গল্প : সে আমার অর্ধাঙ্গিনী
পর্ব: দ্বিতীয়
লেখক রিহান অরণ্য
৫ বছর আগে বিয়ে করা বউের কথা এতোদিন মনের মধ্যে পোষান করলে ও, কিছু দিন যাবত সেটা অতিরিক্ত মায়ায় কাজ করতে শুরু করলো,, এতো দিন কাউকে কিছু বলি নাই,
নিজের সন্মান তা ছাড়া ওরে তো কোথাও খুঁজে পাবোনা সেই জন্য কাউকে কিছু বলি নাই,, এখন কথা গুলো মনের মধ্যে চাপা দিয়ে ও রাখতে পারছি না,, তাই আমার একজন আলেম বন্ধু কাছে কথা গুলো শেয়ার করলাম, সে আমার কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলো, সে জানতে চাইলো সাক্ষী কে কে ছিলো আমি সবার নাম বললাম, তখন সে বললো এটা কোন পুতল খেলা না যে কালেমা পরে কবুল বলে বিয়ে করে সেটা কে অস্বীকার করবে, তুই আগে যেখানে ছিলে ওই জায়গায় একবার যা, ( মানে গাউছিয়া ) সেই বাসার ঠিকানায় কোন ডিভোর্স লেটার আসলো কি না খুঁজ নে,,
আমি খুঁজ নিবার জন্য গেলাম ওখানে অনেক জায়গা দোকান সব কিছু পরিবর্তন হয়েছে ঠিক মতো চিনতে পারছিলাম না অনেক কষ্টে বাড়িওয়ালা কে খুজে বার করলাম,,
ওনি আমাকে চিনতে পারছে না তখন তো ছোট ছিলাম এখন বড় হয়ে গেছি মুখে চাপ দাঁড়ি , ওনি অনেক্ক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে বললো তুমি কি সেই সানি,আমি বললাম হা,, এতো দিন পর কি মনে করে আসলে বাবা, আমি ওনাকে সব টা বললাম ওনি বললো সেই বিয়ে নিয়ে এখন ও পরে আছো,আমি সাথে সাথে উত্তর দিলাম ১ পা কবরে চলে গেছে আরেকটা বাকি,কি জবাবদিহি করবেন আল্লাহ কাছে, আপনি যে আমার বিয়ের সাক্ষী ছিলেন, এসব কি ভুলে গেছেন,, এসব শুনে ওনি মাথা চুপ করে আছে,, একটু পর আমার হাত দরে বললো তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো তোমার মাকে ও বলো ক্ষমা করে দিতে আসলে ওই দিন আমি ও চাপে পরে তোমাদের কে বিয়ে দিছি,, আমি বললাম ওই সব বাদ দেন এটা বলেন ওনারা কি কেউ এই ঠিকানায় ডিভোর্স লেটার দিছে কি না,, বাড়িওয়ালা বললো না বাবা কেউ দেয় নি এমন কি ওদের কোন ছায়া ও আমি দেখিনি এতোদিন,
তার পর আবার আমি বললাম আমাকে নিয়ে সেই কাজি অফিসে নিয়ে চলেন,, কাগজ উঠাবো,, বাড়িওয়ালা বললো যে কাজি তোমাদের বিয়ে দিছে সে মা* রা গেছে,, আমি বললাম তার পর ও আমাকে নিয়ে চলেন,,,
আমাকে নিয়ে গেলো সেই জায়গায় আমার সিরিয়াল নাম্বার চেক করে দেখে কাগজ অনলাইন করা,সহজেই নিতে পারছি আর সাথে সাথে কালার প্রিন্ট করে নিছি,,
বাড়িওয়ালার থেকে লুবনার বাবার ঠিকানা নিছি, আর কাবিনের কাগজে ও ঠিকানা ছিলো,,
বাড়িওয়ালা কে ক্ষমা করে চলে আসলাম, বাসায় এসে আমার বন্ধুর সাথে আবার বিষয় টা নিয়ে কথা বললাম সে বললো এখন আর কি করবি তর কর্তব্য তুই পালন কর ওর বাড়িতে যা, কিন্তুু হবিগঞ্জ এতো দূর কমনে কি করবো বুঝতে পারছি না,,
এই দিকে মার কাছে মিথ্যা আর কতো বলবো,, লেখাপড়া তো ১২ টা বাজিয়ে দিছি,, বাবার যে সম্পত্তি পাইছি এই গুলোও দেখার মানুষ নাই,, মা ও চায় না আমি লেখাপড়া করে বাহিরে চাকরি করি, ছোট বোন টা কে ডক্টর বানানো চিন্তা ভাবনা আছে এখন,,
মার কাছে মিথ্যা বলে আবার ও ঘুরতে যাবার কথা বলে অনুমতি নিলাম,, ৫ দিন কক্সবাজার ঘুরতে যবো মা রাজি হয়নি তার পর ও রাজি করাইছি,, সাথে আরেক টা বন্ধু কে ও নিলাম, কিন্তুু কেন যাবো কি করবো সেটা আমার বন্ধু কে বলি নাই,,
বাসা থেকে বের হলাম সকাল বেলা যাবো হবিগঞ্জের
শায়েস্তাগঞ্জ থানার,.. ( নাম ঠিকানা গোপন থাক ) উদ্দেশ্যে,
আমরা প্রথমে যাবে সিলেট তার পর হবিগঞ্জ এখন সরাসরি সেই ঠিকানায় চলে গেলে সমস্যায় পরতে পারি তাই
সব দিক বিবেচনা করে কি ভাবে যাবো সব কিছু ঠিক করতে হবে,, আগে জানতে হবে লুবনা অন্য কোথাও বিয়ে হয়েছে কি না, সে কই থাকে কি করে,কিন্তু একটা ফেমিলি বিস্তারিত খবর জানতে হলে তো ওই এলাকার কাউকে লাগবে,, আর বিষয় টা এখন জানাজানি হলে যদি কোন সমস্যা হয় সে জন্য সিলেট বসে চিন্তা করতে লাগলাম, অচেনা একটা গ্রামে ডুকে কারো ব্যাপার কিছু জিজ্ঞেস করাটা বোকামি হবে,
খুজ নিতে লাগলাম ওদের বাড়ি আসে পাশে কোন বাসা বাড়া চলে কি না,, সিলেট থেকে শায়েস্তাগঞ্জ উদ্দেশ্য রওনা দিলাম,
ঠিকানা মতে এসে, স্কয়ার গেট আসে পাশে রুম বাড়া খুজতে লাগলাম,, কোনা বাসা পাইনা তাই সময় অপচয় না করে লুবনা দের বাড়ির কাছে গিয়ে একটা মুরব্বি কে জিজ্ঞেস করলাম এই দিকে কোন জায়গায় নাকি রুম ভাড়া পাওয়া যায়,
মুরব্বি বললো তোমরা কই থেকে এসেছো,আমি বললাম ঢাকা থেকে, মুরব্বি বললো এই দিকে তো বাবা বাড়াটে ঘরবাড়ি নাই, তখন আমি বললাম একজন বললো সেলিম হাওলাদার ( লুবনার বাবা ) ওদের বাড়িতে নাকি, তখন মুরুব্বি বললো হেলিম্মার বাড়ি ভাড়া দিবে না ওরা কেউ বাড়িতে থাকে না, বড় মেয়ে ডাক্তারি করে চিটাগং ওই খানে থাকে,,
আমি বললাম মুরুব্বি তাইলে হয়তো ভুল ঠিকানা দিছে, আমরা তাইলে যাই অন্য জায়গায় খুঁজে দেখি,,
এই বলে চলে আসলাম সোজা সিলেটে,
এখন তো মাথা ঘুরছে,লুবনা ডাক্তার হলে তো আরো ঝামেলা আমাকে কোন দিন ও মেনে নিবে না আর ওর বিয়ে হইছে কি না সেইটা ও তো জানি না, সব কিছু মিলিয়ে মাথা ঘুরছে সিদ্ধান্ত নিলাম বাড়ি চলে যাবো ওর মতো ওয় থাকোক,,
সকালে চলে আসবো সব কিছু ঠিকঠাক করলাম,,
রাতে যখন ঘুমাতে গেলাম তখন ভাবতে লাগলাম আমি চলে গেলে হয়তো আমাকে সারাজীবন অপরাধি হিসেবে থাকতে হবে তার থেকে এতদূর পর্যন্ত যেহেতু আসলাম ওর থেকে ডিভোর্স নিয়ে চলে যাবো,,
রাতেই আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম, চিটাগং যাবো,
কিন্তুু কোন জায়গায় যাবো সে কোথায় জব করে কোন হাসপাতালে,, এই সব নিয়ে আবার ভাবতে লাগলাম,,
সাথে লেপটপ ছিলো অন করলাম যে হুতো সে ডাক্তার তাইলে তারে খুঁজে পাবো,,
এর আগে ও ফেসবুকে অনেকবার চার্চ দিছি লুবনা নামে হাজারো আইডি সামনে আসলো ওরে আর খুজে পাইলাম না
এইবার চিটাগং মেডিকেল ওয়েবসাইটে ডাঃ লুবনা কে খুজতে লাগলাম ৪ ঘন্টা পর সফল হলাম, লুবনা চিটাগং ল্যাবএইড স্পেশিয়ালাইজড হোসপিটাল জব করে,
ঠিকানা যেহেতু পেয়ে গেছি তাইলে এক দিন সিলেট ঘুরে পরের দিন যাবার চিন্তা করলাম,, কিছু টাকা ও আনতে হবে কারন ওই খানে গেলে টাকার দরকার,,
এক দিন রিলাক্স মুডে থেকে বাড়ি থেকে টাকা এনে এখন যাবো চিটাগং, এম.এম আলী রোড গোল পাহাড় মোড়, মেহেদীবাগ, চট্টগ্রাম,
ওইখানে পৌঁছে আমি হসপিটালে গেলাম মুখে মাক্স পরে লুবনার কাছে যাবো রুগি সেজে ৩৫০ টাকা বিজেট, দুপুর ২ টাই আসবে ডাক্তার,, এখন তো ১০ টা বাজে তাই রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে ১ টায় গেইটে দাঁড়িয়ে থাকলাম লুবনা কে দেখার জন্য তার যেহেতু ২ টায় রুগি দেখার টাইম তার মানে সে একটু পরই আসবে,,
১: টা ৪৫ মিনিট লুবনা আসলো,, নিজের চোক কে বিশ্বাস করাতে পারছি না সে এতো সুন্দর হয়েছে আর আগের চাইতে একটু মোটা ও, চোখে এখন সানগ্লাস ও পরে,, আমি তাকিয়ে আছি তার দিকে, সে একবার ও আসে পাশে তাকায় নি,,
৩০ সেকেন্ডে মধ্যে সে হাসপাতালে ভিতরে ডুকে কোথায় উধাও হয়ে গেছে পাইনা,, এখন গিয়ে তার চেম্বার সামনে বসলাম ৩ নাম্বার আমার সিরিয়াল, ভাবতে লাগলাম সে যদি আমাকে চিনে তাইলে শুধু বলবো এক নজর দেখার জন্য আসলাম আর ডিভোর্স টা দিয়ে দিলে চলে যাবো,,
বুকটা দপদপ করে কাপছে, আমার সিরিয়াল আসলো আমি গেলাম কিন্তু আমার সরিল কাঁপছে, চেয়ারে বসলাম জিজ্ঞেস করলো কি সমস্যা আপনার মাক্স খুলেন,
আমি মাক্স খুললাম সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো এখন বলেন কি সমস্যা আপনার, আমি বললাম আমার সরিল কাপে মাথা ঘুরে,,
লুবনা আমার পেশার মেপে বললো আপনার পেশার একটু লো,রাতে কি ঘুমান না,খাবার কি ঠিক মতো খান না,,
আমি বললাম মেডাম রাত জাগি বেশি, লুবনা বললো সেজন্য এমন এই ঔষধ গুলো খাবেন এখানে ঘুমের ঔষধ ও আছে ৩ দিন খাবেন তার পর ঠিক না হলে আবার আসবেন,,
আমি লুবনার মূখের দিকে তাকিয়ে আছি সে আমাকে চিনতে পারলো না,
বের হয়ে হাসপাতালের বাহিরে গিয়ে ভাবতে লাগলাম এই কয়েকটি বছরে ব্যবধানে সে আমাকে চিনতে পারলো না,
থাক আমি ওর জীবন থেকে মুক্তি নিয়ে চলে যাবো,
আবার গেলাম লুবনার চেম্বারের কাছে একজন কে জিজ্ঞেস করলাম মেডাম কয়টা পর্যন্ত রুগি দেখবে সে বললো ৬ টা পরযন্ত, আমি ওর চেম্বার সামনে চেয়ারে বসে আছি আর ভাবতে লাগলাম কেমনে কি করবো,
লুবনার চেম্বারে যে ওয়ার্ড বয় ওর বাসা ভৈরব , তার সাথে একটু ভাব জমিয়ে সব জানার চেষ্টা করছি, তারে জিজ্ঞেস করলাম মেডাম বাসা কই সে বললো কাছেই বাসা,,
আমি বললাম তোমার মেডাম তো অনেক সুন্দর, ওনার জামাই কি করে,সে বললো মেডাম জামাই লন্ডনে সে ও ডাক্তার,, কিন্তুু এখন ও বিয়ে হয়নি , হবে হয়তো এই বছরের লাস্টে আন্টি পরিয়ে রাখছে,
আমি ওরে বললাম মাডাম জামাই টা সেই কপাল ভাই এমন একটা বউ পাবে, ওয়ার্ড বয় বললো রাজ কপাল ভাই ওদের,
এসব বলতে বলতে সে কাজে চলে গেলো,
আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম তার বাসা কোথায় দেখার জন্য,
অনেক অপেক্ষা করার পর লুবনা ৬:৩৫ হাসপাতাল থেকে বের হয়ে হেঁটেই চলতে লাগলো ৩ মিনিট হাটার পর একটা বাসায় ডুকলো, ৪ তালা,
এখন সে কয় তালায় থাকে সেটা কেমনে বলবো, থাক কয়তালা থাকে সেটা খুজ না নিয়ে যে কাজের জন্য আসলাম সেই কাজ করে চলে যাবো ওর জন্য মায়া লাগলে ও কাজ হবেনা আমার মতো ছেলের দিকে ফিরেও থাকাবে না,,
এখন কেমনে ওর সামনে বিষয় টা নিয়ে কথা তুলবো সেটা খুঁজে পাচ্ছি না, ওর বাবা কে খুজতে হবে তাইলে ওনি ডিভোর্স ব্যবস্থা করে দিবে,
বাসার সামনে রাতে দিনে দাড়িয়ে থাকি ওর বাবা কে আসতে যেতে দেখি না, লুবনার বোন টা ও বড় হয়ে গেছে কিন্তুু ওরে ও চিনি না,,
এই ভাবে ৩ দিন কেটে গেলো, আমি এইবার সত্যি সত্যি কান্ত হয়ে পরেছি,
___________________________________
গল্প টা যদি আপনাদের কাছে ভালো লাগে তাইলে দয়া করে কমেন্ট করে জানাবে,