সূখতারার খোজে পর্ব-১৯+২০

0
452

#সূখতারার_খোজে🧚‍♀️
#লেখক:আর আহমেদ
পর্ব ১৯

বুক ক্রমশ ভার হয়ে আসছে তারার। একচোখে মেঝের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবতে আরম্ভ করলো তারা। তার বুক চিড়ে আসছে৷ কলঙ্কের মিথ্যে দাগের এ বিয়ে সায়নের বাবা মানতে নারাজ। সায়নের পাশে হয়তো মানায় কোন রাজকুমারীকে। তারার মতো সাধারন মেয়েকে কেনই বা কেউ মানবে? প্রশ্নবোধক জিনিসটা আজ ছুড়ির মতো গেথে রইলো। সায়ন হাতাশার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মাথার উঁচু পাগড়িটা বিছানার কোনে রাখলো। এরপর চলে গেলো ওয়াশরুমে। কিছুক্ষন পর বেড়িয়েও এলো। কিন্তু তারাকে আগের মতো দেখেই সায়ন বললো,

-মিস স্টার,
আপনাকে এভাবে মানায় না! মনে হয় যেন তারার ঠিক চকচকে নিখুঁত আলোটা নেই। কেন এভাবে নিশ্চুপ বসে আছেন? আরমান চৌধুরীর জন্য মন খারাপ?

তারা উত্তর দিলো না। শুধু একটি ঠোগ গিলে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লো সায়নকে,

-আপনার আব্বু জানতেন না এ বিয়ের কথা?

সায়ন উঁচু স্বরে বললো,

-হু। অবশ্যই জানতো।

-তাহলে উনার অমতেও এ বিয়ে?

-মিস্টার আরমান চৌধুরী একমাত্র নিজের সার্থটা বুঝেছেন সবসময়। তোমার আমার বিয়েতে কোন সার্থ নেই বা ছিলোনা। তিনি চেয়েছিলেন বিসনেসম্যান আব্বাস তইমুর এর একমাত্র মেয়ে আরিশার সাথে বিয়ে দিতে।যেখানে তার সার্থ ছিলো। আরমান চৌধুরী চেয়েছিলেন এ বিয়ের মাধ্যমে তিনি পার্টনার শীপ করবেন আব্বাস তইমুর এর সাথে। যেহেতু তা হলো না তাই এ বিয়েতে তিনি যাননি। বলতে পারো তিনি খুশি নন।

-আপনার পিতা হন উনি! নাম ধরে না ডাকলেই নয়?

হঠাৎ রেগে উঠলো সায়ন। কটমটে গলায় বললো,

-এ নিয়ে তোমার না জানাই শ্রেয়।

তারা অবাক চোখে দৃষ্টিপাত করলো। হঠাৎ এমন রাগারই বা কারন বুঝে আসলো না তারার। আবারো মাথা নিচু করে রইলো তারা। সায়ন এসে পাশে বসে তারার। তারা তাকায়। জাগে আরো প্রশ্ন। নিজ পিতাকে নিয়ে এত ঘৃনা প্রকাশ কেন পেলো সায়নের মুখে?

-কি ভাবছো?

-নাহ কিছু না।

-তাহলে তাকিয়ে আছো যে..

-বললে রাগ করবেন?

-উহুক। তবে আরমান চৌধুরীকে নিয়ে কোন কথা নয়।

-আচ্ছা, কিন্তু অভ্রের শাস্তি.?

-কাল পরশু’ই ব্যাবস্হা হয়ে যাবে।

কথাটা বলেই সায়ন আলতো স্পর্শ করলো তারার হাতে। পুরো শরীর ঝেকে উঠলো তারার। এতে মুচকি হাসলো সায়ন। কিছুটা সময় অপলক ভাবে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-ঘুমিয়ে পড়ো। রাত হয়েছে।
____

খুব ভোর! সূর্যমামা তখনো জাগেনি। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো তারার। উঠতে গিয়েও পারলো না উঠতে। কারো বাহুতোরে বাধা দেখে চমকে উঠলো।সবটা বুঝতে পেরেই একরাশ লজ্জা তাকে ঘিরলো যেন। মুচকি হেঁসে তারা সায়নের এক হাত উচু করে সরে যেতে নিলেই আরো শক্ত করে জড়িয়ে নিলো সায়ন। তারার বুক ধুক করে উঠলো। তার হাত ক্রমশ আসর হয়ে আসছে। তারা দ্বিতীয় চেষ্টা করতেই ঘুম ভেঙে গেলো সায়নের। পিঠপিঠ করে আধখোলা চোখে তাকালো তারার দিকে। তারার মুখে স্পশ্ট লজ্জা! সবুজ ডিমলাইটের আলোতেও আক্ষআড়াল হলো না। সায়ন এক চিলতে হেঁসেই বলে ফেললো,

-এত লজ্জা আমার সুখতারার?

আবারো মৃদু হাসলো তারা। কিছুই বলতে পারলো না। সায়ন পাশ থেকে ফোন অন করতেই দেখলো সাড়ে চারটে বাজে। ক্রুদ্ধ নয়তে তাকিয়ে বলে উঠলো সায়ন,

-এত সকাল সকাল উঠছো যে?

-ইয়ে মানে ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে গেলো।

সায়ন আরো খিচে জড়িয়ে নিলো তারাকে। বুকের ধুকপুক আওয়াজে মুখোরিত চারপাশ। প্রতিটা শ্বাস অদ্ভুতভাবে কানে বাজছিলো দুজনের। সায়ন তারার মাথা নিজের বুকে জড়িয়ে চোখ বুজলো। কিন্তু বুজতে পারলো না তারা। তার হৃদপিণ্ড বরাবর কাঁপছে!

একটু পরই ফজরের আজান পড়লো। তারা তখনো জেগে। সায়ন ঘুমে কাদা। তারার উষ্ণ বুক থেকে উঠতেই মন চাইলো না। কিছুটা আলো ফুটতেই আলতো করে সায়নের হাত ছাড়িয়ে উঠে পড়লো তারা। ঘুমন্ত সায়নকে একপলক দেখেই ওয়াশরুমে চলে গেলো।

_______

মোনাজাতে হু হু করে কেদে উঠলেন ইলিমা। পাশে তনয়া সেজদায় ছিলো। মায়ের সশব্দে কান্নার আওয়াজে বুক ছেত করে উঠলো তনয়ায়। ইলিমা কেঁদে কেঁদে দোয়া করতে লাগলেন। নামাজ শেষে তনয়ায় মোনাজাতে সবার জন্য দোয়া করলো। ইলিমা ডাহুক নদীর মতো কাঁদছে। প্রতিটা কান্নার স্বরই বোঝাচ্ছিলো ইলিমা তার আরেক মেয়ে তারার জন্য কাঁদছেন। মায়ের পাশে বসে রইলো তনয়া। কাল রাত থেকে মানুষটা ঘুমোয়নি। আজানের আগেই উঠে কলপাড়ে গিয়েছিলো ওজু করতে। তার আগেই টের পেয়ে যায় তনয়া। বিছানা ছেড়ে উঠে পিছু ডাক ডাকে তনয়া,

-মা কই যাও?

ইলিমা না ঘুরেই বলে উঠলো,

-কেন? ওজু করতে!

-ফজরের আজানের দেড়ি আছে।

-জানি। তাহাজ্জুদ পড়মু।

তনয়া আর কিছু বলেনি। মায়ের ডাথে নিজেও তাহাজ্জুদ আদায় করলো। আগে মকতবে কোরআন পড়তো তনয়া। অনেকদিন পর আবার কোরআন খুলে বসে পড়তে বসতেই আগের থেকে অনেক বেগ পেতে হলো তাকে। তবুও কষ্টেশিষ্টে পড়লো কয়েক পাতা।

মোনাজাদ শেষ হতেই ভাবুক তনয়ার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন ইলিমা। মুচকি হেঁসে মাথায় হাত রাখতেই ধরফর করে উঠলো সে। শান্ত গলায় বললেন ইলিমা,

-তোর পড়াশোনা নাই?

-হুম। আছে তো!

-তাহলে যা পড়তে বস।

-জ্বি আম্মা। আচ্ছা আম্মা, তুমি ভাইয়ারে দেখছো? সে কি বাড়ি ফিরছিলো রাত্রে?

-না। আসে নাই।

-ওও।

বলেই জায়নামাজ গুটিয়ে তনয়া উঠে বসলো। শিত পড়ছে! তনয়া কাথা মুড়িয়ে পড়তে বসলো টেবিলে। ইলিমাও উঠে পড়লেন। তনয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,

-গজি বের করে দিবো?

-পড়ে দিও। এখন লাগবে না।

______
ঘারে কারো উষ্ণ স্পর্শে পুরো শরীর কেঁপে উঠলো তারার। ঘার ফেরাতে যাবে তার আগেই দু হাতে জড়িয়ে আটকালো তারাকে সায়ন। সায়নের ভারি শ্বাস আচড়ে পড়ছে তারার ঘারে। পা দু খানা থরথর করে কাঁপছে তারার। দেড়মিনিট কাটলো এভাবেই। সায়ন বললো,

-তারাদের চুলের গন্ধ এত সুমিষ্ট?

তারা ওভাবেই বলে উঠলো,

-হওয়ার’ই কথা নয় কি?

-হওয়ার’ই কথা? মানে?

ঘার ঘুরিয়ে সায়নের দিকে তাকালো তারা। বললো,

-স্যাম্পুহীনা এ চুলের মূল্য আছে?

-আছে! আমার সুখতারার প্রতিটা কোনায় প্রচুর মায়া। গন্ধ! শুধু আমার তুমি! চুলটা,নাকটা,কানটা এবং লাল রঙের গালটাও শুধু আমার।

সঙ্গে সঙ্গে তারা ছিটকে দু হাত পিছিয়ে গেলো। আকম্বিক তারার আচরনে খানিকটা অবাক হলো সায়ন। তারা উঁচু করে হেঁসে বলে উঠলো,

-ছেলেদের এতটা নির্লজ্জ হতে নেই”!

-কেন?

-ধ্যাত!

বলেই ভেজা চুলে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়লো তারা। লক্ষ ও করলো না চুলবেয়ে অঝোড়ে পানি পড়ছে। কিন্তু এই অচেনা বাড়ির কোন কোনায় গেলে তার লজ্জা গুলো ডাকবে? কোথায় গেলে চুকবে তার এই আকাশসম লজ্জা? তারা ভাবতে ভাবতে কখন নিচে নেমেছে সে নিজেই বুঝে উঠতে সক্ষম হলো না। এদিকে আরমান সাহেব জড়জড় হয়ে বসে পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছিলেন। মেয়েদের হাটার আওয়াজ পেতেই তিনি বলে উঠলেন,

-সাবিহা, তোর মা’কে একবার বলতো শিতের সব কাপড় কই রাখছে? বেশ ঠান্ডা পড়তে আরম্ভ করেছে।

তারার বুঝতে বাকি রইলো না তিনি তারাকে সাবিহা ভাবছেন, না দেখে। তারা ঠাই দাড়িয়ে রইলো। কেউ তারার পেছন থেকে জোরে বলে উঠলো,

-আম্মু বাগানে গাছে পানি দিচ্ছে। আর আমি তো কিছুই জানি না।

তারা পিছু ফিরে সাবিহাকে দেখে শ্বাস ফেললো। এতক্ষণ যেন দম আটকে ছিলো তারার।

আরমাস সাহেব চায়ে চুমুক দিয়ে খবরের কাগজের পৃষ্ঠা উল্টালেন। বললেন,

-বাসায় তো একজন মালি আছেই। তাহলে আমি বুঝলাম না যে, কেন প্রতিদিন পানি দেওয়া লাগে?

বলেই উঠে দাড়ালেন আরমান চৌধুরী। কিন্তু সামনে তারাকে দেখবেন ভাবতেই পারেননি। চোখ যেন ছানাবড়া আরমান সাহেবের।

_______

ফোন হাতে নিয়েই ‘অলিভ’ দিয়ে সেভ করা নাম্বারে কল করলো সায়ন। ওপাড়ে কিছুক্ষন ফোন বাজতেই রিসিভ করে নিলো অভ্র। সায়ন ভালোমন্দো জিজ্ঞেস করতে করতে কথার মাঝেই বলে উঠলো,

-দোস্ত ১২ ই নভেম্বর রাতে যে আড্ডাটা আমারা রাত একটা নাগাত কন্টিনিউ করেছিলাম সে রাতে আমি…

সায়নকে থামিকে খানিক চেঁচিয়ে বললো অভ্র,

-আরে কোন তারিখ বললি? বারো? সে রাতে তো আমি উত্তর হাইওয়ের কলোনিতে ছিলা…!!

#চলবে….

#সূখতারার_খোজে🧚‍♀️
#লেখক:আর আহমেদ
পর্ব ২০💖[গল্পের নতুন মোড়]

-আরে কোন তারিখ বললি? বারো? আরে সেদিন রাতে তো আমি উত্তর হাইওয়ের কলোনিতে ছিলাম। কিন্তু…

বলেই থেমে গেলো অভ্র। পরমুহূর্তেই ভেবে সে অবাক হলো তার অজান্তেই সে কতটুকু বলে ফেলেছে। এপাড়ে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো সায়ন। তার কাজ সম্পন্ন। এটাই চেয়েছিলো সায়ন। চেয়েছিলো অভ্রের গুমড় ফাঁস করতে। আর তালগোলে অজান্তেই সবটা বলে দিয়েছে অভ্র!

-তুই ধরা পড়ে গেছিস অভ্র! তাহলে তু’ই ওই কিডন্যাপার? তুই ওই ছবি তুলে দিয়েছিলি না?

অভ্র হা পা ক্রমশ শীতলতা আহরণ করতে আরম্ভ করেছে। সায়নের কথার উত্তরে আটকানো গলায় বললো অভ্র,

-আ্ আমি কি ক্ করলাম?

-কি করলি মানে? তুই একটা কিডন্যাপার! প্রতারক। পারলি কিভাবে নিজের বন্ধুকে ফাঁসাতে তুই? তুই একটা মানুষিক রোগি অলিভ। তা না হলে আমায় তুই এমন ফাঁসাতে পারতিস না! জানিস? এর জন্য আজ আমার চাকরিটা আর নেই? নিজের একটা পরিচিতি হারালাম আমি!

অভ্রের ঘাম ছুটছে। ভয়ে অস্হির অস্হির লাগছে অভ্রের। অভ্র দিকশারা হয়ে বললো,

-ত্ তুই ভুল ভা…ভাবছিস আমায়। আমি…

-ব্যাস অভ্র! মজার ব্যাপার কি জানিস? আজ চাকরিটা নেই ঠিকি কিন্তু দোষির শাস্তি হবে। সবটা রেকর্ড করা হয়েছে! আর আমি এসব পুলিশের হাতে তুলে দেব। হু, দেব আমি।

-সায়ন, সায়ন এমন করিস না প্লিজ। আমার পুরো কথা..

-তুই তারাকে জোর করে বিয়ে করতে চাইছিলি না? কি রে? বল!

-হ্যা কিন্তু..

-কিন্তু? হ্যা এই কিন্তুর জন্যই তারা আজ আমার লিগাল ওয়াইফ।

মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো অভ্রের। ডান পায়ের উঁচু গোড়ালি আলগা হয়ে আসছে। হতভম্ব হয়ে বলে উঠলো অভ্র,

-এ..এসব কি বলছিস তুই? তোর ওয়াইফ মানে?

-বাদ দে! কাল রিসিপশন! বড় করে পার্টি দেওয়া হবে। সপরিবারে আসতে ভুলিস না। তারপর না হয় আমি সবটা পুলিশের কাছে দিব?

-সায়ন শোন আমার কথা..

ফোন কেটে দিলো সায়ন। অভ্র উন্মাদ পাগলের মতো মেঝেতে ধপাশ করে বসে পড়লো। কপালের রগগুলো দপদপ করছে। সব ওলট পালট লাগছে। সবটা!

_____

আরমান সাহেব তারাকে দেখেই রেগে আগুন হয়ে উঠলেন। কর্কষ কন্ঠে বললেন,

-তুমি? এখানে?

চুপটি করে ঠায় দাড়িয়ে রইলো তারা। আর কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে হনহন করে চলে গেলেন আরমান সাহেব। উনি চলে যেতেই সাবিহা তারার পাশে এসে দাড়ালো। বললো,

-তুমি মন খারাপ করো না। আব্বু অমনি। বাই দা ওয়ে এমন ভেজা চুলে বাইরে কি করছো? আর এই সকাল সকাল গোসল? হুমম?

শেষের কথাটা সাবিহা আনন্দিত কন্ঠে বললো। তারা নিজের মুখ কোথায় লুকাবে এবারে? আরও একরাশ লজ্জা ঘিরে নিলো তাকে। কিন্তু কারো রাগান্বিত কন্ঠে দমে গেলো সাবিহা,

-ছোট ছোটর মতো থাকবি। ভাবি কে এসব কি বলছিস তুই সাবি?

দরজা থেকে ভেতরে ডুকতে ডুকতে বলে উঠলেন সাবিহার মা। তারা পিছনে তাকালো। উনি বললেন,

-এত সকাল সকাল উঠে পড়েছো? আর চুলটা মুছে এসো।

বেশ সুলভ কন্ঠে বললেন মিস আয়রা। তারা জ্বি বলেই চলে গেলো উপরে।

এদিকে আরমান সাহেব ঘরে ডুকতেই আড়চোখে বাইরে তাকিয়ে চোরের মতো ফোন হাতে নিলেন। এদিক ওদিক,একপলক ওয়াশরুমটাও পরখ করে ফোন ধরালেন আব্বাস তুইমুরকে। দু বার ফোন রিং হয়েও রিসিভ করলো না আব্বাস। আরমান সাহেবের উত্তেজনায় হাত পা কাঁপছে। পরের বার ফোন রিসিভ হতেই ওপাড় থেকে বাজখায়ী গলায় বলে উঠলেন কেউ,

-এত ফোন করার কি আছে? এ ডিল আর পসিবল নয় আরমান চৌধুরী। বিসনেসের থেকেও নিজ পার্সোনেলিটি টা নিয়ে আমি কতটা কেয়াফুল আপনার জানা নেই? জানেন না আপনি আমার স্ট্রং হেড’এ কেউ আঘাত করলে তাকে নিঃস না করে আমি দম ফেলি না?

আরমান চটে গেলেও কন্ঠে সাবলীল করে বললেন,

-দেখুন আমি কিন্তু ছেলের বিয়েতে মোটেও রাজি নই। দয়া করে কালকের রিসিপশনে আসবেন সবাইকে নিয়ে। আর আপনার সকল চাওয়া চুকিয়ে দিবো আমি। আ’ম টেলিং ইউ! প্লিজ অর্নব, আরিশা দুজনকেই নিয়ে আসবেন।

-প্রশ্নই আসে না! একটা কথা বলি আপনাকে? গিরগিটি আপনি! দেখলেন তো আজ কেমন ইনভাইট করছেন? এ ইনভিটিশন রিজেক্ট করলাম আমি। আমার মেয়ে ডিপ্রেশনে চলে গেছে আরমান চৌধুরী। সব রেসপন্সিব্লিটি আপনার! দায়ী আপনি আর আপনার ছেলে!

ফোন কেটে দিলেন তইমুর। আরমান বিশ্রীকন্ঠে ‘কচুখোর’ শব্দে গালি দিলেন ওনাকে। কেন এ উশৃঙ্খল? কেন এত রাগ থাকার পরও এতটা শাবলীল ছিলেন আরমান? কোন পাপের সাথে যুক্ত উনি? বিয়েতে নিজে রাজি নয়, তবুও পার্টিতে ইনভাইট? সবটা কি জানেন তইমুর? নয়তো আসল দোষি ই তুইমুর!

আরমান ফোনটা বিছানায় ছুড়ে ফেললেন। বেডের বেত পেড়িয়ে ল্যাম্প বাতির টেবিল ডিস্কটায় আড়াত পেলো ফোন। খেয়াল না করেই বেড়িয়ে গেলেন রুমথেকে আরমান।

গটগট করে সিঁড়ি বেয়ে নামছেন আরমান। আয়রা রান্নাঘরে ডিমের অমলেটটা উল্টাতেই চোখ পড়লো আরমান সাহেবে দিকে। উনি সম্মুখে এসেই বলে উঠলেন,

-কি রান্না করছো সেই থেকে। ক্ষিদে পেয়েছে। সকলে কোথায়?

আয়রা ভয়ক্লিষ্ট কন্ঠে বলে ওঠে,

-আ্ আপনি বসুন আ্ আমি আনছি!

পানিশূন্য কলিজা আয়রার। লোকটা অদ্ভত! সায়ত্রিশ বছরের সংসারে তিনি শান্ত-চিন্তাহীন আরমানকে কখনো দেখেননি। ভয়ে যে তার ডান হাতের রগগুলো দপদপ করছে! আরমান সাহেব একপ্রাকার তাড়া নিয়ে টেবিলে বসলেন। আয়রা একে একে খাবার বেরে দিলো। কিছুটা খেতেই উনি গম্ভির কন্ঠে আয়রাকে বললেন,

-সায়নরা কি খেয়েছে?

-জ্বি না তো।

-সাবিহা যেন ঠিকমতো খেয়ে নেয়। আর ওই মেয়েটাকে বলো যেন আগ বাড়িয়ে কিছু না করে। আর হ্যা, যাকে যাকে ডাকবে ডেকে নিও। কাল রিসিপশন হচ্ছে!

চমকে উঠলেন আয়রা। এই অদ্ভুত মানুষটাকে তিনি বুঝতে অক্ষম! তারা’কে মিডিলক্লাস বলে যে বিয়েতে গেলো না, সে নিজমুখে রিসিপশনের কথা বললো? শুকনো ঠোগ গিলে ‘হুম’ উচ্চারন করলেন আয়রা।

_____
রুমের কোথাও কেউ নেই! তারা এদিক সেদিক তাকিয়ে সায়নকে দেখতে পেলো না। ঘরে আরেকটু এগোতেই ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ কর্নকুহরে হানা দিলো তারার। তারমানে সায়ন ওয়াশরুমে। তারা কিছু না ভেবেই যেই বিছানায় বসবে ওমনি সায়ন চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

-তারা প্লিজ আলমাড়ি থেকে আমার জিন্স আর একটা টি শার্ট বের করে দেবে? আমি ভুলে গেছি নিতে।

তারা নির্বিকারে আলমাড়ির সম্নুখে দাড়ালো। আলমাড়ি খুলে হ্যাঙ্গার থেকে একটি ব্লাক কালারের টি শার্ট বের করে নিলো। এরপর পরের তাক থেকে জিন্স বের করতে যাবে তার আগেই সশব্দে একটি ফাইল নিচে পড়লো। তারা বিরক্তি নিয়ে নিচে ঝুকতেই বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ়! কারো ডিভোর্স পেপার’স! তারার বুকে দামামা বাজছে। কার ডিভোর্স পেপার সায়ন তার আলনারিতে রেখেছে? ফাইল তুলে পরের পৃষ্ঠা উল্টাতেই তারার ভূ-মন্ডল কেঁপে উঠলো। আরমান চৌধুরীর ডিভোর্স পেপার। তারমানে সায়নের বাবা আগে আরেকটা বিয়ে করেছিলো? আর সায়ন এটা অতি যত্নে নিজের আলমাড়ি তে রেখে দিয়েছে? কেন?

#চলবে…