সুগন্ধি ফুল পর্ব-২৩

0
852

#সুগন্ধি_ফুল
#পর্ব_২৩
#জান্নাত_সুলতানা

[পর্ব টা অল্পস্বল্প রোমান্টিক। পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]

-“এভাবে বলে না, ঠিক এই এখানে লাগে সুগন্ধি ফুল।”

আবরাজ বুকের বাঁ পাশে ইশারা করে কাতর কণ্ঠে বলে। ফিজা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আবরাজ আবার থুঁতনিতে আঙুল ছুঁয়ে নিজের দিকে করে নেয় মুখ। ফিজা স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আবরাজ বউয়ের কপালে চুমু খায়। অদ্ভুত এক প্রশান্তি এসে মন ভালো হয়ে যায় তার। বললো,

-“আমি আবার বিয়ে করতে চাই।”

-“আমি সেটা আগে থেকে জানতাম। মাফিয়াদের কখনো একটা দিয়ে হয় না।”

ফিজা তাচ্ছিল্য হেঁসে বলে উঠলো। আবরাজ চোখ পিটপিট করে তাকালো। কি বলে এই মেয়ে! মাথা খারাপ হয়ে গেলো না-কি? আবরাজ ভ্রু জোড়া কুঁচকে মাথায় একটু চাপ দিতে বুঝতে পারে ফিজা তার কথার নেগেটিভ কিছু ভেবেছে। আবরাজ চোখ বন্ধ করে ঠোঁট গোল করে শ্বাস টানে। এক লাইন বেশি বোঝা টা মেয়েদের ভুল নয় এটা তাদের রোগ একটা। আবরাজ তবুও কোমল গলায় বললো,

-“আমি আমাদের বিয়ের কথা বলেছি। যদিও দুই বার বিয়ে হয় না। তবে আমরা বিয়েতে যা যা করতাম ঠিক তাই তাই করবো। শুধু কাজীর কাজ টা বাদ দিয়ে।”

আবরাজ এর গম্ভীর কণ্ঠে ফিজার চক্ষু কপালে উঠে গেলো। নিজের এক লাইন বেশি ভাবা নিয়ে বিরক্ত হলো ফিজা। আবরাজ এর ফোনে বাজে তখন। আবরাজ ফিজা কে রেখে ফোন নিয়ে ব্যালকনিতে চলে এলো। ফিজা তখন ও ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবরাজ এর দিকে।

-“জুনায়েদ কবির। আমন্ত্রণ রইলো। নেক্সট উইকে চলে এসো আমার দেশে।”

আবরাজ কল রিসিভ করে হাস্যরত মুখে বলে। আবরাজ এর কথার সম্পূর্ণ বিপরীতে জুনায়েদ জিজ্ঞেস করলো,

-“মারবে তুমি আমায়?”

-“উঁহু। কখনো না। তুমি আমার দেশে এসে আমায় মেরে যাও৷ আর যদি না পারো তাহলে আমি তোমায় যে অফার করেছি সেটা আমার বেলায় বাস্তবায়ন করবো। মনে আছে তো, আমার বউয়ের দিকে নজর দিয়েছ।”

আবরাজ হঠাৎ রাগান্বিত স্বরে কথা গুলো বলে উঠলো। জুনায়েদ অনুমান করলো আবরাজ খান বউ নিয়ে খুব সতর্ক। হয়তো ভালোবাসে মেয়ে টাকে সে। কিন্তু এটা কিভাবে হতে দিবে সে? আবরাজ খান কে কিভাবে সে ভালো থাকতে দিতে পারে! জুনায়েদ আগের বারও তৃণা কে কাজে লাগিয়েছে আবরাজ কে পরিবার থেকে দূরে নিতে। সক্ষম হয়েছিল ও বটে। তবে আবরাজ আবার বেঁচে গেলো। হিংসা জিনিস টা বড্ড খারাপ। যেটা জুনায়েদ আবরাজ কে সর্বদা করে আসছে। এটার অবশ্য কারণ রয়েছে। আবরাজ জুনায়েদ দু’জনেই একই কাজ করলেও আবরাজ সব সময় সবার প্রসংশা কিংবা সবাই আবরাজ কে নিয়ে মাতামাতির যেকোনো কাজে ক্ষেত্রে আবরাজ কে প্রাধান্য দেওয়া। এগুলো বারবার জুনায়েদ কে ভেতর থেকে আবরাজ এর বিরুদ্ধে নিজে কে হিংস্রাত্মক করে তুলেছে। জুনায়েদ বললো,

-“মার না। আমি তোমার থেকে তোমার বউ কে নিয়ে নেব।”

-“আমার বউ! ট্রাই করে দেখতো পারো। আগেও বলেছি। আমার চোখে পড়লে তুমি নিজের চোখে দুনিয়ায় দেখার কথা ভুলে যাও।”

-“তুমি তৃণার জন্য এসছিলে বিয়ের পর। জানে তোমার বউ?”

-“আমি নিজে কে কখনোই সাধু প্রমাণ করতে চাই নি। আর করবো ও না এটা।”

-“যাই বলো। দোষ কিন্তু তোমার নেই। তবে একটা মেয়ে হয়ে নিজের স্বামী অন্য কোনো মেয়ের জন্য তাকে বিয়ের রাতে ফেলে গিয়েছে এটা মেনে নিতে কষ্ট হবে।”

-“সেটা আমার ব্যাপার।”

-“তোমার বউ কে তোমার মাথার ওই আঘাতপ্রাপ্ত স্থান টা দেখে না কিংবা পেটের?”

আবরাজ রাগে চোয়াল শক্ত করে রেখেছে। তার আর তার বউয়ের পারসোনাল ম্যাটারে নাক গলাচ্ছে এটা সে দাঁতে দাঁত চেপে হজম করে নিলো। তবে পরক্ষণেই নিজে কে শান্ত করে কল কেটে দিলো।

আবরাজ রুমে ফিরে ভ্রু কুঁচকে নিলো। এতো দ্রুত কিভাবে ঘুমিয়ে পড়লো মেয়ে টা? অদ্ভুত। আবরাজ ফোঁস করে দম ছাড়ে। এরপর লাইট টা অফ করে দিলো। পায়ের স্যান্ডেল খুলে বিছানায় ওঠে কম্ফর্টার এর নিচে ঢুকে গেলো। আলতো হাতে ফিজা কে নিজের বুকের ওপর টেনে জড়িয়ে ধরলো। আগে রাতে ড্রিংকস করার অভ্যাস ছিলো। যা ফিজার সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার পর তা কমে এসছে। অতঃপর এখন তো আজ কয়েকমাস নাগাদ সেটা তো আবরাজ একদম ভুলে গিয়েছে।
আগে লাল পানিতে রাত পাড় করতো। কিন্তু এটা থেকেও ইদানীং বউ কে জড়িয়ে ধরে ঘুমালে রাতে বেশি শান্তি পাওয়া যায়। আবরাজ ফিজার চুলের ভাঁজে মুখ গুঁজে লম্বা শ্বাস টানে। ভালো লাগে। নেশা ধরে যা। অ্যালকোহল এর নেশাও এতো মারাত্মক হয় না আবরাজ মনে হয়।

——

সকালে ঘুম ভেঙে আগে আবরাজ বিছানার বাঁ পাশ হাতিয়ে দেখলো। খালি পেতে চোখ গুলো খুলে গেলো। ঝট করে শোয়া থেকে ওঠে বসলো। চোখ কচলে এদিক-ওদিক তাকিয়ে বিরক্ত হলো। রুমের কোত্থাও নেই ফিজা। কোনো দিকে না তাকিয়ে বিছানা ছাড়লো। ধুপধাপ পা ফেলে ওয়াশ রুম চলে গেলো। ফিরে এলো মিনিট দশ পর। তখনও ফিজা রুমে আসে নি। আবরাজ রেডি হলো সব নিজে খুঁজে বেড় করে। প্রতিদিন ফিজা করে এই কাজ। আজ আবরাজ এর বড্ডো আলসেমি লাগলো। তারপরও ডাকলো না বউ কে। রেডি হয়ে বেরিয়ে এলো। অফিস যাবে আজ। কত মাস হলো বাবা-র অফিসে সে নজর দিচ্ছে না। এটা নিয়ে অবশ্য মিলন খান অভিযোগ করে না। তবে তিনি চায় ছেলেরা এবার এটার দায়িত্ব নিক। তিনি অবসর চায়। আবরাজ অবশ্য ঠিক করেছে এবার মন দিয়ে শুধু বাবার বিজনেস দেখবে। সব তো ওইদিকে সামলে এসছে। আর ফিরবে না সেদিকে। যদি না তার কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে মিস্টার জি কিংবা তার মেয়ে। আবরাজ নিচে এসে দেখলো ফিজা রান্না ঘরে। সবার নাশতা করা শেষ। বেলা দশ টা বাজে কি-না। আবরাজ টেবিলে বসতে ই একজন সার্ভেন্ট এলো। আবরাজ হাত দিয়ে শুধু ইশারা করে। মহিলা দ্রুত চলে যায় সেখান থেকে। লিভিং রুম ডাইনিং-এ বাড়ির কেউ নেই। মিষ্টি রুমে। ইলা বেগম মোহিতা বেগম গেস্ট রুমে আছে। তাদের আড্ডার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আব্রাহাম অফিসে। মেহরিন সকালে ভার্সিটি চলে গিয়েছে। একটা এক্সাম আছে আজ।
আবরাজ প্লেটে নিজের জন্য নাশতা নিলো। খাবার বলতে শুধু দু’টো ডিম আর একটা খেজুর খেলো। সাথে একটা কলা। কিচেনে বারকয়েক আঁড়চোখে তাকিয়ে নাশতা শেষ করলো। ফিজা কিছু করছে সেখানে। আবরাজ হুট করে সেখানে উপস্থিত হলো। কোনো দিকে না তাকিয়ে বউয়ের কপালে চুমু খেয়ে বলে উঠলো,

-“মূল্যবান সম্পত্তি রেখে গেলাম। রাত পর্যন্ত সামলে রাখবে।”

পরপরই আবরাজ বেরিয়ে গেলো। ফিজা থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। দু’জন সার্ভেন্ট আছে কিচেনে কিন্তু কেউ তাকায় নি। তবুও ফিজা লজ্জায় রঙধনু হলো। ভালো লাগায় হৃদয়ে দোলা দিতে লাগলো। কথার অর্থ কি হতে পারে! ফিজা বুঝে। এতোটাও অবুঝ নয় সে৷ ফিজা বিড়বিড় করে আওড়াল,

-“আপনি আমার টা সামলে রাখেন। আমি আপনার সম্পত্তি দেখেশুনে রাখবো।”

——

রাতে বাড়ি ফিরে আবরাজ এর ভ্রু কুঁচকে কপালে চার পাঁচেক ভাঁজ পড়লো। কি অদ্ভুত আজ-ও কি বউ তার ঘুমিয়ে গেল? লাইট কেনো অফ? আবরাজ এসব ভেবে রুমের ভেতর পা বাড়াতেই পরপর টেবিলের ওপর থাকা ল্যাম্প টা ক্যাচ শব্দ করে যখন জ্বলে উঠলো আবরাজ প্রথমে ভ্রু জোড়া কুঁচকে রাখলেও সাথে সাথে সেই ভ্রু জোড়া টানটান হলো। ঠোঁট জোড়া অটোমেটিক প্রসারিত হলো। লাইটের উজ্জ্বল আলো অর্ধ শাড়ী পরিহিত রমণীর ওপর পড়েছে। হলদে আলোতে সাদা রঙের সেই শাড়ী খানা চকচক করছে। এটার রঙ টা বাস্তবে কি হতে পারে আবরাজ ঠাহর করতে পারে না। তবে হলদে আলোয়ে আপাতত সে হলদে রঙের ধরে নিলো। ফরসা চামড়াও চকচক করছে। গায়ের রঙ কাপড়ের রঙ দুইটাই এখন একরকম দেখাচ্ছে। আবরাজ আস্তে করে ঢোক গিলে। তার বুকের কাছ থেকে গলা অব্ধি শুঁকিয়েছে হঠাৎ। বড্ডো পানির তেষ্টা পেলো। কিন্তু আবরাজ ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে। ফিজা এতো সময় উলটো ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিলো। তবে এবার আবরাজ এর দিকে ঘুরে দাঁড়াল।
আবরাজ সঙ্গে সঙ্গে চোখের পাপড়ির বন্ধন ঘটালো। দৃঢ় গভীর নিঃশ্বাসে টেনে নিজে কে সামলে নিলো। গম্ভীর রাশভারী কণ্ঠে আদেশ করলো,

-“শাড়ী পড়ো ফাস্ট। টেন মিনিটস টাইম। নাউ স্টার্ট ইউর টাইম।”

ফিজা শুনে। তবে শাড়ী কোমড়ে এক পেচ গুঁজে এলোমেলো শাড়ী হাতে এলোমেলো পায়ে এগিয়ে আসে। দরজা বন্ধ করে আবরাজ এর সামনে দাঁড়ালো। আবরাজ বউয়ের উপস্থিতি টের পেয়ে সুক্ষ্ম ভাজ গভীর হয় কপালের। ফিজা আবরাজ এর গালে নিজের হাত রাখলো। ফিসফিস করে বললো,

-“চোখ খুলুন।”

কি আদুরে স্পর্শ। কণ্ঠে অধিকারবোধ। পাগল হতে সময় নিচ্ছে না যেন আবরাজ। মাতাল মাতাল লাগে নিজে কে। চোখ বন্ধ অথচ সেই চোখে ভাসে যেন সামনে দাঁড়ানো রমণীর মধ্যে নিজের সর্বনাশ। আবরাজ কণ্ঠ খাদে এনে শুধালো,

-“প্লিজ কলিজা শাড়ী টা পড়ে নাও। জ্বালিও না আর। আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ সুগন্ধি ফুল।”

-“আপনি না গতকাল রাতে আবদার করলেন!”

ফিজা ভ্রু কুঁচকে জানালো। আবরাজ হেয়ালি স্বরে বলে উঠলো,

-“করেছিলাম বুঝি এমন আবদার?”

-“কেনো ভুলে গেলেন না-কি?”

-“মনে পড়ছে না।”

-“চোখ খুলুন।”

-“খুব খারাপ হবে যদি আমি চোখ খুলি। এক সপ্তাহ সুস্থ শরীরে নিজের পায়ে চলাফেরা করার কথা ভুলে যাও তবে। নাউ চুজ ইউর চয়েস।”

গম্ভীর স্বরে ফিসফিসিয়ে ওঠে আবরাজ। ফিজা ভয় পাওয়ার মেয়ে? মোটেও না। আবরাজ এর কথা অগ্রাহ্য করে মেয়ে টা সামন্য উঁচু হয়ে আবরাজ এর কণ্ঠনালীতে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। আবরাজ দ্রুত চোখ খুলে এক টানে ফিজা কে নিজের সাথে ঘনিষ্ঠ করে নিলো। চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো,

-“রেডি! যাও তোমার ইচ্ছে মেনে নিলাম।”

ফিজার মুখে ফু দিয়ে আবরাজ ছেড়ে দিলো ওকে। এরপর লম্বা কদম ফেলে সাবধানে গিয়ে সোফায় বসলো। দুই হাত মেলে পায়ের ওপর পা তুলে বসলো। ফিজা সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। আবরাজ দৃষ্টি বউয়ের দিকে স্থির রেখে বলে উঠলো,

-“প্লিজ স্টার্ট মিসেস আবরাজ খান।”

#চলবে….

[বড়ো পর্ব কিন্তু। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]