#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৪
ভোরের দিকে চোখ লেগে ছিলো ফারজাদের৷ আটটা বাজতেই উঠে পড়েছে। শাওয়ার নিয়ে ব্লু রংয়ের শার্ট আর জিন্স পরলো৷ কাল রাতেই অনলাইনে অর্ডার করেছে কিছু ড্রেস৷ কাকলি বেগম বিশ হাজারের মত টাকা দিয়েছিলো ফারজাদ কে। রেডি হয়ে নিচে আসতেই সার্ভেন্ট বলল স্যার চা না কফি?
‘ব্ল্যাক কফি কড়া করে৷ আর একটা ডিমের অমলেট সাথে একটা তেল ছাড়া রুটি৷
‘বসুন স্যার আমি নিয়ে আসছি৷
ফারজাদ বসে বসে কিছু ভাবছিলো হঠাৎ পেছন থেকে কেউ চোখ ধরলো।
‘কে? আমার সাথে তো কারো এমন রসের সম্পর্ক নেই যে আমার চোখ ধরবে? চোখের উপর থেকে হাত না সরালে হাত ভেঙে ফেলবো।
‘উফফ জানেমান তুমি এতো আনরোমান্টিক কেনো?
‘কানের নিচে ঠাটিয়ে একটা দেবো নিজের নাম ভুলে যাবি৷ জানিস আমি তোর কত সিনিয়র!
‘স্বামীর বয়স ছয়/সাত বছর বেশি হলে ভালোই হয়৷ আমার তাতে কোন আপত্তি নেই।
‘রাহা মাইর না খেতে চাইলে নিজের রুমে যা৷ এতো সকালে তুই কেনো উঠেছিস?
‘কেনো আবার তোমাকে পটাতে।
‘আমি বিবাহিত তাই পটানোর কিছু নেই৷ আর বিবাহিত না হলেও তোর মত লেন্দি বাচ্চার কোন চান্স থাকতো না৷
‘তুমি কিছুই বোঝো না। বিয়ে করলে বুঝি আমরা জানতাম না?
‘রাহা আমি তোর বড় আপনি করে বলবি এখন চোখের সামনে থেকে সর।
‘লোকে পাগল বলুক,মাতাল বলুক তোমার পিছু ছাড়বো না। আচ্ছা তুমি গল্প উপন্যাস পড়ো না?
‘তাতে তোর কি? পড়ি বা না পড়ি সেটা আমার ব্যাপার।
‘তোমার মেসেঞ্জারে কয়েকটা কাজিন রিলেটেড গল্পের লিংক পাঠিয়ে দেবো। পড়ে আমার প্রেমে হাবুডুবু খাবা৷
‘ফারজাদ মেসেঞ্জারে চ্যাট লিষ্টটা বের করে বলে,নামটা ভালো করে দেখ কি লেখা নিকনেইম?
‘মাই হার্ট!
‘হুম আমার হার্ট আর তোদের ভাবি মিরহা সিকদার। সো ছোট মাথা থেকে এসব ভূত নামিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগ দে।
‘রাহা কয়ে কদম পিছিয়ে বলে,ব্রেকআপ করে নাও। ভবিষ্যতে আমি হবো রেহনুমা সিকদার রাহা।
‘ফারজাদ নাস্তা করে বের হলো। সবার প্রথম ভার্সিটিতে এসে মিরহার ডিটেইলস নিলো৷
সোজা চলে আসলো সায়দাবাদ মানিকনগর। মিরহার বাসায়। কলিং বেলের সুইচ টিপে নিজের চুল ঠিক করছে৷
‘আইরিন এসে দরজা খুলে বলে,কাঠের দরজায় কি আপনি আয়না দেখতে পাচ্ছেন?
‘হোয়াট?
‘কাকে চাই?
‘মিরহা ভুঁইয়া আছে।
‘নাহহ নেই।
‘এটা মিরহাদের বাসা না? ওর বাবার নাম শফিউল্লাহ সাবেক সেনাপ্রধান ছিলেন উনি৷ আর মাতার নাম শিরিন বেগম।
‘হ্যা এটা তারই বাসা৷ তবে সে বাসায় নেই।
‘প্লিজ আপু আমাকে একটু ভেতরে আসতে দিন আঙ্কেল আন্টির সাথে একটু কথা ছিলো আমার৷
‘সুট বুট পরে তো সাহেব সেজে এসেছেন তা পরিচয় কি সেটা বলেন৷
‘আমার নাম ফারজাদ সিকদার। মিরহার ফ্রেন্ড।
‘এসব ভুজুংভাজুং আমাকে বোঝাতে আসবেন না। মিরহার ফ্রেন্ড! আপনি মিরহার ফ্রেন্ড হলে এটাও জানতেন মিরহার বাবা বেঁচে নেই৷ সো রাস্তা মাপুন৷ নয়তো মানুষ জড়ো করে গণধোলাই খাওয়াবো৷
‘প্লিজ আমাকে একবার আন্টির সাথে দেখা করতে দিন। পরিচয় দিলে তো চা নাস্তা এনে ভরিয়ে ফেলবেন৷
‘আইরিন দরজায় দাঁড়িয়ে কার সাথে এতো কথা বলছিস?
কে এসেছে?
‘চিনিনা আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাইছে৷
‘ভেতরে আসতে দে।
‘নেহাৎ আপনার চেহারাটা ইনোসেন্ট টাইপ তাই আসতে দিচ্ছি। কোন উল্টোপাল্টা নিয়তে আসলে মেরে তক্তা বানিয়ে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিবো।
‘ভেতরে তো আসতে দেন শালি সাহেবা এরপর না মারামারি!
‘শিরিন বেগম বলে কে তুমি?তোমাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না? নাম কি? পরিচয় কি?
‘ফারজাদ সোফা ছেড়ে শিরিন বেগমের পায়ের সামনে বসে বলে আম্মা আমি ভুল করেছি আমি মানি৷ ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতেও রাজি। আম্মা আপনি যা শাস্তি দিবেন মাথা পেতে নেবো প্লিজ আম্মা তবুও আপনার মেয়েটাকে আমার কাছে ফেরত দেন।
‘এই ছেলে পা ছাড়া। কি সব বলছো তুমি!আমার মেয়ে ফেরত দেবো,মানে? আমি তোমার কোন জন্মের আম্মা!
‘আপনি আমার বর্তমান, ভবিষ্যতে সব জন্মের আম্মা। আমি আপনার মেয়ের জামাই আমাকে আমার বৌ ভিক্ষা দেন আম্মা।
”এই ছেলে উঠে সোফায় বসো৷ আমার মাথা খারাপ না করে আমাকে বলো তুমি কি বলতে চাইছো?
‘আপনার মেয়ের সাথে গত শুক্রবার আমার বিয়ে হয়েছে। তারপর ওরে আর খুঁজে পাচ্ছি না। আমি মিরহাকে ভালোবাসি। আম্মা আপনি ওর দ্বায়িত্ব আমার হাতে তুলে দিন আমি কথা দিচ্ছি সারাজীবন রানী করে রাখবো।
‘আমার মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে বা তুমি সত্যি কথা বলছো তার প্রমাণ কি?
‘আম্মা আমার নাম ফারজাদ সিকদার। সিকাদার গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির মালিক ফরহাদ সিকদারের একমাত্র ছেলে। আমি আপনার বাসায় এসে আপনার পায়ে ধরে আপনার মেয়েকে ভিক্ষে চাইছি এরপর আর কি প্রমান লাগবে আম্মা!
🌿 বারান্দায় বসে গিটারের সুর তুলে গান গাইছে মিরহা৷
এসে ফ্রেশ হয়ে হালকা কিছু খেয়ে গান গাইছে।
তার পাশেই বসে আছে পুস্প, লিজা বাকি আরো দুজন সবাই মনোযোগ দিয়ে গান শুনছে। সৈনিকদের জীবন সব সময় সংগ্রামী। নিজের জীবনের ভাবনা বাদ দিয়ে তাদের দিনের পর দিন দেশের জন্য লড়াই করতে হয়।সেই সুবাদে তাদের বনে, জঙ্গলে, পাহাড়ে আবার কখনো দেশের বাহিরে ঘুরে বেড়াতে হয়। নিজের মানুষগুলো থেকে তাদের দুরত্ব থাকে শত শত বা হাজার হাজার মাইলের।
মিরহার গানের প্রতিটা শব্দ যেনো সবাই গভীর ভাবে উপলব্ধি করছে।মনে হচ্ছে সবার কত শত স্মৃতি জড়িয়ে আছে গানটার সাথে।
মিরহা গাইছে…..
“স্মৃতির জোনাকি ছাড়া কিছু নেই
বুকের বা পাশে…
আমার দুঃখ বাড়ে যেকোনো ঋতুর
পাল্টে যাওয়া বাতাসে…
আলতো গায়ে মাখি যতনে তুলে রাখি
তোমার লেখা যত চিঠি আসে
জানলা খুলে রাখি আসলে সবই ফাঁকি
তোমার নামে তবু আলো আসে
স্মৃতির জোনাকি ছাড়া কিছু নেই
বুকের বা পাশে…
ব্যর্থ প্রেমের মানুষ কত দূর যাবে আর
চারিদিকে প্রিয় মুখ হয়ে আছে যেন কাঁটাতার
যারে ছুঁয়ে গেলে ভালো লাগে
তারে দেখি না কেন যে বার মাসে
আলতো গায়ে মাখি যতনে তুলে রাখি
তোমার লেখা যত চিঠি আসে
জানলা খুলে রাখি আসলে সবই ফাঁকি
তোমার নামে তবু আলো আসে
স্মৃতির জোনাকি ছাড়া কিছু নেই
বুকের বা পাশে…
আমার দুঃখ বাড়ে যেকোনো ঋতুর
পাল্টে যাওয়া বাতাসে…”
গানের সাথে সাথে মিরহার দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় গড়িয়ে পরছে নোনাজল। গান শেষ হতেই হাতের উল্টো পিঠে চোখের জল মুছে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। পেছনে থাকিয়ে দেখে বাকি সব রুমমেট পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। মিরহা বলে তোরা!
‘রুনা নামের একজন বলে থামলে কেনো ভালোই লাগছিলো। মনে হচ্ছে গানটার প্রতিটি শব্দের সাথে আমরা সবাই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছি অদ্ভুত ভাবে। আরেকটা গাও না৷
‘আজ টায়ার্ড লাগছে একু রেস্ট নিবো। মিরহা উঠে এসে নিজের বেডে শুয়ে পরলো।
‘পুস্প কিছু জিজ্ঞেস করবে ভেবেও করলো না৷
মিরহা বেডে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখে আইরিনের অনেকগুলো মিসডকল৷ সাথে সাথে আইরিনকে কল ব্যাক করে। ভিডিও কল করার সাথে সাথে ওপাশ থেকে রিসিভ।
রিসভ হতেই নিজের মায়ের মুখটা দেখে খানিকটা চমকে গেলো!
‘ভূত দেখার মত চমকে গেলে যে? আরেকটু চমকে দেবো?
‘আম্মু কেমন আছো?
‘তুমি যেমন রেখেছো। একের পর এক চমক তো দিয়েই যাচ্ছো।
‘আম্মু স্যরি আর কখনো তোমার কথার অবাধ্য হবো না।
‘আমার কথা বাদ দাও। দেখো তো এই মানুষটাকে চিনতে পারো কি না৷ বলেই মোবাইলটা ফারজাদের দিকে ধরলো।
#চলবে