সুগন্ধি ফুল পর্ব-১৩

0
1630

#সুগন্ধি_ফুল
#পর্ব_১৩
#জান্নাত_সুলতানা

কাল রাতের পর আর আবরাজ এর দেখা পায় নি ফিজা। সকাল গড়িয়ে দুপুর এখন রাত। মাঝে অবশ্য একবার কল করেছিলো। কিন্তু ফিজা রিসিভ করে নি।
নতুন একটা ফোন দিয়েছে তাকে আবরাজ। এটা কাল রাতেই খাবার খাওয়ার পর। ফোন টা দেখতে চমৎকার আর দামী ও বটে। ফিজা ফোন টা হাতে নিয়ে উলটে পালটে দেখে। এতো দামী ফোন তার চাই না। এ-সব বিলাসিতা দিয়ে কি হবে যদি না স্বামীর সংসার ই না হয়! স্বামীর ভালোবাসা না পায়? একজন মাফিয়ার মনে আদৌও কতটুকু ভালোবাসা থাকতে পার এটা নিয়ে ঢের সন্দেহ। এতো টাকাপয়সা এক্সক্লুসিভ ড্রেস, গাড়ি, বাড়ি এসব তার চাই না। ফিজা ফোন টা দিয়ে তবুও দুই একটা ছবি তুললো। ক্যামেরা দারুণ। ছবি বেশ ভালো এসছে। যদিও আবরাজ এর সুগন্ধি ফুল এমনিতেও চমৎকার সুদর্শনা রমণী। ফিজা মুখ বাঁকায়। এটা তার মুখের কথা নয়। এটা স্বয়ং আবরাজ খান ই বলে।
ফিজা ঘাড় বাঁকিয়ে সদর দরজার দিকে তাকায়। আবরাজ বাড়ির ভেতর প্রবেশ করেছে।

-“ঠোঁট বাঁকিয়েও না সুগন্ধি ফুল।”

ফিজা আশেপাশে তাকালো। দুই জন সার্ভেন্ট। একজন এর হাতে একটা ট্রে। যারমধ্যে দুইরকম কপির মগ রয়েছে। এবং আরেকজন আবরাজ এর গায়ের ব্লেজার টা খুলে নিলো। কিন্তু মহিলা খুব সাবধানে করছেন। আবরাজ এর গায়ে এক রত্তির ছোঁয়া লাগে না মহিলার। আবরাজ কপির মগ একটা হাতে নিলো। এরপর ইশারা করতে মহিলা দু’টো চলে গেলো। ফিজার নিকট আবরাজ এর ব্লেজার খুলে দেওয়ার দৃশ্য টা ভালো লাগলো না। এটা কেমন বিশ্রী ব্যাপার। মাফিয়া বলে কি নিজের গায়ের পোশাক ও অন্য কাউ কে দিয়ে পালটাতে হবে? অবশ্য এতো টাকাওয়ালা হলে হাত তো নিশপিশ করবেই। সাথে মানুষজন কে দেখাতে হবে না টাকা যে আছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যেন আবরাজ অনুমান করে সেই ব্যাপারখানা। তবে তেমন গুরুত্ব দিলো না। ফিজা শান্ত আর গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

-“ঠোঁট আমার। এটা কি করবো না করবো সেটাও আমার ব্যাক্তিগত বিষয়।”

-“তা তো বটেই। তবে পরে যদি এরজন্য উলটো পালটা কিছু ঘটে, তাহলে আমাকেও কিছু বলতে পারবে না। কারণ আমি টা আমার এন্ড বউ টাও আমার। সো আমার যা ইচ্ছে তাই করবো।”

ফিজা বিরক্ত। সারাক্ষণ বউ আর বউ। অথচ এতো বছর কোনো খবর ছিলো না। এখন এসে শুরু হয়েছে আহ্লাদ। বিরক্তিকর স্বরে বলে উঠলো,

-“আপনি সুদর্শন। এটা তো মানতেই হবে। কিন্তু তারমানে এই না আপনি আমাকে সিডিউস করে আমার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করলে আমি অতীত ভুলে যাব।”

বাহ। চতুর মেয়েমানুষ। এমন তো হবে আবরাজ খান এর বউ। যাকে কিছু বলার আগে ইশারা করলে সব বুঝে যাবে। আবরাজ নিজেও চায় না ফিজা তাকে এতো দ্রুত মেনে নিক। সে চায় বউ একটু একটু করে তাকে মেনে নিক। আবরাজ লাফানোর মতো করে দ্রুত কদমে এগিয়ে গেলো। ধপাস করে ফিজার পাশে বসে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,

-“এই সুগন্ধি ফুল চলো না আমরা বাসর টা সেরে ফেলি। আ’ম হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর আমার তোমাকে কিছু শিখিয়ে দিতে হবে ন,,,”

-“স্যার,, সরি সরি স্যার।”

আবরাজ সম্পূর্ণ কথা শেষ করার আগেই সাব্বির এর কণ্ঠস্বর শোনা যায়। তবে পরক্ষণে সেটাও অপ্রস্তুত হয়ে এলো। ফিজা নড়ে না। আবরাজ বউ কে জড়িয়ে ধরে রাখে সেভাবে। এমন পরিস্থিতিতে দু’জন দু’দিকে গিয়ে অকোয়ার্ড ফিল করার চেয়ে এভাবে থাকাটাই বেটার। যদিও সাব্বির যে দৃষ্টি তুলে সামনে তাকাবে না এটা আবরাজ জানলেও ফিজা তো আর জানে না। অগত্যা সেভাবেই বসে রইলো। আবরাজ এরমধ্যেই চোখ রাঙিয়ে সাব্বির কে উদ্দেশ্য করে বলে,

-“তুমি সর্বদা আমার রোমাঞ্চ এর সময় বাগড়া দিতে আসো। এটার রিভেঞ্জ হবে তোমার বাসর রাতের ভিডিও তুমি নিজে করবে।”

ফিজা চমকালো। এই নির্লজ্জ পুরুষ কি বলে এসব? বাসর রাতের ভিডিও! তাও আবার যার টা সে করবে? ফিজার ভাবনার মাঝেই সাব্বির দৃষ্টি নত রেখে চিন্তিত স্বরে প্রশ্ন করলো,

-“কিন্তু স্যার ভিডিও করলে বাসর কখন করবো?”

-“গাধা।”

আবরাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলে। ফিজার হাসে পায়। আচমকাই মেয়ে টা দু’জন এর কথোপকথন শুনে শব্দ করে হেঁসে উঠলো। আবরাজ এর দুনিয়ায় বুঝে থমকে গেলো? মেয়ে টা এতোদিনে তার সামনে একবার ও হেঁসেছে কি? কণ্ঠস্বর যেমন মিষ্টি ধারালো তেমন হাসির রিনঝিন শব্দ। আবরাজ এর বুকের ভেতর তোলপাড় হয়। রমণীর প্রেমে সে নতুন করে পড়ছে। সংসার করতে হলে ভালোবাসা থাকতে হবে আবরাজ এমন টা জরুরি মনে করে না। কিন্তু এই মূহুর্তে মনে হচ্ছে না। ভালোবাসা থাকতে হবে। শুধু মনের বিরুদ্ধে গিয়ে সংসার টা জরুরি নয়। ভালোবাসা টা জরুরি। ভালোবাসা না থাকলে এমন হাসির দেখা সে পাবে আদৌও? উঁহু কখনো না। আবরাজ ফিজা কে নিজে থেকে ছেড়ে দিলো। ফিজা হাসি থামিয়ে দ্রুত লিভিং ছাড়ে। ফিজা যেতে আবরাজ সাব্বির এর দিকে তাকায়। জিজ্ঞেস করে,

-“এনি থিং রং?”

-“স্যার তৃণা ম্যাম কাল সকালে চলে আসবেন এখানে। আজ সকালে তিনি জার্মানির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেছেন।”

-“ওকে। আসতে দাও।”

আবরাজ ভাবনা চিন্তা ছাড়া বলে দেয়। সাব্বির জানে না তার স্যার সব ইম্পর্ট্যান্ট ব্যাপার গুলোতে কিভাবে এতো শান্ত থাকে। তৃণা আসবে শুনে তো বেচারার নিজেরই কলিজার পানি শুঁকিয়ে গেছে। যা ছেমরি তৃণা। আবার কি করে বসে কে বলতে পারে! আগেও তো কম করে নি।

-“একটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য। তুমি আমাকে একটা নতুন অনুভূতির সাথে পরিচয় করালে৷ সেইজন্য একটা গিফট তোমার প্রাপ্য।”

-“গিফট্!”

সাব্বির অবাক হয়ে দুই ভ্রুর মাঝে ভাঁজ ফেলে অস্ফুটে বলে। আবরাজ কপির মগ টা সামনের সেন্টার টেবিলে থেকে হাতে নিলো। সেটায় আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে চুমুক দিলো। রয়েসয়ে জবাব দেয়,

-“হ্যাঁ। তোমার বউ কে এখানে নিয়ে আসবে। বাট তোমার বউ আসার পর দু’জন অবশ্যই এবং অবশ্যই আলাদা আলাদা কক্ষে ঘুমবে।”

সাব্বির প্রথম কথা টা শুনে খুশিতে আত্মহারা হলেও দ্বিতীয় কথা টার মানে টা বুঝতে পেরে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ডেকে উঠলো,

-“স্যার।”

-“কোনো বাহানা চলবে না। ইট’স মাই অর্ডার।”

সাব্বির দাঁড়িয়ে রইলো। আবরাজ হনহনিয়ে নিজের কক্ষে চলে গেলো। সাব্বির পেছনে সোফায় ধপ করে বসে গেলো। কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,

-“বউ কাছে নেই। এখন তো এটা বলে মন কে বুঝাতে পারি। কাছে থেকেও যদি বউ কে ছুঁতে না পারি তখন ক্যামনে কন্ট্রোল করাম নিজে কে? বউ নিশ্চয়ই বলবে আমার,,, এ্যা এ্যা,, ”

বাকি কথা বলার আগে সাব্বির গুনগুন করে। চোখে পানি নেই। আবরাজ দূরে নিজের কক্ষের দরজায় দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

-“পাশাপাশি রুমে থেকেও নিজে কে কন্ট্রোল করতে পারবে না! আমি যে এক বেডে ঘুমিয়েও নিজে কে কন্ট্রোল করছি। হু। তাহলে আমি শুধু পুরুষ ই নয় মহাপুরুষ আমি। অথচ আমার বউ এটা বুঝলো না।”

———-

-“কাল রেডি থেকো সুগন্ধি ফুল। আমি বাসায় ফিরে তোমাকে নিয়ে একটা পার্টি অ্যাটেন্ড করবো।”

ফিজা বিছানায় শুয়ে আছে আর আবরাজ তার পাশে বসে ল্যাপটপে কিছু করছে। আবরাজ ল্যাপটপ স্ক্রিনে দৃষ্টি স্থির রেখে বলে উঠলো উপরোক্ত কথা গুলো। ফিজা অন্য দিকে ফিরে শুয়ে ছিলো। আবরাজ এর দিকে ঘুরে হেয়ালি স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

-“আবার কাস্টমার দেখাবেন না-কি?”

কথা টা শেষ হওয়ার আগে ফিজার কানে যেন বিস্ফোরণ ঘটালো। দুই হাত কানে চেপে মেয়ে টা দ্রুত শোয়া থেকে উঠে বসলো। কিন্তু এটাও বেশি সময় এর জন্য হলো না। আবরাজ ফিজা কে চকচকে ফ্লোরে পরে থাকা থেঁতলানো ল্যাপটপ টা দেখার সুযোগ অব্ধি দিলো না। ফিজার হাত দু’টো বিছানার সাথে চেপে ধরে রাগান্বিত স্বরে বলে উঠলো,

-“বউ তুমি আমার। কোনো পণ্য নয়। দ্বিতীয় বার এসব কথা বললে খুব খারাপ হবে। যা তোমার ধারণার বাইরে।”

-“বউ!”

ফিজা তাচ্ছিল্য হেঁসে বলে। আবরাজ এর রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আছে। সুদর্শন চেহারা টা দারুণ দেখাচ্ছে। ফিজা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,

-“আপনাকে রাগলেও চমৎকার লাগে আবরাজ।”

-“মজা করো না। আ’ম সিরিয়াস।”

আবরাজ চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে গম্ভীর স্বরে জানালো। ফিজা ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিয়ে বলে,

-“আচ্ছা।”

-“ঘুমিয়ে পড়ো।”

আবরাজ বিছানা ছাড়লো। গায়ে নাইট শার্ট। বুকের দিকে যে ক’টা বোতাম সব গুলো খোলা। লোমহীন বুকের ভাজ গুলো স্পষ্ট। ফিজা দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলো। এসছে পর আবরাজ এর এক-এক রকম রূপ রীতিমতো চোখ ধাঁধিয়ে যায়। ফিজা কম্ফর্টার এর তলায় ঢুকে। আবরাজ রুমে দেয়ালের সাথে এডজাস্ট করা মিররে দেখে সেটা। বাঁকা হেঁসে লাইট অফ করে। এরপর বিছানায় এসে নিজেও শুয়ে পড়ে।

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]