#সুখের_সন্ধানে
#পর্ব_৩৬
মিথিলার রিসেপশানেও আসলো না প্রিয়। কত বোঝালাম ছেলেটাকে। তবে সেলিম এসেছে। প্রিয় মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে । একটা মানুষ পা হারাল তার জন্য, এটা সে মেনে নিতে পারছে না কোনোভাবেই। আমারও সবমিলিয়ে খুব খারাপ অবস্থা কিন্তু না এসে তো উপায় নেই। মেয়ের বিদায়ের সময়ও থাকতে পারলাম না। আজও যদি না আসি তবে সবাই কী ভাববে?
আসার পর থেকেই দেখছি মিথিলা খুব আপসেট। কারো সাথে তেমন কোনো কথাবার্তাই বলছে না। আমার সাথেও দায়সারাভাবে দু’চারটার বেশি কথা বলছে না। আর সাজিদও কেমন চুপচাপ। দু’জনের মধ্যে তেমন কথাবার্তাই নেই । শুধু ফটোগ্রাফারদের ইশারায় কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে একের পর পোজ দিয়ে যাচ্ছে দু’জনই। নতুন কাপলদের মাঝে যে উচ্ছ্বাসটুকু দেখা যায় তার ছিটেফোঁটাও নেই সাজিদ বা মিথিলা কারো চোখে। সাজিদের মায়ের সাথে কথা বলে মনে হলো না তেমন কিছু হয়েছে। তাকে তো আসলে ওভাবে কিছু জিজ্ঞেস করাও যায় না। তবে উনি খুব খুশি মিথিলাকে পেয়ে। মিথিলাকে নিয়ে কত প্রশংসা করছে সবার কাছে ।
খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম আমি। কী হতে পারে মিথিলার সাথে? তাড়াহুড়া করে কি মেয়েটার সাথে কোনো অন্যায় করে ফেললাম? কী হচ্ছে এসব আমার সাথে? এতবড় ভুল ডিসিশান আমি কি করে নিলাম? একদিকে নিজের ছেলেটার মুখের দিকে তাকাতে পারছি না সেই টেনশানে খারাপ অবস্থা তার মধ্যে আবার মিথিলার এমন মলিন মুখ আমার মনের মধ্যে সুচের মতো বিঁধছে । এই মুহূর্তেই জানতে মন চাইছে কী হয়েছে? আমার তর সইছে না একদমই। কিন্তু ভয় হচ্ছে মিথিলা সত্য বলবে তো!
কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরেই দেখতে পেলাম মিথিলা একা বসে আছে স্টেজে। গেস্টরা খাওয়া দাওয়ায় ব্যস্ত। ফটোগ্রাফারও নেই আশেপাশে। সাজিদ গেস্টদের তদারকি করছে। আমি এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। সব কথা না জানা পর্যন্ত আমার গলা দিয়ে পানিও নামবে না । দ্রুত মিথিলার পাশে যেয়ে বসলাম । মিথিলা ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। আমি যে পাশে এসে বসেছি ওর খেয়ালই নেই। আমি কোনো কথা না বলেই ওর মুখখানা তুলে ধরলাম। দেখলাম ওর চোখদুটি ভেজা। আমি বুঝ্লাম আমার ধারণাই ঠিক কিছু তো হয়েছে ! এবং এটাও বুঝলাম যে সহজে এই মেয়ের মুখ থেকে কিছু বের হবে না। তাই আমিও কোমর বেঁধেছি যে করে হোক ওর পেট থেকে কথা বের করতে হবে । তাই কোনো প্রশ্ন না করে সরাসরি ওর হাতটা টেনে নিয়ে আমার হাতের ভেতর রেখে চাপাস্বরে ওর চোখে চোখ রেখে বললাম, তুই কিন্তু আমাকে ছুঁয়ে আছিস! একদমই কোনো মিথ্যে বলবি না। আর যদি একবিন্দু কিছু মিথ্যে বলিস তবে আমি ভাবব , তুই কখনো আমাকে মায়ের সমতুল্য ভাবিসই নি! খবরদার, এক বর্ণ কিছু মিথ্যে বলবি না। যদি বলিস তবে তোর সাথে আমার সব সম্পর্ক আজ এখানেই শেষ।
মিথিলা আমার এমন আচরণে হতভম্ভ হয়ে গেল। সে ভীতসন্ত্রস্ত চোখে বলল, না মানে রূম্পা মা! কী হয়েছে? এভাবে কথা বলছ কেন? কী মিথ্যে বলব আমি?
– খুব চাপা স্বরে বললাম, তুই কি প্রিয়কে পছন্দ করতি?
– মিথিলা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল হুট করে এমন প্রশ্নে।
– সে থতমত খেয়ে বলল, না …মানে! এসব কী বলছ?
এটা কেমন প্রশ্ন করছ?
– হ্যা অথবা না । আমি সবই জানি। তারপরেও তোকে জিজ্ঞেস করছি।
– মিথিলা নিশ্চুপ!
– কি রে কথা বলছিস না কেন?
– এসব কথা বলার এখন আর কী ফায়দা , রূম্পা মা? আমি এ নিয়ে কোন কথা বলতে চাই না, প্লিজ।
– আমি আমার উত্তর পেয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম, আমাকে বলিসনি কেন? আর সাজিদই বা এর মাঝে এল কী করে?
– মিথিলা আবারও নিশ্চুপ।
– একবিন্দু কিছু মিথ্যে বলবি না তবে খোদার কসম তোর সাথে আমার দেখা সাক্ষাৎ এই পর্যন্তই শেষ। ভালো করেই জানিস তোর মায়ের সাথেও আমি টানা পাঁচ বছর যোগাযোগ রাখিনি। এসব করার আমার পুরানো অভ্যাস আছে। রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললাম আমি।
কিন্তু মিথিলা কোনো কথা না বলে রোবটের মতো বসে আছে।
মিথিলাকে ধরে হালকা একটা ঝাঁকুনি দিলাম আমি। দাঁতে দাঁত পিসে বললাম , তুই যদি সবকিছু না বলিস তবে ভাবব আমার সাথে এতদিন তুই শুধু স্বার্থের জন্যই সম্পর্ক রেখেছিস। মন থেকে মায়ের স্থান দিতে পারিস নি। তুই যদি প্রিয়কে পছন্দই করেছিস তবে এত তাড়াহুড়া করে সাজিদকে বিয়ে করলি কেন? আর আমাকে সত্যি না বলে মিথ্যে কেন বলেছিস?
কিছুতেই মুখ খুলছে না মিথিলা । এরমাঝে এ আসছে ও আসছে ছবি তোলার জন্য। মিথিলা কোনোরকম করে সামলে নিচ্ছে।
মিথিলা কোনো উত্তর দিচ্ছে না দেখে আমি আবারও ওকে বললাম , তোর জন্য লাস্ট চান্স। বলতে না চাইলে আর জোরাজুরি নেই। আমি চলে যাচ্ছি। আমার সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করবি না।
বলেই আমি চোখ মুছতে মুছতে ওর হাত ছেড়ে উঠতে গেলাম তখনই ও হাতটা টেনে ধরে আমাকে বসিয়ে দিয়ে কোনোরকম কান্নাটাকে আটকিয়ে বলল,
রূম্পা মা, আমি যে অপারগ। আমাকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করো না ,প্লিজ। অন্য কোনো কথা বলো।
– কেন অপারগ? কিসের জন্য অপারগ? এমন কিছুই নেই যেটা মা মেয়ের সম্পর্কের মাঝে এসে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে ? তুই বলবি কিনা তাই বল!
– আচ্ছা, তবে শোনো! আমি চাইনি তোমার সাথে খালুর কোনো ঝামেলা হোক তাই সাজিদ ভাইকে ভালোবাসি এ কথা বলেছি।
– আমি মনে মনে এটাই সন্দেহ করেছিলাম । এবার বল , তোর খালু কিছু বলেছে?
– নাহ!
– তবে?
– আস্তে করে মিথিলা বলল, দাদি!
– মা? সে তো তোকে পছন্দ করে।
– দাদি হয়ত খালুর কথায়… মিথিলা আর কিছু বলার আগেই কেউ একজন আসল । ও থেমে গেল।
আমি যা বোঝার বুঝে গেলাম। অবাক হলাম আমি মা হয়ে ওদের ব্যাপারে কিছুই টের পেলাম না কিন্তু সেলিম কী করে?
সেলিম আর জীবনে শোধরাল না। উহ! ওর জন্য দুটো জীবন নষ্ট করলাম আমি। হায়রে অহংকার আর দেমাগ! কবে অবসান হবে এর?
মিথিলাকে বললাম, সবই বুঝলাম। এবার বল, সাজিদের সাথে তোর কী চলছে? ও তোর সাথে কথাবার্তা বলছে বলে তো মনে হলো না? ওকি সব জেনে গেছে?
– মিথিলা মাথা নিছু করে এতক্ষণে ফোঁপাচ্ছে । সে আস্তে মাথা নাড়িয়ে বলল, হুম।
আমি কেঁপে উঠলাম মিথিলার উত্তরে। কী চলছে মেয়েটার জীবনে?
– একদম কাঁদবি না। সোজা হয়ে বস। মেরুদন্ড সোজা কর। এভাবে অমেরুদন্ডী প্রাণীর মত বাঁচতে চাইলে সারা জীবন এভাবে কাঁদতে কাঁদতেই জীবন চলে যাবে।
এবার বল সাজিদ কী করে জানল? তুই বলেছিস? সিনেমার শাবানা হয়তো হতে গিয়েছিলি? নিজের অতীতের গল্প শোনাতে যেয়ে দেখ এখন তোর কি অবস্থা?
– আইমানের কথা বলেছিলাম না তোমায় ! আমাকে ডিস্টার্ব করত !
– হুম! তো? ঝাঁঝের সাথে বললাম আমি।
– ও গতকাল আমাকে আর ভাইয়াকে জড়িয়ে অনেক আজেবাজে কথা বলেছে। তখন সাজিদ এসে সব শুনে ফেলেছে। তুমি যেমনটা ভাবছো তেমনটা কিছুইনা। আমি সাজিদকে কিছুই জানায়নি। তাছাড়া আমার আর ভাইয়ার মধ্যে কখনো এমন কিছু হয়নি যে সেটা জানানোর প্রয়োজন আছে।
– মাই গড! আইমানও জানে! সে কী করে জানল?
– ওকে ভাইয়াই একদিন ভার্সিটিতে বসে বলেছিল। শুধু বলার জন্যই বলেছিল যাতে ও আমাকে বিরক্ত না করে, তাই।
– সবই বুঝেছি। শনির গ্রহণ লেগেছে আবার। আচ্ছা , তুই চোখ মোছ। সবাই তাকাচ্ছে বারবার। আমি একটু আসছি।
মিথিলাকে কী বলব আমারই কেমন যে লাগছে নিজেই বুঝতে পারছি না। দূরেই দাঁড়ানো সেলিমকে দেখে আমার মন চাইল ওকে গিয়ে জিজ্ঞেস করি এসব করে কী লাভ হয়েছে তার? কিন্তু ওর সাথে কথা বলতেও রুচি হলো না আমার। আমি কি করব ভেবে পাচ্ছি না। যা হয়েছে তা তো আর মোছা সম্ভব না। কিন্তু সাজিদের মনের ভুল ভাঙ্গানো দরকার!
হঠাৎ অনিকেতের কথা মনে পড়ল একটু এদিক-সেদিক ঘুরতেই অনিকেতকে দেখতে পেলাম। এই মুহূর্তে ওই একমাত্র ভরসা। অনেকের প্রিয়র ব্যাপারে সবকিছুই জানে। ওই পারবে সাজিদের ভুল ভাঙাতে।
অনিকেতের পাশে যেয়ে ওকে ইশারা দিয়ে বাইরে আসতে বললাম।
– আন্টি, সবকিছু ঠিক আছে তো? আপনাকে খুব টেনস্ড মনে হচ্ছে।
– কিছুই ঠিক নেই বাবা। অনেক বড় ঝামেলায় ফেঁসে গেছি।
– কী হয়েছে? প্রিয় ঠিক আছে তো? ও আজকেও এলো না? সাজিদ বারবার ওর কথা জিজ্ঞেস করছে। আপনাদের কাছে কিছু জিজ্ঞেস করেনি?
– না, আজকে সাজিদের সাথে আমার তেমন কথাই হয়নি।
– এখন সাজিদ প্রিয়র কথা জানতে চাচ্ছে কি বলব বুঝতে পারছি না। আমি কি ওকে গতকালের ঘটনাটা বলব?
– হ্যাঁ, বলবে! তবে একটু ঘুরিয়ে।
– মানে বুঝলাম না।
– তুমি সাজিদকে বলো। গতকালকে ওর সাথে কি কি হয়েছে সবই বলো কিন্তু মিথিলার ব্যাপারটা একটু এড়িয়ে যাবে। একটা বড় ঝামেলা হয়ে গেছে। সাজিদ কোনো ভাবে জেনে গিয়েছে প্রিয় আর মিথিলা একজন আরেকজনকে পছন্দ করে। সাজিদ এটা জানার পর থেকে মিথিলার সাথে খুবই অস্বাভাবিক আচরণ করছে।
এরপরে আমি অনিকেতকে আইমানের ব্যাপারটা খুলে বললাম।
সংসার জীবনের শুরুতেই যদি এত বড় একটা অবিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয় তাহলে বাকি জীবন তো পড়েই রয়েছে। বুঝতেই পারছ। আমার থেকে তুমি অবশ্য এসব বিষয়ে বেশি বোঝার কথা।
এখন কিভাবে কি করবে কি করে সাজিদের ভুল ভাঙ্গাবে আমি জানিনা। সবকিছু আমি তোমার উপর ছেড়ে দিলাম, বাবা। আমার এখন আর কোনো পথ নেই।
– অনিকেত খানিকক্ষণ কি যেন ভেবে বলল, আপনি চিন্তা করবেন না, আন্টি। আমি সাজিদের সাথে এখনই কথা বলছি।
– সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব, বাবা। তবে তুমি সাজিদের কাছে আমার কথাটা বলো না।
– এসব বলে লজ্জা দিচ্ছেন কেন? আপনি একদম চিন্তা করেন না। দেখি কি করা যায়।
অনিকেতের উপর কথায় কিছুটা ভরসা পেলাম কিন্তু দুশ্চিন্তা তো থেকেই যায়।
মিথিলাকে আজকে আমার বাড়িতে নিতে পারলে মন খুলে আরো কথা বলা যেত কিন্তু মিথিলা যাচ্ছে ওর বাবার বাড়িতে ওর বাবা আগেই বলে রেখেছিলো যে রিসিপশনের পরে মেয়ে আর জামাইকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে এবং এটাই হওয়া উচিত কারণ সাজিদের বাবার বাড়ির মানুষেরা আমার বাড়িতে যাওয়াটা ভালো চোখে হয়তো দেখবে না।
তাই যা করার আমাকে এখনই করতে হবে।
অনিকেত এসে সাজিদকে নিয়ে একটু নিরিবিলি জায়গায় বসল।
– কিরে নতুন বিয়ে করেছিস কিন্তু চোখেমুখে তো মনে হচ্ছে না নতুন বউ পেয়ে হ্যাপি। ব্যাপার কি? আমাদের ভাবী কি তোর মন মতো হয়নি? ভালোবেসেই তো বিয়ে করেছিস শুনলাম!
– নারে, দোস্ত! তেমন কিছু না। এই সবকিছু মিলিয়ে একটু ব্যস্ততা যাচ্ছে তাই। আচ্ছা, একটা ব্যাপার বলতো প্রিয় কালকে বিয়েতেও আসলো না আজকে রিসিপশনে আসলো না ব্যাপার কি জানিস নাকি কিছু? আমি আজও কয়েকবার ফোন দিয়েছি কিন্তু আমার ফোন রিসিভ করেনি।
– ও তোকে তো বলাই হয়নি প্রিয়র উপর দিয়ে তো ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ও হয়তো তোর নতুন জীবন শুরু হচ্ছে এজন্য এসব জানিয়ে বিরক্ত করতে চায়নি। কিন্তু তুই জিজ্ঞেস করলি তাই আমার মনে হলো তোকে এসব কথা জানানো দরকার।
– কি হয়েছে? কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করল, সাজিদ।
– গতকাল তোদের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছু আগে প্রিয়র গাড়িতে একজনের অ্যাক্সিডেন্ট হয়। লোকটা মরে যেতে পারত তবে ভাগ্য ভালো যার কারণে পায়ের উপর দিয়ে গেছে। একটা পা সম্ভবত কাটা পড়বে। লোকটা খুবই গরীব। ওদের অবস্থা দেখে আমার খুব খারাপ লাগছিল গতকাল।
– বলিস কি? তারপর!
– তার আর পর কি? যেটা হবার সেটাই হয়েছে। প্রিয়কে আরেস্ট করা হয়েছিল। গতকাল সারা দিন প্রিয় লকআপে ছিল। রুম্পা আন্টিও এ ব্যাপারটা প্রথম জানতো না। প্রিয়ই আন্টিকে জানাতে নিষেধ করেছে যাতে তোদের বিয়েতে কোন সমস্যা না হয়। তবে একসময় সেলিম আঙ্কেল ভাবলেন যে আন্টিকে সবই জানানো দরকার। তারপরে কি হয়েছে তা তো জানিসই। আন্টি তোদেরকে মিথ্যাসিথ্যা বুঝিয়ে এখান থেকে বেরিয়ে পড়ে।
– তারপরে বল, প্রিয় বের হলো কি করে নাকি এখনও জেলে?
– না, না। আঙ্কেলের হাত তো অনেক উপর লেভেলে তা তো জানিসই। অনেক বেগ পেতে হয়েছে তারপরেও কপাল ভালো যে সাকসেস হয়েছে।
গতকাল আমিও ছিলাম সেখানে। তবে মানসিকভাবে খুব ভেঙ্গে পড়েছে প্রিয়। সুযোগ হলে ওর সাথে একটু কথা বলে নিস
– আচ্ছা।
– সাজিদকে হঠাৎ কেমন চুপসে যেতে দেখে অনিকেত বলল, কিরে মনের মধ্যে কিছু কি চলছে?
সাজিদ একটা দীর্ঘসাস ছেড়ে বলল, না তেমন কিছু না।
– দেখ, সাজিদ আমার কাছে কিছু লুকাস না। তোর আর ভাবীর মধ্যে কিছু যে চলছে সেটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি। মনের কথা বন্ধুর কাছে যদি বলতে না পারিস তাহলে বলবি কোথায়?
– আরে না, বললাম তো তেমন কিছু না।
– তুই ভাল করেই জানিস তুই কথা লুকালে সেটা আমি ঠিকই টের পাই। এখন সত্যি করে বল, তোর মনের মধ্যে চলছে কি? আমি কেন যেন তোর চোখে অবিশ্বাসের ছাপ দেখতে পাচ্ছি।
এই অবিশ্বাসের ছাপ কার প্রতি? নিজের প্রতি? নাকি ভাবির প্রতি?
– বললাম তো কিছু না!
– তুই বললেই তো আমি মানছি না। তুমি যতক্ষন সত্যি কথা না বলবি ততক্ষণ এখান থেকে তোর ওঠার সাধ্য নেই।
– উহ, বলেছি তো কিছু হয়নি। চল, সবাই অপেক্ষা করছে।
– তুই না বললেও আমি তোর মনের খবর ঠিকই টের পেয়েছি। তুই কি প্রিয়কে নিয়ে কোন ধরনের কনফিউশানে ভুগছিস? আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তোর মধ্যে যা চলছে তার সাথে প্রিয়ার কোনো কানেকশন আছে। কারণ প্রিয়কে নিয়ে আমি যখন কথা বলছিলাম তখন তোর চোখে মুখে খুব উত্তেজনা দেখছিলাম যেটা মোটেই ভালো কোনো কিছু নয়।
– আরে নাহ! চোর ধরা পড়ার মতো করে বলল, সাজিদ।
– ঠিক আছে তুই যখন বলবি না তাহলে আমি বলছি শোন। তুই তোর বউকে অযথাই অবিশ্বাস করছিস! শুধু শুধু নিজে তো কষ্ট পাচ্ছিসই আর ওই পুচকু মেয়েটাকেও কষ্ট দিচ্ছিস!
– মানে? এসব কি বলছিস তুই? কার কাছে কি শুনেছিস?
– আমি কারো কাছে কিছু শুনিনি।
সাজিদ যেন এবার একটু নড়েচড়ে বসল।
– তুই ভাবছিস তোর বউয়ের সাথে প্রিয়র কোনো সম্পর্ক আছে তাইতো? মিথ্যে বলবি না কিন্তু!
সাজিদ মাথা নিচু করে বসে আছে দেখে অনিকেত বলল,
– প্রিয় সেদিন আমার চেম্বারে এসেছিল। কথাপ্রসঙ্গে ও আমাকে যেটা বোঝাল তাতে মনে হলো ও মিথিলাকে কিছুটা পছন্দ করে। তবে তখনো পর্যন্ত মিথিলাকে আমি চিনতাম না। প্রিয় মিথিলাকে কিছুটা পছন্দ করে ঠিকই তবে একথা সে আজ অবধি মিথিলাকে জানাতে পারেনি। কারণ মিথিলা অন্য আরেকজনকে ভালোবাসে একথা সে জানত।
– কে সে? কিছু টা কাঁপা গলায় বলল, সাজিদ।
– কে আবার? আরে গাধা তুই। প্রিয় আজ অবধি মিথিলাকে ওর ভালোবাসার কথা প্রকাশ পর্যন্ত করতে পারে নি। আর সেখানে তুই কি সব উল্টোপাল্টা ভেবে বউটাকে সন্দেহ করছিস।
মিথিলার চোখে প্রিয় বড় ভাই ছাড়া আর কোন কিছুই না। এই ভয়েই প্রিয় কখনোই মিথিলাকে জানাতে পারেনি তার মনের কথা।
– তাহলে মিথিলার এক কাজিন যে বলল!
– তুই ওই বাটপারটার কথায় তোর লাইফের শ্রেষ্ঠ সময় এভাবে হেলায় হারাচ্ছিস? স্টুপিড কোথাকার!
ওই ছেলে মিথিলাকে পছন্দ করে ক্লাস এইট থেকে। কিন্তু মিথিলা ওকে দু’চোখ দিয়ে দেখতে পারে না।
ভার্সিটিতে প্রায় বিরক্ত করত। এভাবে বিরক্ত করার সময় একদিন হাতেনাতে প্রিয়র কাছে ধরা পড়ে।
মিথিলাকে এভাবে বিরক্ত করছে দেখে সে ওকে বলতে বাধ্য হয় যে সে মিথিলার বয়ফ্রেন্ড যাতে আইমান তাকে আর বিরক্ত না করে। এই হচ্ছে হিস্টরি। সেটা থেকে আইমান বিশাল বড় হিস্টরি তৈরি করেছে আর তুই সেটা বিশ্বাস করে বসে আছিস।
– না মানে!
– এখনো? না মানে কিসের? তোর মাথায় এতোটুকু সেন্স নেই যে মিথিলাও যদি প্রিয় কে পছন্দ করত তাহলে ওদের বিয়েতে বাধা ছিল কোথায়? রুম্পা আন্টি মিথিলাকে প্রচুর পছন্দ করেন। মিথিলাও যদি প্রিয়কে পছন্দ করত তাহলে ওনার ছেলে বউ করে রাখতে কেউ আটকাতে পারত না ওনাকে।
মিথিলা প্রিয়কে বড় ভাইয ভেবেই সম্মান করে। সেই সম্পর্ক নিয়ে উল্টাপাল্টা কি সব ভেবে নিজেদের এমন পবিত্র সম্পর্ককে কেন প্রশ্নবিদ্ধ করছিস?
– কিন্তু আমার কথা হচ্ছে তুই এত সব জানলি কোথা থেকে?
– কিছু কথা প্রিয়র কাছে জেনেছি আর কিছু কথা পরিস্থিতি আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে। শুধু শুধু আজেবাজে কথায় কান দিয়ে মেয়েটাকে কষ্ট না দিয়ে সংসার জীবনটা এঞ্জয় কর। এসব ভুল একসময় ঠিকই ভেঙে যাবে কিন্তু এদিন আর ফিরে পাবি না। একজনকে আরেকজনের ভালো লাগতেই পারে এটাই স্বাভাবিক তুইও তো কত মেয়েকে একসময় পছন্দ করতি। কই তাদের এখন খোঁজ আছে? নাকি মনে রেখেছিস? তাই এসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে বর্তমানকে কি করে সুন্দর করবি সে চেষ্টা কর। তোর কাছে এতোটুকু অনুরোধ আমার। বাকিটা তোর ইচ্ছা। আমি একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে তোকে আবারো শুধু মনে করিয়ে চাই, এই দিন কিন্তু আর ফিরে পাবি না। তখন শুধু আফসোসই করবি আর আমার কথা মনে করবি।
চললাম। আমার আবার বিকেলে চেম্বার আছে।
সাজিদ মাথানিচু করে বসে আছে।
চলবে…..
#সুখের_সন্ধানে
#পর্ব_৩৭
খুব ব্যস্ত সময় পার করছি আমি। আজ আমার প্রিয়র বিয়ে বলে কথা। সেলিমের খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড রশীদ পাটোয়ারি ,উনি ইতালি প্রবাসী। ইতালীতে বিশাল ব্যবসায় তার। বাংলাদেশেও ব্যবসায়ের শাখা প্রশাখা ছড়িয়েছে ব্যাপকভাবে। সেলিমের সাথে বেশ ভালো ব্যবসায়িক সম্পর্ক। সেই ভাবেই এনার সাথে প্রিয়র পরিচয়। এনা দশ বছর বয়স থেকেই বাবা মায়ের সাথে ইতালিতে থাকে। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। দেখতে শুনতেও খুব সুন্দর আর স্মার্ট। সবদিক থেকেই প্রিয়র বউ হবার যোগ্য। কিন্তু তারপরেও এনাকে আমি কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছি না। মেয়েটা একটু বেশিই স্মার্ট আমার দৃষ্টিতে। তার উপর ঠোঁট কাটা স্বভাবের। বড় ছোট কাউকে দেখে না । নিজের কোনো আচরণে কেউ মনে কষ্ট পাবে কি পাবে না সেটাও তোয়াজ করে চলে না একদম। আমি ওর নানুর বাসাতে যেয়ে একদিন নিজেই দেখে এসেছি।
আমি যে ওকে ছেলে বউ করতে রাজি না সেকথা সেলিমকে জানিয়েছিলাম। আমার সাথে সেলিমের কয়েক দফা কথা কাটাকাটিও হয়েছে এ নিয়ে। এনা বাংলাদেশে আসে মাস ছয়েক আগে। এসে ওর নানির বাড়িতে থাকছে। দেরিতে হলেও আমি বুঝেছি এনার বাংলাদেশে আসার পেছনে মূল কারণই হলো প্রিয়। একটা বিজনেস মিটিং এটেন্ড করতে সেলিম আর প্রিয় ইতালিতে গিয়েছিল । তখন রশীদ ভাইয়ের বাসায় ওদের ডিনারের দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। প্রিয়কে দেখেই পছন্দ করে ফেলে এনার মা। এরপরে উনারাই প্রথমে এনা আর প্রিয়র সম্পর্কের কথা তোলে। আমাকে কিছু না জানিয়েই সেলিম তাদের সাথে মোটামুটি কথা ফাইনাল করে আসে। প্রিয়র জীবনের এত বড় একটা সিদ্ধান্তে আমাকে একপাশে রেখেই কথা দিয়ে এল। আমার মতামতের কথা একবারও ভাবল না।
সেলিমের সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছিলাম কিছুদিন। কিন্তু তাতে সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হবে না। তাই শুধুশুধু নিজেকে কষ্ট দিয়ে লাভ কি!
সেলিমের থেকে বেশি রাগ হয়েছিল প্রিয়র উপর । প্রিয় কী আমার মতামতের জন্য অপেক্ষা না করেই ওর বাবার সিদ্ধান্তে তাল মিলিয়ে চলে এল? ওর সাথেও অনেকদিন কথাবার্তা বলিনি। নিজেকে একদম সবকিছু থেকে আলাদা করে ফেলেছিলাম। বাপ বেটা যা খুশি করুক ! ওদের নিয়ে ভেবে ভেবে সারাজীবন পার করেছি অথচ ওদের কাছে আমার মূল্য যে এতটা তলানিতে সেটা স্বপ্নেও ভাবিনি। নিজেকে আর নিচু করতে মন চাইল না। অঝোরে কেঁদেছি দিনের পর দিন আমি। নিজেকে এতটা একা কখনো মনে হয়নি আমার।
মিথিলা এ বাড়িতে এসেছিল বেশ কয়েক মাস আগে একবার। বিয়ের পরে ওই মাত্র একবারই এসেছিল এ বাড়িতে। ডেঙ্গু জ্বর হয়ে আমার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে পড়েছিল তাই দিন কয়েক থেকে আমার খুব সেবা শুশ্রূষা করেছিল মেয়েটা। ওই ক’টা দিন মনে হয়েছিল আমি আমার মায়ের কাছে আছি যেন! ও আমার মাথায় যখন হাত বুলিয়ে দিত এতই ভালো লাগায় ডুবে যেতাম যে কখন চোখ বন্ধ হয়ে যেত নিজেই টের পেতাম না। আমাকে এটা সেটা তৈরি করে নিজ হাতে খাইয়ে দিত। নিজের পেটে মেয়ে না থাকার অভাবটা ওকে পেয়ে কিছুটা হলেও মেটানোর ভাগ্য হয় আমার। মিথিলাকে ডাকলেও কেন যেন আসতে চায় না এ বাড়িতে। আমি বুঝতে পারি হয়ত সে নিজেও চায় না আসতে অথবা সাজিদও চায় না। প্রিয় আর মিথিলার ব্যাপারটা তো আর সাজিদের কাছে অজানা নয়।
সেদিনের পর থেকে অনিকেতের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার যেন শেষ নেই। ছেলেটার উপর ভরসা করে আমি ভুল করিনি। সাজিদ ধীরে ধীরে মিথিলার প্রতি অভিমানটুকু ভুলে অনিকেতের কথাগুলিকে অনুভব করার চেষ্টা করে। আর মিথিলাও এখন সাজিদের ঘরের খুব ব্যস্ত একজন ঘরণী । ওর শাশুড়ি তো ওকে চোখে হারায়! হারাবেই বা না কেন? এমন লক্ষী মেয়ে সাত জন্ম সাধনা করলেই তবে মিলে। মিথিলারা সেদিনই ঘুরে এল সিলেট থেকে। সাজিদ অডিটের জন্য যেখানেই যায় সাথে করে মিথিলাকেও নিয়ে যায়। মিথিলার ননদ শান্তা তো আগে থেকেই ভাবির জন্য পাগল , ওর দেবরটাও ভাবিকে খুব সম্মান করে। মিথিলার পড়াশুনাও চলছে সমান তালে। মেয়েটা ওর সংসারে যে মনোযোগী হতে পেরেছে এটা ভেবেই খুব শান্তি পাই মনে। আজকাল মেহরাবও থাকে ওখানে। বিয়ের কয়েক মাস যেতেই মিথিলা আর সাজিদ আমাকে খুব করে ধরল ওকে ওদের ওখানে নেবার জন্য। আমি প্রথমে রাজী না হলে মেহরাবও দেখলাম সেখানে যাবার জন্য খুব আগ্রহী! তাই আমি আর না করলাম না। আসলে এখানে মেহরাবেরও মন টিকত না সেটা আমিও টের পেতাম। মিথিলাকে ছাড়া ওর কষ্ট হতো সেটা বুঝতাম বলেই ওকে মিথিলার কাছে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলাম । তাছাড়া ওর কলেজটাও মিথিলার বাসার কাছাকাছি। তাই আর আটকালাম না। একদিন তো ওকে যেতেই হতো। মায়ার বাঁধনে কতকাল আটকে রাখব? শুধুশুধু মায়া বাড়িয়ে কষ্টই বাড়বে।
ছেলেমেয়ে দুটি চলে যাবার পর থেকে আমার মনে হয় এ বাড়িতে আমার থাকাটাই বুঝি অর্থহীন। চারপাশের আপন মানুষগুলি বড্ড বেশি স্বার্থপর । এদের মাঝে দম নিতে খুব কষ্ট হয় আজকাল। কিন্তু যাবই বা কই? এই বয়সে আর ঘর ছাড়ার মনে জোর নেই।
সেলিমের সাথে সম্পর্ক এখন আবার সেই আগের মতই নামকাওয়াস্তে চলছে। মিথিলার রিসেপশান শেষে সেদিন বাসায় ফিরে সেলিম আর আমার শাশুড়ির সাথে আমার খুব তর্কাতর্কি হয়। প্রিয়ও ছিল পুরোটা সময়। সেলিম আর শাশুড়ি মিলে কী করে মিথিলা আর প্রিয়র সম্পর্কটাকে কুঁড়িতেই মেরে ফেলেছিল সেকথা নিয়ে কম শোনাই নি তাদের। সেদিন আর কাউকে ছাড় দেইনি। আমার শাশুড়ি কী করে ছেলের সাথে তাল মেলাল সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে কার্পণ্য করিনি। সেলিমের একটাই কথা , সে তার ছেলের জন্য মিথিলাকে কোনোদিক থেকেই উপযুক্ত মনে করেনি তাই সে তার কাছে যে কাজ করা উচিৎ বলে মনে হয়েছে সেটাই করেছে। সে কারো কাছে কৈফিয়ত দেবার জন্য বাধ্য নয়।
প্রিয় একটা প্রশ্নও তোলেনি সেদিন। সে শুধু নিরব দর্শক হয়ে আমার ওর বাবার তর্ক শুনেছিল। কোনো কথা না বললেও আমি ওর চোখে বেদনার ছাপ স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি ।
সেলিম মিথিলার পরিচয় নিয়ে খুব বেশি অপমানজনক কথা বললে আমি সহ্য করতে না পেরে সেলিমের অতীতের কথা বলতে শুরু করেছিলাম । সেলিমও খুব ক্ষেপে গিয়ে যা মুখে এসেছে তাই বলে গিয়েছে।সময়মত প্রিয় এসে আমাকে থামিয়ে না দিলে সেলিমের আর হেলেনের বাচ্চার প্রসঙ্গ নিয়ে এসেছিলাম প্রায়। পরক্ষণেই বুঝতে পারছিলাম কত বড় ভুল করতে যাচ্ছিলাম আমি। রাগের মাথায় নিজেকে সংযত করতে পারছিলাম না।
আমাদের থামাতে প্রিয় এসে ওর বাবা আর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে , “ আমি মিথিলাকে পছন্দ করতাম এরমাঝে বিন্দুমাত্র মিথ্যে নেই । এটা আমি অস্বীকার করছি না। তবে মিথিলা এখন অন্য কারো ওয়াইফ। আমি এসব বলে ওর ম্যারিটাল লাইফে কোনো ধরণের প্রবলেম ক্রিয়েট করতে চাই না।
মিথিলাকে ভুলতে হয়ত আমার কয়েকদিন সময় লাগবে। হয়ত খুব কষ্ট পাব কিছু সময়। আমি সব সয়ে নিব। কারণ আমিও আমার সব পাস্ট ভুলতে চাই। এজন্য আমি কাজে পুরোপুরি ডুবে যেতে চাই। আমি চাই না তোমরা আমার কোনো বিষয় নিয়ে নিজেদের সম্পর্কটাকে নষ্ট করো। ছোটোবেলা থেকে তোমাদের শুধু ঝগড়া ফ্যাসাদই দেখেছি। এই বয়সে এসব তোমাদের সাথে আসলেই যায় না। প্লিজ, এসব ছেড়ে একটু মিলেমিশে থাকো।
আম্মু , তোমাকে বলছি! তুমি মিথিলাকে নিয়ে চিন্তা করো না। সাজিদ খুব ভালো ছেলে । মিথিলাকে সে ঠিকই বুঝবে। আর মিথিলাও সাজিদের জন্য একদম পার্ফেক্ট। আমার মতো একটা উড়নচণ্ডী টাইপের পাগলা টাইপের মানুষের সাথে মিথিলা কোনোদিনই সুখী হতো না। এই যে আব্বু বলছে , মিথিলা আমার উপযুক্ত না! এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। আমিই মিথিলার জন্য আনফিট। মিথিলার মত এমন বুদ্ধিমতি আর লক্ষী একটা মেয়ের জন্য সাজিদই পার্ফেক্ট। তুমিই তো বলেছ। আল্লাহ যা করে তার মধ্যেই বান্দার ভালো আছে। তিনিই হয়ত চাননি আমাদের মিল হোক! মিথিলার জন্য যেটা ভালো সেটাই করেছেন ওর সাথে। তাই তুমি একদমই আপসেট হবে না , প্লিজ। ওর জন্য দোয়া করো শুধু।
আর আব্বু, তুমি আমার জন্য খুব চিন্তায় থাকো আমি জানি। সব বাবারই ইচ্ছা ছেলেকে এতটা উপযুক্ত দেখা যেন তাকেও ছাড়িয়ে যায় তার ছেলে। আমি হয়ত তোমার মত হতে পারব না। ছাড়িয়ে যাওয়া থাক দূরের কথা। তবে আমি প্রমিজ করলাম, আমি আমার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করব । এই ব্যবসায় দাঁড় করাতে তোমার আর দাদভাইয়ের এতদিনের কষ্টের কথা, অবদানের কথা আমি কোনোদিনই ভুলতে পারব না। আমি আমার সাধ্যানুযায়ী আমার জায়গা থেকে সচেষ্ট থাকব।
আর আমার বিয়ে নিয়েও একদমই টেন্সড হতে হবে না। ভয় নেই কাউকে ভালোবেসে আর ভুল করব না। তোমার যাকে পছন্দ হবে তার সাথেই বিয়ে করব। তুমি তোমার স্টাটাসের সাথে বজায় রেখে পাত্রী খুঁজতে থাকো। পেলে আমাকে শুধু জানিও । বাকী কাজের জন্য যা কিছু করতে হবে সেদিক আমিই সামাল দিতে পারব। তাই প্লিজ, তোমরা নিজেদের মাঝে আর ঝামেলা করো না।
আমি সেদিন খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সত্যিই আমার ছেলেটা বড় হয়েছে। অন্তরের ক্ষতটাকে লুকাবার জন্য মুখে একটা চওড়া হাসি দিয়ে কথা বলা শিখে গেছে আমার ছেলেটা।
এজন্যই হয়ত সেলিমের পছন্দের সাথে এডজাস্ট করার চেষ্টা করে এনার সাথে বিয়েতে কোনো আপত্তি করেনি। আমি আমার ছেলেটাকে দেখেছি চুপসে যেতে। সেদিনের পর থেকে সেই পুরানো প্রিয়কে হারিয়ে ফেলেছি আমি। সেই সদা হাস্যোজ্জ্বল, প্রাণ চঞ্চল ছেলেটা আমার যেন খোলসের মাঝে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে । আমি ওর সামনে যেয়ে ওর চোখের দিকে তাকালেই মনে হয় ওর সুখটুকু আমি কিনতে পারলাম না। বড় অপারগ মা আমি।
এনাকে প্রিয়র পাশে খুব বেশি পছন্দ করতে না পারলেও প্রিয় যেহেতু বিয়েতে সম্মতি দিয়েছে তাই আমি আর রাগ করে থাকতে পারলাম না। আমার একমাত্র সন্তানের বিয়ে। শহরের কত নামিদামি মানুষ আসবে। সেলিম কোন কিছুতে কোন কমতি রাখছে না।
সব কষ্ট অভিমান ভুলে যে সেলিমের পাশে দাঁড়ালাম।
বিয়ের এ টু জেড সেলিম নিজে তদারকি করছে।
তার একটাই কথা, সারা মানুষ যেন মনে রাখতে পারে বিয়ে হয়েছিল সেলিম সাহেবের একমাত্র ছেলে প্রিয়র!সেভাবেই চলছে আয়োজন। আমাকে সাহায্য করার জন্য মিথিলাকে ডাকতে চাইলে সেলিম টেকনিক্যালি আমাকে না করে দেয়।
সে আমাকে বলে, মিথিলা এ বাড়ির গেস্ট, প্রিয়র কাজিন। ভুলে যাও কেন সে তোমার মেয়ে না। তাদেরকে বিয়ের কার্ড পাঠানো হয়েছে তারা গেস্ট হিসেবে আসবে। শুধু শুধু তাদেরকে বিরক্ত করার কোন মানে হয় না। তোমার কোনো সাহায্য লাগলে আমার অফিস থেকে আমি এক্সপার্ট মেয়েদের পাঠিয়ে দিব। ওদেরকে দিয়ে করিয়ে ফেলবে। কোন সমস্যা হবে না।
আমি কোন কথা বলতে পারিনি সেলিমের কথার প্রত্যুত্তরে। শুধু মুখ বন্ধ করে শুনেছিলাম।
বিয়ের শপিং এবং সব অ্যারেঞ্জমেন্ট নিয়ে কোনোকিছু করার আগেই এনার এবং তার পরিবারের মতামত নেওয়া হচ্ছে । আমি বেশ অবাক হলাম কারণ এতটা গুরুত্বপূর্ণ তো এখন পর্যন্ত আমিই হইনি। কি রঙের ফুল এনার পছন্দ, কোন ধরনের কালারের ড্রেস পছন্দ করে, তার গয়নাগুলো কোথা থেকে আনা হবে, তার বেডরুমটা কি রংয়ের হবে, বেড রুমের ফার্নিচারগুলো কেমন হবে প্রত্যেকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিসের তদারকি করছে সেলিম। সেই হিসেবে প্রিয়র রুমটাকে সাজানো হয়েছে। কিছু নতুন ফার্নিচার ঢুকেছে। এনা গত রাতে এসে নিজেই সবকিছু দেখে গেছে।
মেয়েটার স্বভাব-চরিত্র আমার কেন যেন খুব একটা ভালো ঠেকছে না। এখনই কেমন যেন ডমিনেটিং’ স্বভাবের। প্রিয়র সাথে শাসনের সুরে কথা বলে। এটা ওনার পাকনামি নাকি ন্যাকামি এটা বুঝতে পারছি না। তবে মেয়েটার চেহারার মাঝে এক ধরণের মায়া আছে এটা অস্বীকার করছি না।
চলবে…