#সুগন্ধি_ফুল_২
#পর্ব_১১
#জান্নাত_সুলতানা
-“হু অ্যাম আই টু ইউ, সুগন্ধি ফুল?”
আবরাজ জানতে চায়। ফিজা চুপ করে থাকে। এটা কোনো প্রশ্ন! ফিজার ভাবনার মাঝেই আবরাজ আবারও আওড়াল,
-“পরপুরুষ?”
-“কথা বলো, স্পিক আপ। কী হই আমি তোমার?”
আবরাজ অধৈর্য হয়ে যায় যেনো। তার শান্ত স্বরে ধমক ফিজার সমস্ত কায়া কেঁপে উঠলো। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে হৃদপিণ্ডটা। সে মনে মনে বেশ কয়েকবার আওড়াল আবরাজ তার স্বামী। যেনো কোনো কঠিন প্রশ্নের উত্তর সে মুখস্থ করে নিচ্ছে। যা সে স্কুলের ম্যাডামের সামনে গড়গড় করে বলতে যাচ্ছে। এবং কিছু সময় চুপ থেকে ফিসফিসিয়ে ছোট করে জবাব দিলো,
-“হাসব্যান্ড।”
-“তুমি আমার কথার অবাধ্য হয়েছো, জান। এরজন্য তোমার প্রথমবারের মতো শাস্তি প্রাপ্য।”
-“প্রথম ভুলের ক্ষমা হয়।”
ফিজা আবরাজের কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো। আবরাজ ওর চোয়াল টা চেপে ধরে নিজের শরীর টা আরও এগিয়ে দিলো ফিজার দিকে। একে-অপরের শরীর ছুঁই ছুঁই করছে। ফিজার মনে হচ্ছে চামড়ার নিচে কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। যা থেকে তার শরীর পুড়ছে আর সেইজন্য এমন গরম উত্তাপ বেরুচ্ছে শরীর থেকে। আবরাজের দৃষ্টি শান্ত। যেনো একটু আগে বা পরে তাদের মধ্যে কিছুই হয় নি বা হবে না। কিন্তু ফিজা জানে তাকে সামনের এই পুরুষ স্থির থাকতে দিবে না। সে বার্তা তার মন তাকে দিয়েছে। আবরাজ ওর থুতনিতে আঙুল ছুঁয়ে দিলো। ফিজার না চাই তেও ঘাড় উঁচু করে নিজের দৃষ্টি আবরাজের দিকেই গেলো। মাথা ভরতি জেল দিয়ে সেট করে রাখা চুল, মুখের খোঁচা খোঁচা চাপ দাড়ি। ঘনকালো সরু ভ্রু। কালো চোখের মণি। চোখের সাদা অংশ লাল। সাদা শার্টের ওপর ওয়েস্ট কোট। শার্টের বাটন দুইটা খোলা। যাতে করে আরও চমৎকার লাগছে তাকে। অথচ ফিজার ভয় লাগছে। সিগারেটে পোড়া ঠোঁট নেড়ে আবরাজ ধীরে ধীরে বলে উঠলো,
-“বাট সুইটহার্ট, তুমি তো প্রথমবার ভুল করো নি। তুমি এর আগে ও করেছো। আর তোমাকে সময় দিয়েছি আমি। ফার্স্ট অ্যান্ড লাস্ট বারের জন্য হলে-ও তোমার শাস্তি পেতে হবে, সুগন্ধি ফুল।”
ফিজার কান্না পায়। সামন্য রান্না ঘরে যাওয়া নিয়ে তাকে আবরাজ এমন ভয়ংকর শাস্তি দিতে পারে না। কিন্তু সে এটার প্রতিবাদ করতে গিয়েও পারে না। গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না। শব্দ ঠোঁট ভেদ করে বেরিয়ে আসতে চায় না। আবরাজ ওর স্বামী, কিন্তু তবুও ফিজার নিজের ভেতর জড়তা। তার ঘোর কাটে আবরাজের পুরুষালী ওষ্ঠদ্বয়ের স্পর্শে। কপালে আবরাজ ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে ওর হাতে শাড়ী টা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
ফিজা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে। তার ভয় করছে। একটু পর কী হবে এভাবে শাড়ী পরে কিভাবে আবরাজের সামনে দাঁড়াবে? লজ্জায় চোখ মুখ অস্থিরতা দেখা দিলো। সে শাড়ী রেখে বিছানায় বসলো। আর চিন্তিত হলো কী করবে এখন? পরবে না-কি না!
—–
সময় টা সন্ধ্যায়। মেহরিনের ভার্সিটিতে আজ একটা প্রোগ্রাম ছিলো। সে এবং তার বান্ধবী সেখান থেকে বেরুতে বেরুতে প্রায় অনেক টা দেরি হয়েছে। বান্ধবী চলে যাওয়ার পর সে-ও একটা রিকশা নিয়ে নিলো। তবে রিকশা টা একটা গলির ভেতর ঢোকার পরপর মোড় থেকে একটা হাই স্পিডে কালো রঙের রেঞ্জ রোভার অটোবায়োগ্রাফি সামনে থেকে ছুটে এলো। মেহরিনের ভয়ে গলা শুঁকিয়ে কাঠ। সে কান চেপে চোখ বন্ধ করে নিয়ে দিলো এক চিৎকার। ব্যাস তারপর খুব জোরে শব্দ হলো এবং চারপাশ নিস্তব্ধতা। মেহরিন কয়েক সেকেন্ড পরে-ও যখন কোনো কিছু উপলব্ধি করলো না তখনই অবাক হয়ে পিটপিট করে চোখ খুলতে লাগলো এবং কান থেকে হাত সরিয়ে সামনে তাকালো। দেখলো সামনের গাড়ি টা দাঁড়িয়ে আছে নিজের যায়গায়। আর ওদের রিকশাও ঠিক আছে তবে রিকশাওয়ালা ওর দিকে তাকিয়ে আছে। যেনো তিনি আশ্বস্ত করলেন কিছু হয় নি। মেহরিনের বুকটা ধুকপুক ধুকপুক করছে। সে কথা বলতে পারলো না। রিকশা ওয়ালা সাইড করে সামনে এগিয়ে গেলো। গাড়ির জানালার দিকে সামন্য ঝুঁকে বেশ মোলায়েম স্বরে বললো,
-“সাহেব একটু ধীরে। এটা বিদেশ না। বাংলাদেশ।”
এরপর রিকশা টেনে তিনি চলে গেলো। আব্রাহাম গাড়ির স্টিয়ারিংটা প্রচন্ড ভাবে শক্ত করে ধরে একদম শক্ত হয়ে বসে রইলো। না এদিক আর না ওদিক। শুধুই সামনের দিকে দৃষ্টি স্থির। যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো রিকশা টা। আর রিকশায় বসে ছিলো একটা ভীতু মেয়ে। যার গায়ে ছিলো সাদা রঙের একটা থ্রি-পিস আর কাঁধে একটা ভ্যানিটি ব্যাগ। একটু মোটাসোটা। চেহারায় বয়সের ছাপ নেই। শুধু সরলতা আর আর স্নিগ্ধতা। পাশে বসা সাব্বিরের ডাকে তার ঘোর কাটলো। সাথে ফোন বাজছে। সাব্বির বলছে,
-“স্যার বাড়ি যাবেন না? ম্যাম কল করেছে আবারও।”
আব্রাহাম চমকে উঠলেও নিজে কে সামলে নিলো। আর সাব্বিরের দিকে একবার তাকিয়ে গাড়ির ক্ল্যাচারে পা দাবিয়ে দিয়ে গাড়ির স্টার্ট করলো। চোখের সামনে ভাসতে থাকা ভীতু মুখ সে মাথা ঝাঁকিয়ে দূর করতে চাইলো। তাতে সফল কতটুকু হবে কে জানে। না-কি আবারও সেই মুখ তাকে বিরক্ত করবে! হয়তো হ্যাঁ আবার না।
——–
আবরাজ সিঁড়ির থেকে একটু দূরে বাঁ দিকে নিজের মিনি বারে একটা বারস্টুলে বসে আছে। একটা গ্লাসে ক্যারামেল রঙের ওয়াইন। যাতে সে একটু পরপর চুমুক দিচ্ছে আর নিজের হাতের ফোনে কিছু একটা করছে। চোখ-মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই তার মুড খারাপ না-কি ভালো। তবে শেষবার ওয়াইন এর গ্লাসে ঠোঁট ছুঁয়ে সে এদিক-ওদিক সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফোন টা কানে তুলে বলে উঠলো,
-“হোয়াট?”
-“আমি ইনফরমেশন পেয়েছি, স্যার ও আব্রাহাম স্যার কে ম্যামের ছবি দিয়ে ছিলো বাজে উদ্দেশ্য নিয়ে। আব্রাহাম স্যার এটা জানার পর ওর সাথে কথা বলেছে।”
-“আমি দেখা করতে চাই ওর সাথে। ফাস্ট গাড়ি রেডি করো।”
আবরাজ রাগে দাঁতে দাঁত চেপে আদেশ দেয়। জন কিছু টা ভয়ে ভয়ে বললো,
-“স্যার কিন্তু এতো রাতে ও হয়তো কোথাও মাতাল হয়ে পরে আছে।”
-“তাহলে তুলে নিয়ে এসো। আউট।”
বলেই ফোন কেটে দেয় আবরাজ। আবারও ওয়াইন নেওয়ার ইচ্ছে হয় না তার। মাথায় যেনো আগুন জ্বলছে। শরীরে রক্ত টগবগ করছে। গ্লাস টা ছুঁড়ে ফেলে দিলো সে। সামনের অ্যাশ কালার কার্পেট পরে তা। ভাঙে না। আবরাজ সেটার দিকে তাকানোর প্রয়োজনবোধ করে না। সোজা সিঁড়ি বেয়ে একবার রুমে ফিরে এলো। ফিজা তখনও বিছানায় বসে। আবরাজ ওর কাছে গেলো। সে ভেবেই নিয়েছে। তার একবার হলে-ও ওই নব্বই দশকের আগের মেয়েরা যেমন করে শাড়ী পরতো তেমন করে তার বউ কে পরলে নিশ্চয়ই চমৎকার লাগবে। যদিও সে এমনিতেই একজন চমৎকার মানুষ এবং সুন্দরী। তবে মোটা করে কাজল আর কপালে একটা লাল টিপ। লম্বা চুল গুলো মাঝে সিঁথি কেটে একটা হাত খোঁপা কেমন লাগতে পারে! আবরাজ বাকিটা কল্পনা করতে চাইলো না। সে স্বচক্ষে দেখতে চায়।
ফিজা আবরাজ কে এমন অবস্থায় দেখে কিছু টা ভয়ে পেয়ে যায়। সে পিছিয়ে পা বিছানায় ওঠে নিয়ে বসতে চায়। তবে তার আগেই আবরাজ ওর একদম কাছে চলে যায়। ঝুঁকে এসে ওর গলা চেপে ধরে মুখ এগিয়ে নিজের সন্নিকটে আনে। পরপরই নিজের ওষ্ঠদ্বয় দিয়ে বউয়ের ওষ্ঠ চেপে ধরলো। ফিজা হতভম্ব হয়। তার শরীর শিরশির করে। অদ্ভুত এক শক্তিতে যেনো আবরাজ তাকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়। এবং তা অনেকা সময় নিজের মতো ব্যবহার করে। হয়তো দুই তিন মিনিট অথচ ফিজার কাছে কয়েক ঘণ্টা মনে হলো। দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়। তবে তার আগেই আবরাজ ওকে ছেড়ে দিলো। এরপর জোরে একবার নিঃশ্বাস টেনে ওর ঠোঁটের কোণে আঙুল ছুঁইয়ে রেখে ওর চোখের দিকে নিষ্প্রভ দৃষ্টে তাকিয়ে হাস্কি আওয়াজে বলে উঠলো,
-“জান আমি ফিরে এসে তোমায় দেখছি। ওয়েট ফর মি।”
ফিজা পিটপিট করে। শ্বাস টানে সে। তার ফুসফুসে অক্সিজেনের অভাব যেনো। সত্যিই তাই। সে কথা বলতে পারে না। আবরাজ ফিজার থেকে সরে গিয়ে ওয়েস্ট কোট এর ওপর ব্লেজার জড়িয়ে নেয়। এরপর রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ফিজা জানে না আবরাজ কোথায় যাচ্ছে। কিন্তু সব সময়ের মতো প্রশ্ন জাগে মনে আবরাজ প্রায় রাতে কোথায় যায় কী এমন কাজ থাকে যে রাতেও যেতে হয়! ফিজার সেদিন রাতের কথা মনে পরলো। আবরাজ বেশ অনেকক্ষণ সময় নিয়ে তার সাথে পাগলামো করে যখন ক্লান্ত তখন ও ফোন আসার সাথে সাথে সে রেডি হয়ে বেরিয়ে যায়। এটা একটা ধাঁধা তারজন্য। এর উত্তর কী সে খুঁজবে! নিজেই নিজে কে প্রশ্ন করে ফিজা।
#চলবে……
#সুগন্ধি_ফুল_২
#পর্ব_১২
#জান্নাত_সুলতানা
-“আমার যেকোনো কথা সেকেন্ড টাইম রিপিট করা একদম অপছন্দ। সেটা তুমি খুব ভালো করে জানতে জুনায়েদ।”
আবরাজ বসে আছে একটা বেঞ্চের ওপর। বাঁ পা ডান পায়ের ওপর তুলে রাখে। পায়ে কালো শো এর একদম শেষপ্রান্ত টা লাগাতার নেড়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত রাগে যখন আবরাজ কোনো গভীর ছক কষে তখনই তার ভাবভঙ্গি এমন হয়ে থাকে। জন ভয় পাচ্ছে। সে মনেপ্রাণে চাইছে তার স্যার কিছু অঘটন না ঘটিয়ে ফেললেই হয়। কেননা জুনায়েদ তাদের জগতের এমন একজন মানুষ যার সবার সাথে কানেক্ট আছে। ভালো খারাপ সবার সাথে। এক্ষেত্রে জুনায়েদ এর কিছু হলে অবশ্যই সেটা খুব বেশি সুবিধার হবে না আবরাজের জন্য। কিন্তু কৌশলে কিছু করতে পারলে সেটা অন্য ব্যাপার। জন যখন মাতাল জুনায়েদর দিকে তাকিয়ে এ-সব ভাব ছিলো আবরাজের গম্ভীর কঠিন স্বর ভেসে আসে।
-“এখন তুমি কী চাও আমি অন্য রাস্তা বেছে নেই?”
-“তা তুমি করতে পারবে না। অন্তত এই লাইনে যতোদিন আছো।”
জুনায়েদ পিটপিট করে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলে। বিশ্রী এক হাসি। জনের গায়ে জ্বালা ধরে যায়। মাতাল না হলে এর কী যে করতো আবরাজ। জন ভাবে তার স্যার এমনিতে ভালো মানুষ। কারোর দুঃসময়ের সুযোগ নেয় না। লড়াই হবে সমানে সমানে। আর সমানে সমানে না হলে লড়াই মজা নেই। এটা আবরাজের ভাষ্যমতে। কিন্তু জনের ইচ্ছে একে এই অবস্থায় ইচ্ছে মতো পিটাইতে পারলে তার মন টা শান্তি পেতো।
-“আবরাজ খান কেমন সেটা তোমাকে মনে করিয়ে দিতে চাইছি না। এটা মাথায় রেখো।”
আবরাজ শান্ত স্বর ঘরে চারদিকে বারবার প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো।
-“আমি তোমার বউয়ের দিকে এখনো ভালো করে নজর দেই নি, তবে ওর ফ,,,
-“আর নজর দেওয়ার কথা চিন্তা ও করো না। আমি এই বিষয় টা নিয়ে তোমার সাথে জাস্ট কথা বলতে চাই না। শুধু আমার ভাই কে বিভ্রান্তিতে ফেলার জন্য তোমার এটা ওয়ার্নিং। আমাদের থেকে দূরে থাকো।”
জুনায়েদের কথা শেষ হওয়ার আগেই আবরাজ ওর চেয়ার টা লাত্থি মেরে ফেলে দিয়ে বললো। আর সেখান থেকে বেরিয়ে এলো। জুনায়েদ খুব বিশ্রী ভাবে জোরে জোরে হেঁসে কিছু বলতে লাগলো। তবে আবরাজ সে-সব উপেক্ষা করে। আর গার্ড জুনায়েদ কে টেনে নিয়ে গাড়িতে তুলে।
—–
একটি ভীতু মুখ ভয়ার্ত চোখের দৃষ্টি আর অসহায় একটি চিৎকার। আব্রাহামের কানে ভেসে আসে বারবার। সে চমকে উঠলো। সোজা হয়ে বসে ইজি চেয়ারের হাতলে হাত ঠেকিয়ে কপালে হাত রাখলো। চোয়াল সহ হাতিয়ে দেখলো ঘেমে উঠছে সে। অস্থির দেখাচ্ছে তাকে। এর আগে কখনোই সে এমন অস্থিরতা কোনো মেয়ের জন্য অনুভব করে নি। মাত্র একবার সাক্ষাৎ কোনো রমণী যে কোনো পুরুষের এমন ঘুম হারাম করে দিতে পারে, তা আব্রাহামের জানা ছিলো না। এটা নিয়ে এই তার প্রথম অভিজ্ঞতা। আব্রাহাম তপ্ত শ্বাস ফেললো। দরজায় কেউ কড়া নাড়তেই আব্রাহাম গম্ভীর স্বরে অনুমতি দিলো,
-“কাম ইন।”
সময় টা বিকেল ছাড়িয়ে কিছু টা গোধূলি। পশ্চিম আকাশে সূর্য ডুবে যায় নি পুরোপুরি। কমলা রঙের আভা ছাড়িয়ে কী দারুণ দেখাচ্ছে। তবে তবুও তার ওই মেয়ে টার ভীতু মুখ টাই মনে পরলো। আব্রাহাম জানালার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তখনই মায়ের চিন্তিত স্বর শোনা গেলো,
-“কী হয়েছে আব্বা? এসছো পর কেমন মনমরা হয়ে থাকছো, তোমার কী কোনো কারণ মন খারাপ?”
-“না আম্মু। ওই অনেকদিন পর তো তাই আমি ঠিক মানিয়ে উঠতে পারছি না।”
-“আমি তোমাকে একটা প্রস্তাব দিতে চাই।”
-“কিসের প্রস্তাব আম্মু?”
-“তুমি কী আমার প্রস্তাব মেনে নিবে?”
-“কেননা নয়। অফকোর্স মেনে নেবো।”
-“বিয়ে করো। দেখবে তখন ব্যাস্ততায় সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে।”
আব্রাহাম মায়ের কথায় অবাক হলে-ও তার চোখের সামনে সর্বপ্রথম যে চেহারা টা ভেসে উঠলো সেটা সত্যিই অনেক টা আশ্চর্যজনক। সে কী বলবে বুঝে উঠতে পারলো না। কেনো মনে হচ্ছে মেয়ে টার সম্পর্কে একবার হলে-ও তার খোঁজ নিতে হবে! অদ্ভুত হলে-ও সত্যি সে আগে ভাবতো এক দেখায় কখনো কাউ কে চিনা যায় না। প্রেমে পরা যায় না। ওগুলো শুধুমাত্র সিনেমাতে হয়। বাস্তবে কখনো পসিবল নয়। তবে কী তার ধারণা ভুল? সে-ও কী ওই ভীতু মেয়ে টার প্রেমে পরে গেলো?
-“আচ্ছা তুমি ভাবো। ভেবে জানাও আমাকে। আমি তোমার সিদ্ধান্ত জানার পর-ই পাত্রী দেখা শুরু করবো। এখন এ-সব ছাড়ো, আজ তোমার ভাবির মা এবং বোন আসবে। আসতে চায় নি তোমার বাবা জোর করে আনছেন। তুমি সন্ধ্যায় রেডি থেকো।”
আব্রাহাম তেমন কোনো উত্তর দিতে পারলো না। শুধু লাস্টের কথায় সম্মতি দিয়ে বললো,
-“আচ্ছা থাকবো।”
ইলা বেগম মৃদু হেঁসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আব্রাহাম তপ্ত শ্বাস ফেললো। মাথা নেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে পর্দা মেলে দিয়ে দিলো। তার বিরক্ত লাগছে সবকিছু। কারণ কী? ওই মেয়ে টা? তবে যদি তাই হয় তবে খুব খারাপ হবে এই মেয়ের সঙ্গে। তার জন্য কতোটা প্রস্তুত ওই ভীতু মেয়ে!
——
-“ইউ লুকিং সো গর্জিয়াস, সুগন্ধি ফুল।”
মেরুন রঙের শাড়ী। শিফন বা অর্গানজার মতো হালকা ও ঝলমলে ফ্যাব্রিক পুরো শাড়ির উপর ছোট
ছোট সোনালি পুঁতির মত এমবেলিশমেন্ট রয়েছে। এবং পাড়ে গোল্ডেন লেইসের কাজ যা খুব সূক্ষ্ম এবং পরিপাটি।
একটি পাতলা সোনালি চেইন টাইপ নেকলেস। যার মধ্যে ছোট ছোট মুক্তার মতো কাজ রয়েছে। এটি ঘাড়ে একদম ফিট করে বসে। যা চোকার টাইপ নেকলেসের মতো লাগছে। বড় সোনালি ঝুমকা। নিচে দুলতে থাকা ডিজাইন। যা ট্র্যাডিশনাল লুকে চমৎকার মানিয়ে গেছে। একটি সোনালি চুড়ি। ব্যাস এতেই তার সময় ভুলিয়ে দিতে যথেষ্ট। আবরাজের মুগ্ধ চাহনি ফিজার শরীরে শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়।
মাত্র একটি বাহু এবং কাঁধ উন্মুক্ত। তবুও ফিজার নিজে কে অনাবৃত মনে হচ্ছে। কেমন খালি খালি লাগছে। সে রুমের বড়ো লাইট অফ করে রেখেছে। টিমটিমে আলো চারপাশে। আবরাজ ধীরে পায়ে এগিয়ে আসছে। অথচ ফিজার মনে হচ্ছে খুব দ্রুতই আবরাজ সেই পথ অতিক্রম করে তাকে ছুঁয়ে দিবে। যা তারজন্য খুব বেশি ভালো হবে না। আবরাজ নিশ্চয়ই তার পাগলামির সর্বোচ্চ সীমা আজ লঙ্ঘন করবে। ফিজার মনের সাথে শরীর টা ছটফট করতে লাগলো। আবরাজ মুগ্ধ দৃষ্টি ফিজার শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে যাচ্ছে যেনো। সে এদিক-ওদিক অচেতন দৃষ্টি ফেলে। মানুষ টার শরীর থেকে আসা পুরুষালী গন্ধ ফিজার নাসারন্ধ্র ভেদ করে। সঙ্গে সঙ্গে অদ্ভুত এক আকর্ষণ অনুভব করলো সে। দৃষ্টি তুলে সামনে দাঁড়ানো আবরাজ কে দেখে ওর গলা শুঁকিয়ে আসে। আবরাজ ওর উন্মুক্ত কাঁধ আর গলায় মুখ গুঁজে দিতেই ফিজার শরীর জুড়ে বিদ্যুৎ চমকালো। সে আবরাজের পিঠের শার্ট টা খামচে ধরে নিলো নিজের অজান্তেই। তার ফুসফুস তৎক্ষনাৎ অক্সিজেনের অভাব বোধ করলো সে। শ্বাস নিতে বেশ কষ্ট হলো। হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে লাগলো,
-“এমন করবেন না, প্লিজ। আমার অস্বস্তি হচ্ছে।”
-“হোক।”
আবরাজ ঘোর লাগা স্বরে ফিসফিসিয়ে উত্তর দিলো। ফিজা চোখ বন্ধ করে নিজে কে স্বাভাবিক রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। আবরাজ ওকে আচমকাই ঝুঁকে কোলে তুলে নিতেই ফিজা চমকে ওঠে আবরাজের গলা জড়িয়ে ধরলো। আবরাজ ওর কাণ্ড দেখে হাসলো। এরপর ধীরে ধীরে হেঁটে গিয়ে ফিজা কে বিছানায় রাখলো। ফিজা এবার সব সময়ের মতো ঝুঁকে পেছনে হেলে গেলো। সে ভেবেই নিয়েছে আবরাজ সব সময়ের মতো তার গলায় মুখ গুঁজে শার্টের বাটন খুলতে খুলতে পাগলামো করবে। অথচ আবরাজ কিছুই করলো না, ফিজা কে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আবরাজ গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,
-“সোজা হয়ে বসো।”
ফিজা অবাক হয়ে। ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে সোজা হয়ে বসলো। আবরাজ আস্তে আস্তে এবার পিছিয়ে যেতে লাগলো। রুমের মাঝে রাখা ধূসর রঙের সোফায় গিয়ে বসলো এরপর। সোফার হ্যান্ডেলে হাত রেখে থুতনির নিচে হাত ঠেকিয়ে দিয়ে কাত হয়ে ফিজার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওকে দেখতে লাগলো। ফিজা কিছুই যেনো বুঝতে পারছে না। তবুও সে অনেক কিছু সহ্য করছিলো। বিশেষ করে আবরাজ খানের জ্বলন্ত দৃষ্টি। যাতে শুধু ছিলো তৃষ্ণা আর তৃষ্ণা। আর সেই তৃষ্ণা ফিজা কেও তৃষ্ণার্ত করে গেলো। আর তা ভেবেই সে লজ্জায় মুখ লুকাতে চাইলো। বউয়ের লজ্জা মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে আবরাজের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। আবরাজ ওর চোখে চোখ রেখে হিমবাহের ন্যায় শীতল কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“আমার ভাবনার চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে তোমাকে, সুগন্ধি ফুল।”
#চলবে……