সুখের_ঠিকানা পর্ব-১৮+১৯

0
197

#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব১৮

লাল নীল বিভিন্ন লাইটিং এ ঝলমল করছে ছাদ।ছাদে হালকা ভলিউমে মিউজিক চলছে।সাথে লোকজনের কোলাহল।ছোট বড় অনেক মেয়েরাই হলুদ শাড়ি পড়েছে।এত এত মানুষের ভিড়ে রোহানের চোখ সন্ধ্যায় দেখা শুভ্ররঙা ড্রেস পড়া মেয়েটাকে খুঁজছে।জারিফ রোহানের দিকে একনজর তাকিয়ে ছাদের একপাশে গিয়ে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ায়।সাথে শাওন রুপম দুজনেই যায়।ওদের যাওয়া দেখে রোহান গিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে বলে,,”এই এখানে একপাশে দাঁড়িয়ে থাকলে মেয়েটাকে পাবো কিকরে শুনি?তোরা একেকটা বন্ধু নাকি শ’ত্রু বলতো?কোথায় মেয়েটাকে খুঁজে পেতে হেল্প করবি।তা না করে, উফ্।”

জারিফ নির্বিকার ভঙ্গিতে আছে।রুপম বিরক্তিকর ফেস করে ঠোঁট চেপে বলল,,”আরে মেয়েটাকে আমরা দেখেছি নাকি? আশ্চর্য!এত মেয়েদের ভিড়ে তোর ক্রাশ খাওয়া ল্যারকি কোনটা তা বুঝবো কিকরে?”

রোহান শাওনের দিকে মোটা চোখে চাইলো। দাঁত কটমট করে বলল,,”এই তুই তো তখন সন্ধ্যায় আমার সাথে ছিলি। দেখেছিলি তো।এখানে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে, খুঁজে পেতে হেল্প করনা,ইয়ার।”

রোহানের শেষের কথাটা করুণ শুনালো।শাওন দুইহাতে ভর দিয়ে রেলিংয়ের উপর আয়েশ করে বসল। টিপ্পনি দিয়ে বলল,,”আরে ভাই তুই তো দেখছি একনজর দেখেই প্রেমে দিওয়ানা হয়ে গেলি।পাছে না ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হতে হয়।”

রোহান ধমকের স্বরে বলল,,”থামবি। নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা বাদদে।পসিটিভ কথা বলবি। আমাকে উৎসাহ দিবি তা না করে।”

কথাটা বলতে বলতে রোহানের নজর যায় খানিকটা দূরে ছাদের গেইট বরাবর।মেয়েরা সাজানো ডালা নিয়ে আসছে।একেকজনের হাতে একেক জিনিস। মিষ্টি, ফলমূল দিয়ে প্রত্যেকটা ট্রে নজরকাড়া ডিজাইন করা।রোহান মেয়েদের ভিড়ের মাঝে নিষ্পলক চাহুনিতে চেয়ে আছে। কিয়ৎকাল পরেই এক্সাইটেড হয়ে বলল,,
“ইয়েস।পেয়েছি।জারিফ ঐযে গেইটের দিকে দেখ।ঐযে মেয়েটা।”

জারিফ দুইহাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে একপা রেলিংয়ের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।রোহানের কথায় চকিতে সামনে তাকায়।একপলক সামনে তাকায়।তারপর রোহানের দিকে তাকিয়ে বাম ভ্রু নাচিয়ে বলে,,”ওদিকে তো অনেক মেয়েই।কোনটা বুঝবো কিকরে?”

রোহান এক হাত দিয়ে একটু ইশারা করে তাৎক্ষণিকভাবে বলে উঠলো,,”ঐযে দেখ।সাদা থ্রি পিস পড়া। বেশিরভাগই তো হলুদ শাড়ি নয়তো হলুদ রঙের ড্রেস পড়েছে তার মধ্যে সাদা রঙটা এখনো তোর চোখে পড়ছে না।কালার ব্লাইন্ড হয়েছিস নাকি?”

জারিফ বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,,”হেপ।ওখানে শুধু মেয়েরা ঐভাবে তাকায়নি। মেয়েদের দিকে হা করে তাকানোর কোনো হেবিট আমার নেই।”

সবার পিছনে দুইটা মেয়ে দাঁড়িয়ে।একজন হলুদ শাড়ি পড়ে।অন্যজন থ্রি পিস।রোহান এবার স্মিত হেসে বলল,,”ঐযে এবার দেখ। রুপন্তীকে তো চিনিস।ঐযে রুপন্তীর সাথের মেয়েটা।”

জারিফ সেদিকে তাকাতেই দেখে হলুদ শাড়ি পড়া কোনো মেয়ের চুল ঠিক করে দিচ্ছে রোহানের বলা সাদা থ্রি পিস পড়া মেয়েটা।মেয়েটা পিছন দিক হয়ে থাকায় মুখটা দেখা যাচ্ছিল না।তবে পিছনের অবয়ব দেখে জারিফের কেমন জানি চেনাচেনা মনে হচ্ছে।বিশেষ করে পিঠজুড়ে থাকা দীঘল কালো চুলগুলো বারংবার নির্দিষ্ট একজনের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।জারিফ নিষ্পলক চাহুনিতে সেদিকে চেয়ে আছে।রোহান রুপমকে উদ্দেশ্য করে বলল,,”ওহ্,গড!তোর বোনের আর চুল খোলার সময় হলো না।”

রোহানের কথা শুনে রুপম চোখ পাকিয়ে তাকায়।রুপন্তীর স্টাইলিশ হেয়ার হঠাৎ খানিকটা এলোমেলো হয়ে যায়।হাতে ট্রে থাকায় ঠিক করতে পারছিলো না। অবশেষে ইশারায় পাশে থাকা বান্ধবীকে বলে,ঠিক করে দিতে। রুপন্তীর চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে ঘুরে তাকাতেই ফেসটা দেখার সাথেসাথেই জারিফ থমকে যায়।জারিফ হতবাক হয়ে ড্যাবড্যাব করে সেদিকে ঠায় চেয়ে রইল।জারিফ বিস্ময়কর চাহনিতে চেয়ে অবাক হয়ে মনেমনে আওড়ালো,লিয়া।লিয়া এখানে?পরক্ষণে জারিফের তীক্ষ্ণ নার্ভ জানান দিলো, ওহ্!লিয়া তো রুপন্তীর ফ্রেন্ড।সেই হিসেবেই হয়তো নিমন্ত্রিত।পাথরের স্টোন বসানো সাদা থ্রি পিসে লিয়াকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। হেঁটে যাচ্ছে আর পাশে থাকা রুপন্তীর সাথে শব্দহীন হেসে হেসে কি সুন্দর কথা বলছে। নির্মল হাসিটা দেখলে যে কেউ সেই হাসির মায়ায় পড়তে বাধ্য হবে।হরিণী চোখে কালো মিচমিচে চোখের মনি ফর্সা মুখের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছে জারিফের কাছে।লিয়াকে এর আগে কখনো এতোটা গভীর ভাবে দেখা হয়নি।জারিফ মোহময় চোখে কিছুটা দূর দিয়ে হেঁটে যাওয়া লিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।রোহান জারিফের দিকে তাকালো।দুইহাতে শার্টের কলার একটু টানটান করলো। অতঃপর হালকা কেশে ভাব নিয়ে বলল,,

“এবার বল তোরা,তোদের বন্ধুর চয়েজটা কেমন?একদম হাইলি চয়েজ কিনা বল? প্রুভ হয়েছে এবার।যা জারিফ এবার মিশনে নাম। একদম সাকসেস হয়ে ফিরতে হবে কিন্তু।কি বলেছি মনে আছে তো সব?যেয়ে সুন্দর করে আলাপ করবি।আর শেষে আমাকে দেখিয়ে বলবি ”

রোহানের কথায় জারিফ নিজেকে ধাতস্থ করে।একটু নড়েচড়ে দাঁড়ায়। রোহানের কথার মাঝেই তড়িৎ কাঠকাঠ গলায় বলে উঠলো,,”ইম্পসিবল।সম্ভব নয়। ইট’স্ ইম্পসিবল টু মি।”

আসার পর থেকে রোহানের বলা প্রতিটা কথা মনে হতেই জারিফের মেজাজ খা’রাপ হতে থাকে। আপনাআপনি রা’গের সৃষ্টি হতে থাকে।তবে সেটা কাউকে বুঝতে না দিয়ে জারিফ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে দৃঢ়তার সাথে ফের বলে উঠলো,,
“রোহান এটা বাদদে।ওদিকে নজর না দেওয়াই তোর জন্য বেটার।”

জারিফের কথায় তিন বন্ধুই বেশ অবাক হয়। রোহান নাছোড়বান্দার মতো আচরণ করে বলল,,”হুয়াই?বাদ দেবো মানে? কিন্তু কেনো?কোনো কারন ছাড়াই। শুধুশুধু কেনো মনের ভালোলাগাটাকে প্রশ্রয় দেবো না, স্ট্রেইন্জ!”

জারিফ দুই আঙ্গুল কপালে স্লাইড করতে করতে মনেমনে আওড়ায়,ভুল করে ভুল মানুষকে পছন্দ করে ফেলেছিস বন্ধু।এত এত মেয়ে থাকতে তোর কিনা লিয়াকেই পছন্দ করতে হলো?উফফ!নীলের কথাটা এখন খুব করে মনে হচ্ছে জারিফের। এরকম গা ছাড়া ভাব এর জন্য তোর সুন্দরী পিচ্চি বউটার মন দখল করে,তোর সামনে দিয়ে ফুড়ুৎ করে কে কবে নিয়ে চলে যাবে।তখন আফসোস করেও কূল পাবি না।এসব কথা মনেমনেই ভেবে মাথা ঝাড়ল জারিফ। রোহানের দিকে তাকিয়ে মুখে সিরিয়াসনেস ভাব ফুটিয়ে তুলে শান্ত কন্ঠে বলতে থাকে,,

“দোস্ত মেয়েটাকে দেখে আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে মেয়েটা অলরেডি বুকড।”

রোহান তাৎক্ষনিকভাবে কপাল কুঁচকে আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলল,,”হোয়াট?বুকড মানে?একজনকে শুধু দেখেই, না জেনেই তোর এমন মনে হলো কেনো? অদ্ভুত।”

জারিফ কপাল কুঁচকে বিড়বিড় করে বলে,আমার বউ আর আমি জানবো না। উফ্! ঠোঁট গোল করে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে। অতঃপর লম্বা শ্বাস টেনে নেয়।বেশ স্বাভাবিকভাবে বোঝাতে থাকে,,”দেখ তুইই বলছিস মেয়েটা মাত্রারিক্ত সুন্দরী।বিয়ে বাড়িতে যেকেউ যখন তখন প্রোপোজ করে বসতে পারে।তাই বেশি দেরি করা যাবে না।তো দোস্ত তোর কাছে এখন আমার প্রশ্ন ,এত সুন্দরী একটা মেয়ে এখনো সিঙ্গেল থাকা সম্ভব?সে যে এখনো সিঙ্গেল নেই তা আমি ড্যাম শিওর।আর একটা মিঙ্গেল মেয়ের সাথে জেনেশুনে আমার বন্ধুকে জুড়ে দেওয়ার চিন্তা আমি কখনোই করতে পারিনা। শুধু বন্ধু হিসেবেই নয়।একজন ওয়েলইউশার হিসেবে বলছি,মেয়েটাকে দেখেই আমার ম্যারিড ম্যারিড লাগছে।সো এই মেয়ের থেকে হাজার হাজার গজ দূরে থাকাই বেটার।”

রোহান মুখটা ম্লান করে ফেললো।কিছুটা অসহায় ফেস করে মৃদুস্বরে শুধালো,,”মানছি তোর কথায় যুক্তি আছে।তবে আগে একবার শিওর হলে ভালো হয় না।আর মেয়েটাকে একবার প্রস্তাব দিয়ে দেখনা ভাই।কি বলে?তারপর নাহয় যা হবার হবে।”

জারিফ দাঁতে দাঁত চেপে রা’গটাকে কন্ট্রোল করে।রোহানের কাঁধে একহাত রাখল। নির্বিকার ভঙ্গিতে ঠোঁট আওড়ালো,,”দোস্ত আমার পক্ষে সম্ভব নয়।কারন টেনিস বলের মতো যে বেগে যাবো তার দ্বিগুণ বেগ নিয়ে ফিরে আসার অপমান টা আমি হতে দিতে চাচ্ছি না। দোস্ত তুই নিশ্চিত থাক এখানে যে পিওর হানড্রেড পার্সেন্ট রিফিউজের সম্ভবনা আছে।তাই এটা বাদ দে।”

একটু থেমে আশেপাশে দেখিয়ে ফের বলতে থাকে,,
“দেখ আশেপাশে কত হলুদপরি ঘুরছে।হলুদ শাড়িতে একেকটাকে একদম আকাশ থেকে টুপ করে পড়া হলুদ পরি লাগছে।আরেকটু খুঁজলে লাল,নীল,সবুজ পরিকেও পাওয়া যাবে।তুই সিলেক্ট করবি। দরকার পড়লে সেখানে আমি নিজে গিয়ে রিকোয়েস্ট করে তোকে সেটেল করার ব্যবস্থা করবো,হুম।তবুও ভাই এই শুভ্রপরিকে বাদদে।”

শেষের কথাটা একদম ক্ষীণ আওয়াজে বলে।যা কিনা বাকিদের কান অব্দি পৌঁছায় না।রোহান মুখটা কাচুমাচু করে ফেললো।জারিফের সুচতুর কথা রোহানের উপর যথেষ্ট ইফেক্ট ফেলে।রোহান বেচারা খুব আপসেট হয়ে মুখটা ভার করে রাখল।সবই ঠিক ছিলো এরমধ্যে হঠাৎ রুপম ফোড়ন কে’টে বলে উঠলো,,”এই জারিফ রোহানকে এরকম উল্টাপাল্টা বোঝাচ্ছিস কেনো?রোহান তো লিয়ার কথা বলছে দেখছি।রুপুর ফ্রেন্ড লিয়া।আমি যতদূর জানি আনম্যারিড।আর তোর লিয়াকে দেখে এরকম মনে হওয়ার কারন কি?”

রুপমের কথায় রোহানের চোখ আবার চকচক করে উঠলো।একটু আগের দমে যাওয়া মনটা ফের নেচে উঠলো।চকিতে জারিফের দিকে চাইলো। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,,”এই জারিফ তো আমাকে পুরাই কনফিউজড করে দিচ্ছিলো।যাক গে রুপম দোস্ত তোকে অসংখ্য ধন্যবাদ।”

এরমধ্যে রুপন্তী এসে রুপমকে উদ্দেশ্য করে বলল,,”এই ভাইয়া এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবি। ওদিকে সব কমপ্লিট।চল হলুদ শুরু করতে হবে তো।সবাই ওয়েট করছে।”

রুপম বন্ধুদেরকে উদ্দেশ্য করে”চল” বলে যেতে থাকে।জারিফ মনেমনে ভাবে,উফফ!সব ঠিকই ছিলো মাঝখানে রুপমটা আবার না জেনেই উস্কে দিলো এই রোহানকে।রুপম কিছু ভেবে কয়েক কদম পিছিয়ে আসে।রোহানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,”লিয়া রুপন্তীর ফ্রেন্ড।আমার ছোট বোনের মতো।আর লিয়া এবাড়িতে এখন মেহমান হিসেবে আছে।তাই বলছি তুই কোনোভাবেই লিয়াকে এখন বি’রক্ত করতে যাসনা।আমাদের বাসায় আছে এখন কেউ ওকে এসব বিষয় নিয়ে বিরক্ত করলে সেটা মোটেই ভালো দেখাবে না।কথাটা মাথায় রাখিস।আর সত্যিই যদি তোর ওকে ভালো লেগে থাকে পরে পাছে আলাদাকরে যোগাযোগ করিস।বুঝতে পারছিস কি বলতে চাইছি।সো এখন এখানে থাকা অব্দি লিয়াকে কোনো প্রকারের ডিস্টার্ব করবি না। ক্লিয়ার?”

রোহান মুখায়ব থমথমে করে হালকা মাথা দুলালো।যার অর্থ ঠিক আছে।জারিফের মাথার উপর থেকে কিছুটা হলেও চিন্তার পাহাড় কমলো।জারিফ খানিকটা স্বস্তি বোধ করলো।কিছু ভেবেই জারিফ রোহানকে ডেকে ফের বলল,,”রোহান আমার মনেহয় মেয়েটা যেহেতু রুপন্তীর ফ্রেন্ড।তাই মেয়েটাকে তোর বোনের নজরে দেখা উচিত। রুপন্তীকে তুই নিশ্চয় বোনের নজরে দেখিস।রাইট?”

রোহান মাথা নাড়ল।যার মানে হ্যা।জারিফ খুব সিরিয়াসলি বলল,,”সো সেইদিক দিয়ে ধরলে রুপন্তীর ফ্রেন্ডও হলো তোর বোন।ওকে দেখলেই বোন বোন ফিলিংস আনবি।একদম নিজের বোনের নজরে দেখবি,বুঝলি।”

জারিফের এরকম অদ্ভুত কথাশুনে রোহান সহ শাওন দুজনের কপালেই কিঞ্চিৎ ভাঁজ পড়ে।রোহান তো তড়িৎ বলে উঠলো,,”আমার বোনের অভাব নেই।তাই মেয়েটাকে বোন ভাবার প্রশ্নই আসে না।তোর দরকার পড়লে তুই বোনের নজরে দেখিস।”

“সেটা ভাবাও আমার জন্য পাপ হবে।”

জারিফ সহসা তড়িৎ বলে ফেললো।জারিফের কথা রোহানের বোধগম্য হলো না।রোহান পাল্টা প্রশ্ন করে বসলো,,”বুঝলাম না?”

“ব্যাপার না।ঠিক সময় মতো বুঝিয়ে দেবো।আগে সবটা ঠিক হোক দেন বুঝাবো।”
.
সবাই নাচ গান নিয়ে বিজি।অতো ভিড়ের মধ্যে লিয়ার ভালো লাগছিলো না। রুপন্তীকে বলে ছাদের একপাশে নিরবিলি জায়গায় রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ায়। রুপন্তীর পরিবারের সদস্যদের ছাড়া বাকি আত্বীয়দেরকে চেনে না।না চেনেটাই স্বাভাবিক।যদিও রুপন্তী নিকট আত্মীয় স্বজনের সাথে লিয়ার পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।সবাই কত সুন্দর মিশুক স্বভাবের তারপরেও লিয়ার আনইজি লাগছে।আজকে হলুদে আসার প্লান কোনোকালেই ছিলো না। ইনভাইট রক্ষার্থে রিসেপশনে আসবে এটা লিয়ার প্লান ছিলো। কিন্তু হুট করে রুপন্তী আজ বিকেলে লিয়াদের বাসায় চলে যায়। রাজিয়া সুলতানার কাছে রিকোয়েস্ট করে বলে। প্রথমে রাজি হচ্ছিলেন না।দুই পরিবারের মধ্যে অনেকদিন আগে থেকেই সম্পর্ক ভালো থাকায় রাজি হন।মাঝে মাঝে আসা যাওয়া হয়। রাজিয়া সুলতানা লিয়ার মনমানসিকতার কথা ভেবেও আসতে মত দেন।লিয়াকে সবসময় কিছু নিয়ে টেনস দেখায়।আর মেয়ে যে কি নিয়ে চিন্তিত তা ওনার কাছে স্পষ্ট।তাই মাইন্ড রিফ্রেশ করার জন্য ভেবে লিয়াকে কয়েকবার বলে কয়ে রাজি করায়। অবশেষে আজ সন্ধ্যার একটু আগেই আসছে লিয়া।

রুপমের কাজিন পার্টিরা নাচানাচি হইহুল্লোড় করছে।সবাই দর্শক হয়ে দেখছে।জারিফের দুচোখ বারংবার লিয়াকে খুঁজছে।জারিফ বন্ধুদেরকে একটা কল করার আছে বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে আসে। রুপন্তীকে দেখতে পায় সামনের সারিতে চেয়ারে বসে নাচ দেখছে।লিয়াকে দেখতে না পেয়ে জারিফের চিন্তা হয়। এখানে আসার পর যে দুইথেকে তিনবার লিয়াকে দেখেছে সবসময় রুপন্তীর সাথেই ছিলো।জারিফ স্পষ্ট চিন্তিত মুখায়বে চতুর্দিকে নজর বুলাতে থাকে। খানিকটা হেঁটে গিয়ে অবশেষে একপাশে ফাঁকা জায়গায় রেলিংয়ের পাশে লিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।জারিফ লিয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।কড়া পারফিউমের গন্ধ নাকে পৌঁছাতেই লিয়ার দুই সেকেন্ড লাগে মানুষটা কে তা বুঝতে।অনেকক্ষণ আগেই লিয়া জারিফকে দেখেছে। প্রথমে অবাক হয়।কিছুক্ষণ পরে বুঝতে পারে রুপম ভাইয়ার ফ্রেন্ড উনি।আর তখন মস্তিষ্কে চাপ দিয়ে মনেকরে, কয়েকমাস আগে ফিজিক্স প্রাইভেট পড়ার সময় কথা প্রসঙ্গে রুপু বলেছিলো তো।জারিফের সামনে লিয়া এমন এটিটিউড শো করছে যে,দেখেও না দেখার এক্টিং করে আছে।লিয়া দুইহাত বুকে গুঁজে নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে।জারিফ লিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে হালকা কেশে গম্ভীর গলায় শুধালো,,

“তোমার না আর কদিন বাদেই এক্সাম। পড়াশোনা বাদ দিয়ে তুমি এইসময় ঘুরে বেড়াচ্ছো।”

লিয়া নির্বিকার। দৃষ্টি দূরে নিবদ্ধ করে ঠাঁয় চুপচাপ আছে।কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই জারিফের কথায়।লিয়ার কোনো উত্তর না পেয়ে জারিফ কিছুটা মোটা স্বরে ফের বলল,,”কিহলো? কিছু বললাম।আনসার দিচ্ছো না যে।”

লিয়া জারিফের দিকে না তাকিয়ে জবাবে ত্যাড়া করে বলে উঠলো,,”আমার পরিক্ষা নিয়ে মানুষের এতো মাথা ব্যাথা জানা ছিলো না।”

জারিফ আড়চোখে লিয়ার দিকে চাইল। কিয়ৎকাল পর কন্ঠে গম্ভীরতার ছাপ রেখেই ঠোঁট আওড়ালো,,”আন্টি আঙ্কেল কেউ আসেনি।বিয়ে বাড়িতে তোমার একাএকা এইভাবে আসা খুব দরকার ছিলো কি?কত অচেনা অজানা মানুষজন। সিকিউরিটিরও তো ব্যাপার আছে।”

লিয়া এবার ঘুরে দাঁড়াল।জারিফের মুখায়বে একপল তাকালো। আশেপাশে ঘাড় ঘুরিয়ে নিলো। অতঃপর ঠোঁট মেলে বলল,,”কই আন্টি আঙ্কেল আই মিন আপনার বাবা মা কাউকেও তো দেখতে পাচ্ছি না।ওনারা তো আসেনি।তবুও তো আপনি আসছেন এবং এখনও দিব্যি আছেন।”

লিয়ার কথা শুনে তড়িৎ জারিফের রা’গ হয়। রা’গটাকে কন্ট্রোল করে বেশ স্বাভাবিকভাবে শান্ত গলায় বলল,,”লিয়া আমি তোমার সাথে মজা করছি না।আর না তো ফা’জ’লা’মো করে বলছি।আমি সিরিয়াসলি বলছি।”

লিয়া আড়ালে মুচকি হাসলো।যা জারিফের দৃষ্টিগোচর হলোনা। শান্ত কন্ঠে জারিফের কথাটাই ফের রিপিট করলো,,”আমিও সিরিয়াসলি বলছি?”

লিয়ার উপর রা’গ টা তরতর করে বেড়ে যায়। রা’গ টা কন্ট্রোল করে নিশ্চুপ রয়।জারিফকে নিশ্চুপ দেখে লিয়া ভেতরে ভেতরে মুচকি হাসে।লিয়ার প্রতি জারিফের যে, অধিকার বোধ সৃষ্টি হচ্ছে।এটা দেখে লিয়ার মন্দ লাগছে না বরঞ্চ খুব ভালো লাগছে।লিয়া এবার নম্র স্বরে বলল,,”আসলে রুপু বিকেলে বাসায় গিয়েছিল। অনেক করে বলল তাই আসতে হয়েছে।না আসলে মন খা’রাপ করতো।”

লিয়ার কথায় জারিফ সন্তুষ্ট হতে পারলো না।জারিফ ফের গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে বলে উঠলো,,”হুম।সেটা ঠিক আছে। রুপন্তীর ফ্যামেলি তোমার পরিচিত বাট বিয়ে বাড়ির সব আত্বীয়রা তো তোমার পরিচিত না।সো একা না এসে আন্টির সাথে আসলে বেটার হতো।”

লিয়া ত্যাড়া জবাব করলো,,”আমাকে নিয়ে ভেবে অযথা টাইম ওয়েস্ট করবেন না।আমি ঠিক আছি।আর ভবিষ্যতেও থাকবো ইন শা আল্লাহ।আমাকে নিয়ে না ভেবে আপনি এই সময়গুলো ইনজয় করুন সবার সাথে।আর আমার মনেহয় আমার ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো কোনো কিছুই নেই মানুষের।”

শেষের কথাটা ইনডাইরেক্টলি জারিফকে উদ্দেশ্য করে বলেছে লিয়া তা বুঝতে এক সেকেন্ডও দেরি হয়না।লিয়া যে ইচ্ছে করে এরকম ব্যাকা ব্যাকা কথা বলছে তা বুঝতে এতটুকু বাকি নেই জারিফের।জারিফ ভাবে এখানে লিয়ার সাথে কথা বলাই বেকার।ওর ইন্টেনশন আমাকে ইগনোর করা আর মেজাজটা খা’রাপ করিয়ে দেওয়া।এখানে আর কিছুক্ষণ থাকলে রা’গটা কন্ট্রোল করতে না পেরে লিয়ার সাথে মিসবিহেভ করে বসতে পারে।সেটা ভেবে জারিফ আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায়।জারিফের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে লিয়া মনেমনে আওড়ায়,সরি আপনার সাথে এভাবে রুঢ় আচরণ করার জন্য।আপনাকে ইগনোর করে কথা বলার জন্য আ’ম রিয়েলি সরি।খুব সরি।একটা কথা আছে না, তুমি যতো ছায়ার থেকে দূরে সরে যাবে।ছায়া তত তোমার কাছে আসবে।ঠিক তেমনিভাবে আপনার প্রতি আমার এই ইগনোরই,আপনাকে আমার দিকে আকৃষ্ট করতে বাধ্য হবে।আপনি সেদিন বলেছিলেন, এক্সিডেন্টকে কখনো মেনে নেওয়া যায়?নাকি কখনো কেউ মেনে নিয়েছে তুমিই বলো? আপনার এই কথাটা সব থেকে বেশি আমাকে হার্ট করেছিলো।আমি চাই আপনি নিজ থেকে কোনো একদিন বলবেন,এই এক্সিডেন্টটা আপনার জীবনকে সবথেকে লাকি করেছে।আপনাকে পৃথিবীর সৌভাগ্যবানদের একজন করেছে।লিয়া হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফের অস্পষ্ট স্বরে আওড়ায়,আমি কারো দায়িত্ব হয়ে থাকতে চাইনা।আমি দুইজন দুইজনার সুখের ঠিকানা হয়ে থাকতে চাই।দিনশেষে আমার প্রিয় মানুষটা আমাকে বলবে,তুমিই আমার সুখের ঠিকানা। কোনো বোঝা নয়। শুধু রেসপন্সিবিলিটি নয়।একে অপরের পরিপূরক হিসেবে থাকতে চাই। উফ্!লিয়া মনেমনে তাচ্ছিল্য হাসে।বিড়বিড় করে ঠোঁট নাড়ে,হয়তো আমার স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন-ই রয়ে যাবে। তারপরেও আশা নিয়েই তো মানুষ বাঁচে।
.
ছাদে এখন নাস্তার পর্ব চলছে।গোল টেবিল একটু দূরে দূরে সেট করা।মেয়েরা একপাশে বসেছে,ছেলেরা আরেকপাশের টেবিলে।তবে মাঝে অল্প দূরত্ব।ছাদে মুরব্বিরা নেই সব বাচ্চা পাটিরা।এক টেবিলে রুপম ওর ফ্রেন্ড সাথে কয়েকজন কাজিন।অপর টেবিলে রুপন্তী আর মেয়ে কাজিনরা। রুপন্তীর বয়সী একটা মেয়ে কাজিন অনেক কথার মাঝে লিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,,”লিয়া তোমার ইচ্ছে কি?না মানে সামনে তো এক্সাম। এক্সামের পর কোথায় ভর্তি হবে। এক্সামের পরের প্লান কি?বুয়েট,বিআইটি নাকি মেডিকেল?”

লিয়া কফির মগে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলতে থাকে,,”উমম। এক্সামের পর নানুবাসা ঢাকাতে যাবো। ওখানে উদ্ভাসে ভর্তি হবো। ভার্সিটিতে ভর্তির প্রিপারেশন নিবো।আর ইন্জিনিয়ার বা মেডিকেল নয় আমার ফাস্ট চয়েজ পাবলিক ভার্সিটি।ভালো কোনো সাবজেক্ট।”

রুপন্তী ফোড়ন কে’টে বলল,,”এখানে থেকে প্রিপারেশন নিলে সমস্যা কোথায়?এখানে কি এডমিশনের প্রিপারেশন নেওয়ার কোচিং সেন্টারের অভাব পড়েছে, নাকি?”

লিয়া সোজাসুজি বলে উঠলো,,”অভাব নেই।তবে সমস্যা কিছু আছে।এই শহরের মানুষকে এতোদিন অনেক জ্বালিয়েছি।তাই এখন আর জ্বালাতে চাচ্ছি না।”

মেয়েটি বলল,,”তোমার কথাটা শুনে খুব হাসি পেলো। দারুণ মজা করে কথা বলো দেখছি তুমি।”

ওদিকে বন্ধুদের সাথে কথা বললেও খেয়ালি নজরে লিয়াকে দেখছে জারিফ। লিয়ার কথাশুনে জারিফ ভাবে,লিয়ার সমস্যাটা কোথায়?ওর এতটা হার্ড হওয়ার কারন কি?জারিফের ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে রোহান বলল,,”এই জারিফ রাতে ব্যাচেলর পার্টি করবো।রাত বারোটার পর ছাদেই হবে।তুই তো মনেহয় থাকবি না।না মানে তখন তো ফোনে বলছিলি,এসে ঘন্টা খানেক পরেই চলে যাবি।তাই বলছি।”

জারিফ কিছু বলার আগেই শাওন ফোন স্ক্রল করতে করতে বলল,,”এই আমি KFC তে অলরেডি খাবার অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডেলিভারি বয় চলে আসবে হয়তো।”

রোহান ফের বলল,,”এই গরম পড়েছে খুব।সাথে কোল্ড ড্রিংকস অর্ডার করেছিস।বেশি করে কোল্ডড্রিংকস
অর্ডারদে।”

জবাবে শাওন বলল,,”দিয়েছি।”

রোহান ফের জারিফকে শুধালো,,”জারিফ তুই কি রাতে থাকবি।কিহলো বলছিস না যে।”

জারিফ সামনের টেবিলে বসা লিয়ার দিকে একনজর চাইলো।ফোন স্ক্রল করতে করতে ঠোঁট আওড়ালো,,
“হুম।আছি আমি।”

রোহান অবাক হয়ে সরু চোখে চাইলো।অবাক গলায় বলল,,”আজকে আসতেই যেখানে রাজি হচ্ছিলি না।আর এখন কিনা বলছিস রাতে থাকবি।আমার তো বিশ্বাস-ই হচ্ছে না। তাহলে আসার আগে ফোনে অতো নাটক করলি কেনো বলতো?”

রোহানের প্রশ্নে জারিফ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়।জারিফ কিছু বলবে তার আগেই সামনের টেবিল থেকে রুপন্তী রুপমকে গলা ছেড়ে ডেকে বলল,,”এই ভাইয়া তোরা ব্যাচেলর পার্টি করবি।আমাদেরকেও নিতে হবে কিন্তু।তাই আগেই বলছি বেশি করে খাবার অর্ডার দে।”

রুপম তড়িৎ বেগে ধমকের সুরে বলল,,”হেপ।যা ঘুমিয়ে পড় গিয়ে। বাচ্চারা এলাউ না।আর মেয়েরা তো একদম এলাউ নয়।”

চলবে…

#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব১৯

“এই রুপম চারটা লুঙ্গি আর সাথে কালো চশমার ব্যবস্থা কর দোস্ত।”

রোহান একটা চেয়ারে বসে সামনে আরেকটা চেয়ারে পা টান করে গা এলিয়ে ফোন স্ক্রল করছিলো।শাওনের কথার মাঝেই রোহান ফোড়ন কে’টে বলল,,”কেনো এই রাতের বেলা এসব দিয়ে কি করবি?রাতে লুঙ্গি পরে সাথে কালো চশমা চোখে দিয়ে আশেপাশের পরিত্যক্ত ডোবা থেকে মাছ ধরতে যাবি নাকি?”

রোহানের কথাশুনে সামনের টেবিলে বসা মেয়েরা মুখ টিপে হাসতে থাকে। শাওন দাঁতে দাঁত চেপে ফের বলল,,”বললাম না ব্যাচেলর পার্টি করবো। আজকের রাতটাকে স্মরনীয় করে রাখার জন্য লুঙ্গি,চশমা পড়ে লুঙ্গি ডান্স আর কালা চশমা গানে উরাধুরা ডান্স হবে।”

রুপম ভ্রুযুগল কিঞ্চিৎ কুঁচকে ফেলল। অতঃপর গলা ঝেড়ে বলল,,”হুম। লুঙ্গি পড়ি আর উরাধুরা ডান্স করতে গিয়ে মানসম্মানের বারোটা বাজাই।এটা সম্ভব নয়।অন্যকিছু বল।”

“আজকের ব্যাচেলর পার্টিতে নাচ গান চলবে দোস্ত।আরে নাচ-গান বাজনা ছাড়া পার্টি জমে না ইয়ার।সাথে বিয়ার হলে আরো জমতো ভালো।”

শাওনের কথা শুনে জারিফ ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে একনজর শাওনের দিকে চাইলো। অতঃপর জারিফ শান্ত কন্ঠে বলতে থাকলো,,”পার্টি মানেই গান বাজনা।সাথে ড্রিংকস এসব বেজাতীয় কালচার (অপসংস্কৃতি) অনুকরণ ,অনুসরণ না করাই বেটার।ইনজয় শালীনতা বজায় রেখে ভদ্রতার মধ্য দিয়েও করা যায়।এইযে আমরা বন্ধুরা রুপমের বিয়ে উপলক্ষে এক জায়গায় একত্রিত হয়েছি।আড্ডা দিয়ে সময়গুলো স্পেন্ট করছি এটা কি ইনজয়েবল নয়?”

শাওন মৃদু আওয়াজে বলে উঠলো,,”আসলে আমাদের দেশে এখন সবাই তো এরকম করে থাকে। পার্টি মানেই তো গান বাজনা, হইহুল্লোড় সাথে ড্রিংকস।এসব তো এখন কমন ব্যাপার।”

জারিফ স্বাভাবিকভাবে স্পষ্টস্বরে বলল,,”মানছি অনেকে করে থাকে।তবে অনেকে করলেই যে সেটা রাইট এমন তো নয়।অনেকে ঘু’ষ, দূর্নীতি এরথেকেও বেশি কিছু অহরহ করছে তার মানে কি সেটা রাইট হয়ে গিয়েছে? অনেকের সাথে কম্পিয়ার না করে ভালো – মন্দ বাছবিচার করতে হয়।উচ্ছৃংখলভাবে হইহুল্লোড় এইগুলো আসলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।যা মূলত অশান্তি বয়ে আনে।মূলত এটা পা’প কাজ।ছোট ছোট পাপের থেকেই বড়বড় পাপের সৃষ্টি হয়। একজন পার্সোনালিটি সম্পন্ন মানুষ কখনো অসাড় কাজ করে সময় ন’ষ্ট করে না।এখন বিনোদনের কথা বললে,আমি বলবো এটা কখনো সুস্থ বিনোদন না।দেখা যায় বিভিন্ন পার্টিতে ম’দ খেয়ে হইহুল্লোড় করে অবাধ চলাফেরা করে।যা আসলে অশান্তিই সৃষ্টি করে।তাই এসব থেকে বিরত থাকাই বেটার।”

জারিফের কথায় রোহান,রুপম সহমত পোষণ করে বলল,ঠিক বলেছিস।লিয়া এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে জারিফের কথা শ্রবণ করছিলো এরমধ্যে লিয়ার ফোনে আলো জ্বলে কেঁপে উঠলো।লিয়া ফোনটা রিসিভ করে একটু দূরে যায় কথা বলতে।রাজিয়া সুলতানা ফোন দিয়েছেন।ভালো মন্দ কথা বলে মেয়ের খোঁজ খবর নিলেন।লিয়া কথা বলে কল কে’টে আসতেই রুপন্তী পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,,”এই লিয়া চল ডিনার করে নিবি।আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।দুচোখ ভেঙ্গে রাজ্যের ঘুম আসছে।”

লিয়া কপাল কুঁচকে বলল,,”একটু আগেই তো এটাসেটা খেলাম।এখন আমার আর কিচ্ছু খেতে ইচ্ছে করছে না। এমনিতেই রাতে আমি হালকা খাবার খাই।তাই প্লিজ জোর করিস না।”

“ওকে”বলে রুপন্তী আর লিয়া ছাঁদ থেকে প্রস্থান করতে থাকে।লিয়া ছাদের গেইট বরাবর গিয়ে কেনো জানি একবার ঘাড়টা হালকা ঘুরিয়ে পিছনে তাকায়।লিয়ার সিক্স সেন্স লিয়াকে ভুল প্রমাণ করেনি।লিয়া পিছনে তাকাতেই জারিফের সাথে চোখাচোখি হয়।জারিফ খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয়।লিয়ার মনে হচ্ছিলো কেউ যেনো গভীরভাবে লিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।লিয়া একপলক সেদিকে দেখে ফের পা বাড়ায়।নিচে নামতে থাকে।রুপম আর ওর ফ্রেন্ডরা নিচে না গিয়ে ছাদে বসেই KFCথেকে অর্ডার করা খাবার খায়।এইতো কিছুক্ষণ আগেই ডেলিভারী বয় এসে দিয়ে গিয়েছে। বন্ধুরা মিলে গল্প গুজব করতে করতে রাত একটা বেজে যায়।রুপম বড় করে হামি দিয়ে বলল,,

“এই চল ঘুমাবি।আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে।”

রোহান ফা’জ’লা’মো করে বলে উঠলো,,”তোর তো আজকে ঘুম পাবেই।আজকে তো বেশি করে ঘুমিয়ে নিবি।কালকে সারারাত জাগতে হবে না।”

রুপম কটমট চোখে তাকায়।তারপর বলল,,”দিন এখানেই শেষ নয়।আজ তোদের দিন বলে নিচ্ছিস নে।তোদের সময় কিন্তু সামনে আছে।তাই একটু ভেবে চিন্তে বল।রোহান তোর বাসর রাতে তো আমি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগিয়ে রাখবো।তুই টেরও পাবিনা।”

বিয়ে বাড়িতে গেস্টরুম সহ প্রত্যেকটা রুম বুকড। আত্মীয়-স্বজনসহ বাড়ির লোকজন সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে এতক্ষণ।কালকে বিয়ে।বাড়িতে কতশত কাজ আছে।সকাল সকাল উঠতে হবে।রুপম ফ্রেন্ডদেরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,”তোরা আমার সাথে আমার রুমে থাকবি।মনেহয়না কোনো রুম আর ফাঁকা আছে।চারজন এক বেডে একটু অসুবিধা হবে।আজকের মতো একটু মানিয়ে নিস,কেমন।”

রোহান বলে উঠলো,,”আরে দোস্ত এটা কোনো বিষয় হলো।আরে আমরা জানি তো বিয়ে বাড়িতে থাকা খাওয়া এসব নিয়ে ধরতে নেই।আমাকে সারারাত ছাদে কাটাতে বললেও আমি মাইন্ড করবো না।”

লিয়া রুপন্তী আর ওর এক কাজিন একসাথে রুপন্তীর রুমে আছে।মাঝরাতে লিয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায়। প্রচন্ড পানি পিপাসায় গলাটা একেবারে শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে।লিয়া শোয়া থেকে উঠে বসে।রুমে হলুদ রঙের ডিম লাইট জ্বলছে।যার মৃদু আলোতে সবকিছু স্পষ্ট। রুপন্তী আর ওর কাজিন গুটিশুটি হয়ে বিভোর ঘুমাচ্ছে।দেখে মনে হচ্ছে চোর এসে এদেরকে চুরি করে নিয়ে গেলেও বুঝি টের পাবে না।এটা ভাবতেই লিয়া শব্দহীন হাসলো।রুমের চারিদিকে নজর বুলালো লিয়া। কোথাও এতটুকু পানি দেখা গেলো না।পানির বোতল বা গ্লাস কিছুই লিয়ার চোখে পড়ল না।এখন পানি না খেলেও ঠিকঠাক চোখে ঘুম ধরবে না লিয়ার।তাই অবশেষে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য লিয়া নিচে নামার সিদ্ধান্ত নেয়। রুপন্তী পইপই করে বলেছিলো কোনো দরকার পড়লেই যেনো ডেকে দেয়।এত সুন্দর ঘুমটা ভেঙে রুপন্তীকে জাগাতে ইচ্ছে করলো না লিয়ার।তাই লিয়া নিঃশব্দে কাঠের ভারি দরজাটা খুলে বের হয়।বাইরে উপরের করিডোরে সব লাইট অফ থাকায় বিদঘুটে অন্ধকার।কয়েক পা যেয়ে লিয়ার মনে হলো মোবাইলটা সাথে আনলে হয়তো ভালো হতো।এখন আর ফিরে মোবাইল আনার ইচ্ছে হলো না।আরো কিছুটা এগিয়ে সিঁড়ির কাছে যেতেই মৃদু আলো আসলো।নিচে লিভিং রুমে জ্বলে থাকা লাইটের আলো আসছে।লিয়া নির্ভয়ে নিচে নামতে থাকে।এই বাড়িতে এর আগে বেশ কয়েকবার আসা হয়েছে তাই প্রায় সবকিছুই চেনা জানা লিয়ার।তবে এর আগে কখনো রাত কাটানো হয়নি।লিয়া গুটিগুটি পা ফেলে কিচেনে যায়।একটা গ্লাস নিয়ে ফিল্টার থেকে পানি নেয়। অতঃপর ঢকঢক করে পানি খেয়ে তৃষ্ণা মেটায়।

মধ্যরাত চারিদিকে নিস্তব্ধতা সাথে শুনশান নীরবতা। সবাই হয়তো অতল ঘুমে অচেতন হয়ে আছে। পানি খেয়ে কিচেন থেকে বের হয়ে নিজের ছায়া দেখে লিয়া খানিকটা চমকে উঠে।পড়ে বিষয়টা টের পেলেও মনের ভেতর কেমনজানি একটা ভয় ঢুকে যায়। অন্ধকারে থাকা দরজার সামনের পর্দাগুলো কেমন জানি পেত মুর্তি লাগছে লিয়ার কাছে। অন্ধকারে কোনো কিছুর অবয়বকেই লিয়ার কাছে ভূতুড়ে আকৃতি মনেহচ্ছে।এটা নিতান্তই নিছক মনের ভ্রম।তবুও লিয়া বারংবার শুকনো ঢোক গিলতে থাকে।আর মনেমনে দোয়া দরুদ পড়ে আসতে থাকে।সিড়ি দিয়ে আসতে কোনো সমস্যা ছিলো না।যত সমস্যা এই দোতলার করিডোরে।লাইট না থাকায়।

জারিফের বেড শেয়ার করে ঘুমানোর অভ্যাস নেই বললেই চলে।তবে যেকোন পরিস্থিতিতেই চমৎকারভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে জারিফ।কোনো প্রকারের ইতস্তত বোধ ছাড়াই সুন্দর করে বন্ধুদের সাথে একই বেডে শুয়েছে।তবে একবেডে চারজন থাকায় যায়গার বেশ সংকট হয়।তার উপরে আজকে গরমটা একটু বেশিই পড়ছে।গরম লাগছিলো আর নতুন জায়গা হওয়ায় ঠিকঠাক ঘুম আসছিলো না।তাই জারিফ ছাদে যাওয়ার কথা ভাবে।যেমন ভাবা তেমন কাজ। বন্ধুদেরকে না জানিয়ে উঠে রুম থেকে বের হয়। রুপন্তী আর রুপমের রুম পাশাপাশি।রুপমের রুমের পরের রুমটাই রুপন্তীর।জারিফ মাত্রই রুম থেকে বের হয়েছে এমন সময়

লিয়া করিডোর দিয়ে যাচ্ছে আবার ভয়ে ভয়ে পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছে।এমন সময় আচমকা কারো সাথে ধাক্কা লাগে। ধাক্কা লাগার সাথে সাথেই লিয়া কাঁপাকাপা গলায় চিৎকার দেয়,,”ভূ ভূ ভূত।”

জারিফ ফোন স্ক্রল করতে করতে যাচ্ছিল। দৃষ্টি ফোনে থাকায় ঠিকমতো খেয়াল করেনি।এমন সময় ধাক্কা লাগে।গলার আওয়াজ শুনে মূহূর্তেই জারিফ বুঝে এটা লিয়া ।আর হাতে থাকা ফোনের আলোয় পুরোপুরি স্পষ্ট না হলেও ভালই লিয়াকে দেখতে পায়।লিয়া চোখ বন্ধ করে জোরে চিৎকার দিতে চাইছে।বাট গলা দিয়ে শব্দ যেনো আজ বের হতে চাচ্ছে না।ভয়ে লিয়ার সারা শরীর কাঁপছে।লিয়ার এরকম চিৎকারে জারিফ ভড়কে যায়।জারিফ সাথে সাথে ফোনের টর্চ অন করে।এতরাতে চিৎকার শুনে বাকিরা জেগে এসে কিহয়েছে জানতে চাইলে বিষয়টা বিশ্রী হবে।এটা ভেবে জারিফ লিয়ার একদম কাছাকাছি গিয়ে একহাত দিয়ে লিয়ার মুখটা চেপে ধরে।দুজনের মাঝে তেমন দূরত্ব নেই।ঘটনার আকস্মিকতায় লিয়া আরো বেশি ভীত সন্ত্রস্ত হয়।ভয়ে লিয়া ঘামতে থাকে। জারিফ মৃদুস্বরে বলে,,

“লিয়া এই লিয়া আমি। চিৎকার করো না, প্লিজ।আর ভ’য় পাচ্ছ কেনো?আমি আছি তো।”

লিয়া চোখ খুলার সাহস পাচ্ছে না।কত ভূতুড়ে গল্প শুনেছে লিয়া।ভুতেরা নাকি খুবই ভয়ংকর দেখতে হয়।আর হরর মুভিতে ভূতদের যেভাবে তুলে ধরা হয়।সত্যিকারের ভূত যদি সেইরকম দেখতে হয়। তবে লিয়ার বিশ্বাস দেখার সাথে সাথেই আ্যটাক ফ্যাটাক করে বসবে।তাই বাপু চোখ বন্ধ করে, না দেখে যতক্ষণ বেঁচে থাকা যায় ততটাই লাভ।এই ভেবে লিয়া আরো কষে চোখ বন্ধ করলো।তবে কন্ঠের স্বর শুনে লিয়ার একটু সাহস হলো।তবুও লিয়া ফের বোকাবোকা ভাবনায় নিমজ্জিত হলো।লিয়া মনেমনে ভাবে,শুনেছি ভূত জ্বীনেরা সরাসরি না এসে কারো রুপ নিয়ে আসে।তাহলে কি এই ভূতমহাশয়ও উনার আকৃতিতে আমার সামনে আসছে নাকি?

জারিফ ফের বলল,,”ভ’য় পাওয়া বাদ দাও।আর এতরাতে চিল্লাচিল্লি করো না প্লিজ।সবাই কি ভাববে।চোখ খোলো।একদম চেঁচাবে না।”

লিয়া শুকনো ঢোক গিলে নেয়। অতঃপর সাহস করে ঘন পল্লব তুলে তাকায়।চোখ মেলে কয়েকবার পলক ঝাপটায়।জারিফকে দেখে খানিকটা স্বস্তি বোধ করে।জারিফ একহাতে এখনো লিয়ার মুখটা চেপে ধরে আছে।জারিফের নিঃশ্বাস লিয়ার মুখে পড়ছে।জারিফ লিয়ার এতটা কাছাকাছি সেটা উপলব্ধি করতেই লিয়ার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।সারা শরীর জুড়ে শিহরণ খেলে যায়।লিয়া চোখ ঘুরিয়ে ইশারা করে সাথে উমম উমম করে।যাতে মুখটা ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়ায়।লিয়ার ছটফটানি সাথে ইশারা করার সেকেন্ড পরই জারিফ লিয়ার মুখ থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে নেয়।আর এতক্ষণ লিয়ার একদম কাছাকাছি ছিলো সেটা খেয়াল হতেই অস্বস্তি হয়।লিয়ার মুখের থেকে হাতটা সরিয়ে একটু দূরত্বে সরে দাঁড়ায় জারিফ।জারিফ শীতল চাহনিতে চেয়ে অপরাধীর স্বরে বলল,,

“সরি।”

লিয়া নিজেও খানিকটা লজ্জিত হয়। লজ্জায় আপনাআপনি লিয়ার মাথাটা নুইয়ে যায়।লিয়া দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে নিশ্চুপ রয়।দুজনের মাঝেই কিছুক্ষণ নিরবতা চলে। নীরবতা ভেঙ্গে জারিফ মৃদুস্বরে শুধালো,,”তুমি এখন এখানে?”

লিয়া মাথাটা তুলে জারিফের দিকে চাইলো।জারিফের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে লিয়া কৌতুহলী গলায় প্রশ্ন করে উঠলো,,”এই আপনি না ঘুমিয়ে এতরাতে ভূতের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেনো?”

জারিফ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল। স্বাভাবিকভাবে শীতল গলায় পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ল,,”এই একই প্রশ্ন যদি আমিও করি। মাঝরাতে না ঘুমিয়ে উয়িচ এর মতো ঘুরছো কেনো?”

লিয়া চঞ্চল কন্ঠে বলল,,”আমার তো পানি পিপাসা পেয়েছিলো পানি খেতে নিচে গিয়েছিলাম।”

জারিফ স্মিত হাসলো। শান্ত কন্ঠে বলল,,”ঘুম আসছিলো না।গরমটা একটু বেশিই লাগছিলো।তাই ভাবলাম ছাদ থেকে একটু ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া গায়ে মেখে আসি।”

লিয়া ঠোঁট উল্টে বলল,,”ওহ্”

কিয়ৎকাল পরে কিছু মনে হতেই লিয়া সন্দেহের চোখে তাকিয়ে ফের ঠোঁট চেপে বলল,,”বাই দ্যা ওয়ে আপনি আমাকে ফলো টলো করছিলেন না তো?আর নাতো আপনার খা’রাপ কোনো ইন্টেনশন ছিলো?কোনটা?”

লিয়া কপাল কুঁচকে উত্তরের অপেক্ষায় থাকে। জারিফ মৃদু ধমকের স্বরে বলে,,”সাট আপ।বাজে কথা রাখো।আর কি যেনো বলছিলে?ওহ হ্যা মনে পড়েছে। কোনো খা’রাপ ইন্টেনশন ছিলো কিনা।সেরকম কোনো ইন্টেনশন যদি থাকতো তবে সেটা তো আর খা’রাপ আখ্যায়িত হতো না।তুমি ছাড়া অন্যকেউ হলে সেখানে খা’রাপ ওয়ার্ডটা এপ্রুপেইট হতো।এটলিস্ট তোমার ক্ষেত্রে নয়।কারন তুমি তো আমার জন্য বৈধ।”

জারিফের কথাশুনে লিয়া অপ্রস্তুত হয়ে যায়।দুইগালে লজ্জায় লাল আভা ছড়ায়।জারিফ নিজেও কথাটা বলে ভ্যাবাচেকা খায়।জারিফের মুখটাও হা হয়ে যায়।জারিফ মুখ ফস্কে কথাটা বলে ফেলেছে। কিন্তু কথাটার ওয়েট এখন মনে হতেই জারিফ নিজেও লজ্জিত হয়।জারিফ সাথে সাথেই এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। ক্ষীন আওয়াজে বলল,,”সরি।”

চলবে,,,