সুখ অমৃত পর্ব-০২

0
95

#সুখ_অমৃত
#পর্বঃ২
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মানতাশার রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দেয় মঞ্জুয়ারা বেগম। মানতাশা বিছানায় বসে ছিল। মায়ের এমন কাণ্ড দেখে সটান বিছানা থেকে উঠে বসে। খানিক রাগী সুরে বলে ওঠে,
“তুমি এখানে কি করছ মা? যদি ভাবো আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে এই বিয়েতে রাজি করাবে তো ভুল ভাবছ। আমি মরে যাবো, তবু ঐ লোকটাকে বিয়ে করব না।”

মঞ্জুয়ারা বেগম মানতাশার কাছে এসে তার চু’লের মুঠি টেনে ধরে। মানতাশা ব্যাথায় আর্তনাদ করে বলে,
“মা, লাগছে। ছাড়ো আমায়।”

কিন্তু মঞ্জুয়ারা বেগম ক্ষেপে গিয়ে আরো জোরে চেপে ধরেন। হুমকির সুরে বলেন,
“শোন, তোর বাপ বেঁচে থাকতে অনেক রংঢং করেছিস, এখন তা চলবে না। বিয়ে করবি না মানে? তুই করবি না, তোর ঘাড় করবে। ভেবেছিলাম ভালো কথায় তোকে রাজি করাবো কিন্তু তুই তো ভালো কথা শোনার মেয়ে না। তাই প্রয়োজনে আমি যেভাবে পারি সেভাবে তোকে রাজি করাব।”

মানতাশার মাথায় জেদ চেপে বসে। সে বলে,
“যদি তুমি আমাকে মে’রেও ফেলো,তাও আমি ঐ আবু সুফিয়ানকে বিয়ে করবো না।”

মঞ্জুয়ারা বেগম এর মাথায় রাগের পারদ বৃদ্ধি পায়। রাগে অন্ধ হয়ে যান তিনি। দিকবিদিকশুন্য শুনে মানতাশাকে শায়েস্তা করার উপায় খুঁজতে থাকেন। একটু দূরে ইস্ত্রি মেশিন দেখে ছুটে যান সেদিকে। মানতাশা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার হাতে চেপে ধরেন সেই ইস্ত্রি মেশিনটা। মানতাশা ব্যাথায় চিৎকার করে ওঠে। তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে নোনাজল। কান্নাভেজা গলায় বলে,
“আম্মু, ছেড়ে দাও প্লিজ।”

মানতাশার হাত অনেকটা পুড়ে যাও। তাও যেন দয়ার সঞ্চার হয়না মঞ্জুয়ারা বেগম এর নিঠুর মনে।

মঞ্জুয়ারা বেগমের ক্রোধ যেন কিছুতেই কমার নয়। তিনি আরো জোরে ইস্ত্রি মেশিনটা চেপে ধরে বলেন,
“বিয়েতে কোন বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলে তোর আমি এমন হাল করব যার থেকে মৃত্যুও কম হয়ে যাবে।”

বলেই তিনি ছেড়ে দেন মানতাশাকে। মানতাশা ছাড়া পেতেই ছুটে যায় বাথরুমে। পানি ঢালতে থাকে পোড়া যায়গায়। ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে তার। মানতাশা কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“আল্লাহ, এখন তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই৷ তুমিই আমাকে বাঁচার কোন উপায় বলে দাও।”

মঞ্জুয়ারা বেগম ইস্ত্রি মেশিনটা সঠিক স্থানে রেখে বলেন,
“সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল কিভাবে বাকাতে হয়, সেটা এই মঞ্জুয়ারা খুব ভালো করেই জানে। এবার দেখ, মানতাশা। আমি কিভাবে তোকে এই বিয়েতে রাজি করাই। কতটা জঘন্য উপায় অবলম্বন করি।

.
মানতাশা পোড়া হাত নিয়ে দুপুর থেকে নিজের কক্ষে বসে আছে। মঞ্জুয়ারা বেগম অনেকবার তাকে খেতে ডেকেছে তবুও সে খেতে যায়নি। সারাটা দিন না খেয়ে আছে মেয়েটা। আর এখন তো সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। এর মাঝে মঞ্জুয়ারা বেগম আবারো এলেন মানতাশার কক্ষে। মানতাশা রাগ করে বললো,
“আবার কেন এসেছ? আমি বললাম না,আমি খাবো না। চলে যাও এখান থেকে।”

মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন,
“শোন, আমি তোর বাপের মতো নই, যে তোর মান ভাঙাতে আসব। খেতে হলি খাবি নাহলে না খেয়ে মরবি। আমি তোকে অন্য কথা বলতে এসেছি। শোন, আমি বাইরে যাচ্ছি৷ আজ ফিরতে দেরি হবে। আমার একজন অতিথি আসবে আজ, তার খাতির যত্নে যেন কোন ত্রুটি না থাকে।”

মানতাশাঃকে আসবে?!

মঞ্জুয়ারা বেগম বিরক্তিতে মুখ দিয়ে চ জাতীয় শব্দ করে বলেন,
“তোকে তো এত কিছু জানতে হবে না। যা বলছি তাই করবি। নাহলে তোর খবর আছে।”

বলেই তিনি মুখ ঘুরিয়ে চলে যান। মানতাশা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিচে নেমে এসে দরজাটা ভিড়িয়ে আবার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। একটু পর পেটে ক্ষিধের টান পড়ায় আর না খেয়ে থাকতে পারল না। ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে গরম করে নিয়ে একটু মুখে দিলো। খাওয়া শেষ করে উঠতে যাবে এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। মানতাশা আনমনে বলে উঠল,
“এখন আবার কে এলো?”

মায়ের বলা কথা গুলো মনে আসতেই বলল,
“তাহলে কি মায়ের সেই গেস্ট এসেছে? যাই গিয়ে দেখে আসি।”

মানতাশা গেট খুলতেই দেখতে পায় একজন যুবক দাঁড়িয়ে তার দরজার সামনে। যাকে মোটেই সুবিধার লাগছিল না। মানতাশা ভ্রু কুঁচকে ফেলে তাকে দেখে। হালকা ঢোক গিলে বলে,
“কে আপনি? কাকে চাই?”

“এটা কি মঞ্জুয়ারা বেগমের বাড়ি? ওনার সাথে কিছু জরুরি প্রয়োজন ছিল।”

মানতাশা যুবকটির চাহনি দেখেই বুঝল, সে সুবিধার না। তাই বলে উঠল,
“জ্বি, কিন্তু উনি এখন বাসায় নেই। আপনি পরে আসিয়েন।”

বলেই দরজা লাগাতে যাবে এমন সময় যুবকটি হাত দিয়ে দরজা আটকে দেয়। গায়ের জোরে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। মানতাশা বলে ওঠে,
“আপনার তো সাহস কম নয়, জোর করে ঢুকে পড়ছেন কেন? আমি কিন্তু সিকিউরিটিকে ডাকব।”

যুবকটি অট্টহেসে বলে,
“ডাকবি, ডাক।”

ভয়ে মানতাশার গলা শুকিয়ে যায়। তবুও সে ডেকে ওঠে,
“সিকিউরিটি…সিকিউরিটি..”

কিন্তু কেউ সাড়া দেয় না। মানতাশা বুঝতে পারে বড় কোন ঘাপলা আসে। ফোনটাও ঘরে ফেলে রেখেছে। তাই সে জলদি টেলিফোনের কাছে যেতে চায় এমন সময় যুবকটি তার হাত টেনে ধরে। মানতাশা অনুনয়ের সুরে বলে,
“দয়া করুন, আমার সাথে এমন করবেন না।”

যুবকটি যেন মানতাশার এমন আকুতিতে মজা পাচ্ছিল। তাই তো অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। মানতাশার কান্নার বেগ দ্রুত হয় যুবকটি তার স্পর্শকাতর স্থানে হাত বোলাতে থাকে। মানতাশার ভীষণ ঘৃণা হচ্ছিল তখন। যুবকটি নিজের শার্ট খুলতে থাকে। মানতাশা ছটফট করতে থাকে। যুবকটি মানতাশার মুখের সামনে একটু রুমাল ধরে। ধীরে ধীরে মানতাশার চোখ বুজে আসে।

.
জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে মানতাশা। তার শরীরে পোশাকের কোন ছিটেফোঁটা নেই। নিজের দিকে তাকিয়ে শিউরে ওঠে মানতাশা। সে বুঝতে পারে যা হবার হয়ে গেছে। বিছানার চাঁদর দিয়ে নিজেকে আবৃত করে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে মেয়েটা। কিছুক্ষণ আগেও তার সাথে কি ঘটে গেছে সেটা কিছুতেই মনে পড়ছে না। জ্ঞান হারানোর পর আর কোন কথা তার মনে নেই।

এরইমধ্যে তার কক্ষে ছুটে আসে কয়েকজন পাড়া-প্রতিবেশী। মানতাশা হতবাক হয়ে তাদের দিকে তাকায়। সবাই তার দিকে কেমন জানি নজরে তাকিয়ে ছিল। মানতাশা বুঝতে পারছিল না সবার এহেন দৃষ্টির কারণ।

হঠাৎ করেই পাশের বাসার মনিউর ইসলাম বলে উঠলেন,
“তোমাকে তো আমরা ভালো মেয়ে বলেই জানতাম, এখন এ কি রূপ দেখছি?!”

মানতাশা হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকায়। কিছুক্ষণ পরেই সাবিহা খাতুন নামক আরেকজন বলেন,
“বাপ তো দেউলিয়া হয়ে মরেছে, তাই এখন খরচ চালানোর জন্য নিজেকে বেঁচে দিয়েছে এই মেয়ে।”

সবগুলো কথা মানতাশার বুকে তীরের মতো বিঁধছিল। মানতাশা আর সইতে না পেরে বলে ওঠে,
“এসব কি জঘন্য কথা বলছেন আপনারা? আল্লাহর দোহাই লাগে, চুপ করেন।”

“তুমি করলে দোষ নেই, আর আমরা বললেই দোষ?”

“কি করেছি আমি?”

“নিজের দিকে তাকাও, তাহলেই বুঝতে পারবে।”

মানতাশা ভীষণভাবে গুটিয়ে পড়লো। ব্যাপারটা বুঝতে আর বাকি রইল না। তাহলে সবাই সন্দেহ করছে যে সে নিজের ইচ্ছায়…এসব কথা মনে আসতেই চোখ বন্ধ করে নিলো মানতাশা। এই দিন আসার আগে তার মৃত্যু হলো না কেন। এরইমধ্যে মঞ্জুয়ারা বেগম কোথা থেকে ছুটে এসে যেন জড়িয়ে ধরলেন নিজের মেয়েকে। সকলের উদ্দ্যেশ্যে বললেন,
“আপনারা যা ভাবছেন সেটা একদম ভুল। আমার মেয়ে কোন খারাপ কাজ করে নি।”

“একবার ভালো করে নিজের মেয়ের দিকে তাকান তারপর কথা বলতে আসিয়েন।”

মঞ্জুয়ারা বেগমও মানতাশার দিকে তাকিয়ে আতকে ওঠেন।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨