#সুগন্ধি_ফুল
#পর্ব_১৬
#জান্নাত_সুলতানা
-“আপনি সব সময় এগিয়ে কেনো আসেন?”
ফিজা দুই পা পিছিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে আবরাজ কে। আবরাজ প্যান্ট এর পকেটে হাত গুঁজে ফিজার দিকে এগিয়ে আসে। ফিজার চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়,
-“তুমি সব সময় পিছিয়ে যাও বলে।”
-“আপনি এগিয়ে আসবেন না।”
ফিজা আবারও পিছিয়ে যাচ্ছে। একমাত্র আবরাজ এর মুড কখন কেমন চলছে সেটার উপর ভিত্তি করে ফিজা আগে পিছে যায়। এই যেমন আবরাজ রেগে থাকলে সে নিজে কে যথাসম্ভব কঠিন রাখার চেষ্টা করে। আবার যখন আবরাজ রোমান্টিক মুড থাকে তখন কঠিন থাকলে-ও আবরাজ এর খোঁচাখোঁচির জন্য সেটা সম্ভব না হলেও মোটামুটি নিজের ভাবমূর্তি বজায় রাখে। আবার একটু আধটু এলোমেলো হয়ে আবোলতাবোল কাজ করে বসে। যেমন একটু আগে আবরাজ তাকে রুমে নিয়ে এলো। সে-ও এখন বুঝতে পারছে না কি করা উচিৎ এই মূহুর্তে। তবে এতো দ্রুত কি করে সে নিজে কে আবরাজ খান এর নিকট সম্পূর্ণ রূপে ধরিয়ে দিবে?
কখনো না। ফিজার ভাবনার মাঝে ই আবরাজ ওর একদম কাছে এসে দাঁড়ালো। হাতের উলটো পিঠে মেয়ে টার গাল স্পর্শ করে বলে উঠলো,
-“তুমি পিছিয়ে যেয়েও না। এদিকে এসো।”
-“আপনি জঘন্য একটা পুরুষ আবরাজ।”
আবরাজ ফিজার কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বললো,
-“কাম। এদিকে এসো।”
-“ডোন্ট টাচ মি। আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করছে না।”
নিজের হাত খানা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে কঠিন স্বরে বলে। আবরাজ হেঁচকা টানে মেয়ে টাকে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে। ঘনিষ্ঠ করে নিজের শরীর এর সঙ্গে। ঘাড়ে থুঁতনি ঠেকিয়ে আবরাজ শান্ত স্বরে বলে উঠলো,
-“আমাকেই দেখতে হবে। আগে এবং পরে।”
-“আপনি বাজে খুব।”
ফিজা কিছু টা বিরক্তিকর স্বরে বলে।
আবরাজ বউয়ের কাঁধে তখন থেকে নাক ঘষে যাচ্ছে। ফিজার শরীর শিরশির করে। আবরাজ বুঝতে পারছে বউ তার মৃদু কাঁপছে। ফিসফিস করে বলে,
-“তোমার জন্য সব।”
-“বিয়ের রাতে কেনো ফেলে এলেন?”
সাথে সাথে প্রশ্ন করে ফিজা। পুরুষ মানুষ কে জব্দ করার ভালো একটা প্রথা হচ্ছে যখন সে বউয়ের সঙ্গ চাইবে। খারাপ ভালো সব রকম বিষয়ে তাদের সাথে কথা বলার একটা উত্তম সময় তখন। আবরাজ ফিজার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“বিশ্বাস করবে বললে!”
-“আপনি বলুন।”
আবরাজ ফিজা কে ছেড়ে দেয়। বললো,
-“তুমি খুঁজো।”
-“কিভাবে পাবো?”
-“সব কিছু যেভাবে পেয়েছ।”
-“অনেক সময়।”
-“ততদিনে আমি তোমায় আরো ভালোবেসে ফেলবো।”
বলতে বলতে আবার এগিয়ে আনে বউ কে নিজের দিকে। ফিজা ভ্রু জোড়া কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
-“এখন বাসেন না?”
-“প্রুফ চাই?”
-“কিভাবে করবেন?”
আবরাজ হতাশ হলো। এই মেয়ে কোনো দিন সোজাসাপটা জবাব দিলো না। সব সময় প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করাটাই তাহার খুব জরুরি। আবরাজ ফোঁস করে দম ছাড়ে। বাঁকা হেঁসে জানতে চাইলো,
-“তুমি কিভাবে উপভোগ করতে চাও?”
-“অনুভূতি।”
-“তাহলে বাসর করতে হবে।”
আবরাজ ফিজার ঘাড়ের পেছনে ডান হাত টা রেখে মাথা টা আচমকাই নিজের দিকে টেনে নিলো। নাক দু’টো একটা আরেকটা কে স্পর্শ করছে। ফিজা বিরক্ত। বললো,
-“সারাক্ষণ বাসর এর ধান্দা। ভালো হবেন না?”
-“তুমি হতে দিচ্ছো না। মাথা খারাপ করে দাও। এই-যে এখন নিজে কে অর্ধ উন্মুক্ত করে রেখেছো। ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।”
-“আপনি এটা ছাড়া পারেন কি?”
-“তোমাকে ভালোবাসতে।”
-“ভুল।”
-“তোমার যা মনে হয়।”
ফিজা ফোঁস করে দম ছাড়ে। নিজের জামার ফিতা টা ঠিক করে ওভার কোট এর বোতাম লাগায়। তারপর গলার স্কার্ফ টাও ভালো করে পেঁচাতে লাগলো। আবরাজ বাঁধা দিলো না। তাকিয়ে থাকে। সার্ভেন্ট ডাকতে আবরাজ গেলো। সাব্বির এর বউ এসছে। জানালো। ফিজা দ্রুত বেরিয়ে এলো এটা শুনে। বাহিরে এসে চমৎকার একখানা রমণীর দেখা পেলো। বেশ দামী একটা থ্রি-পিস পড়া। মেরুন রঙের থ্রি-পিস দারুণ মানিয়েছে মেয়ে টাকে। হ্যাংলা পাতলা চিকন গড়নের শরীর। একদম ফরসা। ফিজা অবাক হলো যেমন ভালো ও লাগলো। বিদেশি দেখতে কিছু টা। সাব্বির তখন বাড়ির সদর দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে দৌড়ে। এসে বউয়ের পাশে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
-“এতো লেট হলো তোমার?”
মেয়ে টা জবাব দিলো না। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে সাব্বির এর দিকে। সাব্বির মেকি হাসে। দোষ টা তার নিজের। সেক্ষেত্রে বউ কে এমন প্রশ্ন করা টা বোকামি। তারই তো গাড়ি পাঠাতে লেট হয়েছে। তাই সেদিকে কথা বাড়ানোর মানে নেই। ফিজা কে দেখিয়ে বললো,
-“ম্যাডাম। আমার ব,,,
সাব্বির কিছু টা নার্ভাস হয় আবরাজ কে দেখে। ফিজা ব্যাপার টা বুঝতে পেরে বলে উঠলো,
-“আপনার বউ।”
মেয়ে টা মিশুক। ফিজার সাথে ভালোই বন্ডিং হলো। দু’জন কি সুন্দর কথা বলতে বলতে বাহিরে চলে গেলো। সাব্বির বউয়ের লাগেজ টা হাতে দাঁড়িয়ে। আবরাজ সাব্বির এর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। যার অর্থ তোমার জন্য আমার বাসর টা একটুর জন্য হাত ফসকে গেলো। সাব্বির আস্তে করে ঢোক গিলে। আবরাজ চোয়াল শক্ত রেখে হাসে। বলে,
-“মনে আছে তো! দু’জন দুই রুমে থাকবে। যাও ফাতিহার লাগেজ আমার পাশের রুমে রেখে এসো।”
-“স্যার তিহা রাগ করবে।”
সাব্বির মিনমিন করে বলে উঠলো। বউ তার ভীষণ নাজুক। সহজসরল ও বটে। ব্যাপার টা কিভাবে নিবে বউ! তারউপর যদি ভুল টুল বুঝে? সাব্বির এর ভাবনার মাঝে ই আবরাজ রসাত্মক স্বরে বললো,
-“আচ্ছা, আচ্ছা। বলবো না-কি!”
কণ্ঠস্বরে গম্ভীর একটা ভাব রয়েছে। সাব্বির এর হঠাৎ পেটের ভেতর মোচড় দিলো। অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে অনুরোধ স্বরে বলে উঠলো,
-“না স্যার। আমার এতো বড়ো সর্বনাশ করবেন না দয়া করে।”
আবরাজ এর হাসি পায়। তবে হাসে না। বাড়ি থেকে গুনগুন করতে করতে বেরিয়ে গেলো। সাব্বির উপরের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
-“ইয়া আল্লাহ জীবনে কোনো দিন আর আমি লাল পানি ছুঁয়ে দেখবো না। পাক্কা প্রমিজ। একবার বাসর টা করিয়ে দাও প্লিজ গড।”
বেচারার চোখে মুখে বেদনার ছাপ। এরপর আবরাজ এর কথা মতো লাগেজ টা রেখে এলো।
পার্টির ওখানে পৌঁছাতে সাব্বির এর মাথা চক্কর দিলো। চোখ দু’টো ইয়া বড়ো বড়ো আকৃতি ধারণ করলো। দ্রুত পা চালিয়ে কোনো রকম গিয়ে বউয়ের পাশে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
-“আমি যা দেখছি তুমি ও কি তাই দেখতে পাচ্ছো?”
আবরাজ সুইমিংপুলের পাশে ফিজা কে নিয়ে কাপল ডান্স করছে। সুন্দর হচ্ছে। ফাতিহা সেদিকে হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে ছিলো। সাব্বির এর প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে বললো,
-“এটা কেমন প্রশ্ন! এখানে ডান্স হচ্ছে তো ভিন্ন কিছু দেখবো কেনো আমি?”
-“উফ তুমি ত্যাড়া কথা কবে থেকে বলতে শুরু করলে? আচ্ছা বাদ দাও। স্যার ডান্স করছে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। এই আমাকে একটা চিমটি কাটো তিহা।”
ফাতিহা সাথে সাথে সাব্বির এর পেটে খামচে ধরলো। সাব্বির ব্যাথাতুর শব্দ করে। ছিটকে দূরে সরে গেলো। তবে পর মূহুর্তে সামনে তাকিয়ে ফ্যালফ্যাল হয়ে এলো আঁখি। তাকিয়ে থাকে সেভাবে।
তবে পরক্ষণেই কিছু মনে পড়তে নিজেও বউয়ের হাত টেনে ধরে একপাশে চলে গেলো।
আবরাজ ডান্স কম বউ কে বিরক্ত বেশি করছে। কোমড়ে রাখা হাত টা ফিজা কে বড্ড বিরক্ত করছে। ফিজা যার ফলস্বরূপ ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পেরে আবরাজ এর কাঁধে রাখা হাত টা বেশ শক্ত করে চেপে রেখেছে সেখানে। আবরাজ মুগ্ধ হয়ে বউয়ের কার্যকলাপ লক্ষ্য করছে।
অতিরিক্ত তুষারপাত পার্টিতে ব্যাঘাত ঘটালো। যা টুকটাক সবাই নিজেদের মতো এনজয় করে চলে গেলো। কিন্তু এতো বড়ো পার্টি আবরাজ কিসের জন্য দিয়েছে সেটাই ফিজা বুঝতে পারে না। বাড়ির ভেতরে এসে সবাই যখন যে যার রুমে যাবে সাব্বির তখন ফিজা কে ডেকে বললো,
-“ম্যাম, স্যার এর বার্থডে আজ। স্যার অপেক্ষা করে ছিলো। উইশ টা করে দিয়েন।”
ফিজা চমকালো। আশ্চর্যের ব্যবহার এটা তিন বছরে ফিজা সব সময় আবরাজ এর বার্থডে ডেট মনে রেখেছে। কিন্তু এবার? কিভাবে ভুলে গেলো সে এটা? আফসোস এর বন্যা যখন ভেতরে উতালপাতাল ঢেউ। তখন নিজে কে কোনো রকম সামলে সাব্বির কে জবাব দিলো,
-“ফাতিহার রুমে যান। আমি আপনার স্যার কে ম্যানেজ করে নেব।”
সাব্বির মৃদু হাসলো। স্যার বলেছে যা। এসব নিয়ে মজাই করবে এ-র বেশি কিছু না। সাব্বির রুমে যেতে ফিজাও নিজের রুমে এলো।
আর সাথে সাথে দরজা বন্ধ করে আবরাজ। এরপর দরজার সাথে চেপে ধরে ফিজা কে। বললো,
-“থ্যাংকস বলো আমাকে!”
-“বাট হোয়াই?”
ফিজা ভ্রু জোড়া কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো। ভেতরে ঠিকই মেয়ে টা গুটিয়ে গিয়েছে। সারাদিন কেনো কথা টা ওর একবার ও মনে পরে নি? আবরাজ ফিজার চোখের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে জবাব দিলো,
-“তোমার ইশারায় না নাচতে পারি। তোমার সাথে তো ডান্স করলাম।”
#চলবে…
#জান্নাত_সুলতানা