সে আমার বৌপ্রিয়া পর্ব-১৫

0
65

#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৫

আজ রাত নয়টার ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করবে ফারজাদ।
এর আগে মিরহার মুখটা একবার দেখার তীব্র ইচ্ছে। যদিও সেটার চান্স নেও তবুও মনে মনে ভাবছে হুট করে যদি কোন মিরাকেল হয়ে যেতো! মিরহার ফোনটা ঘাটতে ঘাটতে সিডনির রাস্তায় ঘুরাঘুরি করছে৷ হঠাৎ করে কল আসলো সাথে সাথে রিসিভ করলে ফারজাদ। হ্যালো?
‘কে তুমি? গম্ভীর কন্ঠে কে তুমি শুনে ফারজাদ মোবাইলের স্কিনে তাকালো৷ ওত্তেরি এটা তো মিরহার ফোন৷ সাথে সাথে কল কেটে দিলো৷
‘শিরিন বেগম আবার কল করলেন৷ বার কয়েক কল করার পর আর কল ঢুকছে না৷ শিরিন বেগম আইরিনকে ডাকলেন।
‘কি হইছে ফুপ্পি?
‘চার পাঁচদিন ধরে মিরহার কোন খোঁজ নেই। একটু আগে কল দিলাম মনে হলো একটা ছেলে রিসিভ করেছে৷ আমি জিজ্ঞেস করলাম কে? এরপর আর কোন উত্তর না দিয়ে কল কেটে দিলো এখন কল করছি ঢুকছে না।
‘আচ্ছা আমি ট্রাই করছি৷ ফুপ্পি, লাইনে নেই হয়তো ট্রেনিংয়ে পরে ফ্রী হয়ে কল করবে দেইখো৷

ফারজাদ বেশ কিছু সময় ঘোরাঘুরি করে আবার ফিরে আসলো সেই ক্যাম্পের সামনে। সামনের জায়গাটা বেশ মনোরম। অনেকেই এদিকে ঘুরতে আসে৷ ফারজাদ মিরহার ফোন ওপেন করে পুষ্পকে ম্যাসেজ করলো।
‘আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো শ্যালিকা? আমার বৌ টাকে একটু আমার কাছে পাঠাতে পারবে? আজ রাতে আমার ফ্লাইট আমি চলে যাচ্ছি৷ প্লিজ বলো আমার সাথে শেষ বারের জন্য একবার দেখা করতে আমি ওর ফোনটা ওকে ফেরত দিতে চাই।
‘ম্যাসেজ সেন্ড করে এক ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছে রিপ্লাইয়ের। নাহহ ওপাশ থেকে কোন রিপ্লাই আসছে না৷ আরো ঘন্টা খানেক পর রিপ্লাই আসলো।
‘পুস্প ট্রেনিং থেকে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে ডাটা অন করতেই দেখে লাগাতার কতগুলো টেক্সট।
পুস্প রিপ্লাই করলো ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ভাইয়া৷ আমি বলব আপনার বৌকে। তবে রাগের লেভেল হাই মানবে কি না সেটা শিউর না৷
‘রিপ্লাই পেয়ে দ্রুত আবার টেক্সট করলো ফারজাদ।
ডিয়ার শ্যালিকা বিগ ট্রিট দেবো প্লিজ কোনভাবে ম্যানেজ করে পাঠাও৷
‘ওকে আমি চেষ্টা করে দেখছি৷ পুস্প মিরহার বেডে এসে বসলো। এরপর মিরহাকে বলে,এই তোর ফোনটা দে তো একটা নাম্বার উঠাবো।
‘তুই তো জানিস আমার ফোনটা ওই ব্যাডার কাছে ফেলে এসেছি।
‘ওই ব্যাডা আবার কে?
‘চিনিস না বুঝি?
‘নাহহ আমি তো কোন ওই ব্যাডারে চিনিনা।
‘ফারজাদ সিকদার।
‘আচ্ছা ফুলসজ্জার রাতে দুলাভাইয়ের রুমে রেখে এসেছিস।
ভাইয়ার তো আজ রাতে ফ্লাইট, তো তোর মোবাইল আনবি না?
‘তোকে কে বলল?
‘যে বলার সে বলছে।
‘মিথ্যেবাদী মানুষের কথা আমি বিশ্বাস করি না।
‘চোখে দেখলে তো বিশ্বাস করবি? এই দেখ। ফারজাদের বিমানের টিকিট দেখালো পুস্প। এবার বল কি করবি?
‘প্লিজ আমার ফোনটা তুই যেয়ে এনে দিবি?
‘আমার তো সন্ধ্যা থেকে ডিউটি আছে।নয়তো এনে দিতাম।
‘তাহলে বল মোবাইল যেনো রিসিপশনে রেখে যায়।
‘ ভাইয়া বলেছে তোকে যেয়ে নিয়ে আসতে৷
‘লাগবে না আমার মোবাইল। তাকে বলিস রান্না করে খেয়ে ফেলতে।
‘তুই এমন কেন!যাহহ যেয়ে মোবাইল নিয়ে আয়। এতো ভয় কিসের? নাকি গলে যাবি চোখের সামনে গেলে এরজন্য ভয় পাচ্ছিস সামনাসামনি হতে?
‘আমি আর ভয়! আমি নিজেই যেয়ে নিয়ে আসবো৷
‘জানিস কালকে ওই ছেলেটা আমাকে নক দিয়েছিলো।
‘কোন ছেলেটা।
‘আরেহহহ জিসান।
‘আবার ফ্লার্ট করছে তোর সাথে?
‘আরেহহহ শুনবি তো৷ হটাৎ করে বলে, আচ্ছা সিনিয়র, জুনিয়র প্রেম হলে মারামারি হয়?আমি বললাম হোয়াট?
ছেলেটা বলে না মানে যদি প্রেমিক জুনিয়র আর প্রেমিকা সিনিয়র হয় তাহলে কি প্রেমিকা প্রেমিককে মারধর করে?
‘মিরহা হেসে বলে, তুই বলতি মারে মানে একদম মেরে হাড্ডি গুড়ো করে দেয়।
‘আমি আর রিপ্লাই করিনি।তোর থিওরি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি৷ কোনভাবেই বিপথে মায়া বাড়ানো যাবে না৷ কিন্তু ছেলেটাকে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছিলাম। দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় সমস্যা সত্যি সত্যি ভালোবাসা৷ এই সত্যি সত্যি ভালোবাসলেও বিশাল বড় একটা বাঁশ খেতে হয়।
‘আপনাকে ধন্যবাদ ম্যাম এবার আমাকে বের হতে হবে আপনি স্থান পরিবর্তন করুন আমি রেডি হবো।
‘এই শাড়ী পরবি? আমি একটা শাড়ি এনেছিলাম রয়েল ব্লু কালারের। একটা ছ্যাকা দিয়ে আয় শেষ বারের মত।
‘মানে?
‘মানে তুই তো আরও তার কাছে ফিরবি না। তাই সুন্দর করে সেজে যা৷ এরপর সারাজীবন আফসোস করবে সে কি হারালো।
‘আমি রেডি হই তুই শাড়ি নিয়ে আয় দেখি। পছন্দ হলে পরবো।
‘আচ্ছা৷ বলে পুস্প নিজের বেডের কাছে আসলো। মোবাইল নিয়ে ফারজাদকে টেক্সট করলো৷ কাজ হয়ে গেছে দুলাভাই। ট্রিট কিন্তু পাওনা রইলো।
‘ডাবল ট্রিট দেবো শ্যালিকা। তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেবো।
‘ধন্যবাদ দিতে হবে না আমার জন্য একটা কিউট ভাগ্নি আনার ব্যবস্থা করুন।
‘ফারজাদ টেক্সটা দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলো! যার সাথে সাপে নেউলে সম্পর্ক হাত টাচ করলেই ছোবল মারে আবার ছেলে মেয়ে৷কিছুক্ষণ পর ফারজাদ টেক্সট দিলো৷ আগে কথা বলি ওই সাহস হোক এরপরের চিন্তা পরে৷
‘আহা দুলাভাই এমন ভাব করছেন যেনো আপনাদের মধ্যে কিছুই হয়নি!আপনারা যে তলে তলে হানিমুন সেরে ফেলেছেন সব খবর জানা আছে৷ টেক্সট করছিলো পুস্প এমন সময় মিরহা বলে শাড়ি আনতে কি করাচী যাচ্ছিস?
‘এই রে এক্ষুনি দিচ্ছি৷ বলেই কাভার্ড থেকে শাড়ি আর ব্লাউজ, পেটিকোট বের করে দিলো৷ সাথে ম্যাচিং ঝুমকো আর চুড়ি।
‘কিরে এতোকিছু সাথে করে কি মনে করে নিয়ে এসেছিস?
‘সেসব পরে বলবো এবার যা রেডি হয়ে বের হ। ভাইয়ার ফ্লাইট ন’টায়৷
‘মিরহা কথা না বাড়িয়ে শাড়ি নিয়ে চলে আসলো। রেডি হয়ে ক্যাপটেনের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বের হলো। সিডনি শহরের সৌন্দর্য বেশ উপভোগ্য।পূর্বে তাসমান সাগর, পশ্চিমে পর্বতমালা। পাহাড় আর সাগরের কম্বিনেশনে বেশ পর্যটন কেন্দ্রিক সিডনি শহরটা। তাসমান সমুদ্র থেকে বেশি দূরে নয় ফারজাদের হোটেল। মিরহার পৌঁছাতে পৌঁছাতে পাঁচটা ছাড়িয়ে গেছে।
‘ফারজাদ বেলকনিতে বসে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ দেখতে ব্যস্ত দরজা লক করেনি সে জানে মিরহা আসছে৷
মিরহা দরজা খোলা পেয়ে ঢুকে পরলো৷ পুরো রুম জুড়ে ছড়িয়ে আছে হলুদ আর লাল গোলাপের পাপড়ি। রুমের বিভিন্ন জায়গায় সোভা পাচ্ছে সাদা,হলুদ,লাল রঙের গোলাপের বুকে। মিরহা বেশ মুগ্ধ হলো। ফুল তার মধ্যে হলুদ গোলাপ সবচেয়ে বেশি পছন্দ। রুমটা থেকে চোখ সরানো সম্ভব হচ্ছে না মিরহার। মনে হচ্ছে কোন ফুলের রাজ্যে চলে এসেছে সে। ফুলোর সৌরভে রুমটা সুরভিত। গুটি গুটি পা ফেলে একটু সামনে এগিয়ে এদিক সেদিক উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। নাহহ কাউকে দেখতে পাচ্ছে না৷ মিরহা বেডের উপর এসে বসলো। পুরো বেডে হলুদ গোলাপের পাপড়ি বেছানো মাঝখানে লাল গোলাপ দিয়ে স্যরি লেখা। মাঝ খানে ক্যাটবেরী চকলেট রাখা। মিরহার ইচ্ছে করছে এই ফুলের রাজ্যে হারিয়ে যেতে। মনে মনে ভাবলো ফোনটা থাকলে এই সুন্দর মূহুর্ত ক্যাপচার করা যেতো। হঠাৎ করে ফারজাদের একটা ডাকে মিরহার শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেলো।
‘বৌপ্রিয়া শুনছো? পরপর দুইবার ফারজাদ ডাকলো।
‘মিরহা নিজের শাড়ি আঁকড়ে ধরলো কি আছে এই সামান্য ডাকে! এই একটা ডাক আমাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে কেন! মিরহার ভাবনার দেয়াল ভেদ করে আবার কানে আসলো ফারজাদের ডাক।
‘ কি গো বৌপ্রিয়া শুনবে না? বৌ কথা কও, বৌ কথা কও।
‘এ কেমন অনুভূতি এ কেমন অদ্ভুত এক ভালোলাগা অদ্ভুত এক শিহরণ ঘিরে ফেলছে তাকে!
#চলবে