#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৭
“আচ্ছা তুমি কখনো বদলে যাবে না তো?
‘তোমার মনে হয় আমি বদলে যাবো!
‘আমার কিন্তু এই সাদাসিধে ফারজাদকেই পছন্দ। সব সময় এমন থাকবে তো?
‘এই যুগে মানুষ স্মার্ট ছেলে পছন্দ করে। আমার মত লুঙ্গী পরা ছেলেদেরকে কেউ এতোটা ভালোবাসবে কখনো বুঝতে পারিনি৷
‘মিরহা ফারজাদের দিকে একটা ব্যাগ বাড়িয়ে দিয়ে বলে, এটা তোমার জন্য।
‘কি আছে এতে?
‘বাসায় যেয়ে নিজেই খুলে দেখো।
‘আমি তো দরিদ্র তোমাকে ওরকম কিছুই দিতে পারিনা৷ একটা জব পেয়ে গেলেই প্রথম মাসের বেতন দিয়ে তোমার জন্য একটা শাড়ি,একমুঠ চুড়ি, একজোড়া ঝুমকো কানের দুল কিনবো। দুজনে রিকসায় ঘুরবো, ফুচকা খাবো।
‘মিরহা ফারজাদের হাতের উপর হাত রেখে বলে,নিজেকে দরিদ্র বলো কেনো বারবার! আঙ্কেলের টাকায় চলছো, তাই একটু হিসেব করে চলতে হয় তোমাকে। তাই বলে কি তুমি দরিদ্র? আর কখনো না এটা বলবে না৷ আচ্ছা আঙ্কেল আন্টির সাথে কবে দেখা করাতে নিয়ে যাবে?
‘আমার ভয় হয় মিরহা। তোমার পরিবার মানবে তো আমাকে?
‘ভয়কে জয় করতে হয় বুঝলা মিস্টার।
‘চলো এবার উঠি তোমাকে বাসায় ফিরতে হবে।
‘হাত ধরে ফুটপাত ধরে হাঁটছে মিরহা আর ফারজাদ।
কিছু দূর আসতেই মিরহা একটা রিকশা থামিয়ে তাতে উঠে বসলো। ফারজাদ মিরহাকে বিদায় জানিয়ে কানে মুখে বললো ভালোবাসি তোমাকে।
‘রিকশা চলছে আপন গতিতে। মিরহার ঠোঁটের কোনে লেগে আছে তৃপ্তির হাসি। ভালোবাসা এক অদ্ভুত অনূভুতি।
🌿রাফিন গাড়ি নিয়ে ফারজাদের সামনে আসলো। গাড়ি থেকে নেমে বলে,ফারজাদ তুই সত্যি সত্যি মিরহার প্রেমে পরে যাচ্ছিস নাতো?
‘কি সব বলছিস তুই। শা’লা তোর জন্য আমাকে এই অসহায় দরিদ্র হওয়ার নাটক করতে হচ্ছে আর তুই আমাকে দোষারোপ করিস?
‘তোদের একসাথে হাতে হাত রেখে চলতে দেখে বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠলো। পরে যদি তুই তোর কথা থেকে সরে যাস।
‘কোন চান্সই নেই। ফারজাদ সিকদার এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে নামক প্যারায় জড়িয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করবে না। প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে খেলা৷ আর কয়েকটা দিন এরপর তোর জিনিস তোর কাছে। তবে মেয়েটাকে যত্ন করে আগলে রাখিস৷ যতটুকু বুঝলাম খুব নরম মনের৷ আর এই ধর তোর গিফট৷
‘আমার গিফট! কিসের গিফট?
‘মিরহা যেহেতু ভবিষ্যতে তোর তাহলে ওর দেয়া গিফটও তোর৷
‘গাড়িতে আয় দেখি কি দিলো৷ গাড়িতে বসে রাফিন ব্যাগ খুলে হাসতে হাসতে শেষ।
‘কিরে এভাবে হাসছিস কেনো কি হয়েছে?
‘তোকে মিরহা আন্ডারওয়্যার কিনে দিয়েছে! বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পরলো রাফিন৷
‘আর কি দিয়েছে?
‘থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, জিন্স, ট্রিশার্ট, শার্ট,।সনামধন্য ব্যবসায়ির একমাত্র ছেলেকে গিফট করেছে এই সব কাপড়!
তুই তো ব্রান্ডের ড্রেস ছাড়া পরিস না।।
‘এমন সময় ফারজাদের ফোনে নোটিফিকেশন আসলো।
মেসেজ বক্স ওপেন করে দেখে, মিরহার টেক্সট।…..
ডিয়ার হাঁদারাম ওইদিন লুঙ্গীর নিচে আন্ডারওয়্যার পরে ঘুমাওনি তাই এটা দিলাম। আর বাকিগুলো পছন্দ হইছে তাই কিনেছিলাম৷ তুমি ছাড়া কেউ নেই তাই তোমাকে দিলাম।আমার হাঁদারাম কে এবার নিশ্চয়ই স্মার্ট লাগবে!
আর হ্যা পছন্দ হোক বা নাহোক এগুলো পরতেই হবে।
হঠাৎ জোড়ে জোড়ে হেসে উঠলো ফারজাদ।
কাকলি বেগম বলে কিরে তোর কি হইছে?একা একা হাসছিস কেনো?
‘ফারজাদ চারপাশে তাকিয়ে দেখে ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে এভাবে হাসছে৷ মনে মনে বলে,আমার রানী আমি তোমার ভালোবাসা গভীরতার পরিমাপ করতে পারিনি। ইশশ মিস করছি খুব মহারানী তোমাকে।
‘কাকলি বেগম ফারজাদের কপালে হাত রাখলো। কিরে একা হাসছিস, কথা বলছিস ঠিক আছিস তো?জ্বর তো নেই শরীরে।
‘ফুপি কিছু হয়নি আমার৷ কিছু মিষ্ট অতীত মনে পরছে। জানো মিরহা জানেইনা আমি ধনী পরিবারের। ও আমাকে কত কত গিফট করত। আবার মাঝে মাঝে হুটহাট টাকা পাঠিয়ে দিতো আমার বিকাশে। আমি কিছু বললে, বলতো এখন মনে করো এসব তোমাকে ধার দিচ্ছি। তোমার যখন চাকরি হবে সব ডাবল ফেরত দিতে হবে।
‘আর তুই এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করেও রেখে আসিস বন্ধুর জন্য! আরেহহ জাতীয় বলদ এমন মেয়ে তো লাখে ও একটা পাওয়া মুশকিল।
‘ফুপি ও আর্মিতে জব করে৷ সেই সুবাদে দেশের বাহিরে আছে৷দেশে থাকলে তো কিডন্যাপ করে নিয়ে আসতাম৷ তারপর দেখতাম কোথায় পালাতো।
‘দোয়া করি মেয়েটা তোর জীবনে আবার ফিরে আসুক৷
‘আম্মু যে যায় সে আর ফেরে না৷ বরং যে আশেপাশে থাকে তাকেই আপন করে নিতে হয়।
রাহার কথা শুনে কাকলি বেগম রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,তোকে না কতবার মানা করছি বড়দের মাঝখানে কথা বলতে?
‘তো আমি কি ছোট নাকি৷ আজ বিয়ে দিলে কাল তোমরা নানা নানি হয়ে যাবা।
‘দাঁড়া তোকে দিচ্ছি বিয়ে আমার জুতাটা কই?
‘রাহা দৌঁড়ে চলে গেলো।
‘কাকলি বেগম বলে এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারি না। দিনদিন বেয়াদব হচ্ছে।
‘রাগারাগি না করে বুঝিয়ে বলো। ছোট মানুষ বুঝিয়ে বললে ঠিক বুঝবে।
‘এবার তুই আয় কিছু খেয়ে নে একা একা আর হাসতে হবে না৷ থাকতে কদর করতে হয়।
🌿 সারাদিন ট্রেনিং খাটাখাটনি করে সন্ধ্যায় নিজের রুমে ফিরে সবাই শুয়ে পরেছে৷
‘মিরহা নিজেই সবার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসলো৷ চিনি ছাড়া কড়া লিকারের রংচা। শরীরের ব্যথার জন্য এটা বলতে গেলে জাদুকরী এক টোটকা৷
‘ একসাথে বসে চা পান করলো সবাই৷
মিরহা ফোনটা হাতে নিয়ে আইরিনকে কল করলো৷
‘হেই মির কি অবস্থা তোর?
‘নট মির ইট’স মিরহা৷ ঠিক করে বল নয়তো কল কেটে দেবো।
‘আরেহহহ ইয়ার বল কি অবস্থা।
‘এই তো চলছে। তোর কি অবস্থা? আম্মু কেমন আছে?
‘আমরা আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আচ্ছা ওই ফারজাদ না কি ছেলেটা তো সেই হ্যান্ডসাম৷ তোর কাছে ওর নাম্বার আছে?
‘মাইর খাবি এসব কইলে। হ্যান্ডসাম না ছাই হনুমান একটা।
‘তোর চোখ না চুলা?কি হ্যান্ডসাম। জানিস ব্লু কালর কোট হোয়াইট শার্ট আর ব্লু প্যান্ট পরা, চুলগুলো একদম সুন্দর করে সেট করা, হাতে ব্ল্যাক কালারের ওয়াচ৷ ইশশ যে কেউ দেখলে ক্রাশ খাবেই।
‘তুই এসব বলা বন্ধ করবি নাকি কল কেটে দেবো?
‘রেগে যাচ্ছিস কেনোে?তুই চাস না তোর বোনটার এমন একটা কিউট ছেলের সাথে বিয়ে হোক?
‘নাহহ চাই না এই ছেলে এক নাম্বার বজ্জাত। এরচেয়ে হ্যান্ডসাম খুঁজে দেবো।
‘আচ্ছা এমন হ্যান্ডু ছেলে পেয়েও তুই পাত্তা দিচ্ছিস না কেন!
‘বেশি পাত্তা দিলে মাথায় উঠে নাচবে তাই।
‘আরেহহহ ইয়ার ছেলের যা বডি ফিটনেস তোকে কোলে নিয়ে নাচবে মাথায় উঠবে না৷
‘তুই থাক ওই ছেলেকে নিয়ে আমি রাখলাম।
‘আচ্ছা বাদ দিলাম৷ এবার বল ওখানের পরিবেশ কেমন? কেমন ইন্জয় করছিস?
‘এখানে পিকনিক করতে আসি নাই। এখনো বাহিরের বের হতে পারিনি। ট্রেনিং করেই আজ হাওয়া টাইট। আচ্ছা আম্মুর খেয়াল রাখিস আমি একটু ঘুমাবো৷
‘ খেয়াল তো রাখছি । তবে যদি চাস আরো ভালো করে খেয়াল রাখি তাহলে ওই হ্যান্ডুর নাম্বারটা দে না৷ তুই রিজেক্ট করেছিস এরজন্য তোরে চুম্মা৷ এবার আমার সাথে সেটিং করিয়ে দে।
‘মিরহা কোন উত্তর না দিয়ে কলটা কেটে দিলো৷ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,আপনার বডি আপনি হ্যান্ডসাম এসব কিছু আমি দেখিনি৷ দেখেছিলাম সাদামাটা ছেলে, পাঞ্জাবি পরা, চুলে চিপচিপে তেল দেয়া, পায়ে একজোড়া স্যান্ডেল। তবুও আপনার সরলতা আর ভদ্রতার প্রেমে আমি মুগ্ধ হয়ে আপনাকে ভালোবেসেছিলাম। অথচ সে সব ছিলো আপনার নিখুঁত অভিনয়!
#চলবে