সেই মেয়েটার উপাখ্যান পর্ব-২৩+২৪

0
212

#সেই মেয়েটার উপাখ্যান
#পর্ব ২৩
আপাতত চাকরি না করে শুধু আইন পড়ার কথায় সরলা রাজি হয়ে যাওয়ায়, সেদিনের মতো প্রসঙ্গ ধামাচাপা পড়লো, বাবা আর ভাইঝির ওকালতি পড়ায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন না দেখে সুকান্ত নিজেও আর অহেতুক তিক্ততা বাড়াতে চাইলেন না। ঘর থেকে বেরোনোর আগে সান্যাল মশাই নাতনি কে বারবার করে চাকরি বা ব্যবসা না করার শর্তে যে তিনি তাকে ল নিয়ে পড়তে দিচ্ছেন, একথা মনে করিয়ে দিলেন।

এরপরের প্রস্তুতি দ্রুত চলতে লাগলো, অদ্বিতীয়া তার নিজের যোগ্যতায় কলকাতার অন্যতম সেরা ল কলেজগুলোর একটাতে ভর্তি হলো। এতকিছুর মধ্যেও সরলার প্রতি অদ্বিতীয়ার মনে মনে একটু ক্ষোভ জন্মেছিল, যে ছোটো মা তাকে একদিন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা বলেছিলো সেই ছোটো মাই আবার দাদুর তার ওকালতি করতে না দেওয়ার কথায় সমর্থন জানাবেন এটা তার আশা ছিলো না যদিও সে বরাবরের অন্তর্মুখী মেয়ে, তার এই ক্ষোভের কথা সে সরলা কে একটুও বুঝতে দিলো না। নির্দিষ্ট সময়ে তার কলেজে যাতায়াত শুরু হলো।

সোমা মোটামুটি সাধারণ ফল করে বাড়ির একদম কাছের কলেজে ভর্তি হলো, তরুণের সঙ্গে দেখা হওয়া আটকানোর জন্যেই যদিও তাকে বাড়ির সামনের কলেজে ভর্তি করা হয়েছিলো তবুও তাকে আটকানো তার বাবা মায়ের পক্ষে সম্ভব ছিলো না। অদ্বিতীয়ার সঙ্গে তার নিয়মিত ফোনে কথা হতো, কলেজ এক না হলেও তার সাথে অদ্বিতীয়ার যোগাযোগ যে একটুও কমলো না তার অন্যতম কারণ ছিলো সুমন। যে সময় সুমন কে ক্লাবে ফোন করা যেতো সেসময়গুলো যেহেতু দাদু ঘরে উপস্থিত থাকতেন সেহেতু সুমনের বাড়িতে ফোন করার জন্যে অদ্বিতীয়ার সোমা কে দরকার হতো।

সোমা যথেষ্টই স্বার্থপর মেয়ে ছিলো, বন্ধু কে দাদার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়ার সুযোগে মাঝেমধ্যেই সে তরুণের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার পয়সা, লুকিয়ে সিনেমা দেখার খরচ, কোনো কোনো সময়ে অদ্বিতীয়া কে দিয়ে বাড়িতে ফোন করিয়ে তার সঙ্গেই সোমা বেড়াতে যাচ্ছে, এই ধরনের মিথ্যে কথা বলার মতো কাজ করিয়ে নিতো। অদ্বিতীয়া এসব কথা কখনো সুমনের সামনে প্রকাশ করতো না, পাছে এসব শুনে সুমন বোন কে কিছু বলে সেই জন্যেই সে এসব কথা সব সময় লুকিয়ে রাখতো।

গাড়ি করে কলেজের গেটে তাকে নামিয়ে দিয়ে সুকান্ত কোর্টে চলে যেতেন, আবার ফেরার সময় তুলে নিয়ে ফিরতেন, ড্রাইভারের সঙ্গে না থাকার সুযোগে অদ্বিতীয়ার প্রেম ক্রমশ জমে উঠছিলো। সরলার সঙ্গে তার নতুন করে সুমন কে নিয়ে কোনো কথোপকথন না হলেও যেহেতু ছোটো মায়ের সঙ্গে সুমনের কথা হয়েছিলো, তাই এতে ছোটো মার মত আছে ধরে নিয়েই অদ্বিতীয়া নিশ্চিন্তে তার প্রেমপর্ব চালিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো।

সুমন প্রায় দিনই সকালে ক্লাব থেকে ফেরার পথে তার সঙ্গে দেখা করার জন্যে কলেজ থেকে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকতো, নির্দিষ্ট সময়ে অদ্বিতীয়া সেখানে উপস্থিত হতো। কলেজ থেকে এতোটা দূরে হেঁটে আসতে অদ্বিতীয়ার বিরক্ত লাগতো, কিন্তু সুমন ক্রমশই ময়দানের পরিচিত মুখ হয়ে উঠছিলো, তার পক্ষে কলেজের সামনে গিয়ে দাঁড়ানো সম্ভব হচ্ছিলো না। এরকম সময়ে একদিন প্রবল বৃষ্টির মধ্যে দেখা করতে আসতে গিয়ে অদ্বিতীয়া প্রায় ভিজে গেলো, বিরক্ত গলায় সুমন কে বললো,

আমি প্রতিদিন এতোটা দূরে হেঁটে আসতে পারবো না! লোকে তোমায় চেনে চিনুক! তবু তুমি কাল থেকে কলেজের গেটে দাঁড়াবে!

সুমন নিজেও ভিজে গিয়েছিলো, সেও বিরক্ত হলো,

হ্যাঁ, তারপর পরশুই তোমার দাদুর কানে সব পৌঁছে যাবে! আর তারপরের দিনই তোমার বিয়ে দিয়ে দেবে কোনো বনেদী ঘরের ছেলের সঙ্গে! বুড়োটা যা! আর এক সেকেন্ডও দেরি করবে না! আমাকে তোমার বিয়েতে নেমন্তন্ন করতে ভুলবে না কিন্তু!

অদ্বিতীয়া এবার থমকালো, তারপর একটু রাগের গলায় বললো,

এই! তুমি না ভীষণ খারাপ ভাবে কথা বলো, এইসব বুড়ো টুড়ো বলবে নাতো! দাদুভাই বয়স্ক মানুষ, বয়সেও অনেক বড়ো তোমার থেকে! তাঁর সম্পর্কে এই ধরনের কথা শুনতে একটুও ভালো লাগেনা আমার!

আরে! ধুস! বিয়ে দিয়ে দেবে কিনা সেটা তো বলো? একটুও মিথ্যে বলেছি কি?

বিরক্ত গলায় বললো সুমন, অদ্বিতীয়া এবার আরো ক্ষুব্ধ হলো,

সেটা কি শুধু দাদুভাই নাকি! সেতো ছোটো মাও তাই চায়! আমার ধারণা ছিলো, ছোটো মা অন্তত চাইবে যে আমি চাকরী করি! গ্রামের বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আমার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা উচিত, এটা ছোটো মা কতো বার বলেছে আমাকে! সেই ছোটো মাও শেষ পর্যন্ত দাদুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাকে কোর্টে প্র্যাকটিস করতে দেবেই না বলেছে! তাহলে আর এইসব পড়াশুনা করেই বা লাভ কি! শেষমেষ বিয়েই তো করতে হবে! দুদিন আগে নাহলে দুদিন পরে! তাই বলে এইসব একদম বলবে না দাদুভাই সম্পর্কে!

যাহ শালা! তোমার দাদু আমার থেকে বড়ো বলে, বুড়ো কে বুড়ো বলা যাবে না! আর ছোটো মা তো ঠিকই বলেছে! কবে থেকে আমার সঙ্গে কাকিমার কথা হয়ে আছে, তুমি পড়াশোনা শেষ করলেই আমাদের বিয়ে হবে!

এবার একটু মজার গলায় বললো সুমন, অদ্বিতীয়া আরো রেগে গেলো,

আবার! আবার তুমি এইসব ভাষা বলছো! বলেছি না তোমাকে কতদিন, এইধরনের ভাষায় কথা বলবে না! তাও একই কথা বারবার বলো! শালা আবার কি? কোনো ভদ্রলোককে এসব বলতে শুনেছ কখনো? আর তুমিও তো মনে হচ্ছে তাই চাও, তাই না? আমি বিয়ে করে বাড়িতে বসে থাকি? তুমি খেলে খেলে বেড়াবে, আর আমি বাড়িতে বসে বসে রান্না করবো?

এবার সুমন একটু গম্ভীর হলো, অদ্বিতীয়া বাস্তবিকই রেগে গিয়েছে দেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলো,

আরে! তুমি তো দেখছি সব কথাতেই রেগে যাচ্ছ! আচ্ছা ঠিক আছে, আর তোমার দাদু কে নিয়ে কিছু বলবো না! সরি! তবে একটা কথা ভেবে দেখো, যদি তুমি বিয়ে না করে প্রাকটিস করার কথা ভাবো সেটা কিন্তু কিছুতেই সম্ভব হবে না কখনো! তোমার দাদু সেটা মেনে নেবেন না! তাহলে কাকিমা কতোটা বুদ্ধিমতি ভাবো, তিনি কিন্তু বিয়ের পরে তোমার প্রাকটিস করার কথা ভেবেই তোমার দাদুর শর্তে রাজি হয়েছেন। যদি ধরো আমাদের বিয়ে হয়ে যায় একবার, তখন তো তুমি ওকালতি করলেও আর দাদু কিছু বলতে পারবেন না! তুমি স্বাধীন হয়ে যাবে! ব্যাপারটা বেশ ভালো হবে না, সেদিক থেকে ভাবতে গেলে?

এবার অদ্বিতীয়া শান্ত হলো, ঠান্ডা মাথায় সব কথা ভেবে সে সুমনের যুক্তি কে খুব বেশি অগ্রাহ্য করতে পারলো না। ছোটো মার ওপরের জমে থাকা ক্ষোভ তার অনেকটাই হালকা হয়ে গেলো, কিছুক্ষন চুপ করে থেকে সে আস্তে আস্তে বললো,

আমার না ছোটো মা কে খুব অদ্ভুত লাগে জানো! ছোটো মা আজ পর্যন্ত আমার সঙ্গে কখনো খারাপ ব্যবহার করে নি, কিন্তু আমাকে ভালোবাসে বলেও মনে হয়নি কখনো! আমি ঠাম্মাকে যেমন খুব ভালো করে বুঝতে পারি, জানি তিনি আমাকে একটুও ভালোবাসেন না, ছোটো মার ক্ষেত্রে কিন্তু তেমনটা নয়! আমাকে ছোটো মা কিন্তু অনেকবার বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছে!

সুমন এতক্ষন মন দিয়ে শুনছিল, এবার বললো,

একবার তো আমি নিজেই দেখলাম সেটা! তোমাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কি হয়েছিলো মনে আছে? আচ্ছা, তোমাদের ওই বাড়িটায় এখন কে থাকে? কাকু, কাকিমা তো চলে এসেছেন, তাই না? জায়গাটা আমার দারুন লেগেছিলো!

অদ্বিতীয়া মাথা নাড়লো,

আমারও খুব পছন্দের ছিলো! মাধ্যমিকের পরে প্রথম থাকতে গিয়ে ভালো লাগেনি কয়েকদিন, তারপরে খুব ভালো লাগতো! ওখানে ছোটো মা আর আমি ছাদে দাঁড়িয়ে অনেক গল্প করতাম, কলকাতায় আসার পরে ছোটো মা আমার সঙ্গে আর খুব বেশি কথা বলে না এখন! কিন্তু দাদুভাই ওই বাড়িটা বিক্রি করে দিয়েছেন, এখন আর ওটা নেই!

সুমনও দুঃখিত হলো,

তাই নাকি! খুব সুন্দর বাড়ি ছিলো! যাকগে, কি আর করা যাবে! আচ্ছা, চলো কোথাও গিয়ে বসি একটু! আজ আর এই ভাবে দাঁড়ানো যাবে না, খুব বৃষ্টি!

বাইরে সত্যিই খুব বৃষ্টি ছিলো, অগত্যা দুজনে গিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে বসলো কিছুক্ষন। রেস্টুরেন্টে বেশ ভিড়, অনেকেই বৃষ্টি থেকে বাঁচতে এখানে এসে বসেছে।

আমার না খুব ভয় করছে! যদি কেউ আমাকে চিনে ফেলে! দাদুভাই সব জেনে যাবেন তাহলে!

চারপাশের জমাট ভিড় টার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে একটু ভয়ের গলায় বললো অদ্বিতীয়া, সুমনও নিজের মাথা নিচু করলো। দুজনেরই ওখানে বসে থাকার কোনো ইচ্ছেই ছিলো না, এতদিন পর্যন্ত কখনোই ওরা কোনো রেস্টুরেন্টে ঢোকেনি শুধু চিনে ফেলার ভয়েই, কিন্তু আজ দুজনের কাছেই আর কোনো বিকল্প উপায় ছিলো না।

টানা বৃষ্টিতে বাইরে বেরোতে না পেরেই বাধ্য হয়েই ওরা ওখানেই বসে রইলো, বৃষ্টি কমতে কমতে যথেষ্ট দেরি হলো, অদ্বিতীয়া যখন বেশ খানিকটা দেরি করে কলেজের গেটে হেঁটে পৌঁছালো, তার অনেকটা আগে থেকেই সুকান্ত গাড়ি নিয়ে ওখানে দাঁড়িয়েছিলেন। ভাইঝি কে গেট থেকে না বেরিয়ে অন্য দিক থেকে হেঁটে আসতে দেখে তিনি অবাক হলেন,

তুই কলেজে ক্লাস করছিলি না? কোথায় গিয়েছিলি?

দৌড়ে গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে অদ্বিতীয়া জবাব দিলো,

ক্লাস শেষ হয়ে গিয়েছিলো আজ তাড়াতাড়ি! বৃষ্টির জন্যে স্যার আসেননি! খুব খিদে পেয়ে গিয়েছিলো আমার, তুমি আসছিলে না, তাই সামনেই একটা দোকান আছে, ওখানে বন্ধুদের সঙ্গে খেতে গিয়েছিলাম!

সুকান্ত পাশে বসা ভাইঝির দিকে তাকিয়ে বললেন,

ইস! পুরো ভিজে গিয়েছিস তো! এই বৃষ্টির মধ্যে কেউ বাইরে বেরোয়! কলেজের ক্যান্টিনে খাসনি কেনো?

অদ্বিতীয়া মুখ বিকৃত করলো,

কি বাজে খেতে! ক্যান্টিনে কেউ খায়না! চলো তাড়াতাড়ি, বাড়ি গিয়ে বদলে নেবো!

সুকান্ত আর সময় নষ্ট না করে গাড়ি চালালেন, প্রবল বৃষ্টিতে কলকাতার রাস্তা ততক্ষনে নদীর আকার নিয়েছে, তাঁরা যখন বাড়ি পৌঁছলেন তখন সন্ধ্যে পেরিয়ে গেছে, প্রতাপ সান্যাল তখন চিন্তিত মুখে দোতলার বারান্দায় পায়চারি করছেন। তাদের দেখেই উদ্বেগের গলায় সুকান্ত কে উদ্দেশ্য করে বললেন,

পিয়া কে পেয়েছো তাহলে! আমি তো তোমার দেরি দেখে ভাবছিলাম পিয়া কে বোধহয় খুঁজেই পাওনি তুমি!

সুকান্ত অবাক হলেন, বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন,

খুঁজে পাবো না কেনো? বৃষ্টির জন্যে গাড়ি চালাতে সমস্যা হচ্ছিলো, তাই দেরি হলো!

সরযূ তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করলেন,

ওমা! ও কলেজেই ছিলো নাকি! তবে যে তোর বাবা কে ফোন করে এক মক্কেল বললো, পিয়া নাকি কোন খাবারের দোকানে একটা ছেলের সঙ্গে বসে ছিলো?

অদ্বিতীয়ার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো, এরমধ্যেই যে দাদুর কাছে খবর পৌঁছে যেতে পারে সেটা সে এক মুহূর্তের জন্যেও ভাবে নি। কিন্তু সে কিছু বলার আগেই সুকান্ত বিরক্ত হলেন,

হ্যাঁ, আমি আসতে দেরি করছিলাম তাই বন্ধুদের সঙ্গে খেতে গিয়েছিলো। তাতে কি হয়েছে? কে তোমার সেই মক্কেল, নামটা শুনি একটু! মানুষের নিজস্ব বলে কিছু থাকবে না! সব খবর তোমার কানে পৌঁছে দিতে হবে? কালই তার কোর্টে ব্যবস্থা করছি!

প্রতাপ সান্যাল স্ত্রীর নির্বুদ্ধিতায় যথেষ্টই বিরক্ত হলেন, ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,

আহ! ছাড়ো এসব! তোমার মা কে তো জানো! তিল কে তাল করা স্বভাব! সেই মক্কেল কোনো খারাপ কথা বলেনি, পিয়া তার দোকানেই বসে ছিলো। তুমি আসোনি দেখে সে পিয়া কে গাড়ি নিয়ে আমার বাড়িতে পৌঁছে দেবে কিনা সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করছিলো। আমি অন্য কারণে চিন্তা করছিলাম, ভাবছিলাম যদি ও অন্য কোথাও গিয়ে থাকে আর সেটা তুমি জানতে না পারো, তাহলে এই বৃষ্টির মধ্যে তুমি তাকে খুঁজে পাবে কি করে! যাকগে! এখন ফিরে এসেছ দুজনেই, নিশ্চিন্ত! ওপরে যাও সবাই, ভিজে কাপড় জামা ছাড়ো গিয়ে!

শুধু দাদুর বলার অপেক্ষা টুকু ছিলো, আর এক মুহূর্তও দেরি করলো না অদ্বিতীয়া, সে ছুটে দোতলায় নিজের ঘরে উঠে গেলো। ঘরে ঢুকেও ভয় যাচ্ছিলো না, রেস্টুরেন্টের মালিক দাদুভাই এর মক্কেল! ইস! একবারও যদি বুঝতে পারতো ও! সুমন কে যে লোকটা দেখেছে সেটা ঠাম্মার কথা থেকেই পরিষ্কার, তবে লোকটা কি সুমন কে চিনতে পেরেছে! যদি সুমন কে চিনে ফেলে তাহলে কি হতে পারে ভেবেই বুকের ভেতরটা হিম হয়ে আসছিলো অদ্বিতীয়ার। দাদুভাই ঠিক কি কি করতে পারে, সে সম্পর্কে খুব ভালো আন্দাজ তারও নেই!
ক্রমশ

#সেই মেয়েটার উপাখ্যান
#পর্ব ২৪
পাছে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করলে দাদুর মুখোমুখি পড়ে যেতে হয়, অনেকটা সেই ভয়েই আজ তাড়াতাড়ি বইপত্র নিয়ে বসে পড়েছিলো অদ্বিতীয়া। যদিও শেষ রক্ষা হলো না, রাতে খেতে বসে নাতনির মুখোমুখি হলেন প্রতাপ সান্যাল, গলায় গাম্ভীর্য এনে বললেন,

তখন ভিজেপুড়ে এলে তাই তোমাকে বলিনি দিদিভাই, কিন্তু কাজটা তুমি ভালো করো নি!

অদ্বিতীয়া চোখ তুলে দাদুর মুখের দিকে তাকালো, সঙ্গে সুকান্তও।

আমি বারবার তোমায় বুঝিয়েছি, আমাদের মতো বাড়ির মেয়েরা ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা করে না, তারা নিজেদের কে একটা খোলসের মধ্যে মুড়ে রাখে। একই কলেজে পড়ছো মানে সহপাঠী হিসেবে ছেলেরা তো থাকবেই, কিন্তু তারা তোমার কতো কাছাকাছি আসতে সাহস পাবে, সেটা তোমার চারিত্রিক দৃঢ়তার ওপরে নির্ভর করবে!

ওরা আমার বন্ধু দাদুভাই, আর ওখানে মেয়েরাও ছিলো,

নিচু গলায় বলতে চেষ্টা করলো অদ্বিতীয়া, প্রতাপ সান্যাল হাত তুললেন,

আমার কথা এখনো শেষ হয়নি! একই কথা মেয়েদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য! মেলামেশা সমানে সমানে হয়! সব মেয়েরাই তোমার বন্ধু হতে পারে না! হতে পারে, ওটা ভালো কলেজ, মানে যারা যোগ্য তারাই সুযোগ পেয়েছে! কিন্তু তার মানে এই নয় যে তারা সবাই তোমার মেলামেশা করার উপযুক্ত! পড়াশোনায় ভালো হওয়াটাই বনেদী বাড়ির মেয়ের বন্ধু হবার একমাত্র মাপকাঠি নয়! খোঁজ খবর নিয়ে, তাদের বাড়ি, বংশ পরিচয় জেনে তারপরে বন্ধুত্ব করতে হয়! এটা এতদিনেও তোমাকে বুঝিয়ে উঠতে পারলাম না!

সুকান্ত হেসে উঠলেন, বিদ্রুপের গলায় বললেন,

তোর বন্ধুদের নামের তালিকা দাদুর হাতে দিস পিয়া, তারপর দাদু তোকে ঝাড়াই, বাছাই করে দেবে!

অদ্বিতীয়া অবশ্য হাসলো না, বহু বছর ধরে এসব শুনে সে অভ্যস্ত, সে মাথা নিচু করে খাবার খেয়ে যেতে লাগলো। প্রতাপ সান্যাল ছেলের বিদ্রুপের উত্তর দেওয়ার আগেই রতিকান্ত খাবার থালা থেকে মাথা তুললো, সে ইতিমধ্যেই তার সান্ধ্য কালীন মদের গেলাস শেষ করে এসে খেতে বসেছিলো, ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

কাদের তালিকা ঝাড়াই বাছাই হবে? ছেলে বন্ধুদের না মেয়ে বন্ধুদের? বনেদী বাড়ির ছেলেদের আবার কিসের তালিকা? তারা সবাই ধোওয়া তুলসি পাতা, তাদের কোনো দোষ লাগে না!

বড়ো ছেলের কথার জবাব প্রতাপ বাবু কোনোদিনই দেন না, আজও দিলেন না, গিন্নীর দিকে তাকিয়ে বললেন,

এটা ভদ্রলোকের বাড়ি সরযূ! কতদিন বলেছি তোমায়, এখানে একসঙ্গে খেতে তারাই বসবে, যারা বসার যোগ্য হবে!

সরযূ তাড়াতাড়ি বড়ো ছেলের মাথায় হাত রাখলেন,

যা বাবা! তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে যা! অনেক রাত হয়েছে!

মাতাল রতিকান্তের অবশ্য একটুও থামার ইচ্ছে ছিলো না, সে এক ঝটকায় মায়ের হাত সরিয়ে দিয়ে বাবার দিকে ফিরলো, জড়ানো গলায় বললো,

কাকে বলে ভদ্রলোক? সারা জীবন যার লোকের পেছনে বাঁশ দিয়ে গেলো, সে আবার অন্য কে সভ্যতা, ভদ্রতা শেখায়!

এবার প্রতাপ বাবু রেগে অগ্নিশর্মা হলেন, হিতাহিত জ্ঞান শুন্য হয়ে চিৎকার করে বললেন,

কার পেছনে বাঁশ দিয়েছি আমি? বলো তুমি, বলতে তোমাকে হবেই!

রতিকান্তও গলা চড়ালো,

কার পেছনে দাওনি? আমার পেছনেও তো সব সময় লোক লাগিয়ে রেখেছিলে সারাজীবন! কোথায় যাবো, কি খাবো, কি করবো, কার সঙ্গে মিশবো, সব প্রতাপ সান্যাল ঠিক করবে! তুমি সান্যাল মশাইয়ের ছেলে না! এখানে কি করছো? যাও বাড়ি যাও! লোকে রাস্তায় দেখা হলেই জ্ঞান দেবে! শালা বাপ না পুলিশ! তুমি শালা কোথায় যাও, কার পেছনে কাকে লাগাও, কার ধড় মুন্ডু আলাদা করছো, আমি খোঁজ রাখতে গেছি কখনো?

পরিস্থিতি এবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিলো, মাতাল রতিকান্ত কে থামানো বেশ কঠিন ছিলো, তার এতো বছরের জমে থাকা ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসে সান্যাল মশাই কেও বিব্রত করে ফেলেছিলো ততোক্ষনে। কার কার ধড় মুন্ডু আলাদা করার খবর ছেলের কাছে আছে সে খবরের জন্যে মনে মনেই বিচলিত হচ্ছিলেন প্রতাপ সান্যাল, সুকান্ত একবার চেষ্টা করলেন, দাদার দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বললেন,

আচ্ছা, ঠিক আছে! যা এখন ঘরে যা!

রতিকান্ত মাথা নাড়লো, আসন ছেড়ে টলতে টলতে উঠে দাঁড়ালো, আঙ্গুল তুলে বাপের দিকে তাকিয়ে বললো,

এই লোকটা! এই লোকটা আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে! এর পেছনে লোক লাগানো স্বভাবের জন্যেই আজ আমার এই অবস্খা! যদি সেই ছোটো থেকে আমি কোথায় যাই, কি করি এই খবরের জন্যে লোক না লাগিয়ে রাখতো, তাহলে আমি আজ শান্তি তে বাঁচতে পারতাম!

এবার সরযূ এগিয়ে এলেন, ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,

বাবা তো তোর ভালোই চেয়েছে সারাজীবন! আমি জানি তুই এসব কেনো বলছিস! ওই মেয়ে তোর উপযুক্ত ছিলো না, তাও তো আমরা মেনে নিয়েছিলাম! কিন্তু ভগবানের ওপরে তো কারো হাত নেই! তাই সে চলে গেলো! তোর আবার বিয়েও দিলাম, কিন্তু সে কপালও তো মন্দ আমার! সব দোষ কি আর বাবার! কে জানে সে এমন হবে!

রতিকান্ত মায়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো, ঘেন্নার গলায় বললো,

সে মরেছে আপদ গেছে! তবে ওই প্রতাপ সান্যাল পেছনে লোক লাগিয়ে না রাখলে এতো কিছু হতো না! আর আবার বিয়ে দিতে কে চেয়েছিলো? সেও তো ওই প্রতাপ সান্যাল, তাহলে আজ এই জ্বালার জন্যে কে দায়ী, সেই তো নাকি? এই যে একজন সারাক্ষন হাতে মাথা কাটছে, কি জন্যে? ওই লোকটার জন্যেই তো?

এবার সরযূ একটু প্রীত হলেন, সরলা যে হাতে মাথা কাটে, সে নিয়ে আক্ষেপ তাঁরও কম নেই। আজ ছেলেকেও একই কথা বলতে দেখে তিনি সমব্যথী হলেন, দুঃখের গলায় বললেন,

জানি বাবা! কি করবো বল! তোর কষ্টে আমিও কষ্ট পাই! কিন্তু করার কিছু নেই আর, এই করেই বাকি দিনগুলো চলতে হবে বাবা!

সরলা মাথা নিচু রেখেই খাবার পরিবেশন করছিলো, স্বামী এবং শাশুড়ির এতো কথার পরেও সে একটাও কথা বললো না, একমনে নিজের কাজ করে যেতে লাগলো। অদ্বিতীয়া এতক্ষন চুপ করেই ছিলো, বাবার বলা কথাগুলো তার কানে বাজছিল, তার মায়ের মৃত্যু কে আপদ বিদেয় বলা তার জন্যে যথেষ্টই কষ্টের ছিলো। এবার সরলা সম্পর্কেও ঠাকুমা ও বাবার খারাপ খারাপ মন্তব্য তার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে দিলো, হটাৎ করেই সে দাদুর চোখের দিকে সোজাসুজি তাকালো,

দাদুভাই! আমার বন্ধুরা খুব সাধারণ ঘরের, তারা কেউ বনেদী নয়, কিন্তু বিশ্বাস করো তাদের বাড়িতেও কেউ এতো খারাপ কথা বলে না! বাবা আর ঠাম্মা, মা আর ছোটো মা সম্পর্কে যে কথাগুলো বলছে সেগুলো কি বনেদী বাড়িতে বলে, তুমিই বলো?

এবার প্রতাপ বাবু বাস্তবিকই ক্ষুব্ধ হলেন, নাতনির দিকে তাকিয়ে বললেন,

না! কখনোই বলে না! তুমি একদম ঠিক বলেছো! আমারই দুর্ভাগ্য, এতো কুলাঙ্গার সন্তান আমার বংশে জন্মেছে! যে নিজের স্ত্রী কে শ্রদ্ধা করতে পারে না, সে অন্য মহিলাদের কি করে সম্মান করবে! আর সরযূ! বৌমা অনেকদিন এ বাড়িতে এসেছে, তারও জামাই আসার সময় হয়ে গেছে প্রায়, এতদিন পরেও তুমি এইভাবে কথা বলছো!

সরযূ থমকালেন, নাতনির ইন্ধনেই স্বামী তাঁকে এসব বলছেন বুঝতে পেরে তাঁর রাগ অদ্বিতীয়ার ওপরে পড়লো, তীক্ষ্ণ গলায় বললেন,

মা! কোন মায়ের কথা বলছিস! যে মাকে চোখেই দেখলি না কখনো, তার প্রতি দরদ এক্কেরে উথলে পড়ছে! আর তোর ওই ছোটো মাই বা তোকে কতো ভালোবাসে রে? কোনোদিনও কোলে তুলেছে বলেও তো মনে পড়ে না! হটাৎ এতো সোহাগ কেনো? তলে তলে মায়ে ঝিয়ে সান্যাল বাড়ির সর্বনাশের চেষ্টা করছিস নাকি? জেনে রাখ, সরযূ বেঁচে থাকতে সেসব কিচ্ছু হতে দেবো না!

এবার সুকান্ত ভাতের থালা ঠেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন, মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,

তুমিই তো সান্যাল বাড়ির সর্বনাশ চেয়ে এসেছো সব থেকে বেশি! আর অন্য কাউকে দরকার নেই, এ বাড়ির যা সর্বনাশ তুমি করেছো এতদিন ধরে, তার মেরামত করতেই সারাজীবন চলে যাবে! বাবা তো তাঁর মামলা, মোকদ্দমা, মক্কেল নিয়েই ব্যস্ত থেকেছেন সারাজীবন, তাঁর কানে গুছিয়ে সব কথা তুলে দিয়েছে কে? তুমিই তো! কে ভালো, কে খারাপ, কে সান্যাল বাড়ির উপযুক্ত, কে নয় সবটাই বাবা তোমার মুখেই শুনেছে, যাচাই করার চেষ্টাও করেনি কখনো! তোমাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে বাবা, আর তুমি সেই সুযোগটাই নাও সব সময়!

সরযূ ক্ষিপ্ত হলেন,

তুই তো বলবিই! তোরই তো সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছি আমি! আমার জন্যেই তো ওই মেয়েটা এই বাড়িতে পা দিতে পারে নি, তাই না? তোর রাগের কারণ কি আর আমি জানি না! নিজেকে বেশি চালাক ভাবিস তুই, এই সুযোগে নিজের গায়ের জ্বালাও মেটাতে চাইছিস!

যেকোনো কথায় রমার কথা টেনে আনা সরযূর স্বভাব ছিলো, আজও এই সুযোগে তিনি নিজের দোষ ঢাকতে বিষয় কে সম্পূর্ন ঘুরিয়ে দিয়ে রমার গুষ্টির তুষ্টি করতে লাগলেন। সুকান্ত ক্রমশই আরো বেশি উত্তেজিত হচ্ছিলেন, মা, ছোটো মার সঙ্গে এবার বড়দি কে যুক্ত করে ঠাকুমা যে ধরনের কথা বলছিলেন তা অদ্বিতীয়া কেও ক্ষুব্ধ করে তুলছিলো। স্ত্রী এবং বড়ো ছেলের ওপরে বিরক্ত হয়েই এবার প্রতাপ সান্যাল উঠে পড়লেন, তিনি হেঁশেল ছেড়ে বেরিয়ে যেতেই সরলা সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ালো, স্বামীর দিকে তাকিয়ে আঙুল তুলে দোতলার সিঁড়ির দিকে দেখিয়ে কড়া গলায় বললো,

সব কথা শেষ তো? আর কিছু বাকি নেই তো? তাহলে এবার সোজা নিজের ঘরে চলে যাও! ঘরে বসে যার সম্বন্ধে যা বলার আছে বলো গিয়ে! আর এক মুহুর্তও এখানে দাঁড়াবে না!

রতিকান্ত টলছিল, দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

এই আরেক জন! সর্বনাশী! জীবনটা আমার ছারখার করে দিলো! ওই লোকটা যদি আবার বিয়ে না দিতো, তাহলে এই সর্বনাশী আজ এ বাড়িতে পা দিতে পারতো না!

সরযূ এই সুযোগে সহানুভূতির গলায় কিছু বলতেই যাচ্ছিলেন, তার আগেই স্বামী কে বলা, সরলার তীক্ষ্ণ অথচ চাপা গলা তাঁকে থামিয়ে দিলো,

কতবার বলেছি, মুখ খোলাবে না আমাকে! হাটে হাঁড়ি ভাঙতে চাও? ভালো চাও তো এক্ষুনি ওপরে উঠে যাও!

এই কথাটুকুই যথেষ্ট ছিলো, রতিকান্ত আর এক মুহুর্ত দেরি না করে দ্রুত পায়ে দোতলার সিঁড়ির দিকে এগোলো, ছেলের এই অদ্ভুত পরিবর্তন দেখে সরযূ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকলেন, সুকান্ত এবং অদ্বিতীয়াও অবাক দৃষ্টিতে সরলার দিকে তাকালো। রতিকান্ত উঠে যেতেই সরলা আর একটুও অপেক্ষা করলো না, সে নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।

এরপরে রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে থাকার আর কোনো মানে ছিলো না, ছেলের বউ হাটে কি হাঁড়ি ভাঙার কথা বলছে ভাবতে ভাবতে সরযূ দোতলায় নিজের ঘরের দিকে রওনা হলেন, এ যাত্রায় অল্পের ওপর দিয়ে ছাড়া পেয়ে অদ্বিতীয়াও তার ঘরের দিকে রওনা হলো। ঘরে ঢুকেই সরযূ স্বামীর দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে পুত্রবধূর বলা কথাগুলো স্বামীর কানে তুলে দিলেন, কিন্তু প্রতাপ বাবু স্ত্রীর ওপরেই ক্ষিপ্ত ছিলেন সেই মুহূর্তে, তাই এই কথা নিয়ে আলোচনা না করে তিনি সুকান্তর মতোই বিরক্ত হলেন,

সত্যি সরযূ! তোমার ছোটো ছেলে ঠিকই বলছিলো, সব কথা তুমি এসে বলো আমাকে! ওদের স্বামী, স্ত্রীর মধ্যে কি বিষয়ে কথা হচ্ছিলো, সেটা জানাও কি তোমার প্রয়োজন!

সরযূ তাড়াতাড়ি স্বামীর মুখের কাছে হাত নিয়ে গেলেন,

আহ! আস্তে! তোমার তো মাথা গরম হয়েই আছে সব সময়! তুমিই তো এতকাল বলতে তুমি শিকড় বাকড় মানো না, কি জন্যে ছেলে বশ হয়ে আছে সেটা জানার চেষ্টা করতে! আজ তো সেই চেষ্টাই করছি, সেটা বুঝছো না! হাটে হাঁড়ি ভাঙার কথা বলতেই ছেলে চুপ করে গেলো কেনো, সেটা জানতে হবে না? কি খবর জানে ওই বউ সেটা বার করতে পারলেই আমার ছেলে কে আমি ফেরত পাবো, এটা আজ বুঝেছি আমি। ওই ভয় দেখিয়েই সে স্বামী কে বশ করে রেখেছে! নাহলে ছেলে যে বউ কে একটুও পছন্দ করে না, সে আজ তার কথা থেকেই বুঝেছি!

গিন্নীর প্রীত গলার স্বরে প্রতাপ বাবু বিরক্ত হলেন, ক্ষুব্ধ গলায় বললেন,

তোমার বয়স হচ্ছে সরযূ, আর এসব কোরো না! এই বয়সে ছেলে কে হাত করেই বা আর কি করবে? তারই তো মেয়ের বিয়ের বয়স হতে চললো, এখন বৌমা কে তার জামাইয়ের সামনে নিচু দেখালে কি তোমার সম্মান বাড়বে? তুমি সান্যাল বাড়ির গিন্নী, তোমার এসব আর শোভা পায় না!

হলো কি তোমার! ভুতের মুখে রাম নাম! আজ তুমি ওই বউয়ের হয়ে কথা বলছো!

বিস্মিত গলায় বললেন সরযূ, প্রতাপ বাবু মাথা নাড়লেন,

আর এসব ভালো লাগে না, বয়স হচ্ছে বুঝলে! এখন নাতনিটার একটা ভালো বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হলেই এসব মামলা, মোকদ্দমা ছেড়ে দেবো! বাকিটা সুকান্ত দেখে নেবে! শুধু আশা আর রতনের একটা পোক্ত ব্যবস্থা করে যেতে হবে! ওই দুটো মুখ বন্ধ করতে পারলেই আমি নিশ্চিন্ত!

স্বামীর কি মতিভ্রম হলো! সব কিছু ছেড়ে দিয়ে সন্ন্যাসী হতে চাইছেন! সরযূ অবাক চোখে প্রতাপ সান্যালের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন।
ক্রমশ