সুগন্ধি ফুল পর্ব-৪১

0
1

#সুগন্ধি_ফুল
#পর্ব_৪১
#জান্নাত_সুলতানা

-“সুইটি গার্ল ওপেন দ্য ডোর। প্লিজ।”

চমকে উঠলো ফিজা। জুনায়েদ কণ্ঠস্বর খুব বিশ্রী শোনাল ফিজার নিকট। আবরাজ শুনেছে। শরীর এর শিরা-উপশিরায় রগ টগবগ করে উঠলো। তবুও সে দূরে। কিছু করার মতো সাধ্য নেই তার আপাতত। নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে সে ফিজা কে বললো,

-“দরজা খুলবে না।”

ফিজা কিছু বলার আগেই কল লাইন ডিসকানেকটে হয়ে গেলো। ফিজা ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলো। তবে দরজায় অনবরত করাঘাতে মেয়ে টা চমকে উঠলো। ফোন হাত থেকে বিছানায় পরে গেলো। দরজার ভাঙা বা লক খুলে ফেলা কোনো ভাবে পসিবল নয়। তবুও ফিজার মনে ভয় ধরলো। তবে চুপ করে ফোন হাতে নিয়ে কল করলো মিলন খান কে। ফোন ধরতে ফিজা বললো,

-“বাবা মা’কে নিয়ে আপনার ছেলের রুমে আসুন একটু।”

মিলন খান অস্থির হলেন। ইম্পর্ট্যান্ট কাজে তিনি বাহিরে আছে এই মূহুর্তে। তাই অস্থির কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“কি হয়েছে মা? এতো রাতে কোনো প্রবলেম?”

-“বাবা আসুন না একটু।”

-“কিন্তু আমি তো বাড়িতে নেই আম্মা। দাঁড়াও তোমার শাশুড়ী কে কল দিয়ে ব,,,।”

এটুকু কথা শেষ করার আগেই কল কেটে গেলো। মিলন খান অস্থির হলো। বাড়িতে স্ত্রী কে কল দিলো। এক এক করে গার্ড কল দিতে লাগলো।

ব্যালকনির বিশাল কাঁচের দরজা টা ঠেলে কক্ষ প্রবেশ করলো জুনায়েদ। ফিজা নিজের কান থেকে ফোন টা নামিয়ে চোখের সামনে ধরলো। তৎক্ষনাৎ নজরে এলো ফোনের চার্জ শেষ। যার ফলশ্রুতি ফোন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মোবাইল ঠিক কবে চার্জে দিয়েছে ফিজার মনে পরে না। খুব সম্ভবত আবরাজ যেদিন গেলো আগেরদিন রাতেই আবরাজ চার্জেম লাগিয়ে ছিলো। খুব বেশি ফোন ইউজ করা হয় নি বলে এতোদিন অন ছিলো এটা। ফিজা নিজের ভাগ্যের ওপর চরম হতাশ হলো। ফোন টা রেখে শোয়া থেকে ওঠে বসলো। পাশ থেকে ওড়না নিয়ে শরীরে ভালো করে পেঁচিয়ে নিলো। জুনায়েদ ফিজার দিকে তাকিয়ে বিশ্রী ভাবে হাসলো। জিহ্বা দিয়ে নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে বলে উঠলো,

-“ডু ইউ নো! ফাইভ মান্থ ওয়েট করেছি। জাস্ট ওয়ান চান্স। অ্যান্ড ফাইনালি পেয়ে গেলাম।”

-“কি সব যা-তা বলছেন জুনায়েদ কবির? আর আপনি এখানে কি করে এলেন? কেনো এসছেন?”

ফিজার সব প্রশ্ন অগ্রাহ্য করে জুনায়েদ আপন মনে বলতে লাগলো,

-“আবরাজ আর আমি না প্রতি নাইটে বারে যেতাম। প্রচুর ড্রিংকস করতাম আমি। মেয়েদের ভীড় জমে যেতো। তবে আমার জন্য না। তোমার হাসবেন্ড এর জন্য। কিন্তু ওর তো এ-সব ইন্টারেস্টই নেই। সারাক্ষণ কাজ নিয়ে থাকতো। তবে আমাদের প্রফেশন টা এমন, যে এ-সব থেকে বেশি দিন দূরে থাকা ইম্পসিবল। নারী নেশা ভয়ংকর হয়। কিভাবে যেনো তোমার হাসবেন্ড ও,,,

-“জাস্ট স্টপ দিস। আই নো আমার হাসবেন্ড ভালো ছিলো না। খারাপ। মেয়েদের সাথে বেড শেয়ার করতো। এ-সব তো? হু। তাহলে এটা কেনো বলছেন না তাকে ড্রাগস দেওয়া হতো এসব করার জন্য। কেনো বলছেন না? হোয়াই?”

ফিজার চিৎকার যেনো কানের পর্দা অব্ধি ফেটে যাওয়ার জোগাড়। জুনায়েদ থতমত খেলো। চেহারায় এতো সময় যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ পাচ্ছিলো মূহুর্তে যেনো সব হাওয়া হয়ে গেলো। মনে মনে বেশ অবাক হলো। ফিজা কিভাবে জানে এ-সব? তবে কি আবরাজ সব বলে দিয়েছে বউ কে? না-কি ফিজা যে এ-সব জানে আবরাজ সেটা জানে না? জুনায়েদ এতো কিছু ভাবতে চাচ্ছে না। যত দ্রুত সম্ভব কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। তাই সে-সব কথা এভয়ড করে বলে উঠলো,

-“ইউ নো হোয়াট তুমি ভীষণ সুন্দর। তোমার চেহারা থেকে শুরু করে ফিগার ওয়াও। ফার্স্ট যেদিন দেখেছিলাম সেদিন তোমাকে আমার বেডে একবার হলে-ও চাই। নিজের সাথে প্রমিজ করেছিলাম। অ্যান্ড ফাইনালি নাউ আইএম সাকসেস।”

ফিজার এতো সময় ভয় লাগলে-ও জুনায়েদ এর কথায় রাগে শরীর কাঁপতে লাগলো। হাত মুঠোবন্দী করে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। জুনায়েদ নিজের শার্ট এর বাটন খুলতে খুলতে ফিজার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। ফিজা বিছানার এ পাশে। জুনায়েদ ঘুরে ওপাশ থেকে আস্তে-ধীরে এগিয়ে আসে। আর বাজে দৃষ্টিতে মেয়ে টার দিকে তাকিয়ে। ফিজার শরীর ঘৃণায় ঘিনঘিন করে। বিছানার একপাশ বেড সাইড টেবিল। আরেক পাশে ড্রেসিং টেবিল। ফিজার পাশে বেড সাইড টেবিল টা। সেখানে মেয়ে টার চুলের একটা স্টিলের চুল বাঁধার কাঠি পরে আছে।

-“ইউ আর লুকিং সো হট। কেউ জানবে না। তুমি আমি। জাস্ট একবার। টার্স্ট মি আবরাজ এর চেয়ে দিগুণ মজ,,,

যা বলা হয়েছে এটুকুই যথেষ্ট ছিলো নয় কি? এর বেশি শোনার মতো নারী সামনে দাঁড়ানো এই ফিজা? মোটেও না। যে সামন্য কারণে স্বামী কে আঘাত করতে পিছপা হয় নি। সে পরপুরুষের মুখে এমন জঘন্য কথা মেনে নিবে? জুনায়েদ যখন নিজের পেটের দিকে চাইলো। তখন শুধু সাদা শার্টে লাল তরল পদার্থ দেখতে পেলো। সেই সাথে দরজার লক খুলে কক্ষে কেউ প্রবেশ করলো। ফিজা কাঠি টা আলগোছে ছেড়ে দিলো। ঘাড় বাঁকা করে দরজার পানে তাকাতেই সাব্বির এর দেখা পেলো। সাথে ইলা বেগম। সাব্বির দু’জন গার্ড কে নিয়ে এসে জুনায়েদ কে ধরে ফেললো। তখনও কেউ দেখে নি জুনায়েদ এর আঘাত। ফিজা কে এসে ইলা বেগম জড়িয়ে ধরে নিলো। উনার চোখ মুখ আতংকিত। অস্থিরতা। ভয়। ভীতু স্বরে বলে উঠলো,

-“তোর কিছু হয় নি তো? আমার প্রথম থেকে সন্দেহ হচ্ছিল। শুধু ছেলের বন্ধুত্বের খাতিরে বাড়িতে থাকার পারমিশন দিয়েছিলাম। নিয়ে যাও এই শয়তান টাকে।”

জুনায়েদ এর দিকে ঘৃণিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো ইলা বেগম। জুনায়েদ এর নড়চড় না দেখে একজন গার্ড ওকে ধাক্কা দিতে হাঁটু ভেঙে পরে গেলো। একজন গার্ড সাব্বির এর দিকে তাকিয়ে বললো,

-“স্যার ব্লাড।”

-“যা ইচ্ছে হোউক। নাটক সব। নিয়ে যাও ওকে।”

বলে ফিজার সাথে কথা বললো। আশ্বস্ত করলো কিচ্ছু হয় নি। হবে না। স্যার তাকে ফোন করে আগেই ইনফর্ম করে দিয়েছিলো। তবে আসতে একটু লেইট হয়েছে। তারজন্য ক্ষমা চাইলো। গার্ড জুনায়েদ কে নিয়ে যাওয়ার প্রায় অনেক সময় পর সাব্বির বেরিয়ে এলো। মোবাইল বের করে কল লাগালো আবরাজ এর কাছে। ওপাশের ব্যাক্তি বোধহয় এটার অপেক্ষায় ছিলো। সাথে সাথে কল রিসিভ করলো। সাব্বির আবরাজ কে কিছু বলতে না দিয়ে নিজে বলে উঠলো,

-“স্যার ম্যাম সম্পূর্ণ সেইফ জোনে আছে। বড়ো ম্যাডাম সাথে আছে উনার। আমি জুনায়েদ এর ডিটেইল আপনাকে পিকচার সহ ই-মেইল করছি আধঘন্টার মধ্যে।”

-“শোনো, ওর কিছু করবে না কেউ। আমি স্বচক্ষে ওর কলিজা টা দেখে নেবো। ফাস্ট ব্যাক করছি। ওয়েট এন্ড সী।”

আবরাজ এর কথায় সাব্বির সম্মতি দিলো। নিজেদের গ্যারেজের পেছনের গুদামঘরে রাখা হয়েছে জুনায়েদ কে। একজন ডক্টর সহ সাব্বির সেখানে উপস্থিতি হলো। জুনায়েদ এর জ্ঞান নেই। একটা পাটের বস্তার ওপর দেহটা ফেলে রাখা। সাব্বির বেশ কিছু পিকচার নিলো। সেগুলো আবরাজ কে সেন্ট করলো। আবরাজ শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছিল মাত্র। টাওয়াল গলায় ঝুলিয়ে সেটা দিয়ে ভেজা চুল শোঁকাচ্ছে। তখন নোটিফিকেশন এর শব্দে ঠোঁটে পুরুষ টার বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো। ফোন হাতে নিয়ে নোটিফিকেশন চেক করতেই শান্ত হয়ে গেলো। কিছু পিকচার সাথে,একটা ছোট বার্তা “স্যার ম্যাম আঘাত করেছে ওকে।” ব্যাস এটুকুই আবরাজ খান এর বিখ্যাত বাঁকা হাসি আসার জন্য যথেষ্ট ছিলো। পুরুষ টা বিড়বিড় করে আওড়াল,

-“উই হ্যাভ টু সি। মিসেস আবরাজ খান, দ্য ওয়াইফ অব আবরাজ খান! সুগন্ধি ফুল।”

——

নাজুক মেহরিন স্বামীর সংস্পর্শে এসে আরও নেতিয়ে গেলো। বিবাহিত জীবনে প্রথম মধুচন্দ্রিমা শেষমুহুর্ত ছিলো সুখের। যদি স্বামী এতো টা সেনসিটিভ হয়। তাহলে দুঃখের তো প্রশ্নই আসে না। প্রতিটা স্পর্শ যেনো তাকে ঘায়েল করছিলো আব্রাহাম। যখন আব্রাহাম পাশে শুয়ে মেহরিন এর নাদুস-নুদুস দেহ টা নিজের উন্মুক্ত দেহের সঙ্গে টেনে নিলো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে রমণীর মায়াবী নাদুস-নুদুস মুখখানা ভেসে উঠলো। বহুদিন পর যেনো মিরাকল ঘটলো। কিছু সময় পূর্বের ঘটনা থেকে এমন টা হয়েছে নাকি ব্রেইনের এখনো মেয়ে টার সঙ্গে কাটানো মূহুর্তে জন্য এমন হচ্ছে! আব্রাহাম জানে না। উত্তর নেই। মেহরিন এর শরীর একটু বল আসতেই মিনমিন করে বলে উঠলো,

-“গোসল দিতে হবে।”

আব্রাহাম শুনলো। মেহরিন কে ছেড়ে দিয়ে ওঠে বসলো। মেহরিন চাদর টানতে আব্রাহাম ভ্রু কুঁচকে চাইলো। জিজ্ঞেস করলো,

-“এনি প্রবলেম?”

-“জামা নাই।”

-“কোথায়?”

-“আমি কি করে জানব আপনি অন্ধকারে কোথায় ফেলছেন!”

মেহরিন এর মুখের দিকে তাকিয়ে আব্রাহাম এর ঠোঁট অটোমেটিক প্রসারিত হলো। বাঁ হাতে মাথা চুলকে এদিক-ওদিক তাকিয়ে জামা দেখতে পেলো না। নিজের শার্ট টা পায়ের কাছে মেঝেতে পরে। আব্রাহাম সেটাই হাতে তুলে নিলো। মেহরিন এর দিকে না তাকিয়ে শার্ট এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,

-“পরে নাও এটা। তোমার হাঁটু সমান হয়ে যাবে।”

আসলেই হয়ে যাবে। শার্ট ঢিলাঢালা লং। মেহরিন এর শরীর কাপে। সে কখনো কল্পনা ও করে নি কোনো দিন এমন কিছু হবে। আগে যখন আব্রাহাম কে সে দেখতো। তখন তাকাতো। বুকের ভেতর দুরুদুরু শুরু হতো। মানুষ টার শরীর এর সঙ্গে প্রতিটি শার্ট, টি-শার্ট যেনো রাজকীয় সৌখিনতা ফুটে উঠতো। বেশ লাগে লম্বাটে গড়নের বলিষ্ঠ দেহের ফরসা শরীরে মানুষ টাকে। কি নিদারুণ সত্যি এটা এই সুদর্শন আব্রাহাম খান তার স্বামী। একান্তই নিজের। ব্যাক্তিগত একজন মানুষ। যার ভাগে শুধু সেই ভাগিদার।

মেহরিন যখন ওয়াশ রুম গেলো আব্রাহাম আঁড়চোখে চাইলো। পেছন থেকে মেয়ে টার চুলে পিঠ একদম সম্পূর্ণ ঢেকে আছে। আব্রাহাম আস্তে করে ঢুক গিলে সিগারেট ধরালো। বেশ কয়েকবার টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়লো। এটার নেশা তার আগে ছিলো না। দেশে আসার পর-ই হয়েছে। যখন নিজের মনের গহীনে থাকা রমণী কে নিজের ভাইয়ের বউ রূপে দেখলো। আব্রাহাম মনপ্রাণ দিয়ে চাইলো। এই নেশা যেনো তার কেটে যায়। সে যেনো এই ভোলাভালা স্বভাবের মেহরিন কে ভালোবাসতে পারে। কোনো ভাবে যেনো মেয়ে টা ভিক্টিম না বনে যায়।

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]