#সুগন্ধি_ফুল
#পর্ব_১৫
#জান্নাত_সুলতানা
তীব্র থেকে তীব্র হয় আবরাজ এর হাতের স্পর্শ। ফিজার গালে ছুঁয়ে থাকা হাত টা ফিজা কে বড্ড জ্বালাচ্ছে। ঠোঁট ছুঁয়ে যাচ্ছে তর্জনী আঙুল। সে আবরাজ এর শরীর এর সঙ্গে ও লেপটে রয়েছে। শরীর এর অর্ধাংশ ভিজে গিয়েছে প্রায়। ঠান্ডায় মেয়ে টা কাঁপছে। আবরাজ এর চুল থেকে হাত সরিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে আরাম করে বসে। আবরাজ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বউয়ের দিকে। ফিজা ফিসফিস করে বলে,
-“নারী তার শখের পুরুষ কে যতোই ভালোবাসুক। আপনি যা দিবেন সেটাই তার কাছ থেকে ফিরত পাবেন।”
-“আমি তোমায় অবহেলা করেছি। তুমি কেনো তবে আমায় ছেড়ে গেলে না?”
ফিজা হাসে। ফ্যাকাসে ঠোঁটের সেই হাসি আবরাজ এর নিকট দারুণ লাগে। একটু ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে। মুখ এগিয়ে নিয়েও আলতো স্পর্শ করলো। ফিজা মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-“ছেড়ে যাব! উঁহু, আমি আপনাকে আমার স্থানে দাঁড় করাবো। আর অনুতপ্তের অনলে পোড়াব। এবং সেটাই হবে আপনার ভুলের শাস্তি।”
-“তুমি বড্ড বোকা সুগন্ধি ফুল।”
আবরাজ আফসোস করে বলে। ফিজা ঠোঁটের কোণায় হাসি ঝুলিয়ে জবাব দেয়,
-“বোকা ভালো।”
অথচ মেয়ে টা তাকে নাকে দড়ি বেঁধে ঘোরাচ্ছে। বারবার তাকে শিখিয়ে দিচ্ছে আবরাজ খান এর বউ মিসেস আবরাজ খান সে। অতএব সাবধানে তাকে আয়ত্তে নিতে হবে। কিন্তু এখনো যেন পারছে না নিতে। আবরাজ বউয়ের ওষ্ঠদ্বয় আবারও চুমু খায়। বলে,
-“যাও এক ঘন্টা তোমাকে আর ডিসটার্ব করবো না। ফাস্ট রেডি হয়ে নাও। বেরুতে হবে আমাদের।”
ফিজা ভেজা কাপড়ে লজ্জায় পড়ে। দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো। আবরাজ বউয়ের পেছনের ভেজা অবয়ব এর দিকে তাকিয়ে হেঁসে বলে উঠলো,
-“নারী তোমার কত রঙের রূপ। আমি তোমার সব রঙের সঙ্গে মিশে একাকার হতে চাই।”
-“নিজের সর্বনাশ নিজের হাতেই করলেন তবে।”
ফিজা ওয়াশ রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে বলে। আবরাজ শব্দ করে হাসে। বহুদিন পর। এমন হাসি এই পুরুষের মুখে বিরল। বেশ ভালো লাগলো হাসি মুখো আবরাজ খান কে। আবরাজ হাসতে হাসতে হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বলে,
-“এতেও যদি তোমায় পাওয়া যায়, নিজের সর্বনাশ না-হয় মেনে নিলাম।”
———-
সাদা রঙের একটা পার্টি ড্রেস পড়েছে ফিজা। চুল গুলো খোঁপা বাঁধা। কিছু চুল এলোমেলো কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে। ঠোঁটে হালকা করে গোলাপি লিপস্টিক। অল্পস্বল্প সাজে দিগুণ অসম্ভব সুন্দরী হয়ে উঠেছে এই নারীর সৌন্দর্য। ফিজা রুম থেকে বেরিয়ে আসতে আবরাজ সোফায় ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। পাশে সাব্বির কোনো গুরত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলছিলো। স্যার এর রেসপন্স না পেয়ে সামনে তাকিয়ে তার স্যার এর অবস্থা দেখে মাথা নিচু করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। ফিজা ব্যাপার টা লক্ষ্য করে আবরাজ এর কাজে বেহায়া একটা উপাধি দিলো। আবরাজ ফিজার ঠিক বরাবর দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো,
-“মাই বিউটিফুল লেডি।”
ফিজা বোধহয় লজ্জা পেলো। চোখ নত করে মিনমিনে বলে,
-“লেট হচ্ছে।”
আবরাজ শুনলো। বউয়ের হাতের ভাঁজে হাত রেখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।
গাড়িতে না বসে আবরাজ বউ নিয়ে বাড়ির পেছনের দিকে হাঁটা ধরলো। ফিজা কিছু টা অবাক হলো। এদিকে কোথায় যাচ্ছে? কৌতূহল হয়ে আবরাজ এর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকিয়ে ফিজার মুখ হা হয়ে গেলো। মানুষের সমাগম প্রচুর। অন্ধকারে তুষারপাতের মধ্যে কি সুন্দর করে লাইটিং করা সাজানো চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো। সুন্দর সুন্দর রমণী থেকে শুরু করে কতরকম বিদেশী মানুষ। তারমধ্যে একজন বেশ সুদর্শন ইয়াং দেখতে পুরুষ এগিয়ে এলো। যার গায়ে কালো স্যুট। দেখে বোঝা যাচ্ছে বাঙালি। বেশ সুদর্শনা। মোটা গোঁফ রয়েছে।
-“হেই মিসেস আবরাজ খান। জুবায়ের, জুবায়ের কবির। আবরাজ খান এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু বটে। আবার শত্রুও।”
জুবায়ের হাত বাড়িয়ে রেখেছে ফিজার দিকে। হ্যান্ডশেক করার জন্য। ফিজা আবরাজ এর দিকে তাকিয়ে দেখলো। ইচ্ছে নেই হাত মেলাবার। আবরাজ বুঝি মিলাতে দেবে? বউয়ের দৃষ্টি না পড়ে সে জুবায়ের এর সাথে হাত মেলাল। ঠোঁটের কোণায় অল্পস্বল্প বাঁকা হাসি রেখে বললো,
-“থ্যাংকস। এসেছো। ভালো লাগলো”
-“ফ্রেন্ড তো। এসব বলো না। তোমার বউ কিন্তু চমৎকার।”
আবরাজ জুবায়ের এর ধরে রাখা হাতের মুঠোয় হাত টা এতোটাই চেপে ধরলো যেন মটমট করে হাড় গুলো ভেঙে যাচ্ছে। কিন্তু এতেও জুবায়ের এর মুখভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হলো না। বাঁকা হেঁসে আবরাজ এর দিকে তাকিয়ে কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়াল। ফিজা পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও মনোযোগ অন্য দিকে। জুবায়ের ফিসফিস করে বলে,
-“সামলে রেখো। জুবায়ের কবির এর নজরে কিন্তু পড়ে গেলো।”
-“তুমি নিজের চোখ টা সামলে রেখো। কখনো কোথাও খুলে পড়ে গেলে,পরে নিজের গার্লফ্রেন্ড কে খোঁজে পাবা না। সো বি কেয়ার ফুল।”
আবরাজ জুবায়ের এর হাত টা হঠাৎ উল্টো করে মচকে দিয়ে বলে। জুবায়ের এর ব্যাথা চোখ লাল হয়েছে। তবুও মুখ দিয়ে টুঁশব্দ করলো না। আবরাজ এর ভাবসাব এমন যেন সে কিছু ই করে নি। হাসতে হাসতে জুবায়ের এর কাঁধে চাপড়ে সামনের দিকে চলে গেলো। পেছনে জুবায়ের নিজের হাত টা ছাড়া পেয়ে বাঁ হাতে ডান হাতের কবজি চেপে ধরে রাগে ফুঁসতে লাগলো। মূলত তৃণা কে সে আবরাজ এর থেকে দূরে সরিয়েছে। আবরাজ কে কষ্ট দেওয়ার জন্য। অথচ সে এটা জানতো না আবরাজ তৃণা কে কখনো বোন ব্যাতিত অন্য নজরে দেখে নি।
জুবায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে হিসহিসিয়ে বলে উঠলো,
-“একবার ভুল করেছি। সেকেন্ড টাইম সেটা করবো না। এবার আমি যেভাবে হউক তোকে জিততে কিছুতেই দেবো না। নো নেভার।”
ফিজা ঘুরাঘুরি আর কথা বলে সবার সাথে বুঝতে পারলো এরা মূলত আবরাজ এর ফ্রেন্ড। ফিজা এতো সময় সাব্বির এর সাথে ঘুরেঘুরে সবার সাথে পরিচয় হলো। আবরাজ নিজের মতো সবার সাথে কথা বলছে৷ কিন্তু দৃষ্টি ঠিকই বাজপাখির পালকের ন্যায় বউয়ের দিকে। ফিজা এখানে মিস্টার জি কে দেখে বেশ অবাক হলো
তারচেয়ে ও বেশি অবাক হয়েছে হাতের ব্যান্ডেজ দেখে। সাথে যদিও তৃণা রয়েছে। অগত্যা ফিজা তাদের দিকে গেলো না। সুযোগ বুঝে সাব্বির কে আস্তে করে ডাকলো,
-“সাব্বির সাহেব!”
-“ইয়েস ম্যাডাম।”
সাব্বির সাথে সাথে জবাব দিলো। ফিজা জোর করে মুখে হাসি ঝুলিয়ে আবরাজ এর দিকে তাকিয়ে থেকে ঠোঁট দু’টো নেড়ে জিজ্ঞেস করলো,
-“মিস্টার জি এর হাতে ব্যান্ডেজ?”
সাব্বির চমকালো। এতো মানুষের ভীড়ে এই সামন্য একটা জিনিস ম্যাডাম এর নজরে পড়তে হলো? যদিও উত্তর টা যেকোনো একটা মিথ্যা দেওয়া যায়। আমতা আমতা করে বলে,
-“আসলে ইয়ে মানে ম্যাডাম। আপনি এসব বুঝবেন না।”
-“আপনি সত্যি টা বলুন।”
-“ম্যাডাম তারা মাফিয়া। কত শত্রু।”
-“কিন্তু এটা শুধু একজন’ই করতে পারে।”
ফিজা যেন দেখতে পাচ্ছে। আবরাজ নিজের রিভলবার টা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে মিস্টার জি। এবং সাথে সাথে আবরাজ টিগার চাপে। ফিজা চমকে উঠলো। এটা সত্যি আবরাজ ছাড়া কেউ করে নি। সেদিন উনার সামনে যাওয়া নিয়ে আবরাজ রেগে গিয়েছিল। এবং তাকে বাড়িতে রুমে লক করে মিস্টার জি এর সাথে দেখা করতে গিয়েছিল আবরাজ। এখানে এটার মানে এটাই দাঁড়ায় তাদের মধ্যে আবারও দেখা হয়েছে। এবং এই কাজ আবরাজ খান করেছে। ফিজার ভাবনার মাঝে সাব্বির বললো,
-“ওই মানে। মিস্টার জি আপনার নামে বাজে কথা বলেছিলো। সেইজন্য স্যার রেগে!”
ফিজা যতোটা চকমকানোর কথা ছিলো তারচেয়ে বেশি অবাক হলো। বাজে কথা বলেছে? আর এরজন্য গুলি করেছে। তাহলে সেদিন রাতে যে ফিজা এতো বাজে কথা বলো। কাস্টমার দেখানোর কথা বললো, আবরাজ কি তবে কষ্ট পেয়েছিল? সেইজন্য রেগে ল্যাপটপ ভেঙে ফেলেছে? ফিজার কাছে সব প্রশ্নের উত্তর একটাই সেটা হচ্ছে “হ্যাঁ”। ফিজা আবরাজ এর দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো। যতোটা বাজে ভেবেছে তার থেকে দিগুণ বাজে এই পুরুষ। সামন্য কথার জন্য গুলি করে দিয়েছে! ফিজার মাথা ঘুরে। হাতে হেঁচকা টানে ফিজার ভয় ধরলো মনে। খামচে ধরলো সামনের মানুষ টাকে। বক্সে মিউজিক চলছে। অনেকে এরমধ্যে কাপল ডান্স শুরু করে দিয়েছে। আবরাজ এর দুই কাঁধে হাত রেখে ফিজা চারদিকে দৃষ্টি বুলিয়ে পর্যবেক্ষণ করে নিলো সম্পূর্ণ টা। কোমড়ে জামার উপর দিয়ে শীতল স্পর্শ পেয়ে শিরশির করে শরীর। তবে নিজে কে সামলে আবরাজ এর দিকে তাকালো। আবরাজ তাকিয়ে বউয়ের হালকা গোলাপি রঙে রাঙানো ঠোঁটের দিকে। এখানে একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে কিস করা টা খুব নর্মাল। আবরাজ নিজের ঠোঁট এগিয়ে আনতে ফিজা মুখ সরিয়ে নিলো। জোরে জোরে বেশ কয়েকবার শ্বাস ফেলে বলে উঠলো,
-“আমার লজ্জা লাগছে আবরাজ।”
-“লজ্জা, সেটা শুধু তুমি আমার সামনে পাবা। অন্য কারোর সামনে নয়। রুমে চলো।”
বলতে বলতে পাঁজা কোলে তুলে বউ কে। ফিজা চমকে উঠলো। কিছু সময় আগেই তো এলো। আবার চলে যাবে? মানুষ কি বলবে? এসব ভেবে বললো,
-“আবরাজ নামান। সবাই এখানে। ভালো দেখায় না চলে যাওয়া টা।”
আবরাজ লম্বা লম্বা কদম ফেলে বাড়ির দিকে যাচ্ছে। সামনের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বলে উঠলো,
-“আই ডোন্ট কেয়ার, কে কি ভাবলো এসব দেখলে ইহজন্ম আমার বাসর করা হবে না সুগন্ধি ফুল।”
#চলবে……
#জান্নাত_সুলতানা