#সুগন্ধি_ফুল
#পর্ব_১৮ [বার্থডে স্পেশাল -২]
#জান্নাত_সুলতানা
[পর্ব টা একটু রোমান্টিক। পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]
ফিজা আবরাজ এর থেকে ছাড়া পেয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানে। আবরাজ বউয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ফিজা আজ যেনো একটু বেশি বেসামাল হয়েছে। নিজের অনুভূতিরা ডানা ঝাঁপটাচ্ছে মনের মধ্যে। ওষ্ঠপুটে হাত ছুঁয়ে মাথা তুলে সামনে তাকালো। আবরাজ ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বউয়ের লজ্জায় মিইয়ে থাকা মুখের দিকে। ঠোঁটের লিপস্টিক এবড়োখেবড়ো হয়ে চারদিকে। ফিজা হাতের উলটো পিঠে সেগুলো মুছে নিচ্ছে। আবরাজ বউয়ের কান্ড দেখে দম ফাটা হাসি পেলো। এই মেয়ে ম্যাচিউর? ইশ কেমন বাচ্চাদের মতো কাজ করছে দেখো। আবরাজ বউয়ের উন্মুক্ত কোমড়ে হাত রেখে নিজের দিকে টেনে নিলো। ঘনিষ্ঠ করলো মেয়ে টাকে নিজের সাথে। ফিজার হাত ঠেকালো আবরাজ এর বক্ষে। আবরাজ এর ব্লেজার এর নিচে সাদা শার্ট এর তিন টা বোতাম খোলা। যার ফলস্বরূপ বুকের আকর্ষণীয় অংশ স্পষ্ট।
একটা লোমহীন বক্ষ। অথচ দারুণ সুন্দর সেই স্থান। বুকের দিকের হাড় গুলো কেমন সুন্দর ভেসে আছে রসুন এর কোয়ার ন্যায়। ফিজা একটা আঙুল সেখানে ছুঁয়ে দিলো। বললো,
-“আপনি জানেন যাদের বুকে পশম থাকে না তাদের মায়াদয়া ও থাকে না।”
আবরাজ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
-“কে বলে তোমায়?”
-“মুরব্বিদের কথা।”
আবরাজ পাত্তা দিলো না। বউয়ের আপাদমস্তক দৃষ্টি বুলিয়ে দেখে। কি চমৎকার সুদর্শনা এই রমণী। আবরাজ খান কিভাবে এতো সুন্দরী বউ কে ছেড়ে ছিলো এতো বছর! ইশ আফসোস হচ্ছে এখন। এতো বছরের ঘাটতি কত দিনে পোষাবে! বাসর টা দ্রুত সারতে হবে। আবরাজ বউয়ের ঘাড়ে মুখ গুঁজে ফিসফিস করে বললো,
-“ঠান্ডা প্রচুর।”
ঠান্ডা তো হবেই। বাহিরে তুষারপাত হচ্ছে। আর এদিকে মেয়ে টা শুধু একটা শাড়ী পড়ে। যদিও বাড়ির ভেতরে তেমন একটা ঠান্ডা লাগে না। হিটার রয়েছে রুমে। বউ কে ঝুঁকে কোলে তুলে পাশের সোফায় রাখলো আবরাজ। চারদিকে কাচের দেয়াল। বাহিরে তুষারপাত হচ্ছে। কি সুন্দর মনোমুগ্ধকর সেই দৃশ্য। সমগ্র শরীর উষ্ণতা। শীতের মাঝেও গরমে শ্বাস ভারী হয়ে উঠছে দু’জনের। অসহ্য ছোঁয়ায় কব্জা করে ফেলে আবরাজ মেয়ে টাকে। ফিজার রুহ অব্ধি কাপে। একে-অপরের উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ বন্দী। আবরাজ মেয়ে টার শাড়ির আঁচল ফেলে বক্ষদেশে হাত ছোঁয়াতে ফিজা মন কেমন করে উঠলো। এক মূহুর্তের জন্য মনে হলো এই ছোঁয়ায় ভালোবাসা পাচ্ছে না সে। কিছু টা কামনাবাসনা ও রয়েছে। সে এমন ছোঁয়া চায় না। সম্পূর্ণ পবিত্র ভালোবাসার একটা ছোঁয়া চায়। কামনা ভালোবাসার উর্ধ্বে নয়। তবুও মন সায় দিলো না। অন্তিম মূহুর্তে এসে সে আবরাজ কে আঁটকে দিলো। বাঁধা দিলো পুরুষ টার কাজে। আবরাজ অবাক হয়ে তাকালো ফিজার দিকে। ফিজা মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে বললো,
-“আজ আমার ইচ্ছে করছে না।”
শ্বাস-প্রশ্বাস এর গতি অস্বাভাবিক মেয়ে টার। আবরাজ শুধালো,
-“হোয়াই?”
-“এটা আপনার আমার আমাদের ঘরে হোক।”
ফিজা চারদিকে তাকিয়ে বলে উঠলো। আবরাজ বউয়ের এলোমেলো চুলে হাত চালায়। জানালো,
-“এটাও আমার বাড়ি।”
-“আমি চাইছি না এখানে কিছু হয়। ভালো লাগে না আমার এখানে।”
-“আরেকবার একটা চুমু তো হতে পারে। তৃষ্ণা মেটে নি।”
ফিজা ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিলো। হিসাব কষতে গেলে হিসাব মিলবে না আবরাজ ঠিক কতবার তার অনুমতিবীহন চুম্বন করেছে। অথচ এখন আবার ঢং করে অনুমতি চাইছে। ফিজা পাশের টেবিলে ফোন টার দিকে তাকিয়ে চোখে হাসলো। আবরাজ এর কালো রঙের স্যুট টা অবহেলায় মেঝেতে পরে আছে। শার্ট এর বোতাম অর্ধেক এর চেয়ে বেশি খোলা। ফিজা আবরাজ এর কলার টেনে ধরলো। আবরাজ একটু অপেক্ষা না করে বউয়ের ওষ্ঠদ্বয় আবার আঁকড়ে ধরলো। সময় নিয়ে লম্বা এক অধর চুম্বনে লিপ্ত হয়ে রইলো।
কত সময় কাটলো। ফিজা ছুটাছুটি করতে আবরাজ বউ কে ছাড়লো। নিজের ঠোঁটের কোণায় আঙুল ছুঁয়ে বলে উঠলো,
-“ফাস্ট ব্যাক করছি বাংলাদেশ। বাসর এর জন্য রেডি হউ সুগন্ধি ফুল।”
আবরাজ রুমে চলে যায়। ফিজা শোয়া থেকে উঠে বসলো। এলোমেলো শাড়ী ঠিকঠাক করে নিলো। এরপর বসা অবস্থায় থেকে ফোন টা হাতে নিলো। সাইট বাটন চাপতে স্ক্রিনে ভেসে উঠলো কেউ একজন কলে রয়েছে। ফিজা বাঁকা হেঁসে বলে উঠলো,
-“প্রমাণ নিশ্চয়ই পেয়েছো! আই হোপ এখনো একজন বিবাহিত পুরুষের পেছনে পরে থাকবে না।”
ওপাশের ব্যাক্তির জবাব এর অপেক্ষা না করে ফিজা লাইন কেটে দিয়ে গুনগুন করতে করতে রুমে চলে গেলো।
——–
ফাতিহা ঘুমিয়ে ছিলো। সাব্বির এসে বউয়ের পাশে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো। ফাতিহার সাথে সাথে তন্দ্রা ছুটে গেলো। চোখ মেলে সাব্বির কে নিজের পাশে দেখে থমথমে খেলো কিছু টা। যদিও প্রায় এমন হয়। তবুও হঠাৎ ঘুম ভেঙে এভাবে নিজের কাছে কাউ কে দেখলে স্বাভাবিক ভাবে মস্তিষ্কে সেটা বুঝে নিতে সময় লাগবে।
সাব্বির এর গায়ে তখনও বাহিরের পোশাক। জুতো জোড়া ও খুলে নি। ফাতিহা শোয়া থেকে উঠে আগে সাব্বির এর জুতা খুলে দিলো। পায়ের মোজা খুলে সেগুলো রেখে এলো। সাব্বির ততক্ষণে শোয়া থেকে উঠে বসেছে। ফাতিহা জিজ্ঞেস করলো,
-“খাবার!”
-“খেয়েছি। তুমি খেয়েছ?”
-“হু। ফ্রেশ হয়ে আসুন।”
-“ঠান্ডা।”
সাব্বির নিস্তেজ গলায় বললো। ফাতিহা সাথে সাথে বলে উঠলো,
-“সারাদিন বাহিরে ছিলেন।”
এরপর ঠেলেঠুলে ওয়াশ রুম পাঠালো সাব্বির কে। সাব্বির ফ্রেশ হয়ে এলো মিনিট পাঁচ এর মধ্যে। বেরিয়ে এসে ফাতিহার পাশে বসলো। ফাতিহা বললো,
-“আপু ভাইয়ার জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছে আজ। সুন্দর করে সাজিয়েছে সবকিছু।”
-“জানি আমি।”
ফাতিহা মুখ ভোঁতা করে নিলো। বাসি খবর দিয়েছে সে৷ সাব্বির ব্যাপার টা বুঝতে পেরে হেঁসে দিলো। ফাতিহা মুখ ভেংচি কেটে শুয়ে পড়লো। সাব্বির হাসতে হাসতে নিজেও শুয়ে জড়িয়ে ধরলো বউ কে।
——-
সেদিন রাতের পর আজ তিন দিন আবরাজ বাড়ি ফিরে না। ফিজা চিন্তায় অস্থির। সাব্বির সবদিক সামলাচ্ছে। ফিজা বারবার করে জিজ্ঞেস করেও কিছু বলছে না সাব্বির। এদিকে আবরাজ এর গোপন এসিস্ট্যান্ট জন এর সাথে ও কন্ট্রাক্ট করতে পারছে না ফিজা। চিন্তায় অস্থির মেয়ে টা। রাত হলো ঘুম হয় না। ছটফট করে রাত কাটে। মন টা বড্ড আবরাজ খান আবরাজ খান করে। একটু দেখতে ইচ্ছে করে। খেতে পারছে না ঠিকঠাক। এই-যে রাতের খাবার এখনো রাখা টেবিলে। ফিজার আচমকাই কান্না পায়। অথচ আজ কত বছর হবে মেয়ে টা কাঁদে না। স্বামী বিয়ের রাতে ছেড়ে এলো তখনও কাঁদে নি মেয়ে টা৷ সব কিছু সহ্য করে গিয়েছে। এতো দূরে এসছে। যেখানে আপন একটা মানুষ নেই। সব কিছু ছেড়ে যার জন্য এতদূর এলো সেই মানুষ টার ও খোঁজ নেই। সাময়িক সময়ের জন্য সুখ এসছিলো কি তবে তার কপালে! স্থায়ী কেনো হচ্ছে না! সাধারণ জীবন টা কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো আবরাজ খান এর সাথে বাঁধা পরে। হ্যাঁ সে এটাতে আবরাজ খান কে অপরাধী বানাতে পিছপা হবে না একটু। কাঁদে না তবুও মেয়ে টা। চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস টেনে চোখ খুলতে চমকে উঠলো। তার পাশে হাঁটু গেঁড়ে বসা আবরাজ খান। ফিজা নিজের মনের ভুল ভেবে চোখ বন্ধ করে নিলো। কিন্তু না। নিজের গালে শীতল হাতের স্পর্শে মেয়ে টা শিওর হলো স্বয়ং আবরাজ খান তার সামনে বসা। সাথে সাথে শোয়া থেকে উঠে বসলো ফিজা। ঝট করে গলা জড়িয়ে ধরলো আবরাজ এর। আবরাজ নিজেও মেয়ে টার কোমড় জড়িয়ে ধরে বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ফিজা পা দিয়ে কোমড় পেঁচিয়ে নিলো আবরাজ এর। আবরাজ বউয়ের পাগলামিতে হাসলো। মেয়ে টা তারজন্য অস্থির হচ্ছিল। চিন্তা করছিলো। একটু আনন্দ হচ্ছে কি মনের কোণে! হ্যাঁ হচ্ছে। একটু সুখ সুখ অনুভূতি। ভালো লাগায় মন দুলিয়ে উঠে। বউ কে নিয়ে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে গেলো আবরাজ। বললো,
-“আবরাজ খানের অনুভূতি সতেজ হচ্ছে সুগন্ধি ফুল। ফুলের সুবাস বুঝি আবরাজ খানের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে এবার।”
#চলবে….
[আমি কিন্তু আবরাজ খানের বাসর করাতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু ফিজা চাইলো না বলে আবরাজ খানের বাসর টা হলো না। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]
#জান্নাত_সুলতানা