#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৬
ফুলে ফুলে সজ্জিত সুরভিত রুমে দুজন কপোত-কপোতীর নিস্তব্ধতা ছেঁয়ে আছে। একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। কি দেখছে একজন আরেকজনের চোখে! আচ্ছা চোখের কি কোন ভাষা থাকে? হয়তো থাকে তাই পড়ার চেষ্টা করছে একে অপরকে। নিরবতা ভেদ করে ফারজাদ বলে উঠলো,বৌজান হয়তো আমার আগাগোড়া মিথ্যায় মোড়ানো তবে এই শত শত মিথ্যের মাঝে একটা কথা সত্য, সেটা হলো আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি শুধু তোমার। ফারজাদ মিরহাকে হুট করে কোলে তুলে নিলো৷ মিরহা চোখ বন্ধ করে ফারজাদের বুকের কাছের শার্টটা আঁকড়ে ধরলো। খোলা বারান্দায় মিরহাকে দাঁড় করিয়ে ফারজাদের বক্ষ মাঝে মিরহার পিঠ ঠেকে আছে। ফারজাদ মিরহার হাতে হাত রেখে বলে,প্রেয়সী এইযে সমুদ্র দেখতে পাচ্ছো এই সমুদ্রের প্রতিটা ঢেউ যেমন সত্য আমার ভালোবাসাও সত্য। এই সমুদ্রের প্রতিটা ঢেউ এর মতই তুমি আমার হৃদয়ে আছড়ে পরো প্রতিটি নিশ্বাসের সাথে। প্রতিটি নতুন ঢেউ তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার জানান দেয়। এতো হাজার মিথ্যার ভীড়ে এই সত্যটুকু যথেষ্ট নয় আমাকে আরেকবার সুযোগ দিতে?
মিরহা নিশ্চুপ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বিশাল সমুদ্রের দিকে। ঢেউগুলো আসছে আর চলে যাচ্ছে। মিরহা চোখ বন্ধ করে নিলো। চোখের সামনে ভেসে উঠলো ফারজাদের প্রথমবার প্রপোজ করার মূহুর্তটা৷ ফারজাদ তাকে বলছে,আমি তোমাকে ভালোবাসি এই কথাটা চাঁদের মত সত্য। আমি তোমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি তার পরিমাপে কোন কিছুর তুলনা করা সম্ভব নয়৷ আমি তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসি। এ জীবনে আমার দৃষ্টি যতবার প্রভাত দর্শন করবে,আমি সেই প্রভাতের কিরণে তোমার মায়াবী মুখশ্রী দর্শন করতে চাই সবার আগে। এই ছোট জীবনে এই স্বাদ কি পূর্ন করবে প্রেয়সী? মিরহার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু৷ চোখ খুলে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে বলে,সমুদ্রের যে ঢেউ একবার বিলীন হয়ে যায় তা আর ফিরে আসে না৷ ভালোবাসি, ভালোবাসি বললেই ভালোবাসা হয় না। আপনি পুরোটা মিথ্যায় মোড়ানো তবুও আমি আপনাকে ভালোবাসতাম হয়তো। যদি আপনার এই ভালোবাসি শব্দটা জনপ্রিয়ধারা শিল্পমাধ্যমের ছত্রিশ ইঞ্চি ছাতি মাথায় রেখে যাওয়ার মত মিথ্যে না হতো। এই নিখুঁত শিল্পকর্মের মতই আপনার ভালোবাসি কথাটা সুন্দর প্রহেলিকা। “ঠকে যাও মানুষ শিল্পীর নষ্ট হয়ে যাওয়া শিল্পকর্মের মতই সুন্দর তবে তা অবহেলিত ” মিরহা কথা শেষ করে ফারজাদের কাছ থেকে দূরে সরে দাঁড়ায়। হাতের উল্টো পিঠে চোখের জলটুকু মুছে নিয়ে বলে,বলতে পারেন মানুষ কখন নিজেই নিজের জন্য যথেষ্ট হয়?
‘ফারজাদ কি নিদারুণ নিষ্ঠুর মানবীর দৃষ্টিতে নিজের দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছে। এ চোখে কেন সে অভিমান ছাড়া কিছু দেখতে পাচ্ছে না!মিরহার প্রশ্নে কিছুটা বিচলিত হলো অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মানবীর নিষ্প্রাণ চঞ্চল চড়ুই পাখির মত আঁখিদ্বয়ে।
‘জানতাম উত্তর দিতে পারবেন না৷ একটা মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত কাউকে চায় যতক্ষণ না সে তার দুঃখ, কষ্টের ভার একা বহন করতে ব্যর্থ হয়। যেদিন থেকে নিজের চোখের জল নিজে মুছে ফেলতে শিখে,যেদিন থেকে নিজেকে নিজেই স্বান্তনা দিতে শিখে যায় এরপর আর তাদের কাউকে লাগে না। তারা নিজেরাই নিজেদের জন্য যথেষ্ট হয়ে উঠে।
‘মানুষ কি ভুল করে না?
‘অবশ্যই করে। তবে কিছু মানুষ নিজের অন্যায়কে ভুল বলে উড়িয়ে দিতে চায়। ভুল আর অন্যায়ের পার্থক্য বোঝেন তো নাকি!
‘আমার জন্য তোমার হৃদয়ে ফেরার পথ তাহলে বন্ধ?
‘হয়ত।
‘আমি আজ চলে যাবো।
‘দোয়া করবো আপনি যাতে ভালো থাকেন৷
‘তোমাকে ছেড়ে ভালো থাকা অসম্ভব।
‘জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না।যাকে ছাড়া এক মূহুর্ত থাকা কষ্টের তাকে ছাড়াই জীবন কেটে যায়।
‘আমায় তুমি ফিরিয়ে নিও ফুরিয়ে যাওয়ার আগে। আমি অপেক্ষায় থাকবো৷
‘কিছু অপেক্ষা কখনো শেষ হয় না৷
‘ভালো থেকো বৌপ্রিয়া। আমি শহরের দেয়ালে বিলবোর্ড টানাবো জানিয়ে দেবো প্রতিটি দেয়ালকে, যার হৃদয়ে পাইনি আমি ঠাই, সে আমার বৌপ্রিয়া।
‘মিরহা টেবিলের উপর থেকে মোবাইল নিয়ে দরজার কাছে আসলো৷ শেষ বারের মত ফারজাদের দিকে তাকালো৷ শেষবারের মত দুজনের দৃষ্টির মিলন ঘটলো৷
‘ফারজাদ ছুটে এসে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করলো মিরহাকে৷ কিছু সময় পর মিরহাকে বাহু থেকে আলগা করে মিরহার কপালে অধর ছুঁয়ে দিলো। নিম্ন স্বরে বললো ভালোবাসি আমার বৌপ্রিয়া। আমি অপেক্ষায় থাকবো তোমার।
‘মিরহা আর পিছু ফিরলো না। বের হয়ে চলে আসলো৷ সাথে ফেলো আসলো অসীম ভালোবাসা। পৃথিবীতে তার সবটুকু সুখ৷ সে কি জানবে তাকে বিদায় দেয়া কতটা যন্ত্রণার! সে কেনো তার না বলা কথাটুকু বুঝলো না! কেনো বললো না, আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না৷ দম বন্ধ হয়ে আসছে মিরহার। চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে৷ এই শহরে দেয়াল জানুক ভালোবাসা হারানোর বেদনা কত ব্যথাতুর৷
সব পেয়েও হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা কতটা অসহনীয়। এই ভাঙ্গা গড়ার খেলায় আসলে হারলো কে? ভালোবেসে ও ভালোবাসার মানুষকে দূরে সরিয়ে দেয়া কতটা কঠিন!
🌿 ফয়সাল সিকদার তার ফ্যামিলি নিয়ে ঢাকা ব্যাক করেছেন৷ ঢাকা এসেই তিনি সবার আগে মিসেস শিরিনের সাথে দেখা করেছেন। ভদ্রলোক নির্বিবাদে শিরিন বেগমকে বিয়ের জন্য রাজি করিয়েছেন৷ মিরহা ফিরলেই বিয়ের কার্যক্রম আগাবে৷
‘রুবিনা বেগম, কাকলি বেগম হসপিটালের ওয়েটিং রুমে বসে আছে৷ রাহা গতকাল রাতে সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে৷
রুবিনা বেগমের ইচ্ছে করছে রাহা কে ঠাটিয়ে কয়েকটা চড়ে মারতে৷ এই যুগের ছেলে মেয়েরা মৃত্যুটাকে কি মনে করে!একটু এদিক সেদিক হলেই সুইসাইড! জীবন যদি না থাকে তাহলে আর কিসের আশা। এরা কবে জীবনের মূল্য বুঝবে!বাবা মা জন্ম দেবে বড় করবে সব ত্যাগ স্বীকার করবে আর তারা নিজের জীবন নিয়ে নয়ছয় করবে৷ নিজেকে শান্ত করে বলে,কাকলি তুমি ভেঙ্গে পড়ো না৷ আল্লাহ তায়ালার রহমতে আমাদের রাহা ঠিক আছে৷
‘কাকলি বেগম চুপ করে রইলেন৷ সে কোন মুখে বলবে, ভাবি তোমার ছেলেটাকে আমার মেয়েকে দিয়ে দাও৷ রাহনুমা তার মাকে সুইসাইড করার আগে কয়েকদিন ধরে বলেছিলো৷ ফারজাদের সাথে তার বৌ না আসলে সে জেনো রাহার সাথে বিয়ে ঠিক করে ফারজাদের। কিন্তু ফারজাদ যে তার বৌকে কোন ভাবে ছাড়বে না সেটা সে বুঝেছে।
‘টেনশন করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে। ওর কি কোন পছন্দ আছে? না মানে হঠাৎ এমন একটা কান্ড ঘটালো?
‘ভাবি জানোই তো ছোট বেলা থেকে মেয়েটা আমার জেদি। এখন বড় হয়েছে তবুও জেদ কমেনি। সব জিনিস কি জেদ করলেই পাওয়া যায় বলো?
‘সেটা ঠান্ডা মাথায় বোঝাতে হবে।
‘🌿
তোর মাথা খারাপ? আমার পছন্দ অন্য কেউ আরেকজনের বৌকে আমি পছন্দ করবো কেন!
‘তাহলে আর্মি বললি কেন?
‘মেয়েটা মিরহার ফ্রেন্ড পুস্প।
‘পুস্প আপু?
‘পুস্প ভাবি বলবি। বিয়েটা সিনিয়রকেই করবো কনফার্ম।
‘রোমিও একটু আস্তে। তুই বলবি আর বাসার সবাই মেনে নিবে?
‘না নেয়ার কি আছে? মেয়েতো দেখতে মাশাল্লাহ।
‘এটা বাঙালি জনগোষ্ঠী তারা কইবো না না এই বিয়া হইবো না৷ পোলার চেয়ে মেয়ের বয়স বেশি।
‘তাহলে সোজা তুলে নিয়ে বিয়ে করবো তারপর বাসায় নিয়ে আসবো। আমার বাসায় জায়গা না দিলে মামির বাসা তো আছেই। আমি তো ওখানেই বেশি থাকি।
‘আচ্ছা মিরহা বিয়েটা সত্যি করেছে? করে থাকলে সমস্যা কোথায় মেনে নিতে?
‘কিসের বিয়ে কোন বিয়ে! পাগল হয়েছিস মিরহা করবে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে!
‘একদম আমাকে বোকা বানাবি না৷ তুই একটু আগে নিজের মুখেই বলেছিস। আমাকে সত্যি টা বল।
শিরিন বেগম হটাৎ করে পেছন থেকে বলেন, কোন সত্যিটা?
#চলবে