#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৬
এভাবে চুলে নাক ডুবিয়ে কি পরিক্ষা করছেন?
“চুপ করো তো আমাকে আমার কাজ করতে দাও৷ ফারজাদের একদম কাছাকাছি মিরহা একটু পর পর মিরহার পিঠ যেয়ে ঠেকছে ফারজাদের বক্ষে। কেমন দম বন্ধ কর মাতল অনূভুতি! ফারজাদের পারফিউমের কড়া ঘ্রান যেনো নেশালো করে তুলছে মিরহাকে৷ মিরহা এবার একটু সামনের দিকে সরে আসতে চাইলো৷
‘ফারজাদ মিরহাকে টেনে আরো নিজের কাছাকাছি নিয়ে আসলো। জানো তোমার চুলের ঘ্রান যে কাউকে পাগল করে দিবে। কি শ্যাম্পু ব্যবহার করো?
‘আগে আমাকে ছাড়ো তারপর বলবো।
‘ফারজাদ মিরহার কানের কাছে মুখ নামিয়ে আস্তে করে বলে,ভালোবাসি তোমাকে কাজললতা কেশবতী।তুমি কবির লেখা কবিতার বর্ণনার চেয়েও অনেক বেশি সৌন্দর্যের অধিকারী। কোন কবির সাধ্য নেই এই রুপের বর্ণনা করার৷ আমি মুগ্ধ আমি বদ্ধ পাগল তোমার প্রেমে শ্রেয়সী।
‘মিরহা একটু দুরে সরে গেলো। বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে বলে,আরেকটু হলে মরেই যেতাম মিস্টার ফারজাদ। তুমি কবে থেকে কাব্যিক হলে?
‘প্রেম হলো কবিতা, প্রেমিকা হলো কবিতার মূলভাব, ভালোবাসা হলো কবিতার ছন্দ। তোমার প্রেম আমাকে কাব্যিক করে তুলেছে।
‘আপনার শরীরে এই কালো রংয়ের পাঞ্জাবিটা দারুন মানিয়েছে। মনে হচ্ছে সাদাত হোসাইনের গল্পের কোন প্রেমিক চরিত্রের বাস্তব রুপ৷
‘কথা ঘোরাচ্ছো শ্রেয়সী? প্রেমিক রুপে গড়ে তুলে প্রেমকে ভয় পাচ্ছো?এ শুষ্ক হৃদয়ের ভুমিতে তুমিই নামিয়েছে এক পশলা প্রেমের বৃষ্টি। এখন এ বৃষ্টিতে তোমাকে তো ভিজতেই হবে।
‘ বিয়ে করে একদম নিজের করে নাও তারপর।
‘বৌপ্রিয়া তুমিই হবে আমার বৌপ্রিয়া।
‘মিরহার ঘুম ভেঙে গেলো উঠে বসে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিলো, চোখের কোন থেকে গড়িয়ে পরছে নোনা জল৷
বুকের বা পাশে প্রচন্ড রকম ব্যথা হচ্ছে। বেড ছেড়ে বারান্দায় চলে আসলো ভোর হতে আর বেশি দেরি নেই চাঁদটা পালাই পালাই করছে। মিরহা ফ্লোরে বসে হাঁটুতে মুখ গুজে কিছুক্ষণ নিরব অশ্রু বিসর্জন দিলো। মাথা তুলে চোখের পানি নিজের হাতে মুছে নিয়ে বলে,আপনি সেই ব্যাক্তি যার জন্য আমি নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার কষ্ট অনুভব করেছি৷ আপনি জানেন যখন কোন মানুষ নিজের চোখের পানি নিজের হাতে মুছে নেয় তখন তার কাউকে প্রয়োজন হয় না৷ সে নিজের জন্য নিজেই যথেষ্ট।
🌿 ফারজাদ বাসায় ফিরে দেখে তার আম্মু সোফায় বসে আছে। মাথা নিচু করে ড্রয়িং রুম ক্রস করার সময় কাকলি বেগম বলেন,কোন খোঁজ পেলে?
‘ফারজাদ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
‘ফিরবে?
‘ফুপি কিছুটা সময় লাগবে।
‘রুবিনা বেগম চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে কাপটা শব্দ করে টি টেবিলে রাখলেন। ফারজাদের দিকে তাকিয়ে বলে,মেয়েটার বাবার নাম আর ডিটেইলস বলতে বলো আমাকে৷
‘বাবার নাম শফিউল্লাহ, বাড়ি সায়দাবাদ, মানিকনগর, ঢাকা
‘কাকলি ফোন নাম্বার দিতে বলো৷
‘ফুপি মিরহার নাম্বার বন্ধ। ওর পরিবারের আর কারো নাম্বার নেই।
‘আমি কাল কানাডা যাবো তোমার ভাই সেখানে আছে ফিরতে মাস খানেক সময় লাগবে৷ এসে জেনো এই নাটকের সমাপ্তি দেখতে পাই।
‘রবিনা বেগম চলে গেলে।
কাকলি বেগম বলেন, ফারজাদ কেনো তুই হুট করে এসবে জড়ালি! এখন কি হবে?
‘কি আর হবে যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে।
‘সারাদিনে কিছু খাসনি নিশ্চয়ই। হাত মুখ ধুয়ে খেতে আয়।
‘ফারজাদ দীর্ঘ সময় নিয়ে শাওয়ার নিলো। এরপর ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখে রাহা পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছে৷
‘তোর সমস্যা কি বলতো?
‘তুমি সত্যি বিয়ে করছো?
‘মিথ্যে বিয়ে করা যায়?
‘সর সামনে থেকে।
‘তোমার বৌকে খুঁজে না পেলে আর কোন অপশন আছে তোমার হাতে?
‘আমার বৌ জীবিত যখন আছে তখন তাকে আমি খুঁজে বের করবোই। মাথা থেকে এসব ঝেড়ে ফেলে পড়তে বস৷
‘ফারজাদ খেতে বসেছে এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো। সাথে সাথে রিসিভ করে বলে কিরে ডিটেইলস পেলি?
‘স্যার আপনার বৌ তো আর্মিতে জব করে৷ বর্তমানে সে অস্ট্রেলিয়ায় আছে। তিনমাস সেখানেই থাকবে।
‘আর্মি! তুই শিওর?
‘আমি আপনার হোয়াটসঅ্যাপে সব পাঠিয়ে দিচ্ছি নিজের চোখে দেখে নিন৷
ফারজাদের হঠাৎ মনে পরলো অতিতের কিছু কথা।
‘আচ্ছা মিরহা আমি এতো সাধারণ তবুও তুমি আমাকে কিভাবে ভালোবাসলে! আজকালের মেয়েরা স্মার্ট আর টাকা ওয়ালা ছেলে পছন্দ করে। সেখানে আমি একজন সামান্য চাকরিজীবির সাধারণ একটা ছেলে৷
‘সাধারণ সবাই হতে পারে না৷ যে যত সাধারণ সে ততই অসাধারণ। সুন্দর মন আর সারাজীবন পাশে থেকে ভালোবাসার মত ধনী হলেই হয়। টাকা দিয়ে সুখ কেনা গেলে যাদের অনেক টাকা তারা দুঃখী হতো না কখনো৷
‘তুমি নিয়মিত ভার্সিটিতে কেনো আসো না?তোমাকে মিস করি খুব। আমাদের দেখাও হয় কম৷
‘কেনো কম আসি সেই গল্প তোলা থাক একদিন তোমার কাঁধে মাথা রেখে বলবো৷
‘আলতো করে মিরহার হাতের উপর হাত রেখে বলে,তুমি কি আমাকে এখনো ভরসা করতে পারছো না প্রিয়া৷
‘কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠে মিরহা বলে,ভালোবাসি আপনাকে। ভালোবাসা শব্দের মধ্যে বিশ্বাস, ভরসা সব জড়িয়ে আছে৷
‘তাহলে বলো কেনো আসো না প্রতিদিন?
‘সময় হলে বলবো। আচ্ছা তুমি জবের জন্য এপ্লাই করেছো কোথাও?
‘হ্যা সারা মাস তো এখানে সেখানে দৌঁড়াতে থাকি জবের জন্য। একটা জব তো লাগবেই।
‘মিরহা ফারজাদের দিকে একটা বক্স বাড়িয়ে দিয়ে বলে,খেয়ে কিন্তু জানাবে কেমন হয়েছে। আজ তাহলে উঠি।
‘কিরে তুই খাবার রেখে কি ভাবছিস? কাকলি বেগমের কথায় ঘোর কাটলো ফারজাদের।
‘কিছু নাতো।
‘সব ভাবনা বাদ দিয়ে খাবার শেষ কর।
‘খাবার শেষ করে রুমে এসে নিজের বাবাকে কল করলো ফারজাদ।
‘ ফয়সাল সিকদার ফোনটা রিসিভ করে বলে,বাবা কি মনে করে কল দিলে?
‘কল দেয়া যাবে না?
‘যাবে কিন্তু আমার ছেলে তো তাই বুঝি৷ তা তোমার আম্মুর সাথে রাগারাগি মিটেছে?
‘,বাবা আমাকে ইমার্জেন্সি ভাবে অষ্ট্রেলিয়া যাওয়ার ব্যবস্থা করে দাও। প্লিজ বাবা। মানা করতে পারবে না৷
‘ ওকে মাই সান আমি দেখছি। কিন্তু সেখানে কেনো হুট করে৷
‘বাবা আগে যাই পরে বলবো।
‘ওকে ডিয়ার নিজের খেয়াল রেখো।
‘ফারজাদ কল কেটে দিয়ে বলে আমি আসছি বৌজান যাস্ট ওয়েট বৌপাখি।
‘ভোর ছয়টা থেকে ট্রেনিং শুরু। সকাল আটটায় ব্রেকফাস্ট করার ব্রেক দেয়।
পুষ্প মিরহার পাশে বসে বলে,তিন মাসের মাত্র দুই ঘন্টা গেলো। আরো কত কত পরিশ্রম বাকি!
‘তোর এতো কিসের পিছুটান? এখনো তো সিঙ্গেল। এই কাজে পরিশ্রম জেনেই তো নেমেছিস।
‘সিঙ্গেল মানে কি? আমার মনাপাখি আছে তো৷ ঠুসসস করে মন দিয়ে ঠাসসস করে প্রেমে পরেছি৷
‘মনা পাখি! তা তোর মনা পাখি কি করে?
‘আকাশে টো টো কোম্পানির ম্যানেজার৷ বিয়ের অনুমতি দিলেই টুসসস করে বিয়েটা করে ঠাসসস করে বাসর সেরে ফেলবো। কথাটা বলেই পুস্প দুহাতে নিজের মুখ ঢাকলো।
‘তোর মুখে কিছু আটায় নারে পুস্প!তা তোর মনা কে দেখাবি না?
‘ততক্ষণ নাস্তার টাইপ ওভার৷
এখন চল পরে দেখাবো।
🌿
আইরিন শিরিন বেগমের মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে।
‘তোর বিয়ে হয়ে গেলে আমি একা হয়ে যাবো।
‘বিয়ে করবো নাকি আমি? আমি পারবো না তোমাদের ছেড়ে থাকতে।
‘পাগলি মেয়ে বিয়ে তো করতেই হবে৷মেয়ে জন্ম হয় পরের ঘর আলো করতে।
‘পরের ঘরে যাবোই না আমি আমার নিজের ঘরে থাকবো৷
‘যে ভাগ্যে আছে তার ঘরই তোর নিজের ঘর। আমার মেয়েটা রিয়াজের মত ছেলেটাকে হাত ছাড়া করলো। কখন যে ওর মাথায় কি ঘুরে?
‘তোমার মেয়ে খলনায়ক রিজেক্ট করেছে, নায়ক নিজ পায়ে হেঁটে তোমার দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। ছেলেটা দেখতে কত হ্যান্ডসাম। আর কি ধৈর্য! বারবার তোমাকে যেভাবে আম্মা ডাকছিলো!
‘কি বলতে চাইছিস তুই?
#চলবে