#সুগন্ধি_ফুল
#পর্ব_৩৭
#জান্নাত_সুলতানা
আবরাজ যখন বাড়ি ফিরলো তার বউ তখন লিভিং রুমে বসে। আবরাজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বউয়ের দিকে একবার এরপর মায়ের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
-“নিচে নিয়ে এসছে কে ওকে?”
ইলা বেগম আঁড়চোখে চাইলো ফিজার দিকে। নিচে তিনি নিয়ে আসে নি। ইচ্ছে ও ছিলো না নিয়ে আসার। তবে ফিজার বারবার বলাতে তিনি না করতে পারে নি। মেহরিন ও চুপ। ফিজা কেউ কিছু বলার আগে নিজে থেকে জবাব দিলো,
-“আমি এসছি আবরাজ কেউ নিয়ে আসে নি। আপনি খাবেন এটা? একটা দেই?”
বলতে বলতে একটা পাকোড়া হাতে ওঠে এলো। আবরাজ মুখ ঘুরিয়ে নিলো। প্যান্ট এর পকেটে হাত গুঁজে ফিজা কে উপেক্ষা করে সিঁড়ি বেয়ে চলে গেলো নিজের রুমের দিকে। ফিজা ঠোঁট গোল করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। এরপর নিজের মুখে পুরে নিলো সেটা। আস্তে আস্তে পা ফেলে সিঁড়ির দিকে এলো। পেছনে ইলা বেগম। রুমের সামনে রেখেই তিনি চলে গেলো। ছেলের মতিগতি ভালো নয়। ফিজা রুমে ঢুকে গিয়ে বিছানায় বসে গেলো। আবরাজ রুমে নেই। ওয়াশ রুমে সে। বেরিয়ে এলো দশ মিনিট পরে। এসেই কোনো দিকে না তাকিয়ে লাগেজ বের করলো। আলমারি খুলে সেখান থেকে কয়েক সেট কাপড় নিয়ে নিলো সেটাতে। হালকা গোলাপি রঙের টাওয়াল টা এক টানে খুলে প্যান্ট পড়ে নিলো। ফিজা ঠোঁট কামড়ে ধরে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো। নির্লজ্জ বেহায়াপনার একটা সীমা থাকা জরুরি। যা এই পুরুষের মধ্যে বিরল। ফিজা যখন আবরাজ এর দিকে তাকালো তখন দেখলো আবরাজ শার্ট ও পড়ে নিয়েছে। চুল ঠিকঠাক করে পারফিউম দিচ্ছি। ফিজা বুঝে না কোথায় যাচ্ছে আবরাজ? কেনোই বা চাচ্ছে? তাকে কিছু বলেও নিয়ে আগে। ফিজা জিজ্ঞেস করলো,
-“আপনি কোথাও যাচ্ছেন?”
-“হ্যাঁ।”
-“কোথায়? আগে বলেন নি তো!”
আবরাজ এর নির্লিপ্ত কণ্ঠে ফিজার বুক দুরুদুরু শুরু হলো। অস্থির লাগে। তবুও নিজে কে সামলে প্রশ্ন করে। আবরাজ আবারও আগের ন্যায় কণ্ঠে জবাব দিলো,
-“গত চার বছর যেখানে ছিলাম।”
-“এভাবে কিভাবে আপনি যেতে পারেন আবরাজ?”
-“তাহলে?”
-“ভালোবাসেন না আমায়?”
আবরাজ একটু আগে পরিহিত শার্ট এর বোতাম গুলো খুলতে খুলতে এগিয়ে আসে ফিজার দিকে। এরপর মেয়ে টার শরীর এর ওপর উঠে হাত চেপে ধরলো বিছানার সাথে। ফিজা চমকে উঠলো। তার অন্তর আত্মা কাপে। এই মূহুর্তে কিছু করবে না-কি আবরাজ? এতো টা পাষাণ নয় আবরাজ। তবুও মেয়ে টা ভয়ে আছে। এই মূহুর্তে কিছু করলে তাকে মৃত্যু যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে। আবরাজ ফিজার ভাবনার মাঝে ই কপালে চুমু খেলো। একদম শান্ত নিস্তেজ গলায় ডাকলো,
-“সুগন্ধি ফুল।”
ফিজা কথা বলতে পারে না। গলা কাঁপছে। এতোটা আবেগি আবরাজ কে সে কখনোই দেখে নি। এভাবে একদম মানাচ্ছে না তার অসভ্য পাষণ্ড আবরাজ খান কে। ফিজা আবরাজ এর চোখের দিকে তাকিয়ে। আবরাজ বউয়ের দেহ টা নিজের উন্মুক্ত লোমহীন বক্ষে চেপে ধরলো। আচমকাই এমন ঘটনায় একটু হকচকিয়ে গেলো ফিজা৷ নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে বউ কে নিজের সাথে ধরে রইলো। ঘনিষ্ঠতা বাড়তেই ফিজার মন টা কেমন করলো। কিছু হারিয়ে যাওয়ার বেদনা যেনো বুক টা বড্ডো ফাঁকা মনে হলো। আবরাজ এরমধ্যে বলে উঠলো,
-“তোমায় কষ্ট দেওয়া প্রতিটা মানুষ কে এটার মূল্য দিতে হবে সুগন্ধি ফুল।”
নিস্তব্ধ পরিবেশ টা ফিজার নিকট বড্ডো ভয়ংকর লাগলো। সাথে সাথে আবরাজ এর পিঠে হাত রাখলো। আঁকড়ে ধরলো নিজের সাথে। অসহায় কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“কি হয়েছে আপনি এমন কেনো বলছেন? কি হয়েছে আমার?”
আবরাজ চোখ বন্ধ করে ঢোক গিলে নিলো। নিজে কে সামলে নিয়ে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় বউয়ের চুলের ভাঁজে মুখ গুঁজে ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। মোলায়েম স্বরে বললো,
-“একা থাকা যায় না তো। খুব তাড়াতাড়ি আবরাজ খান তার সুগন্ধি ফুল এর কাছে ব্যাক করবে। আবরাজ খানের সুগন্ধি ফুল।”
ফিজা আবরাজ এর কথায় না হেঁসে পারলো না। কি অদ্ভুত সব কথাবার্তা। ঘুরেফিরে সব এক যায়গায় চলে আসে৷ আবরাজ বউ কে স্বাভাবিক হতে দেখে বলে,
-“যেতে হবে। দশ টায় ফ্লাইট।”
-“অপেক্ষা করে থাকবো।”
ফিজা চোখ বন্ধরত অবস্থায় বলে। আবরাজ বউ কে ছেড়ে দিয়ে আবার ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় বউয়ের কপালে। ফোলা গালে। অসুস্থতার জন্য মুখের অবস্থা করুন। আবরাজ এর ভালো লাগে। চিকনা শরীর হঠাৎ একটু পরিবর্তন আসা শুরু করেছিলো মাত্র। হয়তো মাতৃত্বের ছোঁয়া গায়ে লেগেছিল বলে। কিন্তু সর্বশেষ সেটা আর কপালে সইলো না। আবরাজ সব ভাবনা বাদ দিয়ে বললো,
-“আমার জন্য।”
ফিজা মৃদু হেঁসে মাথা নাড়লো। বুকের ভেতর রক্তক্ষরণ অথচ হাসি মুখে বিদায় দিতে হচ্ছে অপ্রিয় থেকে প্রিয় হওয়া সেই ব্যাক্তিগত পুরুষ কে। আবরাজ এর লাগেজ টা এসে সাব্বির বাইরে থেকে নিয়ে গেলো। ফিজা আবরাজ এর পেছনে আসতে নিলেই আবরাজ বলে উঠলো,
-“একদম নড়বে না। নিচে একদম যাবা না। আম্মু নয়তো মেহরিন থাকবে সাথে। কিছু প্রয়োজন হলে তাদের বলবে নয়তো সার্ভেন্ট ডাকবে। নেক্সট টাইম তোমাকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে রাজী নই আমি।”
ফিজা আবার বিছানায় বসে গেলো। আবরাজ শেষ বারের মতো বউয়ের কপালে আবার চুমু খেলো। এরপর হাসি-হাসি বদনখানি নিয়ে কক্ষ ত্যাগ করলো। ফিজা ফ্যাল ফ্যাল করে শুধু তাকিয়ে রইলো।
——
রাত অনেক হয়েছে। সবার খাওয়াদাওয়া শেষ। সব দিক গুছিয়ে ইলা বেগম ফিজার রুমে এলো। খাবার দিয়েছিল তারপর আর আসা হয় নি। এখন এসে দেখলো মেহরিন বসে আছে। ইলা বেগম অবাক হলো। মেহরিন রুমে না গিয়ে এখানে বসে? আব্রাহাম এর সাথে আবার ঝামেলা হলো কি? কে জানে। যদিও আব্রাহাম মেহরিন দু’জনই শান্ত। তারপরও আব্রাহাম আবার রাগী ও বটে। তিনি মেহরিন এর সাথে কথা বলে বুঝতে পারলেন আসলে তেমন কোনো ব্যাপার নেই। মেহরিন বোনের সাথে থাকতে এসছে। এক পর্যায়ে মেহরিন বলে উঠলো,
-“আন্টি আমি থাকি আপুর সাথে?”
ইলা বেগম মৃদু হেঁসে বলে উঠলো,
-“তার কোনো দরকার নেই। আমি থাকছি। তুমি যাও।”
মেহরিন আর কিছু বলার মতো মেয়ে নয়। চুপচাপ বেরিয়ে এলো। পেছনে শাশুড়ী বউয়ের আড্ডার আওয়াজ বলছে দু’জনের মধ্যে ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
মেহরিন রুমে এসে লাইট অফ দেখলো। ড্রিম লাইটও বন্ধ। কিছু দেখা যাচ্ছে না। হাতে নেই মোবাইল। সে দরজা হাতরে কোনো রকম একটু এলো। রুমের মধ্যিখানে এসে মেহরিন শক্ত পোক্ত কিছুর সাথে খুব জোরে ধাক্কা খেলো। চমকে উঠলো মেহরিন। ভূতের ভয় আগে থেকে রয়েছে মেয়ে টার। সেক্ষেত্রে চোখ বন্ধ করে কান চেপে ধরে বলতে লাগলো,
-“আব্রাহাম ভূত, ভূত, ভ,,,
-“এই এই চুপ বেয়াদব মেয়ে। জাস্ট স্টপ স্টুপিট মেয়ে।”
মেহরিন তখনও বলেই যাচ্ছিলো। আব্রাহাম এর ধমক খেয়ে চুপসে গেলো বেচারি। আব্রাহাম লাইট অফ করে রাগী চোখে মেহরিন এর দিকে তাকালো। মেহরিন লজ্জায় মাথা নত করে নিলো। আব্রাহাম ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠলো ,
-“কোথায় গিয়েছিলে তুমি? রাত ক’টা বাজে দেখছো?”
-“ইয়ে মানে আপুর সা,,,
মেহরিন মিনমিন করে বলতেই যাচ্ছিলো তখন আবার আব্রাহাম ধমকে উঠলো। বললো,
-“এই তোতলাবা না একদম। ডিরেক্ট কথা বলবে।”
সহজসরল মানুষ যেমন সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে নেয় আবার কিছু কথা খুব গভীর দাগ কাটে তাদের মনে। আব্রাহাম এর ধমকের প্রতিটা কথায় হঠাৎ করে মেহরিন এর মন খারাপ হলো। কিছু না বলে গিয়ে বিছানার একপাশে শুয়ে পড়লো গুটিশুটি মেরে। আব্রাহাম রাগ আরও বাড়লো বৈ কমলো না। দরজা বন্ধ করে এলো ঠাশ করে। এরপর লাইট অফ করে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। মেহরিন এর এবার কান্না পেলো। আব্রাহাম কি কোনো ভাবে তাকে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেছে? যার জন্য সে এখন বিরক্ত তার ওপর!
#চলবে…..
[কি যে লিখেছি নিজেও জানি না। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]