সে আমার অপরাজিতা পর্ব-১৬

0
137

#সে_আমার_অপরাজিতা
#পর্ব_১৬
#সারা মেহেক

বৃত্ত স্তিমিত স্বরে বললো,
” না বাবা।”

আফতাব হোসাইন হুংকার ছেড়ে বললেন,
” তাহলে এ দায়িত্বহীনতা কেনো বৃত্ত? রাজনীতি তোমারও প্যাশনের জায়গা। তাহলে সেই প্যাশনটাকে একটা মেয়ের জন্য এভাবে অবহেলা করলে! তিনটা দিন তুমি শহরে নেই। পার্টির কাজের সাথে তিনদিন তোমার সম্পর্ক নেই। তুমি এমন দায়িত্ব- জ্ঞানহীনের পরিচয় দিলে ভবিষ্যতে তোমার উপর পার্টির সমস্ত কাজ ছেড়ে দিবো কি করে? এর কোনো জবাব আছে তোমার কাছে?”

বৃত্ত নীরব। সে যে তার বাবাকে ভীষণ রুষ্ট করে তুলেছে তা স্বচক্ষে দেখতে পারছে সে। এ নিয়ে নিজের প্রতি আশাহত সে। বৃত্ত কখনো চায়নি আফতাব হোসাইন তাকে অযোগ্য হিসেবে মনে করুক। অথচ সে নিজেই আজ এমন পরিস্থিতি তৈরী করে দিয়েছে যে আফতাব হোসাইন না চাইতেও তাকে অযোগ্য হিসেবে গণনা করে নিয়েছে।

বৃত্ত তার বাবার দৃষ্টি বরাবার চাইলো। কয়েক সেকেন্ড সেই রুষ্ট দৃষ্টির সহিত সুস্থির দৃষ্টির মত বিনিময় ঘটিয়ে সে হাঁটু গেঁড়ে আফতাব হোসাইনের সম্মুখে বসলো। সুশীতল স্বরে ধীরস্থিরভাবে বললো,
” বাবা, আমি সবসময় আপনার বাধ্য ছেলে হয়ে থাকতে চেয়েছি। কখনোও আপনাকে রাগিয়ে দিতে চাইনি। বিশেষ করে রাজনীতির মতো ব্যাপারে তো কখনোই না। কারণ রাজনীতি আপনারও নেশা, আমারও নেশা। আমি কখনো এ ব্যাপারে হেলাফেলা করতে চাইনি। কিন্তু এই প্রথম এমনটা হয়েছে। আসলে বাবা, আপনিও সেদিন ঐ পরিস্থিতিতে পড়লে হয়তো বিন্দুকে সাহায্য করতেন। আমিও তাই করেছি।
আচ্ছা, বড় ছেলের প্রথম ভুল হিসেবে কি ক্ষমা করে দেওয়া যায় না আমাকে? আর কখনো হবে না এমনটা। আই প্রমিজ।”

বৃত্ত’র স্থির মেজাজের কথায় অনেকটাই শান্ত হলেন আফতাব হোসাইন। বড় ছেলের প্রতি চাইলেও তিনি বেশিক্ষণ রেগে থাকতে পারেন না। কেননা বর্ষা ও বাদলের তুলনায় বৃত্ত’র প্রতি তাঁর টান বেশি, আবেগ বেশি। এ কারণে কোনো ভুল কাজে তিনি বৃত্ত’র প্রতি সবচেয়ে বেশি যেমন রুষ্ট হোন, ঠিক তেমনটাই বৃত্ত’র কোনো প্রশংসনীয় কাজে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হোন।

আফতাব হোসাইন আড়ম্বরশূন্য চাহনিতে কয়েক সেকেন্ড চেয়ে রইলেন বৃত্ত’র দিকে। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছেলের মাথায় হাত রেখপ বললেন,
” তোমার প্রতি আমার আস্থা সবসময় থাকবে বৃত্ত। আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতে তুমি আমার জায়গা নিতে পারবে। কিন্তু এর আগে এমন কোনো কাজ করো না যেনো আমার সিদ্ধান্তে আমাকে পস্তাতে হয়।

আচ্ছা, এখন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। কালকে সকালে সবার সাথে দেখা করো। আর হ্যাঁ, কাল সকালে একটু দ্রুত অফিসে চলে এসো। কাজ আছে। ”

আফতাব হোসাইনের কথায় বৃত্ত’র মুখে হাসি ফুটলো। সে স্বস্তি নিয়ে ছোট্ট করে জবাব দিলো,
” আচ্ছা বাবা।”

———–

পার্টির কাজে ব্যস্ত সকলে। কয়েক মাস বাদে নির্বাচন। এ নিয়ে কারোর মাঝে ব্যস্ততার কমতি নেই। আফতাব হোসাইন নিজের সেক্রেটারিসহ দু ছেলেকে নিয়ে মিটিং এ বসেছেন। সাথে যোগ দিয়েছে পার্টির বাকি সদস্যরাও। মিটিং এ এলাকার উন্নয়নমূলক বেশ কিছু কাজ নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা। পাশাপাশি সকলে নিজ নিজ মত পেশ করছে, আফতাব হোসাইনের পরামর্শও নিচ্ছে।

মিটিং শেষ হওয়ার পর আফতাব হোসাইন দু ছেলেকে নিয়ে বসলেন। পার্টির গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার পাশাপাশি ছেলেদের সাথে মাঝে মাঝে খোশ গল্পে মেতে উঠলেন তিনি। এরই মধ্যে তাঁর সেক্রেটারি জহির প্রবেশ করলো কেবিনে।
” স্যার, খালেদ মোল্লা এসেছেন আপনার সাথে দেখা করার জন্য। ”

অকস্মাৎ খালেদ মোল্লার উপস্থিতিতে কিঞ্চিৎ বিস্মিত হলেন আফতাব হোসাইন। বিস্মিত হলো বৃত্ত ও বাদলও। এই অসময়ে তাদের কেউই খালেদ মোল্লাকে অফিসপ আশা করেনি।

আফতাব হোসাইন বললেন,
” পাঠিয়ে দাও উনাকে।”

জহির বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে এবং প্রায় সাথে সাথেই কেবিনে প্রবেশ করলেন খালেদ মোল্লা। প্রবেশ মাত্রই তিনি পান চিবানো দাঁত বের করে বিস্তর হাসলেন। তিনজনের উদ্দেশ্যে বললেন,
” আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই?”

আফতাব হোসাইন সিধা মুখভঙ্গিতে জবাব দিলেন,
” ওয়ালাইকুমুস সালাম।”

” আছেন তো ভালো? নাকি শরীর অসুস্থ? ”

” আপনার সামনে সহিসালামত বসে আছি আমি। সুতরাং অসুস্থ হওয়ার কথা না।”

খালেদ মোল্লা খানিকটা সশব্দে হাসলেন। বললেন,
” তা অবশ্য ঠিক বলেছেন আফতাব সাহেব। আমি অবশ্য ভেবেছিলাম, বয়স হয়েছে আপনার। অসুস্থ থাকেন বেশি। তাই পার্টির কাজ একটু কম করেন। কিন্তু আপনি তো এখনও হাট্টাগোট্টা মানুষ। একেবারে ফিট।”

আফতাব হোসাইন বিরক্ত হলেন। তবে বৃত্ত ও বাদল ক্রোধান্বিত হলো। বাদল বেশ কষ্টেসৃষ্টে নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে রাখলো।
আফতাব হোসাইন জিজ্ঞেস করলেন,
” এসব বলার জন্য এতদূর এসেছেন? ”

” কি যে বলেন আফতাব সাহেব! গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে এসেছি আপনার সাথে। কিন্তু আপনিই বা কেমন বলুন। আমাকে এখন অব্দিও বসতে বললেন না। চা নাস্তারও ব্যবস্থা করলেন না। ”

আফতাব হোসাইন খালেদ মোল্লাকে বসতে বললেন। তবে এর পূর্বেই খালেদ মোল্লা চেয়ার এগিয়ে নিজেই বসে পড়লেন। আফসোসের সুরে বললেন,
” আপনারা মেহমানদারীতে একেবারেই কাঁচা। কিভাবে যে শহর সামলাচ্ছেন ভাববার বিষয়।”

খালেদ মোল্লার এহেন কথায় বাদলের মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে এলো। সে শক্ত কণ্ঠে খালেদ মোল্লাকে জবাব দিতে চাইলো। তবে এর পূর্বেই বৃত্ত তীক্ষ্ণ কণ্ঠে কড়া জবাব দিলো,
” শহর সামলানোর যোগ্যতা আছে বলেই প্রায় দশ বছর ধরে এ শহরের দায়িত্ব আমাদের উপর। কিন্তু কিছু মানুষের তো এ যোগ্যতাটুকুও নেই। একেবারেই গর্তে পড়ে আছে তারা।”
বলেই সে ‘চ’সূচক আওয়াজ করে আফসোস করলো।
বৃত্ত’র হেন কথায় নড়েচড়ে বসলেন খালেদ মোল্লা। ওষ্ঠ হতে কপট সে হাসিও উবে গেলো। বাদল এতে ভীষণ খুশি হলো। ফাটা বেলুনের ন্যায় খালেদ মোল্লার এ চুপসে যাওয়া চেহারা দেখলে তার হৃদয়খানা একেবারে ঠাণ্ডা হয়ে যায়।

আফতাব হোসাইন জহিরকে চা নাস্তার ব্যবস্থা করতে বললেন। অতঃপর টেবিলের উপর দু হাত মুঠো বন্দী করে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
” কি জরুরি কথা বলতে এসেছেন আপনি? বলুন।”

খালেদ মোল্লা চেয়ারটা খানিক এগিয়ে সটান হয়ে বসলেন। সরাসরি তীর্যকপূর্ণ স্বরে বললেন,
” শুনলাম আপনি নাকি এই এক শহরের দায়িত্বে খুশি না? পুরো জেলার দায়িত্ব নিতে চান!”

খালেদ মোল্লার এহেন কথায় আশ্চর্যান্বিত হলেন আফতাব হোসাইনসহ বৃত্ত ও বাদল। আফতাব হোসাইন এই নির্বাচনে এমপি’র মনোনয়নপত্র নিবেন, এ তথ্য পার্টির কাছের বিশ্বস্ত মানুষ ব্যতিত কেউই জানে না। তাহলে খালেদ মোল্লার কান অব্দি এ গোপন তথ্য পৌঁছালো কি করে! ভেবে পেলো না তিনজনের একজনও। তবে খালেদ মোল্লা এই তিনজনের বিস্ময়ে পরিপূর্ণ চাহনি দেখেই চট করে বুঝে গেলেন নিজের অবস্থানটুকু। আড়ালে খুশি হলেন তিনি। তৃপ্তি সহিত বললেন,
” এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। আপনি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। আপনার সম্পর্কে এই সামান্য তথ্য জোগাড় করা কোনো কঠিন কাজ নয়।
তো বলুন, এই বুড়ো বয়সে এমপি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন যে?”

আফতাব হোসাইন মুহূর্তেই শক্ত গলায় বললেন,
” প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রতিদ্বন্দ্বীর মতো থাকুন। মিত্র হওয়ার চেষ্টা করবেন না। আর একটা কথা মনে রাখবেন খালেদ সাহেব, ক্ষমতা যার, রাজত্বও তার। সুতরাং এ রাজত্বে আমি যা সিদ্ধান্ত নিবো তাই-ই হবে। এখন আমি মেয়র থাকবো নাকি এমপি হবো, এ সিদ্ধান্তটাও আমার হবে। আপনার এ বিষয়ে প্রশ্ন করার কোনো অধিকার নেই। ”

খালেদ মোল্লা এবার সশব্দে হাসলেন। আড়মোড়া ভেঙে বললেন,
” সে বুঝলাম। আমার জানার অধিকার নেই। কিন্তু আপনার জানার স্বার্থে এটা বলতে এসেছিলাম যে এ নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আমি থাকছি আফতাব সাহেব। কি? বুঝলেন আমার কথা? হ্যাঁ, এবার আমিও এমপি’র মনোনয়নপত্র নিবো। ”
বলেই কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে পুনরায় বললেন,
” আপনার সাথে মুখোমুখি লড়াই করে যে মজা সে মজা আর কারোর সাথে লড়াই করে পাই না আমি। এজন্য আপনার কাজটা একটু কঠিন করতে আসলাম আমি।”
বলেই তিনি নাটকীয় ভঙ্গিতে হাই ছাড়তে ছাড়তে বললেন,
” অভিনন্দন আফতাব সাহেব। এ বছরও আমরা মুখোমুখি দাঁড়াচ্ছি। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর মুকুট কার মাথায় উঠে। আর হ্যাঁ, আরেকটা কথা। কখনো শত্রুপক্ষকে দূর্বল ভাববেন না আপনি। এ কথাটি অবশ্য বৃত্ত ও বাদল সাহেবের উদ্দেশ্যে বলা। সে যাই হোক আমি আসি তাহলে। সামনে নির্বাচন। অনেক কাজ আছে।”
বলেই তিনি বেরিয়ে গেলেন। খালেদ মোল্লা বের হওয়া মাত্রই এতক্ষণ ধরে জমে রাখা ক্রোধ উগরে ফেললো বাদল। হাতের মুঠো শক্ত করে টেবিলের উপর রেখে ক্রোধে কাঁপতে কাঁপতে বললো,
” যে নে ‘ম ‘ক ‘হা ‘রা’ ম এ তথ্য ফাঁস করেছে, সে যদি একবার আমার হাতে পড়ে তাহলে ওর জিহ্বা কে’ টে হাতে না দেওয়া পর্যন্ত আমি শান্তিতে থাকতে পারবো না৷ ”

বাদলের এ ক্রোধান্বিত রূপ দেখে আফতাব হোসাইন গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বৃত্তকে বললেন,
” বাদলকে শান্ত করাও বৃত্ত। ওর এ রাগই একদিন আমাদের নিয়ে ডুববে। সব জায়গায় এত রাগ দেখাতে নেই। তবে ভাগ্য ভালো আজ খালেদের সামনে কিছু বলেনি ও।”

বৃত্ত’ও তার বাবার ন্যায় শান্ত এবং বিচক্ষণ কণ্ঠে বললেন,
” আমাদের মাঝে যে একজন বিশ্বাসঘাতক আছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই ব্যক্তিটা কে তা খুঁজে বের করতে হবে।”

————–

আহসান সাহেব স্ট্রোক করেছেন প্রায় দেড় সপ্তাহ আগে। সুফিয়া বেগম আর আগের মতো কান্না করেন না। চেষ্টা করেন মনকে শক্ত করে স্বামীর সেবা করতে। আহসান সাহেবও নিজের ভাগ্য মেনে নিয়েছেন৷ জুবায়ের ও তামিম নিজের সর্বাত্মক দিয়ে তাঁর সেবা করছে।

.

আহসান সাহেবের স্ট্রোকের দু সপ্তাহ বাদে এক কলিগের বিয়েতে নিমন্ত্রণ পেলো জুবায়ের। কিন্তু বাবার এমন অবস্থায় সে বিয়ের মতো অনুষ্ঠানে যেতে রাজি হয়নি। কিন্তু সুফিয়া বেগমের জোরাজুরিতে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে বিয়েতে গেলো সে।

বিয়েতে গিয়ে নিরস হয়ে বসে ছিলো জুবায়ের। খাওয়াদাওয়া শেষে মাত্রই বোরহানির গ্লাস নিয়ে অন্য চেয়ারে বসতে যাবে সে, এমন মুহূর্তে অকস্মাৎ পিছন হতে কারোর ধাক্কায় সমস্ত বোরহানিটুকু সামনের একটি মেয়ের ড্রেসে গিয়ে পড়লো। আঁতকে উঠলো জুবায়ের। তৎক্ষনাৎ অপরাধী সুরে ব্যস্ত হয়ে সামনের মেয়েটিকে বলতে লাগলো,
” সরি, সরি মিস। আই এম এক্সট্রেমলি সরি। আমি ইচ্ছা করে এমনটা করিনি। পেছন থেকে একজন ধাক্কা দিয়েছিলো। এক্সট্রিমলি সরি। ”

জুবায়েরের কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই মেয়েটি ঘাড় ফিরে তাকালো। তার নতুন কেনা শাড়িতে এমনভাবে দাগ লেগে যাবে তা অকল্পনীয় ছিলো তার জন্য। এখনও মেয়েটির চেহারা হতে আশ্চর্যান্বিত ভাব কাটেনি। তার বিস্ময়ে বিমূঢ় দৃষ্টিখানা জুবায়েরকে দেখলো। তৎক্ষনাৎ মেয়েটি বলে উঠলো,
” এটা কি করলেন আপনি! ”

জুবায়ের কিছু বলতে যাবে এর পূর্বেই মেয়েটিকে পিছন হতে একজন ডাক দিলো,
” বর্ষা, দ্রুত আয়, দুলাভাইয়ের জুতা নিয়ে নিয়েছি আমরা। এখন তাড়াতাড়ি লুকাতে হবে। জলদি আয়, ওখানে কি করছিস! ”

পিছে বান্ধবী তন্নির কণ্ঠ শুনে জুবায়েরকে কিছু বলতে গিয়েও বললো না বর্ষা। বোরহানিমাখা শাড়ি নিয়েই সে জুবায়েরকে পিছে ফেলে চলে আসলো। এদিকে জুবায়ের বর্ষাকে আরোও বার কয়েক ‘সরি’ বলতে পারলে স্বস্তি পেতো। একটা মেয়ের শাড়ি নষ্ট করে ভীষণ আত্মগ্লানিতে ভুগছে সে।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত জুবায়ের অপেক্ষা করলো যেনো একবার বর্ষার মুখোমুখি হতে পারে সে, শুধুমাত্র ‘সরি’ বলার জন্য। অবশ্য বরকনের বিদায় হওয়ার পর তার অপেক্ষার প্রহর ফুরালো। বর্ষাকে দ্বিতীয়বারের মতো দেখতে পেলো সে। বর্ষাকে দেখা মাত্রই জুবায়ের এগিয়ে এসে তীব্র অনুশোচনাপূর্ণ কণ্ঠে বললো,
” সরি মিস বর্ষা। আই এম এক্সট্রেমলি সরি। আমি ইচ্ছা করে আপনার শাড়ি নষ্ট করিনি। পিছন থেকে একজন ধাক্কা দেওয়ায় পড়ে গিয়েছিলো। ”

জুবায়েরের এই অস্থিরতা দেখে বর্ষা হেসে উঠলো। ভদ্রতাসূচক কণ্ঠে নম্র সুরে বললো,
” ইটস ওকে। সমস্যা নেই। দাগ বসেনি আমার শাড়িতে। এতোটা সরি বলার কিছু নেই। বুঝেছি আপনি ইচ্ছা করে করেননি।

বর্ষার কথায় হাফ ছেড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো জুবায়ের। বললো,
” থ্যাংকস আ লট। আপনি কিছু মনে করেননি এতেই স্বস্তি পেয়েছি।”

” মনে করার কিছু নেই এতে। এটা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো। মিস্টার?”

” জুবায়ের। আমার নাম জুবায়ের।”

” আচ্ছা, মিস্টার জুবায়ের। এতোটা সরি ফিল করার মতো কাজ করেননি আপনি। সো এবার নিশ্চিন্ত মনে বাড়ি ফিরতে পারেন। ”
বলেই সে মুচকি হেসে চলে গেলো। পাছে জুবায়েরকে প্রত্যুত্তর করার সুযোগটুকু দিলো না।

—————-

আজকের দিনটা বিন্দুর জন্য এক বিষাদে মাখা দিন। তার কাছে আজকের দিনের স্মৃতিটা কালো কালিতে জর্জরিত এক স্মৃতি। চাইলেও সে ভুলতে পারে না এ দিনের সেই মুহূর্তটুকু।

দুপুর একটার দিকে বিন্দুকে কল করলেন সুফিয়া বেগম। প্রথম দুবারে কল রিসিভ করলো না বিন্দু। তৃতীয়তম বারে কল রিসিভ করেই সে বিষণ্ণ সুরে বললো,
” কিছু বলবে খালা?”

সুফিয়া বেগম স্থির কণ্ঠে অনুনয়ের সুরে বললেন,
” বাড়িতে আসবি না আজকে?”

বিন্দু সোজা কথায় জবাব দিলো,
” না খালা। ”

” কেনো মা? আজকের দিনটায় না এসে হোস্টেলে থাকবি তাই বলে!”

” হ্যাঁ। কারণ আজকের দিনটা আমার পছন্দ না খালা। তুমি জানো, এই দিনের অপেক্ষায় আমি থাকি না। আমি চাই এ দিনটাই যেনো আমার জীবনে না আসুক।”

” যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে মা। মেনে নিতে হবে তোকে।”

” কিভাবে মানবো খালা? কিভাবে মানবো যে আমার বাবার মৃত্যুবার্ষিকী আজ! যা কখনো কল্পনাও করিনি আমি!”
®সারা মেহেক

#চলবে