সুখ অমৃত পর্ব-১১

0
86

#সুখ_অমৃত
#পর্ব_১১
#লেখিকাঃদিশা_মনি

চোখ খুলেই নিজের চোখের সামনে জাদকে দেখতে পায় মানতাশা। সাথে সাথেই দূরে ছিটকে চলে আসে। জাদ মানতাশার এহেন অবস্থা দেখে বলে,
“আপনার কি কোন সমস্যা হয়েছে?”

জাদের এই প্রশ্নের কোন উত্তর দেয়না মানতাশা৷ জাদ কিছুক্ষণ নীরবে তাকিয়ে থেকে বলে,
“আপনাকে আমার কিছু বলার আছে।”

মানতাশা জাদের দিকে তাকাতেই জাদ বলে,”আমার ভাইয়া জাইন আপনাকে বিয়ে করতে চায়। এটা আমি কিভাবে জানতে পেরেছি জানতে চান? একটু আগেই আমি আব্বু এবং ভাইয়ার কথোপকথন শুনে এলাম। আব্বু ভাইয়ার কাছে আপনাকে বিয়ে করার আর্জি জানিয়েছে।”

মানতাশা জানায়,
“কিন্তু আমি আপনার ভাইকে বিয়ে করতে চাইনা।”

জাদ হালকা হেসে বলে,
“স্বাভাবিক। আমি বাঙালি মেয়েদের ব্যাপারে যতদূর জেনেছি তারা সাধারণত কোন বিপত্মীক লোককে বিয়ে করতে চায়না। সে হিসেবে আপনিও যে চাইবেন না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখানে আপনার চাওয়া-পাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার বাবা আমার ভাইকে ভীষণ ভালোবাসে। তাই অবশ্যই তিনি ভাইয়ের এই ইচ্ছেটা পূর্ণ করবেন।”

“এই বিয়েটা আটকানোর কি কোন উপায় আছে?”

“ভুলেও এমনটা করতে যাবেন না। নাহলে আপনাকে ভাইয়া এই বাড়ি থেকে বের করার ব্যবস্থা করবে।”

“তাহলে আপনি কি চান? আমি আপনার ভাইকে বিয়ে করে নেই?!”

“আমি মোটেই সেটা চাইছি না। আর এইজন্য আপনার জন্য খুব সুন্দর একটা প্রস্তাব আছে আমার কাছে।”

“কি প্রস্তাব বলুন।”

“আপনি চাইলে আমার ভাইকে বিয়ে না করে আমাকে বিয়ে করতে পারেন!”

“কি বলছেন আপনি এসব!”

“দেখুন, এত হাইপার হবেন না। আপনার ব্যাপারে আমি সব জানি৷ আপনি কিরকম পরিস্থিতিতে নিজের মাতৃভূমি ত্যাগ করে এই দেশে এসেছেন সেই ব্যাপারে আমি অবগত। যতদূর শুনেছি আপনার লোভী মায়ের পাল্লায় পড়ে জোর করে আপনার বাবার বন্ধু আপনাকে বিয়ে করতে চাইছিল। কিন্তু আপনি এই বিয়ে মেনে নিতে চান নি। যেই কারণে আপনি পালিয়ে এসেছেন। কিন্তু এখানে এসেও তো আপনাকে একই পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। এই বিয়েটা না করলে আপনার কিন্তু পালানোর মতো আর কোন পথ থাকবে না। আর আমি আপনাকে কথা দিতে পারি যে, আমার কাছে আপনি যথেষ্ট ভালো থাকবেন। কারণ আমি আমার ভাইয়ের মতো নই। আমি এক নারীতেই আসক্ত থাকতে চাই। আর সত্যি বলতে প্রথম দেখাতেই আপনাকে পছন্দ করে ফেলেছি।”

মানতাশা কিছু না বলে পিটপিট করে চেয়ে থাকে। তার কাছে সবটাই কেমন জানি ঘোলাটে লাগছে। তবে এই জাদ নামক লোকটার প্রস্তাব খুব একটা খারাপ না। এই বিয়েটা করলে সে সত্যিই মুক্তি পাবে।

মানতাশা কিছুক্ষণ ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানালো,
“আমি আপনাকে বিয়ে করতে প্রস্তুত জাদ। আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু আপনার পরিবার..”

জাদ হেসে বলে,”আমার মা ইতিমধ্যে অনুমতি দিয়েছে। আর বাবার অনুমতি আমার আপাতত লাগবে না। এই বিয়েটা একবার হয়ে গেলে নিজের সম্মানের জন্য হলেও তিনি আর আপত্তি জানাতে পারবেন না।”

মানতাশার বুক থেকে যেন অনেক বড় বোঝা নেমে গেলো।


“বস, আমি মানতাশার খবর পেয়েছি। মেয়েটা বর্তমানে দুবাইতে অবস্থান করছে।”

রাশেদের মুখে এমন কথা শুনে হেসে উঠলো আবু সুফিয়ান। হেসে বলল,
“মেয়ে, তুমি বড্ড বোকামি করে ফেললে। গেলে তো গেলে সেই দুবাইতেই গেলে। এবার দেখো তোমাকে আবার কিভাবে আমি নিজের কাছে ফিরিয়ে আনি।”

বলেই সে রাশেদকে নির্দেশ দেয়,
“দ্রুত দুবাইয়ে যাওয়ার ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে ফেলো। আমি যাচ্ছি দুবাইতে। যেখান থেকে সবকিছু শুরু হয়েছিল এবার নাহয় সেখানেই সবকিছু শেষ হবে। ও কোথায় আছে খবর পেয়েছ?”

“হ্যাঁ, ওনার ফুফুর কাছে আছে। মোহাম্মদ বিন জাফরের বাড়িতে।”

এই নামটা শুনতেই আবু সুফিয়ানের চোয়াল শক্ত হয়।

“এবার তাহলে সব বোঝাপড়া এক সাথেই হবে। অতীতের অনেক হিসাব যে এখনো মেলানো বাকি।”

বলেই সুফিয়ান আবারো অদ্ভুত ভাবে হাসে।

★★★
জাদ মানতাশাকে নিয়ে তার নিজস্ব বাড়ির দিকে যাচ্ছে। জাদ নিজেও দুবাইতে রিয়্যাল্যান্সের ব্যবসা করে এবং সেখান থেকে অনেক রোজকার করে নিজের বাসা তৈরি করেছে। সে নিজের কিছু বন্ধুকে বলেছে বিয়ের সব আয়োজন করে ফেলতে। তারা সেখানে গিয়ে বিয়েটা সুসম্পন্ন করতে চায়। জাদ মানতাশার অস্থির চেহারার দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুমি কি কোন ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত?”

মানতাশা বলে,
“না। আসলে ফুফু, উমায়রা আপু কাউকে কিছু জানানো হলো না।”

জাদ হালকা হাসে। মানতাশা জানে না তার জন্য এখনো কি চমক অপেক্ষা করছে। জাদ ব্যাপার‍টা ঘোরানোর জন্য বলে,
“আচ্ছা, আমি যতদূর দেখলাম তোমার উপর কেউ হামলা চালানোর চেষ্টা করছিল। তারা কারা সেই ব্যাপারে তোমার কোন আন্দাজ আছে?”

“না, নেই।”

যদিও মানতাশা জানে এর পেছনে হাফসা বেগমের হাত থাকতে পারে তবুও সে কিছু বলল না। সে ভাবলো জাদ কি না কি ভাববে। কিন্তু মানতাশাকে অবাক করে দিয়ে নিজেই বলল,
“কিন্তু আমি শত ভাগ নিশ্চিত এর পেছনে হাফসা ভাবির হাত আছে। উনি ছাড়া এই কাজ কেউ করতে পারেন না।”

মানতাশা অবাক হয়ে জাদের দিকে তাকাতেই জাদ বলে,
“এত অবাক হবার দরকার নেই। নিজের পরিবারকে আমি খুব ভালো করেই চিনি। তোমাকে এই নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।”

★★★
জাদের বাসায় পৌঁছে যেতেই চরম পর্যায়ের অবাক হয়ে যায় মানতাশা। কেননা, সেখানে সালমা বেগম, উমায়রা এবং তার ফুফু হুসনেয়ারা সবাই উপস্থিত ছিল। সবাইকে দেখে মানতাশা আপ্লুত হয়ে যায়।

উমায়রা মানতাশার কাছে এসে বলে,
“জাদ আমাদের সব কিছু বলেছে। তুই একদম চিন্তা করিস না। একবার এই বিয়ে টা হয়ে গেলে দেখবি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”

উমায়রার কথায় মানতাশা কিছুটা স্বস্তি পেল। সালমা বেগমও এগিয়ে এসে বললেন,
“তোমায় প্রথম দেখাতেই আমি বুঝে গেছিলাম তুমি মেয়েটা অনেক ভালো৷ তাই যখন আমার ছেলে তোমাকে বিয়ে করার আর্জি জানালো তখন আর আপত্তি করতে পারিনি। তোমাকে ছেলের বউ হিসেবে পাওয়া তো আমার জন্য অনেক বেশি সৌভাগ্যের হবে।”

হুসনেয়ারা বেগমও এসে মানতাশাকে বলেন,
“তোকে নিয়ে আমি আগে অনেক বেশি দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলাম। তবে এখন আমার সব দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেছে। আমি আশা করছি তোর সামনের জীবন সুখে-সমৃদ্ধে ভরপুর হবে৷ জাদকে আমি চিনি৷ ও একটু গম্ভীর হলেও মানুষ হিসেবে অনেক ভালো। দেখবি ওকে বিয়ে করলে তুই অনেক সুখী হবি।”

এত কিছু কথা শেষ হবার পর, মানতাশা এগিয়ে গেল জাদের দিকে। বিয়ের সব আয়োজন প্রায় শেষ। বিয়েটা বেশ সাদামাটা ভাবেই হবে। আপাতত জাদ এত বেশি আনষ্ঠানিকতা চাইছে না।

জাদ ও মানতাশাকে মুখোমুখি বসানো হলো। কাজি সাহেবও উপস্থিত সেখানে।

কিছু ক্ষণের মাঝেই তাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো

★★★
মানতাশাকে নিয়ে মোহাম্মদ বিন জাফরের সামনে উপস্থিত উপস্থিত হলো জাদ। মানতাশাকে জাদের পাশে দেখেই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন তিনি। কিছু সময় পর হাফসা ও জাইনও সেখানে উপস্থিত হলো। সবাই আসার পর জাদ বললো,
“আপনাদের সবাইকে খুব জরুরি কথা জানানোর আছে। আমি মানতাশাকে বিয়ে করেছি।”

এই কথায় যেন সেখানে বর্জ্যপাত হয়৷ সবাই বিস্ফোরিত নয়নে তাকায়। মোহাম্মদ বিন জাফর বলেন,
“আমাকে না জানিয়ে তুমি কিভাবে এমন করলে?”

জাইনও বলে,
“এই বিয়ের কোন মানে হয়না।”

হাফসা অবশ্য পরিস্থিতি বোঝার জন্য চুপ থাকে। তাকেও তো বুঝতে হবে এখানে যা হলো সেটা তার পক্ষে নাকি বিপক্ষে।

চলবে….