সে আমার বৌপ্রিয়া পর্ব-০৫

0
30

#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৫
হঠাৎ করে দুজনের চোখে চোখ পরতেই কয়েক মিনিট স্তব্ধ হয়ে রইলো দুজনেই।
নিরবতা ভেঙে মিরহা বলে “কে আপনি?
‘আমি ফারজাদ আমাকে চিনতে পারছো না!
‘কোন ফারজদা এই নামের কাউকে তো চিনি না।
‘মিরহা আমি ফারজাদ সিকদার।
‘স্যরি চিনতে পারছিনা। ইনফেক্ট নামটাই আজ প্রথম শুনলাম
‘গত শুক্রবার কবুল পড়ে আমাকে বিয়ে করলে আর আজ চিনতেই পারছো না!
‘আমি আর বিয়ে!
‘স্যরি বলার একটা সুযোগ তো দাও। আমি কথা দিচ্ছি সবটা ঠিক করে ফেলবো।
‘হ্যালো মিস্টার আমি আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তায়ালার রহমতে ঠিক আছি। আপনি কোন মেন্টাল ডাক্তার দেখান৷
‘মিরহা এমন করছো কেনো? তুমি কোথায় আছো সেটা বলো প্লিজ।
‘স্ট্রেঞ্জ! “আপনাকে কেনো বলবো আমি কোথায়? আপনি কে?
ফারজাদ আর কিছু বলার আগেই
‘শিরিন বেগম মোবাইলটা নিজের কাছে নিয়ে বলে, তুমি কি সত্যি এই ছেলেটাকে চিনো না?
‘আম্মু যাকে তাকে তুমি বাসায় কেনো ঢুকতে দাও!
‘তুমি ছেলেটাকে চিনো কি না? হ্যা বা না?
‘চিনিনা আম্মু কতবার বলবো! কাল আরেকজন এসে যদি বলে, তোমার মেয়ের জামাই তুমি কি সেটাই বিশ্বাস করবে?
‘আচ্ছা রেস্ট করো তোমার সাথে পরে কথা বলছি৷ এবার বলো তো আসলে তোমার উদ্দেশ্যটা কি? কেনোই বা মিথ্যা বলছো?
‘আম্মা আমি মিথ্যে কেনো বলবো! সত্যি বলছি আপনার মেয়ে আমার বিয়ে করা বৌ।
‘তোমার কথা আমি কেনো বিশ্বাস করবো? কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে?
‘ ফারজাদ চুপ করে রইলো৷ কি উত্তর দেবে এখন? বিয়েটা তো হুজুরের মাধ্যমে হয়েছে কোন কাগজে কলমেও সাক্ষর নেই৷ আর না আছে সেই সময়ের কোন পিকচার। প্রমান বলতে রাফিন আর জিসান আর বাকি দুজন রাফিনের ভাড়া করা লোক।
‘কি হলো চুপ করে আছো কেনো? এই যুগে মুখের কথা কে বিশ্বাস করে বলো? প্রমাণ কথা বলবে।
‘আম্মা এই মূহুর্তে আমার কাছে আমি ছাড়া কোন প্রমাণ নেই।তবে আমাকে সময় দিন আমি প্রমান ঠিক নিয়ে আসবো।
‘তোমার আমাকে দেখে বোকা মনে হয়?বিয়ে করেছো আর কোন প্রমান নেই!
‘একটা প্রমান আছে জিসান৷ মিরহার ফ্রেন্ড জিসান ছিলো তখন উপস্থিত।
‘তুমি মিথ্যে কেনো বলছো! জিসান নামের কোন ফ্রেন্ড মিরহার ছিলো না৷ জিসান ওর বড় ফুপির ছেলের নাম৷
‘তাহলে সেই হবে হয়তো আমি দেখলেই চিনতে পারবো।আর আমাকেও চিনতে পারবে সে।
‘আইরিন জিসান কে ডেকে নিয়ে আসো তোে।দেখি কি প্রমান করতে পারে৷
‘জিসান হাই তুলতে তুলতে রুম থেকে বের হয়ে সোফায় বসে বলে,মামি চা খাবো৷
‘জিসান চোখ তুলে ভালো করে দেখো তো বাবা এই ছেলেটাকে চিনতে পারো কি না?
‘জিসান চোখ ডলে সামনে তাকিয়ে বলে,”এটা কে মামি?
‘জিসান তুমি আমাকে চিনতে পারছো না! গতকাল থানা থেকে তুমিই তো আমাকে মুক্ত করলে।
‘মামি এসব পাগল বাসায় ঢুকলো কি করে? আমি তো এনাকে এর আগে কখনোই দেখিনি।
‘ফারজাদের মনে হচ্ছে সে এখন ফাডা বাঁশের চিপায় আছে। এই মূহুর্তে রাগ সংযাত করতে হবে। নিজেকে স্বান্ত রেখে বলে, শালাবাবু সময় কিন্তু স্থীর থাকে না।আর সময়ে কাটা তোমার পক্ষে আরেকবার আমার পক্ষে থাকবে।
‘এই ছেলে অনেক সময় ধরে তোমার পাগলামি সহ্য করছি। চুপচাপ বাসা থেকে বের হও।
‘আম্মা শেষ সুযোগটা দেন৷ আমার আম্মুর সাথে কথা বলেন৷ আমি কল করে দিচ্ছি। কল ঢুকিয়ে দেখে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ কয়েকবার চেষ্টা করেও ফলাফল শূন্য।
‘অনেক হয়েছে এবার যে পাগলা গারদ থেকে এসেছো সেখানেই ফেরত যাও।
‘ফারজাদ উঠে চলে যাওয়ার আগে মিসেস শিরিন বেগমকে পা ছুঁয়ে সালাম করে বলে,আম্মা আমিই কিন্তু আপনার মেয়ের জামাই এটা কিন্তু কনফার্ম। তাই আপনি না মানা পর্যন্ত আপনার পিছু ছাড়বো না।

‘শিরিন বেগম জিসানের দিকে তাকিয়ে বলে,এবার সত্যিটা বল। ছেলেটা কে আর আসল কাহিনি কি? একদম আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করবি না।
‘মামি ছেলেটাকে আমি চিনি না।
‘থাপ্পড় না খেতে চাইলে বল।
‘ওর ফারজাদ সিকদার মিরহার এক্স বয়ফ্রেন্ড।
‘তা আমার গুনধর মেয়ের কয়টা বয়ফ্রেন্ড ছিলো?
‘এই একটাই। ছেলেটাই কিভাবে কিভাবে মিরহাকে ফাঁসিয়েছে।
‘আমাকে সাত পাঁচ বোঝাতে এসো না৷ আমার মেয়ে কচি খুকি না। ছেলেটার সাথে ওর বিয়ের বিষয়টি সত্যি?
‘নাহহ মামি এরকম কিছু না। এটা মিথ্যে।
‘মনে রেখো সত্য হচ্ছে সূর্যের মত রাতের আঁধার সূর্যকে সাময়িক বাঁধা দিতে পারে কিন্তু সময় মত সে নিজের ত্যেজ নিয়ে ফিরবেই।
‘শিরিন বেগম নিজের রুমে চলে গেলো।

‘মিরহা ফারজাদের ব্লক খুলে টেক্সট করলো, আপনার যদি সামান্যতম লজ্জা থেকে থাকে তাহলে আমাকে নিয়ে আর কোন টানাহেঁচড়া করবেন না। আমি ঘৃনা করি আপনাকে।আপনার অন্যায় ক্ষমার যোগ্য না৷ দয়া করে আমাকে আর আমার পরিবারকে বিরক্ত করবেন না৷
‘ফারজাদ বাহিরে এসে রিক্সা নিয়ে মোবাইল বের করে নোটিফিকেশন দেখে সাথে সাথে মেসেজ সিন করে৷
‘জান প্লিজ একটাবার আমার কথা শুনো জান৷ বৌ গো আমি ভুল করেছি তাও বিরাট বড় ভুল ক্ষমা করতে হবে না। শুধুমাত্র ভুল শুধরে নেয়ার একটু সময় দাও।
‘আপনি যদি ভেবে থাকেন দ্বিতীয়বার আপনার এসব কথা শুনে আমি গলে যাবো তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন৷ আপনার অভিনয় দক্ষতা সম্পর্কে আমার ধারনা হয়ে গেছে তাই এসব করে আর লাভ হবে না৷
‘যদি আমি বলি আমিও তোমাকে ভালোবাসি তবে কি হবে?
‘আমি মিথ্যে মায়ায় আটকানোর মানুষ না তবুও খুব করে চাইবো তোমার মিথ্যে ছলনার শেষটা সুন্দর হোক, কারো হৃদয় হরণ করে যদি তোমার হৃদয়ে প্রশান্তি মেলে তবে এই হৃদয় তোমার তড়ে সঁপে দিলাম
‘ভুলগুলো যদি মিথ্যে হতো তবে আমার ভালোবাসা তোমার জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার হতো।
‘ভুলের মাশুল হিসেবে তোমাকে হারাতে হবে জানলে এ ভুল কখনো করতাম নাকি! তবে জীবন তো অদ্ভুত ভাবে রং বদলায়। তবুও চাইবো তুমি ভালো থাকো।
‘আমি ভালো থাকবো এটা চাইলে কখনো আমার সাথে যোগাযোগ করবেন না।
‘ আমি চাই তুমি ভালো থাকো তবে আমাকে বাদ দিয়ে নয়৷ আমাকে নিয়ে তুমি ভালো থাকো। ভুল করেছি শাস্তি দাও রাগ করো, অভিমান করো, অপমান করো তবুও শেষ প্রান্তে তোমাকেই চাই কারন তুমিই আমার বৌপ্রিয়া। আমি তোমার মনকে বিশ্বাস করাবো আমি কতটা ভালোবাসতে পারি। ছয় মাসে আমার মধ্যে কি একটুও তোমার জন্য ভালোবাসা জন্মায়নি! এটা তুমি কি করে ভাবলে! কিন্তু আমি কথা দিয়েছিলাম তাই আমার সামান্য অনূভুতিকে পাত্তা দেইনি৷ আজ আমি বুঝতে পারছি তোমাকে ছাড়া নিজেকে কতটা শূন্য লাগছে।
‘মিরহা আর কোন রিপ্লাই করলো না৷ আবার ফারজাদকে ব্লক করে দিলো।
‘পুস্প মিরহার চোখে পানি দেখে বলে কি হয়েছে তোর বলনা আমাকে। আমি কি তোর এতটাই পর?
‘কিছু কথা, কিছু ব্যথা, কিছু দুঃখ একান্ত ব্যাক্তিগত। চাইলেও তা প্রকাশ করা সম্ভব নয়!
‘আচ্ছা জোড় করবো না তোকে তবে কাল থেকে কঠোর পরিশ্রম তাই শরির মন দুটোই সুস্থ রাখতে হবে৷ জানিসই তো মনের সাথে দেহের মিলন কেমন? মন অসুস্থ থাকলে দেহেও অচল হয়ে আসে। সব ভাবনা দূরে রেখে আপাতত ট্রেনিংয়ে ফোকাস কর। টুক করে ঘুমিয়ে পর তো।
‘তোর মত বান্ধবী পেয়ে আমি অনেক লাকি৷ তুই ও ঘুমা৷ পুস্প চলে যেতেই মিরহা বালিশে মুখ গুছে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। মনে মনে বলে,কি করে মনকে বোঝাবো আপনার সব অনুভূতিগুলো আমার জন্য মিথ্যে ছিলো! আমি যে আপনাকে বড্ড ভালোবেসেছিলাম।

#চলবে