সুগন্ধি ফুল পর্ব-৪৫

0
2

#সুগন্ধি_ফুল
#পর্ব_৪৫
#জান্নাত_সুলতানা

[পর্ব টা একটু রোমান্টিক, পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]

ফিজা রুম টা ঘুরঘুর করে দেখতে লাগলো। কত যত্ন করে যে এগুলো সাজানো হয়েছে জিনিস গুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ফিজা এক মুঠো চুড়ি হাতে তুলে নিলো। সেগুলো আবরাজ এর হাতে দিয়ে নিজের হাত সামনে রাখলো। আবরাজ যত্ন করে বউয়ের হাতে চুড়ি গুলো পরিয়ে দিতে লাগলো। ফরসা চিকন হাতে সাদা পাথর এর চুড়ি জোড়া দারুণ আকর্ষণীয় হয়ে উঠলো হাত খানা। ফিজা হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,

-“বললেন না তো এ-সব কখন করলেন?”

-“মেহরিন এর বিয়ের আগের দিন তুমি বাড়ি গিয়েছিলে। তখন।”

-“অনেকদিন আগের কথা। তাহলে এতোদিন কেনো দেখান নি?”

ফিজার প্রশ্ন। আবরাজ গোপনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চুড়ি পরানো শেষ ঝুঁকে বউয়ের হাতের উলটো পিঠে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। এরপর বললো,

-“বাড়ি ফিরে সারপ্রাইজ দেবো ভেবেছিলাম। বাট রাতে তো নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গিয়ে ছিলাম।”

ফিজার ফুরফুরে মন টা তৎক্ষনাৎ খারাপ হয়ে এলো। বুক টা দুমড়ে মুচড়ে যেতে লাগলো। খুব কি ক্ষতি হতো যদি এমন টা না হতো! ঘাড়ে শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে একটু চমকে গেলো। চোখ তুলে আবরাজ খানের নেশাভরা দৃষ্টির সম্মুখীন হলো। আবরাজ বউ কে কোলে তুলতে ফিজা আবরাজ এর গলা জড়িয়ে ধরলো। আবরাজ বউ কে নিয়ে রুমে এসে বিছানায় রাখলো৷ আবরাজ শার্ট এর বাটন খুলতে হাত রাখতে ফিজা বাঁধ সাধিল। শোয়া থেকে ওঠে বসলো। নিজে আবরাজ এর শার্ট এর বাটন খুলে দিলো। আবরাজ বউয়ের চুলের গোছা টেনে ধরে ঘ্রাণ নিতে ব্যাস্ত চুল থেকে। মেয়ে টার শরীর এর সঙ্গে সঙ্গে চুল থেকে-ও মাতাল করা এক সুগন্ধি ভেসে আসে। যা আবরাজ খান কে পাগল হতে বাধ্য করে। এই সুগন্ধি যেনো সে কোথাও পায় না। এটা একমাত্র সে বউয়ের কাছে পেয়ে থাকে। প্রথমদিন থেকে পাচ্ছে সে। নামের সঙ্গে মেয়ে টার আত্মার সম্পর্ক যেনো। নাম আর শরীর থেকে আসা সুগন্ধি দুটোই মিলে যাচ্ছে কাকতালীয় ভাবে।
ফিজার কাঁধের দিকের জামার হাতা টেনে নামাতে ফিজা আবরাজ এর হাত ধরে ফেললো। আবরাজ সাথে সাথে থেমে গেলো। পাগলামি থামিয়ে বউয়ের মুখের দিকে তাকালো। ফিজা নিস্তেজ গলায় বললো,

-“ডক্টর নিষেধ করেছে আবরাজ।”

-“আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ সুগন্ধি ফুল। আমি নিজে কে কন্ট্রোল করতে পারছি না। আমার মনে হচ্ছে এক যুগ হবে তোমায় আদর করা হচ্ছে না।”

আবরাজ ফিসফিস করে বলে উঠলো। ফিজা নিজে কে বড্ডো অসহায় লাগলো। কিন্তু কিছু করার নেই তো। তবে হঠাৎ করে আবার আবরাজ কে নিজের দিকে টেনে নিলো। আবরাজ বউয়ের অধরে আলতো করে স্পর্শ করলো শুধু। সরে আসতে নিলেই ফিজা শক্ত করে আবরাজ এর টি-শার্ট টেনে ধরলো। পিঠের দিকে নখের আঁচড় পরলো। আবরাজ ভ্রু কুঁচকে তাকাতে ফিজা আবরাজ কে উস্কে দিলো। যা এতোদিন আবরাজ নিজে করে এসছে আজ ফিজা তা করছে। বিস্ময় পুরুষ টার চোখ জোড়া বড়ো বড়ো হয়ে এলো। তবে বউয়ের অধরসুধা পানে সে কার্পন্য করে না। গলায় ঘাড়ে বুকের উপরিভাগে মাতাল করা স্পর্শ দিতে লাগলো। ফিজা ভেবেই নিলো আবরাজ হয়তো তাকে ছাড়বে না আজ। কিন্তু ফিজার ভাবনার ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আবরাজ বউয়ের ওপর থেকে সরে এলো। মেয়ে টার গায়ের পোশাক ঠিকঠাক করে দিয়ে নিজের বুকের ওপর নিলো টেনে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,

-“তোমাকে আমার কাঁদাতে ভালো লাগে সুগন্ধি ফুল। কিন্তু দুঃখে নয়। আমার দেওয়া সুখের স্পর্শে তুমি কাঁদলে আমার নিজে কে সুখী লাগে, ভালো লাগে।”

ফিজা চোখ বন্ধ করে অনুভব করে মানুষ টার হৃৎস্পন্দন। তার মনের মধ্যে অনুভূতির যুদ্ধ করে, আন্দোলন করে। মানুষ টা ভালো না খারাপ সেই যুদ্ধ কে জয় হবে ফিজা সেই নিয়ে আজও অনিশ্চিত।

———-

কালো রঙের গাড়ি টা থেকে নেমে কালো রঙের হুডি পরা এক যুবকের অবয়ব একতলা বাড়ি টার ভেতর প্রবেশ করলো। বাড়ির ভেতর গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে ফোন বের করে কাউ কে কল করলো। প্রথম বার বেজে ফোন কেটে গেলো। রিসিভ করে না কেউ। দ্বিতীয় বার কল করতে রিসিভ হলো। গম্ভীর স্বরে পুরুষ টা বলে উঠলো,

-“গেইটে আসো ফাস্ট। আম্মু কে বলার প্রয়োজন নেই। দাঁড়িয়ে আছি আমি।”

ওপাশ থেকে কিছু বলার আগেই কল কাট করে দিলো পুরুষ টা। এরপর ফোন পকেটে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। মিনিট এক মিনিটে এর মধ্যে কেউ একজন এলো ভেতর ঘরের দরজা খুলে বারান্দায় এসে গেইটে দাঁড়ালো। কল্পনায় ছিলো না। স্বপ্ন ও ভাবতে পারে নি আজ এই পুরুষের সাক্ষাৎ পাবে সে। হতভম্ব হয়ে গেইট খুলে দিলো। খুব সাবধানে আব্রাহাম ভেতরে প্রবেশ করলো। গেইট আলগোছে লাগিয়ে মেহরিন এর হাত ধরে ভেতরে চলে এলো। রুমে ফিরে দরজা লক করে দিলো। মেহরিন হঠাৎ ঘুম ভাঙায় বেচারি ঘোরে আছে। কিছু বুঝতে পারছে না।
আব্রাহাম শরীর থেকে হুডি খুলে নিলো। নিচে কিছু নেই। হুডি খুলতে উন্মুক্ত লোমশ চওড়া শক্ত-পোক্ত বক্ষদেশ মেহরিন এর দৃষ্টচর হলো। গলার নিচের দিকে লাল লাল আঁচড় দেখে গতরাতে কিছু মধুময় মূহুর্ত মনুষ্যপাঠ্যে ভেসে উঠলো। লজ্জা লজ্জিত ভীতু মেহরিন মুখ লুকানোর আশ্রয়টা পায় না। কি করবে না করবে ভাবতে ভাবতে হাত চলে যায় চোখের ওপর। দুই হাতের তালু দিয়ে চোখ আড়াল করে দাঁড়ায়। আব্রাহাম হুডি হাতে নিয়ে মাত্র চুল ঠিক করায় মনোযোগ দিয়েছিল। তবে সামনে দৃষ্টি পরত-ই সাথে সাথে বোকা বনে গেলো সে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিস্তেজ গলায় বলে উঠলো,

-“হোয়াট?”

মেহরিন মাথা এদিক-ওদিক নাড়িয়ে কিছু না বুঝালো। তবে আব্রাহাম মানলো না। নিজের শরীর এর দিকে তাকিয়ে ফের মেহরিন এর দিকে আঁড়চোখে চাইলো। এরপর হাতের হুডি টা চেয়ারে রাখলো। আরও দুই কদম সামনে এলো। মেহরিন এর একদম নিকটে দাঁড়িয়ে মেয়ে টার কোমরে এক হাত রাখলো। ঝট করে নিজের দিকে টেনে নিলো। তবুও মেহরিন চোখের ওপর থেকে হাত সরালো না। আব্রাহাম বললো,

-“হাত নিচে করো।”

মেহরিন সাথে সাথে হাত নামিয়ে নিলো। শরীর টা কেমন কাঁপছে ক্ষণেক্ষণে। আব্রাহাম অনেক টা ঝুঁকে মেহরিন এর কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। মেহরিন আব্রাহাম এর উন্মুক্ত বুকে হাত ঠেকিয়ে বললো,

-“আমার কেমন লাগছে।”

-“কেমন?”

-“জানি না।”

আব্রাহাম আরও ঝুঁকে যখন মেহরিন এর গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো তখনই মেহরিন চমকে উঠলো। আব্রাহাম এর বুকের ওপর রাখা হাত আপনা-আপনি ঘাড়ে চলে গেলো। শক্ত করে খামচে ধরতে পারলো না। শরীর টা যেনো অবশ হয়ে এলো। আব্রাহাম বউয়ের ঘাড় থেকে টুপটাপ বৃষ্টির ন্যায় চুমু খেতে খেতে থুঁতনিতে এসে থামলো। ঠোঁটের কোণায় ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো বেশ কয়েকবার। মেহরিন এপর্যায়ে এসে আব্রাহাম এর চুল খামচে ধরলো। আব্রাহাম সঙ্গে সঙ্গে বউয়ের অধরে হামলা করলো। সিগারেট পোড়া পুরুষালী অধরের সংঘর্ষে পিষ্ট হলো সামনের রমণীর নরম গোলাপের পাপড়ি ন্যায় ঠোঁট। অসহ্য যন্ত্রণা হলো বক্ষদেশ। শরীরে রন্ধনে রন্ধনে ছড়িয়ে পরে সেই যন্ত্রণা। হাঁপিয়ে ওঠে সে। পারে না সামনের পুরুষের সঙ্গে। এক সময় স্থির থাকতে পারলো না এক স্থানে। মানুষ টার দানবীয় হাতের বন্ধনে মুখ টা শক্ত করে ধরে বিছানায় নিয়ে ফেললো শরীর। গলার ওড়না খুলে দূরে ফেলতে মেহরিন দম বন্ধ করে রাখলো। সামনের মানুষ টা বোধহয় বিরক্ত হলো। ঠোঁট ছেড়ে মেয়ে টার মুখের দিকে চাইলো। প্রথমে বিরক্তি নিয়ে তাকালেও পরবর্তীতে মেহরিন এর ভীতু ভয়ার্ত মুখের দিকে তাকিয়ে নিজে কে শান্ত করলো। মেহরিন এর ওপর থেকে সোজা হয়ে ওঠে বসলো পাশে। এরপর পায়ের জুতোর ফিতা খুলতে খুলতে বললো,

-“লেটস ট্রাই এগেইন?”

-“গতকাল রাতের, ,

মেহরিন নিজে কে সামলে সময় নিয়ে বলতেই যাচ্ছিলো কিছু। তবে আব্রাহাম শুনলো না পুরো কথা। তার আগে বলে উঠলো,

-“ইয়েস।”

লাইট অফ করে যখন আব্রাহাম এগিয়ে এলো মেহরিন এর তখন অন্তর কাপে। বুক টা দুরদুর করে। শরীর টায় যেনো এক ফোঁটা শক্তি নেই। ভয়ে না-কি ভালো লাগার অনুভূতির সংমিশ্রণে মেয়ে টা সেই হিসেব মিলাতে পারে না। আব্রাহাম ওর জামার ফিতা টানতে মেহরিন শান্ত হয়ে গেলো। হাত জোড়া তুলে আব্রাহাম এর গলায় জড়িয়ে ধরলো। এ-ই যেনো আহ্বান। কাছে আসার আহ্বান। নিজের সব টুকু উজাড় করে দিয়ে অনুভূতির জানান দেওয়া। একটুও বাঁধা দিলো না স্বামী কে। গতরাতে জন্য নিজে কে অসুস্থ অনুভব করলেও সে-সব পাত্তা দিলো না। যতো প্রশ্রয় দিবে ততই পেয়ে বসবে। এই কথা মিথ্যা নহে। আব্রাহাম তেমন। বউয়ের আশকারা পেয়ে আরও নিজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ করলো বউ কে। বউয়ের সর্বাঙ্গে নিজের স্পর্শ দিতে ভুললো না পুরুষ।

#চলবে….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]