#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৯
দেখতে দেখতে কয়েকটা মাস যেনো চোখের পলকে কেটে গেলো। ফারজাদ বিষন্ন মনে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে৷
‘এ-ই তুমি এখন গোমড়া মুখো হয়ে বসে থাকবে? আমার দিকে তাকাও।
‘ ফারজাদ কোন উত্তর না দিয়ে একধ্যানে বাহিরে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে সে জেনো কোন গভীর চিন্তায় মগ্ন আশেপাশের কোন কিছু তাকে প্রভাবিত করতে ব্যর্থ।
‘মিরহা ধীর পায়ে ফারজাদের কাঁধে হাত রাখলো, নিম্ন স্বরে বললো,কি গো শুনছো? এ-ই শুনো না গো।
‘ফারজাদ সামনের দিকে ঘুরে মিরহার কোমর জড়িয়ে ধরলো। আদুরে আর বিষন্ন স্বরে বললো,আমি তোমাকে এতো তাড়াতাড়ি হারাতে চাইনা আমার প্রিয়তমা। তোমার সাথে এখনো চন্দ্র বিলাস বাকী। এখনো সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ দেখা বাকী, পাহাড়ের চুড়ায় উঠে,মেঘ আর পাহাড়ের মিলন দেখা বাকী, ঝর্নার বিশুদ্ধ পানিতে প্রেমের স্নান বাকী। তোমার সাথে মধ্য রাতের শহর ঘোরা বাকী। অকারণে তোমাকে বিরক্ত করা বাকি। বেঁচে থাকার প্রার্থনায় তোমার সাথে বৃদ্ধ হতে চাই।
‘তুমি ভেঙে পরছো কেনো!আমাদের সন্তান সহ আমরা দুজনে তোমার সমস্ত স্বপ্নগুলো একসাথে পূর্ণ করবো।জান আমাদের কিছু হবে না দেখে নিও৷
‘কথা দাও আমাকে ছেড়ে যাবে না৷
‘কথা দিলাম তোমাকে ছেড়ে যাবো না। এবার আমার স্ট্রং বরটাকে দেখতে চাই। পুরুষ মানুষ এতো ভীতু হলে চলে!
‘আর কয়েক ঘন্টা পর থেকে পুরো তিনটা দিন আমার হার্ট বিট বন্ধ হয়ে যাবে। তোমার স্পন্দন পারবে আমার হৃদয়কে সচল করতে।
‘এরকম কথা বলবে না। তুমি আমার শক্তি তাই তুমি ভেঙে পরলে চলবে না৷
ফারজাদ বসা থেকে উঠে মিরহার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। শান্ত কন্ঠে বলল,তোমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি বৌপ্রিয়া। তুমিহীন নিজেকে কল্পনাও করতে পারি না।
‘মিরহা ফারজাদের ঠোঁটে চুমু দিয়ে বলো,তোমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি ডিয়ার বর মহাশয়।
‘এভাবেই কিছু সময় ভালোবাসায় কেটে গেলো।
এইতো কিছু সময় পর বের হতে হবে হসপিটালের উদ্দেশ্য। ফারজাদের মনটা সায় দিচ্ছে না। কেমন যেনো ব্যকুলতা। ইচ্ছে করছে মিরহাকে সাবার চোখের আড়ালে লুকিয়ে রাখতে। কিন্তু পরিস্থিতি তার অনূকূল।
‘মিরহা পেছন থেকে ফারজাদকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলে,টেনশন না করে আয়োজন করো আমাদের দুজনকে ওয়েলকাম করতে হবে তো?
‘আমি কিন্তু তুমি ছাড়া সন্তানকে মেনে নেবো না৷
‘আবার এ-ই অলক্ষুণে কথা! আমি আর বেবি পইপই করে এ-র শোধ তুলবো মিস্টার সিকদার। একটুও ছাড় দেবো না।
‘আমি চাই সেই দিন আসুক। এবার আসো আমার হাতে হাত রেখে সাবধানে আসো। সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। তুমি আর বেবি আসলেই দু দু’টো বিয়ে হবে। পুরো শহরকে জানিয়ে জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের পুচকুর নামকরণ করা হবে।
‘মিরহা ফারজাদের হাতে হাত রেখে রুম থেকে বের হলো৷ মনে মনে বলে,কবে,কখন, কিভাবে এতো ভালোবাসলে আমাকে! আমি তো ভেবেছিলাম ভালোবাসা কেবল উপন্যাসের পাতায় আর নাটকের স্ক্রিপ্টে থাকে। বাস্তবতায় তোমাকে পেয়ে বুঝলাম। উপন্যাসের পাতার চেয়ে বাস্তবিক ভালোবাসা শত গুন গভীর।
🌿রুবিনা বেগম, শিরিন বেগম, ফাবিহা, আইরিন, কাকলি বেগম, পুস্প সবাই রেডি হয়ে অপেক্ষায় আছে মিরহার৷ তারা সবাই মিরহার সাথে হসপিটালে যাবে।
‘মিরহা নিচে এসে সবাইকে রেডি দেখে বলে,আমরা কি কোন অনুষ্ঠানে যাচ্ছি?
‘সবাই একসাথে বলে,উঠলো তুমি যেখানে আমরা সেখানে।
‘এসব কোন কথা আম্মা! আমরা হসপিটালে যাচ্ছি সেখানে আরো রোগি আছে। এতো মানুষ যাওয়া যাবে না৷ শুধু আপনারা তিনজন সাথে চলুন।
‘আমাকে রেখে যাবি! আমি না গেলে তোকে প্রটেক্ট করবে কে?আমি তোর বডিগার্ড হিসেবে যাবো। পুস্পর সহজ বক্তব্য।
‘ফাবিহা বলল, আমি না গেলে তোমাদের দেখা শোনা করে করবে? আমাকে তো যেতেই হবে।
‘আইরিন বলল,আমিই কি তাহলে বেশি হয়ে গেছি! আমাকে ছেড়ে যাবি তো যাহহহহ৷
‘থামো সবাই৷ যত যাই বলো ফুপি,আম্মু আর আম্মা ছাড়া কাউকে নিচ্ছি না। ডাবল বেডের কেবিন৷ একটা বেড আমার বাকি একটা বেড আর সোফা মিলিয়ে ওনারা তিনজন থাকবে। তোমরা বাসায় থাকবে বাসার খেয়াল রাখবে।
‘বেডে কেনো থাকতে হবে?আমরা ফ্লোরে থাকতে পারবো৷ কোন অসুবিধা হবে না।
‘পুস্প তুই কেন বাচ্চাদের মতো কথা বলছিস ওদের বোঝা।
‘রুবিনা বেগম বললেন, ওরা আসতে চাইছে আসুক। পরে না হয়ে চলে আসবে।
‘মিরহা আর কথা বাড়ালো না।
🌿রাফিনকে জামিন দেওয়া হয়েছে এক সপ্তাহ আগে। সে বের হয়ে এসে নিজেকে গৃহ বন্দী করে রেখেছে। হঠাৎ শোয়া থেকে উঠে বলে,আমি সারাজীবন জেলে পঁচে মরবো আর তোরা স্বামী স্ত্রী সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করবি! আমি হতে দিতে পারি না। আবার শুয়ে পরে বলে,আমি আর তোদের কোন ক্ষতি করবো না। তোরা ভালো থাক। আচ্ছা তোদের ছেলে হবে নাকি মেয়ে? মিরহার সাথে আমার বিয়ে হলে সন্তানটা আমার হতো। আমার সুখ তুই কেড়ে নিলি! পাগলের মতো একা একা যখন যা ইচ্ছে বলে যাচ্ছে।
‘জিসান হসপিটালে এসে বলে, ডাক্তারের সাথে আমার কথা হয়েছে। আজ রাতে বা কাল বিকেলে সিজার করানো হবে৷ রক্ত লাগবে তিন ব্যাগ। রক্ত আমি সংগ্রহ করেছি। তবে মিরহার পেশার একদম লো।এ-ই মূহুর্তে ওকে আরো স্ট্রং হতে হবে। এরজন্য আমাদের মনোবল বাড়াতে হবে৷ আমরা যদি নিজেরাই ভেঙ্গে পরি তাহলে ওর মনোবল ফিরবে না৷ ফারজাদের কাঁধে হাত রেখে বলে,আল্লাহ তায়ালা চাইলে ইনশা আল্লাহ সব ভালো হবে। তাই নিজেকে সামলে নিন।
‘সব রকম টেস্ট করা শেষ।
‘নাহ এখনো কিছু বাকি আছে সে সব শেষ করে ফাইনাল ডিসিশন জানাবে। জিসান পুস্পকে বললো তোমার তিনজন আমার সাথে এসো। তোমাদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমি আবার হসপিটালে ফিরবো। কোন কথা বাড়াবে না। এটা হসপিটাল পার্টি সেন্টার না৷ এতো মানুষ এখানে এলাউ করবে না। আর দরকার পরলে আমরা তোমাদের খবর দিয়ে নিয়ে আসবো।
‘পুস্প লম্বা লম্বা পা ফেলে আগে বের হলো। একে একে আইরিন আর ফাবিহাও বের হলো।
‘জিসান পুস্পর হাত ধরে বলে,রাগ করছো কেনো জানেমান? এখন কি রাগ করার সময়? তুমি আরো ওদের বুঝিয়ে বলবে।
‘পিচ্চি আমার হাত ছাড়ো।
‘ওয়ে পিচ্চি কিছ কো ক্যাহা? আমি তোমার সম্মানিত হবু বর। সো রেস্পেক্ট।
‘এসব আণ্ডাবাচ্চা আমি বিয়ে করবো না।
‘বিয়ে শাদী পরে হবে দ্রুত গাড়ীতে বসো। তোমায় রেখে আমাকে দ্রুত আসতে হবে।
‘থেকে যাই না এমন করছো কেনো?
‘এতো মানুষ রাতে থাকার দরকার নেই। তোমরা আবার কাল সকালে চলে এসে সারাদিন থেকো।
🌿 মিরহার হাতে ক্যানেলা করা। বেডে শুয়ে ফারজাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে৷
‘ফারজাদ যথেষ্ট চেষ্টা করছে নিজেকে সামলে রাখার। দুজনের দৃষ্টি দুজনের দৃষ্টিতে স্থীর। চোখে চোখে জেনো শত শত কথা হচ্ছে মুখে কোন শব্দ নেই। শব্দহীন কথাগুলো পড়ার চেষ্টা করছে একে অপরের দৃষ্টিতে। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে থাকতে মিরহার চোখের পাতা দুটো মিলে গেলো। ফারজাদ উঠে এসে মিরহার হাত ধরলো।
‘নার্স বলল, এখন ওনার ঘুমের প্রয়োজন ডিস্টার্ব কবরবেন না৷ স্যার বলেছেন দুই ঘন্টা পর এসে ওনার কন্ডিশন দেখে ডিসিশন নেবে৷ প্লিজ হাত ছেড়ে দূরে সরে বসুন।
‘ফারজাদ মিরহার হাত ছেড়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসলো। ভেতরটা কেমন ফাঁকা লাগছে। আশেপাশে সবাই থাকার পরে ও কেমন একাকীত্ব ঘিরে রেখেছে থাকে। চাপা কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে অথচ কি দারুণ কষ্টতেও চোখ থেকে পানি বের হচ্ছে না। কেউ একজন জানুক তাকে হারানোর ভয়ে সংকুচিত হচ্ছে হৃদয়।
#চলবে