সেই মেয়েটা চন্দ্রাবতী পর্ব-১৭+১৮

0
2

সেই মেয়েটা চন্দ্রাবতী
পর্ব ১৭

“আসব?”

মাহতাব দরজায় তাকিয়ে মৃদুলাকে দেখে অবাক হয়। কেননা মৃদুলাকে খুব একটা কথা বলতে মিশতে দেখে না। তাছাড়া চন্দ্র আর মৃদুলা দু’জনের ভেতর তাদের মা ছোটোমেয়েকে নিয়ে একটু বেশিই রক্ষণশীল আচরণ করে দেখেছে মাহতাব। জুয়েনা বেশিরভাগ সময় মৃদুলার সাথে সাথেই থাকেন। একা ছাদে খুব একটা আসে না মৃদুলা।

“জি। বাইরে বসেন চেয়ারে। আমি আসছি।”

মৃদুলা জোরে জোরে হেসে দিয়ে ঘরের ভেতর ঢোকে। খাটের এক কোণায় বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে বলে,

“কেন? এত ভয়? আপুর সাথে তো আপনি খুব গল্প করেন। রিকশায় ঘোরেন। আমার সাথে দিনের আলোয় কথা বলতেও ভয়।”

মাহতাব ঢোক গেলে। চন্দ্র আর মৃদুলা এক না। এইটুকু বোঝার বুদ্ধি তার আছে। চন্দ্র বয়সে মাহতাবের প্রায় দুই বছরের বড়ো। আর বয়সে বড়ো মেয়ে তার চেয়ে কমবয়সী ছেলেদের সাথে কথা বললে পরিচিত মহলে খুব একটা কেউ কটু চোখে দেখে না, যদি না তা শালীনতার সীমা অতিক্রম করে। কিন্তু বয়সে বড়ো ছেলে কমবয়সী মেয়ের সাথে কথা বললেই সবাই অন্য চোখে দেখে।

“বিষয়টা তা নয়। এমনিতেই আমি বাইরে যাচ্ছিলাম।”

“কই যান? আপা তো বাগানে নাই। পুকুর ঘাটেও না।”

মাহতাব মনে মনে আসলেই চন্দ্রকে খুঁজছিল সকাল থেকে। চন্দ্র হঠাৎ এড়িয়ে যাচ্ছে না পালিয়ে বেড়াচ্ছে বুঝতে পারছে না। সামনাসামনি দেখা হলে বোঝা যেত। হয়তো মাহতাবকে পারিবারিক অনেক গোপন বিষয় বলার পর চন্দ্র নিজেই অস্বস্তি অনুভব করছে। এখন তা জানার সুযোগ এসেছে। কিন্তু মাহতাব মুখে বলে,

“না ওনাকে খুঁজব কেন? আমার নিজেরই কাজ আছে।”

“তাহলে সমস্যা কী? আপু দেখলে রাগ করবে?”

“রাগ করবে কেন?”

“আবারও আপুর কাছ থেকে তার পছন্দের মানুষ নিয়ে যাচ্ছি ভাবতে পারে।”

“মানে কিছু না। আচ্ছা অস্থির হওয়ার কিছু নেই।। আমি উঠে যাচ্ছি। শুধু আপনাকে একটু সাবধান করতে আসলাম।”

“কী নিয়ে?”

“মানুষ নিয়ে। মানুষ চিনতে ভুল করলে ভুগবেন। কাউকে কাউকে দেখলে মনে হয় ভাজা মাছ উল্টে খাইতে জানে না। অথচ মানুষের বুকে চা*কু চালাতে হাত কাঁপে না।”

“তীরটা কি নিজের বোনের দিকে?”

“বাহ্ তাহলে আমার তীরও জায়গা মতো।”

“দেখেন আপনাদের পারিবারিক বিষয়। তবু বলি ভাই বোন, বোন বোনে রঙ, গুণ এসব নিয়ে তুলনা নতুন কিছু না। আমাদের পারিবারিক ইতিহাসগুলোই এমন। সেই আদিকাল থেকে পারিবারিক ঘৃণার বীজ এসব তুলনা দিয়েই বোনা হয়েছে। সময়ের সাথে আমরা শিক্ষিত হয়েছি। আমাদের বুঝতে হবে যারা ছোটোবেলা থেকে এই ঘৃণার বীজ বুনে দেয় তারা আত্মীয় হলেও আপন নয়।”

“আচ্ছা, তাহলে এই কাহিনি বলা শেষ? সেই চিরায়ত আপাজান। বাইরের মানুষের কাছে নিজের পরিবারের মানুষদের ভিলেন বানানো। শুনেন সে কাল দেখো তাকে আমি, আমার দাদি, ফুপু অপছন্দ করি এই কথা বলছে না৷ সত্যিটা জানেন? সত্যি হলো সে নিজেই চরম হিংসুটে একজন। তার হিংসার আগুনে সে পুড়াইছে আপনি জানেন না। নাইলে ফুপুদের কথা বাদ দেন, মা কেন তার উপর অসন্তুষ্ট? মা কি রঙ দেখে বাচ্চাকে ভালোবাসে? তুর্যের কথা বলে নাই আপনাকে?”

“তুর্য কে?”

“জানবেন জানবেন। কী বলবে আগেই বলে দেই। বলবে তুর্যের চরিত্র ভালো না, বহু মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল। তাই সে চায় নায় আমার সাথে তুর্যের বিয়ে হোক। অথচ সত্যিটা কি জানেন? সত্যি হলো তুর্য তাকে পছন্দ না করে আমাকে করছিল, সেই হিংসায় সে তুর্যের সাথে সাথে আমার জীবনটাও এলোমেলো করছে। জ্ঞান দেওয়া খুব সহজ। শুধু সাবধান করে দিলাম। যাকে চাঁদ ভাবতেছেন, সে গ্রহণ লাগাইতে উস্তাদ।”

মৃদুলা ছুটে বের হয়ে যায়। জুয়েনা ছাদে এসেছেন দু’মিনিট হলো। কাঁঠাল পাতায় সাগুর পাঁপড় দিবেন। সারাদিন শুকিয়ে মচমচে হলে রাতে তেলে ভাজবেন। খুব মুচমুচে মজাদার হয়৷ জুয়েনা এমনিতেই শব্দ না করে নিভৃতে হাঁটেন। ছাদের এককোনায় বসে চুপচাপ পাঁপড়ের সরঞ্জাম ঠিক করছিলেন। দেখলেন মৃদুলা মাহতাবের রুম থেকে বের হয়েছে। মুখটা হাসিহাসি লাগছিল। মৃদুলা, জুয়েনাকে খেয়াল করেনি বোধহয়। নিচে নেমে গিয়েছে। দু’দিন আগে নাহার বেগম একটা কথা তুলেছিলেন। রহমত সরকার জুয়েনাকে ডেকে বিষয়টা জানানও। নাহার বেগম ভাবছেন চন্দ্রের বিয়ে নিয়ে না ভেবে বরং মৃদুলার কথা ভাবুক জুয়েনা। মাহতাবের জন্য মৃদুলার প্রস্তাব দিতে চান তারা। ফিরোজ সরকারকে বললে কিছুতেই রাজি হবে না। বড়ো মেয়েকে রেখে ছোটো মেয়ের কথা কিছুতেই ফিরোজ সরকার আগাবে না। কিন্তু নাহার বেগমের মতে চন্দ্রের বিয়ে হওয়া সহজ না। তুর্যের অধ্যায়ও সমাপ্ত করা উচিত। যা হওয়ার তা হয়েছে। সবাই জানে তুর্যের ঘটনার পর ঐ সম্পর্ক আর আগাবে না। ছেলের পায়ের এত বড়ো ক্ষতি তুর্যের মা বাবা ভুলবে না। চন্দ্রকে আড়াল করে ফিরোজ সরকারের দাঁড়ানোও বোনেরা ভুলবে না। তারচেয়ে এখন মৃদুলার বিয়ে হয়ে যাক। চন্দ্রের জন্য ছেলে পাওয়া গেলে বিয়ে দেওয়া যাবে। মাহতাব ভালো ছেলে, ঢাকায় গেলে দেখা যাবে বিয়ে করে বৌ নিয়ে আসবে। এই ছেলে হাত ছাড়া করা উচিত না।

জুয়েনা তখন হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। কিন্তু এখন মৃদুলার জন্য মাহতাবকে ভালো পছন্দই মনে হচ্ছে। হয়তো এর মাধ্যমে মেয়েটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে।

***

মৃদুলার কথা শুনে একটু হলেও মাহতাব ধাক্কা খেয়েছে। তুর্য কে? তার কথা তো চন্দ্র বলেনি। মৃদুলা থেকে পালাতে নয় মাহতাব আসলেই বের হচ্ছিল। চন্দ্র ম্যাসেজ করেছে এক জায়গায় যেতে চায়, মাহতাবের সাহায্য প্রয়োজন। দীঘির পাড়ে বটগাছের নিচে সাড়ে দশটায় অপেক্ষা করবে। বাড়ি থেকে একসাথে বের হলে সবাই প্রশ্ন করবে কই যায়। টুং করে আরেকটা ম্যাসেজ আসে।

“কই তুমি?”

“আসছি। দুই মিনিট।”

ফিরতি মাসেজে উত্তর দেয় মাহতাব

***

“কী হয়েছে?”

“তুমি কি জানো বাল্য বিয়ে বন্ধ করতে কী করতে হয়? মানে আইনানুসারে পথ কী? আমাকে সাহায্য করতে পারবে?”

“কার বিয়ে?”

“আমার এক ছাত্রী। মেয়েটা লেখাপড়ায় আগ্রহী। পরীক্ষা দিতে চায়। কিন্তু জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। বর বিয়ের পর পড়াবে না।”

চন্দ্র চিঠিটা এগিয়ে দেয়। মাহতাব পড়ে বলে,

“কিছু মনে করবেন না। এর বিয়ে হয়ে যাওয়াই ভালো। পাঁচ লাইনের চিঠি লিখতে যে বিশটা ভুল করে, সে শিক্ষক হলে ছাত্রদের ক্ষতি। এ বিয়েশাদি করে ঘর সংসার করুক।”

“তুমি কি মাস্টার? ওর চিঠির ভুল ধরো যে? বাচ্চা মানুষ। ও ছাত্রী ভালো।”

“ও ছাত্রী ভালো হলে আপনার ক্লাসের খারাপদের কী অবস্থা?”

“যাও লাগবে না সাহায্য। আমি হটলাইনে ফোন দেব্ বাল্য বিয়ে বন্ধ করার জন্য ৩৩৩ এ ফোন দিলেই হয়। সমস্যা হলো বিয়ে আজই। এত দ্রুত হয়তো ওনারা বিয়ে আটকাতে পারবে না। তাই তোমাকো ডাকলাম। লাগবে না যাও।”

“আরে রাগ করেন কেন? আমি জেলা প্রশাসনে যোগাযোগ করতে পারব। আপনার কাছে প্রমাণ আছে যে মেয়ে কম বয়সী?”

চন্দ্র বার্থ সার্টিফিকেট বের করে।

“আছে।”

“দেখেন আপনাকেও সাথে নিবে দলের সাথে। ভেবে দেখেন, প্রেম ঘটিত বিষয় হলে আপনি ফাঁসবেন।”

“মানে?”

“মানে কিছু ঘটনা এমন হয় যে মেয়ের প্রেমিক থাকে। বিয়ে করতে চায় না তাই নিজেই বিয়ে ভাঙার চেষ্টা করে। এরপর বয়ফ্রেন্ডের হাত ধরে পালায়।”

“গ্রামের মেয়েরা এত চালাকি করে না। ওরা সহজ সরল।”

“তাহলে আপনি আত্মবিশ্বাসী? যাবেন সাথে?

” যাব”

“ঠিক আছে।”

(চলবে)

সেই মেয়েটা চন্দ্রাবতী
পর্ব ১৮

“আমি জেলা প্রশাসনে জানাচ্ছি। তাদের একটা দল নিয়ে এলে বিয়ে ভাঙা সহজ হবে।”

“বিয়ে ভাঙতে তো চাই নাই। লোকজোন নিয়ে গেলে মেয়েটার পরিবারের আবার অসম্মান হবে না?”

“দল না নিলে বিপদ আছে। আমরা কমবয়সী আনঅথোরাইজড দু’জন লোক গিয়ে কথা বললে গ্রাম্য পলিটিক্সের স্বীকার হতে পারি।”

“তুমি কথায় কথায় ভিলেজ পলিটিক্স টানো কেন? শহরে পলিটিক্স নাই? বিয়ে ভাঙতে গিয়েছি বললে বিপদ হইতে পারে। আমরা যদি বলি আমরা সালমার স্কুল শিক্ষক। সে হিসাবে দুটো কথা বলতে আসছি। তা ভালো হয় না? এমনিও হেড মাস্টার স্যার এ বিষয়ে কথা বলতে না করছিল। তাও দলবল নিয়ে গেলে রাগ হবে।”

“তাহলে বাদ দেন।”

“আচ্ছা আমি তো তোমাকে জোর করি নাই। একা এমন কারও বাড়িতে যেতে কেমন জানি লাগছিল। তাই সাহায্য চাইলাম। মৃদুলাকে নিতে চাই শুনলে মা আমাকে কেটেই ফেলবে। ভাই তো নাই আমার।”

মাহতাব কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে,

“আসলে এত ভয় পেয়ে কী হবে। চলেন যাই। একটা থ্রিল কাজ করছে। দেখি কী হয়।”

শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় তারা একদম একা না গিয়ে আরও দু চারজন সাথে নেবে। তাই মাহতাব পিওন আর অফিস সহকারীকেও সাথে নেয়। ঠিক হয় সালমার বাড়িতে গিয়ে তার বাবা মায়ের সাথে দেখা করবে। সালমার পড়ালেখা যেন বিয়ের পরও চলমান থাকে, সে বিষয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করবে।

বিয়ের আয়োজন হচ্ছে ঘরোয়া পরিসরে। বাড়িতে সালমার ভাইয়েরা রয়েছে। ভাইয়ের বৌয়েরাও সবাই বিয়ের কাজে ব্যস্ত। তবু সালমার স্কুল থেকে এসেছে শুনে ওদের বৈঠকখানায় বসানো হয়। বিয়ে ভাঙার বিষয়ে চন্দ্র বা মাহতাব শুরুতে কিছু বলে না। শুধু অনুরোধ করে সালমাকে যেন পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়। কিন্তু কথায় কথায় আইন অনুযায়ী সালমার এখনো বিয়ের বয়স হয়নি বলতেই সালমার ভাইয়েরা ক্ষেপে ওঠে। তাদের মতে, তাদের বোনের বয়স উনিশ চলে। মোটেও ষোল-সতেরো না। আস্তে আস্তে বিয়ে বাড়ির কাজ ফেলে বাড়ির নারী পুরুষ সবাই বৈঠকে জমায়েত হয়। মাহতাবের পিওন চতুর লোক। অবস্থা খারাপ হওয়ার আগেই সে ইশারা দেয়। মাহতাব চন্দ্রকে নিয়ে বের হয়ে আসে। তারা একটা রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে এসেছিল। কিন্তু বাড়ির আঙিনা পার হয়ে এসে দেখে সিএনজি নেই। মাহতাবের অফিস সহকারী বলে,

“স্যার এখানে থাকা উচিত না। চলেন হাঁটা দেই। দেশের পরিস্থিতি এমনেও ভালা না। বাজারে গেলে কিছু না কিছু পাওয়া যাইব।”

মাহতাবও সম্মতি দেয়। তারা দ্রুত হেঁটে বাজারে চলে আসে। স্ট্যান্ডে সিএনজি দাঁড়িয়ে আছে। একটা সিএনজি ঠিক করেই ফেলেছে এমন সময় হৈচৈ করে একটা দল বাজারে চলে আসে।

“খাড়ান আপনেরা। সালমা কই?”

“জি?”

“সালমারে আপনাগো সিএনজিত কইরা ভাগাইছেন।”

“আরে কী আজব আমরা সালমাকে কখন ভাগালাম! আর ওকে কেন ভাগাবো?”

“আপনেগো জলিল পাডাইছে না? খুব বড়ো খেলা খেলছে ভাবছে? আমগো বাড়ির মাইয়া বদনাম কইরা এলাকায় নাম খারাপ করবো। এইসব খেলা খেলতে দিমু না। আমগো মাইয়া না পাওয়া পর্যন্ত আপনাগো ছাড়ন নাই।”

অবস্থা বেগতিক দেখে মাহতাবের পিওন আর সহকারী দ্রুত ওদের সিএনজিতে বসতে বলে। সিএনজির ড্রাইভার তো মজা পেয়ে গিয়েছে। সে চালাবে না তামাশা দেখবে দ্বিধায় আছে। মাহতাব তাড়াতাড়ি মানিব্যাগ থেকে এক হাজার টাকার নোট বের করে লোকটাকে দিয়ে টানতে বলে। এবার ড্রাইভারের টনক নড়ে। সবার আপত্তির মুখেও সিএনজি টান দেয়। পেছনে পেছনে গাড়ি থামাতে ওরাও রৈ রৈ করতে করতে ছুটে আসে। একটা দল আরেকটা সিএনজিতে ওঠে।

“ভাই আমি যামু না। রাখেন আপনের এক হাজার টাকা। ধরতে পারলে আমার গাড়িত আগুন দিব। গরীব মানুষ কিস্তির টাকাত গাড়ি কিনছি।”

“ভাই আমি আরও এক হাজার দেব। আপনি পেছনে দেখবেন না। অন্য কোনো রাস্তা থাকলে ঘুরে যান। নামিয়ে দিলে আমরা বিপদে পড়বো। আমাদের সাথে মহিলা আছে।”

“তাইলে এসব চক্করে জড়ইলেন ক্যান?”

“ভুল হয়েছে। টান দেন আপনি।”

“তিন হাজার দিয়েন।”

এবার চন্দ্র রেগে যায়।

“দুইশো টাকার ভাড়া দুই হাজার পেয়েও আরও এক হাজার চাইতেছেন! বিপদে পড়লে এমনে লুট করে।”

“আমার সিনএনজি গেলে লাখ টাকা যাইব।”

মাহতাব এবার বিরক্ত হয়। চন্দ্রকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

“টানেন টানেন। দেব সমস্যা নাই।”

পরবর্তী বিশ মিনিট সিএনজির চালক মনে হয় নিজেকে ধুম সিনেমার নায়ক ভেবেছে। মাহতাবের মনে হচ্ছিল সিএনজি রীতিমতো উড়ছে। নানা গ্রাম্য অলিগলি ঘুরে একসময় তারা বড়ো রাস্তায় উঠেই আসে। পেছনে আর কেউ ফলো করছে বলে মনে হয় না। শেষ পর্যন্ত বড়ো একটা বিপদ থেকে বেঁচে সবাই হাফ ছাড়ে।

“স্যার আমি আর শরীফ এখানেই নামব। তবে স্যার ছোটো মুখে বড়ো কথা বলি৷ হইতে পারে আমি অফিস সহকারী, আপনে আমার বস। কিন্তু দিনদুনিয়া আমি আপনের থেকে বেশি দেখছি। আপনে বড়ো হইছেন শহরে। আমি গ্রামের মানুষ। আপনেরে শুরুতেই সাবধান করছিলাম, যে চাকরি করতে আসছেন, তার বাইরে এদিকসেদিক মন দিয়েন না। বিপদ কোনদিক থেকে আসে কে জানে। দেখলেন তো আজ। সরকারি চাকরি করি। আপনের না। এমনে আপনে ব্যক্তিগত কাজে আমারে আর শরীফরে ব্যবহার করতে পারেন না। লোকালি আমাদের কিন্তু একটা সম্মান আছে আজ যদি আমাদের বাইন্ধা রাখতো, মারধর করতো। এর জন্য আপনে দায়ী হইতেন। আপনের চাকরি নতুন। এখনই এমন ঝামেলায় জড়াইলে চাকরি পারমানেন্ট হইব না। আমরা না হয় বড়োজোর শাস্তি পাব কিছু। আপনের চাকরি যাইতেও পারে। মহিলা মানুষ নিয়ে বেশি মাতামাতি করলে নিজেও ধরা খাবেন, চাকরিও যাইব। এরপর থেকে অফিসের কাজের বাইরে আমাদের নিয়েন না।”

***

মাহতাবের কিছু বলার থাকে না। আসলেই সে অনেজটা ধোঁয়াশায় রেখে শরীফ আর মাসুদ সাহেবকে সাথে নিয়ে গিয়েছিল। গ্রামের দিকে যেহেতু যাচ্ছে, ওরা নিশ্চিত ছিল না কৃষি পণ্য সংগ্রহ জনিত কোনো বিষয়ে মাহতাব যাচ্ছে কিনা। মাহতাব ছুটির দিনগুলো গ্রামে গ্রামে এপসের কৃষি এপসের প্রচারণার জন্য কৃষকদের সাথে কথা বলবে বলেছিল। একটা পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছিল। চন্দ্রকে দেখে একটু অবাক হলেও ভেবেছে চন্দ্রও কোনো সরকারি দপ্তরের কেউ। এর আগেও একদিন মাহতাবের অফিসে চন্দ্রকে দেখেছে। কিন্তু ঘটনা যে অন্য কিছু তা বুঝতে পেরে মাসুদ সাহেবের রাগ হওয়াটা অস্বাভাবিক না। শুধু মাহতাব উর্ধতন কর্মকর্তা বলে মাসুদ সাহেব চুপচাপ ছিলেন। এখন সুযোগ পেয়ে ঠিকই কিছু কথা শুনিয়ে দিলো।

(চলবে)