#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-২৭
আমাদের সম্পর্কের সুতো বুঝি এতোই নরম! টান খেলেই ছিড়ে যাবে? তুমি আছো মানেই আমি আছি, আমি তোমাকে হারাতে চাইনা৷ আমার আগে তোমাকে চাই তারপর বেবি।তোমাকে হারিয়ে তাকে আমার চাইনা৷
‘বুদ্ধু আমাকে হারাবে কেন! বরং আমরা লড়াই করে তিনজন একসাথে বাঁচবো। মিরহা ফারজাদের হাতটা নিজের পেটের উপর রেখে বলে তুমি, আমি আর আমাদের সন্তান। জীবনে এরচেয়ে আর বেশি কিছু চাই না।
‘ফারজাদ মিরহার কানের পিছনে চুল গুঁজে দিয়ে বলে,তোমাকে পেয়েছি আমার জীবন পূর্ণ হয়ে গেছে৷ কিভাবে, কখন, কোন মূহুর্তে তোমাকে এতোটা ভালোবেসে ফেলেছি আমি সেটা নিজেও জানিনা। শুধু জানি তোমাকে ছাড়া একটা দিনও আমার চলবে না।আমি যেখানে তুমি সেখানে। একটা রাতও তোমাকে ছাড়া কাটাতে চাইনা আমার বৌপ্রিয়া।
‘কি যে বলো বোকার মতো! বৌ কি দুনিয়ায় তোমার একার আছে?
‘সে সব আমি জানিনা আমার বৌপ্রিয়া আছে সেটুকু জানি।
‘ভাইয়া তোমাদের রোমান্স শেষ হলে আসতে পারি? ফাবিহার আওয়াজ শুনো দুজনে সরে দাঁড়ালো। মিরহা বললো আসো।
‘ভাইয়া তুমি আউট হও রুম থেকে পার্লারের মেয়েরা ভাবিকে এখন সাজাতে আসবে। সিকদার বাড়ির একমাত্র বৌয়ের গ্রান্ড আগমনী উৎসব বলে কথা। ভাবিকে আজ সিন্ড্রেলার মতো সাজিয়ে দেবো।
‘এ-ই একদম আমার বৌকে আটা ময়দা মাখিয়ে পেত্নী সাজাবি না। আমার বৌ ন্যাচারল বিউটি, রূপবতী, মায়াবতী, হৃদয়হরণী।
‘তোমার কি লজ্জা বলতে কিছু নেই নাকি? নিজের ছোট বোনের সামনে দাঁড়িয়ে বলেই যাচ্ছো!
‘লজ্জা লাগবে কেন!সে আমার বৌপ্রিয়া আমার তো ভালো লাগবে তার প্রশংসা করতে।
‘বহুত প্রংশসা হয়েছে এবার বের হও। তোমার জন্য তোমার রুমে রাহাত ভাইয়ারা আর পার্লারের লোকেরা অপেক্ষা করছে যাও রেডি হও।
‘ফারজাদ সামনের দিকে পা বাড়াতেই মিরহা বলে, এ-ই শোনো।
‘বলো প্রিয়া।
‘একটু সামনে আসো।
‘ফারজাদ সামনে এগিয়ে আসলো।
‘একদম চোরের মতো সাজবে না৷ যা যেমন আছে এমন থাকবে। শুধু ফ্রেশ হয়ে শেরওয়ানি পরবা।
‘কি বলতে চাইলা?
‘কি মানে বুঝো নাই এ-ই খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি এ-ই চুল এসব একটুও কাটবা না। বিয়ের দিন ছেলেরা এসব কেটে আসলে চোরের মতো লাগে।
‘জো হুকুম মহারানী।
‘সাজতে সাজতে প্রায় তিন ঘন্টা লাগলো। মিরহার খুব বিরক্ত লাগছে শরীর অসুস্থ লাগছে।
‘ভাবি তোমার শরীর অসুস্থ লাগছে? এ-ই নাও তোমার জন্য এনার্জি ড্রিংক।
‘জানো আমার অনেক ইচ্ছে ছিলো আমার একটা ননদ থাকবে। আমার স্বপ্নটা পূর্ণ হলো। আলহামদুলিল্লাহ এতো ভালো, কিউট, সুইট রসগোল্লার মতো একজন ননদী পেয়েছি।
‘ননদ টনদ না আমি তোমার বেস্টফ্রেন্ড, বোন। এইসব ননদ আমার পছন্দ না।
‘তুমি তো অনেক কিউট।
‘তুমি তো কিউটের ডিব্বা। আর যে আসবে সে হবে কিউটের আইফেল টাওয়ার।
‘যাও এবার তুমিও রেডি হও।
ফাবিহা চলে যেতেই মিরহার ফোনটা বেজে উঠলো। মিরহা কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে,বাহহহ জামাই পেয়ে আমাকে ভুলে গেলি!এরজন্যই মানুষ যায় তাদের বেস্টফ্রেন্ড সিঙ্গেল থাকুক৷
‘তোকে ভুলবো কেন!তুই তো আমার পুস্পলতা।
‘হইছে চুপ থাক। এতোদিনে একবারও কল করিসনি। এ-ই আমি তোর পুস্পলতা।
‘ভাবলাম কেউ নয়া নয়া প্রেম মজেছে তাকে একটু প্রেম করার স্পেস দেই। তা কেমন চলছে প্রেম?
‘প্রেম চলছে ঘোড়ার মতো। সময়টা কবে এভাবে চলবে, কবে দেশে আসবো?
‘আমার ভাইয়ের ভালোবাসা খুব বেশি মিস করছিস বুঝি?
‘জানিস ওইদিন জিসান বলে,তুমি যেদিন আসবে আমি বিমানবন্দরে কাজি নিয়ে যাবো৷ প্লেন থেকে নেমেই সোজা বিয়ে।
‘বাহহহ তাহলে তো লাইলি মজনুর প্রেম জমে দই হয়ে গেছে।
‘তোর খবর কি? তোর রিসিপশনের অনুষ্ঠানে আমাকে একবার দাওয়াত তো দিলি না!
‘আরেহহহ ইয়ার হুট করেই ঠিক করে ফেললো। আর তুই তো আসতে পারবি না। তাই বলিনি।
‘ঊখে বিউটি কুইন পিক পাঠাও তোমার সুইট চেহারাটা আরো কতটা সুইট লাগছে বৌ সেজে দেখি।
‘আচ্ছা পাঠাচ্ছি। নিজের খেয়াল রাইখো ভাবিজি।
‘ঊখে রায়বাঘিনী ননদিনী।
ফারজাদ রুমে এসে মিরহাকে দেখেই বুকে হাত দিয়ে বলে হায় মে মারজাওয়া। ডিয়ার ওয়াইফী উফফ তোমাকে ইচ্ছে করছে আলমারিতে লুকিয়ে রাখতে। আমার এতো সুন্দর বৌয়ের দিকে কেউ নজর দেয় যদি! আসো তো সেল্ফি তুলি৷
মিরহা নিম্ন স্বরে বললো,তোমাকে দারুন হ্যান্ডসাম আর ড্যাশিং লাগছে। একদম রুপকথার রাজকুমার।
‘রুপকথার রাজকন্যার জন্য রুপকথার রাজকুমার তো সাজতে হতো। তা তোমার মন মতো হলো?
‘অনেক বেশি সুদর্শন লাগছে তোমাকে। কারো নজর না লাগুক আমার ব্যাক্তিগত পুরুষটার উপর।
‘আঁচলে বেঁধে রাখো।
‘সুযোগ পেলেই তোমাদের প্রেম শুরু!চলো নিচে চলো সবাই ওয়েট করছে আজকের ঝলমলে রাতের জোড়া চাঁদের জন্য।
🌿রাহা সুন্দর একটা শাড়ি পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছে, আমি কেনো তোমাকে মন থেকে সরিয়ে দিতে পারিনা! আমি তো জানি তুমি অন্যের আকাশের চাঁদ। তবুও কেনো তোমার অনুভূতি আমাকে বারবার যন্ত্রণা দেয়!যে মানুষটার সাথে দিনের পর দিন একি বেডে থাকি প্রতিটা মূহুর্তে যাকে মনে জায়গা দেয়ার চেষ্টা করি তাকে কেনো সেইখানটাতে জায়গা দিতে পারিনা। যেইখানটাতে তুমি আছো? সবাই তো বলে,নারী অন্য পুরুষের ছোঁয়া পেলে অতীত ভুলে যায়৷ আমি কেনো তোমাকে মনে থেকে সরাতে পারছি না!
‘কাকলি বেগম বলেন,তুই কি যাবি? জামাই এলো না কেনো?
‘ওর একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে তাই আসতে পারেনি। না গেলে রেডি হতাম! তাহলে চল।
🌿
ফারজাদ মিরহার হাত ধরে নিচে নামছে। ক্যামেরার ফোকাস সব ওদের দুজনের দিকে। সব গেস্টদের অপেক্ষার অবসান ঘটলো। সবার কানে কানে ফিসফিস সিকদার বাড়ির বৌয়ের জন্য যেমন রাজকীয় অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ঠিক বৌও এনেছে রাজকন্যার মতই। সিকদার বাড়ির একমাত্র বৌ বলে কথা।
‘জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে শেষ হলো ফারজাদ আর মিরহার রিসিপশন।
মিরহা ড্রেস চেঞ্জ করে কপালে হাত রেখে শুয়ে পরলো৷ এসি চলছে তবুও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
ফারজাদ শেরওয়ানি খুলে সোফায় রেখে মিরহার মাথা নিজের পায়ের উপর রেখে বলে,কি হয়েছে তোমার! ঠিক আছো তো?আমি ডাক্তারকে কল করছি৷ বাবার সাথে কথা বলে একজন ডাক্তার আর দুজন নার্সকে পার্মানেন্ট রাখবো তোমার জন্য।
‘মিরহা বললো,তুমি এতো অস্থির হচ্ছো কেনো?সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম তাই তাই একটু ক্লান্ত লাগছে৷
‘ফারজাদ নিজের ফোন থেকে কল করে, সার্ভেন্ট দিয়ে খাবার পাঠাতে বললো নিজের রুমে।
‘মিরহা উঠে বসার চেষ্টা করলো। কিন্তু সক্ষম হলো না। মনে হচ্ছে তার চারপাশটা চরকির মতো ঘুরছে। নিভু নিভু চোখে ফারজাদের মুখশ্রীর দিকে তাকালো। মুখ দিয়ে কথা বের করতে ব্যর্থ হচ্ছে। মনে মনে বলছে,আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে চাইনা। তোমার ভালোবাসা পাওয়ার লোভ হচ্ছে বড্ড। আমি কি বাঁচবো না? তোমার আমার পথচলা কি এখানেই শেষ?আমি যে তোমার সাথে বৃদ্ধ হতে চাই৷ আমার ইচ্ছে কি পূর্ণ হবে না।
‘ফারজাদের পায়ে মিরহার চোখের জল গড়িয়ে পরলো৷ ফারজাদ মোবাইল রেখে মিরহার মাথা দু’ হাতে আগলে ধরে বলে,জান তোমার কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমাকে বলো। এ-ই বৌ কিছু তো বলো চুপ করে থাকবে না।
‘মিরহা চোখখুলে কিছু বলতে চাইলো কিন্তু তা শব্দ হয়ে আর বের হলো না৷ নিভু নিভু চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেলো৷ ফারজাদ মিরহা মাথা বুকে চেপে রেখে আর্তনাদ করে চিৎকার করলো৷ হৃদয় চিড়ে জেনো দুঃখ বের হলো সেই চিৎকারের সাথে,রুমে থাকা প্রতিটি জড়বস্তু ও জেনো কেঁপে উঠলো!
#চলবে