#সুতো_কাঁটা_ঘুড়ি 🪁
#পর্ব_০২
#শেখ_সাদিয়া_স্বীকৃতি
_________________________
আঃ আর মেরো না ছোট মা! আমার ব্যথা লাগছে! মাগো!
সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া মেঘকে ফ্লোরে ফেলে তার বুকের উপর এক পা চেপে ধরে রাশেদা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
– হারাম/জাদি! তোর এত সাহস? রুদ্রের বউ হবি হা? এতো শখ!
– বা বাবা! ও বাবা তুমি কই? (কান্না মিশ্রিত গলায়)
রাশেদা ক্ষিপ্ত হয়ে মেঘের বুকে আরও শক্ত করে পা চেপে ধরলো৷ ব্যথায় ককিয়ে উঠে মেঘ। মেঝেতে শুয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করা মেঘের গাল চেপে ধরে বললো,
– বল, আর কোনোদিন রুদ্রের বউ সাজবি! বল!
– আহ্!!
– মা খাওয়া মুখপুড়ি! সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান না? আর কোনোদিন যদি তোরে এসব করতে দেখি স্কুলে যাওয়াই বন্ধ করে দেবো! আমার ওত সুন্দর ছেলেটারে বশ করার পায়তারা করতেছিস?
এই বলে মেঘের চুলের মুঠি ধরে উঁচিয়ে আবার নিচে ফেলে দিলো। মেঘের আর্তচিৎকার কয়েকটা চড়ুই পাখি আর পোষা বিড়াল ছাড়া আর কোনো প্রাণী শুনতে পেলো না।
বিকেলে স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিলো। একই স্কুলে পড়াশোনা করার সুবাদে পাশাপাশি কাজিন এবং বন্ধু হওয়ায় মেঘ আর রুদ্র একযোগে নাটকে অংশগ্রহণ করে। যেখানে তাদের রোল ছিলো রাজা-রানির। অসাধারণ অভিনয়ে প্রত্যেকে তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেও এসবকিছু অসহ্য লাগছিলো রাশেদার। তার কারণ সে ক’দিন আগে তার শাশুড়ীকে বলতে শুনেছিল যে বড় হলে মেঘ-রুদ্রের বিয়ে দিয়ে মেঘকে তারা নিজের বাড়িতেই রেখে দেবে। আর তাতে রমজান ও মিজান খান উভয়ই হাসিমুখে সায় জানিয়েছে। আর এতেই বাগড়া হলো। রাশেদা চায় না মেঘকে নিজের ছেলের বউ বানাতে। এর কারণ মেঘের মায়ের সাথে তার অনেক পুরনো রেষারেষি। সেই কারণে মেঘকে সে পছন্দ করে না। তাছাড়া মেঘ যতই খান বংশের মেয়ে হোক না কেন প্রতিপত্তি আর সুনামে রমজান মোস্তফা খানের ধারে কাছেও নেই মেঘের বাবা। নিজের একমাত্র ছেলের সাথে মেঘকে সে ভাবতেই পারে না। কিন্তু মেঘ আর রুদ্রের মেলামেশা চোখে পড়ার মতো। এতটাও ছোট নয় তারা।
অনুষ্ঠানের মাঝেই রাশেদা সবাইকে কাজের বাহানা দিয়ে মেঘকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। খালি বাড়িতে একেলা মেঘের উপর মনের সমস্ত ক্ষোভ ঝাড়ার সুযোগটাই কাজে লাগান তিনি। বাড়ির দারোয়ান-মালি যাতে কোনোকিছু শুনতে না পায় সেজন্যে তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে চিলেকোঠার ঘরে নিয়ে এসে ছুড়ে ফেলে দেয় ঘরের কোণে। আর তারপরই শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন।
অমসৃণ মেঝের তীক্ষ্ণতায় মেঘের মোলায়েম হাতের কনুই, হাটু ও গোড়ালির নিচটার অনেক অংশ গভীর ভাবে কেটে র ক্ত বেরিয়ে আসে। ছোটাছুটি করেও রাশেদার পায়ের নিচ থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারেনা সে৷ উল্টো মোচড়ামুচড়ির কারণে কেটে যাওয়া অংশে ঘষা লেগে মরিচের মতো জ্বালা করতে শুরু করে।
– ওহ! মাগো! (ককিয়ে)
যন্ত্রণায় কাঁদতে চেয়েও পারে না মেঘ। বুকের উপর পা চেপে রাখায় দম আঁটকে আসছে ওর৷ তা দেখেও রাশেদার মনে কোনো দয়া-মায়ার উদয় হয় না। বরং চোখ রাঙিয়ে বললো,
– এই আস্তে!
তারপর মেঘের গলা চেপে ধরে বলেন,
– কান্নার শব্দ যেন গলা দিয়ে বের না হয়! নইলে ছু ড়ি দিয়ে গলা দুইভাগ করে ফেলবো বুঝেছিস!?
ভয়, আতংক আর ব্যথার চোটে মেঘ কাতরাচ্ছে। মৃত্যু যেন তার দারপ্রান্তে এসে দাড়িয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে রাশেদা মেঘকে ছেড়ে ওর হাতের বাহু ধরে টেনে শোয়া থেকে তুলে দাঁড় করিয়ে কড়া বলায় বললেন,
– যা ভালো করে গোসল করে এসব দাগ পরিষ্কার কর। আর যদি কোনোদিন স্বপ্নেও রুদ্রের বউ হওয়ার কথা ভেবেছিস! আজ মেঝেতে ফেলেছি পরেরবার সোজা এই ছাঁদ থেকে নিচে ছুঁড়ে ফেলবো বুঝেছিস?
ভয়ার্ত মেঘ তাড়াতাড়ি মাথা নেড়ে কাঁদোকাঁদো হয়ে বললো,
– আমি আর কক্ষনো রুদ্র ভাইয়ের বউ সাজবো না ছোট মা। রুদ্র ভাইয়া আমাকে বললেও নাহ্..!!
– মনে থাকে যেন! (একটু থেমে) তোকে যে আমি মেরেছি এই কথা যদি তুই তোর বাবা আর বড় বাবাকে বলিস…
– না বলবো নাহ্!
*
বর্তমান~
হাতের কাঁটা দাগটা এখনো অক্ষত রয়ে গেছে। নিকষ কালো অন্ধকার ছাঁদে চোখ বোলায় মেঘ। এই সেই জায়গা যা এক সময় তার প্রচন্ড রকমের ভয়ের কারণ ছিলো। ফেলে আসা স্মৃতিগুলো আজ তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কত আঘাত, কত কষ্ট পেয়েছে সে এই বাড়ি থেকে! বুকভরা অভিযোগ আর মিথ্যে অপবাদ নিয়ে একদিন এ বাড়ি ছেড়ে বের হতে হয়েছিল তাকে। ঐদিন ছিলো ওর জীবনের সবচাইতে ভয়াবহ দিন। একইসাথে সবকিছু হারিয়েছিল সে ঐদিনে। ব্যথার্ত সেই স্মৃতিগুলো হৃদয়ে গভীর আঁচড় কেটে ক্ষত-বিক্ষত করে রেখেছে। চোখ মুছতে গিয়ে মেঘ অবাক হয়ে বললো,
– আজকাল কাঁদতে চাইলেও চোখে পানি আসে না। ইচ্ছে, আবেগের মতো সবই নিঃশেষ হয়ে গেছে। অবশেষে দুঃখের আগুন আমায় পুড়িয়ে লোহা মানবী করে দিলো তাহলে!
চিলেকোঠার পাশে রাখা দোলনায় পা দুলিয়ে বসে পড়ে মেঘ। আকাশে একটু পরপর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। অক্টোবরের বরষায় একটা আলাদা আমেজ মিশে আছে। গর্জনরত আকাশের দিকে চেয়ে মেঘের মলিন চেহারা কঠোর রূপ ধারণ করলো।
– ব্যথা চলে গেলেও মারের দাগ এখনও গায়ে দগদগ হয়ে বিচরণ করছে। আমি মেঘ। ঐ যে ঐ আকাশের মেঘ। কখনো শান্ত বাদল কখনো আবার ভয়ানক গর্জন..!
🌸
নিস্তেজ হয়ে বেলকনিতে হাঁটু ভাজ করে বসে আছে হিনা। ঘরের ভেতরে বাসর সাজানোর তোরজোড় চলছে। তাজা গোলাপের গন্ধে হাওয়া ম-ম করছে। এতো আয়োজন, এতো আলো সব বিষের চেয়েও বিষাক্ত লাগছে তার। রুদ্রের দিকে তাকিয়ে হিনা করুণ স্বরে বললো,
– আমাকে কি ভালোবাসা যেত না রুদ্র? এতটাই অযোগ্য আমি? খুব কি ক্ষতি হতো আমায় ভালোবাসলে?
রুদ্রের মুখে হাত বুলিয়ে ডুকরে কেঁদে বললো,
– না-ই বা বাসতেন ভালো! আমি একাই ভালোবেসে যেতাম। আপনাকে আমি কিকরে অন্য একটা মেয়ের সাথে ভাগ করে নেবো বলতে পারেন?
টুপটাপ রুদ্রের ছবির উপর হিয়ার চোখের পানি ঝরে পড়ে। নিজের বিয়ের এই হাস্যোজ্জ্বল ছবিখানা হিনাকে অসহ্য পীড়া দিচ্ছে। আস্তে-ধীরে উঠে বেরিয়ে যায় ঘরের বাইরে। আজ তো এই ঘরের দরজা তার জন্যে বন্ধ। কোথায় থাকবে সে?
🌸
ওদিকে শামসুন্নাহার সবাইকে তাড়া দিচ্ছে। যতই হোক মন্ত্রীর একমাত্র ছেলের বিয়ে৷ হোক সেই বিয়ে দ্বিতীয় তাতে কিই বা আসে যায়! দুই বউকে নিয়ম করে যত্নআত্তি করার ক্ষমতা তো তাদের আছে! সবাইকে এমনটাই জানিয়েছেন বাড়ির সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ কর্তী শামসুন্নাহার। তার ছেলে বাড়িতে না থাকার এই সুযোগটা সে একপ্রকার লুফে নিয়েছেন। একমাত্র নাতির বাসর সাজানোর সব বন্দোবস্ত তিনি নিজে করছেন। যদিও এতে রুদ্র মত দেয়নি কিন্তু সেও নাছোড়বান্দা। তার অনেকদিনের ইচ্ছে পূরণ হচ্ছে আজ। শুধু কি তার! এই বাড়ির প্রত্যেকেই তো এটাই চেয়েছিলো। একা হাতে সব গুছিয়ে নিজেই এখন নাতিকে বাসর ঘরের দরজা অবধি পৌঁছে দিতে নিয়ে যাচ্ছেন। দরজার সামনে এসে নাতির কাঁধে হাত রেখে বললেন,
– শোন ভাই, যা গেছে তা ফেরত পাবি না আর যা পেয়েছিস তা যত্নে রাখবি। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনো দূরত্ব রাখতে হয় না। তুই হইলি জোয়ান-মর্দ পুরুষ। এই বংশের বাতি। খান বংশ আলোয় ঝলমল করে রাখার দায়িত্ব এখন তোর।
রুদ্র নিরুত্তর থেকে নিজের ঘরে ঢুকে যায়। সে খেয়ালও করলো না কেউ একজন তার বিরহে কাঠের পুতুলের ন্যায় নিরবে অশ্রু নিপাত করছে। ঘরে ঢুকা মাত্রই রুদ্র ভয়ানক গর্জে উঠে। আচমকা বাড়ির শান্ত পরিবেশ তার চিৎকার চেচামেচিতে অশান্ত হয়ে উঠলে সবাই হন্তদন্ত হয়ে উপরে চলে আসে। বেগম রাশেদা চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,
– কি হয়েছে? চিৎকার করছিস কেন??
– হিনাকে ডাকো মা। (রাগান্বিত স্বরে)
ছেলের চোখমুখ ভালো ঠেকছে না রাশেদার। আড়ালে শুকনো ঢোক গিলে একবার চোরা দৃষ্টিতে সামনে-পেছনে পরখ করে মনেমনে বললো,
– হিনা কি তাহলে কোনো গোলমাল করে দিলো!
বৃদ্ধা শামসুন্নাহার কপট রাগ মিশিয়ে বললেন,
– কেন? ঘরে নতুন বউ রেখে হিয়ার খোঁজ করছিস কেন? কিছু করেছে নাকি সে?
দাদীর কথায় রুদ্রের হাবভাবের কোনো পরিবর্তন হলো না। কারো থেকে নিজের প্রশ্নের উত্তর না পাওয়ায় সে নিজেই হাঁক-ডাক করতে শুরু করে।
– হিনা! হিনা?
পর্দার আড়ালে থেকে হিনা সবটাই এতক্ষণ লুকিয়ে শুনছিল। রুদ্রের হঠাৎ তলব দেখে সে হাতে থাকা কাঁচের শিশি টা তাড়াতাড়ি জানালার ধারে রেখে কৌশলে বাইরে বের হয়ে আসে।
– ডাকছিলেন?
– উইদাউট মাই পারমিশন, তুমি আমাদের বেডরুমে মেঘকে রাখার সাহস কোথায় পেলে? নিজেকে কি বাংলা সিনেমার অসহায় সাবানা মনে করো যে অলওয়েজ সেক্রিফাইজ করে যাবে? আন্সার মি ইডিয়ট! (চিৎকার করে)
ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে হিনা সাথে বেশ অবাকও হয়। পরক্ষণে নিজেকে ধাতস্থ করে মিনমিনে গলায় বললো,
– আজ শশুর বাড়িতে নতুন বউয়ের প্রথম রাত, বাসর রাত। এই রাত স্বামী স্ত্রীর একসাথে থাকতে হয় তাই..
হিনার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে রুদ্র পুনরায় তীরের মতো প্রশ্ন ছুঁড়লো।
– তাই তুমি নিজের বেডরুম ছেড়ে দেবে?
জবাবে হিনা নিরুত্তর থেকে অসহায় চোখে তাকায় রুদ্রের মুখপানে।
– আপনার জন্য আমি সব ছাড়তে পারবো রুদ্র কিন্তু আপনাকে নয়। এতটা ভালোবাসি। সেই আপনিই আপনাকে আমার থেকে কেড়ে নিলে আমি কার সাথে নিজের অধিকার নিয়ে যুদ্ধ করবো বলুন!
কে জানে হিনার হৃদয়ের অব্যক্ত কথাগুলো রুদ্রের হৃদয়ে পৌঁছুতে পারলো কি-না! হিনাকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কিছুটা নরম স্বরে বললো,
– শোনো হিনা, নিজের অবস্থান আর সম্মান ভুলে যেও না। তুমি আমার শরীয়ত ও আইনী মোতাবেক লিগ্যাল ওয়াইফ। হ্যাঁ মেঘও আমার ওয়াইফ, concubine! সো ট্রিট হার লাইক দ্যট নট লাইক আ কুইন।
হিনার মুখে ফুটে ওঠে এক চিলতে হাসির রেখা। তার নরক যন্ত্রণার দহনকে শীতলতার সমভিব্যাহারে ভরিয়ে দিতে রুদ্রের বলা কথাটা-ই যথেষ্ট। ছেলের মুখে এমন কথা শুনে রাশেদা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
– হিনা নিজের ঘরে যাও আর ঐ নবাবজাদীকে বের করে নিয়ে এসো।
আর এক মুহূর্ত দেরি না করে হিনা সোজা নিজের ঘরে ঢুকে মেঘের হাত ধরে টেনে এনে ধাক্কা মেরে ঘরের বাইরে বের করে দেয়। শামসুন্নাহার আর ঝর্ণা বেগম তাড়াতাড়ি মেঘকে আগলে ধরলেন। রুদ্রের এমন হেয়ালিপণা দেখে ঝর্ণা বেগম রেগে বললেন,
– এসব কি তামাশা শুরু করেছ রুদ্র? (ধমকে)
বেগম রাশেদা সতীনের দিকে আঙুল উঁচিয়ে বললেন,
– আমার ছেলে আর ছেলের বউদের মাঝখানে আপনি কোনো কথা বলবেন না আপা!
শামসুন্নাহার ধমকে বললেন,
– নিজের সীমায় থাকো ছোট বউ।
অতঃপর লাঠি ভর করে নাতির সামনে গিয়ে দাঁড়ান।
– তুমি ঠিক কি চাইছো বলোতো?
রুদ্র নিজের হাতঘড়িতে সময় দেখে বললো,
– ঘুমোতে। হিনার উপস্থিতিতে আমার মেঘের কোনো প্রয়োজন নেই। তোমরা মেঘকে বাড়ির ভার, ফাইফরমাশ যা আছে সব তুলে দিতে পারো আই ডোন্ট কেয়ার। আই জাস্ট নিড হিনা, নাথিং এলস্।
কথাগুলো মেঘের দিকে চেয়েই বলছিল রুদ্র। সে ভেবে পাচ্ছে না এতকিছুর পরেও মেঘ চুপ হয়ে আছে কিভাবে। বিয়ের পর থেকে এখন অবধি সে রুদ্রের সাথে একটা কথাও বলেনি। এখনও ঘরোয়া বউদের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্র কপাল কুঁচকালো। ঝর্ণা বেগম বিস্মিত হয়ে বললেন,
– আশ্চর্য! যদি মেঘকে স্ত্রীর অধিকারই না দাও তাহলে বিয়ে করেছো কেন??
রুদ্র শার্টের হাতা গুটিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বললো,
– অবশ্যই ওর জীবন নষ্ট করার জন্য। এতক্ষণেও বুঝতে পারো নি তোমরা!
– মিস্টার রুদ্র অন্তিম খান, ভুলে যাবেন না আমি আপনার সো কোল্ড লিগ্যাল ওয়াইফ নই। কাজেই তার সাথে আমায় গুলিয়ে ফেলবেন না। আমার শরীরে আপনারই র ক্ত বইছে। ইট মারলে কিভাবে পাটকেল ছুড়তে হয় তা আমি আপনার এবং আপনার মায়ের থেকেই শিখেছি। খেলায় এখন আমি আপনাদের চেয়েও বেশি পারদর্শী! (জোরালো স্বরে)
অবশেষে মুখ খুললো মেঘ। রুদ্র কয়েক পলক নিশ্চুপ হয়ে চেয়ে রয়। মেজেন্টা রংয়ের শাড়ি পরিহিতা উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা নারীর সদ্য কাঁধ ছাড়িয়ে যাওয়া চুলগুলো মৃদু হাওয়ায় উড়ছে। সামনের বেবি কাট দেওয়া চুলে ঢেকে পড়া তার শান্ত শীতল চাহনির পানে অধীর নয়নে চেয়ে রুদ্র বাঁকা হেসে বলে,
– ছোড়াছুড়ির খেলাটা না-হয় পরে খেলবো বেবস্? ততক্ষণে তুমি নিজেকে তৈরি করে নাও। সামলাতে হবে তো!
এই বলে হিনার হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে মেঘকে দেখিয়ে সবার সামনে হিনার হাতের পিঠে শব্দ করে চুমু খেলো। প্রিয় পুরুষের স্পর্শের অজানা শিহরণে হিনা চোখ বুঁজে নেয়। শ্বাস ভারী হয়ে আসছে তার। রাশেদা বেগম ইতস্তত করে তার শাশুড়ীকে বললেন,
– আম্মা চলেন অনেক রাত হয়েছে। রুদ্রের বউ, রুদ্র বুঝে নেবে।
নাতির কর্মকান্ডে শামসুন্নাহার ভীষণ বিরক্ত। লাঠি দিয়ে খটখট আওতাজ করে দ্রুত নিচে চলে গেলো। ঝর্ণা বেগমের ভীষণ মায়া হচ্ছে মেঘের জন্য। নিজের মেয়ের মতো করে বড় করেছে মেঘকে। অথচ আজও সে নিরব শ্রোতা হয়েই দাঁড়িয়ে আছে। যে নিজের অধিকারের জন্য আওয়াজ তুলতে পারেনি সে কি অন্যের জন্য পারবে!
আত্মতৃপ্তির হাসি হেসে হিনা রুদ্রের হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দাঁড়ায়। রুদ্র নিজেও হিনাকে কাছে টেনে নেয়। তা দেখে মেঘ কোনোমতে নিজের হাসি চেপে রেখে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়।
চলবে..?