#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
সূচনা পর্ব
নিজের বিয়ে করা বৌকে কেউ অন্যকে দিয়ে আসে? নিজের বৌকে কেউ বন্ধুর বাসায় রেখে আসে!বিয়েটা কি ছেলেখেলা? যে বিয়ে তুমি করবে আর বৌ আরেকজনকে দিয়ে আসবে!
‘ মম বিয়েটা আমি রাফিনের জন্যই করেছি। আর আমি আমার বন্ধুকে দেয়া কথার খেলাফ করবো কেন!
‘বাহহহ বন্ধুকে দেয়া কথা। তোমার বিয়ে করা বৌ সে তোমার দ্বায়িত্ব এটা কোন পুতুল নয় যে তোমার খেলা শেষ বন্ধুকে গিফট করে দিলে।
‘মম তুমি এসবে কেন জড়াচ্ছো?
‘ফারজাদ মেয়েটার জীবন এভাবে নষ্ট করো না৷ তোমার নিজের একটা বোন আছে ভুলে যেওনা।
‘মম যাস্ট লিভ মি এলন৷ প্লিজ এখন আমাকে জ্ঞান দিওনা৷
‘আমার বাসা থেকে এই মূহুর্তে বেরিয়ে যাও। তোমার মত কুলাঙ্গার ছেলে আমার দরকার নেই। আমার চোখের সামনে কখনো আসবে না । আজকের পর থেকে ভাববো আমার কোন ছেলে নেই।
‘মম তুমি আমাকে ওই মেয়েটার জন্য ত্যাগ করছো?
লাইক সিরিয়াসলি!
‘স্যরি মিস্টার ফারজাদ আমি আপনার সাথে কথা বলতে ইন্টারেস্টেট নই৷ সো লিভ। নয়তো দারোয়ান ডেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করবো।
‘ফারজাদ কথা না বলে গাড়ি নিয়ে বের হতে যাবে তখন পেছন থেকে রুবিনা সিকদার বলেন, আমার গাড়ি স্পর্শ করার সাহস কে দিলো আপনাকে?
‘দারোয়ান কোনদিন যেনো এই লোকটা আমার গেট দিয়ে দ্বিতীয় বার প্রবেশ করতে না পারে৷
🌿
মিরহা পাগলামো করছো কেন? আমি তোমাকে ভালোবাসি। ফারজাদ তোমার সাথে এতোদিন ভালোবাসার অভিনয় করেছে। মিরহা এই নাও ডিভোর্স পেপার এক্ষুনি সাইন করো আর সব ভুলে আমার হয়ে যাও। আই লাভ ইউ।
‘মিরহা সোফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে বলে,মিস্টার রাফিন মাহমুদ আপনি কি থাপ্পড়ের কথা ভুলে গেছেন! আসলে আমার মুখের চেয়ে হাত পা বেশি চলে এটাই সমস্যা। সেদিন ক’টা থাপ্পড় দিয়েছিলাম জেনো?
‘মিরহা ডোন্ট ডু ডেয়ার।
‘উপসসস মিরহা ভুঁইয়া তো ভয় পেয়েছে আপনার ফাঁকা আওয়াজে।
‘তুমি কিন্তু লিমিট ক্রস করছো মিরহা এর ফল কিন্তু ভালো হবে না৷
‘এই মিস্টার লুজার আমি মিরহা। ফারজাদ সিকদারের বৌ। আই মিন সিকদার বাড়ির বৌ। আমাকে ফাঁকা বুলি শোনাবেন না। কানের নিচে ঠাটিয়ে দুটো লাগাবো বাপ দাদার নাম পর্যন্ত ভুলে যাবেন।
‘রাফিন মিরহার লেহেঙ্গার ওড়না ধরে টান দিতে চায় মিরহা ডান পা দিয়ে রাফিনকে লাথি মারে। রাফিন দূরে ছিটকে পরে। মিরহা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,এরপর থেকে দেখা হলে ভাবি বলে দশবার সালাম করবেন। নয়তো এমন জায়গায় কিক মারবো জীবনে বংশ বিস্তার করার ক্ষমতা থাকবে না।
‘মিরহা দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়।
‘রাফিন সেখানেই পরে থাকে। রাগে হাতের সামনে থাকা সব জিনিস পত্র ছুড়ে ফেলতে থাকে। আমি লুজার না লুজার না আমি। আমি ভালোবাসি আমার তোমাকে চাই মিরহা যেকোনো মূল্যে তোমাকেই চাই।
‘মিরহা লেহেঙ্গাার নিচের পার্ট খুলে রাফিনের বাসর সামনে রেখে গেলো। জিন্স আর লেহেঙ্গার উপরের পার্ট পরে বাইক স্টার্ট দিলো।
একটু দূর এগিয়ে আমার পিছে এসে বলে,জিসান আর কিছুক্ষণ পর ফারজাদ এখানে আসবে। তোর মনে আছে তো কি কি বলতে হবে?পাশার ডান এমন ভাবে উল্টে দিবি যাতে সেটা ডিঙিয়ে কেউ সামনে না এগোতে পারে। পরে কথা হবে গুড বায়।
🌿 মিরহা বের হওয়ার কিছু সময় পর ফারজাদ আসলো।
এসেই দেখে গেটের সামনে মিরহার লেহেঙ্গা পরে আছে। দ্রুত ভেতরে ঢুকতেই দেখে মিরহার লেহেঙ্গার ওড়না,চুড়ি আর কিছু অলংকার পরে আছে। ফারজাদ বিচলিত হয়ে বলে,কি করেছিস তুই মিরহার সাথে?
‘রাফিনের চোখমুখ তখন রাগে লাল হয়ে আছে, বাজে শব্দ ব্যবহার করে বলে কিছুই করতে পারিনি তবে পারলে এমন অবস্থা করতাম যাতে সমাজে কাউকে মুখ না দেখাতে পারে। ‘সজোড়ে রাফিনের নাক বরাবর ঘুষি দিয়ে বলে,রাফিন মিরহা কে তুই ভালোবাসতি। ও তোকে অপমান করেছে তাই আমি ওর সাথে নাটক করে ওকে তোর কাছে এনে দিয়েছি৷ তোর সাহস কি করে হলো ওর সাথে এরকম বিহেভিয়ার করার?
‘শা’লা সামান্য মেয়ের জন্য তুই আমার গায়ে হাত তুললি! তোকে আমি মেরেই ফেলবো। এরমধ্যেই পুলিশ চলে আসে। রাফিনকে আর ফারজাদ কে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
পথিমধ্যে জিসানের সাথে দেখা হলে জিসান বলে,মিরহা সু’ই’সা’ইড করেছে, আপনার এই লম্পট বন্ধুর জন্য । যদি আমার ফ্রেন্ডের কিছু হয় তাহলে আপনাকে আমি ছাড়বো না।
ফারজাদ মাথা নিচু করে আশেপাশে থাকালো চেষ্টা করছিলো কোন ভাবে পালানো যায় কি না৷ নাহহ সে সুযোগ নেই। চোখ বন্ধ করতেই ভেসে উঠলো মিরহার হাসোজ্জল চেহারা।তুমি সত্যি নিজের বিয়ের আসর ছেড়ে আমার জন্য পালিয়ে এসেছো?
‘বিশ্বাস হচ্ছে না মিস্টার সিকদার?
‘উঁহু কতবার রিজেক্ট করেছো আর আজ পাইলট বরকে রেখে পালিয়ে এসেছো?
‘মিস্টার সিকদার আমি আপনাকে…..
‘হ্যা বলুন হবু মিসেস সিকদার।
‘আমি আপনাকে বলতে চাই বিবি রাজি কাজিও হাজির মিয়া কি এখনো বিবাহে বিলম্ব করিবে?
‘কাজি সাহেব বিয়ে পরান।
‘বিয়ে শেষ হতেই মিরহা ফারজাদকে জড়িয়ে ধরে,বলে তোমার জন্য সব ছেড়ে এসেছি।তোমাকে ভিষণ ভালোবাসি।
দ্রুত চোখটা খুলে ফেলে ফারজাদ। মনে মনে বলে কি করে নিজেকে ক্ষমা করবো? কেনো করলাম আমি কেন!
‘মিরহা নিজের ক্যাম্পে ফিরে এসেছে। ক্যাপ্টেন আজিজুল বাসারের সাথে সাক্ষাৎ করে বলে,স্যার আমি পুনরায় জয়েন করতে চাই যদি আপনি সুযোগ দেন তো।
ক্যাপ্টেন বাসার হাতে থাকা কলমটা কিছুক্ষণ ঘুরিয়ে বলে,মেজর জেনারেল হাকিম সাহেব যদি রাজি হয় তাহলে সম্ভব এটা। তবে তোমাদের টিম পরশুদিন অস্ট্রেলিয়া যাবে তিনমাসের বিশেষ ট্রেনিংয়ে।
‘স্যার প্লিজ যদি আমার জন্য কিছু একটা করতেন৷ কথা দিচ্ছি এরপর আর এমন কিছু হবে না।
‘মিরহা তুমি আমাদের সাবেক সেনাপ্রধান শফিউল্লাহ সাহেবের মেয়ে আর তাছাড়া তোমার এপর্যন্ত জার্নিটা প্রশংসনীয়। তবে তুমি প্রথম বার একটা মাত্র রুলস ব্রেক করেছো তাই এখন একমাত্র আমাদের হাকিম সাহেবের উপর তোমার থাকা না থাকা ডিপেন্ডেবল’।
‘আমি স্যারের সাথে কথা বলে জানাবো তুমি আপাতত তোমার ক্যাবিনে যাও।
‘ইয়েস স্যার৷
ক্যাবিনে ঢুকতেই দেখা হলো পুস্পর সাথে। পুস্প বলে কিরে তুই!তোর না আজ বিয়ে ছিলো?
‘ভেঙে দিয়ে চলে এসেছি।আমার স্বপ্ন এখন একটাই বাবার মত সত একজন দেশপ্রেমিক হওয়া।
‘কাহিনি বুঝলম না, তুই পালিয়ে ছুটি না নিয়েই রুলস ব্রেক করে চলে গেলি আবার হুট করে ফিরে আসলি আসলে কাহিনি টি বলতো?
‘কাহিনি হলো তখন আমার অবেগ কাজ করছিলো বিবেক কাজ করে নাই। এখন আবেগ কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে বিবেকে কাজ করছি।
‘স্যার তোকে সুযোগ দিবে?
‘আমি ট্রেনিং শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কোনদিন কোন রুলস ব্রেক করিনি৷ আমি মনে করি তারা আমাকে একটা সুযোগ দেবে।
মেজর ইশফাক মিরহার ফেরার খবর শুনে মনে মনে আনন্দিত হলেন৷ ইশফাকও বাসার সাহেবের সাথে মিলে হাকিম সাহেবকে বোঝালেন।
‘তোমরা যখন বলছো আমি দিচ্ছি সুযোগ তবে এটাই শেষ এরপর এমন করলে ওকে চিরজীবনের জন্য ব্যান করা হবে।
‘জ্বী স্যার৷ কিছুক্ষণ কথা বলে হাকিম সাহেবের রুম থেকে বের হলেন৷
‘স্যার আমি মিরহাকে সংবাদটা দিয়ে আসি?
‘ওকে ইশফাক যাও।
‘ইশফাক গেটের সামনে এসে দারোয়ানের হাতে খামটা দিলো সাথে আরো একটা কাগজ৷
‘দরোয়ান মিরহার হাতে খাম দিলো সাথে কাগজটাও । মিরহা দ্রুত খাম থেকে কাগজটা বের করে বলে, অবশেষে তোমার কাছ থেকে দূরে চলে যাচ্ছি মিস্টার ফারজাদ সিকদার। আমি অধোরা আমি মাধুরি আবার আমিই অগ্নিশিখা। আমি জ্বলতে জানি জ্বালাতেও জানি।
#চলবে?