সে আমার বৌপ্রিয়া পর্ব-১১

0
65

#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১১ ( স্পেশাল পর্ব)

রাতটা নির্ঘুম কেটে গেলে মিরহার৷ সকাল হতেই কোনমতে ড্রেস চেঞ্জ করে এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানির সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে সেটা পান করে চলে গেলো ট্রেনিংয়ে৷
পুস্প মিরহার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ব্রেকআপ হয়েছে আমার সারারাত জেগে কাঁদবো আমি অথচ মনে হচ্ছে সারারাত জেগে তুই কেঁদেছিস! কি হয়েছে তোর বল তো? তোর প্রেমের গল্প শুনতাম কিন্তু আমার ব্রেকআপ হয়ে গেছে। জানিস মাঝে মাঝে মনে কিছু মানুষের জন্ম হয় ভালোবাসাহীন বেঁচে থাকার জন্য। দেখ জীবনে সাহস করে প্রথম প্রেমে পড়লাম‚ প্রথমবার কারো প্রতি অনূভুতি প্রকাশ করলাম। আর সে নাকি আমার সাথে যাস্ট মজা করেছে! আচ্ছা মজা করার জন্য কেউ কারো মন বেছে নেয়? দুনিয়ায় এতো বস্তু থাকতে মনটাকে কেনো তারা খেলনা বানায়? মনের মত সেনসেটিভ একটা জিনিস যেটার ভিত্তিতে আমাদের ভালো থাকা, খারাপ থাকা ঘীরে থাকে সেই জিনিসটা তাদের খেলনা!’
‘মন খারাপ করিস না। সবাই যদি ভালোবাসার মর্ম বুঝতো তাহলে পৃথিবীতে বিরহ থাকতো না। জানিস তো বিরহ আছে বলেই ভালোবাসা এতো সুন্দর।

ট্রেনিংয়ের শেষের দিকে মিরহা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পর৷ তাই সে ক্যাম্পে ফিরে আসে। আসার সময় ক্যাপটেন শিউলি তাকে একটা টোকেন দেয়। মিরহা চাইলে আজ বাহিরে বের হতে পারবে। ক্যাম্পে এসে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিজের রুমে এলো। মাথাটা ধরে আছে কাল রাতের কান্নার ফল৷ দু’হাতে মাথা চেপে ধরে ড্রায়ার থেকে ফোন বের করে। মোবাইল হাতে নিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে বাহিরে দৃষ্টি রাখলো। আকাশে ঘনো কালো মেঘ। মনে হচ্ছে এক্ষুনি বৃষ্টি নামবে। কাল রাতেও প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। মিরহার হাতের ফোনটা হটাৎ নিচে পরে গেলো৷ ফোনটা হাতে তুলে বেডে যেয়ে বসলো৷ কাল রাতের টেক্সটগুলোতো আবার চোখ বোলাচ্ছে৷ এই যে মুখে ভালোবাসি না বলার পরেও হৃদয় বার বার বলে ভালোবাসি! আচ্ছা ভালোবাসি না বলাটা সহজ হলেও ভালোবাসি এটা স্বীকার করা এতো কঠিন কেনো?
টেক্সট পড়তে যেয়ে চোখ আটকে গেলো ফারজাদের শেষ টেক্সটে। মিরহা দ্রুত বের হয়ে গেলো৷ পাগলের মত ছুটে চলছে সিডনির রাস্তায়। কোনমতে দ্রুত পৌঁছালো ফারজাদের লোকশনে। হোটেল বয় বললো, কাল রাতে রুমে ফেরেনি ফারজাদ। এতো হাই সিকিউরিটি এরমধ্যে কোথায় যাবে?
মিরহা হোটেল ম্যানেজারের সাথে কথা বলে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করলো। দ্রুত ছাদে চলে গেলো৷ ছাদে ঢুকে ভালোভাবে খুঁজতে লাগলো৷ হঠাৎ মিরহা ফারজাদ বলে চিৎকার করে ফ্লোরে বসে পরলো৷
‘ছাদের একদম সাইডে পরে আছে ফারজাদের দেহ। মিরহার মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ‘দেহে প্রাণ আছে তো?’
কয়েকজন ধরাধরি করে দ্রুত হোটেলে রুমে নিয়ে গেলো। সারারাত বৃষ্টিতে ভিজেছে। যার ফলে জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। মিরহা হোটেল বয়কে দিয়ে প্রয়োজনীয় মেডিসিন আনালো। সাথে গরম পানি আর তোয়ালে। বাকিদের রুম থেকে চলে যেতে ইশারা করলো। আস্তে আস্তে ফারজাদের পোশাক খুলে তার শরীর ভালো করে মুছিয়ে দিলো৷ কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদু স্বরে ডাকলো, ‘ফারজাদ শুনতে পাচ্ছো আমাকে? চোখ খুলো ফারজাদ।’
ফারজাদের সাড়াশব্দ পেলে না৷ কোলে তুলে নিলো ফারজাদের মাথা। ভালো করে মাথা মুছিয়ে দিলো। বালিশে শুইয়ে দিলো আলগোছে। আস্তে করে বেড ছেড়ে উঠতে চাইলে ফারজাদ হাত চেপে ধরলো মিরহার৷
মৃদু স্বরে বললো, ‘তুমিও ছেড়ে চলে যাবে? তোমরা মেয়েরা এমন কেনো! এতো ভালোবাসার পরেও কেমন করে নিষ্ঠুর ভাবে ছেড়ে যাও?’
‘আমি কোথাও যাচ্ছি না৷ আপনি ঠিক আছেন মিস্টার ফারজাদ?
আধো আধো বুলিতে ফারজাদ আওড়ালো, ‘আমি ঠিক নেই। জানো মাহি আমাকে ছেড়ে চলে গেলো৷ তুমি কি বলতে পারবে যাকেই ভালোবাসি সে আমাকে কেনো ছেড়ে যায়।’
‘চোখ খুলুন মিস্টার ফারজাদ। মাহি কে? কি বলছেন আপনি?
‘মাহি ছিলো আমার বেস্টফ্রেন্ড ছোট বেলার খেলার সাথী। বড় হওয়ার সাথে সাথে তার প্রতি অনূভুতি গাঢ় হতে থাকে। জানো ওর যা নোটস লাগতো সব আমি করে দিতাম৷ নিজের এসাইনমেন্ট না লিখে ওরটা লিখে দিতাম। সবাই বলতো মাহি তোকে ছেড়ে দেবে। একবার ভার্সিটিতে ভর্তি হোক, তোকে ও রাখবে না। আমি না ওদের কারো কথা বিশ্বাস করিনি। জানো অবশেষে দেখলাম আমার প্রিয়া বেইমান। সে আমাকে ছেড়ে গেলো। তার রিলেশন হলো ভার্সিটির সিনিয়রের সাথে৷ আমার কি দোষ ছিলো— বলো না? ঘৃণা করি মেয়েদের আমি।’
মিরহার মনের আকাশ যেনো মূহুর্তে কালো মেঘে ছেয়ে গেলো। তারমানে এরজন্য তুমি আমাকে ভালোবাসো না! সে মেঘের তোড়জোড়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো ফারজাদের মুখশ্রীতে। পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো। আলতো করে জড়িয়ে ধরলো মিরহার কোমর। মুখে গুঁজে দিলে মিরহার কোমরে৷ মিরহা কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, ‘ছাড়ুন আমাকে। আমি মাহি না।’
‘মাহিকে আমি চাই না। আমি তোমাকে চাই। আমার বৌপাখিকে চাই। একবার বলো না ভালোবাসো।’
মিরহা কোনমতে ফারজাদকে সোজা করে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসালো৷ স্যুপের বাটি থেকে স্যুপ নিয়ে ফারজাদের মুখে তুলে দিলো। কয়েক চামচ মুখে নিয়ে ফারজাদ মিরহার হাত চেপে ধরে টান নিয়ে নিজের কাছে টেনে নিলো৷ ফলস্বরূপ সুপের বাটি ছিটকে পরে গেলো ফ্লোরে। মিরহা আর ফারজাদ দুজনে একদম কাছাকাছি। ফারজাদের গরম নিঃশ্বাস মিরহার নিঃশ্বাসে মিশে যাচ্ছে। মিরহা বেডশিট আঁকড়ে ধরে বলে,
‘ছাড়ুন কি করছেন!’
ফারজাদ নিজের ঠোঁটের একদম কাছে নিয়ে আসলো মিরহার ঠোঁট। ফারজাদের ঠোঁটের উষ্ণতা মিরহাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে. মিরহা সরার চেষ্টা করতেই ফারজাদ আরো কাছে টেনে নিলো মিরহাকে। ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো মিরহার ঠোঁটে। শুষে নিতে থাকলো মিরহার ঠোঁট থেকে তৃপ্তি। ধীরে ধীরে ফারজাদের স্পর্শ গভীর হতে থাকলো। মিরহা চেষ্টা করেও পারছেনা সরে আসতে৷ উন্মাদ হতে লাগলো ফারজাদ।
বাহিরের ঝুম বৃষ্টি, অন্ধকার রুম এক জোড়া কপোত-কপোতী শুষে নিচ্ছে একে অপরকে। বৃষ্টির সাথে তাদের উন্মাদনা যেনো ক্রমশ বেড়ে চলেছে৷ ভালোবাসার মানুষ যখন কাছ থেকে আঁকড়ে ধরে তখন নিজেকে সামলানো যায় না। মুরুব্বিরা বলে পুরুষ মানুষ আগুনের মতো। তাদের অতি নিকটে নির্জনে এলে মেয়ে মানুষ পুড়বেই। সে যদি হয় ভালোবাসার মানুষ। তখন নিজেকে সামলানো যায় না। মিরহা অবশেষে ধরা দিলো। মিশে যেতে লাগলো একে অপরের মাঝে। এ আঁধার রাত নির্জন রুম শ্বাসের উর্ধ্বগতি সাক্ষী হয়ে রইলো এক পবিত্র মিলনের। এ মধু রাতে দুজন ভালোবাসার মানুষ মিলমিশে একাকার।

🌿ফারজাদের ঘুম ভাঙ্গলো বেশ বেলা করে। চোখে মেলে আশেপাশে তাকালো৷ সে কি বেঁচে আছে? তারপর মনে পড়ে সেদিন রাতের কথা। সে তো লাফ দিতে পারেনি। সারারাত বৃষ্টিতে বসে ছিলো। কিন্তু তারপর কি হলো? এরপর সে এখানে কি করে এলো। তার কেনো মনে হচ্ছে গতরাতে তার বাহুতে আবদ্ধ ছিলো মিরহা। এটা কি ভ্রম? ফোন হাতে নিয়ে দেখে বেলা একটা বাজে। মিরহাকে কি একবার কল করে জিজ্ঞেস করবে কাল রাতের কথা? কি হয়েছিলো কিছু মনে পরছে না কেনো! কতক্ষণ বেডে বসে থেকে উঠলো। মাথাটা ধরে আছে। হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে শাওয়ার নিলো। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে একজন হোটেল বয়কে ডাকলো।
‘স্যার আপনাকে কি ভাবে হেল্প করতে পারি?’
‘আমার সাথে কি হয়েছিলো?’
‘তা-তো বলতে পারবোনা স্যার। আমার ডিউটি সকাল আটটা থেকে। এখন যারা আছে সব ডে শিফটের। নাইট শিফটের কর্মচারীরা আসবে সন্ধ্যা ছয়টায়।’
‘তুমি বাঙালী?’
‘জ্বি স্যার৷’
‘আচ্ছা আমার জন্য কিছু মেডিসিন আর মাশরুম স্যুপ নিয়ে আসো। সাথে কড়া করে এক কাপ ব্ল্যাক কফি।’
সার্ভেন্ট চলে যাওয়ার পর। ফারজাদ আয়নার সামনে দাঁড়ালো নিজেকে কেমন অপরিচিত লাগছে! কি হয়েছে সে রাতের পর থেকে তার সাথে? কেনো কিছুই মনে আসছে না! মিরহা কি আমার মরে যাওয়ার সংবাদ শুনেও একবারের জন্যও আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেনি?

#চলবে