সে আমার অপরাজিতা পর্ব-০৭

0
139

#সে_আমার_অপরাজিতা
#পর্ব_৭
#সারা মেহেক

কিন্তু এর পূর্বেই তন্মধ্যের একটি ছেলে পিছন হতে মারিয়ার পার্স ধরে নিলো। এবার দুজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো। বিন্দুও আক্রমন করতে নিলো। কিন্তু সামনের ছেলেটি তার হাত ধরে ফেললো। মারিয়া আর কোনো উপায় পেলো না এ পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার। তাই সে হাত উঠিয়ে মারতে নিলো। বিন্দুও সে চেষ্টা করলো। কিন্তু তাদের সে চেষ্টা বিফল করলো ব খা টে ছেলে তিনটি। বিন্দু ও মারিয়া ভয়ে চিৎকার করলো। তবে আশেপাশে কেউ না থাকায় তাদের চিৎকারে কেউ এগিয়ে এলো না। ব খা টে ছেলে তিনটির চেহারায় ক্রুর হাসি ফুটে উঠেছে। তাদের এ হাসি দেখে বিন্দু ও মারিয়ার ভয়ের সীমারেখা সর্বোচ্চ রেখা অতিক্রম করলো। আতঙ্কিত দু বান্ধবীর মনে অনাকাঙ্ক্ষিত এক মুহূর্তের চিন্তা ঘুরাফেরা করলো। এই বুঝি খারাপ কিছু হয়ে যাবে এখনই!

বাদল ও তাদের পার্টির অফিসের এক কর্মকর্তা মার্কেটের এদিকটা নিজেদের মতো পরিদর্শন করতে এসেছে। মার্কেটের এই পিছন দিকটায় বর্জ্য নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা নেই। ফলে রোজকার ময়লা আবর্জনা এদিকে অনেকটা স্তুপ আকারে রাখা হয়। ফলস্বরূপ ভীষণ বাজে গন্ধে সবারই চলাফেরায় সমস্যা হয়। আজ এ ময়লা রাখার স্তুপটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে কোনো এক ব্যবস্থা করবে বাদল। এর পূর্বে দুদিন এদিকটায় এসেছে সে। দমবন্ধ করে দেওয়া গন্ধে এক মুহূর্তের জন্যও টিকে থাকা দুষ্কর হয়ে যায়।

বাদল ও অফিসের সেই কর্মকর্তা রাস্তা ধরে ভিতরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিছুদূর যেতেই বাদলের চোখে পড়লো দুটো মেয়ের সামনে পিছনে দিয়ে তিনটে ছেলে ঘিরে আছে। মেয়ে দুটির চেহারায় দেখা মিলছে তীব্র আতঙ্ক। বাদল দ্রুত এগিয়ে গেলে সেদিকে। কাছে গিয়ে বিন্দু ও মারিয়াকে দেখে বিস্মিত হলো সে। আরে এ তো তার ভার্সিটির জুনিয়র!
বাদল হইহই করতে করতে সামনে এগিয়ে গেলো,
” এই এখানে কি করছিস রে তোরা!”

বাদলের কণ্ঠস্বর শোনামাত্রই বিন্দু ও মারিয়া সামনের দিকে তাকালো। বাদলকে দেখে দুজনের দেহে প্রাণ ফিরে এলো যেনো। আশার আলোর দেখা পেলো তারা। কিন্তু ব খা টে তিনটি বাদলকে দেখে যে যার মতো দ্রুত পালালো। বাদল সেই কর্মকর্তাকে বললো,
” দাউদ, ওদেরকে ধরো। আর পুলিশকে খবর দাও জলদি। ”
বাদলের আদেশ পেয়েই দাউদ ছুটলো ব খা টে তিনটির পিছু পিছু।

মারিয়া বাদলকে দেখে প্রলম্বিত স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। আতঙ্কে পাংশুটে বর্ণ ধারণ করা চেহারায় ঈষৎ হাসি ফুটিয়ে বললো,
” থ্যাংকইউ ভাইয়া। থ্যাংকইউ সো মাচ। আপনি না এলে আজ কি যে বিপদে পড়তাম আমরা!”

বাদল মারিয়ার এহেন কথায় আশপাশ তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” তোমরা এদিকে কি করছো? ঐ ছেলেগুলো…..”
তার সম্পূর্ণ কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই বৃত্ত কল দিলো। সে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বৃত্ত জিজ্ঞেস করলো,
” কি ব্যাপার বাদল? কোথায় তুই? এখনও জায়গাটা দেখা হয়নি?”

বাদল তখন বিন্দুর দিকে এক নজর চেয়ে বললো,
” দেখা তো হয়েছে। কিন্তু এদিকে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে ভাই। ”

” কি ঘটনা?”

” ঐ যে বিন্দু নামের যে মেয়েটা আছে না? ও ওর বান্ধবীর সাথে মার্কেটের পিছন সাইডটায় আছে। কয়েকটা ছেলে ডিস্টার্ব করছিলো। আমি সময়মতো না এলে বোধহয় উল্টাপাল্টা কিছু হয়ে যেতো।”

বাদলের কথা শুনে বৃত্ত’র বুকটা ধক করে উঠলো। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সে। উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” কোথায় তোরা এখন? মার্কেটের ঐ গলিতেই?”

” হ্যাঁ।”

” আচ্ছা, তুই ওদেরকে নিয়ে বের হো। আমি এক্ষুনি গাড়ি নিয়ে আসছি। ”

” আচ্ছা আসো ভাই।”
বাদল ফোন রেখে মারিয়া ও বিন্দুর দিকে চাইলো। বিন্দুর চেহারা হতে এখনও আতঙ্কিত ভাব কাটেনি পুরোপুরি। বারংবার শুধু খারাপ চিন্তাগুলো মাথায় আসছে তার। আজ বাদল সময়মতো না এলে তার দুজন মিলে এই ব খা টে তিনটার সাথে কিভাবে পেরে উঠতো কে জানে! শত হোক তারা মেয়ে। তাদের দুজনের শক্তি সামর্থ্যের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তি সামর্থ্য ছিলো ব খা টে তিনটের।
বাদল তাদের দুজনকে বললো,
” চলো মেইন রোডে গিয়ে দাঁড়াই। এখানে আর দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক হবে না।”
বলেই বাদল হাঁটতে শুরু করলো। তার পিছু ধরলো মারিয়া ও বিন্দু। দুজনের বুকটা এখনও অবিরাম ধুকপুক করছে। ভয় পুরোপুরি কাটতে পারেনি এখনও। বিন্দু হাঁটতে হাঁটতে মারিয়ার হাতটা শক্ত করে ধরলো। মারিয়াও বিন্দুর হাতটা তার হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরলো।

দু মিনিটেরও কম সময়ে তারা মেইন রোডের সামনে এসে দাঁড়ালো। বাদল বললো,
” একটু ওয়েট করো। ভাই আসছে গাড়ি নিয়ে। কাছেই আমাদের অফিস।

বিন্দু প্রারম্ভে বুঝতে পারলো না বাদল কার কথা বলছে। কিন্তু মিনিট তিনেকের মাঝে যখন বৃত্ত গাড়ি নিয়ে তাদের সামনে দাঁড়ালো, তখন সে বুঝতে সক্ষম হলো, বাদল বৃত্তকে ভাই বলছে। তবে এখনও তার কাছে বাদল ও বৃত্ত’র ভাইয়ের সম্পর্ক অজানা।
বৃত্ত গাড়ি থেকে নেমেই বিন্দুর সামনে দাঁড়ালো। চেহারায় উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে উৎকণ্ঠাপূর্ণ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” ঠিক আছো বিন্দু? কোনো সমস্যা হয়নি তো? ছেলেগুলো খারাপ কিছু করেনি তো?”
বলেই সে কয়েক সেকেন্ড থেমে পুনরায় বললো,
” ঐ রাস্তায় কে যেতে বলেছিলো তোমাকে? জানো না ঐদিকটার রাস্তায় মানুষজন কম থাকে?”

বিন্দু বৃত্ত’র এ উৎকণ্ঠায় কিঞ্চিৎ বিস্মিত হলো। আড়চোখে মারিয়ার পানে চাইলো। মারিয়াও বৃত্ত’র এহেন আচরণে খানিকটা অবাক হলো।
বিন্দু নিজেকে খানিকটা সামলে নিলো। বৃথা হাসার চেষ্টা করে বললো,
” কিছু হয়নি বৃত্ত ভাইয়া। আমরা দুজনেই ঠিক আছি। আসলে এদিকে কখনও আসিনি তো। তাই জানা ছিলো না।”

বৃত্ত এবার রোষাবিষ্ট কণ্ঠে বললো,
” চিনো না, জানো না এমন রাস্তায় এসেছো কোন আক্কেলে! আশ্চর্য! মেয়ে মানুষ হয়ে রাস্তাঘাট চিনো না এমন রাস্তায় আসলে কেনো?”

বৃত্ত’র এহেন ক্রুদ্ধ আচরণ বাদলের অজানা নয়। কিন্তু বিন্দুর উপর এমন আচরণ এ মুহূর্তে ঠিক মানানসই মনে হলো না তার নিকট। সে পরিবেশটাকে খানিকটা হালকা করার চেষ্টায় হেসে বললো,
” রিল্যাক্স ভাই। শান্ত হও। কিছু হয়নি ওদের। ”

বাদলের কথা শুনে বৃত্ত একবার তার দিকে তাকালো। বুঝলো পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে সে প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। ঈষৎ বিব্রতবোধ করলো সে।
ফলে নিজেকে শান্ত করতে মুখ গোল করে লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়লো। নিজেকে শান্ত করতে সক্ষম হলো। বললো,
” আচ্ছা, তোমরা গাড়িতে উঠো। আমি ক্যাম্পাসে দিয়ে আসছি তোমাদের।”

বিন্দু ও মারিয়া একে অপরের দিকে এক পলক চাইলো। বৃত্ত পুনরায় গাড়িতে উঠতে বলার পর তারা উঠলো। অতঃপর বৃত্ত ও বাদলও গাড়িতে উঠলো।

বৃত্ত, বিন্দু ও মারিয়াকে ক্যাম্পাসে পৌঁছে দিলো। বিন্দু ও মারিয়া যে বৃত্ত’র গাড়ি থেকে নামলোশ এটা ক্যাম্পাসের অনেকেরই দৃষ্টি কাড়লো। তবে তারা সেদিকে খেয়াল করার সময় পেলো না। দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে হোস্টেলে চলে এলো।

——–
সন্ধ্যায় হঠাৎ আশরাফের সাথে দেখা হলো বৃত্ত’র। আশরাফ ও বৃত্ত একই ব্যাচের। তবে পড়াশোনায় ব্যাপক ফাঁকি দেওয়ায় এখন সে বাদলের সাথে পড়াশোনা করছে।
পুরো ভার্সিটিতে আশরাফের রেকর্ড খুব একটা ভালো না। ভার্সিটি জীবনের শুরু থেকেই রাজনীতির সাথে একেবারে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে সে। এ কারণে বেশ ক’বার জেলও খেটেছে আশরাফ। তবুও সে রাজনীতিতে চরমভাবে আসক্ত।

বৃত্ত’র সাথে দেখা হওয়া মাত্রই আশরাফ গা জ্বালানো এক হাসি দিয়ে বললো,
” কি ব্যাপার বন্ধু কেমন আছে?”

বৃত্ত আশরাফের উপস্থিতিতে যে ভীষণ নাখোশ হয়েছে তা তার চেহারা প্রতিক্রিয়া দেখেই বলে দেওয়া সম্ভব। শুধুমাত্র লোকদেখানোর জন্যই সে বললো,
” ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?”

আশরাফ দাঁত বের করে বিস্তৃত হাসলো। অতঃপর রসিয়ে রসিয়ে বললো,
” আল্লাহ রেখেছে ভালো। তা বন্ধু, তুমি যে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে লং ড্রাইভে যাও। ব্যাপার কি? শুনলাম মেয়েটা আমাদেরই জুনিয়র। তাহলে শেষমেশ জুনিয়রের উপর নজর দিয়েছো দেখছি।”
®সারা মেহেক

#চলবে