সুগন্ধি ফুল পর্ব-০৮

0
975

#সুগন্ধি_ফুল
#পর্ব_৮
#জান্নাত_সুলতানা

দীর্ঘ দিন আবরাজ বিদেশে ছিলো। সাধারণ মানুষের নিকট তার লাইফস্টাইলে অস্বাভাবিক। প্রায় বিদেশিদের মতো চলাফেরা পুরুষ টার। পোশাকআশাক থেকে শুরু করে কথাবার্তা খাবার-দাবার এভরিথিং। ফিজা এ-সব আগে থেকে জানতো। যেহেতু তার মা এক সময় ওই অফিসে জব করতো তখন শুনেছিলো মিলন খান এর বড়ো ছেলে বিদেশ পড়াশোনা করে। তারপর যখন বিয়ে হলো পরে সে নিজেও অফিস জয়েন করলো এরপর অফিসের অধিকাংশ মেয়ে স্টাফদের মুখে মুখে আবরাজ নাম টা খেলা করতো।
দেখতে সুদর্শন হওয়ায় তার একবার সাক্ষাৎ প্রায় রমণীদের মনে গেঁথে যায়।
ফিজা জানে আবরাজ এর চরিত্র কেমন। মূলত বিয়ের আগে না জানলেও পরবর্তীতে ঠিকই বুঝে ছিলো। এমন বড়োলোক হওয়া সত্ত্বেও কেনো তাকে মিলন খান পছন্দ করে নিজের পুত্রবধূ করেছিলো! কারণ তো ছিলো। সেটা ফিজার মা বুঝতে পারে নি। তিনি ভেবেছিলো মেয়ে রূপবতী তারপর পড়াশোনা করছে ফ্যামিলি স্ট্যাটাস ভালো সেইজন্য মেয়ের জন্য ভালো ঘর থেকে প্রস্তাব এসছে। তাছাড়া তাকেও তো চিনেন দীর্ঘ দিন ধরে মিলন খান। সেইজন্য হয়তো। যদিও কারণ গুলো সব সত্যি। তবে তারমধ্যে অন্যতম কারণ এটা যে ফিজা দেখতে সুন্দর। শুধু গায়ের রং নয়। মেয়ে টার চেহারা ও মারাত্মক। ফিজার মা ও মেয়ে কে দ্রুত বিয়ে দিতে চাইছিলেন। মেয়ে সুন্দরী হওয়ার দরুণ ভালোই লোকচক্ষে পড়তো। যেমন ভালো মানুষ স্ব-সম্মানে বিয়ের জন্য প্রস্তাব নিয়ে আসতো তেমন একদল খারাপ লোক ও কুনজর দিতো।

ফিজা জানে তার মায়ের তাকে তড়িঘড়ি করে বিয়ে দেওয়ার মধ্যে এটাও একটা বড়সড় রিজন।
মনে কিছু টা সবার প্রতি অভিমান রয়েছে। যে যেভাবে পারছে তাকে ব্যবহার করছে। মা নিজের মেয়ের ভালোর জন্য। শ্বশুর নিজের ছেলের ভালোর জন্য। এখানে তার সৌন্দর্য টা কেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ফিজা চোখ মেলে তাকায়। পাশে শুয়ে আবরাজ। চক্ষুদ্বয় স্থির করে রাখে পুরুষ টার মুখপানে। কত নিষ্পাপ দেখাচ্ছে পুরুষ টাকে। অথচ এই মানুষ টা জঘন্য।
ফিজার চোখে ঘুম নেই। রাত প্রায় শেষ। না চাইতেও আবরাজ এর লাগেজ প্যাকিং করতে সাহায্য করতে হয়েছে। যদিও লাগেজ টা ওর নিজেরই। তবুও যেহেতু আবরাজ এর সাথে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে সেক্ষেত্রে মন ঠিক লাগছে না কাজে।
তারউপর এমন অসভ্য পুরুষ যদি হয় অধিকার প্রাপ্ত স্বামী সারাক্ষণ দোহাই দিয়ে মা বোন সামনে রেখে ব্ল্যাকমেইল করে তাহলে উপায় তো কিছুই থাকে না আর। ফিজা বিরক্তিকর স্বরে অস্ফুটে বলে উঠলো,

-“অসভ্য পুরুষ।”

আবরাজ আচমকাই চোখ খুলে তাকালো। ফিজা স্পষ্ট দেখলো। থতমত খেলো মেয়ে টা। আবরাজ তার দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আমাদের বাসর হয় নি এখনো।”

-“তো?”

-“তুমি আমাকে ক্যারেকটারলেস উপাধি কিভাবে দিতে পারো?”

-“আপনি তো এমনই। তাই এটা দেওয়ার কিছু নেই।”

-“নড়বে না।”

আবরাজ ফিজা কে জড়িয়ে ধরে বলে। ফিজা হাত দিয়ে আবরাজ এর বুকে ধাক্কা দেয়। বললো,

-“ছাড়ুন।”

-“সন্ধ্যায় কিস টা ঠিকঠাক হয় নি। ক্যান আই ট্রাই এগেইন?”

আবরাজ বাঁকা হেঁসে বলে। ফিজা চমকালো। আর সাথে সাথে বলে উঠলো,

-“নো, নেভার।”

-“ইয়েস।”

-“দূরে যান।”

আবরাজ কি শোনার পাত্র? উঁহু। ফিজা একটু নড়ে না। শুধু চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে আবার বলে,

-“আপনার এখানে আসার মূল্য উদ্দেশ্য কি আমায় নিজের বেড পাটনার বানানো?”

-“এমন হলে এতোদিনে তুমি আমার ঘরে থেকেও এখনো কুমারী থাকতে না।”

কথা সত্যি। ফেলে দেওয়ার মতো নয়। কথা বাড়িয়ে ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না ফিজার। নয়তো আরো কয়েকটা কথা হয়তো আবরাজ কে শুনিয়ে দিতো। তবে এখন মেয়ে টা অন্য কিছু ভাবে। আসলেই তার এই সুযোগ হাত ছাড়া করা উচিৎ নয়। যাওয়া উচিৎ আবরাজ এর সাথে। অন্তত পক্ষে পুরুষ টার সম্পর্কে আরো ভালো করে ইনফরমেশন তো সে করতে পারবে। সেক্ষেত্রে তার এই সুযোগ টা হাত ছাড়া করা ঠিক হবে না। তাই আবরাজ এর সাথে জার্মানি যাবে বলে মনস্থির করলো।

বিয়ে তো বাঙালি মেয়েদের একবারই হয়। এটা ফিজার দাদী আগে সব সময় বলতো৷ ফিজার দাদা ফিজার বাবা-র জন্মের কয়েক বছর পর-ই মারা গিয়েছিলো। ফিজার দাদী ছিলো জমিদার বংশের। অর্থসম্পদ ছিলো প্রচুর। তিনি দেখতে ও ছিলেন রূপবতী। স্বামী মারা যাওয়ার পর বিয়ের জন্য পরিবার যেমন চাপ দিতো তেমন অনেকে প্রস্তাব নিয়ে আসতো। কিন্তু তিনি আর বিয়ে করে নি।
নিজের বাবা-র বাড়িতে থেকেই ছেলে কে মানুষ করেছিলেন। যদিও এতে উনাকে ওই পরিবারে সকল কাজ করতো হতো৷ তবে এতে উনার কোনো আক্ষেপ ছিলো না। কারণ ছেলে লেখাপড়া করতে পারছে নিজেরা থাকার যায়গা পাচ্ছে। আবার দুই বেলা ভালোমন্দ খেতে পেতো। এই তো আর কি। কিন্তু বান্দা তবুও বিয়ে করে নি।
এ-সব তো ফিজা শুনে বড়ো হয়েছে। নিজের মা তো কম বয়সে বিধবা হয়েছে। কই তিনি ও তো আর বিয়ে করে নি। যদিও দাদী, মায়ের এবং তার ব্যাপার টা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবুও ফিজা চাচ্ছে না ডিভোর্স তকমা টা নিজের চরিত্রে লাগাতে। এখানে আবরাজ যদি নিজে কে সত্যি শুধরে নেয় তাহলে সে সম্পর্ক টাকে আবার সুযোগ দিবে। অতীতে কি হয়েছে এসব না-হয় সে নাই ঘাঁটল। ভবিষ্যতে তো সুন্দর করাই যায়।

——-

সকাল সকাল ফিজা চমৎকার একখানা স্বপ্ন দেখলো। সে আর আবরাজ একটা বাচ্চা নিয়ে পুরো বাড়ি দৌড়াদৌড়ি করছে৷ এবং বাচ্চা টা দেখতে আবরাজ এর মতো। এমন স্বপ্ন দেখে মেয়ে টা হতবিহ্বল। আশ্চর্যের অষ্টম পর্যায়ে মেয়ে টা। কি দেখলো এসব সে নিজেও যেন ভেবে অবাক। শোয়া থেকে উঠে আরো চমকালো। বিস্ময় নিয়ে আবরাজ এর দিকে তাকিয়ে রইলো।
আবরাজ একটা লাগেজ নিয়ে বসেছে। যারমধ্যে অনেকগুলো ড্রেস দেখা যাচ্ছে। লাগেজ নিয়ে বসেছে সমস্যা সেটা নয়, সমস্যা হচ্ছে লাগেজ এর ভেতর সবগুলো ড্রেস মেয়েদের। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সব গুলো এক্সক্লুসিভ।
ফিজা আনমনেই জিজ্ঞেস করলো,

-“এগুলো?”

-“তোমার।”

আবরাজ লাগেজ এর ভেতর কিছু খুঁজতে খুঁজতে শান্ত স্বরে জবাব দেয়। ফিজা অপ্রস্তুত হয়। আবরাজ কি মজা করছে? তার হলো এতোদিন বলে নি কেনো? লাগেজ টা তো আবরাজ আসার সময় নিয়ে এসেছিলো। ফিজা তো ভেবেছে হয়তো আবরাজ এর এটা। সেইজন্য আগ্রহ আসে নি দেখার। যদিও আবরাজ এর আনা কোনো কিছু ই ফিজা ব্যবহার করছে না। শুধু ল্যাপটপ টা মিলন খান এর হাত দিয়ে দিয়েছে বিধায় সেটা ব্যবহার করে।

-“আসার সময় নিয়ে ছিলাম। বাট ফিরে এসে তোমার সাথে কথা বলার পর মনে হয়েছিল এগুলো এখন তোমাকে দেওয়া মানে আগুনে ঘি দেওয়া।”

পরপরই আবরাজ বলে। ফিজা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আবরাজ নিচ থেকে উঠে দাঁড়াল। হাতে একটা ওভার কোট। একটা গেঞ্জি আর জিন্স প্যান্ট ও রয়েছে।
একদম কাছে এসে ফিজার কোলে রাখলো সেগুলো। ফিজা তখন ও তাকিয়ে। আবরাজ এর ভালোই লাগে মেয়ে টা এভাবে তাকালে। মন চায় ঠুসঠাস গালে কয়েকটা চুমু খেতে।
ইশ ইচ্ছে হয়েছে আর আবরাজ বুঝি নিজের ইচ্ছে পূরণ করবে না? এমন টা কি হতে পারে? মোটেও না। আবরাজ আচমকাই ঝুঁকে গেলো। দূরত্ব কমলো। অধর স্পর্শ করতে ফিজার শকট ছুটে গেলো শরীর জুড়ে। সর্বদাই আবরাজ স্পর্শ করলে ফিজা ছটফট করে। নিজে কে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য ছুটাছুটি করে। কখনো তেমন ভাবে পুরুষ টার স্পর্শ অনুভব এর মনোভাব আসে নি। কিন্তু এটার অনুভূতি ফিজা আজ যেন কিছু টা অনুভব করছে। নিজের অজান্তেই একটা হাত আবরাজ এর পিঠে চলে গিয়েছে। আবরাজ কি আস্কারা পেল? মন কি পুলকিত হলো। মস্তিষ্ক আরো কিছু চাইলো। কিন্তু আবরাজ নিজে কে কন্ট্রোল করলো। শুধু বউয়ের অধরসুধা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রইলো। ফিজা চোখ বন্ধ করে আছে। আবরাজ হুঁশে থাকা অবস্থায় এই প্রথম ফিজা কে নিজ থেকে চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে রাখতে দেখলো। মুগ্ধ হয়ে আবরাজ বউয়ের বন্ধ চোখের পাতার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-“আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেলফ। বাট ডোন্ট ওয়ারি আমি তোমাকে আর হার্ট করবো না।”

#চলবে…