সে আমার বৌপ্রিয়া পর্ব-১০

0
66

#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-১০

মিরহা ঘুমানোর চেষ্টা করছে, ঘুম জেনো আজ অচিন পুরে কিছুতেই তাকে ধরা দিচ্ছে না৷ বেডে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে। এরমধ্যেই হঠাৎ করে ফোনে নোটিফিকেশন আসলো৷ চেক করে দেখে অপরিচিত নাম্বার থেকে হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট, হেই মিস স্নো হোয়াইট। কি করছেন?
‘কে আপনি?
মিস স্নো হোয়াইট রাতের ডিনার হয়েছে?
‘অপরিচিত কাউকে রিপ্লাই করি না আপনাকে এক্ষুনি ব্লক করছি।
‘স্নো হোয়াইট আমি তোমার একমাত্র অসহায়, অপরাধী বর।
‘এসব কেনো করছেন?
‘কিছুই তো করিনি একটা সুযোগ দাও তোমার হৃদয় থেকে সব অভিমান মুছে দেবো৷
‘অভিমান! আপনার প্রতি আমার কোন অভিমান, অভিযোগ কিছুই নেই৷ আপনাকে আমি ত্যাগ করেছি৷ অভিমান করতে অধিকার লাগে। আপনার মত মানুষের প্রতি আমার কোন অধিকার নেই। রাখতেও চাইনা।
‘এতো ঘৃণা করো আমাকে?
‘উঁহু ঘৃণা করিনা। ভালোবাসতাম সেই সুবাদে আপনার কাছে নিজেকে পুরোপুরি সপে দিয়েছিলাম। আপনাকে ঘিরে একটা ব্যাক্তিগত পৃথিবী সাজাতে চেয়েছিলাম। একদম নিজস্ব একটা পৃথিবী। যে পৃথিবীর সূর্য আপনি আর চাঁদ আমি। একে অপরের পরিপূরক হতে চেয়েছিলাম।
‘সব ভুলে যাও মেরিজান। নতুন করে শুরু করবো।
‘ধরুন আপনার হৃদপিণ্ড কেউ বের করে নিলো আপনি কি বেঁচে থাকবেন?
‘ বের করে নাও মেরে ফেলো আমাকে।
‘এরপর যদি বলি ভুলে যান সব চলুন নতুন করে শুরু করি। আপনার দেহে প্রাণ নেই আপনার আর শুরু করার কোন সুযোগ নেই। আপনি আমার দেহ থেকে প্রাণ আলাদা করে ফেলেছেন৷ এই দেহ আছে কিন্তু প্রাণ নেই৷
‘এভাবে বলো না। আমি জানি আমার ভুলটা অনেক বড়। আমি ভুল করেছি স্বীকার করছি একবার ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ করে দাও।
‘আপনার জন্য নিজের বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে এসে আপনার হাত ধরেছি৷ আর আপনি কবুল পড়ে বিয়ে করে সেই বৌকে নিজের বন্ধুর হাতে তুলে দিলেন! আপনার বিয়ে করা বৌয়ের সম্মান নিয়ে সে টানাহেঁচড়া করছিলো তখন কোথায় ছিলেন?
‘আমার জায়গায় অন্য কোন মেয়ে হলে আজ সে হতো ধর্ষিতা। আপনার অমানুষ বন্ধু আর আপনার মধ্যে আমি কোন পার্থক্য দেখছিনা। আজ যদি আমার সাথে এমন কিছু হতো তাহলে এভাবে বলতে আসতেন তোমাকে ভালোবাসি?
‘তখন তামাশা দেখতেন৷ আমার জীবন নষ্ট করে। হয়ত অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখে থাকতেন৷
‘আমার ভাষা নেই এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার৷ আমি সত্যি লজ্জিত। আমার জন্য এই পৃথিবীতে বাঁচার কোন অবকাশ নেই।মৃত্যুই একমাত্র পথ।
‘আজকের পর থেকে ফারজাদ নামের কেউ আপনাকে কোনভাবে বিরক্ত করবে না৷ পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। তবে তুমি জানোনা যে মূহুর্তে বুঝতে পেরেছি তোমাকে আমি ভালোবাসি। আমার ভেতরে তোলপাড় চলছে। আমি বিশ্বাস করেছিলাম রাফিনের মত মানুষকে যে বলেছিলো তোমাকে সে তার ভালোবাসা দিয়ে জয় করে তবেই তোমাকে স্পর্শ করবে। আমি তোমার বিশ্বাস নষ্ট করেছি। আরেকজন অমানুষকে বিশ্বাস করে৷ জানি ক্ষমা করতে পারবে না। তবুও সম্ভব হলে আমাকে ক্ষমা করে দিও৷ আমি তোমাকে ভালোবাসি বৌপ্রিয়া। যদি আকাশের চাঁদ, সূর্য সত্যি হয়ে থাকে তাহলে আমার ভালোবাসাও সত্যি। আমি ভালোবাসে তোমাকে আমার করেও ধরে রাখতে পারলাম না৷ ক্ষমা করো দিও প্রেয়সী।
মিরহা রিপ্লাই করতে পারলো না ওপাশ থেকে ব্লক৷ বেশ খানিকক্ষণ বসে রইলো। ভালো লাগছে না কিছু৷ মোবাইল থেকে ফারজাদের ছবি বের করলো৷ ছবিটা বুকের সাথে চেপে ধরলো৷ চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝড়তে লাগলো৷ মনে পরলো সেদিনের কিছু স্মৃতি……..
‘আজকে তোমাকে সুপার হ্যান্ডসাম লাগছে৷ রহস্য কি মিস্টার ফারজাদ?
‘রহস্য আমার প্রেয়সীর ভালোবাসা৷ তার ভালোবাসা দিনদিন আমাকে হ্যান্ডসাম করে তুলছে।
‘এই জানো তুমি যদি বড়লোক পরিবারের ছেলে হতে তাহলে এখন তোমাকে নায়কের মত লাগতো৷ তোমার চেহারা, বডি ফিটনেস,চুলগুলো, সৌন্দর্য সব মিলিয়ে পুরাই নায়ক৷ ড্রেসআপটা একটু সেকেলে নয়তো বাকি সব হিরো৷
‘এখন কি হিরো লাগে না প্রিন্সেস ডায়না?
‘এখনো লাগে। তুমি যেমনই তাতেই আমি মুগ্ধ।
‘আর আমি তোমাতে আসক্ত। উফফ তোমার তাকানো, মনে হয় প্রতিটা চাহনিতে মাদকতা, তোমার হাসি মনে হয় মুক্ত ঝরে, তোমার কথা বলার ধরন, মনে হয় সারাজীবন শুনতেই থাকি।
‘থামো তো একটু বেশি বলে ফেলছো মনে হচ্ছে।
‘অনেক কম বলছি। যতটুকু বলেছি তার চেয়ে হাজার গুন বেশি আকর্ষণীয় তুমি। তুমি সৌন্দর্যের প্রতিমা৷ এই আমাদের মেয়ে হলে ঠিক যেনো তোমার মত হয়৷ তার নাম রাখবো, ফাতিহা।
‘আমাদের ছেলে হবে তার নাম হবে মিরহান।
‘উঁহু মেয়ে হবে, ফাতিহা বিনতে ফারজাদ।
‘ঊঁহু ছেলে হবে মিরহান। হটাৎ মিরহা শব্দ করে হেসে উঠলো৷
বন্ধ রুমে নিজের হাসির শব্দ নিজের কানে পৌঁছাতেই হুস ফিরলো৷ মিরহা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,আমরা মানুষ ছাড়ি, ভালোবাসা ছাড়ি অথচ স্মৃতি বহন করি৷ আচ্ছা স্মৃতি কেন ছাড়তে পারি না৷ এই স্মৃতি আমাদের বাঁচতে দেয় না। কি করে ভুলবো তোমার দেয়া এই ক্ষত৷ এতো এতো ভালোবাসার মূহুর্ত, এতো এতো অনূভুতি সব ছিলো অভিনয়! আমি কি করে তোমাকে ক্ষমা করবো! কি করেই বা দ্বিতীয়বার ভরসা করবো তোমাকে! অতীত, বর্তমানের ভবনায় ডুবে যেতে যেতে কখন যেনো চোখ লেগে গেছে মিরহার। ঘুমিয়ে পরলেই যেনো শান্তি। ঘুম জেনো ভুলিয়ে রাখে সব দুঃখ সব বেদনা। তবে হৃদয় ভাঙা মানুষের কপালে ঘুমটাও জেনো সোনার হরিণ।ধরা দিতে চায় না সহজে।

🌿 আমার ছেলেকে তুমি একটা দুই টাকার মেয়ের পেছনে লেলিয়ে দিলে!
‘তোমার ছেলে সেই মেয়েটাকে বিয়ে করেছে। একজন মেয়ে হয়ে আরেকজন মেয়ের অসম্মান হওয়ার পক্ষে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
‘ তো কি হয়েছে বিয়ে করেছে! আবার বিয়ে করতো।
‘কি বললে তুমি? এই তোমার মত পুরুষ মানুষের জন্য সমাজে মেয়েরা আজ অবহেলিত। কয়টা বিয়ে করেছো এ পর্যন্ত লিস্ট দাও।
‘আমি কয়টা বিয়ে করেছি মানে! তোমার থেকেমুক্ত হতে পারলাম কই যে বিয়ে করবো৷
‘ওহহ তাহলে মুক্তি দিলেই বিয়ে করবে? করো বিয়ে দেখি কে তোমাকে সহ্য করে। আমি দেখে তোমার সংসার করে গেলাম আর কোন মহিলা করে সেটাও দেখি। আমার মত ধৈর্য কারো নাই যে তোমারে সহ্য করবে৷।
‘নাইস জোক্স তুমি আমাকে সহ্য করেছো! সহ্য তো করেছি আমি৷ আমার মত আলাভোলা স্বামি পেয়েছো তাই টিকে গেছো নয়ত এই জন্মে সংসার করা লাগতো না৷
‘কি বললে তুমি! করবো না তোমার সংসার এই যাচ্ছি ছেড়ে৷ থাকো তুমি তোমার সংসার নিয়ে।
“ফাবিহা নিজে এসে বলে,কি শুরু করলে তোমরা। বাবা, আম্মু প্লিজ বাচ্চাদের মত ঝগড়া করা বন্ধ করো৷
‘আমি ঝগড়া করছি! তোর বাবার দোষটা দেখছিস না। সারাজীবন আমারে জ্বালিয়েছে। তেজপাতা করে দিছে আমার জীবনটা।
‘বাবা তুমি ভারি অন্যায় করেছো এমন বৌ তুমি সাত জন্ম সাধনা করেও পেতে না। তাড়াতাড়ি স্যরি বলো আম্মুকে৷
‘ মেয়ের কথামত স্যরি বললেও মনে মনে বলে,এই মহিলা সারাজীবন আমারে এমনেই স্যরি বলিয়ে নিলো৷ নিজের দোষ বুঝি আর না বুঝি স্যরি কইলেয় মহিলার রাগ ভ্যানিস।
‘বাবা এবার শুনো ভাইয়া যখন বিয়েটা করেই ফেলেছে, সে রাস্তার মেয়েহোক বা অনাথ হোক তাকেই আমাদের মেনে নিতে হবে৷ এখন কোথায় সবাই মিলে সমাধান খুঁজবো তা-না করে বাচ্চাদের মত ঝগড়া কর়ো দুজনে৷
‘আম্মাজান আপনি যা বলবেন তাই হবে।
‘ফাবিহা হেসে বলে,গুডবয়। এবার যান নিজের বৌয়ের সেবা করুন৷
🌿ফারজাদ একটা দশ তলা ভবেন ছাদে দাঁড়িয়ে আছে৷তার মাথায় ঘুরছে আমাকে মরতে হবে মরতেই হবে৷

#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জিত দৃষ্টিতে দেখবেন রিচেক করার সময় পাইনি৷