#সুপ্ত_প্রেমের_অনুরাগে🕊️
#পর্ব:সাত
#তামান্না_ইসলাম_কথা
মাঝরাতের নিরবতা ভেঙে টুপটাপ বৃষ্টির শব্দ যেন এক স্বপ্নময় সঙ্গীত হয়ে বাজে। জানালার কাঁচ বেয়ে গড়িয়ে পড়া জলবিন্দুগুলো অদ্ভুত এক অনুভূতি জাগায় মনে। অন্ধকার আকাশের বুক চিরে পড়া বিজলির আলোয় কখনো কখনো আলোকিত হয় ঘর, আবার মুহূর্তেই নিঃশেষ হয়ে যায় সেই আলো। শহর তখন ঘুমিয়ে থাকলেও, বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা যেন জেগে থাকা কারও কান্নার প্রতিধ্বনি। বালিশে মুখ গুঁজে থাকা মানুষটির ভিতরে জমে থাকা সব আবেগ যেন এক এক করে ঝরে পড়ে সেই বৃষ্টির ছোঁয়ায়। নরম আলোয় ভেসে থাকা ঘর, কাঁপতে থাকা পর্দা আর হাওয়ার সঙ্গে মিশে যাওয়া অতীতের স্মৃতিগুলো, সব মিলিয়ে মাঝরাতের বৃষ্টি হয়ে ওঠে এক নিঃশব্দ উপলব্ধি। একাকীত্ব আর শান্তির মিশেলে তৈরি সেই মুহূর্তগুলো যেন হৃদয়ের গোপন কোনে জমে থাকা কথাগুলোকে নরম করে তুলে।
ঘুম না আসায় ছটফট করে বিছানা থেকে উঠে বসে পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি আদভিন ঘুমিয়ে আছে। ডিম লাইট অন থাকায় আদভিনকে দেখতে অসুবিধা হচ্ছে না। ঘুমালে আদভিনকে কতটা না সুন্দর লাগে। আদভিনের দিকে ঝুঁকে তার ঠোঁটে ছোট করে চুমু দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। উদ্দেশ্য পাশের রুমে যাওয়া। সন্ধ্যায় আদভিন রুম থেকে বের হয়ে বেশ অনেক সময় সে রুমে ছিলো। হয়তো এই রুম থেকে কিছু না কিছু তথ্য পেয়ে যাব।
“কি আছে এই রুমে আমাকে জানতেই হবে।”
নিজে নিজে কথাটা বলে রুমের ভিতর ঢুকে পরলাম।ভাগ্য ভালো যে, রুমে কোন লক নেই। হয়তো রুম থেকে বের হওয়ার সময় রুমে লক করতে ভুলে গেছে।
“অন্ধকারে তো কিছু দেখতে পাচ্ছি না। সুইচ কোথায়?”
অন্ধকার হাতড়াতে হাতড়াতে উক্ত কথা গুলো বলতে না বলতেই নরম কিছুতে হাত লেগে গেল। হঠাৎ করে নরম কিছুতে হাত পড়তেই ভয় পেয়ে গেলাম। দ্রুত হাত সরিয়ে আরেকটু সামনে যেতেই সুইচ বোর্ড পেতেই অন করে দিলাম। কিন্তু রুমের লাইট অন করতেই কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম। এই রুমে তেমন কিছুই নেই। শুধু একটা টেবিল আর কিছু বই পত্র। এর বাইরে আর কিছু নেই। তাহলে কি আমি কিছুই পাবো না এখানে?
” এখানে তো কিছুই নেই। তাহলে আমি কোথা থেকে শুরু করব সব কিছু?”
নিজে নিজে কথা গুলো বলতে বলতে টেবিলের সামনে এসে দাড়িয়ে সব কিছু আবারো দেখছিলাম। মাঝে মাঝে দূরের আকাশ থেকে মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে।
“তরু! এতো রাতে তুমি এই রুমে কি করছো?”
যখন আমি নিজের ভাবনাতে মশগুল তখন পিছন থেকে কেউ একজন প্রশ্ন করতেই ভয়ে পেয়ে গেলাম। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি আদভিন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আদভিনকে এখানে দেখে যতটা না অবাক হয়েছি তার থেকেও বেশি ভয় হচ্ছে। আদভিন তো ঘুমিয়ে ছিল তাহলে উঠে গেল কখন?
“কি হলো তরু? তুমি এই রুমে কি করছো বললে না তো!”
“আসলে! আসলে আমার ঘুম আসছিল না সেজন্য নিচে যাচ্ছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে রুম থেকে কিছু শব্দ শুনে এখানে এসেছি।”
পুনরায় আদভিন প্রশ্ন করতেই আমতা আমতা করে কথা গুলো বলে জিভ কাটলাম। সে-ই সাথে নিজের বোকামির জন্য কিছু গালিগালাজ করে নিলাম। আদভিন যে আমার বোকামি মূহুর্তের মাঝেই ধরে ফেলবে সেটা আর বলতে হয় না।
“কিন্তু আমি তো দেখছি এখানে সব কিছুই স্বাভাবিক ভাবে আছে।”
কথা গুলো বলতে বলতে আমার সামনে এসে দাড়ালো আদভিন। এবার যে কি বলব বুঝে উঠতে পারছি না। কিন্তু কিছু তো বলতেই হবে।
“আমি তো উঠিয়ে রেখে দিয়েছি আদভিন। উঠানো শেষ করে চলেই যাচ্ছিলাম কিন্তু এর মাঝেই আবার আপনি পিছন থেকে ডেকে উঠলেন। আদভিন আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে। আমি রুমে গেলাম।”
আদভিনকে কথা গুলো বলে সোজা রুম থেকে বের হয়ে চলে এলাম। সেখানে থাকলে আদভিন আর কিছু প্রশ্ন করতো।
🍁🍁🍁🍁🍁🍁
সকাল সকাল ঘুম ভাঙতেই নিজেকে আদভিনের বুকে দেখতে পেয়ে ঝটপট উঠে বসলাম। ধরফর করে উঠতে বসতে গেলে আদভিন নিজেও নড়ে চড়ে আবার আগের মত করে ঘুমিয়ে গেল। আদভিনের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলাম। এখনো বাইরে সকালের আলো ফুটেনি। নামাজের সময় আছে কিছুটা। ঝটপট অযু করে এসে আদভিনকে ডাকতে এলেই দেখি আদভিন উঠে পড়েছে।
“নামাজের এখনো কিছুটা সময় আছে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়তে আসুন। মসজিদে তো যাওয়ার সময় হবে না আপনি এখানে পড়ে নিন।”
আদভিনকে কথা গুলো বলে আমি ফ্লোরে দুজনের জন্য দুটো জায়নামাজ বিছিয়ে আদভিনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। কিছুক্ষণের মাঝেই আদভিন চলে আসতেই দুজন মিলে একসাথে ফজরের নামাজ আদায় করে নিলাম।
“তরু!”
“হুঁ!”
নামাজ পড়ে উঠে বসে ছিলাম। এমন সময় আদভিন ডেকে উঠতেই তার দিকে তাকালাম। আদভিনের গালের খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো থাকায় মুখ সুন্দর লাগে। যদিও সে সুন্দর তবুও ছেলেদের চাপ দাড়ি থাকলে সুন্দর লাগে
“চলো আমরা আজকের সকালটা এক সাথে শুরু করি।”
হুট করেই আদভিনের এমন কথায় কিছু বুঝতে না পেরে হা করে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আদভিন আমার কথার উত্তর না আমার হাত ধরে সোজা বাড়ির বাইরে চলে এলো।
আদভিনদের বাড়ির সামনে মাঝারি আকারের একটা ছোট ফুলের বাগান আছে। যেখানে বিভিন্ন ধরনের ফুল রয়েছে। রাতে বৃষ্টি হওয়ায় গাছের পাতায় পাতায় বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির জল কনা গুলো সুন্দর করে ভাবে জমে আছে। ঘাসের উপর জমে আছে।খালি পায়ে নরম ঘাসের উপর পা রাখতেই বৃষ্টির পানিতে পা ভিজে গেল। সে-ই সাথে শরীর শিরশির করে উঠলো।
“এখান থেকে সুন্দর ভাবে সূর্য উদয় দেখে যায়। এই যে ছোট পুকুর দেখতে পাচ্ছ! এই পানিতে প্রথম সূর্যের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে।”
কথা গুলো বলতে বলতে বাগান পেরিয়ে বাড়ির পিছনে সান বাঁধানো ছোট একটা পুকুরের পাশে নিয়ে এসে কথা গুলো বললো আদভিন।
আদভিনের কথা না শুনে আমি পুকুরের আশেপাশে দেখতে শুরু করলাম। পুকুরের চারপাশে গাছপালা লাগানো। সবুজে ঘেরা এক ছোট গ্ৰামের পুকুরের মতো। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে সব কিছু দেখে সাধ বাঁধানো ঘাটে আদভিনের কাঁধে মাথা দিয়ে শূন্য দৃষ্টি নিয়ে পানির দিকে তাকিয়ে রইলাম।
🍁🍁🍁🍁🍁🍁
দেখতে দেখতেই যেন সময় কেটে যায়। সময় কত দ্রুত চলে যায় সেটা হয়তো নিজেকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। আমার এখনো মনে হচ্ছে, এই তো আমি কিছু দিন আগেও অবিবাহিত ছিলাম। লেখাপড়া, মা, বন্ধুবান্ধব নিয়েই হেসে খেলে দিন পার করে দিচ্ছিলাম। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে আজ আমি অন্যের ঘরের বউ। একজন বিবাহিত মেয়ে। আর আজ সেই বিয়ের পঞ্চম দিন।
দ্রুত হাতে সকালের নাস্তা রেডি করে ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে আদ্র এবং রোদ্রকে খাওয়াতে বসে গিয়েছি। যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি ওদের খাইয়ে আজকে ভার্সিটিতে যেতে হবে। কিছু দিন পর পরীক্ষা কিছু নোটস নেওয়া এখনো বাকি আছে। যার জন্য আমাকে আজকে যেতে হবে। কিন্তু এই দুই ছেলে যেন আজকে খাওয়ার নাম নিচ্ছে না। একজন মুখে খাবার নিয়ে বসে থাকে তো আরেক জন মুখে খাবার নিতেই চায় না।
“এক হয়েছে এদের বাবা যে, বাড়ি থাকলেই আমাকে জ্বালিয়ে পাগল করে। আরেক হয়েছে এই দু’টো! দু’জন যখন দুষ্টুমি শুরু করবে তখন তাদের থামানো অসম্ভব।”
“আমি তো শুধু আমার সুন্দরী বউকে একটু ভালোবাসি, আদর করি। এতেই বলছো আমি তোমাকে জ্বালিয়ে পাগল করি? আর আমার ছেলেদের কাছে আমার নামে বদনাম করছো তরু? এইটা কিন্তু খুব খারাপ।”
রোদ্রর মুখে খাবার দিতে দিতে কথা গুলো বলছিলাম কিন্তু এর মাঝেই আদভিন কথা গুলো বলে উঠলো। খাবারের টেবিলে বসে থাকা সবাই মিট মিট করে হাসতে লাগলো। আদভিনের কথা শুনে লজ্জায় পড়ে গেলাম সবার সামনে।
🍁🍁🍁🍁🍁🍁
“যদি সব কিছু জানতে চাও তাহলে এই ঠিকানায় চলে এসো।”
#চলবে