#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৪
গত এক সপ্তাহ ধরে মিরহার সাথে কোন রকম যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়নি ফরজাদ। অনেক চেষ্টা করেও কোন কাজ হয়নি৷ নিজের প্রতি নিজের রাগ যেন বেড়েই চলেছে ফারজাদের। কিভাবে সে এতোটা নিচে নামতে পারলো শেষে কিনা নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর গায়ে হাত তুললো! মেয়েটা তাকে এখনো কতটা ভালোবাসে। আর আমি বারবার তাকে আঘাত করেই যাচ্ছে। আমি তোমার যোগ্য না মিরহা। কোন ভাবেই না। আমি নিজেকে তোমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেবো৷ আমার ছায়া তোমার উপর পড়তে দেবো না। আজকের দিনটাই এই শহরে আছি আগামীকাল আমার ফ্লাইট তারপর চলে যাবো তোমাকে ছেড়ে বহুদূরে জানিনা আর কোনদিন তোমার সাথে দেখা হবে কিনা৷ আরেকটা বার তোমার মুখশ্রী দেখার সৌভাগ্য হবে কিনা?ভালো থেকো যেখানেই থাকো আমার বৌপ্রিয়া। আমি তোমার হতভাগ্য স্বামী। বেলকনিতে দোলনায় বসে মোবাইলে মিউজিক অন করলো….
না রাখা কিছু কথা
সময়েরই ঝড়া পাতা
দিয়ে যায় শুধু ব্যাথা এ বুকে
থেমে যাওয়া সেই গানে, জমে থাকা অভিমানে
বৃষ্টি থামে না দু-চোখে।
ও মন কাঁদরে কাঁদেরে কাঁদেরে
স্মৃতি ভোলে না
আয়না মন ভাঙ্গা আয়না
যায় না স্মৃতি ভোলা যায় না
সয় না এই ব্যাথা যে প্রাণে সয়না।
যত চাই ভুলে যেতে
মন চায় ব্যথা পেতে
তাই বুঝি মন তাকে বলে না।
নিভে যাওয়া আলো ছাঁয়া
ছিলো যদি মিছে মায়া
বৃষ্টি কেন তা বলে না
ও মন কাঁদরে কাঁদেরে কাঁদেরে
স্মৃতি ভোলে না ………
ফারজাদের ধ্যান ভাঙ্গলো মেসেঞ্জারের নোটিফিকেশনের টোনে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে রাহার ম্যাসেজ।
‘আই লাই ইউ সো সো মাচ। তুমি আমার হলেও আমি তোমায় ভালোবাসি তুমি আমার না হলেও আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসবো। দেবদাস যেমন সারাজীবন বিয়ে না করে ধুঁকে ধুঁকে মরেছে ঠিক তোমার বিরহে রাহা সেভাবেই মরবে৷
‘ ফারজাদ কোন রিপ্লাই করলো না৷ মোবাইল রেখে দিলো টেবিলের উপর। আবারও দৃষ্টি স্থীর করলো আকাশের বিশালতায়।
‘সেদিন পর প্রায় একটা সপ্তাহ কেটে গেছে ফারজাদের সামনে কোন যোগাযোগ করেনি মিরহা। মিরহা বারান্দায় বসে চা খাচ্ছে।
‘পুস্প বলে,তুই কি দুলাভাইয়ের কোন খোঁজ নিবি না? বেচারা প্রতিদিন তিন চারবার ক্যাম্পের আশেপাশে চক্কর দেয়।
‘কোন জিনিস ছাড়তে চাইলে সে জিনিসের উপর থেকে মায়া ত্যাগ করা শিখতে হয়। নয়তো সেটা আমাদের জন্য ক্ষতিকারক জেনেও আমরা তা ত্যাগ করতে পারি না। যেমন, নিকোটিন। যারা খাচ্ছে তারা প্রত্যেকেই জানে এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক তবুও খাচ্ছে।
‘তুই ছাড়তে পারবি তাকে?
‘ছেড়ে দিয়েছি, ছাড়তে পারবো আবার কি?
‘পারবি দুলাভাই কে একেবারের জন্য ভুলে যেতে?
‘ভুলে যাওয়া সহজ নাকি? আমি তো তাকে ভোলার বিন্দু মাত্র চেষ্টা ও করবো না। সে হৃদয়ে আছে হৃদয়ে থাকুক। স্মৃতির সৌধ হয়ে। তাকে মনে পড়ুক বেলা, অবেলায় আনমনে। কখনো হাসি ফুটুক তার স্মৃতি মনে পরে কখনো অশ্রু ঝরুক।
‘একবার ক্ষমা করে সুযোগ দিয়ে দেখ। মানুষ মাত্রই তো ভুল!
‘দেখ যে মানুষটার আগাগোড়া পুরোটাই মিথ্যে আর অভিনয়ে ঘেরা সেই মানুষটাকে আমি দ্বিতীয় সুযোগ দিতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু সে তো আমাকে অবিশ্বাস করে। সারাজীবন একসাথে থাকতে হলে ভালোবাসার চেয়েও বিশ্বাস, ভরসার প্রয়োজন বেশি। ভালোবাসা কয়দিন স্থায়ী হয় যদি ভরসা আর বিশ্বাস না থাকে?
‘ভাইয়া তো অবিশ্বাস করেছে? কি নিয়ে?
‘কিছু কথা, কিছু ব্যথা একান্ত ব্যাক্তিগত সেই ব্যাথা আর কথা কখনো প্রকাশ করতে নেই।
‘কি বলবো বুঝতে পারছি না। তবে জিসান আমার কাছে ক্ষমা চাইলে আমি ওকে ক্ষমা করে দিতাম।আমার কাছে মনে হয় ভালোবাসার মানুষকে আগলে রাখার সুযোগ পেলে নিজের সর্বস্ব দিয়ে আগলে রাখা উচিৎ।
‘নিজের সর্বস্ব দিয়ে আগলে রাখতে যেয়ে নিজের ব্যাক্তিত্ব বিসর্জন দিতে নেই৷
🌿 বেডে আধশোয়া হয়ে মিরহার ফোনের ওয়ালপেপার দেখছে বারবার৷ আগে অবশ্য মিরহার ফোনের পাসওয়ার্ড জানা ছিলো ফারজাদের। একবার সেটা দিয়ে চেষ্টা করতেই সাথে সাথে খুলে গেলো! ফারজাদ বেশ অবাক হলো কতখানি ভালোবাসে মিরহা তাকে!এখনও পাসওয়ার্ড পর্যন্ত চেঞ্জ করেনি৷ ফোনের গ্যালারি ঘাটতেই আরো অবাক হলো ফারজাদ তার অনেকগুলো পিক৷ আবার দুজনের কিছু সুন্দর মূহুর্তের পিক ক্যাপচার করা। একটা পিকে চোখ আটকে গেলো। পিকটা ক্যাপচার করেছিলো ইয়াদ। ফারজাদ মিরহার মাথায় ওড়ানা তুলে দিচ্ছে। ফারজাদের মনে পরলো সেদিনের কথা।…..
বাসন্তী রংয়ের থ্রিপিস পরে এসেছিল সেদিন মিরহা। হাত ভর্তি মেহেদী।
‘আজকে তোমাকে একদম বৌ বৌ লাগছে জান৷ কি গো খবর কি আমার আমাকে ফাঁকি দেয়ার পথ খুঁজেছো নাকি?
‘হুম তোমাকে ফাঁকি দিয়ে একদিন তোমার বাড়ির তোমার মায়ের একমাত্র ছেলের বৌ হবো৷
‘এই সামনে আসো তো।
‘মিরহা খানিকটা সামনে এগিয়ে আসলো৷
‘আরো কাছে?
‘আজ কি হলো তোমার? নিজের ঠোঁটের ভার্জিনিটি নষ্ট করতে চাইছো?
‘সামনে আসো আরেকটু এরপর দেখো কি করি। ভয় পাচ্ছো আমাকে?
‘তোমাকে ভয় কেন পাবো!তোমার কাছে নিজেকে নিরাপদ মনে না হলে ভালোবাসতাম নাকি!
‘তো কাছে আসো৷
‘মিরহা একদম কাছাকাছি চলে আসলো। ফারজাদ মিরহার ওড়নাটা ঘোমটার মত তুলে দিলে মিরহার মাথায়। আলতো করে চুমু খেলো মিরহার কপালে৷ চুমু খেয়ে কিছুটা সরে দাঁড়ালো।হঠাৎ করে কি হলো চুমু কেন খেলাম? এই মেয়েটা আমাকে কেমন চুম্বকের মত টানে। এমন চলতে থাকলে রাফিনকে দেয়া কথা আমি রাখতে পারবো না।
‘মিরহা ফারজাদের টেনশনে ভরা মুখটা দেখে বলে,কিগো চুমু খেয়ে নিজের ঠোঁটের ভার্জিনিটি নষ্ট করে এখন আফসোস হচ্ছে বুঝি?
‘তোমারে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন, সে জানে তোমারে ভোলা কি কঠিন।
‘বুদ্বু এতো সুন্দর রোমান্টিক মোমেন্টে কেউ এমন বিরহের কবিতা বলে!
‘তুমি তো আমার বিরহ।
‘উঁহু আমি তোমার সুখ।
‘আহাগো বৌজান৷ ছবিটার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো৷ চোখ বন্ধ করে বলে,এই যে দুনিয়ায় আমার মত কিছু বোকা মানুষ আছে, যারা ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারে না৷ ভালোবাসে অথচ বোঝাতে পারে না৷ তারা জানে সেই অপ্রকাশিত ভালোবাসা কতটা পোড়ায় তাদের। আমি তোমাকে পাগলের মত ভালোবাসি তাই বারবার পাগলামি করে ফেলি। আমার এই তোমাকে নিয়ে ওভার পজেসিভ হওয়াটাই তোমাকে আমার কাছ থেকে বহু দূরে নিয়ে গেলো৷
মোবাইলটা বুকের সাথে চেপে রাখলো।
🌿জিসান এক সপ্তাহ ধরে কারো সাথে কন্টাক্ট করতে পারেনি। কোন মেয়ের টেক্সটের রিপ্লাই করেনি মন মরা হয়ে বসে আছে সোফায়৷
‘আইরিন এসে বলে,কিরে অবশেষে মনে হচ্ছে তোকে কেউ ছ্যাকাটা দিতে পারলো। এবার বল আমি ছ্যাকা খাইনা ছ্যাকা দেই।
‘জিসান কোন উত্তর দিলো না। নির্বাক ভঙ্গিতে বসে রইলো একি ভাবে।
‘কিরে তোর হয়েছে টা কি সত্যি সত্যি ছ্যাকা খাসনি তো?মাথায় হাত দিয়ে বলে জ্বরও তো নেই। কেস কি বল আমাকে?
‘আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি।কিন্তু আমি কনফিউজড আসলেই আমি ভালোবাসি কিনা?
‘কনফিউজড মানে?
‘মানে আমি আজ পর্যন্ত কম করে হলেও দেড়শ প্রেম করেছি। হঠাৎ কারো সাথে এক সপ্তাহ প্রেম করে তাকে ভালোবেসে ফেললাম! এটা কি সম্ভব? তাও মেয়েটা আমার চেয়ে এক বছরের বড়।
‘আরেহহহ বাহহহ আমার ভাই প্রেমে পরেছে তাও সিনিয়র কারো৷ ভালোই হয়েছে উঠতে বসতে তোকে দুই চারটা থাপ্পড় লাগাবে।
‘সিনিয়র প্রেমিকারা প্রেমিকের গায়ে হাত তোলে?
‘হাত তুলবে না কেন? হাত তো তুলবেই অন্যায় করলেই মাইর।
‘আর যদি সেনাবাহিনী জব করে তাহলে?
‘হোয়াট? তুই আর মিরহা? মিরহা এটা শুনলে তোকে শুটকি বানিয়ে রোদে শোকাতে দেবে।
#চলবে