সূখতারার খোজে (খন্ড-২) পর্ব-০২

0
568

#সূখতারার_খোজে [খন্ড-২]
লেখক:আর আহমেদ
পর্ব ২

একচোখে টেক্সটার দিকে তাকিয়ে রইলো কবিতা। অর্নব তাকে মেসেজ দিয়েছে! ভাবতেই শিউরে উঠছে সে। কিছুক্ষণ আগে ডাটা অন করতেই কয়েকটা মেসেজ আসে। কবিতা মেসেজ রিকোয়েস্টে গিয়ে দেখতেই হতবাক। অর্নব বলেছে,

-কেমন আছেন মিস পয়েম?

পয়েম? কবিতা ক্রুদ্ধ হয়ে রিপ্লাই দিলো,

-বাঙালি মানুষ বাংলায় নাম ধরে ডাকতে শিখুন। পয়েম কি জিনিস হ্যা?

রিপ্লাই এলো না। কবিতা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলো। ওপাড় থেকে কোন প্রতিক্রিয়া না পেয়ে ফেসবুকে ডুকলো। কিন্তু ফেসবুকের প্রথম পোস্টটাই অবাক করে তুললো কবিতাকে। আটকে থাকলো কিছুক্ষণ। বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে টাইটেল টা পড়লো,
‘তারা নামক সে মেয়েটির আসল কিডন্যাপার অন্যকেউ!জানতে লিংকে ক্লিক করুন..’

অন্যকেউ মানে? কবিতা লিংকে প্রবেশ করলো। কোন পত্রিকার ওয়েবসাইটে নিয়ে গেলো তাকে। প্রথমেই অভ্রের ছবি দেখে মাথায় বাজ পড়লো কবিতার। এরপর পড়া শুরু করলো,
‘বারোই অক্টোবর যে মেয়েটি নিখোজ হয়েছিলো তার আসল কালপ্রিট অলীভ অভ্র। তিনি প্রথমে তাকে কিডন্যাপ করে উত্তর হাইওয়ের পরিত্যাক্ত কলোনিতে নিয়ে যান। যেখানে ইন্সপেক্টর সায়নের কোন হাত ছিলো না। তিনি বাঁচাতে গিয়ে ফাঁদে পড়ে অভ্রের। সামান্য একটা ছবি তুলে নেট দুনিয়ায় প্রচার করে ভুয়া খবর। কাল সন্ধ্যায় সায়নের একটি কল রেকর্ডে প্রমানিত হয় সবটা৷ তিনি নিজে এসে রেকর্ডটা পুলিশকে দিয়ে দেয়। কাল দুপুরের আগেই অভ্রকে এরেস্ট করে পুলিশ…… ‘

আর পড়তে পারলো না কবিতা। হাত পা হীম হয়ে আসছে। একে একে সকলের মন্তব্য গুলো পড়লো কবিতা৷ সবাই কটুক্তি করে গালি দিয়েছে অভ্রকে। কবিতা ফেসবুক থেকে বেড়িয়ে এলো। তারার নাম্বারে ফোন দিলো তৎক্ষনাৎ। ফোন রিসিভ হতেই কবিতা বলে ওঠে,

-এতকিছু আমার থেকে গোপন করে গেলি তুই তারা?

ওপাড় থেকে কোন পুরুষালি স্বর ভেসে আসে,

-কবিতা আমি সায়ন বলছি।

কবিতার রাগ আরও চড়া হলো। চেঁচিয়ে বলে ওঠে,

-এতকিছু গোপন করলেন? সবকিছুর পেছোনে দায়ী অভ্র আর ভুক্তভোগী আপনারা? কেন? তারা কই?

-নিউজটা তাহলে পেয়েই গেছো!

-ওও..তাহলে আরও লুকোচুরি আছে? দেখুন দুলাভাই আপনি কাজটা ঠিক করেন নাই। আমায় জানালে কি আমি…

-কি জানাবো বলতে পারো?

সায়নের বিদ্রুপ কন্ঠে স্তব্ধ হলো কবিতা। পরক্ষনেই সায়ন সান্ত গালায় বললো,

-তখন পরিস্থতি আলাদা ছিলো।

কবিতা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলে,

-তারা কোথায়?

-বাইরে গেলো একটু আগে।

-আমি রাখছি।

সায়ন কিছু বলতে গিয়েও বললো না। ফোন কেটে দিলো কবিতা। তারা এগুলা না লুকালেও পারতো! ফোন কাটতেই গভির চিন্তার মধ্যে ডুকে গেলো। কতটা বিকৃত মানুষ অভ্র!

ভাবনায় ছেদ পড়লো কারো মেসেজে। পরপর দুটো মেসেজের আওয়াজ কানে আসতেই ফোন হাতে নিলো কবিতা৷ অর্নব মেসেজ করেছে,

-সরি মিস। আমি পয়েম’ই ডাকবো আপনাকে।

কবিতার এবার রাগ,দুঃখ মিশে অস্থির লাগছে। বলে কি’না পয়েম বলবে?

-বিরাট আকিকার মাধ্যমে আমার নাম রাখা হয়েছে। আপনি এভাবে বলতে পারেন না😤

-এত রাগ?

-হুম।

-ওকে মিস পয়েম,পড়ে কথা হবে।

-আরে আজিব লোকতো আপনি। তাও পয়েম পয়েম বলছেন? লজ্জা থাকা উচিত আপনার। একবার সামনে আসুন।

সঙ্গেসঙ্গে রিপ্লাই আসলো,

-তাহলে আজ কফিসপে আসুন।

মেসেজটা দেখে চোখ ছানাবড়া কবিতার। বললো,

-মানে?

-এইযে বললেন একবার সামনে পেলে কি যেন করবেন আপনি? তাই বলছি দেখা করুন। বায়।

-শুনেন..

-তাহলে রাজি আপনি?

ইতস্তত করছে কবিতা। লিখতে হাত কাঁপছে। বললো,

-আমার বয়েই গেছে।

-বুঝলাম।

-কি🙄

-নীল ক্যফেতে আসিও।সন্ধ্যা সাতটায়।

এরপর অর্নব নেট থেকে বেড়িয়ে গেলো। কবিতা এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না। অর্নবের মতো খাটাস কি’না তার সাথে মিট করবে? কাউকে বাইরে থেকে জার্জ করা আসলেই উচিত নয়। আরেকটা প্রশ্ন হুট করেই মাথায় এলো কবিতার,তার আইডি পেলো কই?
___
তনয়া,সাবিহা,তারা এমনকি আয়রাকেও নিয়ে বসেছে ড্রইংরুমের আড্ডায়। এমনিতে এসব মোটেও পছন্দ করেন না আয়রা। কিন্তু তারা কথায় না করেনি। মেয়েটাকে বড্ড আপন লাগে। নিজের মেয়ের থেকেও বেশি কিছু। আয়রা সে আড্ডার এক পাশে বসে আছে। সায়ন নিজে বলে গেছে কাল রাতের কোন কথা যে তারাকে জিজ্ঞেস না করা হয়। এও বলেছে এ নাকি ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞা। এ নিয়ে কোন প্রশ্ন ওঠেনি এখন অব্দি।

সাবিহা পয়দা কাল থেকে নিজের বেস্টিগুলার বর্ননা দিচ্ছে। শুনছে সকলে। কিন্তু তারাতো মিছেমিছি এমন বৈঠক বসায়নি। রয়েছে গুরুতর কারন। বারবার আড়চোখে তারা আয়রার দিকে তাকাচ্ছে৷ এ ক’দিনে তারা বুঝে গেছে আয়রা শান্তিপ্রিয় মানুষ, কম কথা বলেন, নিজের মধ্যো সীমাবদ্ধ থাকতেই তিনি পছন্দ করে। সাবিহার কথার মাঝেই তারা আয়রাকে শান্ত স্বরে প্রশ্ন ছুড়লো,

-আচ্ছা মা,আপনার ছোটবেলায় বন্ধু,বান্ধবী ছিলো?

হঠাৎ এমন প্রশ্নে থতমত খেলেন আয়রা। বিশেষ করে মা ডাকটি শুনে। এরপর ওষ্ঠদ্বয় প্রসারিত করে বললেন,

-ছিলো তো!

-আচ্ছা, আপনার আর বাবার কি বিয়ের আগে বন্ধত্ব ছিলো?

আয়রা ফিক করে হাসলো। মুখে লজ্জা ওনার। বললেন,

-না। এরেন্জ্ঞ ম্যারেজ আমাদের।

পরের প্রশ্ন করার আগেই সায়ন সেখানে উপস্থিত। তাড়াহুড়ো করছে। পড়নের শার্টটা একটু ভিজে। বললো,

-তারা একটু উপরে যাবে?

একপলক সকলের দিকে তাকিয়ে ‘চলুন’ বলে চলতে লাগলো তারা৷ প্রথম সিঁড়িতে পা রাখতেই তারা বললো,

-শার্ট ভেজা কেন আপনার?

-হাত মুখ ধুয়ে তোয়ালে পাইনি। কই রাখছো?

তারা একপ্রকার ছুটে উপরে গেলো। রুমে ডুকে বেলকনির গ্রিল থেকে তোয়ালক নিয়ে আসবে ওমন সময়ে সায়ন ওখানে হাজির। তারা ভ্রু কুঁচকে তোয়ালে এগিয়ে দিলে সায়ন একপা একপা করে এগিয়ে আসে। তারা পেছোয়! সায়ন এগোতে এগোতে বেলকনির রেলিংএ ঠেকে তারা। আটকে যায়! ডান হাত দিয়ে রেলিং খিচে নেয় তারা। সায়ন কম হলেওএক হাত দূরে। বুক অলরেডি ধুপধাপ আওয়াজ তুলছে। সায়ন এক টানে তারাকে নিজের বুকে মিশিয়ে নেয়। উষ্ণ গরম বুকে মাথা ঠেকে তারার। সায়নের প্রতিটা হৃৎস্পন্দনের আওয়াজ কানে বাজছে।

-কি..কি করছেন?

অস্ফুটস্বরে বললো তারা। এতে সায়নের কোন হেলদোল নেই। দু হাতে তারার মাথা আরও গুজিয়ে দিলো সায়ন। তারার হৃৎস্পন্দন বাড়ছে,পা’দুটি ক্রমশ অসার হয়ে আসছে। সায়ন নেশালো কন্ঠে বলে,

-কি বলেছিলো আরমান চৌধুরী?

তারা চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়। আনমনে বলে ওঠে,

-একটি ফাইল দিয়েছিলেন।

-আর সেটা কি?

-একটি কাজের।

তারা বুক থেকে সরে আসতে চাইলেই সায়ন বলে,

-এখন কয়টা বাজে?আটটা তো? রাত দশটা পর্যন্ত সায়ন ভদ্র ছেলে তারপর…

বাদবাকি কথার আগেই সায়নকে ছিটকে দূরে সড়িয়ে দিলো তারা। একদন্ড না দাড়িয়ে ছুটে বাইরে চলে এলো। তখনি ও ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন আরমান। মাত্র অফিস শেষে ফিরেছেন। তারা স্পিড কন্ট্রোল করতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলো। লোকটি দাড়িয়ে থাকলেও বামপাশে কাত হয়ে পড়ে গেলো তারা। কাঁধে লেগেছে! আরমান গম্ভীর কন্ঠে বললো,

-দেখে দৌড়াতে পারো না?

তারা চুপ করে কাঁধে হাত ডোলছে। বিদ্রুপ স্বরে বলে,

-আপনি দেখে হাটতে পারেন না?

-কাজে রাজি তো?

তারা উঠে দাড়ায়। বলে,

-আপনি যদি তাকে সসম্মানে এ বাড়িতে আনতে পারেন।অর্থাৎ মা’কে সবটা বলে ওনার থাকার ব্যাবস্হা আপনাকে করতে হবে। তবেই আমি রাজি। তবেই আমি সই করবো!

#চলবে…