সুগন্ধি ফুল পর্ব-০৩

0
2

#সুগন্ধি_ফুল
#পর্ব_৩
#জান্নাত_সুলতানা

-“আমি আপনার সাথে বেড শেয়ার করতে প্রস্তুত নই।”

ফিজা মুখ অন্য দিকে করে বলে। আবরাজ ফিজার কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে মেয়ে টার সারা শরীরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নজর বুলিয়ে বলে উঠলো,

-“তোমার রাতের পোশাক কোথায় সুগন্ধি ফুল?”

ফিজা যেন অবাকের অষ্টম পর্যায়ে পৌঁছাল। সে রাতে রাতের পোশাক পড়ে ঘুমায়। এটা কিভাবে জানলো আবরাজ? সে তো আজই তার সাথে প্রথমবারের ন্যায় রাতে দেখা। ফিজা অহেতুক এই ভাবনায় নিজেই নিজের উপর বিরক্ত হলো। হয়তো আলমারিতে রাখা তার রাতের পোশাক দেখেছে আবরাজ। তাই তেমন গুরুত্ব দিলো না বিষয় টা। বিরক্তিকর উদ্রেক হয়ে বলে,

-“দূরে থাকুন আমার কাছ থেকে আবরাজ।”

ফিজা ছটফট করে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে। পুরুষ টার হাতে মেয়ে টার হাত বন্দী।

-“তুমি কি পরনারী না-কি? তুমি আমার বিয়ে করা বউ।”

আবরাজ ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলে উঠলো। পুরুষ টার হাত টা ফিজার উন্মুক্ত ঘাড়ে বিচরণ করে। মেয়ে টা হাত সরিয়ে দেয় পুরুষ টার। এতোদিন মনে ছিলো না তার বউ আছে? বিয়ের দিন ছেড়ে যে গেলো একবার খোঁজ ও নিলো না। আর এখন এসে বলছে বিয়ে করা বউ! ফিজার হাসি পেলো। মোটেও আনন্দের হাসি নয় এটা। হাসি টা সামনে থাকা পুরুষ টার কথা টাকে তাচ্ছিল্য করে হাসি। ফিজা চরা মেজাজে বললো,

-“দূরে থেকে কথা বলুন।”

-“যাব না।”

ফিজা মনে মনে সামনে থাকা পুরুষ টাকে বেহায়া এবং অসভ্য পুরুষ বলে আখ্যায়িত করলো।

-“ভয় লাগছে আপনাকে আমার।”

-“এখনো তো কিছু করলামই না।”

ফিজা রেগে পুরুষ টার বুকে ধাক্কা লাগলো। আবরাজ বিছানায় নিজ ইচ্ছায় চিত হয়ে শুয়ে গেলো। ফিজা তড়িঘড়ি করে উঠে বসতে পুরুষ টা আবার টেনে নিলো মেয়ে টাকে। জোর করে টেনে নিজের বাহুতে ভরে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে। ফিজার ভেতরে ভেতরে যেমন ঝড় বইছে তেমন মাথায় রয়েছে পুরুষ টা মোটেও সুবিধার নয়। তাকে বিয়ের দিনই ছেড়ে গিয়েছে। এবং কেনো গিয়েছিল এটা সে আজও জানে না। সে জানতে আগ্রহী। কিন্তু তারজন্য সে নিজে কে এই পুরুষ টার সামনে দুর্বল প্রমাণ করবে না।

-“আপনি জোর করবেন আমায়?”

ফিজা সোজাসাপটা প্রশ্ন করে। আবরাজ এর মুখখানা তৎক্ষনাৎ উজ্জ্বল হলো। ঝটপট জানালো,

-“প্রশ্ন-ই আসে না।”

-“ছাড়ুন। সকালে আমাকে অফিস যেতে হবে।”

আবরাজ কিছু ভেবে সরে গেলো। মেয়ে টা কাত হয়ে মুখ অন্য দিকে করে নিলো। মেয়ে টা এতোক্ষণে বুঝে গিয়েছে আবরাজ নামক এই পুরুষ টা এখানেই ঘুমবে। এবং এতে তার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তারমানে এই না সে পুরুষ টার সঙ্গ দিবে। আবরাজ বিছানা ছাড়লো।
ফোন নিয়ে সোজা ব্যালকনিতে গেলো। অন্ধকারে ফোনে জ্বলজ্বল করে ইংরেজিতে বড়ো বড়ো অক্ষরে লিখা তৃণা। আবরাজ কল রিসিভ করে কানে তুলতে ওপাশ থেকে মিষ্টি স্বরে রমণী বলে উঠলো,

-“রাজ আমার একা ভয় লাগছে রুমে।”

আবরাজ বুঝে মেয়ে টার কণ্ঠস্বর ন্যাকামি। মনে মনে বিরক্ত সে। তবুও শান্তস্বরে জানালো,

-“ওয়েট কিছু একটা ব্যবস্থা করছি আমি।”

আবরাজ দ্রুত কল কাটে। এরপর রুম থেকে বেরিয়ে এলো। আবরাজ রুম থেকে বেরুতে ই ফিজা তাচ্ছিল্য হাসে। তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো,

-“আপনার ঘরের নারী নয় পরনারী ভালো লাগে এটা চরম সত্য।”

——

বেশ আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করে বসে আছে তৃণা। আবরাজ নিশ্চয়ই তার রুমে থাকতে আসছে। বিদেশে একই বিল্ডিং এবং একই ফ্ল্যাটে থেকে যে কাজ হয় নি সেই কাজ আজ বাংলাদেশেরে মাটিতে খান বাড়িতে হচ্ছে। ভেবে আনন্দে আত্মহারা তৃণা।
একটা শর্ট নাইটি পড়ে সে বিছানায় পা ছড়িয়ে বসে রইলো। ঠান্ডা বেশ চারদিকে। কাজের লোক সহ আবরাজ রুমে এসে তৃণার অবস্থা দেখে আবরাজ এর কোনো ভাবান্তর না হলেও সাথে আসা সার্ভেন্ট ঠিকই মনে মনে মেয়ে টাকে জ্বীন উপাধি দিলো।
তৃণা হঠাৎ মহিলা সার্ভেন্ট টাকে দেখে একটু অপ্রস্তুত হলো। নাইটির ওপরের ফিতা টা বেঁধে চুল গুলো সামনে দিয়ে নিয়ে এলো। এরপর আবরাজ এর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে ই আবরাজ অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখে জিজ্ঞেস করলো,

-“তুমি বেড শেয়ার করবে?”

তৃণা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাথা নেড়ে বলে উঠলো,

-“অনেক বড় রুম। আর নির্জন ও তোমাদের বাড়ি টা।”

আবরাজ এবার একপলক তৃণার দিকে তাকিয়ে এরপর সার্ভেন্ট মহিলা টার দিকে তাকিয়ে বললো,

-“আন্টি আপনি আজ তৃণার সাথে থাকুন।”

তৃণার যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। চোখ জোড়া অটোমেটিক বড়ো বড়ো আকৃতি ধারণ করলো। আবরাজ মেয়ে টার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে এরপর রুম হতে বেরিয়ে গেলো।
এদিকে তৃণা রাগে দুঃখে নিজের চুল নিজেরই টেনে ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। কি ভেবে ছিলো আর কি হলো! সে তো ভয় পাচ্ছিলো না। কিন্তু আবরাজ কে পাওয়ার জন্য যে মিথ্যা বলে এভাবে ফেঁসে যেতে হবে কস্মিনকালেও সেটা মাথায় আসে নি। আচ্ছা ফেঁসে গেলো সে না-কি আবরাজ ইচ্ছে করে এমন টা করে গেলো?
তৃণা সারারাত একফোঁটা ঘুমতে পারলো না। মহিলার নাক ডাকবার শব্দে বেচারি শেষ রাতে কম্ফর্টার নিয়ে নিচে ঘুমিয়েছে।

——–

আবরাজ কক্ষে প্রবেশ করে আগে দৃষ্টি আটকালো বউয়ের গেঞ্জি সরে উন্মুক্ত হওয়া মসৃন পেটে। মেয়ে টা কামিজ চেঞ্জ করে প্লাজু আর গেঞ্জি পড়ে শুয়েছে। আবরাজ এর নিকট ডিম লাইটের আবছা আলোয়ে বউয়ের শরীরে এর উন্মুক্ত স্থান বেশ চমৎকার দেখতে লাগলো। আবরাজ দরজা বন্ধ করে ধীরে পায়ে এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসলো। তারপর কাত হয়ে শুয়ে গালে হাত ঠেকিয়ে মেয়ে টার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
চিকন ভ্রু। অধর জোড়া ও চিকন। চোখের সাইজ ঘুমিয়ে আছে বিধায় ঠিক অনুধাবন করতে পারে না। তবে চোখের পাপড়ি গুলো বেশ লম্বা। ছোটখাটো সরু নাক। চুল গুলো একদম সিল্কি। কিছু ছোট ছোট চুল কপাল স্পর্শ করেছে। মেয়ে টা দেখতে কি কিছু টা বিদেশিদের মতো? হ্যাঁ। আবরাজ মেয়ে টার ছোটা থুঁতনিতে ঠোঁট ছোঁয়াল আলগোছে। এরপর বিছানায় শুয়ে নিজেও কম্ফর্টার এর মধ্যে ঢুকে গেলো। ফিজা ও ঘুমের ঘোরে জড়িয়ে ধরতে আবরাজ সুযোগ হাত ছাড়া করলো না। একদম ঘনিষ্ঠ করে ধরে রইলো নিজের সাথে।
ঘাড়ে মুখ গুঁজে লম্বা নিঃশ্বাস টানলো, বিড়বিড় করে আওড়াল,

-“সুগন্ধি ফুল।”

——

-“তোমার শরীর থেকে ফুলের সুভাষ আসে সুগন্ধি ফুল।”

সকাল সকাল এমন কথা শুনে ফিজার কাজের হাত থেমে গেলো। পাশ ফিরে আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখলো আবরাজ ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে। আর বিছানায় বসে এই কথাখানি সেই বলেছে।
ফিজা ব্যাপার টা অগ্রাহ্য করলো। সকালে ঘুম ভেঙ্গে সে আবরাজ কে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় পেয়েছে। যার জন্য সে এখন অস্বস্তিতে ভুগছে। বুঝতে পারছে না রাতে সেই জড়িয়ে ধরে ছিলো পুরুষ টাকে না-কি আবরাজ নিজে তাকে জড়িয়ে ধরে ছিলো? যেহেতু ঘুম ভেঙ্গে তার নজরে পড়েছিলো তার ধরা দৃশ্য, তাই সে দোষ টা নিজের উপর নিলো।
কিন্তু পরক্ষণেই পুরুষ টার কথায় ধারণা বদলে গেলো।

-“তুমি কি তুলা খাও!
শরীর ও তো তুলার মতো এতো সফট।”

ফিজা চমকালো। থমথম খেলো। তৎক্ষনাৎ হাতের কাজ ফেলে রণচণ্ডী রূপ ধারণ করলো। ত্বরিত পুরুষ টার সামনে এসে দাঁড়াল।
রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটালো মেয়ে টা। দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বলে উঠলো,

-“বেহায়াপনার সীমা থাকা জরুরি। যেটা আপনি পাড় করে যাচ্ছেন।”

আবরাজ বিছানায় ছাড়ে। মেয়ে টার একদম সম্মুখে দাঁড়াল। ফিজা একটু নড়লো না। মেয়ে টার সাহস আছে। আবরাজ এর ভালো লাগলো রমণীর রণচণ্ডী রূপ। রাগের ফলে মেয়ে টার গাল লাল হয়েছে কি? হ্যাঁ। কি দারুণ দেখতে লাগছে। আবরাজ মুচকি হাসলো। পরপরই মুখখানা বেশ সিরিয়াস করে নিলো। গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,

-“রাতে বউ কে জড়িয়ে ধরে ঘুমালে জামাই জামাই ফিল আসে। নয়তো মনে হয় পাশে অন্য বেডি নিয়ে শুয়ে আছি।”

পাশের একটা টেবিলে নেইল কাটার পড়ে আছে। ফিজা ঝড়ের বেগে সেটা হাতে তুলে নিলো। চিকন ছুড়ি টা বেড় করে আবরাজ এর কবজিতে গেঁথে দিলো। আবরাজ অবাক তো হয়েছে। সে তখনও তাকিয়ে ছিলো অপলক সামনে দাঁড়ানো রমণীর চোখের দিকে। ব্যাথায় চিনচিন করতে থাকা হাতের দিকে তাকালো খানিকক্ষণ বাদে। ধবধবে ফরসা চামড়া বেদ করে রক্তে চুইয়ে চুইয়ে বেশ অনেক টা স্থান লাল হয়েছে। আবরাজ মেয়ে টার ঠিক চোখের দিকে তাকল। ফিজার অধর কাঁপছে। অথচ মেয়ে টার চোখে একটু ভয়ের লেশমাত্র নেই। মায়াবী মুখশ্রী বড্ড কঠিন দেখাচ্ছে। আবরাজ তাকিয়ে থাকা অবস্থায় ফিজা দৃষ্টি স্থির রেখে বলে উঠলো,

-“এটা ট্রেলার। পরবর্তীতে এ-সব করার আগে দ্বিতীয় বার ভাববেন অসভ্য পুরুষ আবরাজ খান।”

#চলবে…..[ বাকী পর্ব ক্রমাগত আপলোড করা হবে]

[আমি আবারও বলে দিচ্ছি ফিজা দুর্বল নয় কিন্তু। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]