সুখের নেশায় পর্ব-৩০+৩১

0
640

#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___৩০

চৈত্রিকার হাতের নখ বিঁধে গেল সাফারাতের ফর্সা হাতে। তবুও টু শব্দ টুকু বের হলো না তার কন্ঠনালি হতে। উল্টো চৈত্রিকা কে পাঁজাকোলা করে বিছানার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। বুকটা ধুপধাপ শব্দে কেঁপে উঠল চৈত্রিকার। মৃদুস্বরে চেঁচিয়ে উঠে সে,
‘ কি করছেন?’
সাফারাত জবাব দিল না। চৈত্রিকাকে বিছানার একপাশে বসিয়ে ওর দিকে ঝুঁকে রইল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে মাদকতাময় স্বরে বললো,
‘ ভয় পাচ্ছেন আপনি চৈত্র? আপনি এক কদম এগিয়ে এলেই আমি তিন কদম আগাবো। সো রিলেক্স। মাথাটা ব্যাথা করছে। ঘুমাবো আমি। ‘
‘ আপনি তাহলে ঘুমান। আমি নিচে যায়। ‘
‘ না। ‘
কঠোর গলায় নাকচ করে সাফারাত চৈত্রিকার কোলে মাথা রেখে চোখ বুঁজে নেয়। আকস্মিকতায় ভড়কে যায় চৈত্রিকা। কিছু সেকেন্ড বাদেই তার দুই ঠোঁটে স্মিত হাসির রেখা প্রতীয়মান হয়। নিজ থেকেই আঙ্গুল চালনা করতে থাকে সাফারাতের ঘন চুলের মাঝে। কপালেও হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। চৈত্রিকা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাফারাতের মুখের দিকে।

সাফারাত হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছে। চোখ দুটো বুঁজে আছে ওর। একটা মানুষ বছর গড়িয়ে যেতে যেতে কত পরিবর্তন হয়। কিশোর জীবনে সাক্ষাৎ হওয়া সাফারাত এর পরিবর্তন আজ আগের চেয়েও চোখ ধাঁধানো। ক্ষণে ক্ষণে মনের উচাটন বেড়ে যাচ্ছে চৈত্রিকার। ইচ্ছে করছে সাফারাতের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে ফর্সা গালে চুমু এঁকে দিতে। কিন্তু লজ্জা,ভয়ও পাচ্ছে বেশ। যদি সাফারাত বুঝে যায়?ধরা পড়ে যায়?পরমুহূর্তেই চৈত্রিকা নিজেকে শাসায় ও একটা এডাল্ট মেয়ে। নিজের স্বামীকে একটুখানি ছুঁয়ে দিতে এতো কিসের ভয়?মনে মনে সাহস জুগিয়ে ঘুমন্ত সাফারাত এর গালে গভীর,গাঢ় চুমু আঁকে চৈত্রিকা নিজের নরম ওষ্ঠযুগল দ্বারা। নিমিষেই শিরদাঁড়া বরাবর শীতল স্রোত বয়ে যায়। সময় ব্যয় না করে ঘুমের সুযোগ নিয়ে সাফারাতের কপালেও চুমু খায় ও। নিজের স্বামীর কপালে চুমু খেলে এতো শান্তি অনুভব হয়?চৈত্রিকা মনে মনে সিধান্ত নিয়ে নেয় ও যেভাবেই হোক সাফারাত এর কপালে রেগুলার চুমু খাবে। নিরবে ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে পুনরায় সাফারাত এর চুলে হাত বুলাতে থাকে।

ঘন্টা দুয়েক কেটে যায়। এবার চৈত্রিকার নিজেরই চোখ লেগে আসছে। বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে ঘাড় বাঁকা করে মাথা এলিয়ে দেয় সে। আঁখি কোটরে ভর করে ঘুম। চোখ লেগে আসার মিনিট খানেক বাদেই হুট করে ঘুমটা উবে যায়। নিজেকে বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে থাকতে আবিষ্কার করে। সাফারাত নেই! ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে? চৈত্রিকা গায়ের জামা ঠিক করে ওড়না ঠিক মতো টেনে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। চারদিকে অবিন্যস্ত দৃষ্টি ফেলতেই ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ ভেসে আসে শ্রবণগ্রন্থিতে। বিছানায় বসে চৈত্রিকা অপেক্ষা করে সাফারাত এর। রুমের দেয়ালে অনেকখানি স্থান জুড়ে থাকা বিশাল দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকাতেই দেখে দুপুর ১ টা বাজে। চৈত্রিকার মাথায় হাত। সেই সকালে এখানে এসেছে তার মধ্যে এতো সময় পাড় হয়ে গেল?এজন্যই বুঝি বলে– ‘ সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। ‘ রুমের কালো পর্দা গুলো উড়ছে হালকা হালকা বাতাসের ঝাপটায়। চৈত্রিকা তখন নার্ভাসনেস এর ঠ্যালায় খেয়াল না করলেও এখন পুরো রুমে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। রুমের সকল আসবাবপত্র কালো রঙের। সবকিছু। তার মধ্যে এয়ার কন্ডিশনার টা ধবধবে সাদা রঙের। বাহির থেকে তপ্ত দুপুরেও নির্মল বাতাস ধেঁয়ে আসছে রুমে। ফলস্বরূপ চৈত্রিকার মনে হলো শুধু শুধু এসি চালিয়ে রেখে অযথা কোনো কিছু নষ্ট করার মানে হয় না। যে অভাবে থাকে কেবল সেই বুঝে, অভাবের জীবন টা ঠিক কতখানি কষ্টের, যন্ত্রণার। সোফার উপর এসির রিমোট টা দেখতে পায়। সঙ্গে সঙ্গে তা হাতে তুলে এসি অফ করে দেয়।

প্রচন্ড জ্বর নিয়ে পাক্কা এক ঘন্টা পর স্নান সেরে বেরিয়ে আসে সাফারাত। পড়নে একটা লং টাউজার। কোমর হতে গলা পর্যন্ত সবটুকু দৃশ্যমান। প্রচন্ড জোরে ধ্বক করে উঠল চৈত্রিকার বুক,বক্ষস্থল। এই প্রথম সাফারাত কে উদোম শরীরে দেখল ও। পেট টা কেমন সুড়সুড়ি দিচ্ছে। পা দুটো শক্তি হারিয়ে অসাড় হয়ে পড়ছে। গলা শুকিয়ে কাঠ।

সাফারাত চৈত্রিকার দিকে আঁড়চোখে একবার তাকিয়ে আলমিরা থেকে একটা ধূসর রঙা গেঞ্জি বের করে পরিধান করে নেয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চৈত্রিকার উদ্দেশ্যে বলে,
‘ এদিকে আসুন চৈত্র। ‘
‘ জ্বি?’
‘ আমার কাছে আসুন। ‘
টলমলে, দুর্বল পায়ে চৈত্রিকা কাছে এসে দাঁড়াল। সাফারাত আয়না থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ঘুরে দাঁড়াল চৈত্রিকার দিক। পা থেকে মাথা অব্দি চৈত্রিকার সারা দেহে দৃষ্টি রাখল। এহেন কান্ডে চৈত্রিকা হকচকালো। থমকে গেল। আমতা আমতা করে প্রশ্ন করলো,
‘ কি হয়েছে? ‘
‘ আপনি কাঁপছেন কেন?’
‘ কাঁপব কেন?কই কাঁপছি না তো। ‘

অথচ চৈত্রিকার কন্ঠে কম্পন স্পষ্ট। সাফারাত এক ভ্রুঁ উঁচিয়ে চায়। অতি সন্তর্পণে এগিয়ে যায় চৈত্রিকার একদম নিকটে। তার তাগড়া, বলিষ্ঠ দেহ হতে নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করা মাত্রারিক্ত ঘ্রাণে বেসামাল, মাতোয়ারা হয়ে পড়ছে চৈত্রিকা। পিছনের দিকে পড়ে যেতে নিলেই সাফারাত টেনে বুকে আনে। নত চিবুকে হাত রেখে চৈত্রিকার লজ্জা মাখা মুখটা উপরে তুলে নিল। নিস্তব্ধ, স্থবির চৈত্রিকা। হুট করেই চক্ষে বিঁধে সাফারাতের নেশার্ত দৃষ্টি। ধূসর রঙা চোখের মণিতে মত্ত হয়ে পড়ছে ও। ফাঁকা ঢোক গিলে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় সঙ্গে সঙ্গে। সাফারাত চিবুকে হাত রেখে পুনরায় চৈত্রিকার মুখ টা তার মুখের বরাবর ধরে। রাগান্বিত স্বরে বলে উঠল,
‘ বার বার মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কেন?এখন কি আপনার চেহারা টা দেখাও আমার জন্য বারণ?’
চৈত্রিকা উদগ্রীব, ব্যগ্র সরে উত্তর দেয়,
‘ না না। বারণ হবে কেন?’
‘ তাহলে আমার থেকে মুখ লুকাচ্ছেন কেন?’
চৈত্রিকা নিশ্চুপ। সাফারাত বিরক্ত কন্ঠে বলে উঠল,
‘ দূর বিয়ে করেও শান্তি নেই। পারলাম না আর বউ থেকে দূর থাকতে। ‘
কথাটা কর্ণগোচর হওয়া মাত্র চৈত্রিকা বুঝে উঠার পূর্বেই ওর অধর যুগল শুষ্ক ঠোঁট জোড়া দিয়ে আঁকড়ে ধরে সাফারাত। অকস্মাৎ হতভম্ব, বাকরুদ্ধ চৈত্রিকা। বক্ষস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে তাৎক্ষণিক। শিরা উপশিরায়, রন্ধ্রে রন্ধ্রে জেগে উঠে শিহরণ। সাফারাতের স্পর্শ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। গাঢ় রূপ নিচ্ছে। জীবনের প্রথম এই অনুভূতির সান্নিধ্য পেল চৈত্রিকা ও সাফারাত দু’জনেই। সাফারাত কোমরে চাপ প্রয়োগ করতেই চৈত্রিকা ওর গলা জড়িয়ে ধরল। সম্মতি পেয়ে আরো গভীরভাবে ঠোঁটের নেশায় মত্ত হলো সাফারাত। চৈত্রিকার চক্ষুদ্বয় মুদে আসে নিমেষে। পা উঁচিয়ে সাফারাত এর গলা আঁকড়ে ধরে আরো শক্ত করে,দু হাতে।

দরজায় করাঘাতের শব্দ কর্ণধারে পৌঁছাতেই সাফারাত ছেড়ে দিল চৈত্রিকাকে। বেজায় অতিরিক্ত বিরক্ত হলো সে। বিড়বিড় করে বললো,
‘ সবে মাত্র বউ এক ধাপ এগিয়ে এলো, আর অন্যদের ডিস্টার্ব করা শুরু হয়ে গেল। ‘
চৈত্রিকা সাফারাতের বিরক্তিসূচক, মৃদু রাগ মিশ্রিত এই বাক্য টা শুনতে পেল একদম ক্লিয়ার ভাবে। লাজুকলতা হয়ে নুয়ে রইল ও একপাশে। অন্তস্থলের ঢাকঢোল পিটানো থামছে না কিছুতেই। দরজা মেলতেই মিনা বললো,
‘ স্যার ভাবীর মা আর বোন আইছে। দিহান স্যার ও আইছে। ‘
‘ আচ্ছা আসছি আমরা। তুমি যাও। ‘
‘ মা ও মিমু এসেছে?চলুন নিচে যাই। ‘
সাফারাত তুখোড় দৃষ্টিতে তাকায় চৈত্রিকার মুখশ্রীতে। গম্ভীর স্বরে বলে,
‘ বাহ!আপনার তো দেখছি বাড়িতে যাওয়ার ভীষণ তাড়া। ‘

মুখটা পানসে, থমথমে হয়ে যায় চৈত্রিকার। আসলেই কি ভীষণ তাড়া?চৈত্রিকার মন অহর্নিশি সাফারাতের আলিঙ্গনে বেঁধে থাকতে চায়। কিন্তু মস্তিষ্কে হানা দেয় মায়ের চিন্তা, মিমের চিন্তা। ওদের ফেলে কিভাবে থাকবে,ওরা একা কি করে সামলাবে? এসব চিন্তা হয় বড্ড আজকাল চৈত্রিকার। সাফারাত সূক্ষ্ম নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
‘ চলুন। ‘
________________

ফাহমিদা ও মিম বসে আছে সোফায়। তাদের সম্মুখে বসে আছে সুফিয়া বেগম ও প্রিয়ন্তী। দিহান একপাশে বসে অপেক্ষা করছে সাফারাতের আগমনের। প্রিয়ন্তীর মা ধারে কাছেও আসে নি ওদের। কারণ তিনি সাফারাতের খুশিতে শামিল হতে রাজি নন। ফাহমিদা ভেবেছিলেন এতো বড় বাড়ির মানুষের সামনে এসে অস্বস্তিতে পড়তে হবে। কিন্তু এমন কিছুই হয় নি। সুফিয়া বেগম হেসে হেসে দিব্যি কথা বলে যাচ্ছেন। সামনের টেবিলে হরেক রকমের নাস্তা। দিহান একটা আপেলের টুকরো মুখে পুরে মিমের দিকে দৃষ্টি তাক করলো। মেয়েটা কলেজ থেকে এসে সাথে সাথেই আবার এখানে এসেছে। চোখে মুখে ক্লান্তির রেশ। দিহান প্রিয়ন্তীর দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তোমাদের বাসায় গ্লুকোজ আছে প্রিয়ন্তী?’
‘ আছে তো ভাইয়া? আপনি খাবেন?’
‘ আরে না। সাফারাত এর শালী সাহেবা কে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। আই থিংক ওর জন্য এক গ্লাস গ্লুকোজের পানি হলে ভালো হয়। ‘
মিমের ভ্রুঁ যুগল কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত হয়ে এলো। সামনে মানুষ আছে বলে দিহান কে কোনো কথা শুনানোর চেষ্টা করলো না। এই লোক আজকাল ওকে বড্ড জ্বালাচ্ছে। প্রত্যেক দিন কলেজে নিয়ে যাওয়া,নিয়ে আসা,লেগ পুল করা যেন তার নিত্যকার রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে মিম একটা জিনিস খেয়াল করেছে দিহান তাকে যতই ক্ষেপায় না কেন এসবের মাঝে ওর জন্য কেয়ার লুকিয়ে থাকে। ওর মন খারাপের কারণ, অসুস্থতা সবকিছু চট করে ধরে ফেলে দিহান। একজন সার্ভেন্ট এক গ্লাস গ্লুকোজ মিশানো পানি দিয়ে যেতে মিম খেয়ে নেয়। এখন ঢের সতেজ অনুভব করছে ও।

সাফারাত দ্রুত গতিতে নেমে এলো। তার পিছু পিছু চৈত্রিকা। মেয়েটা চরম অস্বস্তিতে ভুগছে। তার এই অস্বস্তির কারণ সাফারাত। কি দরকার ছিল ওকে এতো সময় রুমে বন্দি রাখার?ফাহমিদা মেয়েকে দেখে মিহি স্বরে কাছে ডাকলেন। সাফারাত গিয়ে বসে দিহানের পাশে। ফাহমিদা জিজ্ঞেস করলেন,
‘ কেমন আছো?’
‘ ভালো। আপনি কেমন আছেন?’
‘ এই তো ভালো। ‘
সাফারাত আর কিছুই বললো না। ফাহমিদাও আর কোনো কথা খুঁজে পেলেন না। এই ছেলে এতো গম্ভীর কারোই আগ বাড়িয়ে বলার মতো কিছু থাকে না। সুফিয়া বেগম বললেন,
‘ যাক এবার আসল কথায় আসি। বিয়েটা যেহেতু হয়ে গিয়েছে আমি চাই চৈত্রিকা আজ বাদে কাল ওর স্বামীর সংসারে, ওর নীড়ে চলে আসুক। ‘

চৈত্রিকা চমকে উঠে। ওর চলে আসতে হবে মা ও মিম কে ছেড়ে?ফাহমিদার মনটা খারাপ হয়ে যায়। যতই আগে চাইত চৈত্রিকার একটা সুখের সংসার দেখে যেতে কিন্তু মেয়েকে বিদায় দেওয়ার কথা ভাবলেই দম বন্ধ হয়ে আসে উনার। তবুও বাধ্য হয়ে সুফিয়া বেগমের কথায় সম্মতি জানায়।
‘ তাহলে অনুষ্ঠানের ডেট ঠিক করা হোক। ‘
সুফিয়া বেগমের কথা কটাক্ষ করে সাফারাতের গম্ভীর,তেজি কন্ঠস্বর।
‘ কোনো অনুষ্ঠান হবে না দাদি। পরশু দিন আমি গিয়ে আমার বউ নিয়ে আসব। কোনো অনুষ্ঠানের প্রয়োজন নেই। ‘

চৈত্রিকাদের বর্তমান অবস্থা ভালো না। অনুষ্ঠান করার মতো এবিলিটি এখন ওদের নেয়। সাফারাত এর কাছ থেকে কোনো প্রকার হেল্পও নিবে না অতিরিক্ত আত্মসম্মান প্রিয় ওর অর্ধাঙ্গিনী চৈত্রিকা। তা ভালোভাবেই জানা ওর। তাই অনুষ্ঠানের বিষয়টা অগ্রাহ্য করে। সুফিয়া বেগম কিছু বলতে নিলে আবারও বলে উঠে,
‘ চাইলে আমার পরিবার যেতে পারে কিন্তু কোনো অনুষ্ঠান হবে না। বউ আমার। বিয়ে করেছি আমি। অন্যদের দিয়ে কি হবে?’

সাফারাতের কথা শুনে সবার মুখে আকাশচুম্বী অবাকতা,বিস্ময়। ফাহমিদার এখন মেয়ের জন্য চিন্তা হচ্ছে। মেয়ের একদম বিপরীত চরিত্রের মানুষ মনে হচ্ছে সাফারাত কে। যেখানে চৈত্রিকা শান্তশিষ্ট সেখানে সাফারাত গম্ভীর, স্পষ্টভাষী,রগচটা। সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল সাফারাত। মিনাকে বললো সবার জন্য লাঞ্চ রেডি করতে। ফাহমিদা তড়িঘড়ি করে বললেন উনারা খাবেন না। তবুও সাফারাতের কাছে টিকে নি এই না সূচক কথাগুলো। বাধ্য হয়ে খেতে বসতে হয় উনাদের। সাফারাত বসে চৈত্রিকার পাশের চেয়ারে। প্রিয়ন্তীর বাবা ও মা আসেন। সুফিয়া বেগম ফাহমিদার পরিচয় করিয়ে দেন উনাদের সাথে। ইচ্ছা না থাকা সত্বেও ফাহমিদার সাথে কথা বলেন। চাচী প্রথমে কথা বলতে না চাইলেও উনার স্বামীর জন্য বাধ্য হয়ে বলেন। প্রিয়ন্তীর বাবা বুঝে গেছেন সাফারাতের সাথে যত দূরত্ব বাড়াবে ততই পৃথক কে জেল থেকে বের করা কঠিন হবে। হাতের বাহিরে চলে যাবে সবকিছু।

মিনা চৈত্রিকার প্লেটে বড় একটা চিংড়ি মাছ দিতেই সাফারাত সেটা উঠিয়ে একটা বাটিতে রেখে দেয়। আদেশের সুরে বলে,
‘ চৈত্রর এলার্জি আছে। উনাকে চিংড়ি দিও না। ‘
ফাহমিদা ও মিম মনে মনে খুব খুশি হলেন চৈত্রিকার প্রতি সাফারাতের যত্ন দেখে। ছেলে যেমনই হোক চৈত্রিকার ক্ষেত্রে অত্যাধিক পসেসিভ। চৈত্রিকা ছোট ছোট লোকমা মুখে পুরে নিচ্ছে। সাফারাত যেই না মুখে খাবার তুলতে যাবে সদর দরজা দিয়ে আগমন ঘটে জেরিন ও তার মায়ের অর্থাৎ বড় ফুপুর। সাফারাত হাতের চামচ টা প্লেটে ফেলে দেয়। টুং করে আওয়াজ তুলল চামচ টা সামান্য উপর থেকে পড়ার দরুন। দাঁতে দাঁত চেপে নিচু স্বরে বলে উঠল সাফারাত,
‘ এক পাগল বিদায় না করতেই আরেক পাগলের আমদানি। ‘

#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___৩১

চামচের টুংটাং শব্দ কর্ণ গহ্বরে পৌঁছাতেই সাফারাত এর তুখোড়, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি অনুসরণ করে চৈত্রিকা সামনে তাকায়। চোখে পড়ে জেরিন এবং ফর্সা বর্ণের স্বাস্থ্যবান একজন মহিলা। ধুপধাপ আওয়াজ তুলে ওদের দিকেই এগিয়ে আসছে। আকস্মিক জেরিনের এমন করে আগমন চৈত্রিকার ঠিক মনে হলো না। হুট করে মনে পড়ে যায় সেদিন গোধূলি লগ্নের কথা। জেরিন কত খারাপ ভাবে হেনস্তা করতে চেয়েছিল ওকে।

‘ খাচ্ছেন না কেন চৈত্র? ‘
লহু স্বরের প্রশ্ন শুনতে পেয়ে চৈত্রিকা ঘাবড়ে যায় কিঞ্চিৎ,সামান্য। সাফারাতের দিকে তাকালো চমকিত নয়নে জোড়া নিয়ে৷ সাফারাত এই দৃষ্টির মানে বুঝে নেয়। গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,
‘ চমকানো বন্ধ করে খাবার খান চৈত্র। কে আসল না আসল তা দেখতে গিয়ে খাবার ঠান্ডা বানিয়ে ফেলছেন আপনি। রিলেক্সে খাবার টা শেষ করুন। ‘
চৈত্রিকার ভ্রুঁ যুগল কুঁচকে এলো। সাফারাতের মতোন নির্পিল্ত অভিব্যক্তির মানুষ ও খুব কমই দেখেছে। মুখে এক লোকমা পুড়তেই জেরিন ও তার মা উপস্থিত হয় ডাইনিং টেবিলের সামনে। সুফিয়া বেগম মেয়ে ও নাতনীকে এই মুহুর্তে এখানে দেখে প্রচন্ড অবাক হন। চেয়ার ছেড়ে উঠতে নিলে মৌসুমি অর্থাৎ জেরিনের মা বাঁধা প্রদান করে। গমগমে স্বরে বললেন,
‘ উঠার প্রয়োজন নেই মা। ‘
‘ খেয়ে এসেছেন বলে মনে হয় না ফুপু। প্লিজ সিট এন্ড জয়েন আস। ‘
দুর্বোধ্য হেসে বলে উঠল সাফারাত। মৌসুমি চেয়ার টেনে বসে পড়লেন মেয়েকে নিয়ে। জেরিন আঁড়চোখে তাকায় চৈত্রিকার দিকে সাফারাতের দৃষ্টি এড়িয়ে। অলক্ষ্য অগোচরে। চোখে মুখে অজস্র ক্রুদ্ধতা ফুটে উঠে তার সঙ্গে সঙ্গে। দুই দু’বার এই মেয়ের জন্য ওকে অপমানিত হতে হয়েছে সাফারাতের নিকট। চৈত্রিকাকে দেখলেই জেরিনের ওকে খু/ন করার ইচ্ছে জাগ্রত হয়।

খাওয়ার পর্ব চুকিয়ে মৌসুমি ও জেরিন সকলের সাথে ড্রইং রুমে আসে। ফাহমিদা ইতমধ্যে বুঝেছেন মৌসুমি সাফারাতের বড় ফুপু। সুফিয়া বেগমও উনার মেয়ের পরিচয় বললেন। আগ বাড়িয়ে ফাহমিদা জিজ্ঞেস করলেন,
‘ কেমন আছেন আপা?’
তীর্যক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন মৌসুমি। ফাহমিদার কথার জবাব তো দিলেনই না উল্টো মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এতে বেশ কষ্ট অনুভব করে ফাহমিদা সহ চৈত্রিকা ও মিম। সুফিয়া ও প্রিয়ন্তী বাকি সকলের মুখে থমথমে। সুফিয়া বেগম ভাবেন নি মেয়ে এমন ব্যবহার করবেন। তখনই শোনা গেল সাফারাতের রোষপূর্ণ,ধারালো, গম্ভীর কন্ঠস্বর।

‘ কারো কথার পৃষ্ঠে জবাব না দেওয়াকে অভদ্রতা বলে। তুমি কি ফুপু কে ভদ্রতা শিখাতে পারো নি দাদি?নাকি তোমার দেওয়া শিক্ষা অতিক্রম করে উনি অতি শিক্ষিত এর তকমা পেয়েছেন?’

সাফারাতের কন্ঠে রাগ,ক্রুদ্ধতা। নিমিষেই কালো আঁধার নেমে আসে মৌসুমির মুখবিবরে,চেহারায়। তিনি প্রশ্ন করলেন,
‘ তুৃমি নাকি বিয়ে করে ফেলেছো?’
‘ হ্যাঁ। আপনি যার সাথে কথা বলেন নি তিনি আমার শাশুড়ী। বাই দ্যা ওয়ে শুনলেন কিভাবে?’
‘ কথা পাঁচ কান হতে সময় নেয় নাকি?’
‘ বাড়ির সদস্য যদি পাঁচ কান করে তাহলে সময়ের প্রশ্নই আসে না।–প্রিয়ন্তীর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল সাফারাত।
কথাটা শুনেই চাচীর প্রায় মুখ লুকানোর উপক্রম। তিনিই বলেছেন মৌসুমি বেগম কে ফোন দিয়ে সবটা। তাছাড়া এটাও বলেছেন সুফিয়া বেগম জেরিনের সাথে সাফারাত এর বিয়ের কথা দিয়ে কি করে চৈত্রিকার মতো নিম্ন পরিবারের একটা মেয়েকে নাতবউ হিসেবে মেনে নেন?আগুনে ঘি ঢালার কাজ টা বেশ দক্ষ ভাবেই সম্পন্ন করেছেন তিনি।
‘ বাহিরের মানুষের সামনে এভাবে না বললেই হয় না?’
‘ বাহিরের কেউ নেই। আমার শাশুড়ী, বউ,শালী সবই আমার আপনজন। স্যরি টু সে,রক্তের সম্পর্কের হয়েও আপনি সেই আপনজন হতে পারেন নি। ‘

ফাহমিদার মনে হচ্ছে মৌসুমি বিশেষ পছন্দ করছেন না উনাদের উপস্থিতি এখানে। তাই তিনি তাড়া দিয়ে বললেন,
‘ আমাদের এখন ফিরতে হবে। পরশু তো আপনারা যাবেনই। আজ তাহলে আসি আমরা। ‘
না চাইতেও সায় দেন সুফিয়া বেগম। কারণ উনাদের সামনে পরিবারের কোনো ধরনের রং তামাশা চাইছেন না উনি। সাফারাত অনিমেষ নেত্রে চেয়ে থাকে চৈত্রিকার মুখের দিকে। মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে ঠিক পুতুলের ন্যায়। ফাহমিদা সবার কাছ থেকে বিদায় নিলেন। চৈত্রিকা সাফারাতের কাছে গিয়ে ছোট্ট করে বললো,
‘ আসি। ‘
তার এই ছোট্ট কথার জবাবে প্রতিউত্তর করলো না সাফারাত। উল্টো ফাহমিদার সাথে টুকটাক কথা বলে ব্যস্ত পায়ে উপরে চলে গেল। চৈত্রিকা থমকালো। তব্দা খেয়ে গেল। এই লোক একটু আগে নিজের ফুপু কে কথার জবাব না দেওয়ার ফলে বলছিল এটা অভদ্রতা অথচ এখন নিজেই কিছুই বললো না। ও অবশ্য কোনো প্রশ্ন করে নি ছোট্ট করে আসি বলেছে। এই ছোট্ট কথাটা বুঝি সাফারাতের শ্রবণ হয় নি?নাকি সে ও অভদ্র?

বাহিরে এসে গাড়িতে উঠতে নিলেই চোখ দুটো আপনা আপনি সাফারাত এর বেলকনিতে চলে যায়। রেলিংয়ে দু হাত রেখে নির্নিমেষ চেয়ে আছে সাফারাত। দৃষ্টি স্থির। চৈত্রিকার সারা শরীর জুড়ে হিম শীতল পবন ছুঁয়ে যায়। কেন যেন মনে হচ্ছে ওর চলে যাওয়া টা বিশেষ পছন্দ হচ্ছে না সাফারাত এর। চৈত্রিকা চোখ সরিয়ে ঝটপট দিহানের গাড়িতে বসে পড়ে।
.
.
রাগে ফুঁসছেন মৌসুমি। জেরিন ভাবলেশহীন হয়ে বসে মা ও নানীর কার্যকলাপ দেখে যাচ্ছে। কারণ ফুটন্ত তেলে পানি ঢালার কাজটা ও করে ফেলেছে। এখন শুধু ছ্যাৎ করে উঠবার পালা। একটু আগেই সুফিয়া বেগমের রুমে এসে উনার কোলে মাথা রেখে হাউমাউ করে কেঁদেছে জেরিন। সাফারাত কে ও ভালোবাসে। সাফারাতকে ছাড়া বাঁচবে না এসব বলে এক নাগাড়ে কাঁদতে থাকে। সুফিয়া বেগম মেয়ের হাত ধরে পাশে বসালেন। রুমের দরজা টা লাগিয়ে এসে কন্ঠে মলিনতা এঁটে বলে উঠলেন,

‘ দেখ যা হবার হয়ে গিয়েছে। আমি তো চেয়েছি জেরিন কে সাফারাতের বউ করতে। কিন্তু ওর নিজস্ব চাওয়া,মতামত আছে। ও কোনোদিনই আমাদের উপর নির্ভরশীল ছিল না। তাই আমরাও ওর উপর কোনো মতামত চাপিয়ে দিতে পারব না। ওর সামনে নিজেদের আর খারাপ প্রমাণ করিস না মা। ভুলে যাস না ওর মাধ্যমেই আজ উঁচু মানের চলাফেরা করতে পারছিস। সাফারাত যদি জামাইকে বিজনেসে টাকা দিয়ে হেল্প না করত তাহলে আজ রাস্তায় নামতে হতো তোর ছেলেমেয়ে নিয়ে। তাই যা হয়েছে মেনে নে। জেরিনকে আমি অনেক ভালো জায়গায় বিয়ে দিব। ‘

মৌসুমি বেগম কিয়ৎক্ষণ ভাবলেন। এটা সত্যি আজ সাফারাতের কারণেই উনাদের রাস্তায় নামতে হয় নি। প্রায় দু’বছর আগে উনার স্বামীর ব্যবসায় প্রচুর লসের দেখা মিলেছিল। ব্যাংক থেকে আনা লোনও পরিশোধ করতে পারছিলেন না। সাফারাতই তখন সাহায্য করে। আপাতত মায়ের কথায় সায় মিলালেন তিনি। জেরিন কটমট চোখে তাকায় মায়ের দিক। সুফিয়া বেগম চামড়া কুঁচকে যাওয়া মুখে হাসি ফুটিয়ে বেরিয়ে যেতেই মৌসুমি বলে উঠলেন,

‘ রাগিস না। সায় জানিয়েছি, নিজেদের লক্ষ্য ছাড়ি নি। তুই চেষ্টায় লেগে থাক। পুরুষ মানুষ একদিন না একদিন তো কাবু হবেই। ‘
জেরিন বাঁকা হেসে প্রতুত্তর করে,
‘ হবে না মা। সাফারাত এহমাদ ওই ফালতু মেয়ের জন্য উম্মাদ,পাগল। ‘
মৌসুমি অধর কোণ বাঁকিয়ে বললেন,
‘ পাগলও সুস্থ হয়। মন বদল হতে কতক্ষণ! ‘
________________

মধ্যরাতের প্রহর। হুট করে চৈত্রিকার ঘুম ছুটে যায়। প্রচন্ড শব্দে শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠল তড়িৎ গতিতে। পাশে চেয়ে দেখে মিম ঘুম ঘুম চোখে মোবাইল ধরে আছে হাতে। মোবাইল বেজে থেমে যায় একবার। কিছু সেকেন্ডের জন্য থামলেও পুরো উদ্যমে বেজে উঠে আবারও,পুনর্বার। চৈত্রিকা বুকে হাত রেখে রাগান্বিত চোখে তাকায় মিমের দিক। মিম নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে বলে উঠল,

‘ আমাকে চোখ রাঙাও কেন আপু?আমি তোমার ঘুম ভাঙ্গি নি। তোমার ভাঙা মোবাইল কি আবারও পটল তুলেছে? ভাইয়া কল দিয়ে বন্ধ পাচ্ছে বিধায় আমাকে কল দিয়ে বললো তোমাকে যেন জাগিয়ে দেয়। নাও ধরো। ‘

এই বলে নিজের মোবাইল চৈত্রিকার হাতে ধরিয়ে গটগট পায়ে রুম হতে প্রস্থান করে মিম। চৈত্রিকা বালিশের নিচ থেকে নিজের ভাঙা মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখি সত্যিই এবার এটা চিরতরে হারিয়ে গিয়েছে। অল্প সল্প কষ্ট অনুভব করল চৈত্রিকা। তার অনেক বছরের সঙ্গী ছিল ছোট্ট এই বাটন ফোন। মিমের মোবাইল টা পুনরায় বেজে উঠতেই রিসিভ করে নেয় বিলম্ব না করে।

‘ আমি আপনাদের বিল্ডিং এর সামনে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছি। দারোয়ান কিছু বলবেন না কারণ উনি জানেন আমি আপনার হাসবেন্ড। জলদি নিচে আসুন। অর্ধ রাত্রি নির্ঘুম কেটে গেল আপনাকে দেখার আশায়। ‘

চৈত্রিকাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সাফারাত কল কেটে দেয়। একদম বুঝে পায় না চৈত্রিকা সাফারাত এমন কেন?সবসময় মধ্য রাতে এসে হাজির হয়। তাও বিনা বার্তায়। ঘড়ির কাটা বরাবর দুইটার ঘরে। শরীরের কুঁচকানো জামা টা ঠিক করে মাথায় সুতি ওড়না চাপায় চৈত্রিকা। মিমের ঘরে উঁকি দিয়ে মিহি গলায় বললো,
‘ আমি একটু নিচে যাচ্ছি মিমু।’
‘ ঠিক আছে। ‘

গেইটের কাছে আসতেই দেখল দারোয়ান আগে থেকেই গেইট খোলা রেখেছে। ধীরস্থির ভঙ্গিতে হেঁটে দূরে দাঁড়ানো কালো গাড়িটার সামনে উপস্থিত হতেই এক পাশের দরজা মেলে দেয় সাফারাত ভিতর থেকে। চৈত্রিকা ভিতরে গিয়ে বসতেই সাফারাত সোজা হয়ে বসে। চোখ দুটো ফুলে আছে তার। গাড়ির মৃদু আলোতে চৈত্রিকা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে টকটকে লাল নেত্রযুগল। লাল বর্ণের এই চক্ষুদ্বয় নিঃসন্দেহে সাফারাতের নির্ঘুম রাতের সাক্ষী। চৈত্রিকা বিহ্বল দৃষ্টিতে চেয়ে অতি ক্ষীণ ও নিচু স্বরে প্রশ্ন করলো,
‘ আপনি হঠাৎ এখানে কেন?’
‘ আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই। ‘
সাদামাটা,নির্ভেজাল উত্তর সাফারাত এর। চৈত্রিকা ফিরিয়ে আর প্রশ্ন করবার সাহস পেল না। সাফারাত পিছনের সিট থেকে হাত বাড়িয়ে একটা বক্স এনে চৈত্রিকার হাতে তুলে দিল। চৈত্রিকা আখিঁপল্লব ঝাঁকিয়ে তাকাতেই দেখে এটা একটা মোবাইলের বক্স।
‘ মোবাইল কেন?’
‘ আপনার জন্য। ‘
‘ আমার লাগবে না। ‘
‘ আমার লাগবে। শালী সাহেবা কে বাকি এক দিন তো ফোন দিয়ে ডিস্টার্ভ করা পসিবল না আমার পক্ষে। ‘

এক দিন?ওহ হ্যাঁ চৈত্রিকা ছোট এই বিল্ডিংয়ে মা,বোন ও বাবার স্মৃতি নিয়ে আর একটা দিন থাকবে কেবল। তারপর সাফারাতের বাড়িতেই থাকতে হবে সারাজীবন।

‘ কিন্তু এটা তো আই ফোন। আমি তো কখনও টাচ মোবাইল চালায় নি। আর এতো দামি মোবাইল আমার পক্ষে চালানো সম্ভব না। ‘

চৈত্রিকার কম্পনরত কন্ঠে সহজ সরল স্বীকারোক্তি শুনে বিরক্ত হলো সাফারাত। বলা নেই কওয়া নেই অকস্মাৎ সুপুষ্ট শক্ত হাতে চৈত্রিকার কোমল দেহ টা টেনে এনে নিজের প্রশস্ত বক্ষে বেঁধে নেয়। তিরতির করা ঠোঁট দুটো তে ছুঁয়ে দিতে থাকে সাফারাত নিজের অধর যুগল। ক্রমশ গভীর হয় ঠোঁটের আলিঙ্গন। চৈত্রিকার হৃদযন্ত্র বন্ধ হওয়ার জোগাড়। শ্বাসরদ্ধকর অবস্থা। মোবাইলের বক্স টা শক্ত হাতে চেপে ধরে ও। কিছু সময় বাদে সাফারাত ছেড়ে দেয়। রাশভারি গলায় বলে,

‘ আপনি কি এতে অভ্যস্ত ছিলেন পূর্বে?ছিলেন না। আস্তে আস্তে হবেন। তেমনি মোবাইল চালানো টাও অভ্যেসে পরিণত হবে। ‘

চৈত্রিকার বুকে বজ্রপাত হলো যেন। কি করে থামাবে ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গের শিউরে উঠা?বিমূঢ়তায় বাক হারা প্রায় মেয়েটা। উদাহরণ দেওয়ার জন্য সাফারাত এই পদ্ধতি টাই খুঁজে পেল?মাথা টা ভীষণ ফাঁকা ফাঁকা লাগছে ওর। সাফারাত দুই গালে হাত রেখে কপালে ওষ্ঠের পরশ আঁকে। চৈত্রিকা যেন এখনও ঘোরের মাঝে। রাত বিরেতে হঠাৎ হামলা হৃদয়স্থের হৃদস্পন্দন বেসামাল করে তুলেছে।

‘ সাবধানে যাবেন৷ ঘুম পেয়েছে । বাসায় গিয়ে ঘুমাবো। ‘

চৈত্রিকা কিংকর্তব্যবিমুঢ়!একটু আগেই বলছিল ওকে দেখা ছাড়া ঘুম আসছে না এখন আবার ঘুমানোর তাড়া। গাড়ি থেকে নেমে জানালা দিয়ে ঝুঁকে রিনঝিনে স্বরে বলে উঠল,
‘ বাসায় পৌঁছে একটা কল দিবেন। ‘
সাফারাত মাথা নাড়ায়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
‘ আপনার নাম টা পার্ফেক্ট ও সার্থক চৈত্র। ‘
তৎপরে চৈত্রিকার দিক গাঢ় দৃষ্টি মেলে বললো,
‘চৈত্র মাসের অসহনীয় রোদ্দুরে কঠিন ভাবে তৃষ্ণার্ত আমি। ‘

#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)