সে আমার বৌপ্রিয়া পর্ব-১৭+১৮

0
64

#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-১৭

ইদানীং মিরহার শরীরটা ঠিক ভালো যাচ্ছে না৷ হাত, পা কেমন অবশ হয়ে আসে, মাথাটাও ভারি ভারি লাগে। কোন খাবার মুখে তুলতে পারে না৷ শরীর দূর্বল হয়ে গেছে৷ বেডের উপরে আধশোয়া হয়ে কিছু ভাবছে মিরহা।
‘মিস মিরহা তোমার শরীর দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। সুস্থ আর ফিট না থাকলে ট্রেনিং পূর্ন করবে কিভাবে?
ক্যাপটেন শিউলির কন্ঠ শুনে দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে স্যালুট জানালো মিরহা।
‘উপর মহল থেকে নির্দেশ এসেছে তোমাকে উন্নত চিকিৎসা করানোর।ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট নেয়া আছে টাইম মত পৌঁছে যাবে।
‘ম্যাম তেমন কোন সমস্যা না। ঠিকমত খেলে শরীর ঠিক হয়ে যাবে৷
‘দেখো তোমার শরীরের কন্ডিশন দেখে মনে হচ্ছে তুমি রুলস ব্রেক করেছো। আই মিন কোন ভাবে তুমি প্রেগন্যান্ট নও তো?
‘এই বিষয়টা তো মিরহার মাথাতেই ছিলো না৷ ধক করে উঠলো মিরহার বক্ষপিঞ্জর!
‘কি হলো এমন কিছু নয়তো?তোমার কাছ থেকে আমি এমন কিছু এক্সপেক্ট করিনি।
‘ম্যাম ডক্টরের এপয়েমেন্ট ক’টা বাজে?
‘রাত ন’টা।
‘আমি পুস্পকে নিয়ে পৌছে যাবো।
‘রিপোর্ট এনে জমা দেবে। মনে থাকে যেনো৷
‘ইয়েস ম্যাম।
ক্যাপ্টেন শিউলি চলে যেতেই মিরহা বালিশে মুখ গুঁজে কান্না শুরু করে দিলো। কি হবে এবার তার?হয়তো অতি গোপনে বাচ্চাটাকে দুনিয়ায় আসার আগেই মেরে ফেলতে হবে৷ নয়তো তার ক্যারিয়ার শেষ। সাথে শাস্তি ও মাথা পেতে নিতে হবে৷ সবার কাছে নিজের চরিত্র নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হবে৷
‘একটা ভুলের মাশুল এখন কি কি সেক্রিফাইস করে চুকাতে হবে! আচ্ছা ওটা তো ভুল ছিলো না! ভালোবাসাময় একটা রাত ছিলো। আমরা কেনো ভালোবাসা পেটে আসলে সেটাকে ভুল বলে মেরে ফেলি! মিরহা নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করছে, কোনটা সঠিক কোনটা ভুল নির্ণয় করতে ব্যর্থ হচ্ছে। চোখে টলমল করছে অশ্রু।
‘পুস্প মিরহার পাশে বসে বলে, কি হয়েছে তোর?
‘আমার মনে হচ্ছে আমি….
‘কি তুই বল৷
‘খুব তাড়াতাড়ি আমার জীবনে আবার ঝড় আসতে চলেছে পুস্প৷ আমি কাউকে মুখ দেখাতে পারবো না।
‘কি হয়েছে সেটা তো বল?
‘সে-সব পরে বলবো এখন আমাকে একটু একা থাকতে দে৷
‘পুস্প চলে যেতেই। মিরহা নিজের ফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপে কল করলো ফারজাদকে। রিং হচ্ছে কেটে যাচ্ছে বেশ কয়েকবার দেয়ার পর ওপাশ থেকে রিসিভ হলো৷ সাত পাঁচ না ভেবেই মিরহা বলে,কোথায় আপনি?আপনাকে এই মূহুর্তে আমার খুব দরকার৷
‘হ্যালো মিস কে আপনি?( ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠ শুনে মিরহার হুঁশ আসলো)
‘নিজেকে সংযাত করে বলে, আপনি কে?
‘যাকে কল করেছেন তার পার্সোনাল মানুষ। আপনার তাকে দরকার কেনো?
‘স্যরি আমি ভুল বলে ফেলেছি৷ নাম কি আপনার?
‘আপনার নাম মিসেস সিকদার৷
‘মিরহা ফোনটা কেটে দিলো। হৃদয়ে কেমন ঝড় উঠলো। কারো মুখে মিসেস সিকদার শুনে৷ তবে কি ফারজাদ মাত্র দেড়মাস ও নেয়নি তাকে ভুলতে! এই আপনার ভালোবাসা? অথচ আপনাকে ফিরিয়ে দেয়ার পর থেকে ঠিকমত খেতে পারি না৷ পুরো দুনিয়া আমার আশেপাশে থাকলেও নিজেকে নিঃস্ব মনে হয়। আপনার এই ভালোবাসায় আটকে আমি আমার সব শেষ করলাম! কেন করলেন আমার সাথে এই ভয়ংকর সুন্দর অভিনয়!কি ক্ষতি করেছিলাম আপনার? তবে কি আপনাকে ভালোবাসার শাস্তি পাচ্ছি? এ কেমন খেলা খেলছেন আমার সাথে!

🌿 ফারজাদ নিজের রুমে এসে দেখে রুহির হাতে তার ফোন৷ টান দিয়ে নিজের হাতে নিয়ে বলে,সামান্য ম্যানারস নেই আপনার? কারো পার্সোনাল জিনিসে না বলে হাত দিয়েছেন কেনো?
‘কয়েকদিন পরে আমিই তো আপনার হয়ে যাবো তাহলে আমার কাছে আবার কিসের পার্সোনাল!
‘লিসেন মিস রুহি আমি বিবাহিত। আমার ওয়াইফ আছে৷
‘তাই নাকি মিস্টার খন্দকার তা বৌ কি পকেটে রেখেছেন? কই দেখি তো?
‘বৌ বুকপকেটে আগলে রেখেছি। সে আমার বৌপ্রিয়া।
‘ভবিষ্যতে আপনার বুকপকেটের বৌপ্রিয়া আমি হবো৷
‘নিজের লিমিট ক্রস করবেন না। আমি বিবাহিত আমার বৌ আছে। সে আর্মিতে জব করে। ছুটিতে আসলে আপনার সাথে দেখা করাবো। প্লিজ লিভ।
‘রুহি রুম থেকে বের হয়ে ফাবিহার রুমে আসলো৷রুমে ঢুকেই বলে, ফাবিহা তোমার ভাই বিবাহিত?
‘হুম।
‘সিরিয়াসলি?
‘তো বিয়ে কি কেউ ফান করে করে?
‘ মজা করছো না তো? বাবা তো বলল ফারজাদের সাথে আমার বিয়ের কথা দেয়া আছে।
‘বাবা হয়তো চেয়েছিলো এমন কিছু কিন্তু ভাইয়া রিলেশন করে একা একা বিয়ে করে নিয়েছে।
‘বিয়ে করে নিলো আর তোমরা মেনে নিলে?
‘মানবো না কেন! একটা মাত্র ভাই আমার তার পছন্দ অপছন্দ তো মেনে নিতে হবেই। তাছাড়া আমার ভাবি দেখতে মাশা আল্লাহ অনেক কিউট৷
‘এভাবে কিভাবে সম্ভব! আমি অপেক্ষায় ছিলাম। এটা ঠিক করলে না তোমরা। বলেই চলে গেলো রুহি।
‘ডাইনি একটা তোরে কে আনতো ভাবি করে! কোন লেভেলের বেহায়া হলে একা একা চলে আসে আরেকজনের বাসায় নিজের বিয়ের দোহাই দিয়ে৷ ভাইয়া একদম ঠিক কাজ করেছে৷ ফাবিহা রুম থেকে বের হয়ে কিচেনে আসলো৷
রুবিনা বেগম চিকেন ফ্রাই বানাচ্ছেন সাথে হোয়াইট সস পাস্তা।
ফাবিহা বলে,আম্মু রুহি তোমার কাছে এসেছিলো?
‘হ্যা বাসায় ঢুকেই তো আমার সাথে দেখা করে ফারজাদের রুমের দিকে গেলো। মনে হয় ফারজাদের সঙ্গে গল্প করছে৷
‘নিশ্চয়ই এই নাস্তা ওর জন্য বানাচ্ছিলে?
‘নাহহহ এগুলো তোদের দুই ভাই বোনের জন্য বানাচ্ছি৷ আমার ছেলেটার চোখ মুখ কেমন শুকিয়ে গেছে৷
“বিয়ে করে বৌ ছাড়া থাকলে তো শুকাবেই।
‘তুই কি ভুলে যাচ্ছিস কার সামনে কথা বলছিস!
‘আম্মু ভাবিকে আনার ব্যবস্থা করো দ্রুত। দুই ননদ ভাবি মিলে জমিয়ে তোমার ছেলের মাথা খাবো৷ আর হ্যা তোমার রুহি রেগে চলে গেছে। যাওয়ার সময় বলে গেছে তোমরা কাজটা ঠিক করো নি৷
‘ওকে কেনো রাগাতে গেলি? বিয়ের কথা বাহিরে এখন প্রকাশ করলি কেনো?আগে দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়।
‘শেষ পর্যন্ত যাহোক এই রুহি টুহি কে অন্তত ভাবি বানাবো না।
‘যাহহহ এবার নবাবজাদা কে ডেকে নিয়ে আয়৷
🌿
মিরহা ডক্টরের সামনে বসে আছে।
‘ডক্টর রিপোর্ট দেখে বলে,সমস্যার কোন কারন নেই প্রথম কয়েকমাস এমন হয়। আমি রুচির মেডিসিন লিখে দিচ্ছি৷ ঠিকমত খাবেন, টেনশন করবেননা। নিজেকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবেন। এটা কি আপনার প্রথম প্রেগন্যান্সি?
‘মিরহা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। মৃদু কন্ঠে বললো একটা রিকোয়েস্ট করতে পারি?
‘হ্যা বলুন।
‘আজকে রিপোর্টগুলো এসেছে আর কাউকে বলবেন না প্লিজ৷ তারপর ডক্টরকে সব বুঝিয়ে বললো।
‘সব শুনে ডাক্তার বলে,আপনি কি বাচ্চাটা রাখতে চাইছেন না?
‘আমি একটু ভাবতে চাইছি ভেবে ডিসিশন নেবো।

‘মিরহা বাহিরে এসে পুস্পকে বলে চল৷
‘কি বললো ডাক্তার?
‘বাহিরে আয় বলছি।
” বাহিরে এসে পুস্প আর মিরহা একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো৷
মিরহা ঠান্ডা মাথায় সবটা বুঝিয়ে বলল পুস্পকে।
‘সব শুনে পুস্প বলে, এখন দুটো পথ তোর কাছে খোলা আছে৷ এক বাচ্চাটাকে না রাখা। দ্বিতীয় বিয়েটা হয়েছে সে প্রুফ দেখিয়ে চাকরিচ্যুত হওয়া৷ তাতে শাস্তি কম পাবি। এ সেক্টরে আর আসতে পারবি না৷ তবে তোর চরিত্রের দিকে কেউ আঙুল তুলতে পারবে না৷ এছাড়া আর কোন পথ নেই৷ প্রথম পথটা তোর জন্য সহজ। তবে আমার মনে হয় না কোন ভাবে তুই সেটা বেছে নিবি। বাচ্চাটা তোর ভালোবাসার চিহ্ন। তারচেয়ে বড় কথা নিজেদের কোলাহলে একটা নিষ্পাপ প্রাণ হত্যা কেনো করবি!সে তো কোন দোষ করেনি?
‘জানিনা কি করবো। ফারজাদের জীবনে অন্য কেউ চলে এসেছে। আমি এই বাচ্চাটাকে কোন পরিচয়ে বড় করবো? বড় হয়ে যখন বাবার কথা জিজ্ঞেস করবে তখন কি বলবো?
এরচেয়ে…..

#চলবে

#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৮
মিরহার ফেসবুক ফিডে ভাসছে ফারজাদের সাথে একটি মেয়ের কাপল পিক৷ বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,আপনাকে আমি শান্তিতে থাকতে দিতে পারি না মিস্টার ফারজাদ। আমার সব স্বপ্ন শেষ করে আপনি কি করে সুখের সংসার করেন নতুন করে সেটা আমি দেখবো৷
‘কিরে এভাবে ভূতের মত বসে আছিস কেনো?শোকে পাগল হয়ে গেলি? এক সপ্তাহে নিজের হাল কি করেছিস?তুই প্রথম বললি বাচ্চাটা রাখবো না৷ তারপর নিজেই কোথা থেকে ভিডিও এনে প্রুফ করলি তোর ইসলামি রীতিতে বিয়ে হয়েছে। আর নিয়ম ভঙ্গ করে তোর হ্যাসবেন্ডের সাথে সময় কাটিয়েছিস। ব্যাস তোকে ব্যান করলো। সব তো তুই শেষ করলি! এখন এমন ভুতনী সাজার মানে কি?
‘তো চাকরির জন্য নিজের সন্তানকে মেরে ফেলবো! আমার সন্তান আমার অংশ, আমার ভালোবাসার চিহ্ন কিভাবে নিজের হাতে তাকে শেষ করবো? এবার আমি ভেবেছি যে আমার জীবনে তান্ডব চালিয়েছে আমি তার জীবনে তান্ডব চালাবো।
‘কি করবি তুই?
‘ঘাড় মটকাবো শা’লার ব্যাডা আমার জীবনের সাথে ছিনিমিনি খেলা, এবার দেখবে মিরহা কি চিজ! শোন তোর সাথে তো খুব শীগ্রই দেখা হবে। প্রেম করার জন্য তো পেয়েছিস আমার রোমিও ভাইকে।এবার দ্রুত তার বৌ হয়ে ওর রোমিওগীরি বের কর৷
‘হোয়াট!
‘মুখ বন্ধ কর মশা ঢুকবে। হ্যাঁ ও গাধাটা আমার ভাই। আমার এক বছরের ছোট। একটু রোমিও টাইপ৷ সানডে টিনাকে মানডে মিনাকে এভাবে তার ডেট চলে। তবে মনের দিক থেকে ভালো। এই ফ্লার্ট করার রোগ আছে এই আরকি।
‘তারপরও বলছিস ওরে বিয়ে করতে? একেতো জুনিয়র তার উপর ক্যারেক্টার ঢিলা৷
‘আরেহহহ ইয়ার৷ ক্যারেক্টার ঢিলা কিন্তু খারাপ না। আর এখন তো সব ছেড়ে তোর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। বিয়ে করে জরু কা গোলাম বানালে।
‘সে-সব পরে দেখা যাবে এটা বল তুই হঠাৎ কি ভেবে এতো উৎফুল্ল? কি প্ল্যান করছিস মনে মনে? ভুলে যাস না এখন তুই একা না তোর ভেতর একটু একটু করে একটা প্রাণ বেড়ে উঠছে। দেশে যেয়ে আন্টির সাথে সবটা খুলে বলবি। তারপর ঠান্ডা মাথায় ডিসিশন নিবি।
‘আম্মুর কাছে যাবো না৷ আম্মু এসব জানলে অনেক কষ্ট পাবে।
‘এটা লুকোনোর মত কোন বিষয় না। এই সময় তুই নিজেকে একা সামলাতে পারিবি না। তোর এখন টেককেয়ার দরকার৷ নিজের জন্য না হোক বাচ্চাটার জন্য।
‘মায়ের বোন খালা মায়ের চেয়ে ভালা৷ জন্ম দিয়ে তোর হাতে তুলে দেবো তুই সব যত্ন একসাথে করিস।
‘তা তো করবোই। কিন্তু এরজন্য সুস্থ একটা বেবি চাই। সব পাগলামো চিন্তা বাদ দিয়ে সোজা আন্টির পায়ে ধরে ক্ষমা চাবি। মা ছাড়া কেউ বিপদে পাশে থাকে না৷
‘আচ্ছা দাদি আম্মা এবার লেকচার দেয়া বন্ধ কর৷ এখন বের হতে হবে ফ্লাইটের টাইম হয়ে যাচ্ছে।
‘তোকে ভিষণ মিস করবো। একা একা লাগবে বড্ড।
‘ভাবিজী গুড লাক। আমি যেটা নিজের করা ভুলের জন্য পারিনি সেটা তুই করবি। মনকে শক্ত করে লক্ষ্য পূরণ কর।
‘আর তুই আমার কথাটা রাখ৷

মিরহা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এয়ারপোর্টে চলে আসলো। এই যে পিছনে ফেলে যাচ্ছে তার তিন বছরের কষ্ট। সফলতার এতো কাছে এসেও তাকে ফিরে যেতে হচ্ছে শূন্য হাতে। অপূর্ণ রয়ে যাচ্ছে তার বাবা, মায়ের স্বপ্ন। কতটা পরিশ্রম করে এই পর্যন্ত আসতে হয়েছে! আজ সব কিছু ছেড়ে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। মা’ শব্দটা অদ্ভুত মা’ শব্দ কারো সাথে জুড়ে গেলে সে জেনো হয়ে উঠে মহীয়সী। নিজের সন্তানের জন্য বিলীন করতে পারে নিজের সব সুখ,স্বপ্ন। শুধু মাত্র মা’ শব্দটা জেনো একটা মেয়েকে ম্যাজিকের মত পাল্টে দেয়। মিরহা আলতো করে নিজের পেটের উপর হাত রাখলো। কি এক অদ্ভুত বন্ধন! এ বন্ধন যেনো চির অটুট। এমন এক অনূভুতি এমন এক প্রশান্তি ছেঁয়ে যাচ্ছে হৃদয় জুড়ে যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এখন থেকে প্রতিটি মূহুর্ত তৃষ্ণা বাড়বে মিরহার তার সন্তানের মুখটা প্রথমবার দেখার তৃষ্ণা।

🌿 আগামীকাল রাহার বিয়ে। একটু আগেই গায়ে হলুদ শেষ হলো।
রাত প্রায় দুইটা ছাড়িয়েছে ফারজাদ ছাদে দাঁড়িয়ে নিকোটিনের ধোয়া ছাড়ছে।উদাস নয়নে তাকিয়ে আছে তারা ভরা আকাশের পানে৷ নতুন চাঁদের ক্ষীণ আলো তবে অগণিত তারার মেলা আজ আকাশ জুড়ে। ফারজাদ চোখ বন্ধ করলো। এমন কত রাত পার করেছে মিরহার সাথে কথা বলে।পুরোনো দিনগুলো কত রঙিন ছিলো অথচ আমি তার অবমূল্যায়ন করেছি। ভেবেই চোখের কার্নিশ কেমন ভেজা অনূভব করলো। মনে পরে গেলো এক রাতের কথা। রাত তখন তিনটা….
‘এই তুমি গায়ে হলুদে কি পরবে? মিরহার টেক্সট দেখে মুচকি হাসলে ফারজাদ।
‘গায়ে হলুদ পরবো।
‘ আমি বলেছি কি রংয়ের ড্রেস পরবে?
‘একটা পরলেই হলো।
‘পরলেই হলো মানে? আমার কি কোন ড্রিম থাকতে পারে না আমাদের হলুদ নাইট নিয়ে।
‘মহারানী আপনার ড্রিম বলেন অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ করবো।
‘তাই!
‘একদম তাই।
‘আপনি মেহদি পাতা কচি থাকতে যে কালার থাকে সে কালারের পাঞ্জাবি পরবেন। সাথে সাদা পাজামা।
‘আমি সেম কালারের সাথে কাঁচা হলুদ সেডের শাড়ী পরবো৷ দু হাত ভর্তি মেহেদী থাকবে। মাঝখানে থাকবে মিস্টার ফারজাদ লেখা। আমার মেহেদীর রঙ হবে গাঢ় খয়েরী।
‘তারপর?
‘তারপর তুমি আসবে আমাকে সারপ্রাইজ দিতে।
‘সারপ্রাইজ সেটা আর কিভাবে সব তো তুমি বলেই দিচ্ছো।
‘বলে দিচ্ছি এখন৷ তখন ভূলে যাওয়ার ভান করবো৷ শুনো না।
‘শোনাও না।
‘তার তুমি নাচবে
Hey Ya Heeriye Sehra Baandh Ke Main Toh Aaya Re
Hey Ya Doli Baarat Bhi Saath Mein Main Toh Laaya Re ) hellip; (x2)

Ab Toh No Hota Hai Ek Roz Intezaar

Soni Aaj Nahi Toh Kal Hai Tujhko Toh Bas Meri Honi Re

Tenu Leke Main Javanga, Dil Deke Main Javanga hellip; (x2)

Hey Ya… Hey Ya
এই গানে। গানটা সেভ করে রাখো। নাচটা শিখে রাখবে।
‘জো হুকুম মহারানী।
আমি তোমাকে ভালোবাসি ফারজাদ। আমার বাবার পরে তুমিই একমাত্র আমার প্রিয় পুরুষ।
‘আমিও তোমাকে ভালোবাসি মিরহা।
‘আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না তো?
‘উঁহু তোমাকে ছাড়া মানে নিজের অস্তিত্বকে ছাড়া।
‘শোন..
‘শোনাও না পাখি।
‘তুমি যাও বা আসো
আমি চাই আমায় সারাজীবন ভালোবাসো৷
আমার ভালোবাসার পীড়া আজীবন বয়ে বেড়াও তুমি।
ফারজাদ চিৎকার করে হাটু মুড়ে ছাদে বসে পরলো। আমি তোমার যোগ্য না মিরহা তোমার যোগ্য না। তুমি কখনো ফিরে এসো না। কখনোই না। আমি তোমাকে ডিজার্ভ করি না। ফারজাদের কাঁধে হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে হাতের উল্টো পিঠে চোখের জল মুছে বলে,কে?
‘ কেনো নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো?
‘তুই এতো রাতে ছাদে কেনো!
‘তোমার বৌ কি সত্যি তোমার কাছে আর কোনদিন ফিরবে না?
‘সেটা তার আর আমার ব্যাক্তিগত ম্যাটার। তুই থাক আমি যাই।
‘শোন সে যদি নাই ফিরে তাহলে আমাকে ধরে রাখছো না কেনো?
‘সে ফিরুক বা না ফিরুক আমি সারাজীবন তার থাকবো।
‘আগামীকাল তোর বিয়ে যে মানুষটা তোর জীবনে আসছে তাকে নিয়ে স্বপ্ন সাজা। আমি তোকে নিজের বোনের নজরে দেখেছি সব সময়। তোর আর ফাবিহার মধ্যে আমার নজরে কোন ফারাক নেই।
‘আমি তোমাকে ভালোবাসি।
ফারজাদ চলে গেলো।
‘রাহা ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলে,আমাকে কেন ভালোবাসলে না ভাইয়া৷ আমি যে আমার সবটুকু অনুভূতি জুড়ে শুধু তোমায় রেখেছি।

#চলবে