড়া করে লিয়াকে অনেক কিছুই বলে ফেলে।নাতাশার চিন্তায় জারিফের মস্তিষ্ক কেমন জানি ওলটপালট হয়ে যায়। ঠান্ডা মাথায় না ভেবে রিয়াক্ট করে বসে জারিফ।
.
জারিফ বললো,,”তোমার থেকে সরি বলবো।সবটা তোমাকে জানাবো গত সপ্তাহেই ভেবেছিলাম। এরমধ্যে পরেরদিনই আঙ্কেলের অসুস্থতার খবর শুনি।তাই একয়দিনে জানানো হয়নি।”

লিয়া নিজেকে দমিয়ে রাখতে না পেরে প্রশ্ন করে উঠলো,,”তা সুমি আপুকে কি উত্তর দিয়ছিলেন?”

জারিফ স্পষ্টভাবে বললো,,”সুমি মেয়ে না হয়ে ছেলে হলে সজোড়ে দুইগালে দুইটা চ’ড় পড়তো।তবে মেয়ে বলে বেঁচে গেলো। একজন টিচার হয়ে কিনা ছোট বাচ্চা মেয়েকে দিয়ে এসব পাঠায়।আর সেদিন যদি নাতাশার কিছু হয়েই যেতো তাহলে কিহতো? উফ্!”

লিয়া ফের বললো,,”সঠিক উত্তর টা এখনো পেলাম না।”

“সুমিকে বলে দিয়েছি আমি অলরেডি ম্যারিড।বিয়েটা করে নিন এটাই আপনার জন্য বেটার হবে।”

উফ্!লিয়া এতক্ষণে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।জারিফ লিয়ার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,,”লিয়া আমি অনেক ভেবেছি। অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আমি আমাদের সম্পর্কটা আগাতে চাই।তোমার আর আমার সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে চাই।লিয়া তুমি ভেবো না সুমির সত্যিটা জানার পর থেকে এটা ভেবেছি।রুপমের বিয়ে থেকে বাসায় গিয়ে তারপর থেকে আমি তোমাকে নিয়ে অনেক চিন্তা করেছি। রোহান যখন আমার সামনে তোমাকে ভালো লাগার কথা বলতো।আমার প্রচন্ড রাগ হতো।তারপর যখন বললো,তোমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে।তখন নিজেকে কাপুরুষ মনে হলো।বিয়েটা যেভাবেই হোক না কেনো তুমি আমার বউ।আর আমার সামনে অন্যকেউ তোমাকে ভালোলাগার কথা বলছে,ইভেন প্রস্তাব নিয়ে যাবে এসব কিছু আমার ইগোতে লাগে। ছোট্ট একটা জীবন হেলায় ফেলায় ন’ষ্ট না করে সুন্দর করে সাজিয়ে নেওয়াই বেটার।আর প্রথম দিকে এই বিয়েটার জন্য তোমাকে দায়ী করার জন্যও সরি।সেদিন এমনভাবে ঘটনাটা ঘটলো।আমি সহজেই মেনে নিতে পারছিলাম না। আর তাৎক্ষনিক ভাবে মেনে নেওয়া এতটা সহজও ছিলো না।যা কিছু হয়েছিলো না তোমার কোনো হাত ছিলো না আমার।হয়তো তুমি আমার ভাগ্যে ছিলে। আমি এই নিয়ে এই কয়দিনে অনেক ভেবেছি।শেষমেষ নিজেকে স্থির করেছি, তোমার আর আমার সম্পর্কটা আর সবার মতো স্বাভাবিক করবো। লোহা ফেলে রাখলে যেমন ঝং ধরে ঠিক তেমনি অবহেলায় অযত্নে সম্পর্ক ন’ষ্ট হয়ে যায়। একটা সম্পর্ক ঠিকঠাক রাখতে দু’জনের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি আমার দিক হতে সর্বোচ্চ ট্রায় করবো।লিয়া তুমি আমাকে বিশ্বাস করে দেখতে পারো।আর আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই।তুমি কি চাও? আমাদের সম্পর্কটা আগাতে চাও কি চাওনা?”

লিয়া নিশ্চুপ থাকে।লিয়াকে নিশ্চুপ দেখে জারিফ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে। চোখেমুখে একরাশ আশা নিয়ে ফের বললো,,”নিরবতা সম্মতির লক্ষণ।তবে কি আমি তোমার নিরাবতাকে সম্মতি ধরে নিবো?”

লিয়া মৃদু হাসলো। নরমস্বরে বললো,,”বিয়ে, সংসার নিয়ে প্রত্যেকটা মেয়েরই রঙিন স্বপ্ন থাকে।আমি তাদের ব্যতিক্রম নই। স্বামী সংসার নিয়ে একটা সুখের ঠিকানা হবে এমন স্বপ্ন বুনেছি।আর বিয়েটা যেভাবেই হোকনা কেনো আপনাকে আমি মন থেকে স্বামী হিসেবে মানি।আর আপনাকে আমার সুখের ঠিকানার কারিগর ভাবী।”

লিয়ার কথাশুনে জারিফ সন্তুষ্ট হয়।জারিফ বিনিময়ে চমৎকার হাসে।এমন সময় ছাদে সেদিনের আন্টি আসতে থাকে।জারিফ একনজর দেখেই মাঝ বয়সী মহিলাকে চিনে ফেলে।লিয়ার সেদিনের কথার শোধ তুলতে জারিফ হুট করে নাতাশাকে ডেকে বলে উঠলো,,
“নাতাশা তুমি ওখানে না থেকে এখানে আসো।নাতাশা তোমার মামীর কাছে আসো।আর কিছুক্ষণ পর তো আমরা চলে যাবো।তাই বাকি সময়টা তোমার মামীর সাথে কাটিয়ে নাও।”

জারিফ কথাগুলো একটু জোরেশোরে বলছিলো।মহিলা কপাল কুঁচকে লিয়া আর জারিফের দিকে চাইলো।লিয়াকে মামী বলছে শুনে মহিলার কৌতুহল বাড়তে থাকে। ভদ্রমহিলা মনেমনে আওড়ায়,লিয়া তো অবিবাহিত আর ছেলেটা বাচ্চা মেয়েটাকে তোমার মামী মামী বলছে কেনো?আর বাচ্চাটার মামা এই সুদর্শন ছেলেটা।তবে কি?উনি প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য ছাদে না থেকে নিচে নামতে থাকেন।লিয়া এতক্ষণ তাকিয়ে জারিফের কাজ দেখছিলো।লিয়া ঠোঁট চেপে বললো,,

“নাতাশার মামা নিজেকে খুব চালাক ভাবেন।তাইনা? আমি ঠিক ধরেছি। আন্টিকে জানান দিলেন এই জোরে জোরে তোমার মামী মামী বলে।”

লিয়ার কপালের উপর ছোটোছোট কিছু চুল ছিলো।জারিফ ঠোঁট গোল করে ফু দিয়ে সরিয়ে দেয়।লিয়া তড়িৎ আঁখিযুগল বন্ধ করে নেয়।জারিফ চমকপ্রদভাবে বললো,,”নাতাশার মামী কি নিজেকেই শুধু চালাক ভাবে?এটা ভেবে থাকলে ভুল।”

ভদ্রমহিলা নিচে নামতেই রাহবারের সাথে দেখা হলো। ভদ্রমহিলা কিওরিওসিটি আর আটকে রাখতে না পেরে জিগ্গেস করলো,,”লিয়ার সাথে ফর্সা উঁচু লম্বা দেখতে ছেলেটা কে?”

“কে জারিফ ভাইয়া? আন্টি জারিফ ভাইয়ার কথা বলছেন।”

মহিলার এবার রা’গ হলো। ভাই-বোন সমান ভাইও বোনের মতো উত্তর দিচ্ছে। ভদ্রমহিলা এবার একটু কর্কশ গলায় বললেন,,”আরে তোমাদের কি হয় তাই বলো। লিয়ার সাথে এর আগেও দেখেছি আজও দেখলাম।কি হয় তোমাদের?”

“আপুর বর।”

কথাটা বলেই রাহবার হনহন করে ভিতরে চলে যায়।মহিলা বড়বড় চোখ করে ভাবে,বর বিয়ে হলো কবে?তবে এমন কিছু হবে আগেই ভেবেছিলাম।”

জারিফ এনামুল খাঁনের সাথে দেখ করে কুশলাদি বিনিময় করে। অতঃপর রাজিয়া সুলতানার থেকে বিদায় নিয়ে যেতে থাকে।লিয়া নিচে নামে। গাড়ি অব্দি আসে।লিয়া কিছুটা ঝুঁকে নাতাশার দুইগালে হাত রেখে বলে,,”নাতাশা সোনা আবার এসো কেমন।আর ঠিকমতো খাবার খেয়ো।তুমি তো দেখছি আগের থেকে অনেকটা শুকিয়ে গিয়েছো।গুড গার্লের মতো নানুমনির কথা শুনবে হ্যা।”

নাতাশা ঘাড় নাড়ায়। তড়িৎ চঞ্চল কন্ঠে বলে উঠলো,,
“শুনিতো।আমি তো গুড গার্ল ।সবার কথা শুনি হ্যা।”

লিয়া নিঃশব্দে হাসলো।নাতাশার দুইগালে চুমো খেলো।জারিফ গাড়ির ডোর খুলতেই লিয়া সুন্দর করে নাতাশাকে বসিয়ে দিলো।জারিফ ডোর লকড করলো।পাশে দাঁড়ানো লিয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু আওয়াজে বললো,,”নাতাশার মামী বিদায় নাতাশা একা নিচ্ছে না আরেকজনও কিন্তু নিচ্ছে। তুমি চাইলে তাকেও এভাবে টুপ করে চুমু দিয়ে বিদায় দিতে পারো।আমি অবশ্য এতে মাইন্ড করবো না।”

চলবে,,,

#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব২৫

জারিফের কথাশুনে লিয়া তড়িৎ বড়বড় চোখ করে জারিফের মুখপানে চাইলো।লিয়ার বিস্ময় যেনো আকাশ ছুঁইছুঁই হলো। লজ্জায় লিয়ার কর্ণদ্বয় উষ্ণ হতে থাকে। লিয়া তাৎক্ষণিক উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।বারকয়েক ফাঁকা ঢোক গিলে নেয়।জড়তা নিয়ে মৃদু আওয়াজে ঠোঁট নেড়ে বললো,,

“নাতাশার মামা আমি বিস্মিত হচ্ছি আপনার আবদার দেখে।জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা বাদ দিন।আর শখ-টখ লিমিটের মধ্যে রাখুন,হু।”

জারিফ নির্বিকার ভাবে ফের বললো,,”এখনই সীমা নির্ধারণ করে দিচ্ছো।কোনো শখ তো প্রকাশই করলাম না।যাকগে এসব নাহয় বাদ দিলাম। ‌আচ্ছা তোমার কথাই রাখলাম।জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা বাদ দিয়ে বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নাহয় স্বপ্ন দেখা যাবে।আর আমার ফ্যান্টেসিতে তো আর বাঁধা নেই।নাকি সেখানেও তোমার সীমারেখা আছে।”

লিয়া ঠোঁট কামড়ে ধরে ভেবে দুই সেকেন্ড খানেক পরে বলে উঠলো,,”জানিনা।”

একটু থেমে প্রসঙ্গ পাল্টাতে দ্রুত বলে উঠলো,,”রাত হয়ে গিয়েছে। নাতাশা আবার ঘুমিয়ে পড়তে পারে।তাই দেরি না করাই ভালো হবে।আর দেখেশুনে ড্রাইভ করবেন।”

জারিফ বিনিময় প্রশস্ত হাসলো।যা লিয়ার নজরে পড়লো না। জারিফ বায় বলে গাড়িতে বসে।
.
কে’টে গিয়েছে অনেকগুলো দিন।একএক করে লিয়ার সব পরীক্ষা শেষ হয়েছে।এখন শুধু প্রাকটিক্যাল পরিক্ষাগুলো বাকি আছে।দুদিন পর থেকে প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা। কেমিস্ট্রি প্রাকটিক্যাল খাতায় সিগনেচার নেওয়ার জন্য লিয়া কলেজে আসছিলো। সিগনেচার নেওয়া শেষে রুপন্তীর সাথে গাঙ্গিনাপাড়ে আসে। পরীক্ষার জন্য অনেকদিন শপিং করা হয়না। টুকিটাকি কিছু কেনার জন্য শহরে আসে লিয়া।লিয়া রুপন্তীর সাথে আউট ফিটে আসে।আর একদিন বা দুইদিন পর থেকে রোজা শুরু হবে।আজ যদি আকাশের বুকে বাঁকা চাঁদ উঠে তবে আজই শুরু হবে পবিত্র মাহে রমজান।আর আজ চাঁদ দেখা না গেলে আগামীকাল থেকে শুরু হবে রোজা।মলে এখন থেকেই হালকা ভিড় দেখা যাচ্ছে।আর একসপ্তাহ গেলে তো এই ভিড় বাড়তেই থাকবে। রুপন্তী পুতুলের গায়ে থাকা কুর্তি নেড়েচেড়ে দেখছে আর বলছে,,

“এই লিয়া একটু হেল্প কর-না ইয়ার।এভাবে সং এর মতো দাঁড়িয়ে না থেকে একটু চুজ করে দে না দোস্ত।”

লিয়া কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলো। ঠোঁট চেপে বললো,,
“আশ্চর্য! তুই পছন্দ কর-না বোন।আর আমার পছন্দ খুব বাজে, হুঁ। আমার পছন্দ করা কোনো কিছু নিলে সেটা কারোরই পছন্দ হবে না।তাই বলছি তুই নিজেই পছন্দ কর রুপু।”

রুপন্তী ত্যাড়া করে বললো,,”তোর পছন্দ তো জারিফ ভাইয়া ছিলো।তুই তো নিজে পছন্দ করেছিস।তবে কি

রুপন্তীর কথার মাঝেই লিয়া ফোড়ন কাটল।সরু চোখে চাইলো। দাঁতে দাঁত পিষে ফের বললো,,”রুপু।এখানে জারিফের কথা টানছিস কেনো? অদ্ভুত!আমি তো বস্তুগত জিনিসের কথা বলছি। সেখানে তুই।”

রুপন্তী মুচকি হাসলো। হাসিমুখে ফের ঠোঁট আওড়ালো,,”তাহলে বলতে চাইছিস তোর অন্যসব পছন্দ বাজে হলেও। তোর এই পছন্দটা খা’রাপ হয়নি।লাইফ পার্টনার হিসেবে জারিফ ভাইয়াকে চুজ করা তোর খা’রাপ হয়নি।আ্যম আই রাইট?”

লিয়া ভাব নিয়ে বললো,,”ইয়াহ।অবিয়েসলি। এনাবুল জান্নাত খাঁন লিয়ার এই পছন্দটা না গুড না বেটার। এটা তো একদম বেস্ট।”

কথাটা শেষ করে লিয়া চমৎকার মিষ্টি হাসলো।কেউ একজন কাঁচের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই এই হাসিটা মুগ্ধ নয়নে দেখলো।কলেজ থেকে আসায় লিয়ার গায়ে ইউনিফর্ম পরা।দুইপাশে লম্বা দুইটা বেনুনি।একটা বেনুনি কাঁধের উপর দিয়ে সামনে রাখা। কানের একপাশ দিয়ে এক গুচ্ছ চুল যা ঘেমে মুখের সাথে কিছুটা লেপ্টে আছে। এই লুকে লিয়াকে মারাত্মক সুন্দর লাগছে।অনেক বেশিই আকর্ষণীয় লাগছে লিয়াকে। আগন্তুক ব্যক্তি লিয়াকে স্ক্যান করে। রুপন্তী লিয়ার কাঁধে হালকা চাপড় দিয়ে হেসে বললো,,

“হয়েছে হয়েছে দোস্ত ‌আর বলতে হবে না।আমি তো জাস্ট মজা করছিলাম।”

জেন্টস কালেকশনের দিকে হঠাৎ লিয়ার নজর যায়।ঝুলানো অনেকগুলো শার্টের মধ্যে একটা সাদার উপর নীলের চেইক শার্টে লিয়ার দৃষ্টি আটকে যায়। শার্টটা দেখে লিয়া ইমাজিন করে জারিফের গায়ে কেমন লাগবে।লিয়া একপা দু পা করে সেদিকে এগিয়ে যায়।লিয়া শার্টটাতে হাত দেয়।এমন সময় অপর পাশ থেকে কেউ শার্টটাতে টান দেয়।লিয়াও একহাতে টান দেয়।দুইপাশের দুজনই তড়িৎ মাথাটা তুলে চাইলো।লিয়া একজন ইয়াং ম্যানকে দেখে কপাল কুঁচকে ফেলে।ওপাশের মানব লিয়াকে দেখে নির্নিমেষ চাহনিতে চেয়ে রইলো।লিয়া বিরক্ত হলো। লিয়ার ফেসে বি’রক্ত ভাবটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। লিয়া একটু কর্কশ গলায় বললো,,

“আশ্চর্য! দেখছেন আমি শার্টটা দেখছি।অথচ আপনি আবার শার্টটা ধরে টানাটানি শুরু করে দিয়েছেন। শার্টটা আমি আগে দেখেছি তাই এটা ছেড়ে দিলে খুশি হবো।যখন একজন একটা জিনিস দেখতে থাকে।তখন সেটায় হাত দেওয়া অভদ্রতা তা জানেন না?”

লিয়ার এহেন কথাবার্তায় অপর পাশের মানব হকচকিয়ে যায়। হতভম্ব হয়ে কপালে প্রগাঢ় ভাঁজ ফেলে হতবাক চোখে তাকিয়ে রয়।আসলে এপাশে কেউ শার্টটা দেখছিলো।লোকটা তা দেখতে পায়নি। শার্ট দেখতে দেখতে এমন সময় এই চেইক শার্টে নজর যায়। আর বেশ পছন্দও হয় তাই টান দেয়।লিয়ার রিয়াকশন দেখে লোকটা ভড়কে যায়। নিজেকে ধাতস্থ করে হালকা কেশে গলা ঝেড়ে নিয়ে অবাক কন্ঠে বলে উঠলো,,”

“আ’ম ভেরি আ্যস্টোনিস্ট ফর ইউর রিয়াক্ট।”

লিয়া ভ্রু যুগল কুঁচকে তাৎক্ষণিক বলে উঠলো,,”হোয়াট হ্যাপেন্ড? টু বি আ্যস্টোনিস্ট!”

অপর পাশের ব্যক্তি গলার স্বর খাদে নামিয়ে বললো,,” ম্যাম আমি ভাবছি শার্টটা তো আর আপনি পড়বেন না।যেহেতু আপনি একটা মেয়ে । সেইজন্য শার্ট নিয়ে আপনার এতটা উত্তেজিত হওয়াতে আমি অবাক হচ্ছি।আর আপনার প্রথম রিয়াক্টটা একদম হাই ছিলো।যা আমাকে বিস্মিত করেছে।”

লিয়া কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করে উঠলো ,,”কেনো মেয়েরা কি শার্ট পড়ে না?”

“পরে না এমন নয়।তবে আমাদের দেশের কালচার তো এমন নয়।আর সচরাচর দেখাও যায়না।”

একটু থেমে। কন্ঠের স্বর একদম খাদে নামিয়ে ফের বললো,,”সমস্যা নেই ম্যাম।আপনি শার্টটা নিন।আমি অন্যগুলো দেখছি।”

লিয়া কোনো কথা না বলে শার্টটা নিয়ে সেলসম্যানকে উদ্দেশ্য করে বলে,,”এটা প্যাক করে দিন।”

লোকটা চোরাচোখে লিয়ার দিকে তাকিয়ে মনেমনে আওড়ায়, দেখতে আর হাসি যত মিষ্টি লাগলো।ঠিক কথাগুলো উল্টো ততটাই ঝাঁঝ মনে হলো।কথায় মনে হচ্ছে ঝাঁঝ লবঙ্গ। উফ্!তবে লুকিং ভেরি বিউটিফুল আর হাসিটা ভয়ংকর সুন্দর।

লিয়ার পাশে এসে লোকটা দাঁড়ালো সেলসম্যানকে উদ্দেশ্য করে বললো,,”এই শার্টটা কি ওয়ান পিস-ই?না মানে ডিসপ্লেতে আর দেখছি না।আপনাদের কাছে সেইম শার্ট থাকলে আমাকেও দিন।”

হ্যাংলা পাতলা দেখতে যুবক সেলসম্যানটা নম্রস্বরে বললো,,”সরি স্যার।এটা ওয়ান পিস-ই ছিলো।”

“ওকে।”

বলে লোকটি আবার ডিসপ্লেতে রাখা শার্ট দেখতে থাকে।লিয়া বিল পে করে।সেলসম্যান প্যাক করে ডেস্কের উপর রাখে। এরমধ্যে রুপন্তী ওর নিজের বিল পে করে।লিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“এই লিয়া কয়টা বাজে-রে।একটু কসমেটিক্স এর দোকানে যাওয়ার দরকার ছিলো।”

লিয়া ব্যাগ থেকে ফোন বের করে সময় দেখার জন্য।এমন সময় জারিফের তিনটা মিসড কল দেখতে পায়। প্রায় ঘন্টাখানেক আগের। লিয়া রুপন্তীকে ইশারা করে একটু ফাঁকা স্পেসে যায় কথা বলার জন্য।লিয়া কল ব্যাক করে।জারিফ কল কে’টে ব্যাক করে।লিয়া রিসিভ করে সালাম দেয়।জারিফ সালামের উত্তর দিয়ে ব্যতিব্যস্ত গলায় বললো,,”এই লিয়া কোথায় তুমি?কি করছো?কতবার ফোন দিলাম তুললে না যে।পরীক্ষা শেষ আপাতত পড়াশোনার প্যারা নেই। সেইজন্য দিনের বেলাতেও পরেপরে ঘুমাচ্ছো নাকি?নিজে থেকে তো ফোন দিয়ে কখনো বরের খোঁজ খবর নাও না।আবার ঠিকঠাক সময় মতো রিসিভও করো না।”

জারিফের কথায় লিয়া নিঃশব্দে হাসলো। ঠোঁট প্রসারিত করে মৃদুস্বরে বললো,,”সরি খেয়াল করিনি আপনার কল।ব্যাগে ফোন ছিলো।আর আমি একটু গাঙ্গিনাপাড়ে আসছি।এখন***আছি।”

জারিফ ফোনটা কানে দিয়ে কাঁধের সাহায্যে ধরে আছে। আর স্লো গতিতে ড্রাইভ করছে।লিয়ার মুখে এখন গাঙ্গিনাপাড়ের কথাশুনে জারিফের কপালে সুক্ষ ভাঁজের সৃষ্টি হয়।জারিফ দ্রুত শুধালো,,

“এখন শহরে। কিন্তু কেনো?”

“প্রাকটিক্যাল খাতায় সিগনেচার নিতে আসছিলাম কলেজে।আর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নেওয়ার ছিলো তাই ভাবলাম সামনে তো রোজা।আর রোজার মধ্যে ভিড় থাকবে তাই আজকে যখন ফ্রি আছি তাই নিয়ে আসি। তাই আসা আরকি।”

“ওহ্!তবে আসার আগে আমাকে বলতে পারতে।আমি নিয়ে আসতাম।”

“আপনি কি গাড়িতে এখন? গাড়ির শব্দ শোনা যাচ্ছে।”

“হ্যা। ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরছি। আচ্ছা লিয়া তুমি এক কাজ করো তুমি নিচে একটু ওয়েট করো।আমি ফাস্ট আসছি।”

“ওকে।”

লিয়া কথা বলে আসতেই রুপন্তী ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,,”এতো কি কথা বললি বলতো? মার্কেটে দাঁড়িয়েই এতটা সময় ধরে প্রেমালাপ করলি। বাসায় নিরিবিলিতে একে অপরকে দেখে ভিডিও কলে ঘন্টার পর ঘন্টা নিশ্চয় কথা বলে পার করিস?”

লিয়া কটমট চোখে রুপন্তীর দিকে চাইলো। ঠোঁট চেপে বলল,,”ফা’জ’লা’মো বন্ধ কর।আর চল।”

লিয়া আর রুপন্তী যেতে থাকে।লিয়া কাঁচের দরজাটা একহাতে ধরে টান দেয়।এমন সময় পুরুষালী কন্ঠস্বর শ্রবণেন্দ্রিয়ে পৌঁছাতেই লিয়া থেমে যায়।

“এইযে ম্যাডাম খুব তো শার্টটা নেওয়ার জন্য ঝ’গড়া , তর্ক করলেন।আর শেষমেষ কিনা ফেলে রেখেই চলে যাচ্ছেন।নাকি কিনে ইনডাইরেক্টলি আমাকে গিফট করতে রেখে গেলেন।”

কথাটা শেষ করে লোকটা মৃদু হাসলো। লিয়া শেষের কথাশুনে রাগান্বিত হয়। স্পষ্ট রাগি দৃষ্টিতে তাকায়। কিছু বলবে তার আগেই লোকটা অমায়িক হেসে নম্রভাবে বললো,,”এমনি মজার ছলে বললাম। যাইহোক ইচ্ছে করে না হোক অনিচ্ছায় তো ফেলে রেখেই যাচ্ছিলেন।”

সত্যিই লিয়া ভুলেই গিয়েছিলো।হাতে আরো কয়েকটা ব্যাগ আছে। নতুন করে নেওয়া শার্টের ব্যাগটা ডেস্কের উপর থেকে তো হাতে নেওয়াই হয়নি। এরমধ্যে জারিফের সাথে কথা বলতে থাকে।আর বেমালুম ভুলে বসে আছে লিয়া।লিয়া ডেস্কের উপর থেকে ব্যাগটা হাতে নিলো।লোকটাকে ধন্যবাদ জানাতে ভদ্রভাবে বললো,,”থেংকিউ ফর ইউর রিমেম্বারনেস।”

লোকটা স্মিত হেসে বিনিময় বললো,,”নো মেনশন।”

লিয়া রুপন্তীর সাথে নিচে এসে ফুটপাতের একপাশে একটু ছায়ায় দাঁড়ায়। রুপন্তী মিটমিট করে হাসতে হাসতে বলল,,”লিয়া থাক আমি বাসায় গেলাম,হ্যা।”

“ওয়েট কর পরে যাবি।”

“তোদের কাপলের মাঝে হাড্ডি হতে চাইছি না। তোদের স্পেস দেওয়ার জন্য হলেও না থাকাই বেটার।”

লিয়া মৃদু রা’গি চাহনিতে চেয়ে ঠোঁট চেপে বললো,,”রুপু।”

রুপন্তী লিয়ার ফেস দেখে শব্দ করে হাসলো।লিয়াকে বুঝিয়ে বিদায় নেয়।লিয়া ক্যাধে থাকা ব্যাগটা অন্য হাতের সাহায্যে একটু ঠিক করলো। এরমধ্যে পুরুষালী কন্ঠস্বর ফের কানে আসলো,,

“হ্যালো মিস।এখান থেকে টাউন হলের দূরত্ব কতটুকু?”

লিয়া ঘাড়টা ঘুরিয়ে তখনকার লোকটাকে দেখতে পায়।লোকটার কথা শুনে স্পষ্ট বোঝা গেলো এই শহরে হয়তো নতুন।তা না হলে টাউন হল চেনে না এমন মানুষ এই শহরে নেই।লিয়া জবাবে বললো,,”***কিলো।”

“থেংকিউ।”

লোকটা ভেবেছিলো লিয়া হয়তো পাল্টা এটাসেটা বলবে।নতুন নাকি,বাসা কোথায়?হেনতেন আরো কিছু বলবে।লোকটার সে আশায় এক বালতি পানি ঢেলে লিয়া নির্বিকার থাকে। কোনো কিছু জানা বা শোনার কোনো প্রকারের ইন্টারেস্ট লিয়ার মধ্যে নেই।তা লিয়ার এটিটিউড দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।লিয়ার এই এটিটিউডটা লোকটার বেশ ভালো লাগলো। ছোট করে শ্বাস ফেলে ফের বললো,,
“আপনাদের শহরটা বেশ সুন্দর।তেমনি সুন্দর আপনার চয়েজও।ঠিক আপনারই মতো।”

লিয়া বড়বড় চোখ করে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।লোকটা তড়িৎ শুকনো ঢোক গিলে নিলো।গলার স্বর মিইয়ে মিনমিনে গলায় বললো,,

“না মানে বলতে চাইছি। শার্টটা খুব সুন্দর ছিলো। আপনার পছন্দ এক কথায় অসাম।”

লিয়ার কোনো ভাবান্তর নেই।লিয়া জারিফের জন্য ওয়েট করছে। বারবার রাস্তার দিকে নজর দিচ্ছে। লোকটা নরম কন্ঠে ফের বললো,,

“তা মিস এখান থেকে রিকশা করেই তো টাউনহলে যাওয়া যাবে?”

লিয়া এক শব্দে বলে,,”হুম।”

“থ্যাংকস আ লট। আসি।ভালো থাকবেন মিস।”

কথাটা বলে লোকটা চলে যেতে থাকে। লিয়া লোকটার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,,কই থেকে যে এরা আসে।মেয়ে দেখলেই খেজুরে আলাপ জুড়তে ইচ্ছে করে। উফ্!সবাইকে সমান ভাবে।

“লোকটা কে?”

হঠাৎ এরকম কথায় লিয়ার ভাবনা ভাঙ্গে।লিয়া তৎক্ষনাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে জারিফকে দেখতে পায়।জারিফ পার্কিং লনে গাড়ি পার্ক করে এগিয়ে আসতেই।একটা লোককে লিয়ার সাথে কথা বলতে দেখতে পায়।ছেলেটার একপাশ দেখা গিয়েছিলো।পুরোটা দেখা যায়নি। জারিফ হন্তদন্ত পায়ে এগিয়ে আসে।আসতে গিয়ে লাস্ট কথাটা কর্ণগোচর হয়।জারিফের কথার প্রতিত্তরে লিয়া বললো,,

“চিনি না। টাউন হল নাকি চেনে না।এখান থেকে কতদূর তাই জিগ্গেস করছিলো। আচ্ছা বাদ দেন এসব।”

জারিফ ছোট করে বললো,,”ওহ্ । ”

কিছু মনে হতেই কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ পড়ে।কপাল কুঁচকে ফের প্রশ্ন করে উঠলো,,”লোকটা তোমাকে মিস কেনো বললো? আচ্ছা যখন বললো,তখন তুমি বলতে পারলে না।তুমি মিস নয় মিসেস।”

জারিফের কথাশুনে লিয়ার দমফাটানো হাসি পাচ্ছে।তবে আপাতত হাসিটাকে চেপে রাখে লিয়া।মুখ টিপে হাসে।লিয়া জারিফকে জেলাস ফিল করাতে বলে উঠলো,,”আমার গায়ে তো বিবাহিত ট্যাগ লাগানো নেই,যে দেখেই একজন বুঝবে লিয়া ম্যারিড।আর আমাকে দেখে হয়তো ম্যারিড বোঝা যায়না।তাই মিস বলেছে।আর লোকটার চোখমুখ অন্য কিছু বলছিলো,বেচারা হয়তো আমাকে লাইক টাইক করে বসে আছে।আর সেই মুহূর্তে যদি আমি বলি আমি মিসেস জারিফ।তাহলে তো বেচারার সদ্য জন্ম নেওয়া অনুভূতি একদম ভষ্ম করে দেওয়া হবে।এতটা কঠোর হতে ইচ্ছে করেনি।তাই হয়তো বলতে পারিনি।”

লিয়ার কথাশুনে জারিফের মেজাজ তরতর করে বিগড়ে যেতে থাকে। কপালের রগগুলো দৃশ্যমান হতে থাকে।জারিফ দুই আঙ্গুল কপালে স্লাইড করে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে দাঁতে দাঁত পিষে বললো,,”সারা দুনিয়ার মানুষের জন্য তোমাকে এতটা সহৃদয় হতে হবে না। শুধুমাত্র নিজের বরের জন্য সহৃদয় হও আর বাকিদের জন্য আগ্নেয়গিরি হবে।যার জলন্ত অগ্নি শিখা দেখে সবাই ভ’য়ে নিজ দায়িত্বে ডিস্টেনস বজায় রেখে চলবে। ক্লিয়ার?”

লিয়া এবার শব্দ করে হেসে ফেললো।হাসি মুখেই বললো,,”জনাব কি জেলাস ফিল করছিলেন?”

জারিফ প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায়। লিয়াকে উদ্দেশ্য করে ইশারা করে মলে যেতে বলে। লিয়া নিজের হাতের দিকে ইশারা করে বললো,,”আজ আর নয়, প্লিজ।আজ আপাতত কেনাকাটা শেষ।”

জারিফ বারকয়েক বলাতেও লিয়া আজ আবার মলে যেতে রাজি হলো না। অবশেষে জারিফ রেস্টুরেন্টে যাওয়ার কথা বলে।একটা রেস্টুরেন্টে এসে ওরা বসে।জারিফ লিয়ার দিকে টিস্যু বাড়িয়ে দেয়।লিয়া কপালের ঘামটা মুছে নেয়।জারিফ বললো,,

“কি খাবে বলো?”

লিয়া বললো,,”লাচ্ছি।গরম পড়ছে।তাই লাচ্ছিই বেটার হবে।”

“লাঞ্চ টাইম তো হয়েই আসছে। সাথে আরো কিছু অর্ডার দেই?লাইক কাচ্চি।”

লিয়া ঠোঁট উল্টে বললো,,”নাহ্।থাক।এমনিতেই আমি বাইরের খাবার এ্ভ্যয়েড করে চলি।বেশি তেল চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করে চলি।”

জারিফ ওয়েটারকে ডেকে লাচ্ছি দিতে বলে।জারিফ বলতে লাগলো,,”খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে তুমি দেখছি খুব বাছবিচার করো।ডায়েট কন্ট্রোল করে চলো।ওয়েল।”

লিয়াকে পরখ করে কিছু ভেবে জারিফ দুষ্টুমি করে বলে উঠলো,,”তবে তোমার ওয়েট আরেকটু বাড়ানো প্রয়োজন।একটু বেশিই থিন লাগছে।এতটা থিন হলে তো আমার জন্য সমস্যা হয়ে যাবে।আর কয়দিন পর থেকে তো আমার ভর তোমাকে সামলাতে হবে।তখন এই চিকন শরীর নিয়ে আমাকে সামলাতে হিমশিম খেতে হবে তোমাকে।তাই বলছি এখন থেকে একটু বেশি করে খাবার খাওয়া শুরু করো।যাতে বরকে ঠিকঠাক সামলাতে পারো।”

লজ্জায় আর অস্তিত্বে লিয়ার বুকের ভেতর দ্রিমদ্রিম শব্দ খেলে যায়। লজ্জায় লিয়ার নাকের ডগা লাল হয়ে যায়।লিয়া বিড়বিড় করে বলে, অসভ্য লোক একটা। এরমধ্যে ওয়েটার লাচ্ছি দিয়ে যায়।জারিফ একটা লিয়ার দিকে বাড়িয়ে দেয়।জারিফ স্ট্র-তে ঠোঁট ছোঁয়ায়। লিয়ার দিকে শান্ত চাহনিতে চেয়ে নরম কন্ঠে বললো,,

“এই লিয়া।”

লিয়া মাথাটা তুলে নিভুনিভু চোখে জারিফের মুখপানে চাইলো।চোখের পাপড়ি নাড়ালো।ইশারায় বোঝালো,’কি?’জারিফ সুগভীর শান্ত নজরে লিয়ার দিকে চেয়ে বললো,,

“ইউনিফর্ম পরে তোমাকে তো একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছে।যেখানে আমার স্টুডেন্টরা তোমার থেকে সিনিয়র। ‌সেখানে আমার বউ কিনা সবে এইচএসসি দিচ্ছে। বাই এনি চান্স আমার কোনো স্টুডেন্ট যদি তোমাকে আর আমাকে এখন দেখে।তবে শিয়র ভাববে স্যার একটা স্কুল বা কলেজ পড়ুয়া মেয়ের সাথে প্রেম করছে।আমার বউ হিসেবে এতটা ছোটো তুমি। কিকরম হয়ে গেলো না?”

লিয়া গালে থাকা লাচ্ছিটুকু গিলে নেয়। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বললো,,”খুব তো শখ ছিলো সেইম এইজের মেয়েকে বিয়ে করা। গিয়েছিলেন ও তো বিয়ে করতে।তবে কপাল খা’রাপ ছিলো।তাই হয়নি।”

লিয়ার কথাশুনে জারিফের মুখটা চুপসে যায়।জারিফের এখন নিজের উপর রা’গ হচ্ছে। কেনো যে ওরকম বলতে গেলো।আর লিয়াকে কথা বলার সুযোগ বের করে দিলো।লিয়া এরকমটা বলবে জানলে জারিফ ভুলেও ওরকম বলতো না।জারিফ হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে একটু নড়েচড়ে বসে বললো,,”এই তোমার মন তো দেখছি একদম লোহার মতো শক্ত। রোমান্টিকতার র-ও বোঝোনা মনেহয়।আর নাকি ইচ্ছে করে সবসময় আমার সাথে কঠোরতা দেখাও।আজ প্রায় দেড়মাস পর তোমার সাথে আমার দেখা হচ্ছে।সেখানে মিষ্টি করে কথা বলবে।তা না করে শুধু ত্যাড়াত্যাড়া কথা বলছো।তোমার কি ইচ্ছে করে না।আমার সাথে একটু স্পেশাল টাইম স্পেন্ট করতে?”

লিয়া মনেমনে ব্যাকা হাসলো।জারিফের কথার উত্তর না দিয়ে বলে উঠলো,,”ওহ্,হো।আপনাকে তো একটা খবর দেওয়াই হয়নি।আপনার এক্সের বিয়ে ঈদের পরে। এনগেজমেন্ট অলরেডি হয়ে গিয়েছে।”

জারিফ কপাল কুঁচকে বললো,,”বুঝলাম না ?”

লিয়া টেবিলের উপর দুইহাত ভাঁজ করে রাখলো।আর বললো,,”কেনো এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন।এককালে আপনার হবু বউ যে ছিলো।তার কথা বলছি।”

জারিফ লিয়ার এরকম কথাবার্তায় বি’রক্ত। জারিফ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো। স্বাভাবিকভাবে বললো,,

চলবে,,,