#সুগন্ধি_ফুল
#পর্ব_৩০
#জান্নাত_সুলতানা
আবরাজ এখনো বউ কে জড়িয়ে ধরে ঘুমচ্ছে। সকাল হয়েছে। অথচ মানুষ টার সেদিকে খেয়াল নেই। ফিজা নিজের ওপর থেকে আবরাজ এর উন্মুক্ত অর্ধ শরীর ঠেলে সরাতে চায়। কিন্তু পারে না। আবরাজ এর মতো বলিষ্ঠ সুঠাম দেহের পুরুষ কে সে নাড়াতে অক্ষম। না পেরে চুল টানলো। আবরাজ ঘুমের মধ্যে ভ্রু কুঁচকে নিলো। তন্দ্রা ছুটেছে পুরুষ টার। মাথা তুলে পিটপিট করে তাকাল বউয়ের দিকে। ঘুমঘুম কণ্ঠে বললো,
-“নড়ছো কেনো? নড়ো না। ঘুম হয় নি না রাতে আমার। ঘুম পাচ্ছে এখন।”
-“অফিস যাবেন না? উঠুন।”
ফিজা ঠেলে সরাতে চায় আবার। আবরাজ আরো আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো বউ কে। মুখ গুঁজে বউয়ের গলায়। অদ্ভুত শব্দ করে,
-“উম।”
-“কি উম?”
-“যাব।”
-“উঠুন।”
-“আর দশ মিনিট।”
আবরাজ আঙুল দেখিয়ে বললো। ফিজা আবরাজ এর মাথায় হাত রাখে। এই মানুষ টাকে অভিমান থেকে ভালোবেসেছে। অভিমান কত ছিলো। যা সময়ের সাথে সাথে গভীর অনুভূতিতে পরিণত হয়েছে। সে আবরাজ এর বিয়ের আগের কোনো লাইফস্টাইল নিয়ে মাথাব্যথা ছিলো না। কিন্তু বিয়ের পর কেমন হবে এটা নিয়ে বড্ডো চিন্তিত ছিলো সে। তবে আবরাজ এর সাথে তার কথা না হলে-ও ফিজা ঠিকই জানতো আবরাজ বিয়ের পর আর কোনো নারীর সংস্পর্শে যায় নি। ফিজা আবরাজ এর মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো। বললো,
-“আবরাজ!”
-“বলো জান।”
আবরাজ ঘুমঘুম স্বরে জিজ্ঞেস করলো। ফিজা কিছু টা জড়তা নিয়ে আওড়ালো,
-“আপনি দাড়ি রাখবেন?”
আবরাজ আচমকাই এমন প্রশ্নে কিছু টা অবাক হলো। সম্পূর্ণ দৃষ্টিতে বউয়ের দিকে তাকালো। চোখ লাল হয়েছে তার। ফিজা গালে হাত রাখে আবরাজ এর। আবরাজ শুষ্ক অধর জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে নিলো। শান্ত স্বরে কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইলো,
-“দাড়ি তোমার ভালো লাগে?”
-“হ্যাঁ। খোঁচা খোঁচা দাড়ি।”
ফিজা আবরাজ এর গালে হাত বোলাতে বোলাতে উচ্ছ্বসিত হয়ে জানালো। আবরাজ বউয়ের কপালে চুমু খেলো। বললো,
-“আচ্ছা।”
আবরাজ ওঠে ওয়াশরুম গেলো। ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে তারপর বেরিয়ে এলো। ফিজা তখনও শুয়ে ফোন হাতে। বোনের সাথে কথা বলছে ম্যাসেজে। মেহরিন বাড়িতে থাকবে আজ। ফিজা জানালো সে যাবে। ফিজা ফোন রেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ানো আবরাজ এর দিকে দৃষ্টিপাত করলো। কালো পোষাকে এই পুরুষ কে চমৎকার সুদর্শন লাগে। ফরসা শরীরে বেশ লাগে। কালো শার্ট কালো প্যান্ট কালো সু হাতে ব্র্যান্ডের ঘড়ি। পরিপাটি চুল। ফিজার চোখ সেখানে আঁটকে থাকে খানিকক্ষণের জন্য। আবরাজ এর প্রশ্নে ধ্যান ফিরলো। আবরাজ জিজ্ঞেস করলো, ,
-“বাড়ি যাবে না?”
আবরাজ এর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ফিজা উলটো আবরাজ কে ডেকে উঠলো,
-“আবরাজ!”
-“আছি তো বলো।”
আবরাজ গায়ে পারফিউম দিচ্ছিলো। সেটা রেখে এসে বসলো ফিজার পাশে। আবরাজ ফিজার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সে কাল রাত থেকে অপেক্ষা করে আছে বউ তাকে নিজে থেকে আব্রাহাম এর সাথে দেখা করার রিজন বলবে বলে। রাতে বলার মতো পরিস্থিতি যদিও ছিলো না। তবে আবরাজ শিওর বউ কে সে কিছু জিজ্ঞেস করতে হবে না। বউ নিজে তাকে বলবে। আর হলো তাই। ফিজা বললো,
-“আব্রাহাম মেহরিন কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।”
-“তোমার কি মত?”
আবরাজ স্বাভাবিক ভাবে জানতে চাইলো। ফিজা হাত কচলাতে কচলাতে বলে উঠলো,
-“আমার মতের চেয়ে এখানে সম্মানের কথা আসে আগে। বাড়ি গিয়ে কথা বলতে চাই আমি মেহু আর আম্মুর সাথে।”
-“বলো নাও। আব্রাহাম আমার সাথে আজ লাঞ্চের সময় দেখা করবে। দেখি কি বলে।”
ফিজা আবরাজ কে জড়িয়ে ধরলো। ফিজা চায় না আব্রাহাম এর বেপরোয়া প্রপোজালে কিছু হয়। বিশাল একটা দোটানায় ভুগতে হবে তাকে এটা নিয়ে।
——-
সারারাত জুনায়েদ তৃণার রুমে ছিলো। রাজপ্রাসাদ এর ন্যায় বাড়ি। নিচ তলার একদম শেষপ্রান্তে গেস্ট রুম গুলো। যার জন্য এদিকে কি হচ্ছে কে কি করছে তেমন কারোর নজরে পরে না। তৃণা বিছানায় এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে। তার এলোমেলো পোশাক-আশাক আর শরীরে বিভিন্ন অংশের ক্ষত সাক্ষী গতরাতে তারা এক পাপ খেলায় মজে ছিলো। জুনায়েদ ফ্লোর থেকে নিজের শার্ট তুলে গায়ে দেয়। তৃণা জুনায়েদ এর দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়ে টার চোখে মুখে এখনো কামুকতা। সে ভালোবাসে একজন কে অথচ প্রতি রাতে তার নিত্য-নতুন পরপুরুষ এর সাথে রাত কাটে। জুনায়েদ এর তাচ্ছিল্যের হাসি ঠোঁটে ঝুলে। সে শার্ট এর বোতাম লাগায়। তৃণা বলে,
-“এটাই লাস্ট। আমি এবার সাকসেস হবোই। তুমি দেখে নিও।”
জুনায়েদ ভ্রু কুঁচকে নেয়। বিরক্ত হয় সে। এই মেয়ে কাজের কাজ কিছু পারে না। শুধু আবলামি করবে। একবার এডিট করা ছবি একবার ভুলভাল কথা বলা একবার বাড়িতে আগুন। আবার কি করবে? যত্তসব। জুনায়েদ এর তৃণার ওপর কোনো এক্সপেকটেশন কিংবা ট্রাস্ট কোনো টাই নেই। বিরক্তিকর স্বরে সে বলে উঠলো,
-“বেশি বাড়াবাড়ি করো না মেয়ে। আবরাজ জানে আগুন সেদিন তুমিই দিয়েছিলে। তোমার অসুস্থতার জন্যেই তুমি পাড় পেয়েছো। বারবার ছাড়া পাবা না কিন্তু। আবরাজ খান কে তুমি খুব ভালো করে চিনো।”
জুনায়েদ এর কথা পাত্তা দিলো না তৃণা কিছু একটা ভাবছে সে। থুঁতনিতে আঙুল ঠেকিয়ে বললো,
-“তোমার তো ফিজা কে চাই। চলো এক রাতের জন্য হলেও তো চাই। আমি ব্যাবস্থা করে দিচ্ছি।”
তৃণার কথায় সে মহা বিরক্ত। তার তৃণার সাথে প্ল্যান করে কিছু করে সাকসেসফুল হওয়ার মতো বিশ্বাস নেই মেয়ে টার ওপর। মূলত এই পাগলের সাথে কিছু করা মানে এক সাথে মারা খাওয়া। নিজে মারা খাবে অন্য কেও মারবে। জুনায়েদ নিচ থেকে তৃণার একটুকরো কাপড় এর একটা টপস তুলে সেটা মেয়ে টার মুখের ওপর ছুঁড়ে মারলো। বললো,
-“প্রয়োজনে আজীবন আনম্যারিড থাকবো। তবুও তোমার বুদ্ধি নিয়ে আবরাজ খান এর বউ কে বিছানায় আনার কথা কল্পনা ও করবো না।”
বলে জুনায়েদ বেরিয়ে গেলো। তৃণার ইগোতে লাগলো কথা গুলো। জুনায়েদ কি তার ওপর ট্রাস্ট করতে পারছে না? রাগে মেয়ে টা হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হলো। নিজের চুল নিজে টেনে ধরলো। বিড়বিড় করে বলে উঠলো,
-“তৃণা কে ইগনোর? জাস্ট ওয়েট এন্ড সী।”
——-
কিছু কিছু ক্ষেত্রে হুটহাট কিংবা আগে পিছে কিছু না ভেবে ডিসিশন নেওয়া টা টাফ। যদিও এমনিতেই বিষয় গুলো সহজ লাগে। তবে আসলে সেগুলো সহজ হয়ে থাকে না। বেশ জটিল হয়ে থাকে। সেগুলো খুব গভীর করে ভাবলে বোঝা যায়। ফিজা এখন আব্রাহাম আর নিজের বোনের ব্যাপার টা তেমন করে দেখছে। বোন তার যথেষ্ট সুন্দরী। লেখাপড়া আছে। ভালো পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসে। এখন হঠাৎ করে যদি সে তার দেবর এর সাথে বিয়ে দেয় তাহলে ব্যাপার টা কেমন হবে? আশেপাশের মানুষ কি বলবে? যদিও মানুষ কি বলবে এগুলো ভাবা একটা বোকামি। তবুও কারোর মুখে ধরে রাখা যায় না-কি? সেধে সেধে কথা শুনার তো মানে হয় না। তারচেয়ে বড়ো কথা আব্রাহাম মেহরিন কে ভালোবাসে না। যদি ভালোবাসতো তাহলে সেটা অন্য কথা। ফিজা বিছানায় বসে আছে। মা বোনও রয়েছে। ফিজা হঠাৎ করে বললো,
-“ওরা লোভী বলবে না আমাদের?”
মেহরিন এর বুকের ভেতর ছেদ করে উঠলো। সে কি ভুলে গিয়েছিল তারা মধ্যবিত্ত? বাবা নেই ভাই নেই। বোনের রূপ দেখে বড়ো পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসছিলো। এখন আবার ছোট বোন কে দিলে লোকে বলবে না লোভী? একই ঘরে দুই মেয়ে? তারউপর আব্রাহাম তো তাকে ভালোবাসে না। মেহরিন বোনের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। কিছু সময় নিশ্চুপ শান্ত থেকে বললো,
-“আপু তুমি এ-সব বলো না। আমি তোমার কথার অমান্য করবো না তুমি জানো।”
———
দুপুরে হতে হতে আব্রাহাম আবরাজ এর কেবিনে এলো। আবরাজ তখন সামনের কম্পিউটার স্ক্রিনে তাকিয়ে। আব্রাহাম গিয়ে কেবিনে থাকা সোফায় বসলো। সেন্টার টেবিলে রাখা খাবার বক্স। বাড়ি থেকে পাঠিয়েছে ইলা বেগম। আব্রাহাম সব রেডি করলো। হাত ধুয়ে নিজে খাবার সার্ভ করলো। আবরাজ এলো পাঁচ সাত মিনিট এর মধ্যে। হাত ধুয়ে এলো ওয়াশ রুম থেকে। সিঙ্গেল সোফা টায় বসে প্লেট হাতে নিলো। খাবার খাওয়ার সময় কোনো কথা বললো না কেউ। খাবার শেষ হতে সাব্বির কোত্থেকে এসে বক্স নিয়ে গেলো। আবরাজ বললো,
-“বলো?”
-“মেহরিন,,,
আব্রাহাম আবরাজ কে সম্মান শ্রদ্ধা ভয় সব টাই করে। বড়ো ভাই হিসেবে তাকে যথেষ্ট মান্য করে। কথা যা-ও সময় নিয়ে বলতে যাচ্ছিলো তখন আবরাজ আব্রাহাম এর কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বলে উঠলো,
-“ভুলে যাও ওর কথা। আমার বউ মানবে না এটা।”
-“বিয়ে আমি ওকেই করবো।”
আব্রাহাম সাথে সাথে শক্ত স্বরে বললো। আবরাজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
-“কেনো করবে? ভালোবাসো তুমি ওকে?”
-“তুমিও বাসতে না ভাবি কে।”
আব্রাহাম অনেক ভেবে কথা টা বললো। আবরাজ প্রতিত্তোর করে না। বসা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। ব্লেজার টেনেটুনে ঠিক করে বললো,
-“ভেবে দেখো। ফিজা নিজের বোনের লাইফ নিয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ করবে না।”
এরপর আবরাজ বেরিয়ে গেলো। আব্রাহাম দুই হাতে মুখ ঢেকে মাথা নিচু করে নিলো। বিড়বিড় করে বললো,
-“ভালোবাসি না। বাট আমার ওকেই লাগবে। প্রথম অনুভূতি ভোলার জন্য হলেও আমার ওকে চাই। এরজন্য যদি আমাকে স্বার্থপর উপাধি পেতে হয়, তবে আমি স্বার্থপরই হতে চাই।”
#চলবে…..
[খাপছাড়া হয়েছে না! আজ দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো না। গোছাতে পারছিলাম না। তবুও দিলাম। মানিয়ে নিয়েন একটু কষ্ট করে। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]