#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-১৩
তোমার সমস্যা কি?কেন বারবার আমার সাথে বাজে বিহেভ করছো! ভুল করে ফেলেছি। মানুষ আমি ফেরেশতা না যে ভুল হবে না আমার দ্বারা! এখন এই ভুলের মাশুল হিসেবে তোমাকে কি দিতে হবে বলো?
‘চলে যান এখান থেকে। কেনো এসেছেন?আপনার জন্য আমার ক্যারিয়ার হুমকির মুখে।
‘আমি তোমাকে ছাড়া যাবো না৷ আমি যদি যাই তোমাকে নিয়েই যাবো।
‘ওহহহ রিয়্যালি?আমি যাবো না আপনার সাথে। ধোঁকাবাজ মানুষ কখনো ভালো হতে পারে না৷
‘আরেহহহ ইয়ার এবার তো ক্ষমা করে দাও। ভালোবাসি তোমাকে।
‘ক্ষমা করে দিয়েছে এবার আমাকে মুক্তি দিন।
‘ওয়েট তুমি আমার হোটেলের ঠিকানা জানলে কি করে!
‘কেউ নিজেই একশবার ম্যাসেজ করে জানিয়ে ছিলো সে এখানে আছে।
‘তাহলে সেদিন কেনো আসলে না?
‘কেন আসবো আপনার সাথে হানিমুন করতে এখানে আসিনি আমি৷ আমি এসেছি নিজের কাজে৷
‘ফারজাদ মিরহার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো৷ মিরহার উড়তে থাকা চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিয়ে বলে,আমার স্নোহোয়াইট কাছাকাছি আসলেই হানিমুন করতে হবে এমন কেনো মনে হয় তোমার! কাছাকাছি এসে পাশাপাশি বসে আকাশের পূর্ন চাঁদ কিংবা আকাশ ঝগড়া বৃষ্টি অথবা সমুদ্রের উত্তাল কিংবা শান্ত ঢেউ উপভোগ করা যায় না বুঝি? মন না ছুঁয়ে শরীর ছোঁয়ায় তৃপ্তি আছে নাকি!
‘দেখুন একদম আমার এখন আপনার এইসব সহ্য করার মুড নাই৷
‘কি সব?
‘আপনি যা সব করছেন।
‘তোমার হয়তো ক্ষুদা পেয়েছে৷ ওয়েট খাবার অর্ডার করি৷
‘আপনাকে কে বললোে?
‘পেট খালি থাকলে মানুষের রাগ বেশি থাকে৷
‘দেখুন।
‘ফারজাদ মিরহাকে নিজের কোলে বসিয়ে বলে,কি দেখাবে বৌ দেখার জন্য অপেক্ষা করছি তো৷
‘ছাড়ুন আমাকে।
‘ছাড়বো বলে তো ধরিনি। জান সব সময় কি এক থ্রিপিস আর টিশার্ট পরো। তোমারে এখনো শাড়ি পরা দেখিনি একবার শাড়ি পরবে আমার জন্য?
‘আপনি জানেন আমার হাত কিন্তু পাকা৷ ছাড়ুন আমাকে।
‘ফারজাদ মিরহার নাকে চুমু খেয়ে বলে,কেউ রাগলে যে তাকে এতো মোহনীয় লাগতে পারে আমি কল্পনাও করিনি৷ উফফ ইচ্ছে করছে টুপ করে খেয়ে ফেলি মাই ডিয়ার ওয়াইফী।
‘মিরহা চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিচ্ছে৷ গতকাল রাতের কথা মনে পরতেই কেমন একরাশ লজ্জা এসে ঘিরে ধরেছে। চেহারার বর্ণ পরিবর্তন হচ্ছে হাজ্জা এসে ভর করছে মুখশ্রীতে। অনূভুতিগুলো মাথা চাড়া দিচ্ছে। এলোমেলো হতে ইচ্ছে করছে। নিজেকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করছে৷
‘ফারজাদ মিরহার পিঠের চুল সরিয়ে পিঠে ছোট করে চুমু দিয়ে বলে,বৌ রাগ ছেড়ে দাও না৷ আমি তোমারে খুব ভালোবাসবো আগলে রাখবো। ও বৌ বৌ একটু তো আমার উপর দয়া করো।
‘মিরহা সরে আসতে চাইছি কিন্তু সে যেনো নিজের সাথে পারছে না৷
‘হঠাৎ ফারজাদ বলে, এই তোমার গলায় কিসের দাগ এটা?
‘মিরহা হকচকিয়ে যায়। ইতস্তত ছড়িয়ে পরে কোনমতে সামলে নিয়ে বলে,কই কিছু নাতো।
‘উঁহু মনে হচ্ছে কেউ কামড় দিয়েছে। তোমাদের ট্রেনিং কি কামড়া কামড়ি হয়।
‘মিরহা সরে গেলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, প্লিজ চলে যান আমাকে আমার কাজটা করতে দেন।
‘হ্যা চলে যাবো আগে বলো এই দাগটা কিসের? তোমার জীবনে আমার দ্বিতীয় পুরুষ মানুষটা কি?
‘মিরহা যেনো আকাশ থেকে পরলো। অদ্ভুত দৃষ্টিতে ফারজাদের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,আপনার মত মানুষ কখনো ভালো চিন্তা করতে পারে না।
‘ফারজাদ মিরহার দুই বাহু ধরে নিজের দিকে এনে বলে,তোমাকে বলতে হবে। আমি তোমার হ্যাসবেন্ড এই তোমার তুমিটার উপর একমাত্র আমার অধিকার একমাত্র আমার৷ কারো ছাঁয়া পরতে দেবো না তোমার উপর৷
‘ছাড়ুন আমাকে আমার ঘৃণা হচ্ছে আপনার মত একজন মানুষ আমাকে টাচ করেছে ছাড়ুন।
‘ফারজাদ মিরহাকে ছুড়ে মারলো। বেডের কোনায় মাথাটা লেগে কেটে রক্ত ঝড়তে থাকে৷ মিরহার গায়ের ওড়নাটা ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। নিজেকে সংযাত করে মিরহার কাছে গেলো হাঁটু মুড়ে বসে বলে জান।
‘মিরহা নিজেকে গুটিয়ে নিলো৷ ভীত নয়নে ফারজাদের দিকে তাকিয়ে বলে, প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন আমাকে যেতে দিন।
‘ফারজাদ মিরহাকে জড়িয়ে ধরে বলে জান আমাকে তুমি ভয় পাচ্ছো কেনো? আমি তোমার ফারজাদ জান আমার প্লিজ শান্ত হও।
‘মিরহা ফুপিয়ে কেঁদে বলে,আমাকে যেতে দিন প্লিজ৷
‘ফারজাদ উঠে ফাস্টএইড বক্স খুঁজতে লাগলো।
মিরহা ওড়না উঠিয়ে দরজা খুলে চলে গেলো৷ রাত তখন দশটা বাজে৷
‘ফারজাদ রুম থেকে বের হতে হতে মিরহা লিফটে উঠে গেছে। সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে দেখে মিরহা গাড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছে। মিরহার কপাল বেয়ে রক্ত ছড়ছে৷ মিরহা রক্তে হাত দিয়ে চেপে ধরে ড্রাইভারকে বলে, একটা ফার্মেসির সামনে থামতে।
‘ফারজাদ মিরহার পিছু পিছু নিচ পর্যন্ত এসেও মিরহাকে পেলো না৷ দ্রুত চাবি জমা দিতে যায়।
‘সেখানে থাকা সার্ভেন্ট ফারজাদকে দেখে জিজ্ঞেস করে এখন আপনার কি অবস্থা স্যার? সেদিন আপনার ওয়াইফ না আসলে হয়তো আপনার সাথে বাজে কিছু হতে পারতো।
‘আমার ওয়াইফ!
‘হ্যা স্যার ম্যাম এসেই তো আপনাকে খুঁজে বের করেছে। আপনি অচেতন অবস্থায় ছিলেন৷ সে নিজেই সারারাত আপনাকে সেবা করেছে।
‘ফারজাদ চাবি জমা দিয়ে দ্রুত বের হলো৷
‘মনে মনে বলে আমি আবার ভুল করলাম?তোমাকে ফিরে পাওয়ার শেষ সম্ভবনাও আমি নিজের হাতে মেরে ফেললাম!
গাড়ি নিয়ে রাস্তায় খুঁজতে খুঁজতে যাচ্ছে। নাহহ মিরহাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না৷
‘ কপালে ব্যান্ডেজ করে ক্যাম্পে ফিরলো মিরহা।
‘ক্যাপন্টেন শিউলি বললো, মিরহা তোমার কপালে কি হয়েছে?
‘তেমন কিছু না সামান্য একটা এক্সিডেন্ট।
‘তুমি এভাবে একা একা বের হও কেনো?এরপর বের হলে সাথে অন্য কাউকে নিয়ে বের হবে।
‘জ্বি ম্যাম।
‘যাও রেস্ট নাও।
‘মিরহা নিজের রুমে এসে বেডে শুয়ে পরলো৷ বালিশে মুখ গুঁজে বোবা কান্না করছে। কপাল বেয়ে অশ্রু ঝড়তে অথচ সে কান্নার শব্দ হতে পারবে না৷
‘হঠাৎ পুস্প মিরহার গায়ে হাত রেখে বলে,কি হয়েছে তোর?
‘মিরাজ পুস্পকে জড়িয়ে ধরে বলে,আমি কোনদিন ওর কাছে ফিরবো না কোনদিন ও না।
‘কি হয়েছে বল আমাকে৷ হঠাৎ মিরহার দিকে খেয়াল করে বলে,কি করেছে তোকে ফারজাদ? তোর এই আঘাত ও দিয়েছে? উত্তর দে।
‘মিরহা চুপ করে রইলো৷
‘তা ট্রেনিংয়ে এতো কিছু শিখে কি লাভ হলো? ওই ছেলে তোর মাথা ফাটিয়ে দিলো আর তুই কান্না করতে করতে চলে আসলি!তুই নাক ফাটিয়ে দিতে পারলি না।
‘আমি কি পারতাম সেটা তো তুই জানিস৷ কিন্তু মানুষটা আমার স্বামী। আমি মানি বা না মানি এটাই তো সত্য। তার গায়ে আমি কি করে হাত তুলতাম?
‘কাঁদিস না। গাধাটা আমার আসলে গলে যাস না।এতো সহজে আর এবার পাত্তা দিবি না।
‘মিরহা নিম্ন স্বরে বললো,আমাকে একটু একা থাকতে দে?
‘আচ্ছা দিবো তবে কান্না করতে পারবি না৷ যে মানুষ তোর কদর করতর জানেনা তারজন্য কিসের কান্না!
‘আচ্ছা কান্না করবো না।
‘ফারজাদ মিরহার ক্যাম্প পর্যন্ত এসেছে৷ কিন্তু এখানে দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না৷ পাহারাদাররা তাকে আস্ত রাখবে না। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মিরহাকে কল করলো। রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না। ফারজাদ গাড়ি নিয়ে হোটেল ব্যাক করলো৷ মিরহার ফোনটা তার হোটেল রুমে পরে আছে৷
ফারজাদ সেটা উঠিয়ে হাতে নিয়ে ওয়াল পেপারের পিকেটার দিকে তাকিয়ে রইলো৷ লাল পার সাদা শাড়ি পরা মিরহার পিক৷ ফারজাদের মনে পরলো এই শাড়ীটা সেই কিনে দিয়েছিলো মিরহার বার্থডেতে কিন্তু এরপর কোনদিন তাকে শাড়ি পরার আবদার করেনি৷ হঠাৎ বসে পরলো বেডে ভাবতে লাগলো গত রাতের কথা।
#চলবে