#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১২
খুব ভোরে মিরহা ক্যাম্পে ফিরেছে। রুমে ঢুকেই ড্রেস নিয়ে সোজা শাওয়ার নিতে ঢুকলো। শাওয়ার শেষ করে বের হতেই কিছু না খেয়ে সোজা ট্রেনিংয়ে যোগ দিলো।
‘রুমে ঢুকে ততটা খেয়াল করেনি৷ কিন্তু এখন পুস্পকে দেখছে না। মিরহা দৃষ্টি ঘুরিয়ে পুষ্পকে খুঁজলো, নাহহ আশেপাশে কোথাও নেই৷ নিজের কাজে মনোযোগ দিলো৷ তবে আজ কেনো জেনো মনের জোর পাচ্ছে না৷ মন দূর্বল হলে শরীর নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে ৷ মনের সাথে শরীরের এই অদ্ভুত কানেকশন আমাদের বারবার পরাজিত করে দেয়। মিরহা আপাতত মনের ডাকে সায় না দিয়ে লড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
‘সারারাত কান্নাকাটি করতে করতে জ্বর বাঁধিয়ে ফেলেছে পুস্প। প্রেমের বিরহে জ্বর! এ কেমন অসুখ! আচ্ছা যে মানুষটা আমাকে ভালোবাসে না।তার বিরহে জ্বর কেনো আসবে? এই উষ্ণতা তাকে পোড়াচ্ছে নাকি হৃদয়ের দহন তাকে পোড়াচ্ছে? ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না পুস্প৷ ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ভাবছে, কবি হয়ত ঠিক বলেছিলো,এক মূহুর্তে ও কারো প্রতি গভীর ভালোবাসা জন্মায়। যা সারাজীবন কারো সাথে থেকেও জন্মায় না। আচ্ছা ভালোবাসার সমীকরণ এতো জটিল কেনো? কারো সাথে পুরো জীবন কাটিয়ে দিলেও যে অনূভুতি জন্মায় না। হুট করে সে অনূভুতি কোন একজনের এক ঝলকে জাগ্রত হয়! পুস্প নিজের চোখের কোনের জলটুকু আনমনে আলতো হাতে মুছে নিলো৷ এক বিন্দু চোখের জল আঙ্গুলের ডগায় নিয়ে বলে,পৃথিবীতে তুই কি সবচেয়ে মূল্যবান! নাকি সবচেয়ে সস্তা? কেনো ঝিরছিস এমন মানুষের জন্য যে তোর মূল্য এজন্মে বুঝবে না!পুস্প মোবাইল হাতে নিলো। ব্লক করে নি একে অপরকে। পুস্প মোবাইল নিয়ে নিক নেইম মুছে দিলো৷ জিসান পুস্পকে বোকা ফুল নাম দিয়েছিলো৷ পুস্প দিয়েছিলো মাই হিরো। দুটো নিকনেইম নিজেই মুছে দিলো৷ ব্লক করতে যেয়েও করলো না৷ পুরোনো টেক্সটগুলো দেখছিলো৷ হঠাৎ নতুন টেক্সট।
“নিক নেইম মুছে ফেল্লেই কি ভালোবাসা শেষ হয়ে যায়?
‘ভালোবাসার মানুষের নাম মুছে দেয়া মানেই তো ধীরে ধীরে ভালোবাসা মুছে ফেলা৷
এরপর ভালোবাসা স্মৃতির দেয়াল হয়ে ঝুলবে। ঠিক মুছে যাওয়া তোমার দেয়া নিক নেইমের মতো।
জিসান কিছু সময় চুপ থেকে রিপ্লাই করলো, আমাকে ক্ষমা করে দিও। আসলে এর আগে যতবার ব্রেকআপ করেছি কারো জন্য গিল্টি ফিল হয়নি৷ তবে জানিনা কাল থেকে মনে হচ্ছে আমি বড় কোন ভুল করেছি।
‘আপনার কাজই কি মেয়েদের সাথে প্রেমের অভিনয় করা আর ব্রেকআপ করা?
‘টাইম পাসের জন্য করি। আর মেয়েগুলোর এমন৷
‘রুমডেট কয়টা করেছেন? আপনাদের মত ছেলেরা তো ওই পর্যন্ত যেতে পারলেই ব্রেকআপ করে৷
‘তুমি লিমিট ক্রস করছো৷ হ্যা মানছি আমি প্লেবয় কিন্তু রুমডেট করবো যার তার সাথে এতো সস্তা নই৷ মনচায় প্রেম করি। রেস্টুরেন্টে খাই তাদের গিফট করি পনেরো দিন বা একমাস চ্যাট করি। ব্যাস এরপর ব্রেকআপ।
‘বারো নারীতে অভস্ত্য পুরুষ কখনো এক নারীতে আসক্ত হতে পারে না৷ আপনি যেটাকে টাইমপাস আর ফ্যান্টাসি মনে করছেন ভবিষ্যতে আপনার স্ত্রীতে মন বসাতে পারবেন না৷
এতোই যদি টাইমপাস করার ইচ্ছে থাকে তাহলে কাটা চামুচ দিয়ে চা খাচ্ছেন না কেনো? মানুষের মন নিয়ে খেলার চেয়ে এটা বেটার৷
‘পুস্প ডাটা অফ করে মোবাইল রেখে দিলো৷
জিসান পরপর কতগুলো টেক্সট পাঠালো কিন্তু একটাও ডেলিভারি হয়নি৷। এই প্রথম নিজের কাজে অনুতপ্ত জিসান৷
🌿 মনে মনে আকাশ কুসম ভেবে নিয়ে অভিমান জমাচ্ছে ফারজাদ৷ তারমানে মিরহা আমাকে এতোটাই অপছন্দ করে! আমার বাঁচা মরায় ওর কোন কিছু যায় আসে না? আমার ভালোবাসায় না হয় ত্রুটি ছিলো কিন্তু তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে তাহলে সেই ভালোবাসা এতো সহজে হাওয়াই মিঠার মত উবে গেলো কিরে! ভালোবাসার মানুষের জীবনের চেয়ে অভিমান আর জেদটা বড়! হোটেল থেকে বের হয়ে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করলো৷ মনে মনে বললো একবার শেষ চেষ্টা করবো তোমাকে ফেরাবার এরপর আর কোনদিন ফারজাদ সিকদার তোমার সামনে দাঁড়াবে না অধিকার নিয়ে।
আচ্ছা আমি কি পারবো তোমাকে ভুলতে?তোমার জীবনে আমি ছাড়া কেউ নেই তো,?তুমিও কি মাহির মত করবে? কেনো একবার ক্ষমা করছো না আমাকে? আমি তোমাকে ভালোবাসি ভিষণ। এই যে অভিমান সরিয়ে একবার জড়িয়ে ধরতে দাও দেখবে সব অভিমান বৃষ্টির মত ঝড়ে পরছে৷ বৃষ্টির পরের সচ্ছ আকাশের মত আমাদের ভালোবাসার আকাশে রংধনু খেলা করবে। কথা বলতে বলতে বারবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে৷ হঠাৎ মনে পরলো মিরহাকে ব্লক করে দিয়েছিলো। মোবাইল নিয়ে সাথে সাথে মিরহাকে আনব্লক করলো৷ রেস্তোরাঁয় ঢুকে কিছু খেয়ে বের হলো হোটেলের উদ্দেশ্যে। চোখ আটকে গেলো ফুলের দোকানের হলুদ গোলাপ গুলোর দিকে৷ মনে পরে গেলো পুরোনো স্মৃতি……
‘হলুদ গোলাপ!
‘পছন্দ না তোমার?
‘ভিষণ। কিন্তু তুমি জানলে কি করে?
‘প্রেমিক পুরুষদের সব জানতে হয় এটা তো সামান্য তোমার পছন্দের ফুল। ফারজাদ হাঁটু মুড়ে বসে ফুলগুলো বাড়িয়ে দিয়ে বলে,আমার সব বসন্তের বাসন্তী গোলাপ হবে? আমার জীবনের প্রতিটা দিন এই স্নিগ্ধ সুভাষিত ফুলের মত সুভাষ ছড়াবে।
মিরহা ফুলগুলো হাত বাড়িয়ে নিজের হাতে নিয়ে বলে,আমি তো সাধারণ মানুষ বারোমাসি কোন ফুল না।
‘তুমি আমার বারোমাসি বাসন্তী গোলাপ তোমারে বুকপকেটে সযত্নে আগলে রাখবো তুমি আমাকে সুভাষিত করবে।
‘এই যে মিস্টার রোমিও উঠুন সবাই দেখছে।
‘দেখুক এই শহরের মানুষ জানুক কেউ একজন ভিষণ ভালোবাসে তার প্রেয়সীকে।
‘মিস্টার রোমিও ভালোবাসা গোপনে সুন্দর।
‘ফারজাদ উঠে মিরহার হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করে বলে,এ হাত কিন্তু এজন্মে ছাড়বো না৷
‘আমি এমনই একজন মানুষ চেয়েছিলাম যে হাত ধরার পর কখনো আর ছাড়বে না৷ সব পরিস্থিতিতে আমার হাতটা এভাবেই ধরে রাখবে।
‘মেরিজান এজন্মের তরে তুমি শুধুই আমার৷ আমার শ্রেয়সী আমার প্রেয়সী। পুরোনো কথা ভেবে ফারজাদ অনুতপ্ত হলো৷ মনে মনে বলে,আমি যে অভিনয় করতে করতে কখন তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি নিজেই জানিনা!আমি শতবার ফিরিয়ে দিলে আমি হাজার বার তোমার কাছেই যাবো। বেশ অনেকগুলো ফুল কিনে নিলো ফারজাদ।
‘ক্যাম্পে ফিরে ফ্রেশ হয়ে এককাপ কফি নিয়ে পুস্পর পাশে বসলো মিরহা। পুস্প তখন অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে৷
মিরহা মোবাইল হাতে নিয়ে কিছু টাইপ করছে।
‘কি লিখছিস আমার অভিমান না ভাঙ্গিয়ে?
‘শুনবি?
‘শোনা দেখি আমার চেয়ে তোর কাছে ইম্পর্ট্যান্ট জিনিসটা কি?
মিরহা পড়তে লাগলো…
“বৃষ্টির মেঘে ঢেকে গেলো আকাশ,
আজকের দিন যেন কষ্টের নেই অবকাশ।
তোমার অভাবে নীরব এই ঘর,
বৃষ্টির সুরে ভেসে ওঠে তোমার মৃদু কণ্ঠসর।
শরৎকালীন স্নিগ্ধ বাতাসও আজ ম্লান,
তোমার হাসি আলো হারালো, যেন একান্ত অভিমান।
বৃষ্টির প্রতিটি বিন্দুতে খুঁজি তোমার চিহ্ন,
তোমার অদৃশ্য উপস্থিতি যেন সূর্যাস্তের সান্ত্বনা।
প্রেমের গভীরতা আজ বৃষ্টির নিচে লুকানো,
তোমার স্মৃতি আর ভালোবাসা হৃদয়ে মেশানো।
এই বৃষ্টির রাতে, মনে রেখো প্রিয়,
তোমার অনুপস্থিতি যেন চিরকাল নিত্যসঙ্গী।”
‘কাল রাতে কই ছিলি?
‘বাসর ঘরে।
‘হোয়াট!
‘আরেহহহ ইয়ার একজন পরিচিত আত্মীয়র বাসায়।
‘সে পরিচিত আত্মীয়র নাম কি ফারজাদ?
‘তুই এসব বাদ দে জ্বর বাধিয়েছিস কেনো সেটা বল।
‘এসব তুই বুঝবি না। এ হলো বিরহের জ্বর৷
‘কিসের বিরহ?
‘জানিস জিসান আমার সাথে ব্রেকআপ করেছে। আমি এটা মানতে পারছি না৷
‘জীবনে অনেক কিছুই মেনে নিতে হয়। আমরা যা চাই তাই হবে এমন তো না?
‘এই মিরহা তোর গলার কাছে কিসের দাগ?মনে হচ্ছে কেউ কামড় দিয়েছে।
‘মিরহা হকচকিয়ে গেলো৷ কোনমতে বলে, হয়তো ইউনিফর্মের কলারের কারনে হয়তো৷
‘পুস্প খানিকটা কাছে এসে বলে,সত্যি সত্যি মধুচন্দ্রিমা করিসনি-তো!
#চলবে