#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৮
আপনার ওয়াইফ এবং বাচ্চা উভয়ই সুস্থ আছে৷ তবে আপনাদের আরো বেশি কেয়ারফুল হতে হবে৷
‘জ্বি ডাক্তার এখন থেকে আমরা সর্বোচ্চ খেয়াল রাখবো৷
‘মেডিসিন গুলো ঠিকমতো খাওয়াবেন। আর বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়াবেন।
রাতটা হসপিটালে থেকে পরেরদিন সকাল দশটায় বাসায় নিয়ে এসেছে মিরহাকে। ফারজাদ সাথে করে দুজন নার্স নিয়ে এসেছে মিরহার চব্বিশ ঘণ্টা খেয়াল রাখার জন্য।
‘মিরহা ফারজাদের হাত ধরে বলে,তুমি একটু স্থির হও তো। আমার কাছে বসো।
‘তোমার বেবি যতদিন পৃথিবীতে না আসছে ততদিন স্থির হবো না। তোমাদের একসাথে সুস্থ দেখবো তারপর আমি স্বস্তির নিশ্বাস নিবো।
‘আমার একার বেবি? তোমার কিছু না সে?
‘আমার কাছে আগে তুমি।
‘আমি যদি তোমার সব হই তাহলে সেও তোমার সব। এখন বলো আমাদের সন্তান।
‘তুমি আমি আর আমাদের সন্তান। তোমাদের খেয়াল রাখাই এখন আমার একমাত্র কাজ।
‘আমাদের খেয়াল রাখতে হলে তোমাকে তো সুস্থ থাকতে হবে। তুমি ফিট না থাকলে আমাদের খেয়াল রাখবে কি করে?
‘আমাকে তুমি গতকাল যে ভয় দেখিয়েছো তাতে এখন আমার একমাত্র কাজ তোমার দিক থেকে নজর না সরানো।
‘সবই বুঝলাম।এবার খাবার নিয়ে আসো গরম ভাত আর সাথে যেকোন তরকারি হোক। তুমি খাবে আর আমাকেও খাইয়ে দিবে।
‘আচ্ছা খাবার আনাচ্ছি। তুমি একটু জুস খাও আর ড্রেস কোনটা পরবে বলো ড্রেস চেঞ্জ করো৷
‘আমি ড্রেস নিয়ে নিতে পারবো। তুমি আগে ফ্রেশ হতে যাও।আমি রুমে ড্রেস চেঞ্জ করে নেবো। তারপর তাড়াতাড়ি খেতে হবে। খুব খুদা পেয়েছে তোমার বেবির আর বেবির আম্মুর।
‘আচ্ছা চেঞ্জ করো আর আমিও চেঞ্জ করে আসি৷
‘ফারজাদ ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করতেই মিরহার চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে লাগলো। আনন্দ অশ্রু। কখনো কল্পনাও করেনি এমন একটা লাইফ পার্টনার পাবো।মানুষটা আমার সব অভিমান এক মূহুর্তে শেষ করে দিয়েছে। নিজের পেটের উপর হাত রেখে বলে,তোর কপাল কতটা ভালো ভাবতে পারছিস! এমন একজন বাবা পাবি।আমাদের খুব ভালো ভাগ্য বুঝলি? ঝামেলা ছাড়া তাড়াতাড়ি চলে আয় তো, এতো অপেক্ষা টেনশন ভালো লাগে না৷
‘তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ফারজাদ বলে,শুধু বেবিকে আদর করলে চলবে?বেবির বাবার দিকেও নজর দিতে হবে। সেই কবে কোন রাতে কি করেছি তার মনেও নেই। ঠিকমতো একটা কিসও তো করতে পারো৷
‘মিরহা ফারজাদের দিকে তাকিয়ে নজর সরিয়ে নিলো৷ ফর্সা শরীর থেকে বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা মুক্তর মতো চিক চিক করছে জানালার ভেদ করে আসা ঝলমলে রোদে।এতো সুদর্শন তার বর!
‘এ-ই তুমি দৃষ্টি সরিয়ে নিলে কেনো? তাকাও আমার দিকে।
‘মিরহা দুহাতে মুখ ঢেকে বলে,ইশশ আমার লজ্জা করে না বুঝি।
‘লজ্জা! আমাকে দেখতে লজ্জা কেন করবে। লজ্জা করলে লজ্জা আজ ভাঙ্গাবো। তবুও আমাকে দেখতে হবে৷ তাকাও আমার দিকে। না তাকালে কিন্তু!
‘ফারজাদ তোয়ালে সোফায় রেখে বেডে মিরহার চোখের সামনে বসলো৷ মিরহার হাত সরিয়ে থুতনিতে হাত রেখে বলে,এ-ই দিকে দেখো। এ-ই শরীরের সব জায়গায় শুধু তোমার হক। তুমি না দেখলে কে দেখবে বৌপ্রিয়া!
‘মিরহার চোখমুখে লজ্জার আভা ফুটে উঠলো৷ ফারজাদ মুচকি হেসে মিরহার কোলে শুয়ে পরলো। দু’জনের দৃষ্টি দুজনের দৃষ্টিতে নিবদ্ধ।
‘এ-ই সত্যি করে বলো তো আমাকে এভাবে দেখে তোমার দৃষ্টি ফেরাতে ইচ্ছে করেছিলো?
‘মিরহা চুপ করে রইলো৷
‘এ-ই চুপ করো তো।
‘উঁহু কোন চুপ করা নেই বলো।
‘আমার খুদা পেয়েছে উঠো টিশার্ট পরে খাবার নিয়ে আসো।
‘যেতে পারি আমার ঠোঁটে একটা কিসি দিলে।
‘উঁহু এখন এসব হবে না।
‘ফারজাদ হুট করে উঠেই মিরহার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।কিছুক্ষণ পর ঠোঁট সরিয়ে বলে,এবার থেকে প্রতি দিন লাভ ডোজ। খাবার খেয়ে ডিপ কিস।
‘তো এটা কি কিস ছিলো?
‘এটা ছিলো সাধারণ কিস। আই মিন এটা লাইট কিস।
‘চুপচাপ যাও আর খাবার নিয়ে আসো। আসছে লাইট ডিপ কিস!
‘যাচ্ছি তবে ডিপ কিস কিন্তু আজ নেবোই।
‘🌿 ফারজাদ তুমি যদি মিরহার খেয়াল রাখতে না পারো তাহলে তোমার আম্মুকে দাও ওর দ্বায়িত্ব। তুমি ওর সুবিধা অসুবিধা বুঝবে না।
‘বাবা আমি বুঝতে চাই। আমি চাই এ-ই মা’ হওয়ার জার্নিতে আমার ওয়াইফের সাথে প্রতিটা অসুবিধা প্রতিটি অনুভূতি সব কিছুর সাক্ষী হতে। আমার সন্তান আমাদের সন্তান তাই দ্বায়িত্ব আমাদের উভয়ের। হ্যা আম্মু আছে কোন কিছু না বুঝলে সেটা অবশ্যই সে দেখবে।
‘রুবিনা বেগমের চোখের কোন ভিজে উঠলো। এমনই একজন হ্যাসবেন্ড সে আশা করেছিলো। হয়ত তার কপালে সে রকম হ্যাসবেন্ড জুটেনি। তবে তার গর্ভের সন্তান একজন আদর্শ হ্যাসবেন্ড হয়েছে।
রুবিনা বেগম সামনে এসে বলে,বাবা তুই তোর দায়িত্ব পালন কর।এ-ই সময় একটা মেয়ে সবচেয়ে বেশি নিজের হ্যাসবেন্ডের ভালোবাসা তার সঙ্গ চায়।
‘ফয়সাল সাহেব চুপ হয়ে গেলেন। মনে পরে গেলো অনেক পুরোনো কিছু স্মৃতি।….
‘আমার টাকা দরকার নেই, নার্স দরকার নেই ফয়সাল। এ-ই মূহুর্তে আমার তোমাকে দরকার। তোমার যত্ন তোমার ভালোবাসা দরকার।
‘দেখো তুমি পৃথিবীতে প্রথম মহিলা না যে মা হচ্ছে। এটা একটা সাধারণ প্রক্রিয়া, হাজার হাজার মহিলা প্রতিনিয়ত মা হচ্ছে।
‘যে আসছে সে তো শুধু আমার রেসপনসেবলিটি না৷ সে তোমার ও রেসপনসেবলিটি।
‘আমি তো আমার দ্বায়িত্ব পালন করছি। নার্স রেখে দিয়েছি টাকা দিচ্ছি তোমার মা আছে আর কি চাও।
‘তোমাকে চাই।
‘এসব তো আমি তোমাদের জন্য ই করছি! এইযে টাকার পেছনে ছুটছি কার জন্য? যে আসছে তার ভবিষ্যতের জন্য। আমার সন্তান পৃথিবীতে এসে রাজকীয় জীবন যাপন করবে৷
‘বাবা তুমি কোথায় হারিয়ে গেলে। আমি চাচ্ছিলাম আম্মাকে এখানে নিয়ে আসবো। কি বলো?
‘সে আসতে চাইলে আমার কোন আপত্তি নেও বলেই নিজের রুমে চলে গেলো। মনে মনে অনুতপ্ত হচ্ছে ফয়সাল সাহেব। টাকা তো আসে যায় কিন্তু সময় চলে গেলে তা আর আসে না। যে মূহুর্তে তার স্ত্রীর তার যত্ন ভালোবাসার প্রয়োজন ছিলো সে মূহুর্তে আমি টাকার পেছনে ছুটেছি৷ আমি তো জানিনা আমার ওয়াইফ কি কি যন্ত্রণা একা একা সহ্য করেছে৷
‘ফাবিহা বলল,বাবার কি হলো আম্মু?
‘যাও তুমি খেয়ে পড়তে বসো, পড়ালেখা বলে একটা সাবজেক্ট তোমার জীবনে আছে সেটা মনে আছে তোমার?
‘যাচ্ছি।
‘কিরে তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন? সার্ভেন্ট সেই কখন খাবার দিয়ে এসেছে। আর শোন মিরহা জিজ্ঞেস করবি ওর কি কি খেতে ইচ্ছে করে সেটাই রান্না করে দেবো৷
‘ফারজাদ রুমে চলে আসতেই। রুবিনা বেগম নিজের রুমে আসলেন। নিজের হ্যাবেন্ডের কাঁধে হাত রেখে বলে, তুমি পুরোনো কথা মনে করে মন খারাপ করছো কেনো? যা করেছে আমাদের সুখের জন্যই করেছো।
‘তবুও আমি তো তোমার কষ্টে তোমার পাশে থেকে তোমাকে সান্ত্বনা দিতে পারিনি। তোমার কষ্ট দূর করার সামান্য চেষ্টাও করতে পারিনি৷ তোমার জন্য কিছুই করতে পারিনি৷
‘তুমি হয়তো তখন আমাদের সুন্দর ভবিষ্যতের পেছনে ছুটেছো। আজ তোমার জন্য আমরা এতো শান্তিতে বাঁচতে পারছি। তোমার জন্য সুখে আছি। আমার কোন অভিযোগ নেই তোমার প্রতি। তবে আজ নিজেকে আদর্শ মা মনে হচ্ছে। আমাদের সন্তান তার দ্বায়িত্ব পালনে ত্রুটি রাখছে না৷ জানো আজ নিজেকে পূর্ণ মনে হচ্ছে।
‘তোমার জন্য আমিও পূর্ণ। তুমি ছিলে বলেই আমি আজ সফলতার চূড়ায় পৌঁছাতে পেরেছি।
#চলবে