#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৩
“মিরহা ফ্লাইটে বসে বোরিং হওয়ার চেয়ে তোর লাভ স্টোরি শোনা বেটার৷ প্লিজ বলনা৷
‘ আমি বুঝি না তুই সব সময় আমার পিছনে আঠার মত লেগে কেন থাকিস পুষ্প!
‘ইয়ে দোস্তি হাম নেহি তোরেঙে। ইয়ার আমি মন থেকে ফ্রেন্ড ভাবি এরজন্য সব সময় কি হয় জানিস তোর আমার রুম একসাথে পরে তোর আমার ডিউটি একসাথে পরে এবার দেখ তোর পাশের সিটটাও আমার ভাগ্যে পরলো৷ কপাল তো ঘসে মেজে তুলে ফেলা যায় না বল? ভাগ্যে আছে যা তা তো হবেই৷
‘একদম চুপ থাক মেরি মা। জ্ঞান না এখন আমার ঘুমের প্রয়োজন।
‘ঘুমাবি? এখন ঘুমালে কিন্তু রোমান্টিক স্বপ্ন দেখবি।
‘তুই আর তোর আজাইরা কথা এই নে ধর হুমায়ুন আহমেদের কোথাও কেউ নেই বইটা পড়৷ আর আমারে ঘুমাতে দে বইন।
‘মিরহা চোখদুটো বন্ধ করে নিলো। যতই স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে ভেতরে ভেতরে ততটাই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কি চেয়েছিলো আর কি হলো! আমার তো একটাই স্বপ্ন ছিলো একজন আদর্শবান স্ত্রী হওয়া। তোমার সুখ দুঃখের সঙ্গী হওয়া৷ তুমি আমার স্বপ্ন, ইচ্ছে সব মেরে ফেললে!মিরহা চোখ বন্ধ করতেই ফারজাদের মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। খানিকক্ষণ চেষ্টা করেও আর পারলো না চোখ বন্ধ রাখতে। চোখ খুলে ফেললো।
‘আচ্ছা এখানে সুপ্রভা নেই কেনো?
‘এটা অপেক্ষা বই না গাধা।
‘তোর ভুল হচ্ছে কথাটা হবে গাধী। তা ঘুম বাদ দিয়ে দিলি কেনো?
জানিস আমি ক্লাস করার অনুমতি পেয়েছিলাম মাসে চারদিন।
একদিন ভার্সিটিতে ঢোকার সময় একটা ছেলে বলে,ইউ আর সো হট বেবি।
‘এরপর ওই ছেলে ঠিক ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো? না মানে তুই কি ওই ছেলের পা ভেঙে দিস নি?
‘ইচ্ছে তো করছিলো সাথে সাথে পুঁতে ফেলতে৷ কিন্তু ভার্সিটিতে দিদিগিরি করবো নাকি! এরপর সবার সাথে পরিচিত হলাম ক্লাস করলাম।
ফেরার সময় সেম জায়গায় ছেলেটিকে দেখলাম। ক্যাবলা ক্যান্তের মত হেসে বলে বেবি আই লাভ ইউ।
‘এরপর নিশ্চিত মারামারি বাঁধিয়া দিয়েছিস?
‘উঁহু কোন উত্তর না দিয়ে চলে এসেছিলাম৷ কিন্তু মেজাজ আমার প্রচুর হাই ছিলো। এরপর আবার বহুদিন পর যেদিন ভার্সিটিতে গেলাম ঢোকার সাথে সাথে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো মাঠের মাঝামাঝি। আমার কোমড়ে হুট করে হাত দিয়ে ধরে টান দেয় তার দিকে ।
‘তারপর!
‘তারপর আর কি জায়গা মত কিক মারলাম। ব্যথায় কাকিয়ে উঠে কোনমতে দাঁড়াতেই পরপর চারটা থাপ্পড় দিলাম। আমাদের আর সাধারণ মানুষের থাপ্পড়ে তো ডিফারেন্স আছে৷ কষ্ট করে ট্রেনিং করে শেখা৷ জায়গা মত ফুল কাজে লাগিয়েছি৷ এরপর থেকে আমার জীবনের একটা সুন্দর আর ভয়ংকর অধ্যায় শুরু হয়।
‘এরপর কি হয় বল না?
‘অন্য একদিন বলবো এবার সত্যি সত্যি ঘুমাবো।
‘জানি ঘুমাবি না তবুও শুভ জেগে জেগে কাক ধরা ঘুম৷
🌿
ফারজাদ কে দেখে কাকলি সিকদার বেশ অবাক হলেন৷
অবাক কন্ঠে বললেন ফারজাদ তুই! তা কি মনে করে ফুপির বাসায় আসা হলো?
‘তোমার ভাবি বাসা থেকে বের করে দিয়েছে এই কারনে।
‘ভাবি দেবে তোকে বের করে?
‘হ্যা দিয়েছে৷
‘তার মানে খুব বড় কোন কেস। কি করেছিস শুনি?
‘বিয়ে করেছি।
‘ বিয়ে!
‘আম্মু এসব নয়ছয় কথা। তোমার ভাইয়ের ছেলে আমাদের বোকা বানাচ্ছে৷
‘ রাহার কথা শুনে বিরক্ত হয়ে কাকলি বেগম বলেন, তুই নিজের রুমে যা বড়দের কথার মধ্যে তোর কিসের কথা?
‘রাহা মনে মনে বিড়বিড় করতে করতে রুমে চলে গেলো।
‘কাকলি বেগম বলেন, এবার বলতো আমাকে সবটা বুঝিয়ে।
‘ফুপি আমার ফ্রেন্ড রাফিনকে তো চেনো৷ ও আমাকে বললো একটা মেয়ে ভার্সিটিতে সবার সামনে ওকে অপমান করেছে৷ ও নাকি মেয়েটাকে ভালোবাসে৷ আর মেয়েটা না পেলে ও মরে যাবে। প্রচুর পরিমান ড্রিংক করা শুরু করে৷স্কুল কলেজ একসাথে কাটালেও ভার্সিটিতে এসে আমরা আলাদা হয়ে যাই৷ আমি রাফিনকে কথা দিলাম যেভাবেই হোক মেয়েটা ওর কাছে এনে দেবো।
‘কেনো কথা দিলে মেয়েটা কি পুতুল তুই চাইলেই কিনে এনে দিয়ে দিবি?
‘আমি প্ল্যান করে মেয়েটা কেমন বয়ফ্রেন্ড চায় সেটা জেনে নিয়ে সেরকম ভাবে নিজেকে রিপ্রেজেন্ট করি৷ এরপর আমাদের মাঝে ছয়মাস প্রেম হয়৷ এরমধ্যে হঠাৎ করে মেয়েটা বলে ওর নাকি পাইলট ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক৷ আমি মেয়েটার ডিটেইলস জানতাম না। কারন আমার তো ওর পরিবার দিয়ে দরকার ছিলো না৷ এরপর ওর বিয়ের দিন আমি মেয়েটাকে পালিয়ে আসতে বলি৷ এ পর্যন্ত তাও ঠিক ছিলো কিন্তু কাজি অফিসে আমরা বিয়েটাও সেরে ফেলি।
‘তুই বলা নেই কওয়া নেই একটা মেয়েকে বিয়ে করে ফেললি! তারপর কি করেছিস।
‘বাকিটাও খুলে বললো।
সব শুনে কাকলি বেগম বলেন, তোর মা ঠিক কাজ করেছে। এতো বড় অন্যায় তুই কিভাবে করলি! এখন মেয়েটা কোথায়? যাহহ মেয়েটা ঘরে তুলে নিজের করা অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত কর৷
‘ফুপি মেয়েটা খুঁজতে কয়েকটা দিন সময় লাগবে৷ আমি ওর মন জয় করবো। তারপর ধুমধাম করে পুরো শহরকে জানিয়ে ওকে আমার বৌ করবো৷
‘আচ্ছা আমি তোকে সুযোগ দিচ্ছি তবে তুই আমার সাথে মিথ্যে বলিস না ফারজাদ৷ একটা মেয়ে তোকে কতটা ভরসা করলে তোর ব্যাপারে পুরোপুরি সব না জেনেও তোর হাত ধরার জন্য সব ত্যাগ করে চলে আসে! আর সেই মেয়েটাকে তুই নিজের বন্ধুর বাসায় রেখে আসলি! নিজের বিয়ে করা বৌ কে পরপুরুষের কাছে কিভাবে পারলি এমন জঘন্য কাজটা করতে?
‘আমি আমার ভুলটা শুধরে নেবো আমি যেভাবেই হোক তোমাদের বৌমাকে ফিরিয়ে আনবোই।
🌿
‘ইজি চেয়ারে বসে চোখের জল মুছতে ব্যস্ত শিরিন বেগম৷ স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র মেয়েটাই তার ভরসা ছিলো৷ এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তার মেয়ে তার মানসম্মান সব ডুবিয়ে বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়েছে। ওড়ান আঁচল তুলে বারবার চোখের জল মুছচ্ছে।
‘আইরিন এসে বলে মামানি এভাবে কাঁদছো কেন?তুমি জানো মিরহা আপাই পালিয়ে ক্যাম্পে চলে গিয়েছে।সে হয়তো তোমার স্বপ্ন পূরণ করতেই ঘর ছেড়েছে৷
‘শিরিন বেগম উঠে দাঁড়ালেন৷ চোখের জল মুছে বলেন, আমি যখন বিয়েটা ঠিক করছি তখন কেনো বললো না?
‘মামুনি বললেও তুমি মানতে না। রিয়াজ ভাইয়াকে তোমার একটু বেশিই পছন্দ হয়েছিলো৷
‘এটা কি সত্যি যে ও কোন ছেলের সাথে পালায় নি?
‘হ্যা মামুনি এই দেখো আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে পিক পাঠিয়েছে। তারা আজ চলে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া বিশেষ ট্রেনিং করতে। আমাকে বলেছে তোমার খেয়াল রাখতে৷
‘শিরিন বেগমের মন থেকে অভিমানের মেঘটা সরে গেলো৷ মনে মনে নিজের মেয়ের সফলতার দোয়া করলেন।
‘এবার চলো কিছু খাবে। সেই কাল থেকে না খাওয়া৷
‘তুই যেয়ে খাবার রেডি কর, আমি আসছি।
🌿 রাত প্রায় শেষের দিকে অযথা বেডে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে ফারজাদ। হঠাৎ জানালার বাহিরে চোখ গেলো পূর্ণ চাঁদের দিকে দৃষ্টি পরতেই থমকে গেলো ফারজাদ৷ একদিন রাতে দুজনে কলে কথা বলছিলো।
‘জানেন আমি আপনাকে রোজ দেখি রাত হলেই আপনি ছেয়ে জান আমার পুরোটা জুড়ে। আমি আপনাকে জড়িয়ে ধরি গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ করি আপনাকে। এরপর আপনার ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া আমাকে মাতল করে তোলে।
‘মিস মিরহা, আপনি সুড়সুড়ি মূলক কথাবার্তা বলবেন না প্লিজ।
‘মানে!
‘আপনি এসব বললে আমার কেমন কেমন যেনো লাগে।
‘আহা তাই মিস্টার সিকদার। তা কেমন লাগে বলেন তো শুনি।
‘এই চুপ করুন আর আকাশের দিকে তাকান আজকের চাঁদটা দেখুন কত সুন্দর সেটা উপভোগ করুন।
‘মিরহা চট করে কয়েটা পিক তুলে ফারজাদকে সেন্ট করলো। নিচে লিখে দিলে বলুন তো আপনি কোন চাঁদ উপভোগ করবেন? আর কোন চাঁদের মোহে আটকে যাবেন৷
‘উফফ মিস মিরহা আমাগে পাগল না করে আপনার বুঝি শান্তি হবে না?নিঃসন্দেহে আপনার মুখশ্রী দেখলে কেউ চাঁদের দিকে তাকাতে চাইবে না৷ আপনি তো আফিম আমি কেনো যে কেউ আমার নেশায় বুদ হতে চাইবে৷
#চলবে