#সে_আমার_অপরাজিতা
#পর্ব_১৪
#সারা মেহেক
অতঃপর প্রায় দৌড়ে তার খালুর দিকে ছুটে গেলো বিন্দু৷ গিয়ে দেখলো আহসান সাহেব চোখ বুজে একটা পাটিতে শুয়ে আছেন। হাতে ক্যানুলা লাগানো। সুফিয়া বেগম শুকনো মুখে বসে আছেন স্বামীর পাশে।
বিন্দু ধপ করে আহসান সাহেবের পাশে বসে পড়লো। সে ভেঙে পড়েছে। সবসময় কর্মক্ষম থাকা মানুষটিকে আজ সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় দেখে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে সে। দু নয়ন বেয়ে নীরব অশ্রু বেয়ে পড়ছে। তার এ কান্না দেখে সুফিয়া বেগম নিস্তেজ স্বরে বললো,
” তোর খালু আর আগের মতো নেই বিন্দু। আর আগের মতো নেই।”
বিন্দু জিজ্ঞেস করলো,
” ডাক্তার কি বলেছে খালা?”
” তোর খালুর বাম পাশ প্যারালাইস হয়ে গিয়েছে। বড়সড় স্ট্রোক করেছিলো। ”
” আর কখনো কি ঠিক হবে না খালু?”
” জানি না রে। ডাক্তার আর কিছু বলেনি।”
বিন্দুর পরিবারের এ অসহায়ত্ব দেখে বৃত্ত’র মন দুঃখ ভারাক্রান্ত হলো। সে তামিমকে জিজ্ঞেস করলো,
” ওয়ার্ডে বা কেবিনে কোনো বেড খালি নেই?”
তামিম প্রথমে বৃত্তকে চিনতে পারলো না। তার দৃষ্টিতে জিজ্ঞাসার আভাস পেলো বৃত্ত। ফলে সে নিজ থেকেই বললো,
” আমি আর বিন্দু একই ডিপার্টমেন্টের। ওর সিনিয়র আমি। নাম, বৃত্ত।”
তামিম চিনতে পেরেছে এমন ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে বললো,
” ভালো আছেন বৃত্ত ভাইয়া?”
বৃত্ত ব্যস্ত কণ্ঠে বললো,
” এখন আমার ভালো খারাপের কথা পাশে রাখো। আগে বলো কেবিনে বা ওয়ার্ডের কোনো বেড খালি নেই?”
” না ভাইয়া। ডাক্তার বলেছে কাল সকালে ওয়ার্ডে একটা বেড খালি হবে। আর কেবিন খালি নেই। ”
বৃত্ত শশব্যস্ত হয়ে পড়লো। এক নজর পুরো বারান্দায় দিলো সে। সদর হাসপাতালের এহেন করুণ অবস্থা দেখে আফসোস করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কেননা শহরের প্রায় আশি শতাংশ মানুষই সদর হাসপাতাল ব্যতিত অন্য কোথাও চিকিৎসা নিতে যায় না। ফলে যত সংখ্যক লোক সমাগম এখানে হয় তত সংখ্যক বেড ফাঁকা থাকে না। উপরন্তু পর্যাপ্ত ডাক্তারের অভাব।
বৃত্ত পাঞ্জাবির পকেট হতে ফোন বের করে কল লিস্ট হতে বাদলের নাম্বার বের করে কল করলো। ওপাশে তখনও কল রিসিভ হয়নি। বৃত্ত জরুরি চাহনিতে তামিমের দিকে চেয়ে বললো,
” চিন্তা করো না তামিম৷ আমি ব্যবস্থা করছি।”
বলেই সে উল্টোদিকে ঘুরে হাঁটতে আরম্ভ করলো। ফোনে বললো,
” বাদল, যত দ্রুত সম্ভব সদর হাসপাতালে আয়। বিন্দুর খালু স্ট্রোক করেছে। কেবিনে ভর্তি করাতে হবে।”
বলেই সে হাঁটতে হাঁটতে হাসপাতালের বাইরে চলে এলো।
বিন্দু নীরবে তার খালুর পাশে বসে আছে। সুফিয়া বেগম স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন স্বামীর দিকে। আহসান সাহেব এখনও চোখ খুলেননি৷ ঘুমাচ্ছেন তিনি। এদিকে তামিম ডাক্তারের সাথে কথা বলে ওষুধ আনতে বের হলো। কিন্তু হাসপাতালের বাইরে বৃত্ত তাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
” কিছু লাগবে?”
” হ্যাঁ ভাইয়া। ওষুধ আনতে যাচ্ছি।”
” তোমাকে ওষুধ আনতে হবে না। আমাকে প্রেসক্রিপশনটা দাও। আমি আনছি। ”
” আরে না ভাইয়া। সমস্যা নেই। আপনি শুধু শুধু এতো কষ্ট করবেন কেনো।”
” বড়দের কথা কাটতে নেই তামিম। আমাকে প্রেসক্রিপশন দাও। আর তুমি গিয়ে তোমার বাবার পাশে বসো। ”
বৃত্ত’র কথায় তামিম প্রেসক্রিপশনটা এগিয়ে দিলো। বৃত্ত তা নিয়ে সামনের ওষুধের দোকানে চলে গেলে তামিমও চলে এলো তার বাবার কাছে।
এত দ্রুত তামিমকে দেখে বিন্দু জিজ্ঞেস করলো,
” কি ব্যাপার? কেবলই না ওষুধ আনতে গেলি? এত তাড়াতাড়ি কেনা হয়ে গেলো?”
তামিম বললো,
” আমি ওষুধ কিনতেই বের হয়েছিলাম। কিন্তু বাইরে বৃত্ত ভাইয়া ছিলো। উনি আমার কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে নিজেই ওষুধ আনতে গেলো।”
তামিমের এহেন কথায় বিন্দু খানিকটা অবাক হলো। কিঞ্চিৎ বিস্মিত কণ্ঠে নিজেই নিজেকে শুধালো,
” উনি এখনও ফিরে যাননি!”
বলেই সে অনেকটা ধমকের সুরে তামিমকে বললো,
” তোর কি হাত পা নেই? নিজে গিয়ে আনতে পারিস না?”
অকস্মাৎ বিন্দুর হেন ব্যবহারে তামিম কিছুটা বিস্মিত হলো। তবে তৎক্ষনাৎ প্রতিবাদী সুরে বললো,
” আমিই নিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বৃত্ত ভাইয়া নিজের সিনিয়র সিটিজেন কার্ড দেখিয়ে আমাকে ছোট হিসেবে প্রমাণ করে দেয়। তাই বাধ্য হয়ে দিতে হয়। ”
বিন্দু বিরক্ত হয়। বললো,
” উফ, এখন জোকারের মতো কথা বলিস না। আচ্ছা বাদ দে এসব। জুবায়ের ভাই কখন আসবে?”
” ভাইয়া ১১টার ট্রেনে রওনা দিয়েছে৷ কাল সকালের দিকে পৌঁছে যাবে। ”
” আচ্ছা। এখানে খালুর পাশে বস। আমি গিয়ে দেখে আসি বৃত্ত ভাইয়া কোথায়।”
বলেই বিন্দু উঠে দাঁড়ালো। তামিমকে সুফিয়া বেগমের পাশে বসিয়ে সে হাসপাতাল থেকে বের হলো। বের হতেই দেখলো বৃত্ত ওষুধ নিয়ে আসছে।
বিন্দু গিয়ে বৃত্ত’র সম্মুখে দাঁড়ালো। ব্যাগ হতে এক হাজার টাকার একটা নোট বের করতে করতে নিরত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” কত টাকা হয়েছে ওষুধের? আপনি ওষুধটা দিয়ে চলে যান বৃত্ত ভাইয়া। অনেক দেরি হয়ে গেলো তো। আর আমাকে হসপিটালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য থ্যাংকস। ”
বিন্দুর এহেন কথায় তব্দা খেলো বৃত্ত। বললো,
” তুমি আমাকে ওষুধের টাকা দিবে এখন! এতো টাকার গরম?”
বিন্দু চট করে বৃত্ত’র পানে তাকালো। শেষোক্ত কথাটি তার ভীষণ গায়ে লেগেছে। সে শক্ত কণ্ঠে বললো,
” আপনার মতো টাকার গরম দেখাতে আসিনি আমি৷ অসুস্থ হয়েছে আমার খালু। আপনার খালু না। আপনি কেনো ওষুধ কিনে আনবেন? এজন্য যা টাকা হয়েছে আমি দিয়ে দিচ্ছি। ”
বৃত্ত’র মেজাজ এবার চটে গেলো। ক্রোধে তার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। বিন্দুকে বললো,
” শোনো বিন্দু, বাড়াবাড়ি করো না। নাহয় আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। ”
বিন্দুও দমে যাওয়ার পাত্র নয়। সে বৃত্ত’র কথা কেটে বললো,
” বাড়াবাড়ি করছি না আমি। আপনি আমার ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ভাইয়া। সো সিনিয়র ভাইয়ার মতোই থাকুন। আপন হওয়ার চেষ্টা করবেন না। আগেও বলেছি এসব আমার পছন্দ না। ”
” আমি কি হওয়ার চেষ্টা করছি, তোমার কি পছন্দ না সেসবে আমার যায় আসে না। আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করবো। তুমি শুধু চুপচাপ আমার কথা শুনবে। এর চেয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমার সবচেয়ে খারাপ রূপটা তুমি দেখবে। যেটা আমি তোমাকে কখনও দেখাতে চাইছি না। তোমার খালু হসপিটালে ভর্তি হয়েছে তার দেখাশোনার দায়িত্ব সম্পূর্ণ আমার। যতক্ষণ পারছি তোমাদের সাহায্য করবো। আর এতোই যখন নিজের টাকার উপর গরম দেখাতে চাচ্ছো, তাহলে একটা কেবিন জোগাড় করে দেখাও। পারবে এখন একটা কেবিন জোগাড় করতে? বলো? পারবে?”
বিন্দু এবার দমে গেলো। মুখখানা ছোট হয়ে এলো। সত্যি সে চাইলেই এখন একটা কেবিন জোগাড় করতে পারবে না। সে সক্ষমতাটুকু তার নেই। একে তো মেয়ে, উপরন্তু বৃত্ত’র ন্যায় তার সবার সাথে যোগাযোগ নেই। তাহলে কি করে সম্ভব তার পক্ষে একটা কেবিন জোগাড় করা, যেখানে ডাক্তার নিজ মুখে জানিয়ে দিয়েছে, কোনো কেবিন খালি নেই!
বিন্দু জবাব দিতে পারলো না। বৃত্ত এবার তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
” হাহ, এখন জবান বন্ধ হয়ে গিয়েছে? কথা বের হচ্ছে না? শোনো, যেসব জায়গায় তুমি নিজের প্রভাব দেখাতে পারবে সেসব জায়গায় দেখাবে। আমার উপর দেখাতে আসবে। আর চুপচাপ আমাকে সাহায্য করতে দাও। নাহয় তোমার খালার সামনে তোমার এ ব্যবহার সম্পর্কে বলবো আমি। আর নিশ্চয়ই তোমার খালা তোমার এরূপ ব্যবহার ভালো চোখে দেখবে না?”
বিন্দু জবাব দিলো না৷ দৃষ্টিজোড়া নত রাখলো। ইতোমধ্যে হাসপাতালে বাদল এসে পৌঁছালো। সে এসেই বৃত্তকে দেখলো। আশাবাদী কণ্ঠে বললো,
” ভাই, কেবিন ঠিক হয়ে গিয়েছে। নিউরো ডিপার্টমেন্টের পাঁচ নাম্বার রুমটা পেয়েছি।”
বলেই সে বিন্দুর দিকে তাকালো। বিন্দুর এমন গোমড়ামুখো, উড়ো উড়ো ধরণের মুখভঙ্গিমা দেখে জিজ্ঞেস করলো,
” কি ব্যাপার বিন্দু? মুখের অবস্থা অমন কেনো?”
বিন্দু জবাব দিলো না। বৃত্ত তার হয়ে জবাব দিলো,
” কিছু হয়নি। তুই চল। ওর খালু অনেকক্ষণ ধরে মেঝেতে শুয়ে আছে। এ অবস্থায় এমন আনহাইজেনিক জায়গায় বেশিক্ষণ রাখা ভালো হবে না। ”
বলতে বলতে সে বাদলসহ হাঁটতে লাগলো। তাদের পিছু পিছু হাঁটা আরম্ভ করলো বিন্দুও।
জেনারেল ওয়ার্ডে ঢুকতে ঢুকতে হাসপাতালের পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে নাক সিঁটকালো বাদল। বললো,
” এ কি অবস্থা ভাই!”
বৃত্ত জ্ঞাত কণ্ঠে বললো,
” সরকারি হাসপাতাল থেকে এর চেয়ে বেশি কি আশা করিস।
শোন, কালকে সকালের মধ্যে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকায় সবকিছুর ব্যবস্থা করে তারপর পাঠাবো।”
” আচ্ছা ভাই। তবে আমার মনে হয় আজ রাতটা আমার অপেক্ষা করি। কাল সকালে সব ব্যবস্থা করি। এখন সব ম্যানেজ করা একটু টাফ হবে। যদিও ইম্পসিবল না। কিন্তু আমার মনে হয় কালকে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করি। ”
” আচ্ছা, ঠিক আছে। কালকে সকালে সব ম্যানেজ করে দুপুরের মধ্যে ওর খালুকে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করবো। ”
পিছে বিন্দু বৃত্ত ও বাদলের সম্পূর্ণ কথোপকথন শুনলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বৃত্তর প্রতি নিজের করা ব্যবহারের প্রতি ক্রোধিত হলো সে। কোনো সন্দেহ নেই, বৃত্তর কথাগুলো শুনে সে এ মুহূর্তে ভীষণ কৃতজ্ঞতা বোধ করলো।
কথা বলতে বলতে বৃত্ত ও বাদল আহসান সাহেবের কাছে চলে এলো। দুজনে মিলে আহসান সাহেবকে কেবিনে পাঠানোর ব্যবস্থা করলো। কেবিনে পাঠানোর পর বৃত্ত বাদলকো বললো বাড়িতে যেনো সবাইকে সামলে নেয় সে। বাদলও বৃত্তকে আশ্বস্ত করে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলো।
আহসান সাহেব যেনো সঠিক সময়ে সঠিক ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা পায় তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করলো বৃত্ত। তাদের প্রত্যেকের রাতের খাবারের ব্যবস্থাও করলো সে। বাকি যেসব ওষুধ পরবর্তীতে প্রয়োজন সেটারও ব্যবস্থা করলো বৃত্ত।
রাতে একই কেবিনে তারা ঘুমালো। সুফিয়া বেগম ঘুমালো কেবিনের ওপর বেডে আর সুফিয়া বেগমের পাশে, নিচে পাটি পেতে ঘুমালো বিন্দু। আহসান সাহেবের পাশে নিচে পাটি পেতে ঘুমালো বৃত্ত ও তামিম।
পুরো রাতটা বেশ কষ্টে কাটালেন সুফিয়া বেগম। দু চোখের পাতা বহু কষ্টেও এক হলো না। একে তো স্বামীর চিন্তা। অপরদিকে বিন্দুর চিন্তা। কেননা অপরিচিত একটা ছেলে এসে একই কেবিনে তার মেয়ের সাথে রাত কাটাচ্ছে। এটা যেকোনো মায়ের জন্যই দুশ্চিন্তার ব্যাপার। যতই ছেলেটা সাহায্য করুক না কেনো। আজকালকার যুগে এমন ছেলেদের প্রতি বিশ্বাস করা আর চোরদের বিশ্বাস করা একই কাতারে পড়ে। যদিও তামিম বৃত্ত’র পরিচয় দিয়েছে তাকে। এ-ও বলেছে, বৃত্ত অনেক ভালো। তবুও সুফিয়া বেগম দুশ্চিন্তামুক্ত হলেন না।
———
সকালে জুবায়ের সরাসরি হসপিটালে এসে পৌঁছালো। জুবায়েরের জন্যই অপেক্ষা করছিলো বৃত্ত। নচেৎ সকাল হতেই সে আহসান সাহেবকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলো।
জুবায়েরসহ বিন্দু, তামিম,সুফিয়া বেগমকে নিয়ে আহসান সাহেবের সাথে ঢাকা পৌঁছালো বৃত্ত। ঢাকার অ্যাপোলো হসপিটালে ভর্তি করানো হলো আহসান সাহেবকে। তিনি যেনো সর্বোচ্চ পর্যায়ের চিকিৎসাটুকু পায় সেটা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত স্থির বসলো না বৃত্ত।
বৃত্ত’র এ আচরণে চরম কৃতজ্ঞ জুবায়ের বৃত্তকে ধন্যবাদ বলতে বলতে হাঁপিয়ে উঠলো। সুফিয়া বেগম বৃত্ত’র আচরণে মুগ্ধ হলেন। কিন্তু একটি প্রশ্নই তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, বৃত্ত তাদের এত সাহায্য করছে কেনো? এ ব্যাপারে বিন্দুর সাথে কথাও বললেন তিনি। কিন্তু বিন্দু তাঁকে সঠিক জবাব দিতে ব্যর্থ হলো। তবে তামিম যখন জানালো যে বৃত্ত তাদের শহরের মেয়রের ছেলে তখন সুফিয়া বেগমের প্রশ্নাত্মক মনন শান্ত হলো।
তিনদিন যাবত হসপিটালে ভর্তি রইলেন আহসান সাহেব। এ তিনদিনে নিজ পকেট থেকে সব টাকা খরচ করেছে বৃত্ত। জুবায়ের বারংবার চাইলো, নিজ পকেট থেকে কিছু খরচ করতে। কিন্তু বৃত্ত সে সুযোগটা দিলো না। আর রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ দেখে জুবায়েরও বেশি জোরজবরদস্তি করলো না। বলা তো যায় না কখন কি নিয়ে ঝামেলা বেধে যায়!
এ তিনদিনে বিন্দু বৃত্তকে কোনো কাজে বাঁধা দেয়নি। কেননা এ মুহূর্তে তার খালুর স্বাস্থ্য অবস্থার উন্নতিই তার কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয়। সে চাইছে না তার জিদের কারণে তার খালুর শরীরের কোনো অবনতি ঘটুক। বিন্দু বৃত্ত’র প্রতি এমন কঠোর আচরণ করছে যেনো বৃত্ত তার এ আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে তার সাথে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ রাখে। বিন্দু নিজেও অবগত যে বৃত্ত তাকে পছন্দ করে। কিন্তু সে এসব ব্যাপার হতে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে পছন্দ করে। অথচ বৃত্ত তার প্রতি এমন আচরণ করছে যে সে না চাইতেও বৃত্তর সংস্পর্শে চলে আসছে।
আজকে দুপুরের দিকে রিলিজ দিবে আহসান সাহেবকে। সকালের নাস্তা করে জুবায়ের ও তামিম একটু বাইরে বেরিয়েছে। আর সুফিয়া বেগম ও বিন্দু আহসান সাহেবের পাশে বসে আছে। এমনই মুহূর্তে কেবিনে প্রবেশ করলো বৃত্ত। তার হাতে একটা সুন্দর ডিজাইনের ব্যাগ। সে এসেই এক চোট মুচকি হেসে সুফিয়া বেগমের দিকে ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
” আন্টি, আপনার সেই শাড়িটা ফেরত দিলাম। বহু কষ্টে জোগাড় করেছি। ”
অকস্মাৎ বৃত্ত’র নিকট হতে শাড়ি পেয়ে যারপরনাই অবাক হলেন সুফিয়া বেগম। তবে তাঁর এ বিস্ময়ের মাত্রা আকাশ ছুঁলো যখন তিনি ব্যাগ খুলে হুবহু সেই শাড়িটা পেলেন যেটা আহসান সাহেব তাঁকে দিয়েছিলেন। এবং তিনি দিয়েছিলেন বিন্দুকে তার নবীন বরণে। এদিকে সুফিয়া বেগমের হাতে সেই শাড়ি দেখে পানি খেতে খেতে বিষম খেলো বিন্দু। আরে, এ শাড়ির কথা তো বেমালুম ভুলে বসেছিলো সে! এখন খালাকে এ নিয়ে কি জবাবদিহি করবে সে!
বৃত্ত তো বলেছিলো খালাকে যেনো এ ব্যাপারে কিছুই জানানো না হয়। তাহলে এখন বৃত্ত নিজ হাতে খালাকে এ শাড়ি দিলো কেনো! এখন কি হবে! কি এক মহা বিপদ!
বৃত্ত’র দিকে তাকালো বিন্দু। বৃত্ত তাকে দেখে বাঁকা হাসি দিলো। যে হাসির অর্থ, তোমাকে সুযোগ বুঝে একটুখানি টাইট দিলাম বিন্দু।
®সারা মেহেক
#চলবে