সুগন্ধি ফুল পর্ব-৫১

0
60

#সুগন্ধি_ফুল
#পর্ব_৫১
#জান্নাত_সুলতানা

আব্রাহাম এসছে পর আর রুমের বাইরে যাচ্ছে না। রুমেই গাপটি মেরে বসে আছে। অথচ এখন রুমে বসে থাকার কথা ছিলো বেচারার বউয়ের। মেহরিন এসেই কাপড় চেঞ্জ করে নিচে চলে গিয়েছে। অতিথি যারা আছে তারা বিদায় নিচ্ছে। সেইজন্য এখনো মেহরিন আসতে পারে নি। আব্রাহাম বারকয়েক উঁকিঝুঁকি মারলো রুমের বাহিরে। অথচ একটা কাকপক্ষী নেই দোতলার করিডরে। মিষ্টি টাও আজ চাঁদ হয়েছে। দেখাই পাওয়া যাচ্ছে না। আব্রাহাম ঘড়ি দেখলো। রাত সাড়ে দশ টা। দেখে বেচারার মুখ টা মলিন হয়ে এলো। অর্ধেক রাত চলে গেলো। এমনিতেই রাত ছোট। সে বাসর কখন করবে? আব্রাহাম নিজের ফ্রেন্ড’দের অব্ধি বিদায় করেছে আগে আগে। কিন্তু এতেও লাভ হলো না। বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে সিলিংয়ের দিকে চেয়ে রইলো। দরজা লাগানোর শব্দে সে শোয়া থেকে ওঠে বসলো। মেহরিন এসছে। বড্ড ক্লান্ত দেখাচ্ছে মেয়ে টার চোখ মুখ। নাদুস-নুদুস মুখখানা এইটুকু দেখাচ্ছে।
আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে মেয়ে টা মৃদু হাসে। বললো,

-“সরি। অনেক্ক্ষণ একা থাকতে হয়েছে আপনাকে।”

-“ইট’স ওকে কোনো ব্যাপার না। তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো।”

আব্রাহাম বলে উঠলো। মেহরিন মুচকি হেঁসে ওয়াশ রুম চলে গেলো। আব্রাহাম দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। নিচে এসে দেখলো মেইড ডাইনিং টেবিলে খাবার গুছিয়ে রাখছে। ইলা বেগম রান্না ঘরে কিছু একটা করছে। আব্রাহাম মা কে ডেকে বলে উঠলো,

-“আম্মু আমার খাবার টা রুমে দিও।”

-“কেনো বাবা? শরীর কি বেশি ক্লান্ত? মেহু যে বললো তুই নিচে এসে খাবি!”

-“ওহ আচ্ছা এরকম বলেছে না-কি? অ্যাকচুয়ালি হয়েছে কি আম্মু, আমার ঘুম পাচ্ছে অনেক। রুমে খাবার টা নিয়ে খেলে, খেয়ে আর্লি শুয়ে পড়তে পারবো।”

আব্রাহামের কথা শুনে ইলা বেগম আর কথা বাড়াল না। মেইড কে বললো দুজনের খাবার রুমে দিয়ে আসার জন্য। আব্রাহাম মুখ গম্ভীর করে রেখেছে। ইলা বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

-“শরীর বেশি খারাপ লাগলে মা’কে ডেকো। আর খাবার দুজনের টাই রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

আব্রাহাম মায়ের কথায় মুচকি হেঁসে মাথা নাড়লো। এরপর সিঁড়ি বেয়ে ওপরে চলে এলো। রুমে এসেই দেখলো মেহরিন বিছানায় শুয়ে পড়েছে অলরেডি। আব্রাহাম এর চিন্তায় কপালে ভাজ পড়লো। মেয়ে টার শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে? সে দ্রুত পায়ে মেরিনের পাশে এসে বসলো। কপালে হাত দিয়ে দেখলো শরীর টা সামন্য গরম। মানে জ্বর আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আব্রাহাম অস্থিরতা বাড়লো। আলতো করে মেহরিনের গালে হাত রেখে বলে উঠলো,

-“শরীর খারাপ লাগছে বেশি? ডক্টর ডাকি?”

-“আরেহ আপনি এতো অস্থির হবেন না। গরম আমি সহ্য করতে পারি না তো। তাই একটু খারাপ লাগছে। রেস্ট করলে ঠিক হয়ে যাবে। আপনি খেয়ে আসুন গিয়ে।”

মেহরিনের কথা বলাতে একটু স্বস্তি পেলো আব্রাহাম। এরমধ্যে দরজায় টোকা পড়লো। আব্রাহাম গম্ভীর স্বরে বললো,

-“কাম।”

একজন মেইড খাবার নিয়ে এসছে। আব্রাহাম নিজের কাছে নিয়ে নিলো খাবার ট্রে। বিছানায় রেখে গিয়ে দরজা টা বন্ধ করে এলো। এরপর মেহরিন কে শোয়া থেকে ওঠে বসতে বললো।
মেহরিন না ওঠে শুয়ে থাকা অবস্থায় বলে উঠলো,

-“আপনি খেয়ে নিন। আমার এখন ইচ্ছে করছে না। পরে খেয়ে নেবো আমি।”

আব্রাহাম মেহরিনের কথায় কোনো প্রতিত্তোর করে না। মেহরিন কে ঠেলেঠুলে শোয়া থেকে তুলে বসালো। সে নিজের মতো খাবার নিয়ে মুখের সামনে ধরলো মেয়ে টার। মেহরিন কি করবে বুঝতে পারে না। একটু অস্বস্তি কেমন একটা অজানা অনুভূতিতে মেয়ে টার বুক টা দ্রিমদ্রিম শব্দ করছে।
এমন একজন পুরুষ। যে বউয়ের সর্বত্র টা খেয়াল রাখে। মেহরিনের সত্যি মনে হয় আব্রাহাম এর কথা টা আসলেই সত্যি। সে সত্যি লাকি গার্ল যে আব্রাহামের মতো এমন গুড হার্ট পারসন্স একজন কে লাইফ পার্টনার করে পেয়েছে লাইফে। মেয়েদের আর কি চাই? মণি-মুক্তা পয়সা থাকলেই ক্রয় করতে পাওয়া যায়। কিন্তু ভালোবাসা, আদর, যত্ন, সম্মান, দায়িত্ববান এবং একজন ব্যক্তিত্ববান লাইফ পার্টনার শুধু ভাগ্যবতী, ভাগ্যবান মানুষেরাই পেয়ে থাকে।

——–

মোহিতা বেগম অনেক কেঁদেছেন। তৃতীয়বারের ন্যায় তিনি আবারও কাঁদতে কাঁদতে হয়রান হয়ে গেলেন। প্রথমবার যখন স্বামীর অকালমৃত্যুতে দ্বিতীয়বার বড়ো মেয়ের বিয়ে দিয়ে। আজ তৃতীয়বার ছোট মেয়ের বিয়ে দিয়ে। জন্মদাত্রী মা হয়েও নিজের কন্যাদের নিজের কাছে ধরে রাখা মতো সাধ্য উনার নেই। ভয়াবহ যন্ত্রণা বুকে চেপে তিনি বেঁচে আছে যেনো। মেহমান আত্মীয়স্বজন অনেকে আছেন। আবার অনেকে বিদায় নিয়েছে। মোহিতা বেগমের এক চাচতো ভাইয়ের বউ আজ থাকবে উনার সাথে। বাড়িতে খাবার-দাবার আর সকল কাজকর্ম তিনিই কাজের মেয়ে টাকে নিয়ে সামলাচ্ছে। ফিজা রুমে এলো যখন তখন রাত সাড়ে এগারো টা। আবরাজ ও সবেমাত্র সব ঝামেলা শেষ শাওয়ার নিয়ে ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এসছে। ফিজা শাড়ী চেঞ্জ করে নরমাল একটা সাদা লং গাউন পরেছে। ঢিলা প্লাজু সাথে রংধনুর সাত রঙে মিশ্রিত এক ওড়না। লম্বা চুলের খোঁপা খুলে চুল ক্লো ক্লিপ দিয়ে আঁটকে রেখেছে। যার ফল এলোমেলো হয়ে চারদিকে চুল বেরিয়ে খোঁপা ঝুলে আছে। আবরাজ আস্তে করে ঢুক গিলে নিলো।
নিজের মোবাইলে কল আসায় ধ্যান ভাঙে আবরাজের। ফিজা বিছানার কাছেই ছিলো। ফোন সেই হাতে নিলো। সাব্বির কল দিয়েছে। ফিজা বললো,

-“সাব্বির সাহেব কল দিয়েছেন।”

আবরাজ গম্ভীর। ফিজা ফোন টা আবরাজের দিকে বাড়িয়ে দিলো। আবরাজ কল রিসিভ করে কানে তুলে গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,

-“বলো সাব্বির।”

সাব্বির ওপাশ থেকে কিছু বললো। আবরাজের মুখের রং মূহুর্তের মধ্যে বদলে গেলো। চোয়াল শক্ত করে বললো,

-“আসতে দাও।”

বলেই আবরাজ কল কেটে দিলো। ফোন টা রেখে সে বিরক্তিকর নিঃশ্বাস ফেলে ফোন ফিজার পড়ার টেবিলের ওপর রাখলো। বিছানার ওপর রাখা আবরাজের ট্রাউজার আর একটা টি-শার্ট। যা ফিজাই এখানে রেখেছে। লুঙ্গি মানুষ টা একদম পরতে পারে না। তারউপর কষ্ট করে যদিও আগে কয়েকবার পড়েছে। এরপরই ফিজা সেদিন নিজের সাথে করে আবরাজের কিছু কাপড় ব্যাগে করে নিয়ে এসছে। ভাগ্য ভালো এনেছিলো। যদি না আনতো তাহলে আজ আবার মহা মুশকিল হতো।

ফিজা আবরাজের ড্রেস গুলো দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আবরাজ ড্রেস চেঞ্জ করে বউয়ের অপেক্ষায় বসে থাকতে পারল না। ফিজা রান্না ঘরে চুলাতে কিছু একটা করছে। আবরাজ না দেখেও বুঝে ফেললো বউ তার কফি বানাচ্ছে। ফিজা একটা কফি বানিয়ে নিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো আবরাজ দাঁড়িয়ে আছে। ফিজা মৃদু হাসলো। হেঁসে বললো,

-“একটু অপেক্ষা করা যায় নি, চলে আসতে হলো!”

আবরাজ এখানে-ও মৌনতা পালন করলো। ফিজা আবরাজের হাতে কফি টা দিয়ে লাইট অফ করলো রান্না ঘরের। এরপর সোফার রুমে এসে ডিম লাইট অন করে রুমে এলো। আবরাজ কফি নিয়ে সোফায় বসলো। সারাদিনের ব্যস্ততা এটা এখন খুব দরকার ছিলো।
ফিজা আবরাজের পাশে ফ্লোরে বসে গেলো। আবরাজের হাঁটুতে মাথা টা রেখে গা এলিয়ে দিলো। আবরাজ ওর মাথায় হাত রাখলো। কফি ফিজার সামনে ধরে বলে উঠলো,

-“টেস্ট ইট।”

-“কোনো, ভালো হয় নি?”

-“তুমি নিজে ট্রাই করো।”

ফিজা আবরাজের থেকে মগ নিলো। একবার চুমুক দিয়ে দেখলো স্বাদ ঠিকই আছে। তাই ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিলো সে। আবরাজ গম্ভীর। ফিজার হাত থেকে মগ টা নিয়ে নিলো। এরপর ফিজা যেখানে ঠোঁট ছুঁয়ে কফি খেয়েছে আবরাজ ও সেখানে মগে ঠোঁট বসিয়ে চুমুক দিলো। ফিজা হতভম্ব। আবরাজ কফি খাওয়া শেষ হতেই বিছানায় বসে বউ কে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলো। শরীর ক্লান্ত। ফিজা তারপরও আবরাজের বুকে আঁকিবুঁকির করে। আবরাজ ফিজার হাত টা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,

-“আমি শুরু করলে কিন্তু তখন ব্যাড বয় বলতে পারবা না।”

-“আপনি অসভ্য। বাজে পুরুষ। এটা বলতে হয় না।”

ফিজা কথা টা বলতে দেরি হলে-ও আবরাজের হাত বউয়ের চোয়াল চেপে ধরতে খুব বেশি দেরি করলো না। আবরাজ মুখ টা এগিয়ে নিয়ে ফিজার ঠোঁটের কোণে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। বললো,

-“রেস্ট করো। আর জ্বালিও না।”

ফিজা শোনার মতো মেয়ে? সে আবরাজের বুকে থুঁতনি ঠেকিয়ে তর্জনী আঙুল দিয়ে পুরুষ টার অ্যাডামস অ্যাপেলে স্পর্শ করলো। আবরাজ ঢুক গিলে ফিজার আঙুল টা চেপে ধরে নিলো। আঙুলের দাঁত দিয়ে আলতো করে কামড়ে দিলো। ফিজা ব্যাথাতুর শব্দ করে আঙুল ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,

-“আপনার শুধু কামড়াকামড়ি। এটা ছাড়া আর পারেন কি আপনি?”

আবরাজ ফিজার নিজের হাত এবার বউয়ের বাঁকানো কটিদেশ রাখলো। আচানক হেঁচকা টানে আরও ঘনিষ্ঠ করলো নিজের সঙ্গে। ঘোরলাগা হিমশীতল স্বরে ফিসফিস করে বললো,

-“আমি কি পারি আর না পারি এটা তুমি খুব ভালো করে জানো, সুগন্ধি ফুল।”

ফিজা লজ্জায় শরীরে রক্ত কণিকায় অসহ্য শিহরণ মেয়ে টা মুখ দিয়ে আর কোনো শব্দ আওড়াতে পারে না। আবরাজ শুধু বাঁকা হাসলো। বউ কে জব্দ করতে তার খুব বেশি কিছু লাগে না।

#চলবে….

[গল্প আর খুব বেশি নেই। পর্বে গুলো ছোট বলেই এতো গুলো পর্বে হয়েছে। নয়তো আরও আগেই শেষ হতো। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]