সে আমার অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-০৩

0
41

গল্প : সে আমার অর্ধাঙ্গিনী
পর্ব: – ৩
লেখক রিহান অরণ্য

বাসার সামনে রাতে দিনে দাড়িয়ে থাকি ওর বাবা কে আসতে যেতে দেখি না, এই ভাবে ৩ দিন কেটে গেলো, আমি এইবার সত্যি সত্যি কান্ত হয়ে পরেছি, বাড়ি থেকে আম্মু ফোন দিচ্ছে বাড়ি যাবার জন্য, কোন পথে গলে এই সমস্যা সমাধান পাবো
সেই চিন্তা ভাবনায় নিজের যত্ন নিতে ও ভুলে গেছি,,

আমাকে এইভাবে হার মানলে হবে না, আমি যে ভাবেই হোক এটা থেকে মুক্তি নিয়ে তার পর যাবো,,

আজ শুক্রবার জুম্মার দিন তাই ১২ টার দিকে গিয়ে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, লুবনার বাবা হয়তো নামাজে যাবে সেই আসায়,, তা ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না,,

অনেক অপেক্ষা পর চোখের সামনে ওনাকে দেখতে পাইলাম। ওনি জায়নামাজ হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছে, আমি ও ওনার পিছু নিলাম, বাসার পাশেই মসজিদ, আমি ও ওনার পিছনের কাতারে নামাজ পরে ওনাকে ফলো করতে লাগলাম,
মসজিদ থেকে বের হবার সাথে সাথে ওনাকে সালাম দিলাম
ওনি এক নজর আমার দিকে তাকিয়ে সালামের জবাব দিয়ে অন্য জনের সাথে কথা বলতে বলতে বাসায় দিকে চলে যাচ্ছে, আমার সাহস হচ্ছে না ওনাকে পিছোন দিয়ে ডাক দিবার,ওনি হয়তো আমাকে চিনতে পারেনি,, আরেক জনের সাথে কথা বলতে বলতে ওনি বাসায় ভিতরে ডুকে গেলেন,

এতো অপেক্ষার পর মানুষ টা কে পেলাম, কথা বলতে পারলাম না, আবার অপেক্ষা করতে লাগলাম কোন একটা উপায় তো হবে,

বাসার নিচে দোকানে বসে রইলাম, দোকানদার বললো আপনি আজকে কয়েক দিন ধরে দেখি এখানে বসে থাকেন, এই জায়গায় কি নতুন নাকি, নতুন ভাড়াটিয়া নাকি এই এলাকায়, আমি বললাম হা ৫ দিন হলো আসলাম, বাসায় কোন কাজ নাই তাই বসে থাকি, এখানে আমার এলাকার মানুষ থাকে তাই কাউকে পাই কি না সেই অপেক্ষা করি বসে বসে, কি আর করবো কাজ কাম না থাকলে যা হয়, দোকানদার টা অনেক ভালো ব্যবহার দেখে বুঝতে পারলাম মুখে দাড়ি আছে,, একটু পর আমি মুরুব্বি কে জিগ্যেস করলাম আঙ্কেল এইখানে সেলিম হাওলাদার নামে একটা লোক থাকে ওনার নাম্বার আছে আপনার কাছে,, ওনি বললো তোমার বাড়ি কই, আমি বললাম শায়েস্তাগঞ্জ, মুরুব্বি বললো ওহ তুমি ওর এলাকায় লোক, আমি বললাম হা আঙ্কেল,
ওনি বললো সেলিম আমার বোন জামাই, ওয় এখানে থাকেনা আজকে মনে হয় বাসায় এসেছে,
এখন ফোন দিলে ধরবে কি না কে জানে, এই নাও নাম্বার ফোন দিয়ে দেখো ধরে কি না,,
আমি নাম্বার টা তুলে সেব করে রেখে, কল না ঢুকিয়ে ফোন কানে ধরে রেখে বললাম আঙ্কেল ফোন ধরে না মনে হয় বিজি,,

নাম্বার তো পেয়ে গেলাম এখন হোটেলে গিয়ে ফোন দিবো,
সাথে সাথে হোটেলে চলে আসলাম,, এখন নাম্বারে দিবো,

নাম্বার কল দিলাম ফোন রিসিভ করে না, অনেক বার দিবার পর ফোন রিসিভ করলো, সালাম দিলাম, লুবনার আব্বু আমার পরিচয় জানতে চাইলো, আমি বললাম পরিচয় দিলে আমাকে চিনবেন তবে হয়তো তখন ফোন কেটে দিবেন,, তাই ফোন কাটার আগে বলে দিলাম আমি যা বলবো সব টা না শুনলে আপনার বাসায় চলে আসবো,, লুবলার বাবা আমাকে রাগ দেখিয়ে কথা বলা শুরু করলো, কে রে তুই আমাকে হুমকি দেস,,
আমি উত্তর দিলাম আমি আপনার বড় মেয়ের জামাই, এটা বলার পর নরম হয়ে বললো, আমার মেয়ের জামাই মানে কি, আমার মেয়ের বিয়ে হয়নি, তবে হবে, সব ঠিকঠাক করা ২ মাস পরে বিয়ে, ফাজলামি জায়গা পাছনাই,তাই আমাকে ফোন দিয়ে ফাজলামো শুরু করছোত,

আমি বললাম একটু রিলাক্স আপনার মেয়ের বিয়ে হয়নি মানে কি, অতিত ভুলে গেছেন, ২০১৮ সালে কথা মনে করেন
আপনি নিজে দাড়িয়ে আমার সাথে লুবনার বিয়ে দিছেন,
এইবার ওনি চিনতে পারলো, আমাকে জিজ্ঞেস করলো তোমার নাম কি আমি বললাম, সানি,
তুমি এতোদিন পর কই থেকে আসলে আর আমার কাছেই বা কেন ফোন দিলে, আমি বললাম একটু আগেও না বললাম আমি আপনার মেয়ের জামাই, তাইলে আপনাকে না কারে ফোন দিবো,, এটা বলাতে ফোন কেটে দিলো,

আমি সিওর ছিলাম আমাকে আবার ফোন দিবে,,
একটু পর আরেকটা নাম্বার থেকে ফোন দিছে, হেলো সানি আমি লুবনার আম্মু, আমি সালাম দিলাম, সালামের উত্তর নিলো, জিজ্ঞেস করলো এতো বছর পর তুমি কিভাবে আমাদের কে খুঁজে বের করলে,তুমি কই এখন,আমি বললাম আমি আপনাদের আসেপাশে আছি, লুবনার আম্মু জিজ্ঞেস করলো তোমার সাথে আর কে আছে আমি বললাম আমার একটা বন্ধু আছে, তোমার মা কই আমি বললাম মা বাড়িতে,,

তোমার মা কি যানে তুমি যে আমাদের কাছে আসবা, আমি বললাম না, লুবনার আম্মু বললো আসার আগে আর কাউকে বউ দাবি করার আগে তোমার মার সাথে কথা বলার দরকার ছিলো,, আমি বললাম দেখেন আন্টি লুবনা এখনো আমার বউ, এটা কেউ না মানলে ও আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না,

আমার কথা শুনে লুবনার মা লুবনার বাবা কে বলতে লাগলো বলছিলাম না ঝামেলা টা শেষ করতে তখন তো বলেছিলে আরে কিছু হবে না ওরা না আসবে আমাদের কাছে আর না যাবো আমরা তাদের কাছে একটা এক্সিডেন এখন এটা সবাই ভুলে গেছে,,

কি হলো এখন যাও এইবার জমাইর হাতে মেয়েকে তুলে দাও,

আমি ফোনে ওনাদের ঝগড়াঝাটি শুনছিলাম, আন্টি কে বললাম আন্টি আমি আপনার মেয়েকে নিতে আসিনি,
ডিভোর্স টা দিয়ে দেন আমি চলে যাবো,
আন্টি বললো সেইটা তো একটু সময় লাগবে,, তুমি বাসায় চলে যাও আর নাম্বার তো আছেই যোগাযোগ করে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবো,

আমি বলালম না এতো বছর পাইনি, আর অপেক্ষা না আমি লেটার নিয়েই যাবো, এখন যে কয়দিন লাগে,

আর টেনশন করবেন না আমি লুবনার সামনে গিয়ে বউ দাবি করবো না, অলরেডি ২ বার ওর সামনে গেছি কিন্তু সে আমাকে চিনে নাই, এখন আপনারা ঝগড়া না করে কেমনে কি করা যায় সিদ্ধান্ত নেন, আমি আছি আপনারা সব ঠিকঠাক করে আমাকে বলবেন আমি লেটার নিয়ে চলে যাবো,
এই বলে ফোন কেটে দিলাম,

আজকে আর বাহিরে যাবোনা অনেক ক্লান্ত, ভাবছি এইবার একটু ঘুরাঘুরি করবো কালকে বের হবো,

রাত ১০ দিকে আবার লুবনার আম্মু ফোন দিছে, ফোন রিসিভ করলাম,আন্টি বলতেছে সানি লুবনার আব্বু তো সকালে চলে যাবে ২ দিন পর আসবে,তুমি ২ দিন অপেক্ষা করো,আর কালকে আমার সাথে একটু দেখা কইরো,আমি বললাম ঠিক আছে সকাল ১০ দিকে ফোন দিয়েন,

রাতে ঘুমিয়ে গেলাম, সকালে উঠে নাস্তা করে বসে আছি ৯:৩০ দিকে ফোন দিছে, একটা ঠিকানা বললো সেই ঠিকানা আবার আমি চিনি না,,তাই আমি বললাম আপনি হসপিটালের সামনে আসেন, ওনি হাসপাতালে সামনে এসে আমাকে ফোন দিলো আমি ওনার ফোন কেটে দিয়ে সামনে গিয়ে ওনাকে সালাম দিলাম, ওনি সালামের উত্তর নিয়ে বললো তুমি সানি,
তোমাকে তো চেনাই যায়না মানুষ এতো পরিবর্তন কমনে হয়,

মাশাল্লাহ তোমার মুখে দাড়ি গুলো অনেক মানিয়েছে,

চলো কোথাও বসি ২ /৩ ঘন্টা সময় আছে তার পর বাসায় চলে যাবো লুবনা অফিস টাইমের আগেই,

কোথায় যাবো আন্টি আমি তো কিছু চিনি না, আন্টি বললো চলো আমার সাথে, ওনি আমাকে নিয়ে অচেনা একটা জায়গায় নিয়ে গেলেন, একটা রেস্তোরাঁ,, ওখানে বসে জিজ্ঞেস করলো কি খাবো আমি বলালম কিছু খাবো না শুধু একটা কোল্ডিং, এখন আন্টির সমানে আমার কেমন কেমন জানি লজ্জা ও লাগছে,,

ওনি বললো তোমার মার সাথে কথা বলাও, আমি বললাম এই ব্যাপারে মা কিছুই যানে না,,

আন্টি বললো তার পর ও ওনার সাথে কথা বলা দরকার কারন ওই দিন কি হয়েছে সেটা তুমি ও জানো না আমার মেয়ে ও জানে না, যখন তোমাদের কে রুমে আটকিয়ে রাখছে তখন বাহিরে তোমার মারে, আমাকে লুবনার বাবা কে জিজ্ঞেস করলো কি করবো, মাথার চুল কেটে দিবে এলাকার সবার সামনে না হয় এখন ২ জনের বিয়ে দিয়ে দিতে,

আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম বিয়ে দিবো তার পর ডিভোর্স করিয়ে দিবো তাইলে আমরা অপমানের হাথ থেকে বাচবো, তোমার মা রাজি হয়েছিলো, বলছিলো এই সব শুধু অপমান হাত থেকে বাচার জন্য,

এটা কোন বিয়ে না জোর করে বিয়ে হয় না, আর তুমি সেই বিয়ের দাবি নিয়ে এতো দূর চলে আসলে, তা ও এতো বছর পর, ওইখানে কেন বললে না যে তোমার লুবনা কে লাগবে কেন ২ দিন ঘর থেকে বার হওনি,,
আর আমরা চলে আসার আগে তোমার মাথায় হাত দিয়ে যে বলে আসলাম তখন কেন বললা না যে লুবনা কে তোমার লাগবে ওরে সত্যি সত্যি বউ করে নিবা,

তাইলে আজকে কেন এতো দূর আসলে, আমি তোমার মার কাছে জানতে চাইবো কেন ওনি এমন টা করলো,

আমি বললাম আন্টি শান্ত হোন কান্না করবেন না, আপনার একটু ভুল হচ্ছে, আমি লুবনা কে পাবার জন্য এখানে আসি নাই, আপনি দেখতেই পাচ্ছেন আমার পরিবর্তন,

আপনি তো কবুল বলে লুবনার বাবা কে বিয়ে করছেন, আপনারা সংসার করছেন,
আমাদের বিয়ে কিন্তু সেই একিভাবে হয়েছে কবুল বলে বিয়ে করছি, এখন ও লুবনা আমার বউ, আপনাদের উচিত ছিলো ডিভোর্স করিয়ে দিবার, এখন আমার এমন একটা সময় যে বউ রেখে অন্য জায়গায় বিয়ে করতো পারবো না,আমি এমন কাজ করতে পারবো না আমার জীবনের সাথে আপনার মেয়ে জরিতো সে আমার বড় কিন্তু সে আমার বউ, আমাদের ডিভোর্স না হওয়া পর্যন্ত আপনারা তারে ও অন্য কোথাও বিয়ে দিতে পারেন না,শুনলাম ওরে হাতে আন্টি পরিয়েছে কে জানি আজকে বাসায় গিয়ে আন্টি খুলে ফেলবেন ওর হাথ থেকে,

আন্টি বললো এটা কেমন কথা হাতের আন্টি কেন খুলবে,আমি বললাম আপনারা কি বাংলা বুঝেন না লুবনা আমার বউ এখনো,ওর হাতে আন্টি থাকবে অন্য মানুষের সেটা আমি মানবো না,,

এখন লুবনার আম্মু বলতেছে তুমি কি আমার মেয়ের সংসার নষ্ট করে ওরে নিয়ে সংসার করার জন্য এসোছো নাকি ডিভোর্স নিবার জন্য এসেছো

______________________________________

গল্পটা যদি ভালো লাগে কমেন্ট করবেন, তাইলে পরবর্তী পর্ব লিখবো,