সেই মেয়েটার উপাখ্যান পর্ব-২৫+২৬

0
215

#সেই মেয়েটার উপাখ্যান
#পর্ব ২৫
তুমি কার সঙ্গে খেতে গিয়েছিলে পিয়া? সুমন নয় তো?

অদ্বিতীয়া তখন রাতের খাবার শেষে ঘরে এসে নতুন করে বই খুলে বসেছিলো, যদিও কিছুক্ষন আগের কথোপকথন গুলোই তার মাথায় ঘুরছিলো, এমন সময় উল্টোদিক থেকে আসা চাপা গলার আওয়াজে চমকে তাকালো। সরলা ততোক্ষনে পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকে এসেছিলো, টেবিলের উল্টোদিকের চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসতে বসতে সে একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলো, এবার অদ্বিতীয়া একটু থতমত খেলো, সরলার দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বললো,

হ্যাঁ, ছোটো মা, সুমনই!

সরলা কয়েক সেকেন্ড স্থির দৃষ্টিতে অদ্বিতীয়ার মুখের দিকে তাকালো, তারপর গম্ভীর গলায় বললো,

সুমনের সঙ্গে তোমার নতুন করে যোগাযোগ হয়েছে! নাকি বরাবরই ছিলো? আমায় তুমি কিছু বলো নি তো?

সুমনের সঙ্গে সরলার কথা হয়েছিলো বলেই অদ্বিতীয়া জানতো, সে মনে মনে অবাক হলো, তাহলে কি সুমন তাকে মিথ্যে বললো! ছোটো মার সঙ্গে সুমনের দেখা হয় নি! এসব ভাবতে ভাবতেই সে সরলার দিকে তাকিয়ে বললো,

তুমি কিছু জানো না ছোটো মা! কিন্তু আমি তো জানতাম তুমি জানো! সুমন আমাকে বলেছিলো ও তোমার সঙ্গে গ্রামে গিয়ে দেখা করেছে, তুমি ওকে বলেছিলে পরীক্ষা শেষ হলে আমার সঙ্গে কথা বলবে! ও কি এসব আমাকে বানিয়ে বলেছে তবে! আমার খুব খারাপ লাগছে!

সরলা একটু অস্বস্তিতে পড়লো, সে তো সত্যিই সুমন কে এমন কথা বলেছিলো! কিন্তু সেই বলা কথা কে যে সুমন এতটা গুরুত্ব দেবে আর অদ্বিতীয়া কে জানাবে এটা সে বুঝতে পারে নি! পরীক্ষা শেষ হলে সে অদ্বিতীয়ার সঙ্গে কথা বলবে এটা সুমন কে সেই মুহূর্তে বললেও পরে আর তার মনে ছিলো না। কিন্তু সরলা বরাবরই অন্য প্রকৃতির, অন্যের অন্যায় মেনে নেওয়া যেমন সে মেনে নিতে পারে না কখনো, তেমনি নিজের অন্যায় স্বীকার করতেও সে দ্বিধা বোধ করে না একটুও। অদ্বিতীয়া সুমন কে মিথ্যেবাদী ভাবছে এটা বুঝে সে তাড়াতাড়ি হাত তুললো,

না, না! সুমন সত্যিই আমাকে বলেছিলো, একদিন হটাৎ করেই ও এসে ছিলো বাড়িতে, এটা মিথ্যে নয়! কিন্তু আমি ওকে বলেছিলাম, আমি তোমার সঙ্গে কথা বলে ওকে জানাবো! ও যে নিজেই তোমাকে জানিয়েছে, এটা আমি জানতাম না!

অদ্বিতীয়ার মনের মধ্যে জমে থাকা মেঘটা সরে গেলো, সুমন কে মিথ্যে বাদী ভাবতে তারও একটুও ভালো লাগছিলো না, সে খানিকটা নিশ্চিন্ত হলো।

হ্যাঁ, ও আমাকে বলে ছিলো ছোটো মা যে পরীক্ষার পরে তুমি আমার সঙ্গে কথা বলবে! কিন্তু তুমি তো আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করো নি আর, তাই আমিও কিছু বলিনি! আমার মনে হয়েছিলো তুমি সবটাই জানো!

তুমি কি ওকে ভালোবাসো? এটা নিয়ে সত্যিই এগোতে চাও?

খানিকটা দ্বিধা জড়ানো গলায় বললো সরলা, অদ্বিতীয়া মাথা নিচু করলো,

চাই ছোটো মা! আমি ওর সঙ্গেই থাকতে চাই, ওকেই বিয়ে করতে চাই! তুমি দাদুভাই কে রাজি করাতে পারবে তো?

সরলা এবার খানিকক্ষন চুপ করে থাকলো, তারপরে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

চেষ্টা করবো নিশ্চয়ই! তবে আগে তোমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে! নিজের কথা নিজেকেই বলতে হবে!

অদ্বিতীয়া ম্লান হাসলো, সরলার দিকে তাকিয়ে বললো,

এটা তুমি বলছো ছোটো মা! তুমি কি আদৌ চাও যে আমি চাকরী করি! তুমিই তো দাদুভাই কে কথা দিয়েছো যে আমি চাকরী করবো না!

সরলা হেসে ফেললো,

তুমি আগে ভালো উকিল হও তো দেখি! এটা তোমারও পরীক্ষা, ওকালতির কথার মার প্যাঁচে না কে কি করে হ্যাঁ করাতে হয় এটা তুমি নিজেই শিখে যাবে!!

এবার অদ্বিতীয়াও হেসে ফেললো, টেবিলের সামনের দিকে ঝুঁকে এসে মুচকি হেসে সরলার দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বললো,

আমার মাঝে মাঝেই কি মনে হয় জানো ছোটো মা! তুমি যদি ওকালতি পড়তে, তবে খুব ভালো উকিল হতে! একটা কথা বলি? রাগ করবে না তো?

সরলা মৃদু হাসলো,

না, করবো না! বলো কি বলবে?

তোমাকে একবার ওই বাড়িতে বলেছিলাম মনে আছে? ঠাম্মা মাঝে মাঝেই বলে তুমি নাকি বশ করতে জানো! তখন ছোটো ছিলাম তাই বুঝতাম না, কিন্তু এখন বুঝি! বশ নয় আসলে তোমার মধ্যে এমন কিছু আছে যেটা অন্যের তোমার প্রতি সমীহ জাগায়! সবাই হয়ত তোমার কথা পছন্দ করে না, কিন্তু সরাসরি প্রতিবাদও করতে পারে না, এমন কি ঠাম্মাও! মাঝে মাঝে সাহস করে দু একটা কথা বলে ঠিকই কিন্তু সেটা কারো সাপোর্ট পেলে! একটু আগেই দেখো, দাদুভাইও বাবা, ঠাম্মা কে থামাতে পারছিলো না, কিন্তু তুমি থামিয়ে দিলে! এই যে ক্ষমতাটা না, এটা সবার থাকে না! তোমার আছে!

সরলা হাসলো,

আসলে কি বলতো! যখন তোমার দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখন টিকে থাকতে গেলে নিজেকেই উপায় বার করতে হয়! ছোটো থেকে বাবা, মা ছিলো না, দাদা বৌদিদের সংসারে থাকতাম। কখন মাথা নিচু করতে হবে আর কখনই বা ফোঁস করতে হবে, এগুলো আমায় জীবন শিখিয়েছে, বুঝলে! সংসারের থেকে বড়ো রাজনীতি কোথাও নেই! একদিন তুমিও বুঝবে সেটা! বয়সটা বাড়ুক আগে!

তুমি খুব ভালো কথা বলো ছোটো মা! সেই মাধ্যমিকের পরে ওই বাড়িতে ছাদে দাঁড়িয়ে আমরা কতো গল্প করতাম, মনে আছে তোমার? বড়দিও খুব ভালো কথা বলেন, ওনার কাছে থাকতেও আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু ঠাম্মা পছন্দ করে না বলে ছোট কা আমাকে নিয়ে যেতে চায় না! তুমিও আজকাল আর আমার সঙ্গে গল্প করোনা! বাড়িতে থাকতে ভালো লাগে না আমার একটুও, সব সময় কিছু নিয়ে এখানে অশান্তি চলে! বাবা ওই বাড়িতে কতো চুপচাপ থাকতো, এখানে বাবাও ঠাম্মার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজে বাজে কথা বলে! আমি হোস্টেলেই ভালো ছিলাম!

একটু হতাশ গলায় বললো অদ্বিতীয়া, সরলা কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো, তারপরে বললো,

বনেদী বংশ, বনেদী বাড়ি এসব বাইরে থেকে শুনতে খুব ভালো লাগে জানো, কিন্তু এর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুণ ধরে থাকে! নিজেদের বনেদীয়ানা, বংশ মর্যাদা, এসব ধরে রাখার জন্যে এদের যে কতো পাপ করতে হয় তা এরা নিজেরাও জানে না! প্রত্যেকটা বনেদী বাড়ির প্রত্যেকটা ইঁট একেকটা গল্প বলে! কতো মানুষের হা হুতাশ, চোখের জলের ওপরে একেকটা বনেদী বাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে! এমনকি এইসব বাড়ির মানুষরা নিজেরাও কখনই খুব ভালো থাকে না, প্রতি মুহূর্তে তারা নিজেরাই নিজেদের কে সন্দেহ করে, পাছে কোনো ভুল তাদের বনেদীয়ানা নষ্ট করে দেয়! এতো সন্দেহ, এতো অবিশ্বাস নিয়ে কি কোনো মানুষ শান্তি তে বাঁচতে পারে? তুমিই বলো?

অদ্বিতীয়া এতক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে সরলার কথা শুনছিল, এবার খানিকটা কষ্টের গলায় বললো,

দাদুভাই, ঠাম্মাও তো সারাদিন একই কথা বলে! বনেদী বাড়িতে এই হয় না, বনেদী বাড়ির মেয়েরা এই করে না! ওখানে যেতে নেই, ওটা করতে নেই, ওর সঙ্গে মিশতে নেই! এমনকি শুধু মাত্র বনেদী নয় বলে বড়দির সঙ্গে ছোট কার বিয়েও হতে দেয় নি ঠাম্মা!

সেই কথাই তো বলছিলাম! এই যে এতো নিয়ম, কানুনের মধ্যে ওনারা বাড়িটা কে বেঁধে রাখতে চান, তার কারণ তো একটাই, পাছে বনেদীয়ানা নষ্ট হয়ে যায়! আর তো কিছু না, তাই না? কিন্তু সেটা করতে গিয়ে কি ওনারা নিজেরাও ভালো আছেন বলো? এই যে প্রতি মুহূর্তে কে কি করছে এসব খবর তোমার দাদুভাই রাখতে চেষ্টা করেন, এটা তো শুধুমাত্রই বংশের অমর্যাদা হবার ভয়! এই বংশ মর্যাদা জোর করে রক্ষা করতে গিয়ে তো উনি কতো মানুষের বিরাগভাজন হয়েছেন আজ পর্যন্ত, সেটা একবার ভেবে দেখেছো? এই যে তাঁর নিজের ছেলেরাই তাঁকে পছন্দ করে না, তোমার বাবা ইচ্ছে করেই ছোটো থেকে বারবার তাঁকে অপমান করার জন্যেই তাঁর মতের উল্টোমত প্রকাশ করে, ছোড়দা তাঁর জন্যেই বিয়ে করেন নি, এগুলো তো তাঁকেও কষ্ট দেয় নিশ্চয়ই! মুখে তিনি স্বীকার করুন বা না করুন!

সরলার বলা কথাগুলো শুনে অদ্বিতীয়ারও খারাপ লাগলো, দাদু কে সে সত্যিই ভালোবাসে! কিন্তু ঠাকুমার প্রতি তার কোনোই সহানুভূতি ছিলো না, সে খানিকটা রাগের গলায় সরলা কে উদ্দেশ্য করে বললো,

দাদুভাই হয়ত সত্যিই সবার ভালো চাইতে গিয়ে খারাপ করেই ফেলেন ছোটো মা, কিন্তু ঠাম্মা তা নয়! দাদুভাই যেটুকু বলেন আমার মনে হয় হয়তো ওনার কাছে ওটা ঠিক মনে হয় বলেই বলেন, কিন্তু ঠাম্মার কথাগুলো আমি মেনে নিতে পারি না কিছুতেই! এই যে ঠাম্মা তোমাকে অহেতুক আজে বাজে কথা বললো আজ খাওয়ার সময়, এর সঙ্গে বংশ মর্যাদা বা বনেদীয়ানার তো কোনো সম্পর্কই ছিলো না! বাবার না হয় দাদুভাই এর ওপরে ক্ষোভ আছে, কিন্তু তুমি তো কোনো ক্ষতি করো নি তার! তাহলে? তোমার ওপরে বাবার এতো রাগ কেনো? আর ঠাম্মা সেটাকে সাপোর্ট করবেই বা কেনো?

সরলা হাসলো,

ওসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না, তুমি তোমার কথা ভাবো! একটা কথা মনে রেখো, আমি নিজেই নিজের জন্যে বলতে পারি, অন্য কারোর সাহায্য আমার লাগে না! ঠিক এটাই তোমারও হওয়া উচিত! কেউ তোমার পাশে থাকবে, কেউ তোমার হয়ে বলবে এটা ভাবলে তুমি দুর্বল হয়ে পড়বে! নিজেকেই নিজের কথা বলতে হবে, নিজের ভালো লাগার জন্যে নিজেকেই লড়াই করতে হবে! সুমন কেমন আমি জানি না! আমার মনে হয় তুমিও তাকে খুব ভালো করে এখনও চেনো না! আরো চেনো তাকে, তারপরে ভাবো! এখন তুমি কলেজে পড়, ভালো মন্দের ফারাক করতে পারো নিশ্চয়ই!!

না, না, ছোটো মা! বিশ্বাস করো সুমন খুব ভালো ছেলে! ও খুব ভালো খেলেও! এখন ওকে অনেকেই চেনে জানো!

তাড়াতাড়ি বলে উঠলো অদ্বিতীয়া, সরলা মাথা নাড়লো,

সুমন ভালো ছেলে নয় এটা আমি একবারও বলিনি কিন্তু! আমি শুধু বলেছি, এখনও তুমি ওকে ভালো করে চেনো নি হয়ত! একটা কথা কি জানো, কারোর সঙ্গে সপ্তাহে চার বা পাঁচদিন ঘণ্টা দুয়েক এর জন্যে দেখা হওয়া আর তার সঙ্গে সারা জীবন থাকা, দুটো কিন্তু সম্পূর্ন আলাদা!! আমরা যখন কারোর সঙ্গে কিছুক্ষনের জন্যে দেখা করি তখন তার সামনে নিজেদের সেরা টুকুই দিই! যাতে সে খুশি হয়! কিন্তু চব্বিশ ঘন্টা এক ছাদের নিচে কাটাতে গেলে কিন্তু তার ভালো, খারাপ সব টুকু নিয়েই আমাদের থাকতে হয়! তাই শুধু ভালো টুকু না দেখে, সম্পূর্ন দোষে, গুণে ভরা মানুষটা কে চেনার চেষ্টা করো, তারপর মনস্থির করো তুমি কি চাও! পারবে কিনা থাকতে একসঙ্গে! তাড়াহুড়ো করে কিছু করো না কিন্তু, এটা তোমার সারা জীবনের প্রশ্ন!

অদ্বিতীয়া চুপ করে গেলো, মনে মনে সরলার কথা গুলো ভাবতে লাগলো। ছোটো মা বোধহয় ঠিকই বলেছে, সুমন কে চেনার জন্যে আরো সময় দরকার, ও কিছুতেই এমন কিছু করবে না যাতে ভবিষ্যতে নিজেরই ক্ষতি হয়ে যায়। রাত ক্রমশ বাড়ছিলো, অদ্বিতীয়া কে অন্য মনস্ক হয়ে যেতে দেখে এবার সরলা উঠে দাঁড়ালো,

তুমি শুয়ে পড়, আমি উঠি এবার, অনেক রাত হয়েছে! আর একটা কথা, ভবিষ্যতে কোথাও একসঙ্গে গেলে সতর্ক হয়ো, তোমার দাদুভাই কিন্তু এবার তোমার ওপরে কড়া নজর রাখবেন!

অদ্বিতীয়া চমকে তাকালো, বিস্ময়ের গলায় বললো,

কেনো ছোটো মা! দাদুভাই কি আমার কথা বিশ্বাস করে নি বলে তোমার মনে হয়? ওই লোকটা কি সুমন কে চিনতে পেরেছে?

সরলা অন্য মনস্ক হলো,

জানি না পেরেছে কিনা! তবে তুমিই তো বললে, ওকে নাকি এখন অনেকেই চেনে! আর তোমার দাদু যদি চান তাহলে চিনে নিতে কতক্ষন! আপাতত কিছুদিন না হয় দেখা কোরো না! ব্যাপারটা একটু থিতিয়ে যাক!

অদ্বিতীয়া মনে মনে ভেবে নিলো, সুমন কে ফোন করে জানিয়ে দেবে ও, আপাতত সত্যিই কিছুদিন দেখা না করাই ভালো। সরলা ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্যে এগোচ্ছিল, অদ্বিতীয়া ঘুমোতে যাওয়ার জন্যে উঠে দাঁড়িয়েছিলো, দুজনকে চমকে দিয়ে আচমকাই সরযূ পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকে এলেন, তির্যক স্বরে বললেন,

মা মেয়েতে রাত দুপুরে গোপন শলা পরামর্শ হচ্ছে বুঝি! তা কাকে চেনার কথা হচ্ছিলো? কে সে? কার সঙ্গে না দেখা করার কথা হচ্ছে?
ক্রমশ

#সেই মেয়েটার উপাখ্যান
#পর্ব ২৬
সকাল থেকেই বাড়িতে একটা থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছিল, রান্নাঘর থেকে সরযূর তীব্র গলার স্বর শোনা যাচ্ছিলো, তাঁর রাগের প্রকাশ নিরীহ বামুন ঠাকুরের ওপরে হলেও আসল লক্ষ্য ছিলো সরলাই।

গত রাতে বউ আর নাতনির কথোপকথন শুনতে গিয়ে তিনি যে পরিমাণ অপমানিত হয়েছিলেন, তার পরে তাঁর রাগ স্বাভাবিকই। তাঁকে পর্দা সরিয়ে ঢুকতে দেখেই বউ এবং নাতনি বিস্ফারিত চোখে তাকিয়েছিলো, তাঁর প্রশ্ন শুনেই তারা বুঝেছিলো সব না হলেও কিছু কথা তিনি অবশ্যই শুনেছেন। সরলা তৎক্ষণাৎ শাশুড়ির দিকে ফিরে তাকিয়েছিলো, আলোচনার প্রসঙ্গ সম্পূর্ন এড়িয়ে গিয়ে ঠান্ডা গলায় বেশ জোরে অদ্বিতীয়ার দিকে তাকিয়ে বলেছিলো,

এই যে দেখো! একটু আগেই তোমায় এই কথাগুলোই বলছিলাম! এরাই প্রকৃত বনেদী! নিজের বউ, নাতনিকেও বিশ্বাস করে না! সারাক্ষন ভয় ওনার আড়ালে কেউ কিছু করছে! আমরা কি আলোচনা করছি সেটা সোজাসুজি ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস না করে উনি আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনছেন! এতো রাতেও নিজে না ঘুমিয়ে জেগে আছেন শুধু এই ঘরের আলো নেভেনি বলে!

সরলার ইচ্ছাকৃত জোরে গলা নিস্তব্ধ রাতে গমগম করছিলো, কিছুক্ষনের মধ্যেই সুকান্ত এবং প্রতাপ সান্যাল সেই আওয়াজে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। বামুন নিচের থেকে সে আওয়াজ পেলেও ওপরে ওঠার সাহস দেখায় নি, নিচের অন্ধকারে দাঁড়িয়েই সে ঘটনার গভীরতা বোঝার চেষ্টা করছিলো। একমাত্র রতিকান্ত এসবের কিছুই টের পায় নি, তার তখন মাঝ রাত!

কি হয়েছে বৌদি? এতো রাতে আপনারা এখানে কেনো?

বলতে বলতে সুকান্ত ঘরে ঢুকে এসেছিলেন, পেছন পেছন প্রতাপ সান্যাল, সরলা শাশুড়ির দিকে ইঙ্গিত করে শ্বশুরমশাই এর দিকে তাকিয়েছিলো,

বাবা! পিয়া এতো রাত পর্যন্ত ঘুমায়নি দেখে আমি ওকে কারণ জিজ্ঞেস করতে ঘরে এসেছিলাম! এসে দেখি ও রাতের ঘটনায় দুঃখ পেয়েছে, এখানে এতো অশান্তির মধ্যে ওর থাকতে ইচ্ছে করছেনা বলছে!! ও বলছিলো ওর বড়দির কাছে থাকতে ভালো লাগে, কিন্তু মা পছন্দ করেন না বলে ছোড়দা ওকে নিয়ে যেতে চায় না! ও লুকিয়ে দেখা করতে চাইছিলো, তাই আমি ওকে আপনাকে না জানিয়ে লুকিয়ে দেখা করতে বারণ করছিলাম! মা বোধহয় বাইরে থেকে কিছুটা শুনতে পেয়েছিলেন, তাই লুকিয়ে কার সঙ্গে দেখা করতে চায় পিয়া সেটা জানতে এতো রাতে ঘরে ঢুকে এসেছেন! উনি সরাসরি জিজ্ঞেস করলেই সবটা জানতে পারতেন, কিন্তু উনি সেটা না করে এতো রাতে হইচই করে একটা বিশ্রী পরিবেশের সৃষ্টি করছেন!

প্রতাপ সান্যাল কিছু বলার আগেই সুকান্ত অবাক দৃষ্টিতে ভাইঝির দিকে তাকিয়েছিলেন,

তুই রমার কাছে যেতে চাস! আমাকে বলিস নি কেনো? মা রাগ করলেই বা কি! আমি তোকে কালই নিয়ে যাবো!

অদ্বিতীয়া তাড়াতাড়ি ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিয়েছিলো,

যেতে চাই ছোট কা! আমার বড়দির কাছে যেতে খুব ভালো লাগে!

সরযূ ততোক্ষনে একটু থতমত খাচ্ছিলেন, সম্পূর্ন কথা শুনতে না পাওয়ায় বউয়ের অভিযোগের যুৎসই কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তাকে থমকে যেতে দেখে সরলা আবারও একই অভিযোগ করেছিলো, শ্বশুরমশাই কে লক্ষ্য করে মৃদু গলায় বলেছিলো,

বাবা! মেয়েকে কক্ষনো কুশিক্ষা দিইনা! এটুকু বিশ্বাস মায়ের আমার ওপরে রাখা উচিত ছিলো!!

সরযূ এবার শেষ চেষ্টা করেছিলেন, রাগের গলায় স্বামী কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন,

ওই মেয়েটার কাছে যাওয়া না ছাই! এতো রাতে মা মেয়েতে সান্যাল বাড়ির সম্মান মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিলো! নেহাত আমি এসে পড়েছি তাই!

এবার প্রতাপ সান্যাল বিরক্ত হয়েছিলেন, বিরক্ত গলায় স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন,

আহ! অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করছো! যা তুমি ঠিক ভাবে শুনতে পাওনি, তাকে গলার জোরে সত্যি প্রমাণ করার চেষ্টা কোরো না সরযূ! তুমি বৌমা কে জিজ্ঞেস করতে পারতে! তা না করে রাত দুপুরে বাড়ির পরিবেশ নষ্ট করছো!

এরপরেই নাতনির দিকে ফিরে তাকিয়েছিলেন প্রতাপ বাবু,

তোমাকেও বলছি দিদিভাই, একই কথা বারবার বলতে আমার ভালো লাগে না! তুমি জানো আমি চাই না তুমি কিছু অনাথ ছেলে মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাও! তুমি যদি ওদের কিছু সাহায্য করতে চাও আমাকে বোলো, আমি তোমার চাহিদা মতো ওদের দিয়ে দেবো! কিন্তু ওখানে গিয়ে থাকা তোমার শোভা পায় না!

সুকান্ত ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে ছিলেন, ছোট কার সামনে থাকা অদ্বিতীয়ার সাহস বাড়িয়েছিল, সে দাদুর দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বলেছিলো,

ছোট কা তো যায় দাদুভাই! আমি গেলে দোষ কি! আমি ছোট কার সঙ্গেই যাবো, আবার ফিরে চলে আসবো!

সান্যাল মশাই ছোটো ছেলের উপস্থিতি কে সম্পূর্ন অগ্রাহ্য করে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে হাত নেড়েছিলেন,

তুমি আর ছোটকা, দুটো এক হলো? এ বাড়ির ছেলেরা যা করতে পারে, মেয়েরা সেটা পারে না! কোনো বনেদী বাড়ির মেয়ে কে দেখেছো, এসব অজ্ঞাতকুলোশীল ছেলে মেয়ের ঘরে সময় কাটায়! কি যে শিক্ষিত হচ্ছো তোমরা কে জানে! নিজেদের বংশ মর্যাদা কে ভুলে যাচ্ছ! সান্যাল বাড়ির মেয়ে তুমি! যখন যেখানেই থাকো না কেনো, এটা এক মুহূর্তেও ভুলবে না!

সুকান্ত বিরক্তি নিয়ে ঘর ছেড়েছিলেন, পেছন পেছন সরলাও। নতুন কোনো গোপন তথ্য প্রকাশ্যে আসার সুযোগ নেই বুঝে সরযুও ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, শুধু রয়ে গিয়েছিলেন প্রতাপ সান্যাল। পই পই করে সান্যাল বাড়ির সম্মানের বিস্তারিত তথ্য নাতনি কে বোঝানোর পরে তিনি ঘর ছেড়েছিলেন, তারপরে অদ্বিতীয়া ঘুমাতে যেতে পেরেছিল।

সেই থেকেই সরযূর রাগ! তিনি আসলে ঝি মেরে বউ শেখানোর প্রচেষ্টায় ছিলেন, কিন্তু যাকে উদ্দেশ্য করে তাঁর এই রাগের প্রকাশ সেই সরলা এসব ধর্তব্যের মধ্যেও আনছিল না, সে নিজের কাজ করে যাচ্ছিলো। সারা সকাল এই রকম চলার পরে সুকান্ত অদ্বিতীয়া কে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন, প্রতাপ সান্যালও কোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন একসময়, বাড়িতে তাঁর রাগের কথা শোনার মতো আর কেউ না থাকায় শেষ পর্যন্ত বেলার দিকে রণে ভঙ্গ দিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে গেলেন সরযূ, বাড়িতে কিছুটা হলেও শান্তির পরিবেশ ফিরলো।

ক্লাব থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে গেটের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে যে লোকটা মালীর সঙ্গে কথা বলছিলো তাকে ভীষণ চেনা চেনা লাগছিলো সুমনের, কিন্তু কোথায় দেখেছে কিছুতেই মনে করতে পারছিলো না। চেনা লোককে মনে করতে না পারার যে অস্বস্তি সেটা মনের মধ্যে থেকে গেলেও এই মুহূর্তে কিছু করার ছিলো না। গত কালের প্রবল বৃষ্টির পরে রাস্তা মোটামুটি জল থই থই, এই অবস্থায় অদ্বিতীয়া কলেজে আসবে কিনা সন্দেহ থাকায় আজ আর ওদিকে না গিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্যে একটা ট্যাক্সি কে হাত দেখালো সুমন। সেরকম হলে বাড়িতে সোমার কাছে অদ্বিতীয়া নিশ্চয়ই ফোন করবে, তখন বলে দিলেই হবে ও ফিরে চলে এসেছে।

ভেতরে আসবো স্যার?

বলতে বলতে ঘরের পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকে এলেন জলখাবার রেস্টুরেন্টের মালিক মনোজ গাঙ্গুলি, প্রতাপ সান্যাল চোখের ইশারায় তাঁকে বসতে বললেন।

বলো মনোজ, ছেলেটার সম্পর্কে কোনো খবর পেলে?

সান্যাল মশাইয়ের প্রশ্নের উত্তরে ঘাড় হেলিয়ে সম্মতি জানালেন মনোজ গাঙ্গুলি, মৃদু হেসে বললেন,

পেয়েছি স্যার! এক্ষুনি ওখান থেকেই এলাম! তবে আমারই মনে হচ্ছে ভুল হয়েছে কিছু! ছেলেটা আসলে ভালো ফুটবলার, আপনাদের ক্লাবেই খেলে! তাই অনেক ভক্ত আছে তার। আপনার নাতনি ফুটবল খেলা ভালোবাসে নাকি?

প্রতাপ সান্যাল ভ্রু কুঁচকে তাকালেন, একটু বিস্মিত গলায় বললেন,

ফুটবল খেলে! তা সে আমার নাতনির সঙ্গে ওখানে কি করছিলো? আমার নাতনি তার খেলা দেখতে মাঠে যায় নাকি?

মনোজ তাড়াতাড়ি দু কানে হাত দিয়ে জিভ কাটলেন, মাথা নেড়ে বললেন,

ছি ছি! এসব কথা আলোচনা করাও পাপ! আপনার বাড়ির মেয়ে মাঠে যাবে? কি যে বলেন স্যার! আসলে ওটা তো আপনাদেরই ক্লাব, আর আজকালকার মেয়ে তো! ওই বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে বোধহয় এসব খেলাটেলা নিয়ে হুজুগ হয়েছে আর কি! তাই খেলোয়াড় কে নিজের চোখে দেখতে চাওয়া!

সান্যাল মশাই আলতো করে চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিলেন, গলায় নিশ্চিন্ত ভাব ফুটলো,

যাক! তুমি নিশ্চিন্ত করলে মনোজ! তবে তাও একটু খেয়াল রেখো!

মনোজ মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানালেন,

হ্যাঁ স্যার! অবশ্যই! সেকথা আপনাকে মুখে বলতে হবে! আমার হোটেলের বয়রা বলেছে এর আগে কখনো আসেনি! এই প্রথম বার! আর তাছাড়া বেশিক্ষন বসেও নি! বোধহয় বৃষ্টির জন্যেই ঢুকে ছিলো, নাহলে ছেলেটি বেশ নামকরা ফুটবলার স্যার! এ চত্বরে যেকোনো দোকানে ঢুকলেই আমার কাছে খবর থাকতো, এর আগে কোনো রেস্টুরেন্টেই দুজনকে একসঙ্গে আগে কখনো দেখা যায় নি! আমি আশেপাশের সব রেস্টুরেন্টেই বলে রেখেছি, কিছু খবর থাকলেই ওরা আমাকে জানাবে!

ছেলেটা ভালো খেলে বলছো? আমাদের ক্লাবে সই করিয়েছে? নাম কি?

মনোজ মুচকি হাসলেন,

এই তো! নাম সুমন! তবে অতো খুশি হবেন না স্যার, আমরা নিয়ে নিচ্ছি ওকে কিছুদিনের মধ্যেই!

প্রতাপ সান্যালও মুচকি হাসলেন,

হ্যাঁ, সে আর এমন কি নতুন কথা! আমাদের নিয়েই তো তোমাদের চলে! কি আর আছে তোমাদের! ওই যে কি যেনো বলো না তোমরা, তোমাগো তো সব দ্যাশে আছিলো!

দুজনেই হেসে ফেললেন এর পরে, বনেদী প্রতাপ বাবু এবং তাঁর মক্কেল মনোজ গাঙ্গুলির এসব নিত্য দিনের কথোপকথন। সম্পর্কে মক্কেল হলেও ঘনিষ্ঠতা তারচেয়ে অনেকটাই বেশি, তাই তাঁর রেষ্টুরেন্টে সান্যাল মশাইয়ের নাতনি কে দেখেই সে খবর তাঁর কানে তুলে দিতে এক মুহুর্তও দেরি করেন নি মনোজ গাঙ্গুলি, এমনকি সকালে উঠেই পৌঁছে গিয়েছিলেন সুমনের ক্লাবে। সেখান থেকে খবর নিয়ে সরাসরি এসেছেন প্রতাপ বাবুর চেম্বারে।

আরো কিছুক্ষন গল্প করে মনোজ বেরিয়ে যাওয়ার পরে প্রতাপ বাবুও উঠে পড়লেন, গতকাল রাতে ভালো করে ঘুম হয়নি, শরীরটা বড্ড ম্যাজম্যাজ করছিলো। তাঁকে সময়ের বেশ খানিকটা আগে বাড়ি ঢুকতে দেখে সরলা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো, উদ্বেগের গলায় বললো,

বাবা! শরীর খারাপ নাকি! এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এলেন আজ!

না, না, আজ সেরকম কেসের চাপ ছিলো না বৌমা, তাই চলে এলাম,

বলতে বলতে দোতলার সিঁড়ির দিকে এগোতে লাগলেন সান্যাল মশাই, তাঁর গলার আওয়াজে সরযূ ইতিমধ্যেই দোতলার বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিলেন। স্বামী কে ঘরে ঢুকতে দেখে মুখ বিকৃত করলেন তিনি, বিদ্রুপের সুরে বললেন,

আদিখ্যেতা! শ্বশুরের চিন্তায় ঘুম হচ্ছে না এক্কেরে! কাল ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে গেছে তো, তাই এখন শ্বশুর কে তোয়াজ করে চলার চেষ্টা করছে!

সারাদিনের পরে বাড়ি ঢুকেই এইসব কথা বার্তা ভালো লাগছিলো না প্রতাপ বাবুর, তাঁর গলায় বিরক্তির স্বর ফুটলো,

চুপ করো তো! সারাক্ষন শুধু বাজে কথা! কিসের ধরা পড়া? যা ঠিক করে শোনো নি, তা নিয়ে কথা বলো কেনো?

সরযূ ঝাঁঝিয়ে উঠলেন,

সব শুনেছি! আমি তোমাকে বলছি, ওই কালকের হোটেলের ছেলেটার সঙ্গে দেখা করার কথাই বলছিলো ওরা! অতো বোকা আমাকে ঠাওরিওনা!

আবার না জেনে কথা বলছো! আমি আজই মনোজের সঙ্গে কথা বলেছি! ছেলেটা কে পিয়া চেনে না, মনোজ নিজে গিয়ে জেনে এসেছে! শুধু আমার একটু খটকা আছে যে আমার নাতনি আবার ফুটবল নিয়ে মাতামাতি শুরু করলো কিনা, সেটা আজ ও বাড়ি এলে আমি কথা বলে নেবো।

স্বামীর কথায় সরযূ অবাক হলেন,

ওমা! এ কি ছিরি মেয়ের! সে ফুটবল খেলে নাকি! ওতো ছেলেদের খেলা!

আহ! যা বোঝো না তাই নিয়ে কথা বলতে এসো না! পিয়া ফুটবল খেলবে কেনো? সে বোধহয় খেলার খোঁজখবর রাখে, তাই তার প্রিয় খেলোয়াড় কে চোখের দেখা দেখতে চেয়েছিলো। সে এমন কিছু দোষের না, এই বয়সে ওসব তো হবেই! আর আমাদের ক্লাব বলে কথা, আমাদের বাড়ির ছেলে মেয়ের তো ভালো লাগবেই! আমাদের ক্লাবের গৌরব জানো? তুমি এসবের কোনো খবর তো রাখো না, তাই এমন বোকার মতো মন্তব্য করলে! নিজের যোগ্য ক্লাব কে ভালোবাসা ভালো, এসবে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে ওই প্রিয় খেলোয়াড় দেখলে গিয়ে হামলে পড়া যে আমাদের বাড়ির মেয়ের পক্ষে শোভা পায় না, এটা তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে।

সরযূ একটু দমে গেলেন, এরপরের বার কোনো আলোচনা কানে এলে সবটা না শুনেই ঘরে ঢুকে যাবেন না বলে মনে মনে ঠিক করলেন। নিজের মূর্খামির জন্যে তিনি নিজেই মনে মনে নিজেকে দোষ দিচ্ছিলেন, কাল রাতে যদি তাড়াহুড়ো না করতেন, তাহলে এতক্ষনে সব খবর তাঁর হাতের মুঠোয় থাকতো!
ক্রমশ