#সুগন্ধি_ফুল
#পর্ব_৪৮
#জান্নাত_সুলতানা
[পর্ব টা একটু রোমান্টিক, পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]
আবরাজের চাহনিতে এক অদ্ভুত আকর্ষণ। চাহনি মারাত্মক। পুরুষ টার মাদকাসক্ত দৃষ্টিতে ফিজার যেনো সর্বাঙ্গ ঝলসে যায়। চোখের অতল গহ্বরে যেনো এক সমুদ্র সমান মোহাব্বত লুকিয়ে। তবে তা কেনো প্রকাশ্যে নয় পুরুষ টার? এ যেনো বিরাট একটা গোলকধাঁধার মধ্যে পরে যায় ফিজা।
সে দৃষ্টি যেনো বিস্ময়কর কোনো যাদুবলে গড়ে। নেশার মতো গভীর। মাতাল করে দেওয়া রকম। ফিজা অনুভব করে। পুরুষটার ভেতর বাহির দু’টো রূপ। কিন্তু কেনো? ভালোবাসে শতভাগ নিশ্চিত। অথচ সে ভালোবাসা কোনো দিনও উচ্চারিত হয় নি। কোনো কথায় বা স্পর্শে ধরা দেয় নি। যেনো পুরুষ টা নিজের অনুভূতিকে আটকে রেখেছে এক অদৃশ্য প্রাচীরের আড়ালে।
তবুও, সেই নীরব মাদকতায় বারবার হারিয়ে যেতে থাকে ফিজা। ভালোবাসা না-কি শুধুই মোহ! এই দ্বন্দ্বে পড়ে কখনো কখনো নিজেকেই প্রশ্ন করে সে।
কিন্তু হৃদয়ের ভাষা কখনো লুকিয়ে রাখা যায় না। সময়ের পরতে পরতে জমে থাকা সব নিঃশব্দ অনুভব একদিন বিস্ফোরিত হয়। ফিজা যখন ঠিক ভাবতে শুরু করে আবরাজ শুধু এক গোলকধাঁধা, ঠিক তখনই আবরাজ এগিয়ে আসে। চোখে ছিল একই রকম মাদকতা। তবে এবার তা ছিল স্পষ্ট ভালোবাসার রঙে রাঙানো।
-“তুমি ছাড়া আমি একটা দিন কল্পনাও করতে পারি না, সুগন্ধি ফুল।”
আবরাজের স্বীকারোক্তি যেনো সব প্রশ্নের উত্তর হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এটুকু যথেষ্ট কি? হয়তো। তবে এতো কিছু এখন ফিজা ভাবতে পারছে না।
আবরাজ যখন মুখটা নামিয়ে ফিজার গলায় মুখ রাখলো। ফিজার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো এক অদ্ভুত শিহরণে। চোখ দুটো বুঁজে এলো আপনাতেই। এক হাত মুঠো করে ধরে নিলো আবরাজের পরিপাটি করে আঁচড়ানো চুল। আর অন্য হাতে জড়িয়ে ধরলো তাকে আরও নিবিড় করে। বাঁধা হাত। অথচ অপার মুক্তির অনুভব!
বিছানায় ধীরে ধীরে নুয়ে পড়তে থাকা ফিজার চোখে-মুখে ভেসে উঠলো ভালোবাসার এক অনাবিল ছায়া। রুম জুড়ে নিঃশব্দতা। যেন দু’জনার হৃদয়ের ধ্বনি ছাড়া কিছুই নেই চারপাশে। নিঃশ্বাসে মিশে আছে এক অপার্থিব ভালোবাসার সুর। যা কক্ষজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে এক গভীর, মায়াবী আবেশ।
আবরাজ বউ কে বিছানায় ফেলে দিতে ফিজা হাত জোড়া আবরাজ এর গলায় জড়িয়ে ধরলো। বাঁধা হাতে। অথচ সুখের এক মূহুর্ত। রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা। এক ভালোবাসার সুর মুখরিত কক্ষ। আবরাজের পাগলামি, পাগল করা হাতের স্পর্শ ফিজা শরীর কেঁপে ওঠে ক্ষণেক্ষণে। নিজের যন্ত্রণা চোখের জলের নদী। বুকের ভেতর জমে থাকা কষ্টগুলো যেন অন্ধকার মিলিয়ে যাচ্ছে। খোলা জানালার হিমেল হাওয়া, নিস্তব্ধ রাত। সব কিছু আছে। তবু কোথাও যেন এক শূন্যতা কুরে কুরে খাচ্ছে মেয়ে টাকে।
আবরাজ অন্ধকারে অনুভব করতে পারে স্ত্রীর চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পরা জলের ধারা। বউয়ের ভেজা চোখের পাতায় নিজের রক্ষ পুরুষালী ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
-“একটু সহ্য করে নাও সুগন্ধি ফুল। আমি তোমার কাছে এসে স্থির থাকতে পারি না। আই রিয়েলি ডোন্ট নো, হোয়াট ইজ দ্যা রিজন ফর দিস!”
“কারণ” সত্যি তো কি হতে পারে এটা? ভালোবাসা না-কি রূপের আকর্ষণ! তবুও ফিজার চোখ বন্ধ হয়ে আসে। অনুভব করে উপভোগ করে প্রতি টা স্পর্শ। পুরুষ টার ঠোঁটের ভাঁজে থাকা অধর নেড়ে নিজের সম্মতি জানান দিলো। গায়ের পোশাক এদিক-ওদিক ছুঁড়ে ফেলে আবরাজ। ফিজার হাত তখন আবরাজ গলায়। আবরাজ উলটো করে আবার বালিশের সাথে চেপে ধরলো মেয়ে টার হাত। ফিজা আলগোছে চোখ বন্ধ করে আবরাজ খানের না বলা এক ভালোবাসার অতল সমুদ্রে হারিয়ে গেলো।
——
মোহিতা বেগম আজ ঘুমতে যাচ্ছে না। মেহরিন খাবার শেষ বেশ কয়েকবার বললো। কিন্তু তিনি রান্না ঘরে কি যেনো করেই চলেছে। মেহরিন ফোনে কিছু কর ছিলো। কিন্তু রান্না ঘরে লাইট জ্বলছে বিধায় ওঠে এলো। রান্না ঘরে যাওয়ার আগেই গেইটে শব্দ হলো। ভ্রু জোড়া কুঁচকে এলো মেয়ে টার। উঁকি দিয়ে মা’কে দেখলো। মোহিতা বেগম খুন্তি হাতে দরজায় দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
-“একটু চুলার ধারে যা তো।”
মেহরিন মাথা ঝাঁকিয়ে রান্না ঘরের দিকে গেলো। তবে কৌতূহল জাগে মনে। কে এলো এতো রাতে? আর মা এতো রাতে কি ই বা রান্না করছে? ফ্রাইপ্যানে গরুর কলিজা ভুনা দেখে সর্বপ্রথম আব্রাহামের কথা মাথায় এলো। রেস্টুরেন্টের স্মৃতির পর্দায় স্পষ্ট হয়ে উঠল সেই রাতের সুন্দর এক মূহুর্ত।
সোফার ঘরে নিজের মায়ের আর স্বামীর কথোপকথন তার স্মৃতিচারণে ব্যাঘাত ঘটালো। অদ্ভুত শীতল এক স্রোত বয়ে গেলো শরীর জুড়ে।
কয়েক মিনিট এর মধ্যে ফিরে এলো মোহিতা বেগম। কিছু পলিথিন ব্যাগ রাখলো। এরপর ফ্রিজ থেকে একটা ছোট পাতিল বের করলো। লেবুর শরবত সেই পাতিলে। গ্লাসে ঢেলে আবার ছুটলেন সোফার ঘরে। মেহরিন পেছন পেছন এসে রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে উঁকি দিলো। আব্রাহাম সোফায় বসে। পেছন টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ছোটছোট চুল গুলো ফরসা মাথা ঘাড় দেখা যাচ্ছে। গায়ে লাল রঙের একটা শার্ট। মেহরিনের চোখ নিভে আসে। মোটেও শার্টের কালার নিয়ে নয়। একবার শাশুড়ী কে না বলে নিশীথরাতের বাদলধারা মাথায় নিয়ে আসে তো একবার বউ কে না বলে গরমে কাটখোট্টা হয়ে চলে আসে। হাহ্ তাতে তার কি? এতে তার কি আসে যায়? মেহরিন তপ্ত শ্বাস ফেলে চুলার কাছে ফিরে এলো। বাটিতে তরকারি আর প্লেটে ভাত নিলো। এরমধ্যে আবার মোহিতা বেগম ফিরে এলো। আরও কয়েক পদ তরকারি নিলেন। মাছ মাংস বেশ হরেকরকম আয়োজন। কিন্তু করলো কখন এতো সব? মেহরিন থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। মোহিতা বেগম সব নিজে নিয়ে গেলো। পানি নিতে এসে তিনি বলে উঠলো,
-“যা রুমে যা।”
এরপর তিনি আবার হন্তদন্ত হয়ে ছুটলেন। আব্রাহামে খেয়ে তো এসছে। তবে শাশুড়ির মন রক্ষার্থে অল্প কিছু খেতে বসলো। মেহরিন ওড়না টা মাথায় দিয়ে বেরিয়ে এলো। রুমে যাওয়ার আগে মিনমিন করে সালাম দিলো। আব্রাহাম একপলক শীতল চাহনি নিক্ষেপ করলো মেয়ে টার দিকে। একটা ঢিলেঢালা গেঞ্জি আর প্লাজু পরনে। ওড়না মাথায় দেওয়া। দৃষ্টি নত করে নিলো আব্রাহাম, তবে সালামের উত্তর করলো না। খাবারে বসে যে। তবে বিড়বিড় করে ঠিক আওড়াল,
-“গাধা মেয়ে কোথাকার।”
মেহরিন রুমে ফিরে গেলো। আব্রাহাম খাওয়া শেষ শাশুড়ির সাথে কি নিয়ে যেনো বেশ সময় নিয়ে আলোচনা করলো। মেহরিন একটু-আধটু শুনলো। খুব সম্ভবত বউ নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছে।
আব্রাহাম রুমে এলো প্রায় ঘন্টাখানেক বাদে। মেহরিন ঘুমে ঢুলঢুল করছে। আব্রাহাম খেয়াল করে নি। ভেবেছে এমনি শুয়ে। শার্টের বাটন খুলতে খুলতে বিছানায় বসে যখন হাত ছড়িয়ে বসে বলে উঠলো,
-“গরম অনেক মেহুরানী।”
মেহরিনের ঘুম তৎক্ষনাৎ পালিয়ে গেলো যেনো। ত্বরিতে শোয়া থেকে ওঠে বসলো। মনঃক্ষুণ্ন হলো বটে। বিত্তশালী এই পুরুষের এমন সাধারন পরিবেশ মানিয়ে নিতে একটু নয় অনেক টা বেশি কষ্ট হচ্ছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সে এদিক-ওদিক কিছু খুঁজতে খুঁজতে বললো,
-“আপনি বসুন আমি বাতাস করি।”
আব্রাহাম মেহরিন আচানক ঘুমঘুম স্বর ঝট করে ধরে ফেললো। ঘাড় বাঁকিয়ে মেয়ে টার পানে চাইলো। আপাদমস্তক দৃষ্টি বুলিয়ে নিলো একবার। মোটা চুলের বিনুনি টা তাকে বড্ডো টানলো। গম্ভীর স্বরে মেহরিন কে ডেকে উঠলো,
-“এদিক দিয়ে এসো। আমার সামনে।”
মেহরিন ভাবলো বাতাস করার জন্য হয়তো সামনে যেতে বলেছে। মাথার ওপর সিলিং ফ্যান টা শোঁ শোঁ আওয়াজ করে চলছে। তবুও এসির হওয়া কি আর ফ্যানের বাতাসের সাথে তুলনা হয়! মেহরিন হাতপাখা টা নিয়ে এসে আব্রাহাম এর সামনে দাঁড়ালো। হাত এদিক-ওদিক দুলিয়ে বাতাস করতে লাগলো। আব্রাহাম সঙ্গে সঙ্গে বাঁধ সাধিল। ঘোরলাগা হিমশীতল গভীর চাহনিতে মেয়ে টাকে কাবু করে নিলো। আব্রাহামের পুরুষালী ঠোঁটের স্পর্শ মেহরিন কানের পিঠে পেলো। শরীরে শিহরণ হলো অসহ্য। হাত থেকে পাখা মেঝেতে পরে গেলো। মেহরিন আব্রাহামের হাতের ওপর একটা হাত রেখে কিছু বলতে যাচ্ছিলো তবে আব্রাহাম তার আগেই মেয়ে টার হাত নিজের হাতের ভাঁজে নিয়ে অধর জোড়া চেপে ধরলো। নরম তুলতে ওষ্ঠপুট মুখে পুরে দীর্ঘ এক অধর চুম্বনে ভরিয়ে তুললো বউ কে। গলায় ঘাড়ে অজস্র অবাধ্য বিচরণ মেয়ে টা মুখে খেই হারিয়ে ফেললো। সমস্ত কথা কণ্ঠনালী রোধ করে।
-“আগে বলো নি কেনো? বেয়াদব মেয়ে মানুষ।”
হঠাৎ এমন কথায় মেহরিন এর বন্ধ চোখের পাতা জোড়া আরও খিঁচে এলো। সে-তো বলতে চাচ্ছিলো। তবে সময় টা তো দিলো না এই পুরুষ। এখন আবার ধমকাচ্ছে। মেহরিন এর কান্না পেয়ে গেলো। একটুতে কেঁদে ফেলার স্বভাব বোধহয় এ-ই জন্মে যাবে না। ক্রন্দনরত স্বরে নাক টেনে বললো,
-“আমি বলতে চাইছিলাম। আপনি যাওয়ার পর-ই সেদিন,,,”
-“ইউ মিন?”
মেহরিন পুরো কথা সম্পূর্ণ করার আগেই আব্রাহাম বলে উঠলো। মেহরিন আবারও মাথা নেড়ে জবাব দিলো,
-“আজ কে তিন দিন।”
আব্রাহাম ধীরে মেয়ে টার ওপর থেকে ওঠে বসলো। গায়ে শার্ট ঠিকঠাক করে প্যান্ট এর বেল্ট লাগিয়ে নিলো। মেহরিন এর গেঞ্জি টা ঠিক করে দিয়ে এলোমেলো চুলে হাত রাখলো। বিনুনি গাঁথতে গাঁথতে গুরুগম্ভীর স্বরে বললো,
-“দীর্ঘ আটাশ বছর কোনো নারীর সঙ্গ দেই নি। এই বলিষ্ঠ সুঠাম দেহে কম নারী আকৃষ্ট হয় নি। তবুও আমি কিংবা আমার মন ওইসবে সায় দেয় নি। ইউ আর লাকি গার্ল মেহরিন সিদ্দিকী, হোয়াই নট তুমি আমার মতো একজন শুদ্ধ, সুপুরুষ পেয়েছো।”
#চলবে….
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]